১৬ বছর বয়স | পর্ব – ৭

১৬ বছর বয়স

“….আপনি অনেক ভারী।” আমি চোখ ছোট ছোট করে অভিযোগের সুরে বললাম।
শাওন আমার কাছ থেকে সরে উঠে দাড়িয়ে কপাল কুচকে আমার দিকে তাকালো। আমিও উঠে বসলাম। শাওন কিছু বলতে যাবে এমন সময় ওর ফোন বেজে উঠল।
– হ্যা সুমনা।
আমি আড় চোখে তাকালাম।
ওপাশ থেকে সুমনা কিছু বলল। তারপর শাওন বলল, “হ্যা আমি আসছি। yeah.”
কথা গুলি বলতে বলতে শাওন রুম থেকে বের হয়ে গেল। এবারো সুমনা আমাকে বাচিয়ে দিল।
আমি হাফ ছেড়ে হাতের পাখিগুলোর দিকে তাকিয়ে বললাম, যাক গরিলার থেকে এদের বাচাতে পারলাম। কিন্তু হাতের মুঠোয় চাপ খেয়ে পাখি দুইটা চ্যাপ্টা হয়ে আছে। তুলা দিয়ে যেহুতু তৈরি তাই অবশ্যই আবার আগের অবস্থায় আনা যাবে। যাই এখন আগে গোসল সেরে নিই। পাখি দুটোকে নিজের ল্যাগেজ এর ভিতরে রেখে দিলাম। গোসল সেরে বের হলাম। এত বড় বাসা পুরা ফাকা। একা একা থাকতেও ভাল্লাগেনা। হঠাৎ বকুলের কথা মনে হলো। ইস কত খেলেছি আমরা একসাথে। কোথায় সে আর কোথায় আমি এখন! একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে চিন্তা করতে লাগলাম যে কি করা যায়!
উনি ভোরে উঠেই সব রান্না করে যান। নাহলে রান্না করা যেত। ওহো আমি ত নাস্তাই করিনি। খাবার টেবিলের দিকে গেলাম দেখলাম নাস্তার মেনু রুটি আর সবজি। যাক চলবে।

“বুঝলে বৌদি ভাবছিলাম মিলাকে ঢাকার কোনো এক কলেজে ভরতি করিয়ে আসব। সামনেই ত ভরতি।” বললেন পিশামশাই।
শাওনের মা কোনো কথা না বলে চাকু দিয়ে পেয়াজ কুচি করতে লাগলেন।
পিশামশাই মাথা চুলকে বিভ্রান্ত হয়ে বললেন, কি হলো! হ্যা না কিছুই ত বলছ না।
শাওনের মা একবার তাকিয়ে আবার পেয়াজ কাটতে কাটতে বললেন, দেখো যা ভালো বুঝো করো। এমনিও আমি ওই মেয়ের ভাব ভঙ্গী বুঝিনা।
বলতে বলতে কপাল কুচকে ফেললেন তিনি।
পিশামশাই পারমিশন এর আশায় ছিলেন। যাক পাওয়া ত গেল।
একটু অন্য দিকে সরে আমাকে ফোন দিলেন।
-হ্যালো
আমি গম্ভীরভাবে মুখ ভার করে বললাম, হ্যা বলো।
পিশামশাই বললেন, রাগ করে আছিস নাকি!
– না, আমি ত অনেক খুশি হয়ে আছি।
বুঝলেন রাগ করেছি তাও আমার এই কথায় মনোযোগ না দিয়ে বললেন, তোকে কলেজ ভর্তি করাব জলদিই। দেখবি আর বোর লাগবে না সারাদিন কলেজেই কেটে যাবে।
শুনে একটু খুশি খুশি লাগল। যাক বাবা এই ঘরে পরে পরে মরতে হবে না তাইলে।
– কিরে কিছু বলিস না কেনো!
মুখ থেকে খুশি সরিয়ে আমি গম্ভীর গলায় বললাম, ঠিক আছে। কিন্তু তুমি আমাকে নিতে কবে আসবে?
