আমি চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে বিছানা থেকে নামতে চাইলাম। কিন্তু শাওন আমার দুই হাত নিয়ে আমাকে বিছানার সাথে চেপে ধরল।
আমি ভয়ে রীতিমতো হাপাচ্ছি। উনি সাথে সাথে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে কিস করলেন। আমি চমকে বলে উঠলাম, কি করছেন আপনি!
সারা শরীর শিউরে উঠল আমার। আর আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। আমি চেষ্টা করেও আমার হাতদুটো ছাড়াতে পারলাম না। এদিকে শরীর ভয়ে কাপছে আমার।
শাওন গলা থেকে মুখ সরিয়ে আমার কানে কানে বলল, “খেলা মানে বোঝো? এগুলোর থেকেও মারাত্মক কিছুও করতে পারি।”
আমি চোখ খুললাম আর ভয়ে ভয়ে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি শান্ত চোখে তাকিয়ে বললেন, “কিন্তু আমি তোমাকে জোর করতেই চাই না। কখনো করবও না। কারণ আমি এসব শিখি নি। তার চেয়েও বড় বিষয় হলো আমি রেস্পেক্ট করি তোমাকে। তোমার সাথে খেলার ইচ্ছে হলে অনেক আগেই এগুলো করে তোমাকে ছেড়ে দিতাম।”
আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
“আর বাকি রইল ডিভোর্স! জীবনেও পাবা না। আমার কাছে থাকতে তুমি বাধ্য। তোমার ভালো লাগুক আর না লাগুক। You are doomed to be mine.” রেগে বলে উঠল শাওন।
আমি অবাক হয়ে ওনার চোখের দিকে তাকালাম। উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
আমি ওভাবেই শুয়ে স্তম্ভিত হয়ে রইলাম। আমি কি তাহলে ওনাকে ভুল বুঝলাম! আমি উঠে বসলাম আর দরজার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম।
তারপর রুম থেকে বের হয়ে ওনার রুমে চলে গেলাম। কিন্তু উনি কোথাও নেই। কোথায় গেলেন উনি! আমি ওনার রুম থেকে বের হয়ে ছাদে গেলাম। সেখানেও উনি নেই।
উফ এখন এত রাতে কোথায় খুজবো ওনাকে আমি! সারা বাড়ি খুজে ওনাকে পাওয়া গেল না। আমি ক্লান্ত হয়ে শাওনের রুমে এলাম।
তারপর মন মরা হয়ে বিছানায় বসলাম। এখন সত্যিই অনেক খারাপ লাগছে। কোথায় চলে গেলেন উনি!
আমি মনমরা হয়ে বসে রইলাম। বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়েও গেলাম।
ভোরের দিকে চোখ খোলার সাথে সাথে প্রথমেই এদিক ওদিক দেখে নিলাম। শাওন কোথাও নেই। ফোন করব? সেটা করলেই ভালো হয়।
আমি জলদি নিচে নেমে নিজের রুমে গেলাম। তারপর নিজের ফোনটা নিয়ে শাওনকে ফোন করলাম।
ফোন ঢুকছেই না। এখন! আমার মোটেও ভালো লাগছে না। কোথায় খুজবো এখন আমি ওনাকে! কোথায় চলে গেছেন উনি?
আমি সকাল অব্দি অপেক্ষা করলাম। ব্রেকফাস্ট এর টেবিলে এক এক করে সবাই হাজির হলো শুধু শাওনই নেই।
আমি মন মরা হয়ে একটা চেয়ারে বসলাম। আজ আমার শাশুড়ীও ত শাওনকে খুজছে না। আজীব! এমনি ত ছেলে ছেলে করে মরে যান। আমি শান্তিতে বসতেও পারছি না, মনের মধ্যে খচখচ করছে।
“কি রে কি হয়েছে তোর?” বলল পিশামনি।
আমি চমকে উঠলাম। আর না সূচক মাথা নেড়ে বললাম, কিছুই ত না।
“ত এমন শুকিয়ে আছিস কেন? খা বেশি বেশি খা।” বললেম পিশামনি।
কিন্তু আমার গলা দিয়ে ত কিছুই নামছে না।
অনেক কষ্ট করে কিছু খেয়ে উঠে গেলাম। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো শাওনকে পেলাম না। কাকে জিজ্ঞেস করব ওনার কথা।
আমি আজ সারাদিন ডাইনিং আর ড্রয়িং রুমেই ঘুরঘুর করলাম।
কিন্তু ওনাকে ফিরতে দেখলাম না।
উনি কি চলে গেল! আমার জন্য ত প্রচুর রেগে গেছিলেন গত রাতে।
আমি সারাদিনে অনেকবার ফোন করলাম কিন্তু শাওনের ফোনে কল গেলই না। গরিলাটা কি আমাকে ব্লক করে দিয়েছে?
