শীতকাল শেষের পথে। অল্প স্বল্প গরম পরছে এখন। সূর্যের তাপ চওড়া হচ্ছে। প্রখরতা বাড়ছে রোদ্দুরের। বসন্ত সবে সবে শুরু হওয়ায় ভূমন্ডল তখন নতুন রুপে সেজেগুজে তৈরি। মৃ*তের ন্যায় বৃক্ষের চূড়ায় দেখা দিয়েছে কচি সবুজ নব নব পল্লব। এ ডাল থেকে ও ডালে লাফিয়ে বেড়ায় চড়ুই। কোকিল ডাকে নিরন্তর। মাথার ওপর তাণ্ডব করা রবির তীব্রতায়ও এক মুহুর্তে মানুষের হৃদয় বশে নিতে সক্ষম এই সুর। আর এই দারূন,চমৎকার সময়টাতেই লেখা হলো ইকবাল-পুষ্পর মিলিত হওয়ার দিনলিপি। এক ঘর মানুষের শতধাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে ধার্য্য হলো তাদের বিয়ের দিন। আগামী সোমবার আংটিবদল, আর ঠিক সপ্তাহের মাথায় যে শুক্রবার আসছে,সেদিনই ওদের আকদ হবে। দিন- তারিখ ঠিক হতেই বসার ঘরে হিড়িক পরল মিষ্টি খাওয়ার। সবাই মিলে মিষ্টি মুখ করলেন। একে অন্যকে খাওয়ালেন। মুমতাহিনা উঠে গিয়ে কুটুমদের সাথে গলাগলি করলেন। সকলের ওষ্ঠপুটে যখন হাসির অন্ত নেই,পিউ তখন গভীর দুঃশ্চিন্তায়। সবাই যখন আমোদ,ফূর্তিতে মেতে, সে চিন্তিত মনে নখ কা*টছে দাঁত দিয়ে।
ধূসরের দিক চোখ পড়লেই বুক কাঁ*পছে। লোকটা রে*গে গেলে অক্ষি কোটর কেমন অস্বাভাবিক দেখায়। নাকের পাটা ফেঁপে ওঠে বারবার। এসব দেখলেই ওর রুহু উড়ে যায়। কিন্তু এখন সে করেছে টা কী? গতকাল রাতের পর বাড়ি থেকেও বের হয়নি। কোনও ছেলের সাথেও কথা বলেনি। কথা তো এমনিতেও বলে না। আজকেও লক্ষী হয়েছিল সারাদিন। তবে এইভাবে কটমট করে দেখছেন কেন উনি?
তার মাথা ফেঁ*টে চৌচির। গলা শুকিয়ে আসছে। ধূসর প্রচন্ড খা*রাপ মেজাজে বসে। এর মধ্যেই আচমকা ইকবাল উরুর ওপর খোঁচানো শুরু করে। ধূসর খেয়াল করেও চুপ থাকল। কিন্তু ইকবালের খোঁচাখুঁচি বাড়ছে। খিট*মিট করে তাকাল সে,
‘ কী সমস্যা?’
‘ এভাবে তাকাস না,ভ*য় লাগে।’
‘ সমস্যাটা কী?’
‘ বললে রা*গ করবি না তো?’
‘ শুনি আগে।’
ইকবাল মিনমিন করে বলল ,
‘ ইয়ে,পুষ্পর সাথে একটু আলাদা কথা বলব,সুযোগ করে দে না ভাই।’
ধূসর কঠিন কণ্ঠে বলল,
‘ আমি ওর বড় ভাই ইকবাল,হ্যাংলামো করিস না।’
ইকবাল মিনতি করল ‘ প্লিজ ভাই প্লিজ। অল্প একটু সময়, প্লিজ।’
ধূসর পরাজিত শ্বাস ফেলল। ফিরতি জবাব দিলোনা।
সবার মধ্যেই সোজাসুজি পুষ্পকে বলল,
‘ পুষ্প,এখানে বড়দের আলোচনা চলুক,তুই বসে না থেকে ইকবাল কে নিয়ে ছাদ থেকে ঘুরে আয় যা।’
মেয়েটা অপ্রতিভ ভঙিতে সবার দিকে তাকায়। ইকবালের দুগাল লেপ্টে সরে গেল দুদিকে। ধূসরকে কষে একটা চুমু খেতে পারতো যদি!
কেউ কিছু বলল না। পুষ্পর অস্বস্তি হচ্ছে। এত এত গুরুজনের মধ্য দিয়ে উঠে যাবে কী?