– ইয়ে মানে…
হঠাৎ কেউ পিশামশাইকে ডাক দিল তাই এই কথাটা চাপা পরে গেল।
– আচ্ছা শোন পরে কথা বলি ডাক পরেছে।
ফোন টা নামিয়ে রাখলাম। তারপর কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে ঠোঁটের কাছে দুই আঙুল ধরে চিন্তা করতে লাগলাম কি করা যায়। ওই পেনটিং আকা রুম টায় যেতে ইচ্ছা করল। তাই আবার ওই রুমটায় ঢুকলাম।

“তুই এই প্রজেক্ট কমপ্লিট করতে পারবি? নাহলে আমাকে দিয়ে দে।” সুমনা বলল।
শাওনের বা হাতে একটা ফাইল আর ডান হাতে কফির মগ নিয়ে অফিসের কাচের জালানার সামনে দাড়িয়ে ফাইলের দিকে তাকিয়ে ছিল। সুমনার কথা শুনে স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে বলল,
– তোর কেন মনে হলো আমি পারব না।
সুমনা দুই হাত টেবিলে রেখে তার উপর ওর মুখটা রেখে বসে ছিল।
– পারবি না এমন না। জাস্ট…
– বিজনেস বিজনেসের জায়গায় আর পারসোনাল প্রবলেম আলাদা বিষয়।
সিরিয়াসলি কথাগুলো বলতে বলতে কফির মগে চুমুক দিল শাওন।
সুমনা হেসে বলল, যাক ভাল তাইলে।
– রবিনের অনেক দিন খবর নাই।
শাওন নিজের চেয়ারের দিকে আসতে আসতে বলল।
সুমনা টেবিল থেকে মুখ উঠিয়ে ক্লান্ত স্বরে বলল, ওর মা আবার অসুস্থ।
– অহ
– যাই হোক। চল মিটিং আছে। আজ মেবি জলদি জলদি বাসা যাওয়া যাবে।
সুমনা জ্বলজ্বল চোখে হাসিমুখে বলল।
শাওন হাতে ফাইল নিয়ে বলল, নে চল।

ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। সবে সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। চাঁদ মামা মেঘের পিছনে লুকিয়েছে। রুমে থাকতে আর ভাল লাগছিল না।
দম বন্ধ হয়ে যাবে এইরকম অবস্থা হচ্ছিল। তাই দরজা টা অল্প একটু খোলা রেখে ছাদে চলে এসেছি। খোলা না রাখলে ডোর লক এর জন্য দরজা বছর বন্ধ হয়ে যাবে তারপর পাসওয়ার্ড দিতে হবে তবেই খুলবে। বলা যায় না শাওন আসতে দেরি করলে আমাকে আবার বাহিরেই থেকে যেতে হবে। তাই রিক্স নিলাম না। বিল্ডিং টার ছাদ আমাদের ফ্লোরের উপরেই।
আমি আশেপাশে দেখতে লাগলাম। সোজা তাকাতেই দেখলাম গেটের একটু পাশে একটা গাড়ি আর সেই গাড়ির সামনে হালকা ভাবে ভর দিয়ে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। অন্ধকার নেমে আসলে রাস্তার লাইট আর গেটের সামনের লাইটের কারনে নিচের সবকিছু স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে।
মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগছে। কোথায় দেখেছি!
মনে পরছে না। মনে করার চেষ্টায় মেয়েটার দিকেই তাকিয়ে রইলাম।
হঠাৎ দেখলাম মেয়েটা হেটে এসে অন্য একটা গাড়ির সামনে দাড়িয়ে গেল।
আমি হা হয়ে গেলাম। মেয়েটার কি ভয় ডর নেই এভাবে অন্য একটা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে গেল! গাড়িটা ভাগ্যিস সময় মত থেমেছিল।
কিন্তু একটু খেয়াল করতেই দেখলাম থেমে যাওয়া গাড়ি থেকে শাওন নেমে আসল।
আমি অবাক হয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলাম। শাওন নেমে আসতেই মেয়েটা এসে শাওনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কিছু বলতে লাগল।
এই মেয়েটাও কি শাওনের ফ্রেন্ড? পরক্ষণেই একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম, যে হয় হবে আমার কি। কথা ত হচ্ছে কিছু কিন্তু আমি শুনতে পাচ্ছিনা। পাওয়ার কথাও না। তাই শুধু দেখেই যেতে লাগলাম। অল্প কয়েক কথা হতেই শাওন নিজের গাড়ির দিকে ঘুড়তেই মেয়েটা পিছন থেকে শাওনকে জড়িয়ে ধরল। সেই মুহুর্তে আমি হাই তুলছিলাম কিন্তু অই ঘটনা দেখে হা করেই রয়ে গেলাম আর আমার চোখ কপালে উঠে গেল।
এই মেয়ে ফ্রেন্ড হ হবেই না। তাইলে? আরো অবাক হয়ে চিন্তা করালাম, তারমানে এখন কি দাড়াল বিষয়টা? এখন আমার আছে দজ্জাল শাশুড়ী, গরিলা বর আর এই সুন্দরী সতিন! বাহ মিলা বাহ। তোর মত কপাল কি সবার হয়! বাহ! বাহ বাহ!
