বাইজি কন্যা

রাতের মধ্যভাগ৷ নিশীথনিবিড় পরিবেশে মুখরিত চারপাশ। গৃহে বিদ্যুৎ না থাকায় স্বয়ং উপরওয়ালাই যেন সাহায্য করল ওদের৷ দিকবিদিকশুন্য দেখতে দেখতে সহসা প্রণয় কোলে তুলে নিল শাহিনুর’কে। ইতোমধ্যে অসংখ্যবার একে অপরকে জড়িয়ে ধরার ফলে প্রণয়ের শরীরও রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে।
রক্তে মাখামাখি তরতাজা দেহ দুটো একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল৷ আর পিছন দিকে ঘুরে তাকাল না প্রণয়৷ মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করল, স্ত্রী, সন্তান’কে নিয়ে দূর বহুদূর চলে যাবে সে। যেখানে চলে গেলে কেউ খুঁজে পাবে না তাদের৷ সকল নিয়মকানুন, ন্যায়, অন্যায় ভুলে গিয়ে আইনের বিরোধিতা করে একটা পূর্ণ সংসার পাওয়ার তীব্র লোভ জেগে ওঠল মনে। সেই তীব্র লোভে জর্জরিত হয়ে প্রাণপনে ছুটতে শুরু করল। মস্তিষ্কে গেড়ে বসল কয়েকটি কথা –

‘ আজ থেকে তুমি ডাক্তার প্রণয় চৌধুরী না। এক জীবনে দু’টো স্বপ্ন’কে বাঁচিয়ে রাখা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ স্ত্রী, সন্তান’কে কাছে পেতে চাইলে, বাবা হওয়ার লোভ বিসর্জন দিতে না পারলে, নিজের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম’কে অবশ্যই বিসর্জন দিতে হবে। আজকের পর ডাক্তার প্রণয় চৌধুরী নয় খু/নি প্রণয় চৌধুরী হিসেবে বাঁচবে তুমি৷ তোমার এই বাঁচা সার্থক। কারণ তোমার স্ত্রীর কাছে তুমি শ্রেষ্ঠ স্বামী, তোমার সন্তানের কাছে শ্রেষ্ঠ পিতা৷ এর চেয়ে বড়ো সুখ আছে নাকি? পুরো দুনিয়া কি ভাবল এটা তোমার দেখার বিষয় নয়। পুরো দুনিয়া ঠিক রাখতে গিয়ে স্ত্রী, সন্তান’কে চিরতরে হারানোর মতো বোকামি করোনি এজন্যই প্রকৃতি তোমাকে বাহবা দেবে। আজকের পর তোমার কোন অতীত নেই, নেই কোন বর্তমান, আছে শুধু ভবিষ্যৎ। যার মূল কেন্দ্রবিন্দু শাহিনুর শায়লা, তোমার সহধর্মিণী, প্রাণপ্রিয় অর্ধাঙ্গিনী। তোমার জীবনের প্রথম স্বপ্নটির ধ্বংসের সূচনা হওয়ার পাশাপাশি শেষ স্বপ্নটি পূরণের সূচনাও হয়ে গেল। ‘

আবারও দু’চোখ ভিজে ওঠল প্রণয়ের৷ পুরো পরিবার’কে মনে করে অসহনীয় এক যন্ত্রণা শুরু হলো বুকের মধ্যখানে। তার বুকের ভিতর চলা অস্থিরতা গুলো টের পেল শাহিনুর৷ ফুঁপিয়ে ওঠল সে৷ কিন্তু মুখ ফুটে একটি শব্দও উচ্চারণ করতে পারল না৷ ঘুটঘুটে অন্ধকারে প্রণয়ের করা সেই কান্নার খবরও পেল না সে।

