১৬ বছর বয়স | পর্ব – ৫

১৬ বছর বয়স

শাওন আমার কাছে ঝুকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল, “সুবিধার না হলে কি হতে পারে সেটা আজ আমি তোমাকে দেখাব।”
উনি কাছে আসতেই আমার শরীর কাপতে লাগল।
আমি পিছাতে যাব এমন সময় উনি হাত ধরে আমাকে বিছানা থেকে টেনে নামালেন।
কি করছেন আপনি? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আমি বলতে লাগলাম।
উনি আমাকে টেনে নিয়ে একদম বাসা থেকে বের করে দরজা আটকে দিলেন।
আমি দরজায় বার বার আঘাত করে বললাম, দরজা খুলুন। কয়েকবার বলার পর ও কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না।
এখন ত আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছা করছে অই শাশুড়িকে আর তার ছেলেকে দুইটাকেই চিবিয়ে খেয়ে ফেলি। হাত মুঠ করে রাগ টা পোষানোর চেষ্টা করলাম। পোষালো না।
খালি পায়ে ১০ মিনিট অইভাবেই দাড়িয়ে রইলাম। তারপর মনে মনে বললাম, যেদিকে দুই চোখ যায় চলে যাব আমি আজ।
যেই ভাবা সেই কাজ। আমি নিচে নেমে এলাম সিড়ি দিয়ে। লিফটে চড়তেই ভয় লাগে।
নিচে আসতেই আশেপাশের সবাই তাকাচ্ছে আমার দিকে। নিচে রিসিপশনের মহিলাও তাকাচ্ছে। আসলে আমার দিকে না আমার পায়ের দিকে কারন আমি খালি পায়ে।
আমি একটি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে তাদের দিকে তাকিয়ে ব্যঙ্গহাসি দিয়ে বললাম, “খালিপায়ে কি কাউকে প্রথম দেখছেন আপনারা? হ্যা? আজ আমার শহীদ দিবস ত তাই আমি খালি পায়ে বুঝতে পেরেছেন?”
বলেই আমি হাটা ধরলাম। অনেক দূর পর্যন্ত হেটে মনে পড়ল যে আমি কাল দুপুর থেকে কিছুই খাইনি। পেটে হট্টোগোল হচ্ছে আর মাথাও ঘুড়ছে। এখন?
এমন ই কপাল আমার! ‘আবার ফিরে যাবো?! না না কেন ফিরব? আমার কি মান সম্মান নেই? কিন্তু কিছুই ত চিনি না। এখন?



শাওন দরজা খুলে বের হলো অফিসে যাবার জন্য। এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে আমাকে দেখতে পেলো না। তাই নিজের মাথা থেকে আমার চিন্তা টা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নিজের মত অফিসে চলে গেল।
শাওন নিজের অফিসে বসে বসে ফাইল গুলো চেক করছে এমন সময় পিশামনি ফোন দিল।
– হ্যালো বাসার টেলিফোনে কত বার ফোন দিচ্ছি। কেই ই তো ধরছে না? মিলা কোথায়?
– তুমি কোথায়? উলটা প্রশ্ন করলো শাওন।
– কোথায় আবার! সুন্দরবন। সকালে ত ফোন করেছিলাম।
শাওন ভ্রুকুচকে বিরক্তির সাথে বলল, “তুমি ওকে না নিয়ে গেছ কেনো? আর ওকে জানিয়েছ কেনো যে আমি তোমাকে টাকা দিয়েছি? আরো কি কি বলছে আমি নাকি ওকে জোর করে রাখছি। কি বলেছ ওকে তুমি?
পিশা একটু কেশে বলল, আমি কখন কি (উহুম উহুম) বললাম।
– ওকে ফাইন তোমাদের কাজ তোমরা কর আমার কাজ আমি করব। আমি ওকে আমার সাথে আর রাখছিনা।
– শাওন শোন….
কল কেটে দিল শাওন। টেবিলে ফোন টা ফেলে টেবিলের উপর দুই হাত মুঠ করে তার উপর মাথা দিয়ে রইল।
তখন ই দরজায় টোকা পরল। শাওন মাথা তুলল।সুমনা দরজা ঠেলে ঢুকল।
– কি রে? কি করছিস?
