আমি পদ্মজা

আমির ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে। পদ্মজা দূরে সরে দাঁড়ালো। আমিরের কৃষ্ণ মুখে, বিপর্যস্ত পদ্মজার নিষ্কম্প স্থির চোখের দৃষ্টি থমকে আছে। পদ্মজা থেমে থেমে বললো,’ তাহলে আমি…আমিও বঞ্চিত ভালোবাসা থেকে!’

হৃদয়ের প্রলয়ঙ্করী ঝড় ক্ষণমুহূর্তের জন্য থামিয়ে আমির বললো,’ ছাড়ো পদ্মজা।’
পদ্মজার কান্না থেমে যায়! হাত দুটি আমিরের পিঠ থেকে সরে যায়। পদ্মজা তার জলভরা নয়ন দুটি মেলে আমিরের দিকে তাকালো। তার রক্ত জবা ঠোঁট দুটি কাঁপছে। হোঁচট খাওয়া গলায় পদ্মজা বললো,’ আমার হৃদয়ের আকুলতা আপনাকে ছুঁতে পারছে না?’
আমির ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে। পদ্মজা দূরে সরে দাঁড়ালো। আমিরের কৃষ্ণ মুখে, বিপর্যস্ত পদ্মজার নিষ্কম্প স্থির চোখের দৃষ্টি থমকে আছে। পদ্মজা থেমে থেমে বললো,’ তাহলে আমি…আমিও বঞ্চিত ভালোবাসা থেকে!’
পদ্মজার দুই চোখ বেয়ে জল পড়ছে। আমির আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। চোখের পলকে প্রস্থান করলো। পদ্মজা ধাতস্থ হয়ে আচমকা ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মতো চিৎকার করে উঠলো,’ ধিক্কার নিজের উপর! জানোয়ারকে মানুষ হওয়ার সুযোগ দিয়েছি! ধিক্কার নিজের ভালোবাসার উপর! প্রতিটি কাজের জন্য আপনি শাস্তি পাবেন। আমি আপনার আজরাইল হবো।’
পদ্মজার গলার হাড় ভেসে উঠে। তার চিৎকার অন্দরমহলকে কাঁপিয়ে তুলে। কাঁদতে-কাঁদতে সে মেঝেতে বসে পড়লো। আমিরের প্রত্যাখ্যান তার ভালোবাসাকে ক্রোধে পরিণত করছে। পদ্মজা রাগে বিছানার চাদর টেনে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেললো। বুকের ভেতরটা পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে! ঠোঁট শুকিয়ে কাঠ! পানি প্রয়োজন!

ফরিনার কবরের চারপাশে বাঁশের বেড়া দেয়া হয়েছে। আমির ফরিনার কবরের পাশে এসে বসলো। হাতের ব্যাগটা পাশে রেখে বেড়ার ফাঁক দিয়ে ফরিনার কবরে হাত বুলিয়ে দিল। গাঢ় স্বরে ডাকলো,’আম্মা! আমার আম্মা।’
চারিদিকে নিস্তব্ধতা। অন্দরমহল থেকে কোনো শব্দ আসছে না। নিস্তব্ধতা ভেঙে- ভেঙে মাঝেমধ্যে পাতার ফাঁকেফাঁকে পাখ-পাখালির ডানা নাড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমিরের ঠোঁট দুটো কিছু বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না। অথবা সে কিছু বলছে কিন্তু শব্দ হচ্ছে না। আড়ষ্টতা ঘিরে রেখেছে তাকে। সে তার মৃত মা’কে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। আমির অনেকক্ষণ নতজানু হয়ে চুপচাপ বসে রইলো। তারপর উঠে দাঁড়ালো। ব্যাগ হাতে নিয়ে পাতালঘরের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করে। লতিফা অন্দরমহল থেকে অস্থির হয়ে বের হয়। তার হাঁটায় তাড়াহুড়ো।
আমির ডাকলো,’ লুতু।’
লতিফা দাঁড়াল। আমির বললো,’ পদ্মজার খেয়াল রাখবি। খাওয়া-দাওয়া ঠিকঠাক রাখবি। আর, যখন যা বলে করবি।’
লতিফা মাথা নাড়াল। আমির প্রশ্ন করলো,’কোথায় যাচ্ছিস?’
