পড়ন্ত বিকেল বেলা, সূর্য ধীরে ধীরে অস্ত যাচ্ছে। আকাশটা কেমন লাল আর কমলার মিশ্রন দেখাচ্ছে । পাখিরা উড়ে যাচ্ছে নিজস্ব ঠিকানায় । হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছে, সুদেষ্ণা ছাদের রেলিং ধরে এক ভাবে আকাশের দিকে চেয়ে আছে । তার নেই কোনো ব্যস্ততা, নেই কোনো ক্লান্তি,,,,,,,, তার একা থাকতে ভালো লাগছে , তার ভালো লাগছে সূর্য, পাখি আর আকাশ দেখতে । সুদেষ্ণার এখন পড়াশোনারও চিন্তা নেই, এই তো আগের দিন পরীক্ষা শেষ হলো । তাও সুদেষ্ণা খুশি হতে পারছে না । আগে যখন সুদেষ্ণা ছোটো ছিলো তখন পরীক্ষার শেষদিনে কী মাতামাতিটাই না করতো , পরীক্ষা দিয়ে এসে বিকেলে দিদি ভাইয়ের সঙ্গে ফুচকা খেতে বেরোতো তারপর সারা রাত জেগে মুভি দেখতো ,,,, আবার পরের দিন মামার বাড়ি যেতো একসপ্তাহের জন্য। আগের দিন গুলোর কথা ভেবে সুদেষ্ণার মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো। আগের দিন গুলো কতো সুন্দর ছিলো,,,,,,,, তখন তো এত চিন্তা ভাবনা ছিলো না । যতো দিন যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে চিন্তা ভাবনা গুলো তর তর করে বাড়ছে।
সুদেষ্ণার আর হিমাদ্রর খোঁজ নেওয়া হয়নি। হিমাদ্রর বিয়ে ঠিক হয়েছে জেনে তো আরোই খোঁজ নেওয়া উচিৎ না। হিমাদ্র নিশ্চয়ই রাজি আছে তবেই তো বিয়ে ঠিক হয়েছে নয়তো হতো না । সুদেষ্ণা ঠিক করেছে আর যাবে না হিমাদ্রর সামনে ,,,,,,,, আর নিজেকে প্রকাশ করবে না ওই পাষান পুরুষের কাছে। থাক না যে যেটাতে খুশি আছে । দরকার নেই যে ভালোবাসলেই পেতে হবে , হিমাদ্র না হয় থাকলো তার মনের পাতায় স্মৃতি হয়ে । সুদেষ্ণার এখন সব কিছু বিরক্ত লাগে , বড্ড ক্লান্ত হয় গেছে এই সব দিয়ে । তার একটু মানসিক শান্তির প্রয়োজন। সুদেষ্ণা ভাগ্যে বিশ্বাসী,,,,,, হিমাদ্র যদি তার ভাগ্যে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই তার হবে । সুদেষ্ণা বুঝে পায় না ওতো গুলো মানুষের ভিড়ে তার চোখ কেনো হিমাদ্রর ওপর পড়লো,,,,,,,,, নিশ্চয়ই কোনো না কোনো কারন হবে । আর নয়তো সুদেষ্ণাই একটু বেশি ভেবে নিয়েছে,,,,,,,,,,,,।
————————————————————————–
চৌধুরী ভিলার পরিবেশ একদম থমথমে , গোল টেবিল ঘিরে বৈঠক বসেছে তার কেন্দ্র বিন্দু হিমাদ্র । কিন্তু যাকে নিয়ে এত আয়োজন সে ফোন গুঁতাতে ব্যস্ত ।পুরো ঘরে এখন নিরবতা বিরাজ করছে, হেমন্ত রায় চৌধুরী একভাবে চেয়ে আছেন ছেলের পানে আর রেখা চেয়ে আছে তার গুনধর স্বামীর পানে । নিরবতা ভেঙ্গে হেমন্ত রায় চৌধুরী বললেন,,,,,
এই সব কী হচ্ছে হিমাদ্র ?? একসপ্তাহ দিয়ে তোমাকে বলা হচ্ছে দিশার সঙ্গে দেখা করে আসতে তুমি যাচ্ছো না কেনো??
হিমাদ্রর মুখ গম্ভীর,,,,, সে একবার তাকালো নিজের বাবার দিকে তারপর দৃষ্টি ঠেকলো ফোনের মধ্যে । ফোনের মধ্যে চেয়ে থেকে উওর দিলো,,,,,,,,,
সময় হয়নি,,,,,।
কী এমন রাজ কাজ করছিলে যে তোমার সময় হয়নি??? তোমার কাছে কী আমার মান সম্মানের কোনো মূল্যে নেই হিমাদ্র ??
তোমার সম্মান যাওয়ার মতো তো আমি কোনো কাজ করিনি ,,,,,,,,, হিমাদ্র ভ্রু কুঁচকে বললো । বাপ-ছেলের কথার মাঝে রেখা টুঁ শব্দ পর্যন্ত করেননি। তিনি নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। কথার তালে তালে একবার হিমাদ্র তো একবার হেমন্ত রায় চৌধুরীর দিকে তাকাচ্ছেন।
তুমি তো জানো দীনেশ আমার কতো পুরোনো বন্ধু , ওর ইচ্ছা তোমার আর দিশার বিয়ে দেবে । আমি তো তোমার সঙ্গে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,,,,,,, তুমি তখন বলেছিলে আমার যা ইচ্ছা তুমি তাই শুনবে । তাহলে তোমার হঠাৎ কী হলো ?? তোমার কথার কী কোনো দাম নেই?? তুমি বলেছিলে বলেইতো আমরা কথা এগিয়েছি ,,,,,,।
আমি বিয়ের জন্য এখন প্রস্তুত নয় ।
বয়স তো দিন দিন বাড়ছে, আর কবে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হবে তুমি?? আমি আর তোমার কথা শুনছি না,,,,, তুমি আজকে দিশার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছো এইটা ফাইনাল।
আজকে আমার হবে না,,,,,,, ।
তুমি বিয়েটা আদেও করবে তো ??? শুধু শুধু তো আর দীনেশকে এই ভাবে ঝুলিয়ে রেখে লাভ নেই,,,,,,। তোমার কী দিশাকে পছন্দ নয় ??? নাকি তোমার অন্য কোনো পছন্দ আছে???
ফোন থেকে মুখ তুলে তাকালো হিমাদ্র, ছোটো করে উওর দিলো,,,,,, আমার সময় প্রয়োজন । এই বলে ব্যস্ত পায়ে ঘর ত্যাগ করলো ।
চলবে,,,,,,,,,