শাওন মাথা তুলে বলল
– nothing। কিছু হয়েছে?
– না তোর মা ফোন করেছিল। ফোন ধরছিস না কেনো ওনার?
একটা নিঃশ্বাস ফেলে শাওন বলল, “বস।”
– উম বলছিলাম যে….
– কি? (শাওন)
– সুইটি কাল থেকে জয়েন দিবে আবার।
শাওন শান্তভাবে তাকিয়ে বলল, “তো?”
– না বলছি আর কি। (অপ্রস্তুত হেসে সুমনা বলল)
“যাই হোক, তোর বউ নাকি এসেছে।” চোখটা উচু করে সুমনা বলল।
শাওন লেপটপ খুলে কাজে ব্যস্ত হয়ে পরল।
সুমনা একটু মুখ বাকিয়ে বলল, থাক আর ঢং করতে হবেনা। আমি আজ যাচ্ছি তোর বউ এর সাথে দেখা করতে।
হঠাৎ শাওনের মনে এলো মিলাকে বাহিরে বের করে দেবার কথা। তারপরই মনে মনে বলল, থাকুক কিছু সময় বাহিরে। শাস্তি না হলে হবে না।
– কি কিছু বল?
– আজ না।
শাওন ভালভাবেই জানে সুমনা এই ঘটনা জানলে অনেক জ্ঞান দিবে। মা কেও বলে দেয় কিনা ঠিক নেই। কারন এরা সব এক গোয়ালের ছাগোল।
– আজ না কেন? সন্দেহের চোখে তাকালো সুমনা।
“তোর বাসাতে ওকে পাঠাই দিব আমি কাল। তখন সারাদিন দেখিস আর রেখেও দিস” লেপটপে কাজ করতে করতে বলল শাওন।
– না থাক। আমি আজ ই যাচ্ছি।
– না।



হাটতে হাটতে অনেক দূর এসেছি। খালি পায়ে আর কতক্ষন হাটব। এক যায়গায় দাড়ালাম। পায়ের নিচে ব্যথা করছে। সামনের দিকে বসার জায়গা খুজলাম।
দেখলাম সামনে একটা বড় গেট। কলেজ কিংবা ভার্সিটি মত জায়গা মনে হয়। আমি ঢুকতেই দেখলাম কয়েকটা ছেলে মিলে দুইটা মেয়েকে বিরক্ত করছে। মনে মনে বললাম, ঢাকাতেও বখাটে আছে তাইলে?
ছেলেটা জোড় করে মেয়েটার হাত ধরতে চাচ্ছিল। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা মাঝারি ইট অই ছেলের মাথায় মারলাম।
ছেলে ব্যাথা পেয়ে “আহ” করে উঠে আমার দিকে তাকালো। মাথা ডলতে ডলতে বলল, কে রে?
ঘুরে আমার দিকে তাকালো। মেয়ে ২টা সরে পরল।
আমি অবাক হয়ে মনে মনে বললাম, বাহ যার জন্য এত কিছু করলাম তারাই কেটে পরল। এখন?
ছেলেটার ফ্রেন্ডগুলা আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে। আর ছেলেটা বিরক্তিকর ভঙ্গীতে মাথা ডলতে ডলতে বলল, নিউ মাল নাকি? তাও আবার শাড়ি পরে কলেজে এসেছে।
বলেই সবাই হাসতে লাগল একসাথে।
– যদিও জোস দেখতে মাইরী।
বলেই আমার কাছে এগিয়ে আসতে লাগল। আশেপাশের লোকজন যে যার মত ঘুড়ে বেড়াচ্ছে গল্প করছে। চিৎকার করব? কি করব বুঝতে পারলাম না। তাই আমি পিছাতে গিয়ে এক ছেলের সাথে ধাক্কা খেলাম। তাকিয়ে দেখলাম স্যুট-কোট পড়া এক ছেলে। ধাক্কা খেয়ে আমার দিকে উনি তাকালো।
যাক কাউকে ত পাওয়া গেল।
ইতিমধ্যে ছেলে গুলো থমকে দাড়িয়ে ছিল।
আমি অই ছেলেকে বললাম, “যাক আপনি এসেছেন তাহলে! ওদেরকে ধরে দুই চারটা দিন ত আমাকে বিরক্ত করছে।”
ছেলেগুলো ভয়ে এদিক ওদিক চলে গেল। আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম। ছেলেটা স্বাভাবিক ভাবেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– ধন্যবাদ আপনাকে অনেক। হাসিমুখে বললাম আমি।
উনি আমার পায়ের দিকে তাকালেন। আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম, এত হা করে দেখার কি আছে? কাউকে কখনো খালি পায়ে দেখেন নি?