রাতে আমি শাশুড়ীকে প্রশ্ন করেই ফেললাম যে উনি কোথায়!
শাশুড়ী ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, বউ হয়ে নিজের স্বামীর কোনো খবরই রাখো না। সকাল থেকে সে নেই কিন্তু তুমি দিব্যি শান্তিতে আছ! কেমন মেয়ে তুমি?
আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
“অদ্ভুত। আমারই ভুল ছিল। মনে করেছিলাম ওই সুইটি মেয়েটার জন্য হয়তো আমার ছেলে বিপথে চলে যাবে তাই বিয়ে দিলে ভাল। কিন্তু তাতে করে ত উলটো হলো। তোমার সাথে বিয়ে দিয়ে কি লাভটা হলো বুঝলামই না।” অনেক ক্ষোভের সাথে বলতে লাগলেন শাশুড়ী।
উনি ঠিকই বলেছেন আমি নিজেই ত ওনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলছি।
উনি বিরক্ত হয়ে আরো বললেন,”এখন কি আমার তোমাকে শিখিয়ে দিতে হবে কিভাবে তুমি শাওনের সাথে রোমান্স করবা?”
আমি চোখ বড়সড় করে তাকালাম।
নিপা রান্নাঘরের দিকে আসছিল। এগুলো শুনে হেসে দিয়ে বলল, “রিল্যাক্স কাকিমনি। আমি আছি ত।”
তারপর আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, আসো তোমাকে শিখাচ্ছি।
আমি জড়সড় হয়ে বললাম, মানে?
নিপা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল, আসো ত। এত কিসের প্রশ্ন করাকরি। ভাল জিনিস শিখাবো তোমাকে।
আমি অনেক চমকে গেলাম। হঠাৎ সবাই এসব নিয়ে পরেছে কেন! এদিকে উনি কোথায় সেটাও ত বললেন না শাওনের মা। এখন কিভাবে জানবো আমি?
নিপা সেদিন লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে কি কি সব বলতে লাগল সেটা কল্পনার বাহিরে। আমি জীবনেও এসব কিছু করতে পারব না। মরে গেলেও না।
“উনি কোথায়?” আমি প্রশ্ন করলাম নিপাকে।
নিপা ভ্রু উঁচু করে বলল, কেনো ট্রাই করতে চাচ্ছ এখনি!
আমি চোখ বড়সড় করে চমকে বলে উঠলাম,”না,ছি।”
“কিসের ছি?” ভ্রুকুচকে বলল নিপা।
“যাই হোক উনি কোথায়!” ব্যস্ত হয়ে বললাম আমি।
নিপা একটু চিন্তা করে বলল, জানিনা আমি।
বলেই হেসে দিলো।
আমি শুকনো মুখ করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
এখন অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু আমার ত আর ভালো লাগছেনা। আর কত অপেক্ষা করব আমি। রাতে খাবার টেবিলেও শাওনকে দেখলাম না। উনি কি চলে গেছেন ঢাকা?
আমি কিছু না খেয়েই খাবার নাড়াচাড়া করে উঠে গেলাম।
একটা পুরো দিন হয়ে গেল আমি ওনাকে না দেখতে পেলাম, না জানতে পারলাম উনি কোথায়! আমি আবার শাওনকে ফোন দিলাম। এখনো বন্ধ।
হঠাৎ মনে হলো বাসার টেলিফোন দিয়ে ফোন দিলে হয়ত যাবে।
আমি বের হয়ে টেলিফোন দিয়ে কল করলাম। তাও বন্ধ বলে। এখন সত্যিই অনেক টেনশন হচ্ছে। আর একটু সময়ের জন্যও যদি আমাকে এভাবে থাকতে হয় তাহলে আমি মরেই যাব। আমি ওখানে বসেই কাদতে শুরু করে দিলাম।
“শাওন ফিরে গেছে।” পিছন থেকে বলল শাওনের মা।
আমি হকচকিয়ে গেলাম আর চোখের জল মুছে নিলাম।
“বেশি কষ্ট হলে কালই চলে যাও। কিন্তু এত রাতে যাওয়া চলবে না।” শক্ত মুখ করে বলে উনি চলে গেলেন।
উনি আমাকে না নিয়ে ঢাকা কিভাবে চলে গেলেন! অসভ্য গরিলা একটা। কাল গিয়ে যদি ওনার ঘাড় না মটকাই আমি।
কোনো রকম রাত কাটিয়ে পরের দিন আমি ভোর হবার সাথে সাথে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম।
ঢাকা ফিরেই প্রথমেই ওনার অফিসে গেলাম। কিন্তু উনি নেই। পরে আমি বাড়িতে চলে এলাম। কিন্তু উনি বাড়িতেও নেই।
এখন কোথায় খুজবো আমি! এটা কেমন শাস্তি দিচ্ছেন উনি আমাকে! আমি ত আর সহ্যই করতে পারছি না।
আমি এগিয়ে গিয়ে সোফায় বসে কাদতে লাগলাম। আর চোখ মুছতে লাগলাম। একবার একটু আমি ওনাকে দেখতে পেলেই হবে। আমি আর কিছুই চাই না এখন। কিছুক্ষণ বাদে জোরেই কাদতে লাগলাম।
হঠাৎই শাওন বাসায় ঢুকল। আমি সাথে সাথে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, তুমি এখানে কেন!
