আকাশের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে সে পাগলের মত মেঘলাকে খুঁজতেছে কিন্তু মেঘলার কোন খোঁজ নেই
—
আকাশ আর নাবিল অনেক খুঁজেও যখন মেঘলাকে পেল না হতাশ হয়ে ফিড়ে আসছিল তখন নাবিল দেখল একটা মেয়ে রাস্তায় বসে বসে বাদাম খাচ্ছে।
নাবিলঃ আকাশ দেখ ওটা মেঘলা না?
আকাশ একবার তাকিয়েই বলল থ্যাংকস গড ওকে পাওয়া গেছে কিন্তু আমাদের সবাইকে টেনশানে ফেলে দিয়ে বাসায় না গিয়ে ও এখানে বসে বসে মনের আনন্দে বাদাম খাচ্ছে? কি অদ্ভুত।
আকাশ মেঘলার কাছে গিয়ে বলল এখানে ঠিক কি হচ্ছে জানতে পারি?
মেঘলা আকাশকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলল আপনি এখানে?
আকাশঃ আমি কিছু জিজ্ঞাসা করছি।
মেঘলাঃ ওহ আচ্ছা দাড়ান বলতেছি বলে মেঘলা একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াল তারপর বলতে শুরু করল এখানে একটা লক্ষি মেয়ে বসে বসে বাদাম খাচ্ছে আর একটা বদমাইশ ছেলে তাকে মারার প্লেন করছে তাই মেয়েটা আপাতত পালানোর চেস্টা করছে। এখানে এটাই হচ্ছে বলেই মেঘলা দৌড়।
আকাশঃ মেঘলা দাঁড়া বলছি। কি করছিস এসব তাড়াতাড়ি ফিড়ে আয় না হলে ধরে পা ভেংগে দিব বলে দিলাম।
মেঘলাঃ ধরতে পাড়লে তো…. বলতে বলতে মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে দৌড়াচ্ছে তখনি ঠাস…..কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে ধরাম কতে পরে গেল মেঘলা।
মেঘলা সে দিকে না তাকিয়েই বলতে শুরু করল আহ… কোন গর্দব রে। চোখ কি বাড়িতে রেখে এসেছিস নাকি ফেলে দিলি যে।
।
সাথে সাথেই অপর পাশ থেকে উত্তর আসল একটু আগে খচ্চর ছিলাম এখন রুপান্তর হয়ে গর্দব হয়ে গেলাম আর কত কিছু শুনতে হবে খোদা জানে।
মেঘলাঃ ওহ আপনি…??
নাবিলঃ জ্বি আমি….
আকাশ মেঘলার কাছে এসে বলল একটু আগেই না পা ভেংগে গেছিল এখন এত দৌড়াদৌড়ি কি করে হচ্ছে শুনি? বলতে বলতে মেঘলাকে টেনে তুলে বলল,কয়টা বাজে? এখন রাস্তায় বসে বাদাম খাওয়ার সময়?
মেঘলাঃ কি করব ক্ষুদা লাগছে তো। সেই কখন থেকে হাঁটছি কত রাস্তা খুঁজেছি কিন্তু বাসার রাস্তা কিছুতেই খোঁজে পাই নি তাই এখানে বসে বাদাম খাচ্ছি ভেবেছিলাম আংকেল নিতে আসবে।
নাবিলঃ আমি তো কিছুই বোঝতে পাড়ছি না আমাকে একটা কথা বল তোরা যে পরিচিত সেটা আমাকে তখন বল্লি না কেন?
মেঘলাঃ এই উগান্ডার জন্য বলতে পাড়ি নি। বলতে পাড়ি নি জন্যই তো আমার এই হাল। না হলে কখন বাসায় চলে যেতাম। কত সুন্দর আপনি বাসায় পৌছে দিতেন। উনি বলেছিল কলেজে যেন কেউ না জানে আমরা পরিচিত তাই আপনাকে ঠিকানা বলতে পারিনি আর এখানেই নেমে গেছি।
আচ্ছা আপনি আমাকে একটা বলুন আমি দেখতে কেমন?
হটাৎ এমন প্রশ্নে নাবিল ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল মানে?