হা করা অবস্থাতেই ছাদ থেকে নামতে লাগলাম।
“What the hell are you doing?” শাওন রেগে দাতে দাত চেপে বলল।
– আমি ভুল করেছি। কিন্তু সেই ভুলের কারনে তুমি এত বড় একটা সিদ্ধান্ত কিভাবে নিলে!
সুইটি কাদতে কাদতে বলল।
“Let go of me” শাওন দুই হাত মুঠ করে প্রচন্ড রেগে কঠর গলায় বলল।
সুইটি তাও ধরেই রইল আর কাদতে লাগল। এজন্য এক হেচকা টানে হাত ছাড়িয়ে দিলো শাওন।
– Stop your lame drama, ok? ভুল ত আমার ছিল। আমি তোমাকে চিনতেই ভুল করেছি। সুবিধাবাদী মেয়ে তুমি।
রাগে দাতে দাত চিপে বলল শাওন।
সুইটি ছলছল করা অবাক চোখে শাওনের দিকে তাকালো।
– get the hell out of here. I don’t wanna see you again.
বলেই শাওন গাড়িতে উঠে সুইটির দিকে না তাকিয়েই দুইবার হর্ন বাজালো কারন সুইটি গাড়ির সামনে দাড়িয়ে ছিল।
সুইটি চোখের জল মুছে সরে দাড়ালো। শাওন গাড়ি নিয়ে গেট দিয়ে ঢুকে পরল।
আমি সোফায় দুই পা তুলে আসন করে বসে চিন্তা করতে লাগলাম এই মেয়েটা এর মত গরিলা ছেলেকে ভালোবাসে? কিভাবে? রাক্ষস একটা।
শাওন দরজা খুলে ঢুকল। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। ওনাকে দেখে সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে পা নামিয়ে বসলাম।
আড় চোখে ওর দিকে তাকালাম। দেখলাম গোমড়া মুখ করে নিজের জুতা খুলে দরজার পাশের র‍্যাকে রাখছে। আমি আবার সামনের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম ঝগড়া করে এসেছে নাকি? তারপর মাথা না সূচক নাড়িয়ে চিন্তা করলাম মেয়েটা ত জড়িয়ে ধরেছিল ঝগড়া বলে ত মনে হয়না। যাই হোক, হবে কিছু একটা। চোখ বাকা করে দেখলাম উনি নিজের রুমে চলে গেলেন। আমি মুখ ভেংচি দিয়ে উঠে দাড়ালাম। যাই আগে ভাগে খেয়ে নিই।
আমি সব খাবার গরম করে টেবিলে আনলাম। তারপর প্লেট নিয়ে বসতে বসতে শাওনের রুমের দিকে তাকালাম। ভ্রু কুচকে মনে মনে বললাম লাইট ত জ্বলছেই। খাবেন না উনি? প্রতিদিন ত এই টাইমেই ডিনার করেন।
পরক্ষনেই ভাবলাম, আমার কি, হুহ!
ডিনার সেরে চিন্তা করতে লাগলাম সব ফ্রিজে ঢুকাব কি না। উনি ত এখনো ঢং করে খেতে আসেন নি।
কি করব? ওনার রুমে যাব জিজ্ঞাসা করতে?