আমিরের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে লতিফা বললো,’ ভাইজান,তোমারে কিছু কইতাম।’
‘বল।’
‘মৃদুল ভাইজানে আর তার আম্মা-আব্বা আইছিলো। মৃদুল ভাইজানের আম্মা মৃদুল ভাইজানরে পূর্ণার লগে বিয়া করাইতে রাজি হয় নাই। ‘
আমির কপাল কুঁচকাল। বললো,’কী সমস্যা? কেন রাজি হয়নি?’
রিদওয়ান অন্দরমহল থেকে বের হয়ে ফোড়ন কাটলো,’আমির,তোর সাথে কথা আছে।’
আমির পিছনে ফিরে তাকালো না। বললো,’পরে শুনব।’
রিদওয়ান বললো,’আমি জানি কেন রাজি হয়নি। আয়,ওদিকে যেতে যেতে বলি।’
লতিফা রিদওয়ানের দিকে তাকায়। রিদওয়ান তার চোখের দৃষ্টি দিয়ে লতিফাকে সতর্ক করে। আমির রিদওয়ানের দিকে ফিরে বিরক্তি নিয়ে বললো,’ আরে ভাই,যা তো। লুতু কী কী হয়েছে বলতো?’
রিদওয়ানের সামনে রিদওয়ান সম্পর্কে কিছু বলার সাহস লতিফার হলো না। সে বললো,’ মৃদুল ভাইজানের আম্মা পূর্ণার গায়ের রঙ পছন্দ করে নাই। কইছে,কালা ছেড়ি ঘরে নিব না।’
আমির রাগ নিয়ে বললো,’ফালতু মহিলা! পূর্ণা জানে? কোথায় পূর্ণা?’
‘হ জানে। এই বাড়িত আছিলো। এহন হেই বাড়িত গেছে।’
‘মৃদুল…মৃদুল কী বললো?’
লতিফা পুরো ঘটনা খুলে বললো। এড়িয়ে গেল পদ্মজার ব্যাপারটা। সে মনে মনে পরিকল্পনা করলো,রাতে যদি রিদওয়ান অন্দরমহলে থাকে সে পাতালঘরে গিয়ে আমিরকে সব বলবে। আমির সব শুনে বললো,’ মৃদুল ছাড়া এই পরিস্থিতি ঠিক হবে না। দেখা যাক,ও কী সিদ্ধান্ত নেয়। আর ওই মুখছুটা মহিলাকে আমি একবার পাই শুধু!’
আমির রাগে গজগজ করতে করতে সামনে এগিয়ে যায়। রিদওয়ান লতিফাকে চাপা স্বরে হুমকি দিল,’ গতকালের ঘটনা যদি আমিরের কানে যায় তোর খবর আছে। ল্যাং* করে গাছে ঝুলিয়ে রাখবো।’
লতিফা চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলে। বললো,’ বাড়ির বাইরে গেলেই আমির ভাইজানে সব জাইননা যাইব। তহন ?’
লতিফার প্রশ্ন শুনে রিদওয়ান চিন্তায় পড়ে যায়। সে আমিরের পিছনে যেতে যেতে ভাবতে থাকে,এই পরিস্থিতি কী করে সামাল দিবে! আজ না হয় কাল আমির তো সব জানবে! আমির জঙ্গলে প্রবেশ করে রিদওয়ানকে বললো,’ কী কথা না বলবি!’
রিদওয়ান বললো,’ শনিবার রাতে ভোজ আসর হবে। চাচা সিদ্ধান্ত নিল।’
‘আচ্ছা।’
‘ছাগলের মাংস পুড়ানো হবে।’
‘কয়টা?’
‘দুটো।’
‘বিরাট আয়োজন!’
দুজন কথা বলতে বলতে পাতালঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। রিদওয়ান ঘাস সরিয়ে দরজা খুললো। এক পা সিঁড়িতে দিতেই আমির রিদওয়ানের কাঁধ চেপে ধরলো। ফিসফিসিয়ে বললো,’এখানে কেউ আছে!’
