এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা

“নির্বাণ স্যারের ক্লাস টা সত্যি সুন্দর ছিলো বিহান ভাই।”
“স্যারের পড়া বুঝতে অসুবিধা হয়নি তো।ক্লাসে যা পড়িয়েছে তাকি বুঝেছিস। ”
“হ্যাঁ অসাধারণ ছিলো বুঝবো না ক্যানো?”
“স্যারের পড়ানো টা অসাধারণ ছিলো নাকি নাকি স্যারের চেহারা দেখে বলছিস কোনটা।”
“দুটোই নির্বাণ স্যারের থেকে কম বয়স স্যার এর আগে দেখি নি।”
“আমার থেকে দুই ইয়ারের সিনিয়র নির্বাণ আর তুই ওর থেকে কম বয়সী স্যার দেখিস নি।আমাকে কি তোর চোখে যায় না ভ্রু কুচকে বললেন।”
“আপনি তো বুইড়া কাক্কু।লুকিং এ কাক্কু।”
“এক গোছা চুল টেনে ধরে বললেন,তোর মতো গভেট তো ঠিকঠাক ভাবে গুছিয়ে কিছু বলতেও পারে নাহ।তুই যে বিভোর কে বুইড়া বললি আমি কি সেটা বলবো বিভোর কে।”
“কি বলবেন আপনি?”
“বলবো দিয়া তোকে বুইড়া কাক্কু বলেছে।”
“কখন বললাম। ”
“একটুও মিথ্যা বলবি না তুই মাত্রই বলেছিস।”
“সেটা বিভোর ভাই নয়।আপনাকে বলেছি।”
“এদিক ওদিক কোনদিক দিয়ে মেলালেও তো আমি তোর কাক্কু হচ্ছিনা।শরিয়ত মোতাবেক আমি তোর হাজবেন্ড।কাক্কু মানেই যে বয়স বেশী সেটা নয়।এইযে ধর আগামিকাল শোনা গেলো দিয়া বিহানের সন্তানের মা হতে চলেছে তাহলে বিভোর কাকু হয়ে যাবে।তাহলে ঘুরিয়ে পেচিয়ে বিভোর কেই তো কাক্কু বললি।”
“আপনার এই কুটিল বিদ্যা আমার কাছে প্র‍য়োগ করবেন না।নিশ্চিত জিলেপির আবিষ্কারক আপনি?আপনি ছাড়া এমন কুটিল জিনিসের আইডিয়া আর কারো নেই।”
“হাই আমার শ্বশুরের মেয়ে তার একমাত্র জামাই কে কি ভাবে নির্যাতন করছে?”
“আবার মিথ্যা বলছেন?”
“এবার যা বলছি তা সত্যি?এইভাবে রোমান্টিক অত্যাচার করে আমাকে মেরে ফেলার ধান্দা তাইনা?বউ আমার অথচ এখনো কোলবালিশ নিয়ে ঘুমোতে হয়।এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় নিড বউ।আমার সামনে দিয়ে এমন কিউট কিউট ঢং করলে এবার তুলে নিয়ে আসবো।”
“কোল বালিশ নিয়ে তো আমি ও ঘুমোয়।”
“তুই পাশে থাকলে কোল বালিশ কে ভোমরা বর্ডার পার করে দিয়ে তোকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোবো।”
“রিয়া বাইরে অনেক্ক্ষণ ওয়েট করছে এবার যায়।”
“ওকে বাট খেয়ে বাসায় যাবি।আর হ্যাঁ নির্বান কে আমি বলেছিলাম তোর আর রিয়ার খেয়াল রাখতে।”
“কিহ আপনি?আর আমি ভেবেছি আমার জন্য স্যারের কত দরদ।”
“তো কি এমন সাহস কারো আছে যে তোর প্রতি দরদ দেখাতে যাবে।”
“উনার রুম থেকে বেরিয়ে দেখি রিয়া বাইরে অপেক্ষা করছে।আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় হাসি দিয়ে বললো কি হলো ভেতরে দিয়া?”
“মুড়ি ভাজি হলো শব্দ শুনিস নি?”
