পিউয়ের মনে বৃষ্টি নেমেছে। খড়খড়ে মরুভূমিতে ঝুমঝুম শব্দের বারিপাত,উথাল-পাতাল করে দিচ্ছে ভেতরটা। প্রশান্তির হাওয়া বারেবার ছুঁচ্ছে কোমল,স্নিগ্ধ মুখমন্ডল। লজ্জ্বায় হাতদুটো জায়গা পাচ্ছে বক্ষে। হৃদস্পন্দন হচ্ছে কয়েকশ গুন বেশি৷ ধূসর ভাইয়ের এই আচরন তার কাঙ্ক্ষিত, তবে অপ্রত্যাশিত। কল্পনাও করেনি মানুষটা এমন করবে! আজ আর কোনও দ্বিধা নেই তার। সব সন্দেহ,সমস্ত অনুমান এখন বিশ্বাসে রুপ নিয়েছে। ধূসর ভাই সত্যিই তাকে ভালোবাসেন। ভালো না বাসলে কেন চুড়ি কিনবেন? সে যে গাড়িতে বসে বলেছিল চুড়ি কেনা হয়নি,কেনই বা মনে রাখবেন সে কথা? কেনই বা পরাবেন নিজ হাতে৷ আর ওই চাউনি? ওই তাকানোর ধরন? সে কেবল এক প্রেমিক পুরুষের।
পিউ লজ্জ্বা লজ্জ্বা নিয়ে ফের উঠোনে গিয়ে দাঁড়াল। বুকটা তখনও কাঁ*পছে। বর্ষাকে হলুদ লাগানো শেষ হয়নি, চলছে। আত্মীয় স্বজনের প্রত্যেকে আঙুলে নিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে ওর শ্যামলা গালদুটো। পিউ আশেপাশে তাকাল। ধূসর ও এসে দাঁড়িয়েছে কেবল। ওকে দেখতেই দুরুদুরু কম্পন গাঢ় হলো তার। পিউ মাথা নামায়। ক্ষনে ক্ষনে আড়চোখে তাকায়,লাজুক লাজুক হাসে। আচমকা ধূসর ডেকে ওঠে,
” এদিকে আয়।”
পিউয়ের বুক ছ্যা*ত করে উঠল তার গম্ভীর স্বরে। ওকেই ডাকল কী? সে বিভ্রান্তি সমেত নিজের দিক আঙুল তাক করে শুধাল ‘ আমি?’
‘ হু’।
পিউ চারপাশ দেখে এগিয়ে যায়। কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ধূসর প্রশ্ন করল,
” হাসছিলি কেন?”
পিউ না বোঝার ভাণ করে বলল ” কই?”
” চুপচাপ গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি। এদিকে তাকাতে যেন না দেখি।”
পিউয়ের মুখ চুপসে এলো। একটু আগে কী সুন্দর করে চুড়ি পরানো,কুঁচির ভাঁজ ঠিক করে দেয়া মানুষটা আচমকা ঘোল পালটে ফেলায় তাজ্জব হলো। বলল না কিছু। ফিরে এসে মন খারা*প করে দাঁড়িয়ে থাকল।
বর্ষার নানী আর তার বয়সী কয়েকজন গীত ধরেছেন। বর্ষা আর লাগাতে চাইছেনা৷ সমস্ত চেহারা ভরে গেছে। কয়েকজন শয়তানি করে পুরো মুখ মেখে দিয়েছে। তার মধ্যে শীতের দিন,জলের ফোঁটাতেও উঠছে কাঁ*পুনি। তার কথা শুনলেও কেউ মানলো না। সে যতবার মুচড়ে উঠছে, ময়মুনা খাতুন ততবার বলছেন,
‘ আরেকটু বোস,হলুদ যত লাগাবি মুখ তত উজ্জল দেখাবে।’
পুষ্প ফোন নিয়ে পিউয়ের কাছে এসে বলল,
” আমাকে কটা ছবি তুলে দিবি?”