ছেলেটা হাসিমুখে বলল, দেখেছি। কিন্তু তাদের খালি পায়ের সাথে সাথে ছেড়া জামাকাপড়ও পড়ে থাকতে দেখা যায়।
আমি বুঝলাম উনি ভিক্ষুকদের কথা বলছেন। ভ্রুকুচকে বললাম, মানে?
– কোথায় থাকেন আপনি? দেখে ত স্থানীয় মনে হয় না।
– এই ঢাকাতেই। (কপাল কুচকে বললাম)
– তাহলে কি এখন খালি পায়ে morning walk করছেন?
ছেলেটা মুচকি হেসে বলল।
“আপনাকে ভাবতে হবেনা। আপনি যেতে পারেন।” কথা শেষ করার সাথে সাথে পেটের মধ্যে আওয়াজ হলো। অর্থাৎ এখন খেতে হবে কিছু।
উনিও শুনতে পেয়েছেন হয়ত।
আমি অপ্রস্তুত ভাবে হাসলাম। উনি করুন দৃষ্টিতে বললেন, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি হারিয়ে গেছেন। আপনি কি আমার হেল্প চান?
আমি কিছু না বলে তাকিয়ে রইলাম। উনি হেসে বললেন চলেন প্রথমে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক।
– না না। আমার খিদে নেই। আর আমি একাই যেতে পারব।
উনি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, তাইলে আর কি। আমি যাই আপনি থাকেন। পাশের দোকানে অনেক ভাল খিচুড়ি বিক্রি হয়।
উনি হেটে চলে যেতে লাগলেন। আমি মনে মনে বললাম, মিলা এখন এত মান সম্মান দিয়ে আর করবি কি। আগে পেট পুজা টা কর।
আমিও উনার পিছে পিছে যেতে লাগলাম।


খিচুড়ি দিয়ে গেল দোকানদার মাত্র ১ প্লেট। আমার দিকে প্লেট ঠেলে দিয়ে ইশারা করে খেতে উনি বললেন।
আমি একবার আড়চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে পর খাবার প্লেটে মনোযোগ দিয়ে খেতে লাগলাম।
আপনি খান আমি আসছি। বলে ছেলেটা বাহিরে চলে গেল।
আমার খাওয়া শেষে ছেলেটা হাজির হল। আমার সামনে একজোড়া জুতা রেখে বলল নিন এটা পড়ুন।
আমি ইতস্তত বোধ করে বললাম, আমার লাগবেনা।
উনি বললেন, বাসার সামনে গিয়ে দিয়ে দিবেন এখন ত পড়েন।
আমি পড়লাম। শাড়ির সাথে জুতা। পারফেক্ট ফকিন্নি লাগছে এখন। তাও কি আর করার পায়ের নিচে মনে হয় ছিলে গেছে।


শাওন দুপুরের পর ই আজ বাসা ফিরল। মনে করেছিল দরজার কাছেই আমাকে দাঁড়ানো পাবে। কিন্তু না।
কপাল কুচকে ঠোটের কোনা কামড়ে কিছু একটা চিন্তা করে আবার নিচে নেমে এলো।
শাওন দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করল, একটা মেয়েকে দেখেছেন? কমলা শাড়ি।
দারোয়ান মাথা নেড়ে বলল, হ্যা স্যার। সকালে। খালি পায়ে এক মেয়ে।
– কোথায়?
– বের হতে ত দেখেছি স্যার, তারপর ত আর দেখিনি।
– damn it. কোন দিকে গেছে?