আমিরের কথা শুনে রিদওয়ানের বুক ছ্যাঁত করে উঠলো। এমতাবস্থায় কে দেখে ফেললো! রিদওয়ান চারপাশে চোখ বুলায়। কোথাও কেউ নেই! আমিরের প্রখরতা নিয়ে তাদের কোনো সন্দেহ নেই। আমির যেহেতু বলেছে এখানে কেউ আছে। মানে আছে। রিদওয়ান চাপাস্বরে বললো,’এখন কী করব?’
আমির দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যাক্তি। সে চারপাশে আরো একবার চোখ বুলিয়ে বললো,’ কেউ এখানে থাকলে সে ডান দিকে আছে।’
রিদওয়ান ডান দিকে এগিয়ে যায়। তখনই একজন লোক ঝোপঝাড়ের মাঝখান থেকে উঠে দৌড়াতে শুরু করে। রিদওয়ান উল্কার গতিতে তাকে ধরে ফেললো। লোকটার মাথায় চুল নেই। পরনে লুঙ্গি আর ফতুয়া। পাটকাঠির মতো চিকন লোকটা ইয়াকুব আলীর সহকারী পলাশ মিয়া। বয়স ত্রিশের কাছাকাছি অথবা ত্রিশই। রিদওয়ান পলাশকে ঘাড়ে ধরে আমিরের সামনে নিয়ে আসে। দেখে মনে হচ্ছে,রিদওয়ান জীবিত ইঁদুর ধরেছে। আমির পলাশকে প্রশ্ন করলো,’ নির্বাচনের তো অনেক দেরি আছে। এখনই আমাদের পিছনে পড়ার রহস্যটা বুঝলাম না।’
পলাশ পাতালঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে বললো,’ এইডা কিতা? এইহানে কিতা করেন আপনেরা?’
আমির হাসলো। পলাশের মাথায় টোকা মেরে বললো,’ এই দৃশ্য দেখা তোর একদম ঠিক হয়নি। আয়ুটা কমে গেল।’

আমির পাতালে নেমে গেল। পলাশ ছটফট করতে থাকে। সে কিছুতেই ভেতরে যাবে না। সে ভয় পাচ্ছে। রিদওয়ান পলাশকে টেনে ভেতরে নিয়ে যায়। আমির বিওয়ানের চেয়ারে এসে বসলো। রিদওয়ান পলাশকে বেঁধে মেঝেতে ফেললো। চিৎকার,চেঁচামেচি করার জন্য পলাশ রিদওয়ানের হাতে দুই-তিনটা থাপ্পড় খেল। পলাশ কাঁদো-কাঁদো হয়ে আমিরকে বললো,’ আপনেরা এমন করতাছেন কেন আমার লগে? আমারে ছাইড়া দেন।’
রিদওয়ান আমিরকে বললো,’তুই সামলা। আমি যাই,চাচার সাথে কথা আছে।’
আমির ইশারা করলো, যেতে। রিদওয়ান চলে গেল। পলাশ চারপাশ দেখে ঢোক গিললো। পাতালঘর মৃদু লাল-হলুদ আলোতে ডুবে আছে। কেমন ভূতুড়ে পরিবেশ! তার মনে হচ্ছে,সে কবরে আছে। আর সামনে ঘাড় বাঁকিয়ে বসে আছে স্বয়ং যমদূত! আমির এক পা চেয়ারে তুলে বললো,’ তারপর,পলাশ মিয়ার এখানে কোন দরকারে আসা হয়েছে?’
পলাশ হাতজোড় করে বললো,’আমারে ছাইড়া দেন। আমি এমন কবর আর দেহি নাই। আমার কইলজাডা কাঁপতাছে।’
আমির ধমকে বললো,’এখানে আসছিলি কেন?’
পলাশ দ্রুত বললো,’ ইয়াকুব চাচা পাডাইছে।’
‘কোন দরকারে?’