” আয়।”
জবা বেগমের পাশেই ও দাঁড়িয়ে ছিল এতক্ষন। চলে এসেছে, খেয়াল করেননি। হঠাৎ পাশে না দেখেই এদিক ওদিক চাইলেন তিনি। একটু দূরে সাদিফ কে দেখা গেল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মৈত্রীর ছবি তুলছে। জবা বেগমের কপালে ভাঁজ পরে। তিনি উদ্বীগ্ন চোখে পুষ্পকে খুঁজলেন,পেয়েও গেলেন। তার ছবি তুলছে পিউ। জবা বেগমের রা*গ হলো। হনহনিয়ে হেঁটে এলেন । কথা বার্তা না বলেই সাদিফের হাত টেনে হাঁটা ধরলেন। ভঁড়কালো সে,হতভম্ব হলো মৈত্রী। সাদিফ ভীষণ কৌতুহলে হাবুডু*বু খেল। উদগ্রীব হয়ে শুধাল,
” কী হয়েছে মা?”
জবা বেগম নিশ্চুপ। একদম পুষ্পদের ওখানটায় এসে থামলেন। দুজন কাজ থামিয়ে তাকাল। তিনি খেঁকিয়ে ছেলেকে বললেন,
‘ তোর গলায় এত বড় একটা ক্যামেরা থাকতে পুষ্পটা ফোনে ছবি ওঠাবে কেন? তুই থাকতে পিউই বা কেন ছবি তুলে দেবে? ওদের ছবি না তুলে তুই অন্য মেয়ের ছবি তুলছিস? ”
কথা শুনে মনে হলো ভয়া*বহ অপ*রাধ করে ফেলেছে। সাদিফ তব্দা খেয়ে চেয়ে থাকে। পুষ্পর মাথার ওপর দিয়ে গেলেও পিউয়ের ভ্রঁরু টানটান হয়। সে যে জানে সব। নিজেও তাল মিলিয়ে বলল,
” তাইতো। দেখেছো সেজো মা,সাদিফ ভাইয়া কী ফাঁকিবাজ? বিয়ে বাড়িতে সুন্দর মেয়ে দেখে তাদের পিছু নেয় ছবি তুলবে বলে। আর আমরা বুঝি বানের জলে ভেসে এলাম?”
সাদিফ ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকায়। কী বিচ্ছু! কী বিচ্ছু!
এই মেয়েই তো তাকে ফাঁ*সিয়ে দিয়ে এলো তখন। সেই যে ছবি তুলতে নিয়েছে, মৈত্রী মেয়েটার না নেই। তুলতেই বলছে, তুলতেই বলছে। একটু ক্লান্তিও আসেনা। সেও মুখের ওপর মানা করতে পারছিল না বিধায়…..
অথচ দেখো,পিউটা ঠিকই রুপ পালটে নিলো। সাদিফ তীর্যক দৃষ্টিতে তাকাতেই পিউ ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
” দেখো সেজো মা দেখো,সত্যি কথা বলছি বলে কেমন করে তাকাচ্ছে দেখো।”
জবা বেগম চোখ রা*ঙিয়ে বললেন,
” সাদিফ, একদম ওর দিকে ওভাবে তাকাবিনা বলে দিলাম।”
সাদিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
” আচ্ছা, তাকালাম না। এখন বলো, কী করতে হবে?”
” কী আবার,পুষ্পর ছবি তুলে দে। ”
” দিচ্ছি। এই সোজা হয়ে দাঁড়া।”
এত সবের মাঝে এতক্ষন বোকার মত চেয়েছিল পুষ্প। সাদিফের কথায় নড়েচড়ে উঠল। আস্তে করে জানাল,
” ভাইয়া,দরকার হতনা। তোমার কাজ থাকলে….”