– এদিকে স্যার
শাওন গাড়ি স্টার্ট দিল।


আমার গাড়িতে উঠুন আমি আপনাকে বাসা ছেড়ে দিচ্ছি।
এত জলদি বাসা গিয়ে বসেই থাকতে হবে। তাও যাওয়াই ভাল৷ ইনি অনেক হেল্প করেছেন আজ আমাকে। এনাকে আর না জ্বালানোই ভালো হবে।
খুজে খুজে বাসা আসতে বেশ সময় লাগল। প্রায় ২ ঘন্টা। রাস্তা নিজে গুলিয়ে খেয়েছি তাই উলটা পালটা রাস্তা বলে বেশি টাইম চলে গেল। যাই হোক শেষমেষ চিনলাম।
ইচ্ছে করেই বাসার ছাড়িয়ে একটু দূরে যাবার পর উনাকে থামাতে বললাম।
– অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সত্যিই। হাসিমুখে বললাম।
– pleasure is mine.
উনি বের হয়ে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিলেন। আমরা পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়ালাম।
আমি হাসি মুখে বললাম, ভালো থাকবেন।
“আপনিও। আর সবাইকে বিশ্বাস করবেন না। এই শহরের আপনার অনেক কিছু জানা ও শেখা বাকি” হালকা হেসে বলল উনি।
আমি প্রশ্নসূচক চোখে তাকালাম।।
শাওন সেই মুহুর্তে এদিক সেদিক গাড়ি নিয়ে খুজে ফিরে এসে গেট এর কাছে গাড়ি থামিয়েছিল। তখন ই আমাকে দেখতে পেল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নামার জন্য গাড়ির দরজায় হাত দিতেই দেখতে পেল আমি একটা ছেলের সাথে হাসিমুখে দাড়িয়ে কথা বলছি।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিলো। তারপর গাড়ি থেকে নেমে আমাদের দিকে হেটে আসতে লাগল।
“আচ্ছা তাইলে। গুড বাই।” ছেলেটা বলল।
আমিও হাসিমুখে বললাম, হ্যা গুডবাই।
বলেই ছেলেটা গাড়িতে ঢুকে গাড়ি স্টার্ট দিল।
আমি তার চলে যাওয়া গাড়িটার দিকে তাকিয়ে তারপর পিছনে ঘুড়তেই দেখলাম শাওন দাড়িয়ে আছে।
মুখের হাসি কুতুবমিনার চলে গেল। বরং আমার চোখে এখন স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠেছে। উনি এসে কপালকুচকে আমার সামনে দাড়িয়ে বললেন, কি করছ এখানে তুমি?
– তা জেনে আপনি কি করবেন?দেখতে পাচ্ছেন না।
শাওন রেগে কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না।
উলটা হেটে নিজের গাড়ির কাছে যেতে লাগল।
আমি বললাম, আরে! চলে যাচ্ছে মানে! আমাকে কি সারা রাতও বাহিরে রেখে দিবেন নাকি?
