কোনো কাজ ই ছোট নয়,তাই কাজ কে ছোট করে দেখা উচিত নয় এমন বুলি আউড়িয়ে বিহান ভাই উনার একটা বাতিল গেঞ্জি দিয়ে ফ্লোরের পানি মুছতে শুরু করলেন।আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি বিহান ভাই ফ্লোর মুছছেন এটা ইতিহাসে নবম আশ্চর্য।বিহান ভাই সুন্দর ভাবে ঘর টা মুছে কাঁচের টুকরো গুলো তুলে রুম পরিষ্কার করে ফেললেন।আমি চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে দেখছি উনি কিভাবে ফ্লোর মুছছেন।আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললেন, কি দেখছিস দিয়া।আমি দুষ্টমি করে বললাম,আপনাকে কাজের বুয়া হওয়াতে কেমন লাগছে তাই দেখছি,একদম পারফেক্ট কাজের বুয়া লাগছে।বিহান ভাই আমার দিকে এগিয়ে এসে পাঞ্জাবী টা খুলতে খুলতে বললেন, এখন কাজের ছেলের রোলে ও দেখবেন আপনি।উনার মুখের অদলে ভীষণ দুষ্টুমির ছড়াছড়ি।আমি একটু অবাক হয়েই বললাম,কি কাজ করবেন বিহান ভাই।
উনি আমাকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে আমার উপর ঝুঁকে সুয়ে পড়ে বললেন,যে কাজে বউ বুঝবে তাকে দেখলে আমার ফিলিংস ভরপুর থাকে সে কাজ।যে কাজের জন্য বউ আর আমার মাঝে বিশাল তুফান হয়ে গেলো সে কাজ।যে কাজের জন্য বউ রেগে লাল টমেটো হয়ে ছিলো ।উনার এমন কথায় ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম।আমি কি এইসব উদ্দেশ্য করে উনাকে বলেছিলাম। উনি কত্তকি ভেবে নিয়েছেন ছিঃছিঃ।তাছাড়া উনি কখনো খালি গায়ে এভাবে আমার উপর ঝুঁকে আসেন নি।হালকা গোলাপি ঠোঁটের চারদিকে হালকা কালচে প্রলেপ এ অসম্ভব সুন্দর লাগে উনাকে।তার উপর আবার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে দুষ্টু হাসি দিচ্ছেন।বরাবর উনার সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ আজ আরেকবার ও মুগ্ধ এই নিয়ে কতবার মুগ্ধ আমি তার হিসাব নেই ।এই প্রথম খুব কাছ থেকে উনাকে এইভাবে দেখছি, বুকে হালকা পশমে আবৃত উনার যেখানে মাথা গুজে আজন্মকাল কাটিয়ে দিলেও বিরক্তি আসবে না।উনার উন্মুক্ত বুকে নিজের মাথা গুজে লজ্জায় মাথা নুইয়ে দিলাম আমি।বিহান ভাই কানের কাছে ফিস ফিস করে বললেন মুখ তোলো,তোমার মুখ না দেখলে এই মুহুর্তে সব কিছু অন্ধকার মনে হচ্ছে,আবার ও ফিস ফিস করে বললেন,ভালবাসি দিয়া।বলেই উনার হাত দিয়ে পেটে আলতো স্পর্শ দিতে লাগলেন।বিহান ভাই এর উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে উপচে পড়ছে।দুজনের নিঃশ্বাস যেনো এক ই গতিতে বইছে। উনার উত্তপ্ত নিঃশ্বাস শরীরে পড়তেই শরীরে ভূমিকম্পনের ন্যায় কম্পণ শুরু হলো যে কম্পণ সমুদ্রের উথাল পাথাল ডেউয়ের ন্যায় সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়লো।নিজের কন্ঠ ও কেমন ভারী হয়ে এসছে হার্ট বিট প্রচন্ড বেগে চলছে দুরুম দুরুম সাউন্ড হচ্ছে।