ধূসর তাগাদা দিলো ‘ কী হলো? যা।’
‘ হু? যাচ্ছি।’
সে আলগোছে উঠে দাঁড়ায়। নুড়ি লাফিয়ে বলল,
‘ আম্মু আমিও যাব ছাদে।’
ইকবালের হাসিটা দপ করে নিভল। মানা করার জন্য জ্বিভ নিশপিশ করল। সে তো প্রেম করতে যাচ্ছে,এমন বাচ্চা বোনের সামনে অসম্ভব যা।
পুষ্প হেসে বলল ‘ এসো।’
ইকবাল অসহায় নেত্রে ধূসরের দিক তাকায়। ধূসর কাঁধ উঁচাল। নীরবে বোঝাল, এখানে সে নিরুপায়।
নুড়ি উঠতেই যাচ্ছিল,মুমতাহিনা আটকে ধরলেন। মেয়েকে কোলে টেনে বসিয়ে বললেন,
‘ না মা এখন ছাদে অনেক রোদ। গেলে কালো হয়ে যাবে তুমি।’
নুড়ির মস্তিষ্কে বিশদভাবে কথাখানা ঢোকে।
কালো হওয়ার ভয়ে সে চা অবধি খায় না।
মাথা কাত করে বলল,
‘ আচ্ছা,যাব না।’
ইকবাল বিজয়ী হাসল। পাঞ্জাবি ঠিকঠাক করে উঠে দাঁড়াল। পুষ্প ভীষণ লজ্জায় নুইয়ে আছে তখন। নুড়িকে আটকে দেয়া মানে তাদের দুজনকে আলাদা সময় কাটা*তে বোঝানো। ইশ! সবাই কী না কী ভাবলেন!
পুষ্প তাড়াহুড়ো পায়ে হাঁটা ধরল। ইকবাল চলল পেছনে।
মেয়েটার পদযূগল ছাদের মেঝে ছুঁতেও পারল না, অধৈর্য হাতে পেছন থেকে জাপটে ধরল সে। পুষ্প ছোটাছুটি শুরু করল তৎক্ষনাৎ।
‘ ছাড়ো ইকবাল,আশেপাশে বাড়িঘর আছে,দেখে ফেলবে কেউ।’
ইকবাল ছাড়ল না। তার কণ্ঠ জড়ানো,বলল,
‘ দেখলে দেখুক,আমার বউ আমি ধরব,লোকের কী?’
‘ জি না,এখনও বউ হইনি। বিয়ে হতে এখনও এক সপ্তাহ বাকী। ‘
‘ ওই একই কথা।’
পুষ্প স্বর মোটা করল, ‘ তুমি ছাড়বে? ‘
ইকবাল চ সূচক শব্দ করে ছেড়ে দিল। পুষ্প সরে এসে মুখোমুখি তাকিয়ে বলল,
‘ ভাইয়াকে ছাদের কথা বলতে তুমি শিখিয়ে দিয়েছ তাইনা?’
‘ না। ওকে কথা শিখিয়ে দিতে হয়? ও নিজেই বলেছে।’
‘ এমনি এমনি বলেছে বিশ্বাস করব? পেছনে কলকাঠি নেড়েছ না?’
ইকবাল কলার ঠিক করে বলল ‘ তা একটু নেড়েছি। এত পার্সোনালিটি তোমার ভাইয়ের,ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইল না করলে লাভ হয় না।’
‘ এরকম করার কী দরকার ছিল ইকবাল? সবাই কী ভাবল?’
ইকবাল বিরক্ত হয়ে বলল,
‘ উফ! সবার কথা বাদ দাও তো মাই লাভ। আমাদের কথা বলি চলো।’
‘ তোমার সাথে এখন আবার কীসের কথা? সব কথা বিয়ের পর।’
ইকবাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘ বিয়ের পর আর কথা বলব কীভাবে মাই লাভ,তোমার হিটলার বাপ সেইত তোমাকে সিন্দুকে ভরে রাখছেন।’
পুষ্প জ্ব*লে উঠল,
‘ একদম আমার বাবাকে হিটলার বলবে না।’
‘ কেন বলব না? বিয়ে দিচ্ছে,অথচ মেয়ে তুলে দেবে না। দুটো বছর মানে কত গুলো দিন বোঝো? আমি থাকব কী করে এতদিন?’
শেষ দিকে অসহায় শোনাল তার কণ্ঠ। অথচ পুষ্প মিটিমিটি হাসল। ইকবাল ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ হাসছো?’
‘ তো কী করব? হাসব না?’
‘ আমার দুঃখে হাসবে কেন? ‘
‘ হাসছি ,তুমি বোকা তাই। আব্বু আমাকে তুলে দেবে না বলেছে,তোমাকে এ বাড়িতে আসতে বারণ করেছেন?’
ইকবাল আনমনে বলল,’ না করেনি।’
খেয়াল করতেই অতুজ্যল চোখে চাইল। কণ্ঠে অবিশ্বাস ঢেলে বলল,
‘ এর মানে আমি যখন খুশি আসতে পারব?’