আমি ওনাকে দেখে যেন সস্তি পেলাম। আর দৌড়ে গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম।
আর কাদতে কাদতে বললাম, আপনি আমাকে ছেড়ে চলে এসেছেন কেন! কেনো এসেছেন! আমি মনে করেছি আপনাকে আমি আর দেখতে পাব না। আপনি আমার ফোনও ধরেন নি। আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম জানেন আপনি!
বলেই আমি জোরে জোরে কাদতে লাগলাম।
“কান্না থামাও।” শাওন শান্ত গলায় বলল।
আমি কান্না থামালাম না।
শাওন আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি এখনো কেদেই যাচ্ছি। শাওন দুইহাত দিয়ে আমার চোখের জল মুছে দিল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম আর কান্না থামালাম।
এখন অনেক লজ্জা লাগছে।
“আমি কাছে আসলেও সমস্যা, দূরে গেলেও সমস্যা! কি চাচ্ছ তুমি?” শাওন সিরিয়াস হয়ে বলল।
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। শাওন আমাকে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
উনি কি রেগে আছেন! এখন কি করব! আমি ঠোঁট কামড়ে চিন্তা করতে লাগলাম।
আমি ভয়ে ভয়ে ওনার রুমে ঢুকলাম। উনি ড্রেসিং টেবিলের সামনে ঘড়ি খুলছিলেন। আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না কি করব। এদিকে হার্টও জোরে জোরে বিট করছে।
উনি শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।
আমি চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। উনি আমাকে পাশ কাটিয়ে বের হয়ে গেলেন।
অর্থাৎ উনি এখনো অনেক রেগে আছেন। কি করব এখন আমি।
আমি পিছনে ঘুরে তাকালাম। উনি ইতিমধ্যে কিচেনে চলে গেছেন। আমি একটা বড় নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে কিচেনে চলে এলাম।
উনি আমার দিকে তাকালেনও না। নিজের মত কাজ করতে থাকলেন।
আমি এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে শাওনকে জড়িয়ে ধরলাম। শাওন হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো।
“আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি আর বলব না। আপনি প্লিজ এখন আমার সাথে এমন করা বন্ধ করেন। আমি…” এটুকু বলেই আমি থেমে গেলাম।
শাওন আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কিচেন থেকে বের হয়ে গেল।
আবার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরতে লাগল। এত রাগ কিসের ওনার! আমি ত সরি বললামই। আমি কতটা কষ্ট পাচ্ছি সেটা কি উনি বোঝেন না!
আমি ওনার রুমে গিয়ে ঢুকলাম। উনি ফোনে কথা বলছিলেন কারো সাথে। আমি এগিয়ে গিয়ে ওনার এক বাহু ধরে টান দিয়ে আমার দিকে ঘুরালাম।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকালো।
আর ফোনের লোকটাকে বলল,”ok I’ll call you back in two minutes.”
তারপর কল কেটে আমাকে শক্ত গলায় বলল, “কেন এসেছ এখানে?”
