এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা

যে চিঠি নিয়ে এত বড় একটা ইতিহাস হয়ে গেলো সেই চিঠি আসলে বিহান ভাই নয় বিভোর ভাই এর ছিলো।বিভোর ভাই এর মুখটা ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করেছে।কারণ বিভোর ভাই ও শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন যে ওই চিঠিটা বিহান ভাই এর ই হবে।বিভোর ভাই একবার সানজি আর একবার রিয়ার মুখের দিকে তাকাচ্ছেন, কি একটা অবস্থা উনার।এমনিতেই রিয়ার মনে অনেক সন্দেহ বিভোর ভাই কে নিয়ে তার উপর এমন একটা বাঁশ খেয়ে গেলো।রিয়া অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি দিয়ে বললো আরে বিভোর ভাই আপনার চিঠি,আপনি তাহলে ঠিকানা দিছিলেন উনাকে।ইয়ে সানজি আপু উনি পিওর সিঙ্গেল, আপনার সাথে মারাত্মক মানাবে কিন্তু।আপনারা কথা বলুন আমরা আসি।সানজি মেয়েটা লাজুক একটা হাসি দিলো রিয়ার কথা শুনে।
বিভোর ভাই দুঃখি দুঃখি মুখ নিয়ে বললেন,এই চিঠি আমার না কিছুতেই না এটা বিহানের ই।দিয়ার ভয়ে বিহান আমার নামে ফাঁসাচ্ছে।বিহান নিজে বাঁচতে চক্রান্ত করে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে ব্যাপার টা।আমার সংসার ভাঙলে বিহানের সাংসার ও টিকবে না বলে দিলাম।বিভোর ভাই সানজির দিকে তাকিয়ে বলেন এই চিঠি তো বিহানের, মেয়েরা বিহানের জন্য পাগল,আপনি তো বিহান কে লাইক করেন তাইনা খালা।
“খালা,হোয়াট কাকে খালা বলছো?খালা কথাটা শুনে সানজি মনে হয় মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার উপক্রম।”
“আপনাকে বলছি।আপনি আমার খালা।আমার মায়ের বোন।আমি আপনার ভাগনে।মা খালা সব ই সমান আমার কাছ।খালা আপনি আমাকে ফাঁসাবেন না প্লিজ।”
বিহান ভাই সানজিকে বললেন,এই যে আপু বিভোর না আপনাকে বলেছিলো ওর নামে একটা চিঠি লিখতে।বলেছিলো তাইনা? আপনার সাথে বিভোরের ই কথা হয়েছিলো।
সানজি মেয়েটি বলে উঠলো,,বিহান কে ভালবাসার প্রশ্ন ই আসে না বিকজ সে বিবাহিত।আমার চরিত্র এতটাও খারাপ নয় যে একটা বিবাহিত ছেলেকে ভালবাসবো।তাছাড়া বিভোর ও কোনদিকে কম নয়।বিহান আর বিভোর এর চেহারার মিল,গায়ের কালারের মিল,হাইটের মিল আর বিভোর এর হাসিতে অন্য রকম কিছু আছে।তাছাড়া বিভোর নিজেই তো বলেছে সে সিঙ্গেল।বিভোর নিজে আমাকে বলেছে আমার মতো মেয়ে পেলে সে বিয়ে করবে।তার সিঙেল জীবন ভাল লাগে না।
বিভোর ভাই মাথায় হাত চাপড়াতে চাপড়াতে বললেন তাই বলে আপনি ওসব সত্যি ভাববেন।ওগুলো আমি একজন কে জেলাস ফিল করানোর জন্য বলেছিলাম।জেলাস তো হলোই না উলটা আরো ভুল বুঝে গেলো।
বিহান ভাই আমার কানে কানে ফিস ফিস করে বললেন,, অযথা আমাকে সন্দেহ করে আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ট প্যারা দেওয়ার মজা বোঝাবো।
আমিও আস্তে আস্তে বললাম, আমি কিভাবে জানবো যে উনি আপনাকে দেয় নি চিঠি।আপনার নামের লেটার দেখে ৯০ডিগ্রি কোণে জ্বলছিলাম আমি।
রিয়া একভাবে তাকিয়ে আছে বিভোর ভাই এর দিকে।
“সানজি বিভোর ভাই কে বললো,বিভোর ওরা যাক তাহলে আমরা নিজেদের মতো করে সময় পার করি সেটাই ভালো হবে।তুমি হয়তো এদের মাঝে লজ্জা পেয়ে ভুলভাল বলছো।”
“বিভোর ভাই বললেন মাফ চাই খালা।”
“কি সমস্যা বিভোর তুমি না বলেছিলে কেউ তোমাকে পাত্তা দেয় না কখনো।কেউ তার প্রেমের আঙিনায় ডাকলে তুমি তাকে ফেরাবে না।”
“ওইটা আমার কথা না চিত্র নায়ক বাপ্পারাজ এর নিউ মুভি স্ক্রিপ্ট। আমি ওটা মুখস্থ করছিলাম।”
“কেনো?..”