পুষ্প নাটক করে বলল,
‘ সে আমি কী জানি,তোমার ইচ্ছে।’
ইকবাল এত খুশি হলো যে একটু আগে পুষ্পর সাবধানী বানী ভুলে গেল। ভুলে গেল আশেপাশে লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দালানকোঠা। আচমকা পুষ্পর কোমড় জড়িয়ে শূন্যে উঠিয়ে ফেলল সে। মেয়েটা ভড়কে গেছিল প্রথম দফায়। গলা জড়িয়ে ধরল তার। ইকবাল ততক্ষণে ঘুরপাক খেতে শুরু করল,সাথে চেঁচিয়ে স্লোগান দিলো,
‘ আই লাভ ইউ মাই লাভ,আই লাভ ইউ।’
পুষ্প হেসে উঠল। হাসছে ইকবাল। দুজনের তৃপ্ত হাস্য মিশে গেল বাতাসে। জানিয়ে গেল,
‘ অবশেষে ওরা এক হচ্ছে,সত্যিই হচ্ছে।’
***
অতিথিদের খাবারের জন্য সবিনীত আমন্ত্রন জানানো হয়। গৃহীনিরা ব্যস্ত হলেন টেবিল সাজাতে। ইকবাল তার ভাইবোন আর বাবা মাকে সাদরে নিয়ে যাওয়া হলো খাবার রুমে। পুষ্পকে জোর করে পাশে বসালেন মুমতাহিনা। ঠিক তার মুখোমুখি বসেছে ইকবাল। মুহুর্তে মেয়েটা জড়োসড়ো হয়ে এলো। কেন যেন লজ্জা লাগছে খুব। ছাদে ইকবাল জোর করে চুমু খেয়েছে ঠোঁটে। আর সেটা দেখে ফেলেছে পাশের বিল্ডিংয়ের এক নাদান ছেলে। ওই ঘনিষ্ঠ মুহুর্তেই ছেলেটা ডেকে বলল ‘ এই তোমরা কী করছো?’
পুষ্প কুণ্ঠায় দাঁড়াতে পারেনি। দৌড়ে নীচে চলে এসেছে। ইকবাল হাজির হয়েছে পরে। তার অঙ্গভঙ্গি স্বাভাবিক। হবে না? নিলজ্জ তো!
এখন ওই চোখের দিকেও তাকাতে পারছেনা পুষ্প। এরকম হওয়ার কথা ছিল না। তার নেত্রদ্বয় সর্বদা ব্যাকুল তার সৌষ্ঠম মুখস্রী দেখতে। গতকাল মানুষটার করা পাগলামি গুলো ভেবে ভেবে সারাটা রাত ঘুম ধরা দেয়নি চোখে। এপাশ- ওপাশ করেছে,আর একা একা হেসেছে। মাঝেমধ্যে নিজেরই বিশ্বাস করতে ক*ষ্ট হয়,কেউ এতটাও ভালোবাসে ওকে? ওর বিয়ের খবরেই যার অস্থির, অশান্ত অবস্থা হতে পারে,একদিনেই বাবা মাকে টেনেটুনে প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারে,এই ছেলে আর কত কী পারবে কে জানে! পুষ্প মুচকি হাসল। তক্ষুনি টের পেলো পায়ের পাতায় সুরসুরি দিচ্ছে কেউ। রীতিমতো স্লাইড করছে বুড়ো আঙুল দিয়ে। পুষ্প চট করে চোখ তুলে ইকবালের দিক চাইল। ছেলেটা দুষ্টু হেসে ভ্রু উঁচায়। পুষ্প মুখ বেঁকিয়ে চোখ রাঙায় পা সরাতে। সরাল তো নাই-ই,উলটে ক্যাবলার মত স্থির হয়ে চেয়ে রইল। পুষ্প বাড়ির সবার দিকে তাকায়। এভাবে ওকে চেয়ে থাকতে দেখলে কী অস্বস্তিকর অবস্থা হবে! এদিকে তার পা থেকে মাথার তালু অবধি শিরশির করছে। আঁকাবাকা হয়ে আসছে দেহ। সবার মধ্যে বসে মোচড়ামুচড়ি করা যায়? সে অসহায় নেত্রে তাকাল। যার অর্থ,একটু পা সরাও না ইকবাল! ছেলেটা শুনল না। বরং দু পায়ের মাঝখানে পুষ্পর পা নিয়ে বন্দী করল। মিনা বেগম ওর কাছে এলেন ভাত বেড়ে দিতে। সে স্বাভাবিক হয়ে বসে থাকে। সুন্দর করে শুধায়,
‘ আপনারা খাবেন না?’
‘ খাব তো,পরে। আগে তোমরা খেয়ে নাও।’
‘ একসাথে বোসতাম আন্টি।’
তার নাটক দেখে পুষ্প ভেঙচি কাট*ল। কী ভদ্র সাজছে! টেবিলের নীচে যে অসভ্যের মত পা চলছে সেতো আর কেউ জানে না।
ধূসর প্লেটের দিক চেয়ে ফুঁ*সছে। কিছুক্ষণ পরপর ক্ষি*প্ত নজরে তাকাচ্ছে ইফতির দিকে। যখনই ইফতি পিউয়ের দিকে চায়,ধূসর হাত মুঠো করে ফ্যালে।
বত্রিশটা দাঁত খি*চে বসে থাকে। পারছেনা উঠে গিয়ে ঘু*ষি মেরে চোখ অন্ধ বানিয়ে দিতে। ভাইয়ের হবু শ্বশুর বাড়ি এসে একটা মেয়ে দেখেছে কী, এভাবে তাকাতে হবে? কই,সেতো কোনও মেয়ের দিকে কখনও তাকায়না। পাশ থেকে হেঁটে গেলেও চোখ উঠিয়ে খেয়াল করেনা মেয়েটি কে! আজকাল কার ছেলে গুলো এত ছ্যাচড়া আর অসভ্য কেন? বাড়ির লোকজনই বা কেন এত কেয়ারলেস! ছেলে এসে কোনদিকে,কারদিকে হা করে তাকায়,খেয়াল রাখবেনা তারা? এটা কী বাবা মায়ের দায়িত্বে পরেনা? আশ্চর্য তো!
