বাইজি কন্যা

দীর্ঘ দেড়মাস যাবৎ পুত্রশোকে পাথর হয়ে যাওয়া প্রেরণার কাছে একটি চিঠি এলো। তাও বেনামি। রুদ্ধশ্বাসে কম্পিত হস্তে দু’ভাঁজ করা চিঠির পাতা সম্মুখে মেলে ধরতেই বেনামি চিঠির শুরুতে,
– ‘ আম্মা, আম্মা, ও আম্মা আপনি কেমন আছেন আম্মা?’
লেখাটা দেখতেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠল সে। পরোক্ষণেই ভীত দৃষ্টিতে চারপাশে নজর বুলিয়ে এক ছুটে নিজের কক্ষে চলে গেল। একটা কাক পক্ষীও যেন টের না পায় তাই নিঃশব্দে খোলা দরজা বন্ধ করে দিলো। মা’য়ের মন ঠিক বুঝে গেছে চিঠির মালিক কে? তাইতো সকলের অগোচরে এভাবে কক্ষে চলে এলো। সন্তান খারাপ হোক ভালো হোক। গুণী হোক দোষী হোক। মায়ের কাছে সবই সমান। সকলের চোখে প্রণয় অপরাধী, সকলেই চায় তার শাস্তি হোক। কিন্তু সে তো মা সে তো আর তা চাইতে পারে না। দু’একটা চড় থাপ্পড় দিতে পারে কিন্তু যে প্রাণ পৃথিবী এনেছে, যে দেহ’কে বুকে আগলে বড়ো করেছে তার নাশ সে কিছুতেই চাইতে পারে না। চারিদিকে সকলে ওত পেতে আছে। মুনতাহা বাবার বাড়ি চলে গেলেও তার সন্দেহ, ঠিক গুপ্তচর রেখে গেছে। আজকাল অগোচরে টাকার বিনিময়ে বিশ্বস্ত ভৃত্য’রাও বেইমানি করছে। দুর্দিনে সবই মুখবুঝে সহ্য করতে হচ্ছে। বাড়ির আশপাশে পুলিশ’দের আনাগোনা তো রয়েছেই। প্রণয় সন্ধানে তারা সর্বদাই তটস্থ। সবটা স্মরণ করে চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল প্রেরণা। পুনরায় চোখ খুলে চিঠিতে লেখা কথাগুলো পড়তে লাগল আর দু’চোখে অশ্রু বিসর্জন দিলো,

” আম্মা, আম্মা, ও আম্মা আপনি কেমন আছেন আম্মা? কতদিন আপনাকে ডাকি না। কতদিন আপনার পবিত্র মুখটা দেখি না। কতদিন আপনার স্নেময়ী ছোঁয়া আমার মাথা ছুঁয়ে দেয় না। ও আম্মা, আপনি বড়ো অভিমান করে আছেন আমার ওপর। জানি, আপনার নিরুপায় পুত্র আপনাকে দেওয়া কথা রাখতে পারেনি৷ এ জীবনে যদি একবার সুযোগ পাই, আপনার দু’টো পা ধরে মাফ চেয়ে নেবো। ভাই হয়ে ভাইদের রক্ষা করতে না পারার পরাজয় স্বীকার করে নেবো। আপনার যে পুত্র সারাজীবনে কোন পর্যায়ে পরাজয় স্বীকার করেনি সে পরাজয় স্বীকার করবে। এরচেয়ে বড়ো শাস্তি আর কি হতে পারে? শাস্তি! আম্মা, আপনার যে ছেলে মাংস ছাড়া ভাত মুখে তুলতে পারতো না। সে আজ তিনদিন ধরে কচু, শাক, পাতা দিয়ে ভাত খাচ্ছে। নানা পদের ভোজ সামনে রেখে যাকে খাওয়াতেন তার এখন এক পদ জোটাতেই ভীষণ কষ্ট হয়ে যায়৷ মাথাগোঁজার জন্য যে স্থানে আছি তা আর বললাম না। শুধু জেনে রাখুন, আপনার গৃহের সর্বোচ্চ নিচু পদে যে ভৃত্য রয়েছে, তার থাকার জায়গাটাও এরচেয়ে পঞ্চগুণ ভালো। যে পুত্র’কে শ্রেষ্ঠপুত্র বলে সবার সম্মুখে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেন। আজ সে পুত্র পথহারা পথিক! স্ত্রী সহ ফেরারি! আমার দু’টো ভাই, আমার কলিজার টুকরো রঙ্গন, ওদের প্রাণের বিনিময়ে আমার স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে গেছে আম্মা। আমার পরিচয়, আমার সম্মান সব শেষ। ভিখিরির মতো