“কেনো কেনো ও হ্যাঁ বাপ্পারাজ আমার ফেভারিট হিরো তাই।”
“বিভোর ভাই রিয়ার দিকে তাকিয়ে দুই কান ধরে বললেন সরি রিয়া তুমি যেমন ভাবছো তেমন না।বিলিভ মি রিয়া।”
আমি আর বিহান ভাই হাসছি।আমাকে জোরে হাসতে দেখে মেয়েটি বললো সব ই ঠিক আছে দিয়া তুমি আমাকে অযথা বকা ঝকা দিলে কেনো?ঠিক বুঝলাম না।বিভোর কে চিঠি দিয়েছি নট বিহান।আর তোমার রিয়াকশন দেখে বুঝতে বাকি নেই বিহানের সাথে কুচ কুচ হোতা হে তোমার।
“বিহান ভাই ব্যাপার টা সামলাতে বললেন,আপু ওর মাথায় গ্যাস্ট্রিক আছে।ভীষণ গ্যাস্ট্রিক।ভুল ভাল বলে যখন মাথার সমস্যা বেড়ে যায়।”
“মেয়েটি আশ্চর্যজনক ভাবে বলে উঠলো কিহ! আমি এতক্ষণ একটা পাগলের সাথে কথা বলছিলাম।ওহ মাই গড।”
“আমি রেগে গিয়ে বললাম,এই আপনি ভদ্র ভাবে কথা বলুন কে পাগল হ্যাঁ। আমি পাগল, আপনার চৌদ্দ গুষ্টি পাগল।ছ্যাচড়া মেয়ে কোথাকার বলা নেই কওয়া নেই আমার ই মামাতো ভাইকে চিঠি দেওয়া।প্রেম তোর এই জীবনে হবে না।জিন্দেগীতে হবে না। দেখি কিভাবে প্রেম করিস।আমাকে পাগল বলে আমার ভাই এর সাথে প্রেম করবি।।”
“মেয়েটি বিহান ভাই কে ইশারা করলো, মানে বোঝালো কাহিনী কি?”