বাইজি গৃহের পিছনের দরজা দিয়ে পাঁচফোড়ন গৃহের গুদামঘরের সামনে এসে থামলো প্রণয়৷ গুদামঘরের সামনে একটি ভাঙাচোরা সাইকেল দাঁড়িয়ে ছিল। কোন এক ভৃত্যের সাইকেল হবে এটা। এ মূহুর্তে গাড়ির কাছে যাওয়ারও সময় নেই তার। তাছাড়া গাড়ির কাছে যাওয়া মানে বিপদের সম্মুখীন হওয়া৷ কারণ সে নিজেই এই বিপদ ডেকে এনেছে৷ রমেশ নিশ্চয়ই তার বাড়ির সামনে বা বাইজি গৃহের সামনে রয়েছে। চন্দন তাকে সবটা খুলে বলে নিশ্চয়ই বাইজি গৃহের ভিতরেও নিয়ে এসেছে৷ সবটা ধারণা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে।
ত্বরিতবেগে সাইকেলের পিছনে শাহিনুরকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওঠে পড়ল। শ্বাসরুদ্ধকর কণ্ঠে বলল,

-‘ শক্ত করে ধরে থাকবে আমাকে। একদম চুপ করে বসে থাকবে। ‘

শাহিনুর মৌন রইল। নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে এক হাত বাড়িয়ে প্রণয়ের পেট জড়িয়ে ধরল। অন্যহাতে পেট চেপে ধরল৷ যেখানটায় কান পেতেছিল প্রণয়, যেখানটায় আদুরে স্পর্শ দিয়ে বলেছিল, এখানে তাদের সন্তান রয়েছে। প্রণয়ও আর সময় নষ্ট করল না৷ ভিন্ন এক রাস্তা ধরে প্রথমে নিজের কোয়ার্টারে গেল৷ নিজেদের সাজানো, গোছানো কক্ষে পৌঁছেই শাহিনুর’কে আবারও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। শাহিনুর একহাতে প্রণয়ের পিঠ জড়িয়ে অপর হাত পেটে রেখে বলল,

– ‘ ওর জন্যই এতবড়ো বড়ো ত্যাগ স্বীকার করছেন আপনি? ‘

চমকে ওঠে শাহিনুরকে ছেড়ে দিল প্রণয়। মনে হলো তার শরীরে ব্লেড দিয়ে আঁচড় কেটে মরিচের গুঁড়ো দিয়েছে কেউ। শাহিনুরের করা প্রশ্নটি ঠিক এমনই অনুভূতি দিয়ে আহত করল তাকে। অন্যসময় হলে প্রচণ্ড রাগ হতো কিন্তু এখন রাগ করারও সময় নেই। তাই দুহাত বাড়িয়ে শাহিনুরের কপোলদ্বয় চেপে ধরল।
ব্যথাহত সুরে বলল,

-‘ বাচ্চাটার গুরুত্বই যদি বেশি থাকতো তুমি শাহিনুর ছাড়াও আমি বাবা হতে পারতাম৷ তোমার আমার সংসারটা যে হয়ে ওঠেনি। তুমি বিহীন আমি আমার একটা মুহূর্তও কল্পনা করতে পারি না নুর। সেখানে তোমায় ছাড়া গোটা জীবন কীভাবে কাটাবো বলোতো?
সর্বপ্রথম আমি তোমাকে চাই, তোমার আমার সুখের গল্প তৈরি করতে চাই, আমার বাচ্চাকেও চাই,তোমাদের পেয়েও হারানোর ব্যথা সহ্য করতে পারব না৷ ‘

বাঁধভাঙ্গা কান্নায় ভেঙে পড়ল শাহিনুর। প্রণয় ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। ধীরে ধীরে ওর সারা দেহ পর্যবেক্ষণ করল। শরীরের অনেক অংশেই নখের আঁচড় ছাড়া তেমন কিছুই দেখতে পেল না। শেষে যখন ঘাড়ের ঐ কামড়ের দাগটা দেখল ক্রোধে ফেটে পড়ল সে। শাহিনুরকে টেনে নিয়ে দু’জন একসঙ্গে গোসল করল। গোসল শেষে পোশাক পরিবর্তন করে, কিছু কাপড়চোপড়, কিছু টাকা, আর কিছু ফলমূল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল অজানা পথের উদ্দেশ্যে। পুরো সময়টাই শাহিনুর হতভম্ব হয়ে প্রণয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তার মতো হতভাগিকে মানুষ টা যে এতখানি ভালোবাসে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি। যদি বুঝতো এতসব কাণ্ড ঘটানোর পূর্বে একবার হলেও পিছন ফিরে তাকাতো।