” দরকার নেই মানে? অবশ্যই দরকার আছে। ও ক্যামেরা ঢাকা থেকে টেনে এনেছে কেন,যদি কাজেই না লাগে! ”
সাদিফ অতিষ্ঠ ভঙিতে দুদিকে মাথা নাড়ল। ক্যামেরা তুলে বাম চোখে ঠেকাল। পুষ্পও উপায় না পেয়ে সজাগ হয়ে দাঁড়ায়।
জবা বেগম বিজয়ী হাসলেন। পিউকে বললেন,
‘ চল পিউ আমরা ওদিকে যাই।’
পিউ হাত আঁকড়ে মাথা দুলিয়ে বলল ‘ চলো।’
” সেজো মা হঠাৎ তোমার ওপর ক্ষে*পলো কেন ভাইয়া? ”
সাদিফ কাঁধ উঁচু করে বলল ‘ কী জানি ?”
বিড়বিড় করল
” ক্যামেরা আনাই ভুল। যার ছবি তুলতে চাই,সে বাদে দুনিয়ার সব এসে সিরিয়াল দিচ্ছে।”
****
ধূসরের একটা অদ্ভূত ক্ষমতা আছে। যেখানে যায়,যোয়ান যোয়ান ছেলেরা ফ্যান হয়ে যায় তার। ব্যাক্তিত্বে নেতা নেতা ভাবটা ফুটে ওঠে বলেই সবাই পিছু পিছু হাঁটে। গতকাল বিকেলে ধূসর গ্রামের বাজারে গেছিল। টঙয়ে বসে আলাপ হয়েছে কয়েকজনের সাথে। নিজের পকেটের টাকা খরচা করে চাও খাইয়েছে তাদের। মুহুর্তে ছেলেগুলো তার ভক্ত হয়ে গেল। দুদিনেই চ্যালাপেলা জুটিয়ে নিয়েছে সে। যেদিক যাচ্ছে তারাও সাথে সাথে হাঁটছে। মাত্র এসে দাঁড়াল,ওমনি তিনজন ঘিরে দাঁড়িয়ে গেল। গিজগিজে মানুষে শীতকালেও ঘামছিল ধূসর। সেই ক্ষনে তুহিন হাতে করে কোক বয়ে আনে। ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
” নিন ভাই,খান। ভালো লাগবে।”
” থ্যাংক্স।”
ধূসর মুচকি হেসে বোতল হাতে নেয়। চুমুক বসায়। ঘুরেফিরে তাকায় পিউয়ের পানে।
বর্ষাকে হলুদ লাগানোর ইচ্ছে জেগেছে তার। কুলোয় রাখা বাটি থেকে হলুদ তুলে স্টেজের দিক পা ফেলতেই মিনা বেগম টেনে ধরলেন। পিউ ভ*য় পেয়ে থেমে গেল।
‘ কোথায় যাচ্ছিস?’
‘ আপুকে হলুদ মাখাব।’
‘ না। দূরে থাক,আর ওকে গোসল করানোর সময় যে পানি গড়িয়ে যাবে সেটাতেও পা ছোঁয়াবি না বলে দিলাম। ‘
পিউ অবাক হয়ে বলল,
‘ ওমা,কেন? ‘
‘ অবিবাহিত মেয়েরা এসব গায়ে লাগানো ঠিক নয়। যা দূরে গিয়ে দাঁড়া। ”
পিউ নাক কুঁচকে বলল,
‘ এহহ,যতসব কুসংস্কার। ‘
মিনা বেগম রে*গে গেলেন,ক্ষে*পে বললেন,
‘ এক চ*ড় মারব। যা বলেছি তাই হবে। যা সর এখান থেকে।”
শান্তা পাশেই ছিল। কথাটায় ফিক করে হেসে উঠল। পিউ ক*ষ্ট পেল। এত মানুষ জনের মধ্যে ধ*মক, তার ওপর শান্তার হাসি, দুটোই সন্মানে লাগল খুব। অভিমান করল মায়ের ওপর । বাড়ির সবাই তাকে ব*কে,মা, আপু,ধূসর ভাই,সাদিফ ভাই। হুহু করে কা*ন্না পেল। চোখ চিকচিক করে উঠল। হাত পা ছু*ড়ে উঠোনের একদম শেষ মাথায় গিয়ে দাঁড়াল। নাক পিটপিট করতেই শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে নিল।
ধূসর বাবুর্চিখানার ওখানে গেছিল। ফিরে এসে স্টেজের কাছে পিউকে দেখল না। চোখ ঘুরিয়ে খুঁজল সে। না পেয়ে এগিয়ে আসে। আশেপাশে তাকায়। কল দেবে ভেবে পকেটে হাত দেয়। হঠাৎ চোখ যায় উঠোনের কোনায়। একা দাঁড়িয়ে মেয়েটা। ধূসর কপাল গুঁছিয়ে এগিয়ে যায়।
‘কী করছিস এখানে?”