ধূসরের পায়ের র*ক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছে। ক্ষো*ভে খাড়া হয়ে যাচ্ছে সমস্ত লোমকূপ। ইকবালের ভাই না হলে এতক্ষণে তো…
সে মাথা খারাপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ। ভেতর ভেতর ক্রো*ধে ফোস*ফোস করছে। বুঝতে পারছে না রা*গটা কার ওপর দেখালে যুতসই হবে।
সে তপ্ত চোখে একবার পিউয়ের দিকে তাকাল। মেয়েটার অর্ধশুষ্ক চক্ষুদ্বয় তার দিকেই চেয়ে। ধূসর নিভে এলো এবার। চোখ বুজে ধাতস্থ করল মেজাজ। শান্ত গলায় শুধাল,
‘ খাবিনা?’
পিউ ভ*য়ে ছিল এতক্ষণ। ধূসরের সাবলীল স্বর শুনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। এর মানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক । মৃদূ হেসে বলল,
‘ পরে খাব।’
পুষ্প বলল, ” পরে কেন? এখন বোস না।’
মুমতাহিনাও তাল মেলালেন। পিউ দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে মায়ের দিকে তাকায়। মিনা বেগম চোখ দিয়ে ইশারা করলেন বসতে। মেয়েটা বসতে গেলে ইকবাল বলল,
‘ পিউপিউ তুমি আমার কাছে চলে এসো।’
পিউ হেসে ঘুরে গিয়ে তার পাশের চেয়ারে বসল। ভাতে হাত চালানোর সময় হঠাৎই ইকবাল কানের পাশে এসে বলল,
‘ শালিকা,আমাকে দুলাভাই হিসেবে পেয়ে কেমন বোধ কোরছো?’
পিউ মুচকি হাসল। ভ্রুঁ নাঁচিয়ে বলল ‘ ঝাক্কাস।’
‘ আমার কী কপাল বলোতো পিউ,সুন্দরী শালি আর সুন্দরী বউ। উফ,ভাবতেই শরীর চারশ চার ভোল্টেজে ঝাঁকি মা*রছে।’
পিউ বলল,
‘ ভাইয়া, দুলাভাই হলে কিন্তু ঝামেলাও আছে,যা যা প্যারা দিব সব সহ্য করতে হবে।’
‘ আরে করব করব, তুমি আমার একটা মাত্র শালী,আবার ভাবিও। তোমার প্যারা দেয়ার একশ ভাগ অধিকার আছে। ‘
পিউ ভ্রু কুঁচকে বলল ‘ ভাবি?’
‘ কেন? ধূসরের বউ হলে তুমি আমার ভাবি হবে না?’
কণ্ঠ আরো নেমে এসেছে ইকবালের। পিউয়ের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল। ‘ধূসরের বউ’ কথাটা কানের পাশে বেজে চলল কিছুক্ষণ। চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে ইকবালের পিঠের ওপর দিয়ে একবার দেখে নিলো প্রিয় মুখটিকে। ধূসরের নিরেট গালের এক পাশ মাথা খারাপ করে দিল নিমিষে। উফ! কোনও একদিন এই মানুষটার বউ হবে সে? এই যে চার আঙুলের মাথায় লোকমা তুলে খাচ্ছে, এইভাবে তাকেও খাইয়ে দেবে? এই দিন গুলো কবে আসবে পিউ? কবে এই চওড়া বুক,এই ছবির মতো আঁকা একটা মুখে চুমু খেয়ে ভরে ফেলবি তুই? বুক ভরা সাহস নিয়ে,এই মানুষটার চোখের দিক তাকিয়ে আওড়াবি ‘ আপনি শুধু আমার ধূসর ভাই। প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি আপনাকে। এই ভালোবাসার সঙ্গা লেখার মত বই এখনও ছাপা হয়নি। তাহলে বুঝুন, কত ভ*য়ানক এই প্রেম? প্রশান্ত মহাসাগরও কিন্তু হার মানবে এখানে।
পিউ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাত মাখা শুরু করে। এত দ্রুত খায় যে ওর খাওয়াই শেষ হয় সবার আগে। সে উঠে দাঁড়াতেই, ইফতিও উঠে গেল। উদ্দেশ্যহীন ভাবে প্রশ্ন ছু*ড়ল,
‘ বেসিন টা কোথায়?’
