দাম্পত্য

মাহা আরাত

উপরে উঠার সময় উমায়েরের রুম পেরিয়ে যেতে তাকে উনার রুমে যেতে বললেন।হাফসা কিছুসময় পর গেলো।উনি তখন টাওয়াল হাতে শাওয়ারে ডুকবেন।হাফসাকে আসতে দেখে টাওয়াল রেখে এগিয়ে এলেন।গালে হাত রেখে বললেন, ‘আমি যখন সামনে থাকি না তখন কাঁদেন না?’ ‘আপনার লেট হয়ে যাচ্ছে।’

মাহা আরাত

আরহাম কাঠখোট্টা স্বরে প্রশ্নটি করে উত্তরের আশা করলেন না।চুপচাপ বসে রইলেন অন্যদিকে তাকিয়ে।হাফসা কিছু বলতে যাচ্ছিলো আব্বু ফোন এগিয়ে দিলেন।আরহাম আব্বুর দিকে জিগ্গাসাদৃষ্টিতে তাকিয়ে ফোন তুলে রুক্ষস্বরে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে উৎকন্ঠিত কন্ঠে ভেসে আসে, ‘আপনি সত্যি আমায় মেনে নিয়েছেন?নিজের মুখে বলুন।বাবার কথায় বিশ্বাস হচ্ছে না।’

মাহা আরাত

ঘটনার পেরিয়ে গেছে গোটা দূইদিন।আজ আইরার সাথে কথা বলতে গিয়েও আরহাম যারপরনায়ই আহত হলেন।অসন্তোষ প্রকাশ করে বললেন, ‘আইরা তুমি আমার বোন হও।তুমি বুঝবে,একটা মেয়ের সংসার ভাগ করতে কতটুক কষ্ট হয়।মনে আছে তোমার? মাহদিন ভাই শুধু ফান করে বলেছিল,সে মাসনা নিতে চায়।তুমি কি করেছিলে মনে আছে?আমাকে এসব বুঝাতে আসবে না।’

মাহা আরাত

তারপর হাফসাকে বসিয়ে ওর পেটের মাঝে আলতো করে স্পর্শ করলেন আরহাম।উনার চোখেমুখে খুশি চকচক করছে।ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসেছেন আরহাম। হাফসার পেটে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘একটু কি অনুভব করা যায় তাকে?’

মাহা আরাত

হাফসা তাও নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারছে না।সময়ের সাথে ওর ভয় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।আরহাম ওর হেঁচকির মাএা সামলাতে বললেন, ‘কান্না বন্ধ করুন।প্লিজ।’ হাফসা কান্না থামালোই না।একেবারে না পারতেই আরহাম হাফসার ঠোঁট স্পর্শ করলেন।মুহুর্তেই হাফসার কান্না বন্ধ হয়ে অবাক বনে গেলো সে।

মাহা আরাত

আরহামের আক্ষেপের সুরে কথাটা বলার সাথে সাথেই মাইমুনার চোখের বাঁধ ভাঙ্গলো।অনুতপ্ত সুরে বললেন, ‘আমাকে ক্ষমা করে দিন।প্লিজ শাহ।আর কখনো এমন ভুল হবে না।আই প্রমিস! আপনি অসন্তুষ্ট থাকলে মরে গেলেও শান্তি পাবো না।’

মাহা আরাত

ওর চোখ ছলছল হয়ে উঠলো।আরহাম চেয়ে রইলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেকে সামলে বলে উঠলো, ‘আচ্ছা ব্যাপার না।মানুষ মাএই ভুল।আপু তো অনুতপ্ত।’ আরহাম তৎক্ষনাৎ হাফসাকে বুকের সাথে চেপে ধরে বললেন, ‘আমার জীবনে এমন কোন ভালো কাজের পুরষ্কার আপনি!জানি না!এত বেটার গিফট আমি ডিজার্ভ করতাম!আল্লাহর জন্য আপনাকে ভালোবাসি উমায়ের।’

মাহা আরাত

রাতে আলফাজের সাথে সুরাইম আসলো।এ বাসায় আসার পর ফাইয়াজ সবসময় এখানেই লেগে থাকে।বিকেল থেকে এখানেই তার থাকা,খাওয়া দাওয়া হচ্ছে। যাওয়ার কোনো টান নেই।বাসায় ফিরার কথা বললে সে বললো,’দূই আন্টিমণিকে বলো আমার সাথে আসতে।তাহলে আসবো আমি।’

মাহা আরাত

ডিনারে লেট হয়ে গেলো।ঘড়িতে তখন এগারোটা।আদওয়ার ফ্যামিলি সহ আহনাফ তাজওয়ারকেও খেতে বসতে হলো।এরই মধ্যে অনেকক্ষণ পর আরহাম নিচে নামলেন।কোনোদিকে না তাকিয়ে চুপচাপ কিচেন থেকে প্লেটে খাবার নিয়ে মাইমুনার রুমের দিকে এগোলেন।

মাহা আরাত

হাফসা গাল ফুলিয়ে বসে রইলো।বক্সটা হাতে নিয়ে চাবি ছাড়া অনেক রকম চেষ্টা করলো,বৃথা হয়ে মনে মনে আরহামের প্রতি রাগ নিয়ে বললো, ‘খুব চালাক লোক।এত কঠিন শর্ত না দিলেও পারতেন!আমারও লাগবে না চাবি,আপুর টা নিয়ে আসবো।’

মাহা আরাত

নির্জন,নিস্তব্ধ জায়গা কিন্তু কোনো এক মসজিদ ফযরের থেকে ধীরসুরে আযান শোনা যাচ্ছে। হাফসা আযানের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু ক্লিয়ারলি শোনা যাচ্ছে না।চোখ তুলে তাকাতেই সেই চোখে জমানো ঘৃণা রুদ্রের বুকে গিয়ে লাগলো।গালে হাত দিয়ে একনজরে দেখেই যাচ্ছিলো হাফসাকে।

মাহা আরাত

চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে সে।গাল বেয়ে এখনো শুকনো পানি।পাপড়িগুলো এখনো ভিজে আছে।ফর্সা হাতে-পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে কালসে হয়ে আছে।অন্যহাত ছিলে গিয়েছে রশ্মির বাঁধনে।কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েছে। রুদ্র আলতো করে ওর গালের পানিগুলো মুছে দিলো। ব্যাথা পাওয়া জায়গায় মেডিসিন লাগিয়ে, মাথার ব্যান্ডেজ খুলে দেখলো বেশ খানিক জায়গা কেটেছে।