‘আমারে খালি কইছে,মজিদ মাতব্বরের বাড়িত যা। আমার মনে হইতাছে ওই বাড়িত কিছু একটা গোলমাল আছে। কিছু যদি বাইর করতে পারছ তোরে আরেকটা বিয়া দিয়া দিয়াম।’
আমির চমকাল। বললো,’উনার হুট করে কেন মনে হলো এখানে গোলমাল আছে?’
পলাশ কেঁদে বললো,’আমি এইডা জানি না ভাই। আমারে ছাইড়া দেন।’
আমিরের মাথায় কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়ে যায়। কী এমন হলো যে, ইয়াকুব আলী হাওলাদার বাড়ি নিয়ে সন্দেহ করছে! আমির আয়েশি ভঙ্গিতে বসলো। বললো,’ শুনেছি,গত বছর তোর বউকে নাকি হিন্দু এক জমিদারের কিনে নিয়েছে । তারপর তোর বউ আত্মহত্যা করলো! সত্যি?’
পলাশ মেঝেতে কপাল ঠেকিয়ে বললো,’ভাই,আমারে মাফ কইরা দেন। আমি ভুল করছিলাম। আমারে ছাইড়া দেন। আমি কেউরে কিছু কইতাম না।’
আমির বললো,’তুইতো ভাই আমার চাইতেও খারাপ। আচ্ছা,সবসময় তো পাপ কাজ করেছি। আজ একটা ভালো কাজ করার সুযোগ যখন পেয়েছি,করে ফেলি।’
পলাশের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। সে জানে না,এই কবরস্থানের মতো বড় ঘরটায় কী হয়! কিন্তু এখানে যে ভালো কিছু হয় না বুঝা যাচ্ছে। বাঁচতে পারলে পরে এর রহস্য বের করা যাবে। আমির চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। পলাশের মুখে জোরে লাথি দিল। পলাশ আর্তনাদ করে শুয়ে পড়ে। আমির চারিদিকে চোখ বুলিয়েও কোনো অস্ত্র পেল না। সে টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা কাঁচি বের করলো। ধারালো কাঁচি। সে কাঁচি দিয়ে পলাশের মুখে আঁচড় কাটে। হাতে-পায়ে,শরীরে আঁচড় কাটে। পলাশের বিদঘুটে চিৎকার পাতালঘরেই চাপা পড়ে যায়। তার চামড়া ছিঁড়ে রক্ত ঝরতে থাকে। আমিরকে আব্বা ডেকে অনুরোধ করে,তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু সে জানে না, আমির কখনো তার শিকারের প্রতি মায়া দেখায় না। আমির পলাশের পাশে বসলো। দুই-তিনবার মাথা ঘুরাল। খুব নিঃস্ব লাগছে নিজেকে,মাথাটা ফাঁকা লাগছে। সে কাঁচি দিয়ে নিজের হাতে হেঁচকা টান মারে। সাথে-সাথে হাত থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসে। পলাশ আমিরের কাণ্ড দেখে চমকে যায়। আমির কাঁচি রেখে মেঝেতে শুয়ে পড়ে। শূন্যে চোখ রেখে হাসে। হাসতে হাসতে গড়াগড়ি করে দেয়ালের পাশে যায়। ভয়ে পলাশের আত্মা কেঁপে উঠে! আমির দেয়ালের পাশ ঘেঁষে বসে। পলাশের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে উঠে। হঠাৎ করে তার কী হয়ে গেল? আমিরের উন্মাদ আচরণ দেখে পলাশের গায়ের পশম দাঁড়িয়ে পড়ে। আমির চট করেই উঠে দাঁড়াল। পলাশকে টেনে বসালো। তারপর নিজে গিয়ে চেয়ারে বসলো।