“বিহান ভাই বললেন মাথায় সমস্যা বেড়েছে আপু।এক্ষুণি কামড় দিয়ে দিবে।প্লিন যান আপু।”
মেয়েটি যত দ্রুত সম্ভব পালালো।আর বলে গেলো বিভোর ফোনে কথা হবে।এই পাগলের জন্য আজ কিছুই হলো না।
আমি অগ্নি চোখে বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে ফুশছি।রাগে বেরিয়ে এলাম রাস্তায়।আমার পিছ পিছ ওরাও এলো।
বিহান ভাই বললেন সব দোষ এই বিভোরের।এই বিভোরের প্রেমের চক্করে আজ দিয়া রাগ করেছে আমার উপরে।
রিয়া বললো একদম ঠিক বলেছেন বিহান ভাই সব এই বিভোরের বাচ্চার দোষ। পরশু রাতে আমাকে মেসেজ করেছে রিয়া তোমাকে সত্যি খুব পছন্দ করি আমি।আমি ভেবেছি সত্যি।বিভোর ভাই যে এত্ত বড় ফ্লার্টবাজ তা আগে জানতাম না।আমাকে মেসেজ করে আবার অন্য দিকে মেয়ে পটিয়ে বেড়ায়।
বিভোর ভাই বললেন,রিয়া প্লিজ যা ভাবছো তা নয়।
যা ভাবছি তা নয় তাইনা।বলেই বিভোর ভাই কে জোরে ধাক্কা মেরে দিলো।বিভোর ভাই গোবরের গাদায় পড়ে গেলো।একটা গরুর খামারের পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম আমরা।বিভোর ভাই এর পিঠের দিক খানিক গোবরে ডুবে গেলো।কি বিশ্রি গন্ধ ইয়াক থু।বিভোর ভাই এর হোয়াইট কালারের শার্ট এখন গোবর কালার।বিহান ভাই চটাচট কয়েক টা পিক তুলে নিলেন।মনে হয় বিভোর ভাই এর জন্মদিনে এই পিকচার দিয়ে উইশ করবেন।বিভোর ভাই লুঙ্গি পরে ঘুমোলে বিহান ভাই পিকচার উঠাবেই।আর জন্মদিনে সেইসব ভয়ানক পিকচার দিয়ে উইশ করবেন।
বিহান ভাই কে বললাম বিভোর ভাই কে টেনে উঠান।রিয়াকে বললাম এটা কি করলি বোন তুই।বিভোর ভাই কে এমন বিশ্রি গোবরে ফেলে দিলি। রিয়া এখনো চটে আছে রিয়া বললো এতেও আমার রাগ কমে নি।উনার পুরাটা গোবরে ডুবাতে পারলে খুশি হতাম।নেক্সট আমার সাথে ফ্লার্টিং করতে আসলে মানুষের মল মূত্রে ফেলে দিবো উনাকে।
“বিভোর ভাই কোনমতে উঠে এসে বললেন সব দোষ বিহানের। ও জানে আমি নির্দোষ।তাও আমার রিয়া সোনা কে চেতিয়ে দিয়েছে।রিয়া হাগ মি প্লিজ বাবু।”
“রিয়া রেগে তাকিয়ে বললো, বাবু।”
“না শিশু।শিশু রিয়া আই লাইভ ইউ।প্লিজ হাগ মি শিশু।”
“শিশু মানে?”
“বেবির আপডেট শিশু।সবাই বেবি ডাকে আমি শিশু ডাকছি।”
“আমি কি আপনার পেট থেকে ডাউনলোড হয়েছি যে আমি আপনার বাচ্চা হতে যাবো।বেবি তো বাচ্চা কাচ্চাদের বলে।”
“আমার পেট থেকে কেনো হতে যাবে তোমার পেট থেকে আমার বাচ্চা ডাউনলোড হবে।”
“দিবা স্বপ্ন দেখেন।”
“তুমি চাইলে এই দিনেই হবে।”
‘বিহান ভাই বলে উঠলেন লুচ্চামি কম করে কর। রিয়াকে আমি তোর ফাঁদে পা দিতে দিবো না।’
‘লুচ্চামি কবে করলাম।তুই ইচ্ছা করে রিয়াকে চেতিয়ে দিচ্ছিস। ‘
‘একটু আগে লুচ্চামি ধরা পড়াতে গোবরে নিক্ষেপ করা হয়েছে তোকে।’
‘দিয়া আমি কিন্তু রিয়ার প্রতি সিরিয়াস বিহান কি চুপ করবে?বিভোর ভাই কে বললাম উনাকে খাইয়ে দিন গোবর।’
বিহান ভাই ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন কি সাহস ভাবা যায়।
