এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২

–উঠানের এক কোণে দাঁড়িয়ে ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে কিছু একটা ভাবছেন বিহান ভাই।গভীর চিন্তাধারা উনার চোখে মুখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

–মামি ছেলের হাত ধরে টেনে নিয়ে একটু আড়ালে নিয়ে বললেন,সব সময় কি একটু অতিরিক্ত করোনা তুমি বিহান।খুব প্রয়োজন ছিলো কি তোমার ফুফুর কাছে গিয়ে দিয়ার নামে উল্টা-পাল্টা বলার।কি সমস্যা কি তোমার।দিয়া ওইটুকু একটা মেয়ে।কি ক্ষতি করেছে তোমার।বাচ্চা মেয়ে তাকে কষ্ট পেতে দেখে, শাস্তি দিয়ে কি শান্তি পাও তুমি।আজ তোমাকে বলতেই হবে দিয়াকে নিয়ে সমস্যা টা কি তোমার।দিয়া কি তোমার বাবার সম্পত্তির ভাগ নিবে যে স্বি রাগে তুমি তাকে সহ্য করতে পারো না।না এতদিন অনেক দেখেছি দিয়াকে রাগানো টা আমরা সবাই মজা হিসাবেই নিয়েছি কিন্তু এখন তুমি বাড়াবাড়ির চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছে ব্যাপার টা।

–আম্মু দিয়ার মতো তুমিও আমাকে ভুল বুঝোনা প্লিজ।তুমি অন্তত আমাকে বুঝার চেষ্টা করো আম্মু।প্লিজ আম্মু ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।

–কি বুঝবো বিহান।বোঝার আর কি বাকি রেঝেছো তুমি।নতুন করে আবার কি বুঝাতে চাইছো তুমি।সব সময় তুমি যেটা বলবে সেটাই ঠিক,তুমি যেটা বুঝাবে সেটাই ঠিক,সামান্য পাঞ্জাবী তে দাগ লাগানোর জন্য দিয়াকে তুমি নিজে মারতে না পেরে এক ঘর মানুষের সামনে ফুফুকে লেলিয়ে দিয়ে মার খাওয়ালে।এত রাগ কেনো তোমার বলতে পারো।একটা ছেলে বলে তোমাকে কখনোই কিছু বলি না আমরা কিন্তু তুমি আজ বাড়াবাড়ির সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে ফেলেছো বিহান।

–আম্মু প্লিজ মাথা ঠান্ডা করো তুমি।আমার কি কম খারাপ লাগছে।বিশ্বাস করো আম্মু আমি বুঝতে পারিন যে ব্যাপার টা এতদূর গড়াবে।আমি ভেবেছিলাম ফুপ্পি দিয়াকে ঘরে নিয়ে দরজা আটকে শাষন করবে কিন্তু ফুপ্পি যে উত্তেজিত হয়ে সবার সামনে দিয়ার গায়ে হাত তুলবে আমি বুঝতেই পারি নি।

–আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি বিহান।মানে তোমার উদ্দেশ্য ছিলো তোমার ফুফু দিয়ার গায়ে হাত তুলুক।তুমি জানোনা তোমার ফুফু মেয়েকে নিয়ে কত চিন্তা করে।যা নিয়ে চিন্তা করে সেই দূর্বল জায়গা তুমি আঘাত করেছো।দিয়ার কাজিন কে নিয়ে কয়েক দিন আগেই ইন্টারনেটে অনেক বাজে কিছু ছড়িয়েছে।বাজে ছবি ছড়িয়েছে সেখান থেকে তোমার ফুফু মেয়ের চিন্তায় রাতে ঘুমোতে পারে না।একটা মেয়ের মান সম্মান যখন সামাজিক যোগাযোগ এ ছড়িয়ে পড়ে সেই বাবার অবস্থা কি হয় তুমি নিশ্চয়ই জানো।তোমার ফুফু মেয়েকে নিয়ে ইদানিং খুব চিন্তা করে।তাছাড়া কিছুদিন আগে তুমি বলেছো সাইমন এর সাথে দিয়ার রিলেশন। তোমার কি গুন একটা বিহান,গুনের তো শেষ নেই।দিয়া আমাকে সব বলেছে।তোমার ফুফুর মাথায় রক্ত উঠে গেছিলো।চিন্তায় পাগল হওয়ার মতো অবস্থা তার।বাড়ি ভর্তি মানুষ তার খেয়াল ই নেই।মেয়েকে মানুষের মাঝে মেরে তার খারাপ ও লাগছে কষ্ট ও হচ্ছে।

