আজ সানভি আর লুবানার বিয়ে। আশমিন আর নূর লুবানা কে প্রস্তাব দিতেই লুবানা ইতস্তত করতে থাকে। সরাসরি না বলতে পারছিল না সে। কারণ লাবিব এখনো ছোট। তার ভাইকে রেখে সে এখনই বিয়ে করতে চায় না। তবে আশমিন আর নূর তাকে আস্বস্ত করেছে। বিয়ের পরেও সে এখানেই থাকবে। তাই চিন্তার কোন কারণ নেই। ইতিউতি করে লুবানাও হ্যা করে দিয়েছে। সানভি নিঃসন্দেহে একজন ভালো ছেলে। শুধু তার সাথেই একটু আদায় কাচকলা সম্পর্ক। নূর আর আশমিন কে দেখে সে মনের জোর পেয়েছে। দা-কুমড়া সম্পর্কের পরেও তাদের মাঝে কতো ভালোবাসা। তাহলে তাদের মাঝেও ভালোবাসা হয়েই যাবে।
এর মধ্যে আশিয়ান এক ভয়ংকর কান্ড ঘটিয়ে বসে আছে। রাস্তা থেকে এক মেয়েকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। তার গাড়িতেই এক্সি*ডেন্ট করেছিলো মেয়েটি। বেশি ব্যাথা না পেলেও হাত সামান্য কে*টে গিয়েছিল। তাতেই মেয়েটা রেগে রাস্তার পাশের এক বাশ দিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আশিয়ান কে হসপিটালে নিয়ে মাথায় ব্যান্ডেজও করিয়ে দিয়েছে। আর তাতেই নাকি আশিয়ান তার প্রেমে পরে গিয়েছে। সেই মুহুর্তে মেয়েকে নিয়ে হাজির হয়েছে আশমিনের অফিসে। গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছেড়ে আশমিন বসে বসে আশিয়ানের অলৌকিক প্রেমের গল্প শুনেছে। অমি কে ভোতা মুখে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আশমিন গম্ভীর গলায় বিয়ের আয়োজন করতে বললো। তার ভাষ্যমতে, যে তোমার মাথা ফাটিয়েছে।তুমি ও ভালোবেসে তার হৃদয় ফাটিয়ে দাও।
একঘন্টার মধ্যে মেয়ের বাবা কে হাজির করে তাদের বিয়ে দিয়ে বাসায় বউ নিয়ে হাজির হয় আশমিন। সব কিছু খুলে বলে নূর কে। নূরের ইচ্ছে করলো আশমিনের মাথা টাই ফা*টিয়ে দিতে। দেখা গেলো তাতেও তার প্রেম পেয়ে যাবে। সেই ভয়ে দাতে দাত চেপে রইলো সে। যতসব পাগলের কারখানা তার বাড়িতে!
আশিয়ানের বউ সাইফা বিয়ের ধাক্কায় আহাম্মক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। নূর তাকে আশিয়ানের রুমে বসিয়ে মুচকি হেসে বললো,
— আমার ভাই ছোট বেলা থেকেই একা বড় হয়েছে।তার একজন নিজের মানুষের খুব অভাব। আপন মানুষের ভালোবাসা কি তা আমার ভাইয়া জানে না। আশা করি তুমি তা পূরোন করে দিবে। তুমি ভালোবেসে তার হাত ধরলে সে ভালোবেসে তোমাকে বুকে জরিয়ে নিবে। একটু ভালোবেসেই দেখো।ঠকবে না।
আশিয়ান বাসর ঘরে ঢুকেই সাইফা কে প্রথম প্রশ্ন করবছিল সে কাউকে ভালোবাসে কিনা?