এরই মধ্যে শাহিনুর শুধু তার মা’য়ের খু/নের ঘটনাটি প্রণয়কে জানাল। পলাশ তার সঙ্গে কী ঘটনা ঘটাতে যাচ্ছেন সবটা চন্দনের থেকে শোনায় শাহিনুরকে আর কিছু বলতে দিল না৷ সে যথেষ্ট বুদ্ধি জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ। কে ঠিক কতটা ভয়াবহ আর কে সহজসরল সবটাতেই অবগত সে। তাই সকল পিছুটান বাদ দিয়ে শুধুমাত্র শাহিনুরকেই বেছে নিল সে।

সকাল দশটা নাগাদ সোনালি ব্যাংকে গিয়ে নিজের জমানো অল্পকিছু টাকা উঠাল প্রণয়। তার চাকরির বয়স খুব বেশিদিন না হওয়াতে সঞ্চিত টাকার সংখ্যা খুবই কম ছিল। সে খুব ভালো করেই জানে এখন যদি এই টাকা না উঠায় পরবর্তীতে আর সম্ভব হবে না৷ তার ডাক্তারি জীবনের সমাপ্তি ঘটবে শিঘ্রই। তার মেডিকেল সার্টিফিকেট বাতিল ঘোষণা করাও হবে৷ বহু বছর পূর্বে যেমনটা করা হয়েছিল শাহিনুরের বাবার সঙ্গে। তাদের অপরাধ ভিন্ন হলেও শাস্তি একই। বরং তার শাস্তি বেশিই কঠিন হতে পারে। মোটকথা তার একজীবন ধ্বংস হতে খুব বেশি দেরি নেই৷ আর যাইহোক একজন খু/নি’কে তো আর সরকার এমনি এমনি ছেড়ে দেবে না৷ সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থাই করবে।
[৮৯]
পাঁচফোড়ন গৃহ, বাইজি গৃহ এবং প্রণয়ের কোয়ার্টার ছাড়া তেমন কোথাও যায়নি শাহিনুর। তার জগৎটা জমিদার বাড়ির আনাচে-কানাচেই সীমাবদ্ধ ছিল। ঘনজঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েও সে এতটা অস্বস্তি বোধ করে না৷ যতটা এ মুহূর্তে প্রণয়ের সঙ্গে খোলা আকাশের নিচে অগণিত মানুষের ভিরে করছে। কেমন ভয় ভয় চোখে চারপাশে তাকিয়ে দেখছে৷ কত মানুষ, কত গাড়ি! প্রচণ্ড হাঁসফাঁস লাগছে তার। তার অনুভূতি টের পেল প্রণয় তাই চট করে রাস্তার পাশের একটি দোকান থেকে দু’টো মাস্ক কিনে একটা নিজে পরে আরেকটা শাহিনুর’কে পরিয়ে দিল৷ আশপাশ থেকে অসংখ্য পুরুষ নজর এসে পড়ছিল শাহিনুরের ওপর। এতদিন যে সৌন্দর্য রাতের অন্ধকারে ঢাকা পড়েছিল, সেই সৌন্দর্য হুট করে উন্মোচন হওয়াতে একঝাঁক দৃষ্টি এসে ঝেঁকে বসছিল৷ সেসব থেকে বাঁচাতেই মুখ ঢাকার ব্যবস্থা করল সে৷ রেলস্টেশনে গিয়ে দু’টো টিকেটও কাটল। বিকাল পাঁচটার ট্রেনে ওঠবে তারা৷ হঠাৎ প্রণয়ের খেয়াল হলো অনেকটা সময় না খেয়ে আছে শাহিনুর। তাই রেলস্টেশনের পাশের একটা হোটেলে গিয়ে দু’জনে ডাল, রুটি খেল৷ যদিও কারো গলা দিয়েই খাবার নামছিল না তবুও কষ্ট করে খেল। খাওয়া শেষ করে গেল কিছু কেনাকাটা করতে। শাহিনুরের জন্য একটি বোরখা কিনে বোরখা পরিয়েই পুনরায় রেলস্টেশনে এসে অপেক্ষা করতে লাগল ট্রেন আসার৷
প্রচণ্ড উত্তেজনার মাঝে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেনে ওঠেও পড়ল দুজন৷ কিন্তু ট্রেনে ওঠার পর হঠাৎ চমকে ওঠল প্রণয়৷ তার বামহাত শাহিনুরের দখলে থাকায় ডান হাত দিয়ে বাম পকেটে থাকা বাটন মোবাইল ফোনটি বের করল৷ দেখল তার পুলিশ বন্ধু রমেশ কল করেছে! বুকের ভিতরটায় ধকধক শুরু হলো তার। অদৃশ্য কোন এক শক্তি যেন হৃৎপিণ্ড দুমড়েমুচড়ে দিচ্ছে। তবুও শাহিনুর’কে কিছু বুঝতে দিল না। এমনিতেই মেয়েটার ওপর বেশ ধকল গেছে। মানসিকভাবেও প্রচণ্ড আহত হয়ে আছে সে৷ না জানি এর বিরূপ প্রভাব বাচ্চার ওপর পড়ে! তাই শেষ ধকলটা সে নিজেই নিল। রমেশের কল রিসিভের পরিবর্তে কেটে দিয়ে তৎক্ষনাৎ চট করে একটি ম্যাসেজ দিল,

