মেঘলাঃ না মানে… আকাশ ভাইয়ার সাথে ওই মেয়েটা কে….??? আসলে উনাকে আগে কখনো দেখি নি তো আর আকাশ ভাইয়াকেও এর আগে মেয়েদের সাথে এত বেশি মিশতে দেখি নি তাই জিজ্ঞাস করছিলাম আর কি…
নাবিলঃ মেয়েটার নাম ইরা, আমাদের সাথেই পড়ে গতবছর টিসি নিয়ে এখানে এসেছে কিন্তু কলেজে বেশি আসেনা, বাসা মনে হয় দূরে। সত্যি বলতে আমি ওর সাথে তেমন কথা বলি নি তাই বেশি কিছু জানি না।
মেঘলাঃ অহ আচ্ছা….. বড় লোক তাই না? দেখেই বোঝা যাচ্ছে…
নাবিলঃ হবে হয়ত….. গাড়ি ছাড়া কলেজে আসে না, জানই তো মেয়েদের ব্যাপারে আমার ইন্টারেস্ট কম তাই কখনো খোঁজ নেই নি। তবে আকাশের সাথে ইরার বেশ ভাল সম্পর্ক। একমাত্র আকাশের সাথেই ইরা বেশি মেলামেশা করে।
মেঘলার ভিতরে কি হচ্ছে মেঘলা জানে কিন্তু প্রকাশ করার উপায় নেই।
মেঘলাঃ বড়লোকের সাথে বড়লোকেই মানায় আমার মত চালচুলা হীন মেয়ে আকাশের যোগ্য নই (মনে মনে) কিন্তু উনি ত আমায় ভালবাসেন তাই না? ভালবাসায় সব সম্ভব বড় ছোটর পার্থক্য নেই।
।
।
।
মেঘলা নিজেই নিজেকে শান্তনা দিচ্ছে।
দেখতে দেখতে সবাই গন্তব্যে পৌছে গেল।
রুম বুক করা হচ্ছে,সমস্যা একটাই মেঘলা ছোট তাই কেউ তাকে রুমে নিতে চাচ্ছে না ও থাকলে নাকি মজা করা যাবে না। মেঘলার এমন পরিস্থিতে পড়ে খারাপ লাগছে।
আকাশঃ কি হবে তাহলে? একে নিয়ে এসে তো ভাল ঝামেলায় পরা গেল।
নাবিলঃ কিসের ঝামেলা আমি তো কোন ঝামেলা দেখতে পাচ্ছি না…. ম্যানেজার সাহেব একটা লাক্সারি রুম দিন। আকাশের দিকে তাকিয়ে নাবিল বলল মেঘলা একাই থাকবে।
আকাশঃ ওকে তোদের যেমনটা ইচ্ছে….
ইরাঃ উফফ আকাশ যার যেখানে খুশি থাকুক না তাতে তোমার কি ছাড়োত এসব,চলো না সমুদ্রে যাই….
আকাশঃ আরে কেবল তো আসলাম আগে রুমে যাই। ফ্রেশ হয়ে না হয় যাব।
ইরাঃ না না না আমি কিছু শুনতে চাই না এখনি চলো প্লিজ, সমুদ্রে ভিজব তারপর এসে একেবারে ফ্রেশ হবো।
আকাশঃ আচ্ছা ঠিক আছে চলো….
যাওয়ার জন্য ইরা আকাশের হাত ধরল
দৃশ্যটা দেখে মেঘলার মুখ টা একদম মলিন হয়ে গেছে…. চোখ ছল ছল করছে।
আকাশের হাত ধরে ইরা যেই যেতে যাবে তখনি
নাবিল বলে উঠল এই আকাশ দাঁড়া, তোরা হানিমুনে আসিস নি যে একা একা ঘুরতে যাবি।
গেলে সবাই একসাথে যাবি।
ইরাঃ উফফ… কাম অন নাবিল!! আমরা স্কুলের বাচ্চা না যে স্যাররা হাত ধরে নিয়ে ঘুরে বাড়াবে। আমরা এখানে প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করতেই এসেছি। এই তোমরা সবাই কি বলো?
অন্যরা বলল হ্যা ইরা তো ঠিকি বলেছে ওরা যাচ্ছে যাক তোর আপত্তি কিসের নাবিল?আমাদের যাদের ইচ্ছা হবে আমরা যাব ওদের সাথে যেতে হবে কেন এই ইরা তোরা যা তো।
ইরা আকাশ কে নিয়ে চলে গেল।
সবাই সবার মত রুমে চলে গেল। নাবিল মেঘলাকে রুমে দিয়ে নিজেও রুমে গেল।
মেঘলা রুমে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার টা ছেড়ে দিয়ে তার নিচে বসে বসে ভিজছে চোখের পানি বাধ মানছে না। মেঘলার রাগ কষ্ট ২ টাই হচ্ছে।
প্রায় এক ঘন্টা পর নাবিল ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে মেঘলার রুমে আসল।
নাবিল ঢুকার সময় অবাক হল একি দরজা খোলা কেন? মেঘলা দরজা লক করে নি কেন? নাবিল ঘরে ঢুকে দেখল মেঘলার ব্যাগটা সে যেখানে রেখে গিয়েছিল সেখানেই আছে তারমানে মেঘলা ফ্রেশ হয় নি তাহলে করছে টা কি? চারপাশে দেখল মেঘলা নেই।
হটাৎ নাবিলের ওয়াশরুমের দিকে চোখ গেল,দরজা খোলা মেঘলা নিচে বসে হাটুতে মুখ গুজে ভিজছে।হাতের ঘড়িটা খুলে নি শীতের জ্যাকেট টাও খুলে নি সব নিয়েই ভিজছে।
নাবিলের বুঝতে বাকি রইল না যে মেঘলা আসার পর থেকেই শাওয়ার নিচে বসে আছে।
নাবিল তাড়াতাড়ি গিয়ে মেঘলাকে টেনে তুলল।
প্রায় ১ ঘন্টা যাবত সে ভিজছে তাও এই ঠান্ডার দিনে। ঠান্ডায় মেঘলার গোলাপি ঠোঁট গুলি নীল হয়ে গেছে ঠকঠক করে কাঁপছে মেঘলা।
নাবিলঃ এসব কি করছো মেঘলা? এভাবে ভিজছো কেন?