সাইফার তখন আশিয়ানের ফাটা মাথা আবার ফা*টিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল। এখন জিজ্ঞেস করার ফি ফায়দা! ভাগ্য ভালো সে কোন সম্পর্কে ছিল না। থাকলে তো এখন ভয়ংকর ছ্যাকা খেয়ে বসে থাকতো। কিন্তু আশিয়ান কে বলল,
— আছে।তাকে আমি আর আত্মা,ফুসফুস, লিভার সব দিয়ে দিয়েছি। আমার থেকে দূরে থাকুন।
আশিয়ান ভাবলেশহীন ভাবেই বলল,
— হাত তো দাও নি। এবার আর আঙুল টিপে দাও।রেজিষ্ট্রি পেপারে সাইন করতে গিয়ে আমার আঙুল ব্যথা হয়ে গেছে।
সাইফা দাতে দাত চেপে বলল,
— কবুল বলতে গিয়ে গলা ব্যথা হয় নি? আসুন গলাটাও একটু টিপে দেই।
কয়েকদিন ইদুর বিড়াল সম্পর্ক থাকলেও এখন তাদের সম্পর্ক মাখোমাখো হয়ে গেছে। তাদের প্রেম দেখে আশমিন হতাশ চোখে নূর কে দেখে। মেয়েরা ও ইদানীং তার সাথে দুশমনি শুরু করেছে। বউয়ের কাছেই ঘেষতে দেয় না।
নূরের মায়া বেগমের জন্য খারাপ লাগে। তার মেয়েকে বাচাতে গিয়েই নিজের জীবন দিতে হয়েছে তাকে। সব সময় দোয়া করে আল্লাহ যেন তার করব জীবন সুখের করে দেন। গান ছেড়ে দিয়েছে নূর। মেয়ে, বর আর অফিস সামলেই তার অবস্থা নাজেহাল। মেয়েগুলো হাটা শিখেছে। দৌড়ে দৌড়ে এদিক সেদিক চলে যায়। আশমিন সিকিউরিটি তিন গুন বাড়িয়েছে। মেয়েদের দেখাশোনা করার জন্য দুইজন গভর্নেস রেখেছে। নূর সুস্থ হওয়ার পর থেকেই অফিস করা শুরু করেছে। মেয়েদের কে সাথে করেই নিয়ে যায় সে। তখন তারা সুখ পাখি কে সামলায়।
ঘরোয়া আয়োজনে সানভি আর লুবানার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আশমিন বড় আয়োজন করতে চাইলেও সানভি আর লুবানা তাকে বাধা দিয়েছে। তারা এতো জাকজমক ভাবে বিয়ে করতে চায় নি। তাদের মতামত কে সমর্থন করেছে আশমিন। বিয়ের সমস্ত আয়োজন অমি আর আশিয়ান নিজের হাতে করেছে। লুবানা কে তারা নিজের বোনের মতো দেখে। তাই বোনের বিয়েতে কোন কিছুর কমতি রাখেনি তারা। আশমিন সানভির বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করেছে। ছেলেপক্ষ হিসেবে মেয়ে পক্ষের নূর কে তার ভিষণ পছন্দ হয়েছে। দুই মেয়ের মা হলেও তার আপত্তি নেই৷ বিয়ে পড়ানো শেষ হতেই সে নূরের গা ঘেঁষে বসে পরলো। নূরের কানে ফিসফিস করে বলল,
— দুই তলার তিন নাম্বার রুমটা খালি আছে। বিছানা থেকে খেলনা গুলো সরিয়ে দিলেই আমরা একটা ভালো সময় কাটাতে পারবো। হবে নাকি বেয়াইন?
নূর বাকা হেসে নিজেও আশমিনের মতো ফিসফিস করে বলল,
— জ্বি অবশ্যই। বর আমার আশেপাশে নেই। যখন তখন চলে আসতে পারে। যা করার তারাতাড়ি করতে হবে। আমার বেডরুমে যাবেন নাকি অন্য কোথাও?
