ব্রিজ থেকে ফেরার সময় দেখলাম গাছের আড়ালে কিছু একটা নড়াচড়া করছে।সেই আত্মা ভেবে বিহান ভাই এর হাত শক্ত ভাবে ধরলাম আমি।বিহান ভাই আমাকে বলেন ওয়েট কর নিশ্চয় শুভ,তিয়াশ,বা বিভোর কারো সাথে লাইন মারছে।আমি বললাম ওই আত্মা ও হতে পারে।বিহান ভাই আমাকে বলেন তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড় বাকিটা দেখতেছি।তারপর কি হলো জানিনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি হাতে গাড় টুকটুকে লাল রং হয়েছে মেহেদীর।বাট জমা ওড়নার বিভিন্ন জায়ভা কালার হয়ে গিয়েছে।মেহেদীর রং কখন লেগে গিয়েছে বুঝতেই পারলাম না।হাতের দিকে চোখ যেতেই চোখ পড়লো আই লাভ ইউ রাক্ষস ভাই লেখাটার উপর।কি ফাজিল এই ছেলে আমার ফোন থেকে সব দেখে নিয়ে আবার সেটা হাতেই লিখে দিয়েছে।এক্ষুণি ঘুম থেকে উঠতে হবে উঠার সময় দেখি রিয়া আর মেহু আপু আমার গায়ের উপর দুইজন দুই পা তুলে ঘুমিয়ে আছে।মানে আমাকে তাদের কোলবালিশ বানিয়েছে।বাহ আমাকে ভর দিয়ে কি আরামে ঘুমোচ্ছে তারা।মারাত্মক জোরে চিৎকার দিতেই ঘুম ভেঙে গেলো তাদের।দুজন ই লাফিয়ে উঠে গেলো।রিয়া আর মেহু আমাকে বলছে এই দিয়া ভয় পেয়েছিস নাকি।আমি বললাম দুজনে বিয়ে করলেই হয় আমার মতো পিচ্চির উওর এত অত্যাচার কেনো শুনি।মেহু আপু বললো সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বাড়িতে আত্মীয়ের জব্য এক্সট্রা কোলবালিস নেই সে বাড়িতে আমি আর যাবো না।রিয়া হেসে দিয়ে বললো শুভ দা আছে তো তোমার বিশেষ কোল বালিস।মেহু আপু বললো তোরা শুভ ভাই এর নামে বাজে কথা বলে একটা প্রেম ও হতে দিচ্ছিস না আমার।এরই মাঝে বাবার আওয়াজ শোনা গেলো।
বাবার সাদা পাঞ্জাবী টা হারিয়ে গিয়েছে।বাবা রাতে খুলে রেখে ঘুমিয়েছিলেন।কিন্ত সেটা এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না।বাবার পাঞ্জাবী টা গেলো কোথায়?বাবা ঘুম থেকে উঠে পাঞ্জাবী পাঞ্জাবী করছে।মা, মামি সবাই খুজছে অথচ কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না সেই পাঞ্জাবী।বাবার পাঞ্জাবী খোজার জন্য রুম ময় মানুষের কোলাহল এ ঘুম ভেঙে গেলো বিহান ভাই এর।কাল রাতে বাবা, বিহান,ভাই,বিভোর ভাই,আলিপ,শুভ ভাইয়া সবাই একই খাটে ঘুমিয়েছিলো।প্রচুর আত্মীয় হওয়াতে যে যেখানে জায়গা পেয়েছে ঘুমিয়েছে।আমিও খুজে চলেছি কিন্তু কোথাও নেই সে পাঞ্জাবী।বিহান ভাই ভীষণ বিরক্তি নিয়ে ঘুম থেকে উঠলেন।উনার এই একটা জিনিস খুব অপছন্দের সেটা হলো খুব ভোরে কেউ উনার ঘুমের ডিস্টার্ব করলে।বিহান ভাই এর চোখে মুখে ভীষণ বিরক্তি দেখা যচ্ছে।বিহান ভাই টাওয়াল গলায় দিয়ে ব্রাশ আর পেষ্ট নিয়ে ব্রাশ করতে করতে বেলকনিতে প্রবেশ করলেন।আমি বিহান ভাই এর কাছে গিয়ে বললাম আপনি কি বাবার পাঞ্জাবী টা দেখেছেন।
“বিহান ভাই গালের পেষ্ট এর ফেনা নিচে ফেলে বললেন আচ্ছা সাজ সকালে এই কিপ্টার ছেলে ছেলে কিপ্টা এত চিল্লাচ্ছে কেনো বলতো?”
