অঙ্গারের নেশা

প্রানেশার গাল ছেড়ে সুফিয়ান উঠে দাঁড়ালো৷ প্রানেশা পাথরের মতোন শক্ত হয়ে বসে আছে। সুফিয়ান এক গ্লাস পানি পান করে নিজেকে শান্ত করলো। তারপর লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে বিছানায় শুয়ে প্রানেশাকে টেনে নিজের বুকের উপর শোয়ালো। প্রানেশা ঘোর থেকে বেরিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো –
‘ ছাড়ুন আমায়, এমন একজন নিকৃষ্ট মানুষের সাথে আমি সংসার করবো না। ডিভোর্স দেবো আমি ‘
এতক্ষণ নিজের রাগের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও সুফিয়ান ডিভোর্সের কথা শুনে রাগ সীমানা প্রাচীর ভেদ করে ফেললো৷ প্রানেশাকে উল্টো করে বালিশে ফেলে বিছানায় হাত চেপে ধরলো। প্রানেশা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে সুফিয়ানকে দেখছে। তার মতে সুফিয়ান একজন নোংরা মনমানসিকতার মানুষ,নিজের ছোট ভাইয়ের ভালোবাসা নিশ্চিয়ই ভালো কেউ ছিনিয়ে নেয়না। সুফিয়ানের ফর্সা ধবধবে মুখটা রাগে লাল হয়ে আছে৷ প্রানেশার মুখের কাছে মুখ নিয়ে রাগে চিৎকার করে বললো-
‘এই আশা ভুলে যা, এই নিকৃষ্ট মানুষের সাথেই সারাজীবন কাটাতে হবে তোকে৷ কোর্টে গিয়ে ডিভোর্স পেপার রেডি করবি! কীভাবে? কোর্টে তোর প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেবো। একটা কথা ভালো করে শুনে রাখ তুই আগেও আমার ছিলি আর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমারই থাকবি। ‘
তারপর শ্বাস ফেলে হুট করে সুফিয়ান মুখে দুষ্টু হাসি দিয়ে প্রানেশার গলার কাছে নাক ঘষে হালকা কন্ঠে বললো-
‘প্রাণ, আমি চাইলে এখনি বাসর সেড়ে ফেলতে পারি’
প্রানেশা হা করে তাকিয়ে থেকে ভাবলো ‘ লোকটা তো দেখছি ভীষণ লুচু’
একধাক্কা দিয়ে সুফিয়ানকে সরিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো প্রানেশা। সুফিয়ান বাঁকা হেসে উল্টো হয়ে বুকে ভর দিয়ে শুয়ে পড়লো। সুফিয়ানের ঘুম এসে পড়লেও প্রানেশা এপাশ ওপাশ করতে থাকলো। নতুন জায়গায় আসলে প্রানেশার ঘুম আসেনা। এবার বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো। ঘুম না আসায় মেজাজও বিগড়ে যাচ্ছে। প্রানেশাকে উঠতে দেখে সুফিয়ান গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো -‘কী হয়েছে? ঘুমাচ্ছো না কেনো?’
প্রানেশার মনে পড়লো রেয়ানের সঙ্গে প্রেমের শুরুটা হয় ফোনে৷ একটা রং নাম্বারে কল চলে গেছিলো। তারপর প্রানেশা সরি বলতে নিলে থমকে গিয়েছিল এক মোহময় পুরুষ কন্ঠে। রেয়ানকে তখনও দেখেনি প্রানেশা, সম্পর্কের তখন দুই মাস। কত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছিলো প্রানেশা আর রেয়ান! রেয়ান বলেছিলো-
‘ আমাদের বিয়ের পর তোমার ঘুম না আসলে আমি তোমার বুকে মাথা রেখে তোমায় ঘুম পাড়াবো’
প্রানেশা খিলখিল করে হেসে বলেছিলো –
‘এভাবে কী ঘুম আসবে! দেখা যাবে আপনি ঘুমিয়ে পানি হয়ে যাবেন আর আমি ওভাবেই জেগে থাকবো।’
রেয়ান জোর দিয়ে বলেছিলো -‘ঘুম আসতে বাধ্য ‘
সুফিয়ানের ডাকে কল্পনা থেকে বেরিয়ে আসলো প্রানেশা। চোখের কোণায় জমা জলটুকু মুছে নিলো। আবার বালিশে মাথা এলিয়ে দিলো। সুফিয়ান হুট করে এক অদ্ভুত কান্ড করে বসলো। প্রানেশার বুকে মাথা রেখে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে চোখ বুজলো। প্রানেশা হকচকিয়ে বললো-
‘আরে আরে! হচ্ছেটা কী! উঠুন বলছি। আমার বুকে মাথা রাখার অধিকার দেইনি আপনাকে’
সুফিয়ান বললো-