রুবায়দা বললেন ‘ পিউ যাচ্ছে তো,ওর সাথে যাও বাবা।’
ধূসরের খাওয়া ওমনি থেমে গেল। নীচু মাথাটা উটপাখির মত সজাগ করে তাকাল।
পিউ বিরক্ত হয়। চেহারায় প্রকাশ না করলেও মনে মনে বলল, ‘ বেসিন কি সাত সাগর তেরো নদীর ওপারে? আমার সাথে আসার কী আছে?’ মুখে বলল,
‘ আসুন।’
ইফতির ঠোঁট জুড়ে বিজয়ী হাসি ফুটল। সে পা বাড়াল পিউয়ের পেছনে। মুমতাহিনা ছেলের অর্ধেক খেয়ে রাখা খাবারের প্লেটের দিক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। হতাশ হয়ে ভাবলেন ‘ ছেলেটার ভাত মাখার অভ্যেস কবে থেকে হলো? ‘
ইফতি ডান বাম দুহাত মিলিয়ে কচলে কচলে ধুঁচ্ছে। সময় নিচ্ছে বেশ। মাঝেমধ্যে আড়চোখে দেখছে পাশে দাঁড়ানো পিউকে। সব শেষে হ্যান্ডওয়াশের বোতলের দিকে আবার হাত বাড়াতে দেখেই পিউ নাকমুখ কোঁচকাল। এই নিয়ে তিনবার হ্যান্ডওয়াশ লাগাচ্ছে সে। পিউ অধৈর্য হয়ে এঁটো হাত নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়। মেহমান বলে কুঁলুপ আঁটা মুখে। যাই হোক,কিচ্ছুটি বলা যাবে না।
ইফতি এইবার ক্ষান্ত হলো। হাত ধুয়ে,পানি ঝেড়ে, বেসিনের পাশে টাঙানো তোয়ালেতে হাত মুছতে মুছতে শুধাল,
‘ বেশি সময় নিলাম?’
পিউ মেকি হেসে বলল, ‘ না না।’
ইফতি সরলে সে এগিয়ে এসে হাত ধোঁয়। পেছন থেকে তাকিয়ে থাকে ছেলেটা। মেয়েটা ওর সমবয়সী। অথচ বোঝাই যায়না। মনে হয়,নাইন টেনে পড়ছে। কী মিষ্টি একটা মুখ! এ অবধি যতগুলো প্রেম করেছে একটা মেয়েকেও এত ভালো লাগেনি। লাগলে ওরা পার্মানেন্ট গার্লফ্রেন্ড হতে পারত। ইফতি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পিউকে দেখে গেল। পিঠে ছড়ানো লম্বা বেনীটা ভীষণ রকম নজরে লাগল তার। আজকালকার মেয়েরা চুল লম্বাই রাখেনা,আবার বিনুনি! আর ভ্রুয়ের নীচের দুটো টানা টানা চোখ,উফ,ওই দুটোই যেন সবথেকে আকর্ষনীয়। যখন সিড়ি বেয়ে নামছিল,বড় বড় চোখ দেখেই ত সব ভুলে চেয়েছিল সে। না,এই মেয়েটাকে তার লাগবেই। একে হাতছাড়া করলে জীবনটাই একটা লস প্রজেক্ট হবে।
পিউ ঘুরে তাকাতেই দেখল ইফতি হা করে চেয়ে আছে। প্রচন্ড অসস্তি হলো তার। এলোমেলো পল্লব ফেলল মেঝেতে। ইফতি অনতিবিলম্বে নিজেকে ঠিকঠাক করে ফ্যালে। সে নিজেও অপ্রতিভ হয়েছে,তবে সামান্য । পরিস্থিতি সামলাতে গলা খাকাড়ি দিলো একবার। শুধাল,
‘ কোন কলেজে পড়ো তুমি?’
‘ ঢা*** কলেজ।’
‘ ওউ,ভালো কলেজ তো। তোমাদের বাসা থেকেও কাছে।’
পিউ বলল,
‘ জি। আপনি কোথায় পড়েন?’
ইফতি ভ্রু গোঁটায়,
‘ আপনি- আজ্ঞে করছো কেন? আমরা তো ব্যাচমেট। ব্যাচমেট কে কেউ আপনি করে বলে?’
পিউ দুষ্টুমি করে বলল,
‘ আমিতো আমার ব্যাচমেট ছেলেদের তুই করে বলি। আপনাকেও বলব?’
ইফতি নিভে গেল। মুখ গোমড়া করে বলল,
‘ যা ইচ্ছে।’
পরক্ষনে শুধাল,
‘ এক্সাম কেমন হচ্ছে তোমার?’
‘ ভালো।’
‘ সায়েন্স নিয়ে তো?’
‘ হ্যাঁ, আপনি? ‘
‘ আমি অত ব্রাইট স্টুডেন্ট নই। কোনও রকম। সায়েন্সে পোষাবে না বলে সম্মান রাখতে কমার্স নিয়েছি আর কী!’
‘ কমার্স কী খুব সহজ না কী? আমিত আমার বন্ধুদের দেখি,ওদের করা নোটস দেখি,কত বড় বড় একটা অংক! আমারতো দেখলেই মাথা ঘোরে।’
বলার ভঙি দেখে হেসে ফেলল ইফতি।
‘ তা অবশ্য ঠিক। তুমি কি মেডিকেলে এপ্লাই করবে?’