জীবনযাপন করছি। ভাতৃশোক, স্ত্রী, সন্তানের প্রাণ সংশয়, নিজের প্রাণ সংশয় আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে আমি বার বার ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। এক টুকরো সুখের জন্য সর্বস্ব হারিয়ে ফেললাম। সেই এক টুকরো সুখটুকু নিয়েও আজ বড়ো অনিশ্চয়তায় ভুগছি। আমি আমার সুখ’কে সুখ দিতে পারছি না। আপনার পুত্রবধু’কে না আহার না বস্ত্র কোনটাই দিতে পারছি না। আপনার বংশধর কি ভাগ্য নিয়ে পৃথিবীতে আসছে ভেবেছেন? কি নিদারুণ যন্ত্রণায় ছটফট করছে আপনার প্রণয় টের পাচ্ছেন? শাস্তি পাচ্ছি, শাস্তি ভোগ করছি। আপনার যন্ত্রণাও আঁচ পাচ্ছি। তবুও আমি নিরুপায় বড়ো নিরুপায়। আমি এক ঘৃণ্য ভাই, ঘৃণ্য পুত্র। ভালো স্বামী হতেও পারছি না। মনে বড়ো সংশয় ভালো পিতা হতে পারবো তো?
ইদানীং স্বপ্নে অকল্যাণ দেখি, বুকে সুক্ষ্ম ব্যথা লাগে। আম্মাগো, আপনার এই অপ্রিয়, ঘৃণ্য ভিখারি পুত্রের একটা অনুরোধ, জীবদ্দশায় আমার যদি কিছু হয়! ভয় পাবেন না আম্মা, কিছু হয় বলতে যদি কখনো পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যাই, আপনি আমার স্ত্রী, সন্তান’কে সুরক্ষা দেবেন। পাশে থাকবেন। যত অন্যায় করার আমি করেছি ওদের কোন দোষ নেই। আপনি স্বীকার করুন বা না করুন আপনার প্রয়াত পুত্র’রা মানুষ ছিল না। তাদের অমানবিক আচরণই তাদের ধ্বংস হওয়ার মূল কারণ। আপনি আমার জন্মদাত্রী। আমার বিশ্বাস আপনি সজ্ঞানে, নিজ ইচ্ছায় আর কোন অপরাধ করবেন না৷ আমার এই বিশ্বাসটুকুর মর্যাদা দেবেন। আর কী বলব? অঙ্গন’টাকে ভালো রাখবেন। ডাক্তার দেখানো, নিয়মিত ওষুধ দেওয়া ভুলবেন না। নিজের যত্ন নেবেন কান্নাকাটি করে শরীর খারাপ করবেন না। অভিমান করে বুকভারী করবেন না। কথা দিচ্ছি আমি একদিন আবার আপনার কাছে ফিরব, আপনার বুক শীতল করব। আপনার অনেক প্রশ্ন কিন্তু আমার কাছে কোন উত্তর নেই। যে প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই সে প্রশ্ন আপনার মনে জায়গা দেবেন না। শুধু মনে রাখবেন, আপনার ছোটো পুত্র রঙ্গন হত্যাকারী ছিল! বিশ্বাসঘাতক ছিল! এক শয়তানের সহচর ছিল! মেজো পুত্র পলাশ একজন ধর্ষক ছিল! শাহিনুর সতী নারী। তার সতীত্ব রক্ষায় তার স্বামী সর্বদা অটল। কী ব্যঙ্গাত্মক কথা! আপনার এক পুত্র সতীত্ব হরণে সর্বদা অটল ছিল আরেক পুত্র সতীত্ব রক্ষায়। রক্ষাকারী’কে কি কোন আইন শাস্তি দিতে পারে?

আপনার প্রাণ আবার শীতল হবে আম্মা। আমি আবার চিঠি পাঠাব। আপনি কিন্তু সুস্থ থাকবেন, আমার চিঠি পড়ার জন্য হলেও আপনার সুস্থতা প্রয়োজন। এই চিঠিটা পুড়িয়ে দিতে ভুলবেন না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ পৃথিবীতে সর্ব প্রথম, সবচেয়ে বেশি আমাকে রক্ষার জন্য আপনি এগিয়ে আসবেন। কারণ আপনি শুধু পলাশ, রঙ্গনের জন্মদাত্রী না আপনি আমারও জন্মদাত্রী। আমার চিরদুঃখিনী আম্মা, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে, একদিন আপনার দুঃখেরও সমাপ্তি ঘটবে।

..