উনাকে বললাম কি..কি করছেন উঠুন কন্ঠে আমার শিতলতা আর গভীর ভারত্ত্ব শরীর অবস হয়ে গেলে যা হয়।উনি উনার আঙুল দিয়ে আমার ঠোঁট চেপে ধরে মুখ দিয়ে ইশারা করলেন।যে ইশারায় বোঝালো চুপ থাকতে আমায়।আমার ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে ঘাড়ে ঠোঁট ছুইয়ে দিলেন।যে ছোঁয়ায় বিদ্যুতের ন্যায় কেঁপে উঠলাম আমি।উনার শরীরের সমস্ত ভর আমার উপর ছেড়ে দিয়ে গালে, চোখে, ঠোঁটে চুমুর আদর দিচ্ছেন।উনাকে বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা সত্যি আমার নেই।উনার মাঝে এই মুহুর্তে ভীষণ নেশা, যে নেশায় উনি আমাকেও ডুবাতেও চাইছেন।এই বিহানের মাঝে সেই রাগি বিহান নেই এখন যাকে দেখছি তার মাঝে আমাতে বিভোর হওয়া একজন প্রেমিক কে দেখছি।উনি নিজে ভীষণ যত্ন নিয়ে উনার ওষ্ট ছুইয়ে ভালবাসার প্রলেপ একে দিলেন আমার সমস্ত গালে মুখে।আমার ওষ্টের কাছে নিজের ওষ্ট এগিয়ে এনে বললেন,কিস মি মিসেস বিহান।আমি ভীষণ লজ্জায় উনাকে ধাক্কা দিয়ে উঠে খানিক টা সরে গেলাম।উনি বিছানায় সুইয়েই আমাকে ডাকলেন কাম ফার্স্ট মিসেস বিহান।লেটস লাভ। আমি গেলাম না এইভাবে যাওয়া যায় লজ্জায় আমার যা অবস্থা। উনি উঠে এসে পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরে পেটে সুরসুরি দিতে দিতে বললেন,প্রথমবার বউ কে বউ এর মতো দেখছি তাও পালানো হচ্ছে কেনো?আজকের দিয়া বিহানের বউ।বিহান বউ এর সাথে যখন থাকে তখন সে বউ তে বিভোর থাকে।নিজের ভেতর ও অন্যরকম কিছু শিহরণ বয়ে যাচ্ছিলো।আমি উনার দিকে ঘুরেই উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।মনে হলো উনার ভেতরেই সম্পূর্ণ মিশে গেলাম।জানিনা কতক্ষণ দুজন দুজনকে আলিঙ্গন করে রইলাম।কিন্তু বিহান ভাই যেনো নেশাক্ত ভাবে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছেন।উনাকে এখন আটকাতেই হবে না হলে অনর্থ হয়ে যাবে।উনাকে আটকাবো কিভাবে সেই প্লান করছি আমি মনে মনে।কারণ আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।হুট করেই খুব জোরে চিৎকার দিলাম।আমার চিৎকারে দেখে বিহান ভাই আচমকা ভয় পেয়ে গেলেন আর দ্রুত আমাকে ছেড়ে দিলেন।আমি বিহান ভাই এর থেকে খানিক টা দূরে ছিটকে গিয়ে পড়লাম।বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে দেখি ভীষণ বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে কপালে কয়েক টা ভাজ উনার।উনাকে বিরক্ত দেখালে ভীষণ সুন্দর লাগে।বিহান ভাই এর মেজাজ এখন চরম বিগড়ে আছে কারণ এমন টাইমে এমন ভাবে চিৎকার দিবো উনি ভাবতেই পারেন নি।আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলেন এখানে কি বাঘ ভাল্লুক ছিলো এইভাবে চিৎকার দেওয়ার কারণ কি?আমি এটা নিশ্চিত উনি বুঝতে পেরেছেন আমি ইচ্ছা করেই এমন করেছি।