‘ বুকে মাথা রাখার জন্য বিয়েই যথেষ্ট, আমার আর এক্সট্রা কোনো সুপারিশের প্রয়োজন নেই প্রাণ’
প্রানেশা তারপরও কিছুক্ষণ চেষ্টা করলো কিন্তু আর পারলো না, শক্তিতে হেরে ক্লান্ত হয়ে চোখে ঘুম নেমে আসলো৷ প্রানেশা ঘুমিয়ে পড়তেই সুফিয়ান প্রানেশার কপালে আর ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে চাদরটা ভালো লেগেছে টেনে দিলো৷ তারপর বুকে আবারও মুখ গুজে বিরবির করে বললো -‘ তুমি শুধু আমার প্রাণ,আর কারো অস্তিত্ব থাকবে না তোমার মাঝে ‘
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে প্রানেশা দেখলো নয়টা বাজে। সাধারণত সাতটার মাঝেই প্রানেশা জেগে পড়ে। রাতে দেরীতে ঘুম হওয়ায় লেট হয়ে গেছে । মনে মনে প্রানেশা লজ্জা পেলো, স্বামীকে না মানলেও এটা সত্য যে বিয়ে হয়েছে। এখন সে বিবাহিত, এতক্ষণ পর্যন্ত ঘুমানো মানায় না। ভেতরে ভেতরে ভয় লাগছে, শ্বশুরবাড়ির মানুষ জন না জানি কেমন হয়! ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেরোলো সুফিয়ান। সুফিয়ান প্রানেশার দিকে এসে কপালে চুমু খেয়ে বললো- ‘শুভ সকাল প্রাণ, যাও শাওয়ার নিয়ে এসো ‘
সুফিয়ানের কথায় প্রানেশার কেমন যেন ঘোর ঘোর লাগে৷ সুফিয়ান শুধু একটা ব্লু টাউজার পড়ে আছে। পায়ের দিক তাকিয়ে প্রানেশা হা করে তাকিয়ে রইলো। ছেলে মানুষের পা এত ফর্সা হয়! প্রানেশা ঘোরে অজান্তেই ছুঁয়ে বললো ‘এত সুন্দর কেনো!’
সুফিয়ান প্রানেশার মুখভঙ্গি দেখে ঠোঁট টিপে হাসলো।
কানের কাছে দুষ্টু স্বরে বললো -‘পছন্দ হয়েছে? ‘
প্রানেশার ধ্যান ভেঙে গেলো। সামনে তাকিয়ে সুফিয়ানের মুখে দুষ্ট হাসি দেখতেই মনে পড়লো সে কী করেছে! লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেছে প্রানেশার। প্রানেশা দ্রুত খোপা করে উঠে পড়লো। সুফিয়ান হেসে উঠে আলমারি থেকে শার্ট প্যান্ট পড়ে নিলো। প্রানেশা রেডি হয়ে বেড়োতেই সুফিয়ান বললো নিচে যেয়ে সবার সাথে খাবার খেতে। অন্য কোনো কারণ হলে প্রানেশা না করে দিতো কিন্তু বড়দের অসম্মান করতে চায়না সে। তাই সুফিয়ানের পিছু পিছু নেমে এলো। লাল শাড়িতে পুতুলের মতো সুন্দর লাগছে প্রানেশাকে। ডাইনিং টেবিলে বসতেই খেয়াল করলো এতক্ষণ সবাই গল্প করলেও সুফিয়ানকে দেখে সবাই নিচের দিকে তাকিয়ে খাবার খাচ্ছে। কারণটা বুঝতে পারলো না প্রানেশা। সুফিয়ানের বাবা মা খুব ফ্রি মাইন্ডের, প্রানেশাকে খুব আদর করছে। কিন্তু সুফিয়ানের ফুপু এত আদর সহ্য করতে পারছেনা, মুখ ফসকে বললো-‘ নতুন বউ এত দেরি করে ঘুমালে চলে! তোমার উচিত ছিলো সকালে উঠে সবার আগে নাস্তা বানিয়ে সবাইকে খাইয়ে তারপর বসা ‘
প্রানেশা মনে মনে কষ্ট পেলেও মুখে কিছু বললো না। কিন্তু সুফিয়ান খাবার প্লেটটা চামচ দিয়ে খটখট আওয়াজ করে বললো-‘ ফুপুমনি তুমি দেখছি আজকাল খুব সাংসারিক হয়ে গেছো!এত উন্নতি কবে হলো? তুমি তো বিয়ের দুইদিন পরই শ্বশুর শ্বাশুড়িকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়েছো ‘
মিসেস কাবিরার মুখটা ফাটা বেলুনের মতোন চুপসে গেলো৷ অন্য কেউ সুফিয়ানের জায়গায় হলে তিনি ছেড়ে দিতেন না কিন্তু সুফিয়ানের সামনে আর বলার সাহস পেলেন না। কলিংবেলের আওয়াজে সবার নজর গিয়ে পড়লো সদর দরজায়। কাজের লোক গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ব্যাক্তিটি ভেতরে ঢুকতেই প্রানেশার চোখ ছলছল করে উঠলো৷ অস্ফুটস্বরে বললো -‘রেয়ান!’

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.