দরজা ঠেলে ঢুকলাম। রুমের এই মাথা থেকে অইমাথায় কেউ ই নেই। বাথরুমের দরজাও অর্ধ খোলা।
ঠোঁট টা একটু কুচকে চিন্তা করতেই মাথায় এলো বেলকনির কথা। তাই আমি বেলকনিতে গিয়ে ঢুকলাম। দেখলাম বাবুসাহেব বেলকনির অই প্রান্তে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন। টাই টা ঢিলে করে গলায় ঝুলানো। আর দুই হাতের কনুই অব্দি শার্ট মোড়ানো। রুমের হালকা আলো এসে বেলকনিতে পরেছে। আমি কোনো কথা না বলে ইচ্ছে করে একটু কেশে নিলাম।
উনি মাথা না তুলেই গম্ভীর গলায় বললেন, get out.
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম, হ্যা হ্যা গেট আউট ত হবই আপনার চেহারা দেখতে ত আর আসিনি।
উনি এবার মাথা তুলে তাকিয়ে রাগে কটমট করে বললেন, শুনতে পাওনা?
আজীব ত আমি কি করেছি যে আমার সাথে এমন করছেন উনি!
তাই আমি চোখ ছোট ছোট করে ভ্রুকুচকে বলে উঠলাম, হ্যা শুনতে পাচ্ছি। আমি শুধু এটাই বলতে এসেছি যে…
উনি আমার কথা আর শেষ করতে দিলেন না তার আগেই এসে আমার দুই বাহু চেপে ধরলেন।
“আহ লাগছে ছাড়ুন আমাকে”, আমি ভ্রুকুচকে বললাম।
“ভাল ভাবে বললে তুমি কিছুই করতে চাও না”
আমি অবাক হয়ে তাকালাম।
উনি আমার এক হাত ধরে টানতে টানতে রুম থেকে বের করে দিয়ে সজোরে দরজা আটকে দিলেন।
আমার হাত দুটো ব্যথা করছে। ইচ্ছা করছে দরজায় লাত্থি মারি। আসলে দরজায় না ওনার মাথায় মারতে পারলে ভাল লাগত।
আমি রাগে কটমট করতে করতে সোফায় গিয়ে বসলাম। সোফাটা অত বড় না যে পা টান টান করে ঘুমানো যাবে। শাওনের রুমের সোফাটা আর একটু বড় যদিও।
এই বাড়ি আসার পর থেকে আমার ঘুম গেছে। আগে ঘুমাতাম ঘাটে, তারপর সোফাতে,কয়দিন পর কিনা মেঝেতেই ঘুমানো লাগে, তারপর কিনা ঘরের বাহিরে। মুখ দিয়ে একটা শ্বাস বের করে দিলাম। ল্যাগেজে থাকা পাখি দুইটি নিয়ে আসতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু তা আর পারা যাবে না। অসহ্য। তাই আস্তে হেটে ওই কোনার রুমটায় আবার গিয়ে ঢুকলাম। আপাতত এই আঁকা পাখি দুইটি দেখেই কাটাই। দেখতে দেখতে হঠাৎ আবার সেই কোনার ছবিটার দিকে নজর পড়ল। এগিয়ে গিয়ে হাতে নিলাম ছবিটা। ছবিটা এক হাত দিয়ে একটু পরিষ্কার করে নিলাম। হঠাৎ খেয়াল হলো যে এই মেয়েটাই আজ এসেছিল।
ছবিটা ভাল করে দেখছিলাম তখনি ফট করে রুমে শাওন ঢুকল। আমি টের পেয়ে চোখ বড়সড় করে হাতের ছবিটা শক্ত করে ধরে পিছনে তাকালাম। শাওনের মুখের রাগী ভাব ই বলে দিচ্ছে আমার এখানে ঢোকাই উচিত হয়নি।
এই রে, এখন!
শাওন খেতে এসেছিল মনে হয়। তখনই সন্দের বশে এই রুমে এসেছে। আসবে নাই বা কেন! আমিই ত বোকার মত দরজা টা অল্প খুলে রেখেছিলাম তাই হয়ত আরো জলদিই বুঝে গেছে। আমিও না।
মনে মনে বললাম, চট করে কিছু ভাব মিলা কি হবে এখন!