তো তো করে বললাম,সুরসুরি ভীষণ সুরসুরি লাগছিলো বিহান ভাই।আমি সুরসুরি সহ্য করতে পারি নাহ।বিহান ভাই এখন ফুল রোমান্স মুডে আছেন এই মুহুর্তে আমার এমন অদ্ভুত বিহ্যাভে উনি রেগে আগুন।এক পা দু’পা আমার দিকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,সুড়সুড়ি তাইনা?খুব সুড়সুড়ি আজকে সুড়সুড়ির বিনাশ করবো যাতে ফিউচারে এমন সিরিয়াস মুহুর্তে সুড়সুড়ি ডিস্টার্ব না করে।উনার তো মতলব ই ভালো না।জোরে বলে উঠলাম আরে মামি কখন এলে তুমি।বিহান ভাই আতকে উঠলেন কথাটা শুনে দ্রুত উনার পাঞ্জাবী গায়ে ভরে নিজের চুল ঠিক করে নিলেন।বাইরে উঁকি মেরে দেখলেন মামি কোথাও নেই?বেচারার দিকে তাকিয়ে আমি এক গাল হেসে দিলাম।উনি আমার কাছে এসে বললেন এইরকম ষ্টুপিড এর সাথে রোমান্স ভাবা যায়। তোর থেকে টুনির মা ও ভালো আছে।আমি নিজে থেকে আর তোকে স্পর্শ ই করবো না।আজীবন ভার্জিন থাকবো তবুও তোকে আদরের ধান্দায় ইজ্জত হারাতে পারবো না।আরেক টু হলে এই পাড়ার মানুষ এক জায়গা হয়ে যেতো।যাক বাবাহ বড় বাঁচা গেছি আজকের মতো।
উনি আমাকে খাটের সাথে বালিশ হেলান দিয়ে বসিয়ে রেখে চলে গেলেন উনার কাজে।কিছুক্ষণ বাদেই বিভা আপু,দুলাভাই, বিভোর ভাই,আর মামি এলেন সাথে রিয়া রিয়ার আম্মু ও এসছে।রিয়ার আম্মুকে দেখেই বললাম আরে কাকিমণি তুমি এখন।কাকি বললো,বিকাশ থেকে টাকা তুলতে এসছিলাম বিভোর বললো বিভা এসছে দেখা করে যেতে তাই এসছি।আমি হেসে দিয়ে বললাম,কতক্ষণ এসছো কাকিমনি।
‘ঘন্টাখানেক এর বেশী হবে।বিভোর দের ফ্ল্যাটে বসেই আমরা গল্প করছিলাম।এখন চলে যাবো।’
বিভা আপু বললো আন্টি রিয়া থাকুক না অনেক দিন আড্ডা দেওয়া হয় না আমাদের।রিয়া কে রেখে যান আন্টি।
কাকিমনি বললো,রিয়া থাকতে চাইলে থাকুক।আর রিয়া রাজি হবে আমি জানি কারণ বই তো আর পড়া লাগবে না।দুলাভাই বলে উঠলেন আন্টি চিন্তা করবেন না আমার শালিকা দুজন ই এবার ভাল কিছু করবে।কাকি মনি যাওয়ার পরে খাটের উপর গোল হয়ে বসলো সবাই।এখানে বিহান ভাই নেই কেননা উনি এসব আড্ডাতে খুব ই কম আসেন আর আসলেও আধ্যাতিক কিছু কথা নিয়ে আসেন।এতক্ষণে মামির খেয়াল হলো আমার পায়ে ব্যান্ডেজ।মামি উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করলেন দিয়া তোর পায়ে ব্যান্ডেজ কেনো?পা কাটলো কিভাবে?মাথা নিচু করে বললাম,মামি আমার হাত থেকে পানির গ্লাস পড়ে গেছিলো আর সেটা তুলতে গিয়েই পা কেটেছে।দুলাভাই,বিভোর ভাই,বিভা আপু সবার নজর পায়ের দিকে।সবাই প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।সবাইকে শান্ত করতেই বললাম সিরিয়াস কিচ্ছু না ঠিক হয়ে যাবে।মামি আমাদের আড্ডা থেকে বিদায় নিলো।বিভোর ভাই আর রিয়ার ব্যাপার টা বিভা আপু আর দুলাভাই দুজন ই জানেন।