–আহা আম্মু!দিয়া এই টুকু পিচ্চি।ওর কি এমন মান সম্মান হয়েছে। মা মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছে তাতে কি এমন হয়েছে।

–দিয়াকে এখনো পিচ্চি লাগে তোমার।

–পুচকি কে পুচকি ছাড়া কি লাগবে।

–তোমার ফুফু সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিয়ার বিয়ে দিয়ে দিবে।সেটা আজ কালের মধ্যই।

–আম্মু এত ভেবো না ফুফু কে আমি বুঝিয়ে বলবো। এত সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছো কেনো ব্যাপার টা আম্মু।

–আমরা এই মুহুর্তে সব কিছুই সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছি।আমরা দিয়া আর তোমার বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

–বিহান ভাই কথাটা শুনেই যেনো আকাশ ভেঙে পড়লাও।খানিক টা কপাল কুচকে তাকালেন নিজের মায়ের দিকে।

–কার বিয়ে আম্মু আমার।

–এভাবে আকাশ থেকে পড়ার কিছু নেই তুমি ঠিক ই শুনেছো তোমার বিয়ে।ক্লিয়ার ভাবে শুনে রাখো তোমার সাথে দিয়ার বিয়ে।

–ইম্পসিবল আম্মু আমি এই মুহুর্তে কোন কিছুর বিনিময়েও বিয়ে করতে পারবো না।আমার ক্যারিয়ার এর বারো টা বাজাতে চাও তুমি?

–ক্যারিয়ারের কিছুই হবে না।তোমার মতো অনেকেই আছে বিয়ে করে সংসার ও করছে ক্যারিয়ার ও গড়ছে।তাছাড়া তুমি এখন ফাইনাল ইয়ারে।বিয়ের বয়স হয়েছে তোমার।

–আমার না হয় বিয়ের বয়স হয়েছে কিন্তু দিয়ার?দিয়া তো আমার হাঁটুর বয়সী আম্মু।দিয়ার কি বিয়ের বয়স হয়েছে। দিয়া এখনো চকলেটের আবদার করে। মাত্র সতেরো তে পা রেখেছে।সেই মেয়ে বিয়ের কি বুঝে আম্মু।

–আমার বিয়ে এর থেকেও কম বয়সে হয়েছিলো বিহান।

–তখন আর এখন কি সময় টা এক হলো।আমি বাল্যবিবাহ করতে পারবো না।সো সরি আম্মু।

–দেখো বিহান তোমার সাথে দিয়ার বিয়ে আরো অনেক আগেই ঠিক ছিলো।আমাদের দুই পরিবারের ইচ্ছা তোমাদের বিয়ে দেওয়ার।তুমি যদি এখন এই বিয়ে না করো তাহলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।আর তুমি ফুফু যদি এটা শোনেন যে তুমি তার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি নও তাহলে তার কেমন লাগবে ভেবেছো।তোমার ফুফুকে কষ্ট দিতে চাইলে যাও গিয়ে তোমার ফুফুকে বলে এসো তুমি বিয়ে করবে না।

–এইভাবে ইমোশনাল ব্লাক মেইল কি না করলেই নয় আম্মু।যা ভাল মনে করো তোমরা করো।বাট বিয়ে করছি মানে এই না তোমার ছেলে চেঞ্জ হয়ে যাবে।দিয়ার সাথে আজন্মকাল আমার এই যুদ্ধ চলবে।

–একটুও বাড়াবাড়ি করবে না তুমি।আগে বিয়ে টা তো করো।

–আম্মুদের রুমে মিটিং চলছে আমার আর বিহান ভাই এর বিয়ে নিয়ে।আমার বিয়ের বয়স হয় নি সেজন্য এখন শুধু কলেমা পড়ানো হবে।আমার আঠারো বছর বয়স হলে কাবিন হবে।সবাই যে যার মতো আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললো।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।কেউ আমার কাছে শোনার ও প্রয়োজন মনে করলো না।ভাবতেই কেমন লাগছে ওই বিরক্তিকর মানুষ টার সাথে আমার বিয়ে হবে।যে আমাকে সহ্য ই করতে পারে না।আমার পুরো জীবন টা ধ্বংস করতে কি উনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলো আমার পরিবার।

–আম্মু আর বাবা ভাইয়ার সাথে কথা বলে আমাএ রুমে এলো তিনজন।বাবা আমাকে বললো,মা দিয়া আগামি সপ্তাহে বিহানের সাথে তোমার বিয়ে।ভয় পেও না তোমার লেখাপড়া বন্ধ হবে না।আমাদের কাছেই থাকবে তুমি।বাবা রুম থেকে এটুকু বলেই বেরিয়ে গেলেন।আম্মু বললো,দিয়া বিহান আমাদের চেনা জানা। ছেলে হিসাবে ওর মতো ছেলে পাওয়া যায় না আজকাল।