“দেখুন একদম সাজ সকালে বাজে কথা বলবেন না আমার দাদু আর বাবা মোটেও কিপটা নয়।”
“কিপ্টা না হলেও হাড় কিপটা তাতে সন্দেহ নেই।”
“হাড় কিপ্টার কি করলো”
“হাড় কিপ্টা না হলে কেউ সামান্য একটা পাঞ্জাবীর জন্য এই ভাবে চিল্লায়।এই পুরা শহর শব্দ দূষণ করে দিয়েছে।উফফ আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।এক গাদা মহিলা কে লাগিয়ে দিয়েছে পাঞ্জাবী খুজতে।আর তারা রুমময় চ্যা চ্যা ফ্যা ফ্যা করছে।জাস্ট বিরক্তিকর।”
“শুনুন ওটা বাবার নতুন পাঞ্জাবী।তাছাড়া ছিলো তো রুমেই যাবে টা কোথায়?”
“আই ডোন্ট নো।শান্তিতে ব্রাশ করতে দে তো।”
“আচ্ছা বিহান ভাই আবার চোর টোর আসে নিতো।”
“টোর টা কি?এর মিনিং টা কি?”
“চ্যা চ্যা ফ্যা ফ্যা এর পরিপূরক ”
“জাস্ট অশিক্ষিত মহিলা তুই।এইগুলা তোর থেকেই শেখা।তোকে এ ভাষায় না বললে বুঝবি না।তাই এ ভাষাতেই বলা।।”
“একজন কলেজ স্টুডেন্ট কে অশিক্ষিত বলছেন আপনি।”
“লাইক সিরিয়াসলি।তোর এই শিক্ষা যেনো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিস না।তাহলে এই খুলনা বিভাগ টা বাংলা ভাষার অপমানে ভরে যাবে।তোর ওই যে কিছু ভাষা আছে পড়া টড়া,রিয়া ফিয়া,কাকু টাকু,মামা ফামা,ব্রাশ ফ্রাশ আরো অনেক কিছুই আছে। ”
“দেখুন এগুলা খাটি বাংলা ভাষা।আমি যে বাঙালি সেটা বোঝা যায়। ”
“তোর বাপ এখনো চিল্লাছে।যা গিয়ে দেখ,পাঞ্জাবী ব্রিজের সামনের বকুল গাছে আছে।পাঞ্জাবী টা এনে দিয়ে ক্ষমা দে”
ওখানে কিভাবে গেলো।
“মেবি ভূতে নিয়েছে”
“এ কাজ আপনি করেছেন তাইনা।দেখুন আমি কিন্তু বাবা কে বলে দিবো।”
“সকালে ব্রাশ করেছিস।”
“না করবো।”
“থাক করা লাগবে না বলেই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলেন আর উনার মুখের ব্রাশ দিয়ে এমন ভাবে আমার দাঁত ঘষে দিলেন যেনো বাথরুম এর ব্রাশ দিয়ে ঘষছেন।এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বললে ঠিক ই টয়লেট ব্রাশ দিয়ে দাঁত ঘষে দিবো বলেই বেরিয়ে গেলেন”
“ইয়াক থু! বমি নিড।মনে চাইছে উনার গালে মুখে বমি করে দেয় আমি”
দুপুর একটায় বরযাত্রী চলে এসছে।বরযাত্রীতে রং বেরঙের মেয়ে এসছে।বাসার ছেলে গুলোর নজর ওই ডানাকাটা পরীদের দিকে।বিভোর ভাই মারাত্মক ভাব নিচ্ছেন মেয়েদের দেখে সাথে শুভ ভাইয়া ও আছে।তাছাড়া অন্যান্য কাজিন রা তো আছেই।শুধুমাত্র বিহান ভাই এর ই কোনো খেয়াল নেই কোথাও কোনো মেয়ে আছে কিনা।এই ভাবের ছড়াছড়ি চলছেই।