ব্যাগ থেকে কাগজে মুড়ানো বস্তুটি বের করলো। কাগজের ভাঁজ খুলতেই একটা লাল বেনারসি বেরিয়ে আসে। আমির লাল বেনারসি গায়ে জড়িয়ে নিয়ে পলাশকে বললো,’আমার আম্মা ছোটবেলা একটা গল্প বলতেন,এক রাজা প্রতি রাতে বিয়ে করে প্রতি রাতেই বউকে খুন করতেন। তারপর শেষদিকে যে রানিকে বিয়ে করেন সেই রানি রাতজেগে রাজাকে গল্প শোনাতেন। গল্প শেষ হতো না বলে রাজাও রানিকে খুন করতে পারতেন না। রানি এভাবে গল্প বলে-বলে অনেকদিন বেঁচে ছিলেন। এখন আমি তোকে একটা গল্প শোনাব। আমাদের নিয়ম হচ্ছে,যতক্ষণ আমার গল্প চলবে ততক্ষণ তুই বেঁচে থাকবি। গল্প শেষ তোর আয়ুও শেষ।’
পলাশ হাতজোড় করে আকুতি-মিনতি করলো,’ ভাই,আমার জীবন ভিক্ষা দেন। আপনেরা তো ভালা মানুষ ভাই। আপনেরার অনেক নাম। আমারে কেন মারতে চাইতাছেন? আমারে ছাইড়া দেন ভাই।’
পলাশের কথায় আমিরের ভাবান্তর হলো না। সে বেনারসি থেকে ঘ্রাণ নেয়ার চেষ্টা করলো। তারপর শূন্যে চোখ রেখে ঘোর লাগা গলায় বললো,’ এক ছিল দুষ্টু রাজা! নারী আর টাকার প্রতি ছিল তার চরম আসক্তি। যে নারী একবার তার বিছানায় যেত তার পরের দিন সে লাশ হয়ে নদীতে ভেসে যেত। রাজা এক নারীকে দ্বিতীয়বার ছুঁতে পছন্দ করতো না। কিন্তু সমাজে ছিল রাজার বেশ নামডাক! সবার চোখের মণি। খুন করা ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী। তার কালো হাতের ছোঁয়ায় বিসর্জন হয়েছে হাজারো নারী। প্রতিটি বিসর্জন রাজার জন্য ছিল তৃপ্তিকর। তাকে শাস্তি দেয়ার মতো কোনো অস্ত্র ছিল না পৃথিবীতে। ভাইয়ের সাথে বাজি ধরে হেরে যায় রাজা। শর্তমতে,ভাইয়ের জন্য এক রাজকন্যাকে অপহরণ করতে যায়। সেদিন ছিল বৃষ্টি। সন্ধ্যার আগ মুহূর্ত। রাজকন্যার প্রাসাদে সেদিন কেউ ছিল না। রাজা এক কামরায় ওৎ পেতে থাকে। রাজকন্যা আসলেই তাকে তার কালো হাতে অপবিত্র করে দিবে। কামড়ায় ছিল ইষৎ আলো। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর সেই কাঙ্খিত মুহূর্ত আসে। রাজকন্যার পা পড়ে কামড়ায়। রাজকন্যা রাজাকে দেখে চমকে যায়। ভয় পেয়ে যায়। কাঁপা স্বরে প্রশ্ন করে “‘কে আপনি? খালি বাড়িতে কেন ঢুকেছেন?” সেই কণ্ঠ যেন কোনো কণ্ঠ ছিল না। ধনুকের ছোঁড়া তীর ছিল। রাজার বুক ছিঁড়ে সেই তীর ঢুকে পড়ে। রিনঝিনে গলার রাজকন্যাকে দেখতে রাজা আগুন জ্বালাল। আগুনের হলুদ আলোয় রাজকন্যার অপরূপ মায়াবী সুন্দর মুখশ্রী দেখে রাজা মুগ্ধ হয়ে যায়। তার পা দুটো থমকে যায়। রাজকন্যা যেন এক গোলাপের বাগান। যার সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে রাজার কালো অন্তরে। রাজা কী আর তখন বুঝেছিল,সৃষ্টিকর্তা তাকে তার পাপের শাস্তি দেয়ার জন্য সেদিন অস্ত্র পাঠিয়েছিল!’
আমির পলাশের দিকে তাকিয়ে হাসলো। কী মায়া সেই হাসিতে! মায়াভরা সেই হাসি প্রমাণ করে দিল,সেদিনটার জন্য সে কতোটা খুশি!