শাওন ঘুড়েও তাকালো না। উনি গিয়ে গাড়িতে বসে গাড়ি নিয়ে গেট দিয়ে ঢুকল। আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, কেন যে বিয়েটা দিল আমার এর মত ছেলের সাথে।
বুঝলাম যে নিজেকেই ফিরে যেতে হবে। আমি জলদি জলদি হেটে গেট দিয়ে ঢুকছিলাম তখন দারোয়ান বলল, আরে ম্যাডাম আপনি! আপনাকে স্যার খুজছিল।
“কোন স্যার?” চোখ কপালে করে বললাম
“লম্বা করে৷ নীল শার্ট পরা।”
একটু মাথা খাটিয়ে বুঝলাম উনি শাওনের কথা বলছেন।
মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম, খুজছিল না ছাই। হুহ।
শাওন গাড়ি পার্ক করে কালো ব্লেজারটা হাতে ঝুলিয়ে নিয়ে বিল্ডিং এ ঢুকছিল। আমি জলদি ছুট লাগিয়ে উনার পিছে গেলাম। উনি বুঝতে পেরে রিসিপশনের সামনে দাড়িয়ে পরলেন। আমি বুঝিনি যে উনি অইভাবে দাড়িয়ে পরবেন। তাই আমি উনার পিঠের সাথে ধাক্কা খেলাম।
এক চোখ হালকা বন্ধ করে মাথা ঘষতে ঘষতে একটু পিছিয়ে বললাম, দাড়িয়ে পড়লেন কেন।
শাওন রাগী চোখে আমার দিকে ঘুড়ে তাকালো। শাওন আমার দিকে এক পা এগুতেই আমি পিছাতে গিয়ে জুতার ঝুলে থাকা আলগা ফিতায় বেধে পরে যেতে লাগলাম। তাল সামলাতে না পেরে এক হাত দিয়ে ওনার নীল শার্টের কলার ধরলাম অন্য হাত দিয়ে ওনার কোমড়ের কাছের শার্ট হাতের মুঠোয় ধরলাম। আশেপাশের অনেকে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে রিসিপশনের মেয়েটা ঘাড় উচু করে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। শাওন ওর শার্টের কলারের দিয়ে তাকালো যেটা আমি ধরে ছিলাম।
আমি জলদি ছেড়ে দিয়ে একটু সরে দাড়ালাম।
আমি আশে পাশে তাকাতে লাগলাম। শাওন আমার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে কলার টা ঠিক করল।
আমার চোখ রিসিপশনের মেয়ের চোখে পরল। সে এখন আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি মুখে হালকা হাসি এনে অই মেয়ের দিকে তাকিয়ে নিজের এক পা একটু এগিয়ে দিলাম।
– জুতা এটা। আমার শহীদ দিবস শেষ।
বলে মুখ ভেংচি দিলাম।
শাওন কপাল কুচকে আমার পায়ের দিকে দেখল। আমি খেয়াল করে বললাম, যাবেন নাকি দাড়িয়েই থাকবেন?
শাওন গিয়ে লিফটে উঠল আমিও পিছন পিছন উঠলাম। সাথে আরো কয়েক জন ও উঠল। আমি এক কোনায় আর শাওন অপর কোনায় দাড়িয়েছি।
লিফটের মধ্যের এক মেয়ে শাওনকে বলল, আপনি শাওন না?
শাওন মেয়েটার দিকে তাকালো।
– হ্যা আপনি ই ত। আমাকে চিনেছেন?
শাওন হ্যা না কিছুই না বলে আবার সামনের দিকে তাকালো।
আমি ফিক করে হেসে দিলাম মেয়েটাকে ইনসাল্ট হতে দেখে।
সবাই ঘুড়ে আমার দিকে তাকালো। শাওনও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। আমি হাসি বাদ দিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গীতে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ছয় নং ফ্লোরে এসে লিফট থামলে শাওন নামল। পিছে পিছে আমিও নামলাম। উনি অনেক দ্রুত হাটেন যে উনার সাথে হাটা মুসকিল তাও আবার শাড়ি আর জুতার জন্য ত আরোই হচ্ছে না।
উনি দরজার কাছে এসে দাড়ালেন। আমি ফট করে একটু সরে পাশে এসে দাড়ালাম। উনি গম্ভীর চোখে আমার দিকে তাকালেন তারপর মুখ ঘুরিয়ে দারজার পাসওয়ার্ড লিখতে শুরু করলেন।
আমি শুধু খেয়াল করলাম যে উনি কোনো ১ টা সংখ্যাই পাঁচবার চাপলেন।
উনি ঢুকলেন তারপর আমি আস্তে আস্তে ঢুকলাম।
উনি রুমে চলে গেলেন। আমি জুতা খুলে এসে সোফায় বসলাম। পায়ের অবস্থা দেখার জন্য।
ভালই খারাপ অবস্থা। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লাম।
গোসলও ত করা হয়নি। রুমে এসে উকি দিয়ে কাউকে দেখলাম না।
উনি তাইলে হয়ত গোসলে গেছেন। বুঝিনা দিনে ২বার করে কিসের এত গোসল। সোফায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। বের হলে আমি যাব তাই।
কিছুক্ষণ পর টেলিফোন বেজে উঠল। আমি উঠিয়ে কানে দিলাম। পিশামশাই এর ফোন।
– কিরে ফোন দিলে ধরিস না কেন? সেই সকাল থেকে দিচ্ছি।
পিশামনির উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে। বলে উঠলাম, এখানে আমাকে একা রেখে কেন গেলা?