পাশের দোকান থেকে একটা ডেটল সাবান আর প্যাকের শ্যাম্পু কিনে বাঁধা ঘাটে গেলাম।বিভোর ভাই সাবান আর শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করছেন।
নড়াইলে নাম করা জায়গা এই বাঁধাঘাট।যেখানে চিত্রা নদীর পাড়ে সিনেমার কিছু অংশ শুটিং হয়েছিলো।এই ঘাট টা নদীর পাড়ে বড় বড় পিলার দিয়ে বাঁধানো।উপর থেকে নদীর ভিতরে পর্যন্ত অনেক গুলা সিঁড়ি বিশিষ্ট।অনেক বড় আর সুন্দর করে করা এই সিঁড়ি গুলা।উপরে আবার ছাদের ছাউনি দেওয়া।সকাল বিকাল অনেক মানুষ এখানে এসে বসে থাকে প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য উপভোগ করে।এই নদির ঘাটেই বিভোর ভাই গোসল করছেন।
মনে মনে খুব রাগ হচ্ছে আমাকে পাগল বানালো মানুষের মাঝে।একা একা রওনা দিলাম কাউকে কিছু না বলে।বিহান ভাই ও আমার পেছনে পেছনে এলেন।
“পেছন থেকে ডাক দিলেন,কি সমস্যা চিঠি টা তো আমার না তাহলে কথা বলা হচ্ছে না কেনো?আবার কি করলাম।”
“আমাকে পাগল বলেছেন।যখন ই মেয়ে কেস থাকে তাদের সামনে আমাকে পাগল বলেন আপনি।মানুষের মাঝে আমাকে অপমান করেন ছোট করেন।আমি আর কথাই বলবো না আপনার সাথে।”
“উফফ সরি পিচ্চি।একচুয়ালি মেয়েটাকে তাড়াতে পারছিলাম না।মেয়েটার যে ভাব ছিলো ও তো বিভোরের বাসায় চলে যাবে।তাই তোর ভয় দেখিয়ে বিদায় করলাম।”
“আপনি আমাকে এখন অজুহাত দিচ্ছেন।আপনি আমাকে মেন্টাল ই ভাবেন।এর আগে অনেক বার বলেছেন।আপনার সাথে কথা বলার একবিন্দু ইচ্ছা নেই।বলেই হাঁটা দিলাম।”
“বিহান ভাই কে দেখলাম দোকানে গেলেন।পারুটি আর সস কিনলেন।উনাকে তো পারুটি খেতে দেখা যায় না।আজব পারুটি আর সস খাবেন।”
“আমার পেছনে হাঁটছেন আর বলছেন মিসেস বিহান কথা বলবেন না তাইতো।”
“না বললাম তো ইচ্ছা নেই।”
“এটা আপনার ফেভারিট ড্রেস তাইনা মিসেস বিহান।ড্রেস টা নষ্ট করে দিলে ভাল লাগবে আপনার।কথা না বললে কিন্তু তাই করবো।”
আমি জানি বলছেন কিন্তু উনি এমন কিছুই করবেন না।পাত্তা না দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।আমি জাস্ট ভাবতে পারিনি উনি এমন করবেন।টমেটো সস জামার পেছনে লাগিয়ে দিলেন।তাও অনেক খানি জায়গা লাগিয়ে দিলেন।সাদা গাউনের যে অবস্থা করলেন আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না।উনি তো এমন কাজ করেন না।মুখে বললেও এ ধরনের কাজ করেন না কখনো।আমি জাস্ট অবাক।রাগে দুঃখে কেঁদেই দিলাম।ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।এখন মানুষের ভেতর দিয়ে কিভাবে যাবো।এই গাউন টা অনেক প্রিয় আমার।জামা ঘুরিয়ে দেখি পুরা জামায় সস লাগিয়ে দিয়েছেন।কেঁদে দিয়ে বললাম আপনি কোন ধরনের মানুষ একটু বলবেন।আমার লজ্জা থাকলে আর জীবনে আপনার সাথে কোথাও যাবো না।আপনার সাথে যদি আর কথা বলি আমার নাম দিয়া নয়।
উনি এক চোখ টিপে দিয়ে বললেন বাসায় গিয়েই তো ফোন দিবে।মেসেজ দিবে সিন না করলে নাম্বারে ফোন দিবে। নাম চেঞ্জ করবা ওকে এবারের নাম টা জরিনা ভানু দিও।
কি বিরক্তিকর মানুষ ভাবা যায়।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.