— আমার বউকে ও তো দেখছি না। না জানি কে পটিয়ে ফেলছে! খারাপ লোকের অভাব নেই। ভোলাভালা বউ আমার। আগে তাকে খুজে নেই। আসুন আমার সাথে। চিপায় চাপায় খুজতে হবে। (দাতে দাত চেপে)
আশমিন নূর কে নিয়ে উধাও হয়ে গেলো। বউ এতো সহজে পটে যাচ্ছে! বিষয়টি নিয়ে গোপন বৈঠক করা দরকার।
— আরে কি করছেন? ছারুন আমাকে। নিচে কতো কাজ আছে।
— আমি ছাড়া এখন আর কোন কাজ নেই। আমার এখন বাসর বাসর ফিল হচ্ছে। একটা জম্পেশ বাসর সারতে হবে শর্টকাটে। যে কোন সময় গেড়িলা হাম*লা হতে পারে। মেয়ে গুলো আসেপাশেই আছে। তারা আসার আগে অনেক কাজ সারতে হবে। আমি কতটা প্রেশারে আছি বুঝতে পারছো? কথা বলে সময় নষ্ট করো না বউ। আসো একটা চুমু খাই।
নূর ক্লান্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। আশমিন দরজা বন্ধ করে নূর কে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
— দুই মেয়ের বাবা হয়ে গেছেন। এবার ভালো হয়ে যান। মেয়েদের বাবাদের এমন নির্লজ্জ হতে নেই মন্ত্রী সাহেব।
নূরের কথা শুনে আশমিন মুচকি হাসলো। নূরের কপালে চুমু খেয়ে নেশালো গলায় বলল,
— কিন্তু বরদের নির্লজ্জ হওয়া দোষের কিছু না বউ। আমি নির্লজ্জ না হলে তোমার আর আম্মু ডাক শোনা হতো না। সেই খুশিতে তোমার আমাকে সকাল বিকেল নিয়ম করে টেবলেটের মতো চুমু খাওয়া উচিত।
নূর ফিক করে হেসে দিলো। আশমিনের বাহুতে হালকা থাপ্পড় দিয়ে বলল,
— আপনার মেয়েরা এখনি চলে আসবে। সবার খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে তো। যেতে দিন।
আশমিন কবে কার কথা শুনেছে। সে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো। নূর হাজার বার নিষেধ করেও কাজ হলো না। তার সমস্ত সাজগোজ নষ্ট করে দম নিলো। ভালোবাসা গভীরতায় পৌঁছাতেই নূর আশমিনের কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
— পাগলামি তে লাগাম টানুন মন্ত্রী সাহেব। আবার বাবা হচ্ছেন আপনি।
থেমে গেলো আশমিন। স্থির নয়নে তাকিয়ে রইলো নূরের দিকে। নূরের কপালে চুমু খেয়ে মুচকি হেসে বলল,
— আমার পাগলামি সারাজীবনে ও কমবে না বউ। দ্বিতীয় বার বাবা হওয়ার খুশিতে বউকে ডাবল ভালোবাসবো। কাছে আসো।
নূর ক্লান্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। এই লোক এ জীবনে ভালো হবে না।
লুবানা কে সানভির রুমে দিয়ে এসেছে নূর। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙ্গে আসছে। মেয়ে দুটো আজ খুব বিরক্ত করছে। আশমিন মেহমানদের বিদায় দিতে গিয়েছে। নূর সুখ পাখি কে সাইফা আর আশিয়ানের কাছে দিয়ে বলল,
— ওদের কিছুক্ষণ রাখো ভাইয়া। আমার ক্লান্ত লাগছে। ওদের বাবা এলে তার কাছে দিয়ে দিয়ো।
আশিয়ান চিন্তিত মুখে এসে নূরের কপালে হাত রাখলো। গা গরম হয়ে গেছে। নূরের কোল থেকে সুখ কে নিয়ে চিন্তিত গলায় বলল,
— জ্বর আসবে মনে হয়। ডাক্তার ডাকবো?বেশি খারাপ লাগছে তোর?
নূর মাথা নাড়িয়ে না জানালো। সাইফা পাখি কে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
— কিছুক্ষণ রেস্ট নাও আপু। আসো আমি তোমাকে রুমে দিয়ে আসছি।
নূর সায় জানালো। সাইফা নূর কে রুমে শুয়িয়ে দিয়ে লাইট বন্ধ করে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরেই হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো আশমিন। নূরের কপালে হাত দিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। জ্বর আসেনি। নূর কে ক্লান্ত লাগছে। ইন্টারকমে কল করে ডিনার উপরে পাঠিয়ে দিতে বলল। নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।