গত রাতেই বলাবলি হয়েছে বিভোর ভাই একটা মেয়ে পটিয়েই ছাড়বে।এই দিকে শুভ ভাইয়া বলে তুই একটা পটালে আমি পটাবো ২ টা।এই দিকে তিয়াস ভাইয়া বলে ওকে আমি সব গুলাই পটাবো।আর বিহান ভাই বলেন ছ্যাচড়া হলে যা হয় আরকি।নীল শাড়ি পরা এক আপুকে পটাচ্ছেন বিভোর ভাই আর তিয়াশ ভাই।তিয়াশ ভাই মারাত্মক কন্ঠে গানের সুর তুলেছেন নীল নীল নীলাঞ্জনা চোখ দুটো টানা টানা কপালের ও টিপ যেনো জোনাকির ভীড় আমি প্রেমে পড়েছি তুমি করোনা মানা।
মেয়েটি একটা পাঁচ বছরের বেবি তিয়াশ ভাইয়ার কোলে তুলে দিয়ে বলেন এই নাও বাবু তোমার নতুন আব্বু।যাও পাপ্পা বলে ডাক দাও।ছেলেটি তিয়াশ ভাইয়া কে পাপ্পা বলে ডাকা শুরু করলো।কি সাংঘাতিক বাচ্চা ভাবা যায়।
বিহান ভাই বলে উঠলেন তোর কপালে কি সারাজীবন অন্যর ওয়াইফ ই জোটে।এদিক দিয়ে ও লাভ তোর ওদিক দিয়ে দেখলেও লাভ তোর।বোনাস পেয়ে গেলি।
কি একটা অবস্হা।বিহান ভাই এই মারাত্মক অপমান টা না করলেও পারতেন।
অলরেডি অনেক ওয়ার্নিং এ আছি বিহান ভাই এর।যার জন্য ছেলেদের থেকে কয়েক মাইল দূরত্ব বজিয়ে রইলাম।
বিভা আপুর বিয়েটা মিটে গিয়েছে।আমার মাথায় এখন পায়চারী করছে কাল রাতে সাদা কিছু একটা দেখে ভূত ভেবে ভয় পেলাম সেটা তাহলে বিহান ভাই এর ই কাজ ছিলো।উনি বাবার পাঞ্জবি নিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রেখে এসছেন।কি সাংঘাতিক ছেলে ভাবা যায়।বিয়ে মিটে যাওয়ার পরে আমরা জমিদার বাড়ি ঘুরতে গেলাম।জমিদার দের পুকুর পাড়ে বসে আছি আমরা।বিহান ভাই বলে উঠলেন নবাগত নায়কা নিশ্চয়ই বড় পর্দায় চান্স পাবে খুব শিঘ্রই সাথে নায়ক ও আছে।
উনার কি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম,,কে নায়ক আর কে নায়কা।
বিহান ভাই তোহা আপুর দিকে তাকিয়ে বলেন,আমাদের তোহা। টিকটক সেলিব্রিটি। ফেসবুক ময় তার টিকটক ভিডিও সাথে আছে আমাদের বিভোর।এনি ওয়ে বিভোর কাল সারারাত নাক ডাকার জন্য আমি ঘুমোতে পারি নি।তোহা ঘুমোবে কিভাবে।
বিভোর ভাই বলে উঠলেন আমি ক্যানো ঘুমোবো। বউ হবে তোমার ঘুমোবো আমি।
আমার বউ তোর বোন ই হবে এগুলা বলে লাভ নেই।তোহার সাথে আমার কেমনে কি?
বিভোর ভাই ফেসবুক আর গুগলে সার্চ দিলেন বিহান গফ।সাথে সাথে চলে এসছে তোহা আপুর নাম।
বিহান ভাই বলেন,গুগল ভুল করেছে সাথে জুকার ও।তা কোন ওয়েবসাইটে আগে এটা পোস্ট করে নিয়েছিলি বিভোর।আর এডিট ভালোই শিখছিস।রিয়েলি মারাত্মক।