পিউ দুপাশে ঘনঘন মাথা নেড়ে বলল,
‘ এ বাবা না না,মাথা খা*রাপ? ডাক্তার হতে হলে সারাজীবন পড়তে হয়। আমি অত পড়তে পারব না। এমনিতে পাব্লিকে চান্স পেলে হোলো,নাহলে নেই।’
‘ মেয়েরা পড়াশুনা নিয়ে এত চ্যিল হয়? ‘
ইফতির অবাক কণ্ঠ। পিউ লজ্জা পেয়ে বলল ‘ আমি হই।’
‘ এইজন্যেই তুমি ভাইয়ার শালী হচ্ছো। ভাইয়াও চ্যিল,আমিও চ্যিল এবার তোমাকে পেলাম তুমিও চ্যিল। জীবনটাই চ্যিলময়।’
পিউ হেসে ফেলল।
তার সুশ্রী,ললিত মুখশ্রী অদ্ভুতভাবে দাগ কাট*ল ইফতির হৃদয়ে। ওমন মুখোমুখি দাঁড়িয়েই কিছু একটা অনুভব করল সে। সেই সময় জুতোর শব্দ এলো কানে। সাথে ভেসে এলো স্বভাবজাত গম্ভীর কণ্ঠ,
‘ হাত ধোঁয়া হয়নি?’
পিউ চকিতে তাকায়। ধূসরকে দেখেই মিইয়ে আসে। ইফতি বলল ‘ জি।’
‘ তোমাকে আন্টি ডাকছেন।’
ইফতি কথা বাড়ায়না। হনহনে পায়ে প্রস্থান নিলো। পিউ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। সে কী এখানে থাকবে? না চলে যাবে? ভেবেচিন্তে বার করল যা, তাতে গুটিগুটি পায়ে পাশ কা*টাতে গেল ধূসরের। আর ওমনি কনুই চে*পে ধরল সে। পিউ হকচকিয়ে তাকাল। ভীত কণ্ঠে বলল ‘ কী হয়েছে?’
‘ কোথায় যাচ্ছিস?’
‘ ডড্রয়িং রুরমে।’
‘ যাবি না।’
‘ তাহলে? ‘
ধূসরের চক্ষুদ্বয় একদিকে বেঁকে এলো,
‘ এতক্ষণ তো দাঁড়িয়ে ছিলিস,আমি আসা মাত্র যাওয়ার কথা মনে পড়েছে?’
পিউ নীচু স্বরে বলল,
‘ না, তা কখন বললাম? ‘
‘ তাহলে কী বলেছিস?’
‘ কিছু তো বলিনি।’
‘ কেন বলিস নি?’
পিউ দিশেহারা হয়ে বলল,
‘ আসলে কী বলব আমি?’
ধূসর আরেকদিক ফিরে শ্বাস ঝেড়ে তাকাল। ততোধিক ঠান্ডা গলায় বলল,
‘ যতক্ষণ না আমার হাত ধোঁয়া হবে,এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি। খবরদার যদি এক পা নড়েছিস।’
পিউ বিস্মিত, তবে খুশি হয়েছে। ধূসরের কাছাকাছি থাকার জন্য উতলা যে,তার আনন্দ না পেয়ে উপায় কী? তার শ*ঙ্কিত চেহারা আকষ্মিক কেমন জ্ব*লে ওঠে । তার থেকেও আদর নিয়ে উড়ে বেড়াল,অনুভূতির দল। আলোকিত,স্ফুর্ত চোখমুখে ঘাড় কাত করে বলল,
‘ আচ্ছা।’
ধূসর ওর এক হাত ধরে রেখেই বেসিনের কাছে এলো। ট্যাপ ছেড়ে হাত পেতে আদেশ করল, ‘ ধুইয়ে দে।’
পিউ অবাক হলো তার অচেনা,অপরিচিত আচরণ দেখে। নিশ্চিত হতে বলল ‘ আমি?”
‘ এখানে আর কেউ আছে?’
পিউ ভেতর ভেতর ফেটে পরল খুশিতে। আস্তেধীরে এসে ধূসরের ভেজা হাত ধরতেই তার শরীরটা ঝাঁকুনি দিলো কেমন। কান থেকে হাত পা থরথর করে উঠল জ্বরে ভোগা রো*গীর ন্যায়। নিজের পেল্লব দুহাত লাগিয়ে এঁটো হাতখানা পরিষ্কার করল সে। এত আলতো ভাবে ধরেছে,যেন এ কোনও সাতাশ বছরের যুবকের নয়,সদ্য জন্মানো শিশুর হাত। মুখমন্ডলে লালিত সূর্যকিরণ। চোখ তুলে চাইতে পারছে না মেয়েটা। ঠোঁটের লজ্জ্বাভাব আটকানো মুশকিল। বক্ষে চঞ্চল,তুলতুলে হাবভাব লুকিয়ে রাখা দুঃসাধ্য। এই খসখসে হাতটা আজন্ম মুঠোয় নিয়ে বসতে পারত যদি! কিংবা শোবার সময় মাথার নীচে বালিশ হোতো ওর। পিউ এমন ভাবে নিঃশ্বাস নিলো,
যেন কত গুরুদায়িত্ব সেড়েছে কেবল। শেষ হতেই ধূসর নির্দেশ করল,
‘ মুছিয়ে দে।’
সে মাথা চুল্কে তোয়ালের দিক হাত বাড়াতে গেলেই ধম*কে উঠল,
‘ ওটা দিতে বলেছি?’
