এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২

রান্নাঘরে আজ নিজে থেকেই গোছগাছ শুরু করলাম।ভীষণ কাজ করতে ইচ্ছা করছে,রান্না করতে, ঘর গোছাতে এক হাতে সব করতে মন চাচ্ছে।রান্নাঘরে বসে রসুন এর কোয়ার খোসা ছড়াচ্ছি বসে বসে।মামি আমাকে বললেন একি দিয়া রান্না ঘরে কি করছিস মা বিহানের কিছু লাগে কিনা তুই বিহানের কাছেই যা।আমি হেসে বললাম তোমার ছেলে কি ছোট বাচ্চা আছে যে যা লাগবে তাই দিতে হবে।যা লাগে নিজেই নিয়ে নিতে পারবে।মামি আমার কাছে বসে বললেন,ছেলে ছোট না হলেও তুইতো বড় হয়েও ছোট আছিস মা।শোন পুরুষ মানুষ চায় স্ত্রীরা তাদের হাতের কাছে থাকুক।যা লাগে স্ত্রীর হাত থেকে নিক এটাই তারা চায়।আমি হেসে বললাম,তোমার ছেলে এমন চাইবে না ভেবো না।

–এরই মাঝে উপর থেকে বিহান ভাই ডাকছেন দিয়া কোথায় গেলি,এক মিনিটে কি হারিয়ে যাস তুই?

–মামি আমার হাত ধরে বললো,যা দিয়া বিহানের কিছু লাগবে হয়তো।

–মামি যাচ্ছি তবে রান্না কিন্তু আজ আমিই করবো।

–আচ্ছা ঠিক আছে মা, তুই যাতো আগে।ছেলেটা কতদিন পরে এসেছে।

–মারুফা খালা বললো,, ও দিয়া যাও মা।তোমার শ্বাশুড়ি তো ভালো আমাদের শ্বাশুড়িরা তো আমাদের স্বামির সাথে এক জায়গা দেখলেই ডেকে একটা কাজ ধরিয়ে দিতো।

–মারুফা খালাকে বললাম,কি বলো খালা শ্বাশুড়ি আবার এমন ও হয় নাকি।

–হয় মানে আমার শ্বাশুড়ি এমন ই ছিলো।

–দজ্জাল ছিলো বুঝি খালা।

–আগের যুগের মানুষ তো অমন ই ছিলো।

–সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই দেখি বিহান ভাই ফোনের পাওয়ার বাটন চাপছেন বিছানায় বসে।আমি রুমে যেতেই আমার দিকে তাকিয়ে ফোনের পাওয়ার বাটন চাপতে চাপতেই বললেন,আমার ফোন অফ হয়ে গিয়েছে কিভাবে দিয়া।আমার ফোনে চার্য নেই কেনো?আর ফোন চার্যে দিয়েছে কে?

–ওড়নার এক কোনা কচলাতে কচলাতে বললাম,চার্যে দিয়ে বুঝি কোনো অপরাধ করেছি।দেখলাম চার্য নেই তাই চার্যে দিয়েছি।

–আমার ফোনে চার্য নেই এটা কিভাবে সম্ভব।কাল রাতে ফোনে ৮২ % চার্য ছিলো।আর কিভাবে চার্য দিয়েছিস কানেকশন ই তো পায় নি।একটুও চার্য হয় নি।ভেরি স্ট্রেইঞ্জ ফোনের চার্য এমনি শেষ হয়ে গেলো।

–আপনার মোবাইল কি আপনার মতোই কঠিন অতি সহযে চার্য হয় না।

–উনি চোখ গোল গোল করে আমার দিকে তাকালেন।বিছানা ছেড়ে উঠে ফোনের চার্যার হাতে নিলেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,চেয়ার টেবিলে বস এক মিনিটে।হাইয়ার ম্যাথ বার কর।যেকদিন বাড়িতে ম্যাথ দেখিয়ে দিবো।এই খেলাম আরেক বাড়ি উনি আবার ম্যাথ দেখাবেন ক্যানো?কথা না বাড়িয়ে চেয়ার টেবিলে বসে গেলাম।পা নাচাচ্ছি আর বই এর পৃষ্টা উল্টাচ্ছি।উনি ফোন চার্য দিয়ে চেয়ার টেনে বসলেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,পা দুলাচ্ছিস কেনো?পৃথিবীর সব বদ অভ্যাস কি তোর আছে।এই নিয়ে আর কতবার বলবো।বুঝিনা এসব কি উনার চোখেই পড়ে শুধু।এতবার ভাবি আর পা দুলাবো না কিন্তু এটা হয়েই যায়।ডাক্তার দেখানো উচিত কিনা বুঝছি না।

–উনি আমার সামনে থেকে বই টেনে নিয়ে বললেন,হাইয়ার ম্যাথে এবার কত মার্ক পেয়েছিস।

–৮৩

–আর একটু হলেই ফেল করতি।

–আমি A+ পেয়েছি,তাও বলছেন ফেইল করতাম।

–তো কি,১০০ থেকে ১৭ মার্ক কম পেয়েছিস।বাকি মার্ক কিসে কম পেয়েছিস।কোথায় গেলো বাকি মার্ক।

–জানিনা।

–আমি বলবো?