“মুড়ি ভাজি কে করলো?”
“আমাকে মুড়ির মতো ভাজি করেছে ভেতরে নিয়ে।আরেক টু হলেই প্রাণ টা যাচ্ছিলো আমার।গরম বালু তে দিয়ে যেভাবে মুড়ি ভাজি করে আমাকেও সেইম করেছে।”
“ওহ আচ্ছা আমি ভেবেছি অন্য কিছু?”
“সবাই কি বিভোর ভাই যে অল টাইম রোমান্টিক মুডে থাকবে।উনি থাকেন করলা ভাজির মুডে।”
“যাক বাবা আমি ভাবলাম বিহান ভাই ধীরে ধীরে তোর দিকে এগোচ্ছে আর তুই স্লো মেশনে পিছনে যাচ্ছিস।পাশেই মিউজিক হচ্ছে উউউউউউউউউ আশিক বানাইয়া, আশিক বানাইয়া আপনে।আহ কি ফিলিংস তোর বিহান ভাই ধীরে ধীরে লিপ নিয়ে আগাচ্ছেন।”
রিয়ার পায়ে একটা গুতা দিয়ে বললাম আমার সহজ সরল বিভোর ভাই কে এভাবে পাকা বানিয়ে ফেলছিস তাইতো রিয়া।এইবার বুঝেছি।
হ তোর বিভোর ভাই হেব্বি রোমান্টিক।আমাকে দেখলেই তার ইয়ে পায়।মানে হানিমুন পায়।
দুজনে কথা বলতে বলতে লাইব্রেরি প্রবেশ করলাম।লাইব্রেরিতে কত স্টুডেন্ট বসে মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করছে।লাইব্রেরিতে তাকে তাকে বই সাজানো।চারদিক চোখ বুলিয়ে দেখে নিলাম।একটা ফাঁকা টেবিল আমরা দুজনে বসলাম।আশে পাশে তো প্রেয়সী আপুকে দেখা যাচ্ছে না উনি তো এখানেই আসতে বললেন।কিছুক্ষণের মাঝেই প্রেয়সী আপু প্রবেশ করলেন আর উনি সোজা আমাদের কাছেই এলেন।আমাদের সামনের চেয়ারে বসলেন।
“আমি বললাম আপু কেনো ডেকেছেন?”
“আপু।কে তোমার আপু?তুমি আমার স্টুডেন্ট রাইট নাউ।সো কলম মি ম্যাম ওকে।”
“সরি ম্যাম।আমাকে কি কিছু বলবেন?”
“হ্যাঁ বলবো।তুমি তাহলে শেষ অবধি ঢাকা মেডিকেল এ পা রাখলে।”
“জ্বী ম্যাম আপনাদের দোয়াতে চান্স পেয়েছি।”
“এতে তো তোমার ক্রেডিট নেই সবটায় বিহানের ক্রেডিট। বিহানের চেষ্টা আর সঠিক গাইড লাইন না থাকলে এখানে পা রাখার সৌভাগ্য হতো না তোমার।”
“হ্যাঁ আপু একদম ঠিক বলেছেন।উনি মানে বিহান উনার অনেক কেয়ার আমার প্রতি।অনেক গাইড করেছেন আমার।বাকি জীবন এভাবেই কেয়ার করে যাবেন উনি আমার।”
“বিহানের নাম ধরে ডাকো এখন?”