কেঁ*পে উঠল পিউ। বিভ্রান্ত,আত*ঙ্কিত হয়ে বলল ‘ তাহলে? ‘
ধূসর আরেকদিক তাকিয়ে বলল ‘ ওড়না দিয়ে মোছা।’
পিউ চোখ পিটপিট করল বিস্ময়ে। সংশয় কা*টাতে শুধাল ‘ ওড়না দিয়ে?’
‘হ্যাঁ।’
পিউ কতক্ষণ অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে থাকে। ধূসর ভাইয়ের কী হলো হঠাৎ? না চাইতেও এমন জ্যাকপট দিচ্ছেন কেন ওকে?
তার মাথা উত্তেজনায় ভনভন করে৷
হুলস্থুল বাধিয়ে হাত মোছাল ওড়নায়৷ ইশ! এত সুখ সুখ লাগছে কেন? প্রফুল্লতায় যেন জল আসবে চোখে। সারাজীবন এই দায়িত্বটা যদি দিতেন ধূসর ভাই! আপনাকে নিয়ে লুকিয়ে পরতাম পৃথিবীর সুপ্ত কোনও গহ্বরে। বরফ, শীতল হিমাগারে বাসা বানাতাম দুজন। সেখানকার বরফকুচি গায়ে মেখে বসে বসে বিকেল কাটাতাম। অবিচল চেয়ে রইতাম আপনার আগুন দুই চোখে। তবুও মন ভরতো না হয়ত। আপনার দিক চেয়ে থাকলে আমার অন্তরের শান্তি হয়, শান্ত হয় না।
পিউ কেমন ফ্যাস-ফ্যাসে কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ আর কোথাও মুছিয়ে দেব ধূসর ভাই?’
ধূসর স্থূল কণ্ঠে বলল,
‘ না, যা এখন।’
তার মনটা ঝুপ করে খা*রাপ হলো এতে। এই কথা,এই কণ্ঠস্বর তো আশা করেনি। হাত ধোয়াতে,মোছাতে বলেছেন যখন, মুখটাও মোছাতে বলতে পারতেন। এই সুযোগে আরেকটু কাছে থাকা যেতনা? দুচোখ ভরে বিমুগ্ধ নজরে দেখতে পারত না ওনাকে? ধ্যাত!
সে বিরক্ত ভঙিতে এক পা বাড়াতেই ধূসর পেছন থেকে হাত টেনে ধরে।
পিউ কেঁ*পে দাঁড়িয়ে যায়। ভেতরে তোলপাড় শুরু হলো ওমনি। অবচেতন মন বলছে ধূসর ভাই টেনে বুকে মেশাবেন এখন। কপালের ঠিক মাঝখানে চুমু খেয়ে বললেন, কী বলবেন? ভালোবাসি বলবেন,না কি অন্য কিছু শোনাবেন? না কি সেদিনের মত চুঁমু খেতে চাইবেন ঠোঁটে? ধূসরের পাতলা অধরের সেই এগিয়ে আসার পুরোনো চিত্রপট চোখে ভাসতেই পিউ কুণ্ঠায় মিশে গেল। নুইয়ে এলো শতহাত। তার বক্ষস্পন্দন জোড়াল। ধুকপুক করছে খুব। যেন বক্ষপটের সাথে ফুসফুস,নাড়িভুড়ি সব কাঁ*পছে। পেটের মধ্যে চলছে দুঃসহ ভুমিকম্প।
সেই মুহুর্তে ধূসর হাতে টান বসায়। তবে কল্পনা মতো কিচ্ছুটি করল না। বুকের না মিশিয়ে হাতখানা মু*চড়ে ধরল মেয়েটার পিঠের সঙ্গে। চমকে গেল পিউ। প্রচন্ড হতভম্ব হয়ে,ভ্যাবাচেকা খেল।
তার অভিভূত অভিপ্রায়, কর্পূরের ন্যায় উবে যায়। লজ্জায় লাল -নীল হওয়া বেরিয়ে গেল দেয়াল ফুঁড়ে। আর্ত*নাদ করে বলল,
‘ আ,ব্য*থা পাচ্ছি।’
ধূসর দাঁত পি*ষে বলল, ‘ ইফতির সাথে এত হাসাহাসি কীসের?’
‘ কই হাসলাম? হাসিনি আমি।’
‘ আমি দেখিনি?’
‘ লাগছে ধূসর ভাই।’
‘ লাগুক। কারো মনে লাগার থেকে তোর হাতা লাগা ভালো।’
পিউ কাঁদো*কাঁদো কণ্ঠে বলল,
‘ এমন করছেন কেন? ‘
ধূসর হাতে চাপ দিতেই সে মুচড়ে বলল,
‘ আমি ইচ্ছে করে হাসিনি। সত্যি বলছি। আপনি বললে অনিচ্ছায়ও হাসব না। আজ থেকে আমার হাসা বন্ধ ধূসর ভাই। আল্লাহর দোহাই, হাতটা ছাড়ুন। ‘
‘ ছাড়লে কোথায় যাবি?’