মেঘলা……কথা বলার অবস্থায় সে নেই।
নাবিল ব্যাগ থেকে জামা বের করে দিয়ে বলল চেঞ্জ করে নাও।
মেঘলা তাই করল। কিন্তু তার ঠান্ডা এখুনো কমে নি আর শীতের জামাও ভিজিয়ে ফেলেছে নাবিল নিজের জ্যাকেট টা খুলে মেঘলাকে পড়িয়ে দিল।
তারপর জোর করেই মেঘলাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল
সমুদ্রের পাড়ে একটা রেস্টুরেন্ট এ খেতে গেল মেঘলাকে নিয়ে।
ওরা বসে খাচ্ছিল তখনি আকাশ আর ইরাও সেখানে আসল।
আকাশ মেঘলার পড়নে নাবিলের জ্যাকেট দেখে একটু হাসল।
আকাশঃ তুই ই বা আমার চেয়ে কম কিসে মেঘলা….ভালই তো আছিস নাবিলের সাথে। আচ্ছা দেখি তুই কতটা নিতে পারিস (মনে মনে)
আকাশঃ খাবার অর্ডার দিল আর খাবার দেওয়ার পরেই আকাশ ইরাকে খায়িয়ে দিতে শুরু করল।
এবার আর মেঘলার আর সহ্য হল না সে উঠে আকাশের টেবিলের কাছে গিয়ে আকাশ প্রশ্ন করল এই মেয়েটা কে?
আকাশ উঠে দাঁড়িয়ে বলল আপু আপনি ঠিক আছেন? কাকে কি বলছেন?
মেঘলা আকাশে কলার চেপে ধরে বলল আমি জানতে চাচ্ছি মেয়েটার সাথে কি সম্পর্ক আপনার?
নাবিল দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে,
নাবিলঃ এটা হওয়ার এই ছিল….আকাশ একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে(মনে মনে)
আকাশঃ আপু আপনি প্লিজ রুমে যান এটা পাবলিক প্লেস।
মেঘলা কিছু শুনতে রাজি না সে আকাশ কে বারবার জোর করছে।
আকাশ ভালভাবেই মেঘলাকে বোঝানোর চেস্টা করছিল কিন্তু হটাৎ ইরা একটানে মেঘলাকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল মেঘলার গালে। মেঘলা অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকাল কিন্তু আকাশ কিছু বলছে না।
নাবিল তাড়াতাড়ি এসে বলল ইরা কি করলে এটা?
ইরাঃ যেটা আমার করার কথা ঠিক সেটাই করেছি। তোমার জিএফ যদি আমার বয় ফ্রেন্ডকে নিয়ে টানাটানি করে তাহলে আমাকে তো একটু অসভ্য হতেই হবে।
ইরাঃ আকাশ চলো তো এখান থেকে যতসব ফালতু মেয়ে।
আকাশ কে নিয়ে ইরা চলে গেল।
মেঘলার এই ধাক্কাটা সহ্য হল না সে মাটিতে বসে কাঁদতে লাগল।
নাবিলঃ শান্ত হও মেঘলা….প্লিজ শান্ত হও
মেঘলাঃ ভাইয়া মেয়েটা…..ক ক ক কি বলে গেলেন উনি? আকাশ উনার বয়ফ্রেন্ড……!!!বলুন না আমি ভুল শুনেছি তাই না?কিন্তু মেয়েটা আমায় মারল আকাশ তবু কিছু বলল না কেন? আমি স্বপ্ন দেখছি তাই না ভাইয়া এসব মিথ্যা ……আকাশ আমায় ঠকাতে পাড়েনা। এসব কিছুতেই হতে পাড়েনা।
নাবিল মেঘলাকে কি বলে শান্তনা দিবে বোঝতে পাড়ছে না।
নাবিলঃ আকাশ কি চাইছিস তুই…..??? কেন এসব করছিস? ও এসব কিভাবে মানবে আমারেই তো সহ্য হচ্ছে না। মেঘলা যে জেদি যদি কোন অঘটন ঘটায় সহ্য করতে পাড়বি তো? না কিছু ঘটার আগে আমাকেই কিছু একটা করতে হবে…..
নাবিলঃ উঠি মেঘলা কে কার জিএফ সেটা কি মুখে বল্লেই হয়ে যায় ও তো এটাও বলল যে তুমি আমাত জিএফ তাই বলে কি সেটা সত্যি?
মেঘলাঃ মিথ্যাই যদি হবে আকাশ কেন প্রতিবাদ করল না…. কেন বলল না ও আমায় ভালবাসে।
আচ্ছা ভাইয়া আমি কি দেখতে খুব খারাপ যে আমাকে প্রেমিকা হিসেবে পরিচয় দেওয়া যাবে না…..!!!