[১০৩]
বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ। প্রণয়ের হিসেব অনুযায়ী
শাহিনুরের গর্ভাবস্থার ছ’মাস চলছে। পাঁচ মাসের সময় আশ্চর্য এক অনুভূতির সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে তার। ডক্টর হলেও এমন অনুভূতির সঙ্গে এর আগে কখনো পরিচয় ঘটেনি। ঘটবে কী করে? এর আগে তো সে বাবা হয়নি। আনমনেই হেসে ফেলল প্রণয়। কাঁধে চেপে রাখা গামছা দিয়ে ঘর্মাক্ত মুখমণ্ডল মুছলো। হাতে থাকা পলিথিনের ভেতরে গরু মাংসের তরকারির দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার হাঁটা ধরল। পাঁচ মাস চলাকালীন একদিন দুধ ভাত খেয়ে বিছানায় শুয়েছিল শাহিনুর। প্রণয় তার ভেজা কাপড় চিপকে উঠানে শুকাদিচ্ছিলো। এমন মুহূর্তে হঠাৎ মৃদু চিৎকার করে ওঠে শাহিনুর। সচকিত হয়ে সে ঘরে যায়। শাহিনুর শোয়া থেকে ওঠে বসেছে। তার হাত উদরের বাম পাশে। প্রণয় ত্বরিতগতিতে তার পাশে বসে জিজ্ঞেস করে,
– ‘কী হয়েছে?’
-‘এখানে হাত রাখুন।’
শাহিনুরের দেখানো জায়গায় হাত রাখলো প্রণয়। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল মুখপানে। কিছুই বুঝলো না সে। ডক্টর হিসেবে সে জানে এ সময়’টায় বাচ্চা নড়াচড়া করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত শাহিনুরের বেলায় তেমনটা দেখেনি। হয়তো প্রথমবার মা হচ্ছে বলে শাহিনুর বিষয়’টা ধরতে পারছে না৷ তাই বলল,
-‘ বাবু কি নড়েছিল? ‘
সঙ্গে সঙ্গে শাহিনুর বলে ওঠল,
-‘ আবার এইতো আবার। ‘
নিজের অংশটুকুর অস্তিত্ব প্রথমবারের মতো টের পেয়ে আঁতকে ওঠে হাত সরিয়ে নিলো প্রণয়। বিস্মিত দৃষ্টিতে শাহিনুরের দিকে আবারও তাকিয়ে আবারও হাত রাখলো উদরে। কয়েক সেকেন্ড পর আবারও সেই অনুভূতি। উত্তেজনায় বুক কেঁপে ওঠল তার। হাত মৃদু মৃদু কাঁপতে শুরু করল। দ্রুত হাতে শাড়ির আঁচল সরিয়ে উদর উন্মুক্ত করে পরপর তিনবার চুমু খেলো। আদুরে স্বরে হাত বুলিয়ে ডাকলো,
– ‘এই ছোট্ট পেটটায় কে আছেন শুনি? আপনি আমার কে হন? বাবা নাকি মা?’
প্রথমবারের মতো প্রণয়ের বাচ্চামো, শিশুসুলভ পাগলামো দেখে আশ্চর্যান্বিত হলো শাহিনুর। ওষ্ঠদ্বয়ে ফুটলো তৃপ্তির হাসি। আবারও নড়ে ওঠল তাদের অনাগত সন্তান, আবেগি হয়ে কেঁদে ফেলল প্রণয়। শাহিনুর তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। বলল,
-‘আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম জানেন। ভেবেছিলাম হয়তো কোন ক্ষতি হয়েছে ওর। তাই ভয়ে আপনাকে বলিনি টুনটুনি দাদিকে বলেছি। তারপর দাদি যখন বলল, এ অবস্থায় এমন সব মা’দেরই হয় তখন নিশ্চিন্ত হয়েছি।’
প্রণয় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বলল,
-‘ হ্যাঁ। মা’য়েদের খাওয়ার পর ওরা তিনবার করে নড়াচড়া করে। একটি সুস্থ বাচ্চা পেটের ভিতর দিনে অন্তত দশবার নড়বেই। যদি কম হয় ছ’বার, পাঁচ’বার তার মানে বাচ্চাটা পুরোপুরি সুস্থ নয়। তাই অবশ্যই ডক্টর দেখাতে হবে। তুমি কিন্তু এদিকটা খেয়াল রাখবে।’