বিভা আপু রিয়া কে বললো,রিয়া এই গাধার সাথে কিভাবে রিলেশন এ আছিস বলবি ও যে অলস কোনো কিছু আনতে বললে মনে থাকলেও বাসায় এসে বলে সরি ভুলে গেছিলাম। মা বলেছে বিয়ে দিলে ওর বউ রাস্তায় ভুলে ফেলে আসবে।রিয়া বললো,বিভা আপু আমার জন্য তোমার শ্বশুর বাড়ির ওখানে একটা ছেলে দেখো তোমার দেবর টেবর নেই।ওই যে বিয়ের দিন এসছিলো আরিয়ান তোমার ফুফাতো দেবর আমার কিন্তু বেশ ভালো লাগে।দুলাভাই মজা করে বললেন,আমার শালা বাবুর কিন্তু হার্ট এট্যাক হবে রিয়া।এইভাবে তাকে স্যাকা দিও না।রিয়া ও মজা করে বললো দুলাভাই যে ভাবে সে সব কিছু ভুলে যায় দেখা গুলো বিয়ের পর রাস্তায় বেরোলে হুট করে বলে উঠলো কে আপনি আন্টি?বিভোর ভাই ভ্রু কুচকে বললেন,আমি আন্টি ডাকবো? রিয়া আবার ও বললো হ্যাঁ ডাকতেই পারেন।দেখা গেলো ভুলে বউ থেকে আন্টি হয়ে গেলাম আমি।বিভোর ভাই দুলাভাই কে বললেন দুলাভাই পুরুষ জাতির অপমান করছে আপু আর রিয়া।একজন কে বলা আর সব পুরুষ কে বলা এক ই কথা।দুলাভাই রিয়ার কানে কি জানি খানিক টা বললো,রিয়া হেসে দিয়ে বললো দুলাভাই আপনিও না।বিভোর ভাই সন্দিহান ভাবে বললেন,আমার বউ কে কি বললেন দুলাভাই।দুলাভাই বললেন তার থেকেই শুনে নিও এটা সিক্রেট ব্যাপার।
বাইরে থেকে ভীষণ কোলাহল ভেষে আসছে।মনে হচ্ছে প্রচন্ড ঝগড়া লেগেছে।বিভোর ভাই উঁকি মেরে ঝগরা পরিদর্ষন করছেন।এমন সময় সাওয়ার নিয়ে এলোমেলো চুলে ট্রাউজার আর সাদা গেঞ্জি পরে আমাদের কক্ষে প্রবেশ করলেন বিহান ভাই।বিহান ভাই এর ফেভারিট খাসির মাংস এইদিকে আমার কাছে কেমন জানি ছাগলের গন্ধ বের হয় আমি খেতে পারি নাহ।তাই এই খাসির মাংস কে শত্রু মনে হয় আমার।বাইরে ঝগড়া টা লেগেছে খাসি নিয়েই।একজন্দের টিনের চালের ঘরের পেছনেই আরেকজন ঘর বেঁধেছে সেখানে অনেক খাসি পালা হয়।খাসি গুলার দাঁড়ি ও আছে আর অনেক বয়স তাদের।খুব ই বিশ্রি গন্ধ তাদের গায়ে।সাধারণ মানুষ ওখান দিয়ে গেলে নাকে কাপর দিয়ে যায় এতই গন্ধ।বাড়িওয়ালার অভিযোগ সে বাড়িতে বসবাস করতে পারছে না এই ছাগলের জন্য।এখানে এগুলা পালা যাবে নাহ।আমি বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললাম,যারা খাসির মাংস অনেক লাইক করে তারাও খাসি।খাসি না হলে এই বিশ্রি জিনিস পছন্দ করে কিভাবে।রিয়া বললো তুই কি বিহান ভাই কে খাসি বললি এম্মা বিহান ভাই আপনাকে খাসি বলেছে।দুলাভাই বিহান ভাই দিকে তাকিয়ে বল লেন, ডাক্তার সাহেব কে কিনা খাসি বললো।আমি আরেক টু চেতিয়ে দিতে বললাম উনি হলো ছাগলের ডাক্তার।বিহান ভাই ট্রাউজারের পকেটে হাত গুজে বললেন,দুলাভাই আমি ভাবছি দিয়াকে ওই ছাগলের খোয়াড়ে আজকের রাত টা গলায় দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখলে কেমন হয়।ওখানে থেকে ও অসুস্থ হলে খাসির ট্রিটমেন্ট করতে পারবো।সরি মহিলা খাসির।ফ্যাল ফ্যাল নয়নে তাকিয়ে রইলাম নিজের ভবিষ্যত ছাগলের খোয়াড়ে ভেবে।