– কেন কি হয়েছে?
আমি রাগের কারনে আর নিজের মুখ সামলাতে পারলাম না। অভিমান করে বললাম, “কি হয়নি? আমাকে বাসা থেকে আজ বের ই করে দিয়েছেন উনি।”
পিশা মনি গম্ভীরমুখে বললেন, কে? শাওন?
আমি মনে মনে বললাম, অনেক খাটিয়েছেন আজ সারাদিন আমাকে। এবার আপনার পালা।
– ত আর কে? আম কিছুই বলিনি করিনি। তাও শুধু শুধু আমাকে সারাদিন বাহিরে রেখে দিয়েছেন।
আমি কান্না কান্না ভাব করে বললাম।
পিশা চুপ করে আছে। আমি আরো বললাম, আর আমাকে সকাল থেকে খেতেও দেয়নি। শুধু সকাল কেন আজ ও নাকি খেতে দিবেনা। কি জানি আরো কত কি করবেন আমার সাথে। আমাকে না খেতে দিয়েই মারবেন মনে হয়। এখন যদি উনি জানতে পারি আমি তোমাকে সব বলেছি তাহলে ত আমাকে মেরেই ফেলবে। এমনিই কত অত্যাচার করে।
আমি কাদো কাদো গলায় কথা গুলি বললাম।
পিশামনি বলল, এমন ছেলে ত শাওন না। তুই সত্যিই কিছু বলিস নি?
আমি ভ্রুকুচকে বললাম, তুমি আমাকে সন্দেহ করো? উনি এমন ই। রাক্ষস টাইপ। কখন আমাকে খেয়ে ফেলে।
অভিনয় শুরু করলাম।
পিশা বলল, আচ্ছা আমি দেখিছি। ওকে বলব না কিছু ভয় নেই।
– জলদি দেখো।
অভিনয় শেষ করে হাসি হাসি মুখ নিয়ে ফোন রাখতে যাব তখন মনে হলো কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আস্তে করে ফোন টা রাখলাম। পাশে তাকাতেও ভয় হচ্ছে। সেই কেউ আর অন্য কেউ না শাওন ই তাকিয়ে আছে। গোসল সেরেই অইখানে দাঁড়িয়ে শুনছিল হয়ত। চুল ভিজা ভিজা। একটা ট্রাউজার টাইপ প্যান্ট পরা কিন্তু শার্ট এখনো পরেনি।
আমি ঠোট কামড়ে ধরে আড় চোখে তাকালাম। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে একবার উনার চোখের দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হাসি দিলাম।
নিজের মন কে বুঝাতে লাগলাম, উনি কিছু শুনে নাই হাহা। তাই না? তাই ই হবে।
আমি আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালাম। শাওনের চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠেছে।
এই নিরবতার ভয়াবহ আবহাওয়া দূর করতে আমি বলে উঠলাম, হেহে…. আ…আমি তাহলে গো..গো…গো…গোসলে যাই।
মিথ্যা হাসি মুখে টেনে বললাম।
শাওন স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে ব্যঙ্গ হাসি মুখে এনে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, “তুমি কিছুই বলোনি! কিছুই করোনি? আমি তোমাকে খেতে দেইনা রাইট? আমি তোমার সাথে কত কি করি! অনেক অত্যাচার করি। আমি এমন ই ছেলে? আর কি যেন? রাক্ষস টাইপ!
ওনার এই হাসি আমার সুবিধার মনে হলোনা।আমার কলিজাটা উড়ে গেল। ফাসির আসামীর মত লাগছে। সব শুনে নিয়েছে। এটা কোনো কথা? আর একটু গোসল করতে পারত না।
কথাগুলো বলতে বলতে উনি আমার কাছে এসে পরলেন। তাই আমি একটু করে পিছিয়ে যেতে লাগলাম। শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে।
নিজের পৌষ মাস চেয়েছিলাম কিন্তু এখন ত ওনার চোখে আমি আমার সর্বনাশ দেখছি।

চলবে…..

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.