মেঘলাঃ দেখুন আমার গায়ের রং,চোখ,চুল,ঠোঁট বলেই আবার সাথে সাথে ২ হাত দিয়ে ঠোঁট ঢেকে বলল,উফস ঠোঁট দেখানো যাবে না এটা খারাপ জিনিস।আচ্ছা ঠোঁট ছাড়া বাকি সব দেখে বলুন তো আমাকে কেমন দেখায়।
নাবিল অবাক হয়ে উত্তর দিন ভালই দেখায়….কিন্তু হটাৎ এই প্রশ্ন কেন?
মেঘলা গিয়ে আকাশের পাশে দাঁড়িয়ে বলল দেখুন তো আমাদের কেমন মানায়?
আকাশ হতবাক….
সে ভুত দেখার মত মেঘলার ককর্মকান্ড দেখছে।
নাবিল মুচকি মুচকি হাসছে।
মেঘলাঃ আরে বলুন না….
নাবিলঃ একদম পারফেক্ট।
মেঘলাঃ এই তো আপনি বোঝেছেন কিন্তু এই ফাউল সেটা কিছুতেই বোঝে না। কলেজের সবাই কে বল্লে কি হত যে আমি উনার ছোট বোন।
নাবিল আবার ভ্যাবাচেকা খেল ছোট বোন মানে কি?
মেঘলাঃ হ্যা আমি উনার কুড়িয়ে পাওয়া বোন ছোট থেকেই উনাদের বাসায় থাকি। কিন্তু উনি আমাকে কিছুতেই বোনের স্বীকৃতি দিতে চান না। বলুন এটা কি ঠিক? একসাথে দাঁড়ালে সবাই তো বলবে কত সুইট ভাই বোন ইনি সেটা বোঝেয় না। খালি বলে ভাইয়া ডাকা যাবে না।
আকাশঃ মার খেতে না চাইলে চুপচাপ বাইকের কাছে যা।
মেঘলাঃ দেখলেন এখুনো স্বীকার করল না।
আকাশঃ তবে রে দাড়া মজা বোঝাচ্ছি….
নাবিলঃ থাক থাক আর মারামারি করে কাজ নেই। আচ্ছা কেন ভাইয়া ডাকতে দেয় না সেটা পড়ে দেখছি কিন্তু তুমি যে এখানে বসে ছিলে ভয় করেনি? কেউ যদি তোমায় নিতে না আসত।
মেঘলাঃ কেন আসবে না উনি স্বীকার করুক বা না করুক আমাকে উনি আদর করেন আমি সেটা জানি। তাই আমি জানতাম যখন দেখবে আমি বাসায় যাই নি তখন ঠিক খোঁজতে আসবে। তাই তো যখন রাস্তা খুজে পাইনি তখন অন্য কোথাও না গিয়ে এখানে এসেই বসে আছি।জানতাম আকাশ ভাইয়া আমাকে নিতে আসবে আফটার অল আমি উনার একমাত্র ছোট বোন।
আকাশঃ এখনো বকবক করছিস দাঁড়া এবার….
মেঘলা দৌড়….
নাবিল হাসতে হাসতে এসে বলল কি রে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি বোন হয় কিন্তু বলতে চাস না কেন?
আকাশঃতুই ও বুঝিস না কেন বোন বলি না?
নাবিলঃ তাই বুঝি?
আকাশঃ হুম ঠিক তাই…. কিন্তু যার বোঝার কথা সে সারাদিন মুখ ভরে ভাইয়া ভাইয়া বলতেই থাকে মেজাজ টা এত খারাপ হয় বোঝাতে পাড়ব না। কেন যে ভাইয়া ডাকতে মানা করি বোঝে না।
নাবিলঃ কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে….. বাকি টা আর বল্লাম না করে দিস দেখবি ভাই ডাক সারাজীবনের জন্য ভুলে গেছে।
আকাশঃ হুম তাই করতে হবে নিজে থেকে না বোঝলে বোঝাতে তো হবে সময় হোক বোঝাব। আমি ওর ভাই না অন্য কিছু হতে চাই।
নাবিলঃ যাই বল বন্ধুর পছন্দ আছে মানতে হবে। যেমন দেখতে তেমনি মিশুক যে কেউ প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খাবে।
আকাশঃ উম….🤨 আমার জিনিস নজর দিবি না বলে দিলাম।
নাবিলঃ কলেজে মারামারি করার কারন তাহলে মেঘলা…???