অশ্রুভেজা চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,সারাজীবন তো নিজের সন্তানের থেকে অন্যর গুরুত্ব বেশী দিলে আম্মু।আমার থেকে বিহান ভাই তোমার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। বিহান ভাই যেটা বলবে ওইটাই রাইট আর আমি ভুল।উনার কথায় মানুষ ভর্তি সবার মাঝে আমার গায়ে হাত দিতেও দুবার ভাবলে না তুমি?কি ভেবে অমন বদ মেজাজী গম্ভীর একটা মানুষের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলে আম্মু তুমি।নিজের মেয়েকে এমন একটা জেদী ছেলেএ হাতে তুলে দিচ্ছো তুমি।আমি কি বেশী হয়ে গিয়েছি আম্মু তোমার কাছে।

আম্মুর চোখের পানি মুছে বললো,দিয়া আমার মাথা ঠিক ছিলো না।তুমি নেহাত ই বাচ্চা মেয়ে এখনো।তোমার অতিরিক্ত ভাল ভাবতে গিয়ে তোমার গায়ে হাত তুলে ফেলেছি আমি।মা হিসাবে আমার কত খারাপ লাগছে আমি বোঝাতে পারবো না।আজ যদি বলো আমি তোমার থেকে বিহানের গুরুত্ব বেশী দিচ্ছি তাহলে দিচ্ছি।মা হিসাবে আমি স্পষ্ট দেখতে পারি বা বুঝতে পারি কে আমার মেয়ের ভাল চায়,বা ভাল রাখবে।তোমার বাবা বা আমি কেউ তোমার খারাপ চায় না দিয়া।বিহানের গুরুত্ব আমি দিচ্ছি কেননা আমার মেয়ের ভালো যে চায় তার গুরুত্ব আমার কাছে সবার আগে।একদিন তুমি বুঝবে দিয়া আমরা তোমার জীবনের সব থেকে উত্তম জিনিস টা দিয়েছি।

আম্মু বেরিয়ে গেলে, ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,দিয়া একটা ছেলে হয়ে আমরা অনেক কিছুই করি, অনেক খারাপ কাজ ও করি এদিক সেদিক ঘুরি।কিন্তু ট্রাস্ট মি দিয়া বিহান রাগী হলেও ওর মন টা অনেক সুন্দর। ভাই হয়ে কি আর বোনের খারাপ চাইবো।বিহানের মতো ছেলে এই যুগে পাওয়া যায় না দিয়া।আজ না হোক কাল ঠিক ই বুঝবি।মনে মনে আমি সব সময় চেয়েছি বিহানের সাথেই যেনো তোর বিয়েটা হয়।

রুশা আপুর বিয়েটা মিটে গেলো,সেখানে সবাই আনন্দ করলেও আমি পড়ে ছিলাম ঘরের এক কোণে।ইতিমধ্য কাজিন রা সবাই অনেক খুশি আমার আর বিহান ভাই এর বিয়ের কথা শুনে।সবার কাছে যেনো ব্যাপার টা মিরাক্কেল এর মতো লাগছে।আগামি পরশু সেদিন শুক্রবার বিহান ভাই এর সাথে আমার কালেমা হবে।

(এক্সট্রা পার্ট দিলাম না বলেই,এখনো কি ভালবাসা মহল রেগে আছে।আর একটা ছোট্ট আপডেট দিয়ে রাখি বিহান ভাই যায় করুক কেউ সিরিয়াস নিবেন না।উনি যেটায় করেন তার পেছনে উনার দিয়ার প্রতি থাকে গভীর ভালবাসা প্রকাশের অন্যতম কারণ।প্রতি পর্বে পর্বে সেটা ক্লিয়ার হবে।এক পর্বে উদ্ভট কিছু দেখলে অবশ্যই অপেক্ষা করবেন।এট লাস্ট আপডেট এটা একটা ভালবাসা ময় উপন্যাস।পাঠক পাঠিকার প্রতি অনেক ভালবাসা রইলো।কিছু পাঠিকার কমেন্টে মিষ্টি ব্যাবহারে মুগ্ধ আমি।তাদের এই মিষ্টি ব্যাবহার আমার সাথে তৈরি করেছে এক অপ্রাকাশিত ভালবাসা আর আত্মীক টান।এক কথায় সেই ভালবাসা প্রকাশ সম্ভব নয়।হ্যাপি রিডিং।)

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.