ওনার এই প্রশ্ন শুনে আমি থমকে গেলাম। তারপর আর কিছু না বলে বের হয়ে চলে এলাম। সোফা থেকে নিজের পার্স নিয়ে চোখের জল মুছে নিলাম।
তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে ফিরে যাওয়ার জন্য মনস্থির করে নিলাম।
এগিয়ে গিয়ে দরজার লক ঘুরিয়ে খোলার সাথে সাথে শাওন পিছন থেকে এসে দরজাটা ঠেলে বন্ধ করে দিল। আমি অবাক হয়ে ঘুরে তাকালাম।
উনি এতই রেগে আছেন যে ওনার নিঃশ্বাসের শব্দতেই তা প্রকাশ পাচ্ছে।
“কোথায় যাচ্ছ? যেতে বলেছি আমি তোমাকে?” অনেক জোরে বলে উঠল শাওন।
আমি ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠলাম, কেন! আপনার তাতে কি! যান আপনি আপনার কাজ করেন। আমি আর কোনো দিনো আপনার কাছে আসব না। যেদিকে ইচ্ছা আমি চলে যাব।
বলতে বলতে চোখে জল চলে এলো। আমি চোখ নামিয়ে বললাম, দরজা ছাড়ুন।
বলেই আমি দরজার দিকে ঘুরলাম। সাথে সাথে শাওন আমার হাত ধরে টেনে ওর দিকে ঘুরালো। আমি ক্ষোভের সাথে তাকিয়ে বললাম, “কি চাচ্ছেন আপনি! যেতে দিন আমাকে।”
আমার কথা শেষ হতে না হতেই শাওন আমার ঘাড়ের পিছনে এক হাত রেখে আমাকে কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটে কিস করতে লাগল। আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম আর চোখ বন্ধ করে নিলাম।
কয়েক মিনিট হয়ে গেল কিন্তু উনি ত থামছেনই না। আমি ত আর একটু হলেই দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো।
আমি ওনাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে হাপাতে লাগলাম। কিন্তু উনি আবার আমাকে এক হাত ধরে টান দিয়ে কাছে নিয়ে এসে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে গভীরভাবে কিস করতে লাগলেন।
উফ উনি কি আমাকে মেরে ফেলতে চান এভাবে! আমি আবার ওনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। আর অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম। আমার হার্টবিট দশহাজার গুন বেড়ে গেছে। এদিকে দমও পুরো শেষ করে দিয়েছিলেন প্রায় উনি।
“কিসও করতে জানো না, ইডিয়ট।” ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল শাওন।
আমি ওনার দিকে আর তাকালাম না। উনি আবার আমার কাছে এগিয়ে আসতেই আমি নিজের ঠোঁট হাত দিয়ে ঢেকে চমকে বলে উঠলাম, “আর না। আমাকে কি মেরে ফেলতে চান!”
“গাধা” ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল শাওন।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে অন্যদিকে তাকালাম। অনেক লজ্জা লাগছে এখন। শাওন এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে টেনে আমাকে কাছে নিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরল। আমি চোখ বড়সড় করে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললেন, Did you miss me that much?
আমি একটা ঢোক গিলে বললাম, আমি ত…
শাওন মুখ সরিয়ে এনে আবার আমার চোখের দিকে তাকালো। আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলাম আর বললাম, “ছাড়ুন আমাকে। এভাবে কেন ধরে রেখেছেন!”
উনি কিছুই না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমার হার্টবিট অনেক বেড়ে যেতে লাগল। এখন ভয়ও লাগছে হালকা হালকা।
শাওন মুচকি হেসে বলল, Why are you so nervous!
আমি ওনাকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বললাম, আপনি…এ… এত কাছে…
কথা শেষ হবার আগেই শাওন আমার গালে কিস করে দিলো। আমি চোখ বড়সড় করে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি এবার আমার অন্য গালেও কিস করে দিলেন। আমি চমকে ওনার বাহুর কাছের শার্ট খামচে ধরলাম আর চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
“বলো কেন এসেছো!” শাওন বলল।
আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম। কিন্তু ওনার চোখের দিকে তাকালাম না।
সত্যিই আমার আসাই উচিৎ হয় নি। উনি এখন আমাকে ইচ্ছে করে জ্বালাচ্ছেন!
আমি এবার রেগে চোখ পাকিয়ে বলে উঠলাম, “আপনি আমাকে ছেড়ে চলে এসেছেন কেন!”
“তুমিই ত বলেছ একা ছেড়ে দিতে। তাই ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছি।” ভ্রুকুচকে বলল শাওন।
ওনার এই কথা শোনার সাথে সাথে আমার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগল।
শাওন স্তম্ভিত হয়ে বলল, “ওকে রিল্যাক্স, মজা করছি।”
আমি কাদতে কাদতে বললাম, “আপনি খুবই খারাপ। আমাকে শুধু কষ্ট দেন।”
শাওন সাথে সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরল আর শান্ত গলায় বলল, অফিসে একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।অন্যদিকে রবিনের এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে এজন্য আমাকে আসতে হয়েছিল। বাট আমি আজই ফেরত যেতাম। তাছাড়া আমি ত আগেই বলেছি আমি তোমাকে ছাড়বো না।
আমি এটা শোনার সাথে সাথে শান্ত হয়ে গেলাম। এখন অনেক ভালো লাগছে। মুখে এখন একটা হাসিও চলে এসেছে।
হঠাৎই শাওনের ফোন বেজে উঠল। আমি ওনাকে ছেড়ে সরে দাড়ালাম আর মাথা নিচু করে রইলাম।
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হেসে ফোন তুলল।
যা বুঝলাম তা হলো ওনাকে এখনি আবার বের হতে হবে।
শাওন ফোন রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমাকে যেতে হবে।”
আমি ভ্রুকুচকে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, “আপনি না বললেন ফিরে যাবেন আজ। তাহলে এখন কেনো যেতে হবে।”
শাওন আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, “তো, তুমি চাচ্ছ এখন আমি তোমার সাথে থাকি!”