“এটা পারসোনাল ব্যাপার ম্যাম।”
“তোমার কথার ধরণ ই দেখছি বদলে গিয়েছে।মেডিকেল এ চান্স পেয়েই এই অবস্হা।আমাদের মতো এই পজিশন এ আসলে তো অহংকারে মাটিতে পা ই পড়বে না।”
“আমার ব্যাক্তিগত বিষয় শেয়ার না করাকে যদি আপনার অহংকার মনে হয় তাহলে মনে করবো এত লেখাপড়া শিখেও আপনার বোঝার ক্ষমতা অনেক কম।”
“চলে যাও দিয়া এখান থেকে।যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও বাট এই মেডিকেল কলেজ আর বিহান দুটো জিনিস ছেড়ে চলে যাও।আমি রিকুয়েষ্ট করছি চলে যাও।আমার রিকুয়েষ্ট কে হিংস্র রুপে পরিণত করতে বাধ্য করো না।টাকা লাগবে তোমার গাড়ি বাড়ি যা লাগে নাও বাট বিহান কে ছেড়ে দাও।আমি অনেক অপমানিত হয়েছি বিহানের কাছে শুধুমাত্র তোমার জন্য।বাবার একটাই মেয়ে আমি জন্মের পর থেকে ভালবাসা আর বিলাসিতা কোনোকিছুর ই কমতি ছিলো না আমার।সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্ম আমার।হুট করেই আমার জীবনে বিহান আসে।মানে এই মেডিকেল এ প্রথম দেখা হয় বিহান আর আমার।সেই প্রথম দেখাতেই মন হারিয়েছিলাম আমি বিহানের প্রেমে।বিহানের সাথে খুব ভাল বন্ধুত্ব হয় আমার। আমি বিহান কে লাইক করতাম আমি মনে করতাম বিহান হয়তো এটা বোঝে। বাট পরে জানতে পারি বিহান কখনো বিষয় টা সিরিয়াসলি নেয় নি।আমি তাকে কোন চোখে দেখি এটা নিয়েও সে সিরিয়াস না।আমার চাওনি,আমার হাটা চলা আমার বিহানের প্রতি ফিলিংস কোনো কিছুই বিহান ভেবে দেখে নি।মানে সে অন্য মেয়েদের থেকে ভিন্ন কিছুই দেখে নি।পরে আমি বিহান কে জানিয়েছিলা আমি তোমাকে ভালবাসি বিহান তখন বিহান উত্তর দিয়েছিলো সে অন্য কাউকে ভালবাসে।সেই অন্য কেউ টা কে এটা খুজতে গোটা চারটা বছর লেগেছে আমার।অবশেষে আমি খুজেপেয়েছিলাম তোমাকে।সেদিন থেকে তোমাকে তুচ্ছ মনে হয় আমার।হিংসা হয়,রাগ হয় আমি সহ্য করতে পারি না তোমাকে।তুমি না থাকলে বিহান আমার ই হতো।কেনো তোমার জন্ম হলো দিয়া আমার জীবন টা অতিষ্ট করতে।আমার ৬ বছরের ভালবাসা বিহান।
আপনি মাত্র ছয় টা বছর ভুলতে পারছেন না আর বিহান ভাই এর ঊনিশ টা বছরের ভালবাসা আমি।উনি কিভাবে ভুলবে আমাকে ভেবেছেন।
আমি কিছুই জানিনা না দিয়া।তবে জানি তুমি না থাকলে বিহান আমার জীবনে আসবে।তাই তোমার না থাকাটা বেশী জরুরি।তোমার রেজাল্টের দিন বিহান আমার সাথে দেখা করেছিলো আর কি বলেছিলো জানো?
দিয়া অনেক জেদী একটা মেয়ে।আমার জিদ তুই দেখেছিস কিন্তু দিয়ার জিদ দেখিস নি।দিয়া আমার জন্য সব পারে।আমি দিয়ার জিদ।তোর করা সব অপমানের উত্তর দিয়া দিয়েছে চান্স পেয়ে।ওর এই চান্স পাওয়া কি প্রুভ করে না তুই যা বলেছিলি তা সম্পূর্ণ ভুল।দিয়ার সামনে কিভাবে মুখ দেখাবি তুই।তুই যেগুলা বলেছিস অন্য কেউ হলে লজ্জায় মারা যেতো হয়তো।দিয়া ইজ দিয়া প্রেয়সী।আজ দিয়া চান্স না পেলে আজ আমি তোকে আমাদের বিয়ের দাওয়াত দিতাম।দিয়া কে ছেড়ে দিতাম বা আমার যোগ্য না এসব ভাবতাম না।দিয়ার মতো তুই চাইলেও হতে পারবি না।ওই পিচ্চি আমার ডাক্তার হওয়ার অনুপ্রেরণা।আমার ভাল থাকার মেডিসিন।”

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.