–আপনি কিভাবে জানলেন।

–বিকজ আমি কলেজে গিয়ে খাতা দেখে এসছি।স্যার তো ভাল মনের মানুষ তাই ৮৩ দিয়েছি আমি হলে উলটা হতো ৩৮ ও পেতি না।কিছু ম্যাথের উত্তর মুখস্থ ছিলো সেখানে সোজা উত্তর বসিয়ে দিয়েছিস।কি বাটপারি বুদ্ধি, এসব খান বংশে ছাড়া নেই।ম্যাথ এর মাঝে হাবিজাবি করেছিস কোথাও মেলে নি দেখে সোজা মুখস্থ উত্তর বসিয়েছিস।মুখস্থ বিদ্যা হলে এমন ই হয়।

–এইজন্য তো আমার স্যার হন নি।

–হই নি,বলা তো যায় না ইন ফিউচার হলে তোর কি হবে দিয়া।

–লেখাপড়ার ইতি টেনে পাক্কা গৃহিনী হয়ে যাবো।

–ওয়াও ফ্যান্টাসটিক চিন্তাধারা তোর।
খাতা দে ম্যাথ দেই কিছু দেখি কেমন পারিস।

–পাটিগনিত দেন,বীজগনিত দিয়েন না।

–বীজ গনিত ছাড়া হাইয়ার ম্যাথ এ আর কি আছে।আর বই এর মাঝে এগুলা কি করেছিস দিয়া।প্রতিটা পৃষ্টায় ফুল একেছিস একটাও ফুলের জাত হয় নি।বই এর কোনো পৃষ্টায় তো বাদ দেস নি আঁকাআঁকি করতে।

উনার হাতের লেখা এত সুন্দর, উনার লেখায় খাতার সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে বহুগুন।উনি আমাকে ম্যাথ করতে দিয়ে চুলের মধ্য হাত চালিয়ে কিছু ভাবছেন।আমি কলম গালে দিয়ে অপলক নয়নে উনার মুখপানে তাকিয়ে দেখছি।এই সকালে ভোরে কালো টি-শার্টে ভীষণ সুন্দর লাগছে উনাকে পরনেও কালো থ্রি কোয়ার্টার। কলম কামড়ে চলেছি আর উনাকে নিয়ে কল্পনার সাগড়ে পাড়ি জমিয়েছি।উনি হঠাত আমার দিকে তাকিয়ে হাত এদিক ওদিক করে দেখলেন চোখের পলক পড়ে কিনা।ভ্রু নাচিয়ে বললেন এইভাবে কি দেখছিস। এইভাবে কারো দিকে তাকিয়ে থাকলে তার কত টুকু অস্বস্তি ফিল হয় তুই জানিস গভেট মহিলা একটা।ঠিকঠাক ভাবে ম্যাথ কর।

উনি এবার গিয়ে উনার ফোন অন করলেন,ফোন নিয়ে বেলকনিতে গেলেন।উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি একবার আমার দিকে তো একবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছেন।ঠোঁট কামড়ে ধরে পূর্ণ মনোযোগ দিলেন ফোনের দিকে।উনার ভাবসাব খুব একটা ভাল মনে হলো না আমার।আমি বই খাতা রেখে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেই উনি আমার সামনে দাঁড়ালেন।হঠাত উনার চোখে মুখে ক্রমশ রাগ ধারণ করছে।

খুব সরল মনে প্রশ্ন করলাম বিহান ভাই কি হয়েছে।

–উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,কাল রাতে আমার ফোন নিয়ে কি করেছিস।

–কই কি করলাম

–উনি আমার হাত শক্ত ভাবে চেপে ধরে টেনে রুমের মধ্য নিয়ে ওয়ালের সাথে শক্তভাবে চেপে ধরে বললেন,আমার ফোন থেকে লেডিস জিনিসের অর্ডার করেছিস তুই?হাউ ডেয়ার ইউ দিয়া।

–ওটা আপনার ফোন ছিলো বুঝি বিহান ভাই।

–তাহলে কার ফোন ছিলো

–আমি ভেবেছি আমার ফোন ছিলো।

–কনভারসেষণ সব পড়েছি আমি।তুই ইচ্ছা করেই আমার ফোন থেকেই অর্ডার করেছিস।এখন মিথ্যা বলা হচ্ছে।

–এটা কি কোনো অন্যায় ছিলো বিহান ভাই।জাস্ট এই টুকুই তো।

–উনি বিরক্তিতে চুলের মধ্য হাত চালাতে চালাতে বললেন,অর্ডার করেছিস ভাল কথা।আমার নামে উলটা পালটা কথা বলেছিস কেনো?আমি লিপিস্টিক পরি,লেডিস গেঞ্জি পরি।

–কি করবো ওরা উল্টা পাল্টা কথা বলছিলো।

–ওরা বলছিল নাকি তুই?তারা রিপ্লে দিয়েছে,আমি নাকি মেন্টাল, আমার প্রফাইল ঘেটে বলেছে আমি কি ডাক্তার নাকি পাগল।

–কি সাহস আপনাকে পাগল বলেছে।

সাহস ওদের থেকে তোর বেশী বেড়েছে।আজ আমি কি করবো দিয়া তুই বুঝতেও পারছিস না।বলেই আমাকে পাজা কোলে তুলে নিলেন।এখুনি কি আছাড় দিবেন।আমি ভয়ে উনার বুকের কাছের গেঞ্জি টেনে ধরে উনার বুকে মাথা গুজলাম।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2025 © Golpo Hub. All rights reserved.