আমি হকচকিয়ে গেলাম আর পিছিয়ে যেতে যেতে বললাম, “না..আমি..।”
“তুমি?!” শাওন বলল।
আমি ঢোক গিলে বললাম, “য…যান আপনি…আপনার না কাজ আছে?”
বলতে বলতে দরজার পিঠ ঠেকে গেল। আমি চোখ বড়সড় করে তাকালাম।
শাওন কিছু না বলে শুধু নিঃশব্দে হেসে সরে রুমে চলে গেল।
আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম।
।
।
উনি চলে যাবার পর এখন আবার ভালো লাগছে না। এদিকে আমি জামাকাপড় কিছুই আনিনি। স্নোবেলকেও রেখে এসেছি। এখন কি করব আমি? আমি চুপচাপ টিভির সামনের সোফায় এসে বসলাম। হঠাৎই চোখ গিয়ে পরলো সেই পেইন্টিং রুমটায়। রুমটার দরজাটা খোলা।
এই রুমটায় অনেক দিন যাওয়া হয়নি। আমি হাসিমুখে উঠে এগিয়ে গেলাম।
আর রুমটায় ঢোকার সাথে সাথে থমকে গেলাম। কারন সামনের ক্যানভাসে অনেক সুন্দর করে আমার ছবি আকা। সেইদিনের ছবি যেদিন উনি আমার মাথায় পদ্মফুলের মুকুটটা পরিয়েছিলেন কিন্তু সেটা চোখে এসে পরেছিল। এটা কখন আঁকলেন উনি! দেখে ত মনে হচ্ছে আজ বা গতকালের মধ্যেই আকা।
আমি কিছুসময় হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম। তারপর চোখ সরিয়ে আশেপাশে তাকাতেই টেবিলে একটা বড় স্কেচবুক দেখলাম।
আমি এগিয়ে গিয়ে সেটা হাতে নিলাম। আমি এই আর একবার চমকে গেলাম। এটাতেও সব আমার ছবি। প্রতিটার নিচে তারিখ দেওয়া আছে।
ছবি গুলো এক এক করে দেখতে লাগলাম।
প্রথম পৃষ্ঠায় আমার চেয়ারে ঘুমিয়ে থাকা একটা ছবি। এটা ওনার অফিসে বসে যেদিন ঘুমিয়েছিলাম সেটা।
পরের ছবিটা বাসের মধ্যেকার, সাজেক যাওয়ার সময়কার। যখন আমি জালানা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিলাম।
তারপরের ছবিটা আমার ঘুমন্ত অবস্থার, রিসোর্টের বিছানায়। অর্থাৎ উনি যেদিন প্রথম আমার পাশে ঘুমিয়েছিলেন।
এভাবে একে একে আকা সব ছবিই আমার, পুকুরে গোসল করার ছবি, ওনার শার্ট পরা ছবিসহ আরো কতোগুলি। এগুলো দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। উনি কবে থেকে পছন্দ করেন আমাকে!
আমাকে কোনোদিনো কেন বুঝতে দেন নি!
আমি তাড়াতাড়ি নিজের পার্স নিয়ে ঘর থেকে বের হলাম।
আমি এখনি সব শুনতে চাই। সবটা শুনতে চাই।
আমি মেইন রাস্তায় এসে দাড়ালাম আর এদিক ওদিক তাকিয়ে সিএনজি খুজতে লাগলাম।
কিন্তু হঠাৎই ডান দিকে আমার দৃষ্টি আটকে গেল। আমি ভ্রুকুচকে তাকালাম।
সুইটি একটু দূরে ওর গাড়িতে বসে আমার দিকে ক্ষোভের সাথে তাকিয়ে আছে।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎই ও আমার দিকে গাড়ি জোরে স্টার্ট দিলো।
আমি থমকে গেলাম আর স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম।
‘ও কি আমাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছে!’
চলবে…