আকাশঃ হুম ছেলেগুলি মেঘলাকে বাজে কথা বলছিল তাই মেরেছি।
ওরা ২ জন কথা বলছিল তখন,
দূর থেকে মেঘলার ডাক ভেসে আসল…..
কি হল দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বাসায় যাবোনা? অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে তো।
নাবিলঃ তোর বিউটিকুইন ডাকছে চল যাওয়া যাক।
আকাশঃ হুম চল।
মেঘলা নাবিলকে উদ্দেশ্য করে বলল আচ্ছা আপনাকে ভাইয়া ডাকা যাবে না?
নাবিলঃ যাবে না কেন অবশ্যই যাবে।
মেঘলাঃ ধন্যবাদ। আপনি এর মত খারাপ না।
আকাশঃ আবার শুরু হয়ে গেল?
নাবিলঃ চুপ থাক তো আকাশ শুধু শুধু বকা দিস কেন আচ্ছা শোন তুমি না খুব ভাল আমার তোমাকে খুব ভাল লেগেছে আমাদের বাসায় বেড়াতে এসো কেমন।
মেঘলাঃ আচ্ছা অবশ্যই যাব।
আকাশঃ আগে তো হাটা শিখুক তারপর না হয় যাবে।
মেঘলাঃ আমি কি হাটতে পাড়ি না নাকি?
আকাশঃ পাড়বা না কেন অবশ্যই পাড়ো তাই তো রাস্তায় বসে বাদাম খাও। তানাহলে তো এখন বাসায় থাকতে তাই যাব
মেঘলাঃ অপমান করছেন?
নাবিলঃ থামো থামো জগড়া বাসায় গিয়ে করো রাত হয়ে গেছে বাসায় যাও এবার।
আকাশঃ হুম ঠিক বলেছিস এমনেতেই এর কপালে আজ কি আছে কে জানে মাকে ত চিনিস। যাই দোস্ত….
মেঘলাঃ আন্টি কি খুব বকবে আমায়?
আকাশঃ জানি না আগে তো যাওয়া যাক।
আকাশের পিছনে বসল মেঘলা।
মেঘলা আকাশের চেয়ে দূরে বসেছিল কিন্তু স্পীডে বাইক চালানোর জন্য মেঘলা ভয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরেছে।
মেঘলা আকাশকে ঝাঁপটে ধরতেই আকাশের হার্টবিট বেড়ে গেছে। আকাশের ইচ্ছা করছে সময়কে থামিয়ে দিতে আর মেঘলাকে নিয়ে স্বপ্নের দেশে পাড়ি দিতে। মেঘলা আস্তে আস্তে আকাশের পিঠে মাথা রেখে গা এলিয়ে দিল।
আকাশ ইতিমধ্যে হাওয়ায় ভাসতে শুরু করল আকাশের খুব ভাল লাগছে। মেঘলার প্রতিটা নিঃশ্বাস সে অনুভব করছে কিন্তু ভাল সময় বেশিক্ষন থাকে না। দেখতে দেখতে রাস্তা শেষ হয়ে গেল।
বাসায় পৌছার সাথে সাথে ভাল সময় শেষ হয়ে গেল তার সাথে আকাশের রুপও পালটে গেল।
আকাশ মেঘলাকে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে দিয়ে বলল মা এসব আপদ আমার ঘাড়ে একদম চাপাবে না। আমার সারাটাদিন নষ্ট করে দিয়েছে আজ। আমি একে আর একদিনো কলেজে নিয়ে যেতে পারব না বাবাকে বলে দিও। বলে আকাশ নিজের ঘরে যেতে যেতে বলল মেঘলা ঢং বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি আমার ঘরে খাবার দিয়ে যা।
আকাশের মাঃ যতসব আমাদের জীবন চিবিয়ে খাওয়া ছাড়া তোর আর কাজ নেই তাই না? অনেক ত বড় হলি এবার নিজের পথ নিজে দেখ আমাদের মুক্তি দে। শোন যদি আর একদিন দেড়ি করে কলেজ থেকে আসিস তোকে আর বাসায় উঠতে দিব না মনে রাখিস।
আকাশের ভাবি বিপাশা বলল এতক্ষন কার সাথে ছিল কে জানে?