পিউ নাক টেনে তাকাল। ধূসরকে দেখে অভিমান গাঢ় হলো তার । চোখ ভরে উঠল,রীতিমতো গড়িয়ে পরল গাল বেঁয়ে। ধূসর উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধাল,
” কাঁ*দছিস কেন?”
পিউ নিমিষেই জ্ব*লে উঠে বলল,
” সব আপনার জন্যে হয়েছে ধূসর ভাই। আপনিই সব কিছুর জন্যে দ্বায়ী।’
ধূসর তাজ্জব হয়ে বলল ‘ আমি কী করলাম?’
‘ আপনার জন্যেইত এখনও বিয়েটা হচ্ছেনা। বর্ষাপুকে হলুদ লাগাতেও পারিনি। কী হতো যদি আমায়…..”
বলতে বলতে থেমে গেল পিউ। সম্বিৎ ফিরল তার। জ্বিভ কে*টে চোখ খিঁচে ফেলল। নিভু নিভু চাউনিতে ধূসরের দিক তাকালো। অথচ সে অভিব্যক্তিহীন। শুধু বলল,
” আয়। ”
আরো একবার আঁকড়ে ধরল তার তুলতুলে হাত। হাঁটা ধরল সম্মুখে। পিউ টুকটুক করে পাতা ফেলল চোখের। ধূসর তাকে সহ এসে দাঁড়াল স্টেজের কাছটায়। সোজাসুজি বর্ষাকেই বলল
‘ বর্ষা,পিউ তোমাকে হলুদ মাখাতে চাইছে।’
বর্ষা গাল ভরে হেসে বলল
” তাই? আয় পিউ,আমিতো সেই কখন থেকে খুঁজছিলাম তোদের।’
পিউ ভ*য়ে ভ*য়ে মায়ের দিক তাকায়। মিনা বেগম বলতে গেলেন,
‘ ধূসর,এসব অবিবাহিতা মেয়েদের লাগাতে নেই।’
কথাটায় তাল মেলালেন গ্রামের আরো কজন রমনী। বর্ষার নানিও ছিলেন সাথে। ধূসর এক কথায় বলে দিলো,
” এগুলো কুসংস্কার বড় মা। তুমিতো সবার থেকে আলাদা বলেই তোমাকে ভালোবাসি আমি। তোমার মুখে এসব মানায়?”
মুখ বন্ধ হয়ে গেল ভদ্রমহিলার। উত্তরই করতে পারলেন না। ধূসর পিউকে ইশারা করল ‘ যা।’
সে খুশি হয়ে গেল। ঝলমলাল তারার ন্যায়। উজ্জ্বল পায়ে স্টেজে উঠল। দুহাত ভরে হলুদ তুলে বর্ষার দুইগালে মাখাল। তার উপচে পরা হাসি, চকচকে চেহারা দেখে আরেকদিক চেয়ে শ্বাস টানল ধূসর। পরপর মৃদূ হেসে ফিরে এলো।
শান্তার হাতে ফোন। ভিডিও ক্যামেরা অন সেখানে। ধূসর যেদিক যাচ্ছে বন্দি করছে তাকে। বিষয় টা অনেকক্ষন যাবত লক্ষ্য করছে ধূসর। ছোট মানুষ বলে কিছু বলেনি। বি*রক্ত লাগলে জায়গা পাল্টাচ্ছে। কিন্তু না,মেয়েতো পেছন ছাড়ছে না। শেষমেষ অসহ্য হয়ে উঠল সে।
আকষ্মিক ধূসর মুখের সামনে এসে দাঁড়াতেই হকচকিয়ে গেল শান্তা। তড়িঘড়ি করে ফোন নামাল। ধূসর বুকের সাথে দু হাত ভাঁজ করে দাঁড়ায়। ভণিতা ছাড়াই ভ্রুঁ নাঁচিয়ে শুধায়,
” বয়স কত তোমার? কোন ক্লাসে পড়ছো?”