সেদিনের অনুভূতি এতটাই আনন্দায়ক, সুখকর ছিল যে প্রতিটা মুহূর্তেই সেই অনুভূতিটুকু স্মরণ হয়৷ বক্ষস্থলে আঁকুপাঁকু করে বাবা ডাক শোনার জন্য। অভাব-অনটন এখন আর তেমন নেই। তিনবেলা ভালোভাবেই খাবার জোটে। দাদার সাথে মিলে সবজি আবাদ করে সেগুলো বাজারে বিক্রি করে যা টাকা পায় তাই দিয়ে তিনবেলা খাবার জোটে। টাকা জমিয়ে কয়েকটা সূতি শাড়িও কিনে ফেলেছে এ’কমাসে। ইদানীং কিছু টাকা সঞ্চয়ও করছে। যদি প্রসব বেদনা সহ্য করতে না পারে শাহিনুর? যদি সিজারের প্রয়োজন হয়? হাতে টাকা পয়সা লাগবে তো। গুটিকয়েক মাসই বাকি। কীই বা বয়স মেয়েটার ? এ বয়সে বাচ্চা জন্মদান করা কি সহজ বিষয়? তার ডাক্তারি বিদ্যায় এটা ভীষণ কঠিন ব্যাপারই। কিন্তু মা, চাচি টুনটুনি দাদিদের দিকে তাকালে আবার ভীষণ সহজ৷ শুনেছিল, টুনটুনি দাদি নাকি তেরো বছর বয়সেই মা হয়েছেন। শাহিনুরের বয়স কম হলেও মানসিক দিক দিয়ে সে ভীষণ শক্ত। শারীরিক দিক দিয়ে যতটুকু সবল থাকা উচিৎ ততটা নেই। থাকবে কি করে? পরিমিত পুষ্টি সে বা তার বাচ্চা কেউই পাচ্ছে না৷ যতটা পাচ্ছে তা খুবই কম। গতমাসে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করেছিল,
-‘তোমার কি খেতে মন চায় বলো আমায়। ‘
জবাবে সে বলেছিল,
– ‘কিছু না।’
প্রণয় তবুও জোর করল, চোখ গরম করল, কপট রাগ দেখিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলা বন্ধ করল। তারপর সে মাথা নিচু করে সামনে এসে বলল,
-‘ অনেকদিন গরু মাংস দিয়ে ভাত খাই না। যখন খাওয়াতে পারবেন তখনি খাওয়াবেন। এখুনি কিন্তু খেতে চাইনি।’
হাতে টাকা কম থাকায় ভীষণ দেরি হয়ে গেল গরু মাংস খাওয়াতে। আজ নিশ্চয়ই অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশিই খুশি হবে শাহিনুর।
_
ঘরে ফিরতেই দেখলো, শাহিনুর বিছানায় শুয়ে আছে। চোখ, মুখ কিঞ্চিৎ অস্বাভাবিক ঠেকলো। তাই বলল,
-‘ কী ব্যাপার বাবুর আম্মুটা কী করছে?’
শাহিনুরের চোখ দু’টো ভরে ওঠল। ভীত কণ্ঠে বলল,
-‘ সেই সকালে একবার বাবু নড়েছিল এরপর আর নড়েনি।’
সহসা প্রণয়ের চোখমুখের আকারও পরিবর্তন হলো।
পরোক্ষণেই আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল। তার তো ভয় পেলে চলবে না। তাকে ঠিক থাকতে হবে। তাই বলল,
-‘ চিন্তা করছো কেন? ওঠে বসো, আমি খাবার বেড়ে আনছি। দুপুরে নিশ্চয়ই খাওয়া হয়নি? খাওয়ার পরই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
ত্বরিতগতিতে থালা ধুয়ে ভাত বেড়ে পলিথিনে থাকা তরকারির অর্ধেক’টা নিয়ে শাহিনুরের কাছে এলো প্রণয়। উদরে হাত চেপে থম মেরে বসে আছে শাহিনুর৷ কিঞ্চিৎ ব্যথা হচ্ছে তাই অনেক বেশি ভীতিগ্রস্ত হয়ে আছে সে। প্রণয় কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে শাহিনুরের সম্মুখে বসে গরু মাংস দিয়ে ভাত মেখে ওর মুখে দিলো। খাবার মুখে নেওয়ার পর হুঁশ ফিরলো তার। চোখে, মুখে কিছুটা উজ্জ্বলতা প্রকাশ পেলো। খাবার খেতে খেতে বলল,
-‘ এত টাকা খরচ করার কি দরকার ছিল শুনি?’