আকাশের মা আর ভাবির কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশের চিৎকার শুনা গেল।
মেঘলা খাবার কি দিবি নাকি আমার নিচে নামতে হবে?
মেঘলার খুব মন হল এতক্ষন তো ভাল ছিল এখনি বদলে গেলো মানুষে কিভাবে এত অভিনয় পাড়ে কে জানে।
আকাশের মাঃ যা আকাশের ক্ষুদা পেয়েছে খাবার দিয়ে আয়।
মেঘলাঃ এতক্ষন কত কষ্ট করে আসলাম আসতে না আসতেই কাজ কি কপাল আমার।
ভাবতে ভাবতে খাবার নিয়ে আকাশের ঘরে গেল মেঘলা।
আকাশকে ঘরে দেখতে না পেয়ে মেঘলা ঘরে খাবার রেখে চলে গেল।
মেঘলা নিচে যেতেই বিপাশা আবার বাজে কথা শুরু করে দিল। মেঘলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা শুনছে।
আকাশ ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে খাবার দেখে রেগে গেল।
সে বাইরে এসে মেঘলাকে ডাকতে লাগল মেঘলা বলল কি হয়েছে ভাইয়া।
আকাশ সাথে সাথে নিচে এসে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল মেঘলার গালে।
আকাশঃ কি খাবার দিয়েছিস?খাওয়ার যোগ্য এটা? চল তোকে খাওয়াব এসব।
আকাশের মা আর ভাবি ২ জনেই সেখানে ছিল কিন্তু কেউ এই কোন প্রতিবাদ করল না…বরং তারা খুশিই হল।
আকাশ মেঘলাকে টানতে টানতে উপরে নিয়ে গেল।
বিপাশাঃ একদম ঠিক হয়েছে আকাশেই পারবে এই মেয়েকে বিদায় করতে। মা আপনি কোন চিন্তা করবেন না। দেখবেন আকাশ রেগে গিয়ে ওকে মারতে মারতে বের করে দিবে আর আকাশ মারলে বাবাও কিছু বলতে পাড়বে না। আমাদের দায়িত্ব শুধু আকাশকে উস্কে দেওয়া।
আকাশের মাঃ হুম ঠিক বলেছো। আমরা কিছু করলেই তো তুমার বাবা সাতকাহন শুরু করে দিবে।
আকাশ মেঘলাকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলল খা এগুলো…
মেঘলাঃ আমি খাব না।
আকাশঃ খেতে ত হবেই না খেলে বেলকনিতে নিয়ে গিয়ে থাক্কা দিয়ে সোজা নিচে ফেলে দিব।
মেঘলা ভয় পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে খেতে শুরু করল। খেতে খেতে বলল খাবারটা তো ভালই তাহলে মারলেন কেন?
আকাশঃ ইচ্ছা হয়েছে তাই। যখন ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বকা শুনছিলি তখন কইফত চাইতে পারিস নি? আমার সাথে তেজ দেখাচ্ছিস যে….
মেঘলা আর কিছু না বলে খাওয়া শেষ করল খাওয়া শেষ হলে আকাশ বলল এবার যা আর শোন আমাকে না বলে কখনো এ ঘরে আসবি না।
মেঘলাঃ আচ্ছা আসব না। আমার বয়ে গেছে এখানে আসতে।
আকাশঃ দেখা যাবে কিন্তু তোর কান্না বন্ধ হল কেন?
মেঘলাঃ মানে কি?
আকাশঃ কাঁদতে বল্লাম তোকে….কাঁদ বলছি।
মেঘলাঃ মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি আপনার?
আকাশঃ নিজে থেকে কাঁদবি নাকি থাপ্পড় মারব?
মেঘলাঃ🙄🙄
আকাশ এসে মেঘলাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। মেঘলার মাথায় কিছুই ঢুকল না। তবে সারাদিন না খেয়ে থাকায় তার খুব ক্ষিদে পেয়েছিল আকাশের দেওয়া খাবার খেয়ে ক্ষুদা মিটে গেছে তাই এখন তার বেশ ভাল লাগছে।