“পাঁচমিনিট সময় দে আমায়”

রমেশ আর কল করল না সত্যি সময় দিল প্রণয়’কে৷ প্রণয়ও চটপট একটি লম্বা ম্যাসেজ লিখতে শুরু করল, যা লিখতে লিখতে ঝাপসা হয়ে ওঠল তার কঠিন, স্বচ্ছ দৃষ্টিজোড়া।

***
শোন আমি তোকে কয়েকটা গোপন তথ্য দেই। আশা করি তোর ইনভেস্টিগেশন সহজ হয়ে যাবে৷ আমার দু’টো ভাই’কে খু/ন করে দিয়েছি আমি। দু’জনকে খু/ন করার পেছনের কারণ এক নয় ভিন্ন। তুই তো জানিস আমাদের বাড়িতে আজো বাইজি গৃহ রয়েছে। বংশপরম্পরায় সে গৃহের দায়িত্বে ছিল বড়ো ভাই আর মেজো ভাই৷ ঘরে বউ রেখে অগণিত বাইজিদের সঙ্গে মেলামেশা করেও মেজো ভাইয়ের নজর পড়ল আমার স্ত্রীর দিকে। অনেক চেষ্টা করেও আটকাতে পারিনি মেজো ভাইকে। শেষে নিজের ছোটো ভাইয়ের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী’কে বাইজি গৃহে নিয়ে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছিল সে। কী করতাম বল উপায় ছিল না। স্বামী হিসেবে, বাবা হিসেবে এই অধর্ম মেনে নিতে পারিনি আমি৷ শেষ করে দিয়েছি আমার মায়ের কুসন্তান’কে। তোর কাছে আমার সবিনয়ে আবেদন এই যে, আইনের মাধ্যমে বড়ো ভাইয়ের সঙ্গে সন্ধি করে বাইজি গৃহের সমাপ্তি দিয়ে দিস৷ ওখানে অনেক মেয়েদের জোরপূর্বক আনা হয়েছে। যাদের জোরপূর্বক আনা হয়েছে ওদের মুক্তির ব্যবস্থা করে দিস। আর যারা স্বেচ্ছায় রয়েছে তাদের জন্য পতিতালয়ই উপযুক্ত স্থান হবে আশা করি৷ তুই খোঁজ নিলে জানতে পারবি শারমিন শায়লা, মান্নাত বাইজি এ নামের দু’জন বাইজি ছিল৷ শারমিন বাইজি খু/ন হয়েছে রঙ্গনের হাতে। আর মান্নাত বাইজি উধাও হয়ে গেছে৷ হ্যাঁ সকলে জানে মান্নাত বাইজি হঠাৎই গুম হয়ে গেছে। আসলে সে গুম হয়নি তাকে খু/ন করে টুকরো টুকরো করে মাটিতে পুঁতে দিয়েছে পলাশ চৌধুরী। সহায়ক ছিল রঙ্গন চৌধুরী।