আমার মুখে ত স্পষ্ট ভয় ফুটে উঠেছে। রীতিমতো ঘামছিও। মুখের উপর জোড় করে হাসি টেনে এনে আমি বোকার মত ভয়ে ভয়ে হাসতে বললাম,”এই রুমে শব্দ হচ্ছিল আ…আমি মনে করলাম বিড়াল কি..কিনা, হেহে।”
কি ফালতু এক্সকিউজ দিলাম সেটা ওনার কটমট চাহনিতেই বুঝলাম। তাছাড়া এত উপরের বিল্ডিং এ বিড়ালও বা কিভাবে আসবে। হঠাৎ খেয়াল করলাম উনি আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আছেন।
শেষ সব শেষ। এখন কি বলব? সতিনের ছবিতে হাত দেওয়া উচিত হয়নি। আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। উনি এসে ঝট করে আমার হাত থেকে অই ছবিটা নিয়ে আবার সেই একই জায়গায় ফেলে আমার দুই বাহু আবার চেপে ধরলেন। আমি চমকে উঠে ওনার হাতের দিকে তাকালাম।
“মানা করেছিলাম না?” জোড়ে বলে উঠলেন উনি।
আমার হাত এত জোড়ে ধরার কারনে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম, উফ ছাড়ুন আমাকে।
উনি হুট করে এক বাহু ধরে টানতে টানতে আমাকে ডায়নিং এর সামনে এনে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। আমি ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে ডায়নিং টেবিলের সাথে ধাক্কা খেলাম আর ডান হাত গিয়ে পরল টেবিলের গোল টিনের গ্লাসের মত বস্তুতে সাজিয়ে রাখা ছুড়ি উপর সাথে সাথে ডান হাত কেটে রক্ত বের হয়ে গেল। সেই গোল টিনের গ্লাসটা সহ এর ভিতরের ছুরি, কাটা চামচ, চামচগুলো নিচে পড়ে গেল।
আমি আমার বা হাত দিয়ে ডান হাত চেপে ধরলাম। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরতে লাগল। উনি আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে তারপর নিজের রুমে চলে গিয়ে সজোরে আবার দরজা লাগিয়ে দিলেন।
টেবিলের খাবার গুলো ওভাবেই পরে আছে। আমি ব্যথায় ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলাম। তারপর কিচেনের কাছে গিয়ে ট্যাপ ছেড়ে হাত টা ট্যাপের নিচে ধরলাম। চোখ থেকে এখন আর পানি পরছে না। অনেক সময় অইভাবে হাত ট্যাপের নিচে রেখে ট্যাপের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর হাতের রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেল। যাক ভিটামিন কে ব্যাটা তার কাজ টা করেছে তাহলে!
ট্যাপ বন্ধ করে এসে সোফায় বসলাম। একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজের জীবনের জন্য উপহাসের এক ম্লান হাসি দিলাম। সোফার পিছনে যে ছোটো বালিশ ছিলো সেটা মাথার নিচে দিয়ে জড়সড় হয়ে শুয়ে পরলাম। ডান হাত টা সোফা থেকে হালকা বাহিরে বের করে রাখলাম। অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলাম।
আজ একটু আগেই ঘুম ভাংলো। উঠে বসে ডান হাত দিয়ে চোখ ডলতে গিয়ে দেখলাম সাদা কিছু একটা দিয়ে কাটা জায়গাটা ব্যান্ডেজ করা। পাশেই টি-টেবিলে একটা সেভলন ক্রিম রাখা। কপাল কুচকে সেটার দিকেও তাকালাম।
তারপর ডান হাত টা নিজের চোখের সামনে ধরে হা করে রইলাম। ব্যাপার টা কি! আমি ত রাতে এমন কিছু বেধে ঘুমাই নি… তাহলে??
এটা কেমন ম্যাজিক?!!! অবাক চোখে মুখ ঘুরিয়ে শাওনের রুমের দরজার দিকে তাকালাম আর মুখ দিয়ে বলে উঠলাম “উনি করেছেন?”

চলবে…

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.