‘ যেখানে আপনি বলবেন।’
‘ঘরে যাবি। নীচে যেন না দেখি।’
‘ আচ্ছা আচ্ছা,ছাড়ুন।’
ধূসর ছেড়ে দিতেই পিউ ত্রস্ত ঘুরে গেল। জ্বলন্ত চোখে চেয়ে বলল,
‘ ঘরে কেন যাব আমি? সবাই যেখানে থাকবে আমিও সেখানে থাকব। আপনি সব সময় আমাকে ঘরে পাঠিয়ে দেন কেন? কী সমস্যা আপনার?’
ধূসর কঠিন চোখে চাইল। পিউ বিরতি নিতেই আবার খপ করে হাত মুচ*ড়ে ধরল পিঠে। ভড়কে গেল সে। একইরকম ককি*য়ে উঠল ব্যথায়।
‘ বেশি সাহস বেড়েছে আজকাল? এক চ*ড় মা*রব,দাঁত পরে মুখ খালি হয়ে যাবে।’
পিউয়ের তেজ শেষ। ভুল জায়গায় দা*পট দেখিয়েছে বুঝতেই, ফাঁটা বেলুনের মত চুপসে গেল চেহারা।
অনুরোধ করে বলল,
‘ আর করব না ধূসর ভাই। আর করব না,এবারের মতো ছেড়ে দিন।’
ধূসর পুনরায় শুধাল,
‘ ছাড়লে কোথায় যাবি?’
‘ ঘরে চলে যাব।’
‘ মনে থাকবে?’
পিউ ধৈর্যহীন,
‘ থাকবে, থাকবে।’
‘ ইফতির সাথে কথা বলবি?’
‘ ইফতির চৌদ্দ গুষ্ঠির সাথেও বলব না। প্লিজ ছাড়ুন। হাতটা খুলে গেলে পরীক্ষা দেব কী করে?’
ধূসর ছেড়ে দিল। সাথে হুকুম করল,
‘ ইফতির আশেপাশেও যেন না দেখি।’
পিউ হাত ডলতে ডলতে ঠোঁট ওল্টায়। যন্ত্রনায় চোখ ছলছল করছে তার।
এই পা*ষাণ লোকটাকেই কী না স্বপ্নে কাম*ড়ে খেয়ে ফেলতে মন চায়! বেহায়া, কু ইচ্ছেটাকে শিল-নোরা দিয়ে পি*ষে ফেলার ইচ্ছে হল । নিজের প্রতি চরম বিষাদ গাঢ় থেকে প্রগাঢ়তা পেলো। ধূসরের প্রতি রা*গে দাউ*দাউ করে আগু*ন জ্ব*লল মাথায়। মনে মনে নিজেকে গা*লি দিলো পিউ। বিড়বিড় করল,
‘ ছিহ! ছিহ!’
ধূসর চোখ রাঙিয়ে বলল,
‘ এভাবে কী দেখছিস? খেয়ে ফেলবি আমাকে? চোখ নামিয়ে সোজা ঘরে যা।’
পিউ নাক টানল। কোটর সবে সবে ভরে উঠেছে। অভিমান হলো তার। বুকের ভেতর বন্দী থাকা করূন হৃদপিন্ডটা দেয়ালে মাথা ঠু*কে ম*রে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালাল। অনুরাগের পাহাড় এত উঁচু হলো অল্পতে,সব ছেড়ে*ছুড়ে বেদুইন হতে মন চাইল। ভেজা কণ্ঠে অভিযোগ জানাল,
‘ আপনি খুব নি*ষ্ঠুর ধূসর ভাই।’
‘ তুই যাবি?’
তে*ড়ে আসতে দেখেই পিউ দুরন্ত পায়ে পালাল। মান ইজ্জতের দফারফা হচ্ছে,হয়ে আসছে। কেন যে পাষ*ন্ড টাকে ভালোবাসতে গেল! নাহলে এক্ষুনি আব্বুর কাছে জব্বর একটা নালিশ ঠুকতে পারতোনা?
অবশ্য নালিশ করেও বা! একটা স্বস্তা বালিশ ও মিলবে না। কাল বুক ফুলিয়ে মুখে মুখে তর্ক করা ছেলে কী আর এইসবের ধার ধারে?
দরজায় ঝোলানো ঝিনুকের ঝুলনি গুলো দুলে উঠল তার ছোটার তোপে। ধূসর ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইল সেদিকে। পরপর ঠোঁটর কোনায় দেখা গেল চাপা,একপেশে হাসি। অক্ষিপটে চকচকে কৌতুক। হাসল সে। যে হাসিতে ঠোঁট গহ্বর থেকেও মুক্ত হলো না দাঁত।
‘ নিজের সবথেকে দামী জিনিসটা একান্ত নিজের করে রাখতে হলে,একটু নি*ষ্ঠুর হওয়াই যায় পিউ। ওসব তুই বুঝবি না।’