শান্তা নুইয়ে গেল। ভী*ত নজরে চারপাশে তাকাল। নীচু কণ্ঠে জানাল,
” এস এস সি দিয়েছি।”
” গুড। আমার বয়স জানো?”
শান্তা চোখ তোলে। ধূসর বলল,
” তোমার থেকে গুনে গুনে বারো বছরের বড় আমি। আই মিন এক যুগ। ছোট মানুষ,তাই ঠান্ডা মাথায় বলছি,সময় আছে, শুধরে যাও।”
বলে দিয়ে চলে গেল সে। শান্তা মন খা*রাপ সমেত চেয়ে দেখল। পরপর বিড়বিড় করল,
” বয়স কোনও ব্যাপারই না।”
****
অনেক হলো হলুদ মাখামাখি। এবার নাঁচানাঁচির পালা। স্টেজ ঘিরে সবাই হৈহৈ করে উঠল। বর্ষার জ্ঞাতিগোষ্ঠীতে যত মেয়ে -ছেলে আছে সবাই নাঁচবে বলে প্রস্তুত। সাউন্ডসিস্টেমের বাংলা গান বদলে ধরা হলো হিন্দি জমকালো বিয়ের গান। যে যেই গানে প্র্যাক্টিস করেছে সেটাতেই পারফর্ম করবে।
একটা জায়গাকে গোল করে ঘিরে আশেপাশে প্লাস্টিকের চেয়ার পাতানো হলো। পিউ আগেভাগে একটা দখল করে বসল। পরে জায়গা না পেলে?
নাঁচতে উঠল মৈত্রী। ছাম্মা ছাম্মা গানে নাঁচবে সে। গান শুরুর সাথে সাথে পিউ উৎফুল্ল হলো। হাত তালি দিয়ে দিয়ে লিরিক্স মিলিয়ে ঠোঁট নেড়ে গাইছে সে।
হঠাৎ চোখ গেল মুখোমুখি উল্টোপাশের চেয়ারটায়। ধূসর তার দিক চেয়ে চেয়ে বসল কেবল। পাশের চেয়ারে সাদিফ বসে। ক্যামেরা উঁচিয়ে ভিডিও করছে। ধূসরকে দেখতেই পিউ ঠিকঠাক করে বসল। লাফ-ঝাঁপ বাদ দিয়ে শান্ত হলো। হাত দুটো এনে রাখল কোলের ওপর। মৈত্রীর নাঁচ থেকে চোখ এনে একবার আলগোছে ধূসরের দিক ফিরল। ওমনি চোখাচোখি হয়। ধূসরের সম্মোহনী চাউনী তাকে এফোড় ওফোড় করে প্রস্থান নেয়। আজ একটু বেশিই তাকিয়ে থাকছেনা মানুষটা? কী এত দেখছেন উনি?