এ পর্যন্ত লিখে থামল প্রণয়। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে পাশে তার এক বাহু চেপে ধরে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে শাহিনুর৷ অনুভব করল মৃদু কাঁপছে মেয়েটা। বুক চিরে রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল সে, দ্রুত ম্যাসেজটা সেন্ড করে আবার লিখল,

রমেশ, আমার আদরের ছোট্ট ভাইটা জঙ্গলের ছোট্ট কুটিরে নিথর দেহে পড়ে আছে। ও’কে পাঁচফোড়ন গৃহে পৌঁছে দিস৷ আমার মেজোভাই নিথর দেহে পড়ে আছে তার আজন্ম প্রিয় বাইজি গৃহে। আমার আম্মার পাঁচ টুকরো কলিজার দু’টুকরো হারিয়ে গেছে। আম্মাকে বলিস বাকি দু’টুকরো নিয়ে শান্তি’তে বেঁচে থাকতে। আমার অঙ্গন’কে যত্ন নিতে বলিস। আমাকে ঘৃণা করুক সমস্যা নেই কিন্তু আমার স্ত্রীর গর্ভে তাদের বংশধর বেড়ে ওঠছে। ওদের জন্য একটু দোয়া যেন তিনি রাখেন। মায়ের দোয়ার ওপর সবকিছুই ঠুনকো।
সবশেষে তোকে বলি, পারলে আমাকে খোঁজা বন্ধ করে দিস৷ সঠিক সময়ে নিজেই এসে ধরা দেব৷ আপাতত বউ, বাচ্চাকে সময় দেওয়া ভীষণ প্রয়োজন।
~প্রণয়।

দ্বিতীয় ম্যাসেজটি সেন্ড করার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল থেকে সিম খুলে ট্রেনের জানালার বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিল। শাহিনুর আঁতকে ওঠে বলল,

-‘ ওটা ফেলে দিলেন কেন? ‘

প্রণয় শীতল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। শান্ত কণ্ঠে জবাব দিল,

-‘ ডাক্তারি জীবন শেষ। পরিবার এখন অতীত। বউ, বাচ্চা সাথেই আছে। ওটার কোন প্রয়োজন নেই। ‘

হুহু করে কেঁদে ওঠল শাহিনুর। সন্তর্পণে তাকে বক্ষে চেপে ধরল প্রণয়। মাথায় গাঢ় চুম্বন এঁকে দিয়ে বলল,

-‘ কেঁদো না তুমি কাঁদলে কিন্তু বাবুও কাঁদবে। ‘

বুকের ভিতর ছ্যাঁৎ করে ওঠল শাহিনুরের। সহসা চুপ হয়েও গেল। তার মাথাটা সন্তর্পণে নিজের বুকে রাখল প্রণয়। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে এলো। ট্রেন চলছে তার নিজ গতিতে। মাঝপথে থেমে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ঠিক যেমন তারা দু’জন ছুটতে আরম্ভ করল। থেমে যাওয়ার কোন চিন্তা, ভাবনা নেই। তাদের জীবন গতি আর ট্রেনের গতি যেন এক সুতোয়ই গাঁথা পড়ল।
কোথায় যাবে, কোথায় থাকবে কিচ্ছু জানে না শাহিনুর৷ জানার আগ্রহও বোধ করল না। শুধু নিশ্চিন্তে একটুখানি শ্বাস ফেলল। তার গভীর সে নিঃশ্বাসের ছোঁয়া প্রণয়ের বুকে গিয়ে লাগতেই প্রণয়ও প্রাণভরে শ্বাস নিল। শাহিনুর একবার ভাবল মাথা তুলে প্রণয়কে জিজ্ঞেস করবে কোথায় যাচ্ছে তারা৷ কিন্তু বিবেকে বাঁধল। আপনমনেই পুনরায় ভাবল, যে মানুষটা রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করে তাকে আগলাতে এতবড়ো পদক্ষেপ নিয়েছে। সেই মানুষটার হাত ধরে যদি মৃত্যুপুরীতেও যেতে হয় তবে আজ সে প্রস্তুত।

দ্বিতীয় খণ্ডের সমাপ্তি…

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.