-‘ বেশি খরচ করব না বলেই তো হোটেল থেকে তরকারি কিনে এনেছি। দেখি হা করো। ‘
শাহিনুর দ্বিতীয়বার মুখে নিলো। তৃতীয়বার দেওয়ার সময় হাত ধরে সেটা প্রণয়ের মুখেই দিয়ে দিলো। হেসে ফেললো প্রণয়। শাহিনুরও হাসলো। পেটপুরে দুজনে খেয়ে দেয়ে আরাম করছিল এমন সময় বাচ্চা নড়ে ওঠল। একবার দুইবার তিনবার পরপর তিনবার নড়ার পর শাহিনুর খুশিতে আচমকাই প্রণয়’কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। প্রণয় ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-‘ এত ভয় কেউ পায়?’
-‘ আপনি আমাকেই দোষ দেবেন? ও যে এতক্ষণ আমাকে ভয়ে রাখলো ও’কে কিছু বলবেন না?’
চাপা হাসিতে চোয়াল ভারী হয়ে ওঠল প্রণয়ের। আদুরে স্বরে বলল,
-‘ হ্যাঁ বলবো তো এই দেখো এখুনি বলছি।’
শাহিনুরকে আস্তেধীরে শুইয়ে দিয়ে ওর উদরের কাছে মুখ নিয়ে গেলো। ধীর কণ্ঠে বলল,
-‘ বাবা… মা’কে এভাবে টেনশনে রাখতে হয় না।’
সঙ্গে সঙ্গে আবারও নড়ে ওঠল বাচ্চা, টের পেয়ে সহসা হেসে ওঠল দু’জনই। ইস কী অনুভূতি! প্রতিটি বাবা, মা’য়ের পাওয়া শ্রেষ্ঠ অনুভূতি।
[১০৪]
দীর্ঘদিন পর প্রেরণার কাছে আবারও চিঠি এলো। গুপ্তভাবে ঠিক প্রেরণার হাতেই পড়ল চিঠি’টা। এবার চিঠিতে তেমন কিছু লেখা নেই। মাত্র দু’টো লাইন। সে দু’টো লাইনে বিষাদের লেশমাত্র পেলো না প্রেরণা। যা পেলো তা কেবল সুখ, এ যে সে সুখ নয় বাবা হওয়ার শ্রেষ্ঠ সুখ শ্রেষ্ঠ অনুভূতি। ছেলের এই অনুভূতির বার্তাটুকু’কে পুড়িয়ে দিতে মন সায় দিলো না প্রেরণার। নিজের কাছে অতি যত্নে রেখে দিতে মন চাইলো। সুযোগ বুঝে আবারও না হয় পড়বে দু’টো লাইন। বার বার অসংখ্যবার পড়বে। তার ছেলেটা ভালো আছে, সুখে আছে এ বার্তা বার বার পড়বে। রেখে দেওয়ার আগে আরো একবার চিঠিটা পড়লো প্রেরণা। অতিরিক্ত খুশিতে এবার শব্দ করেই পড়ে ফেলল,
” আম্মা আমার সন্তান আমাকে তার অস্তিত্ব জানান দিয়েছে। আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ আম্মা, আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ। দোয়া করবেন তার জন্য, দোয়া রাখবেন আমাদের জন্য। ” চিঠি’টা পুড়িয়ে দিতে ভুলবেন না …

-‘কে চিঠি পাঠিয়েছে, কার চিঠি পড়ছেন আপনি? সেজো ভাই, সেজো ভাইয়ের চিঠি!’

লেখকের কথা: প্রিয় পাঠক, উপন্যাসটির এন্ডিং নিয়ে আপনারা খুবই বিচলিত হয়ে আছেন। জানি, আপনাদের অনুভূতি স্বাভাবিক। কিন্তু মনে রাখবেন এন্ডিং’টা বড়ো কথা নয়৷ গল্প/উপন্যাস হ্যাপি না স্যাড এদিকে নজর দেবেন না৷ ইনশাআল্লাহ পছন্দসই এন্ডিংই পাবেন। কিন্তু সেটা হ্যাপি না স্যাড এটা বলব না। শুধু সারপ্রাইজ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকুন। থ্রিলার উপন্যাসের এন্ডিং যেভাবে দেওয়া উচিৎ সেভাবেই দেবো। থ্রিলার উপন্যাস পড়তে আসলে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হয়।সেভাবে প্রস্তুত হন আসছে ধামাকা! অনেক অনেক ভালোবাসা সকলকে।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.