এরপরে নাঁচতে এলো শান্তা। ‘পারাম সুন্দরি’ গানে নাঁচবে সে। আসার আগে সুপ্তির হাতে ফোন ধরিয়ে দিলো। সাথে বলে এলো, ‘প্রথম থেকে ভিডিও করবি।’ মেয়েটা না বসে ওভাবেই ফোন হাতে দাঁড়িয়ে থাকে।
গানটা দু স্টেপ ঠিকঠাক চলল। তারপরপরপই বেজে উঠলো ‘কালা চাশমা ‘গানটা। সাথে ভীর করে শান্তার প্রতিবেশি বন্ধুরা। এটা আগে থেকেই পরিকল্পিত তাদের। প্র্যাকটিসও করেছে কয়েকদিন। নাঁচের এক ফাঁকে শান্তা টেনে নিলো বর্ষাকে। গুরুজনরা মানা করলেন। গ্রামের বিয়েতে বউ নাঁচে না কী? কিন্তু বর্ষা শুনলে তো? সে যে এতক্ষন নাঁচ-গান দেখেও চুপচাপ বসতে পেরেছে এই ঢেড় । এক কথায় লাফিয়ে নাঁচতে চলে আসে। বর্ষা আবার টেনে আনল পুষ্পকে। দুজন একই বয়সের কী না। মিল ও খুব। সবাইকে দেখে ফোন চেয়ারের ওপর ফেলে সুপ্তিও ছুটল। ভিড়ল মৈত্রীরাও। পুষ্প এসে পিউকে ধরে। সে বিনাবাক্যে উঠে যায়। তাল মেলায়। আস্তে আস্তে ছেলেরাও যোগ দিলো। মুহুর্তমধ্যে জায়গাটায় হৈ-হুল্লোড় বেঁধে গেল। নাঁচের সাথে গলা ফাঁ*টিয়ে গাইছে তারা। পিউ নিজের সুবিধায় শাড়ির আঁচল কোমড়ে পেঁচালো।
মৈত্রী এসে সাদিফকে অনুরোধ করল নাঁচার জন্যে। সাদিফ এবারেও মুখের ওপর না করতে পারল না। যোগ হলো সেও।
আনন্দে হল্লাহল্লি অবস্থা প্রায়। আচমকা পিউয়ের শাড়ি ভেদ করে পেটে চি*মটি কা*টল কেউ। চমকে দাঁড়িয়ে গেল মেয়েটা। আ*তঙ্কিত হয়ে সবাইকে দেখল। প্রত্যেকেই ব্যস্ত নাঁচতে। কে করল তাহলে? পিউ জটলা থেকে ত্রস্ত পায়ে বেরিয়ে এলো । এপাশে এসে শাড়ি উঁচিয়ে জায়গাটা দেখল। চি*মটি কা*টেনি, যেন মাংস খা*বলে নেয়ার ফঁন্দি করেছিল। নখের দাগ বসেছে স্পষ্ট। জীবনে প্রথম বার এমন পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে শরীর রি রি করে উঠল তার। রা*গে,দুঃ*খে কা*ন্না উগলে এলো।
আর নাঁচবেনা। বসে থাকবে চুপ করে। পিউ চেয়ারের দিক এগোতে নিলেই আচমকা ভীষণ জোরে হাত চে*পে ধরল কেউ একজন। পিউ ভড়কে তাকায়। শক্ত চিবুক,ক্ষু*ব্ধ চোখে তাকিয়ে ধূসর। চেহারা দেখে পিউ ঘাব*ড়ে যায়, ভ*য় পায়।
একটা কথাও বলল না সে। হাঁটা ধরল বাড়ির দিকে। পিউ হুম*ড়ি খেয়ে পরতে পরতেও বেঁচে যায়। ধূসর হির*হির করে টানতে টানতে নিচ্ছে। একদম
বর্ষার ঘরটায় এসে কদম থামল। হাত ছাড়ার নামে,ছু*ড়ে মারল তাকে। পিউ হো*চট খেতে খেতেও খেলোনা।
” শাড়ি সামলে রাখতে বলেছিলাম না তোকে?”
তপ্ত,ভারী স্বরে পিউ ঢোক গেলে। সাফাই দেয়ার ভঙিতে বলতে যায়…
” ধূসর ভা…. ”
পথিমধ্যে থামিয়ে দিলো ধূসর। দুঃসহ, হাড় হিম স্বরে বলল,
” আমার রা*গ নিয়ন্ত্রনে থাকার মধ্যেই চেঞ্জ করে আসবি পিউ। নাহলে কথা দিতে পারছিনা তোকে কী করব।”