রাতে সবাই খেতে বসেছে, মেঘলা সবাই কে খাবার দিচ্ছে। তখন আকাশের বাবা বলল, কিরে মেঘলা তোর বাসায় আসতে দড়ি হল কেন?
মেঘলাঃ আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম আংকেল।
আজাদ সাহেবঃ হারিয়ে গেছিলি মানে? আর তোকে তো আকাশের নিয়ে আসার কথা ছিল তুই একা এসেছিলি কেন?
মেঘলাঃ ভাইয়া ত আমায় নিয়েই যায় নি তাহলে নিয়ে আসবে কি করে?
আজাদ সাহেবঃ নিয়ে যায় নি মানে?
মেঘলাঃ রাস্তার মোড়ে নামিয়ে দিয়েছিল আমি বাসে করে গিয়েছি।
আকাশ চোখ পাকিয়ে বলল মেঘলা…..!!!
মেঘলা ভয়ে চুপ হয়ে গেল।
আজাদ সাহেবঃ তুমি ওকে ধমকাচ্ছ কেন? মেঘলা রাস্তাঘাট চিনে? কোন বুদ্ধিতে তুমি ওকে একা ছেড়ে দিলে? তুমি ত এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিলে না আকাশ।
রাবেয়া বেগমঃ থামো তুমি… বাড়ির কাজের মেয়ের জন্য নিজের ছেলেকে কথা শুনাচ্ছ? কাজের মেয়েকে ও কেন কলেজে নিয়ে যাবে? কাজের মেয়ে কাজের মেয়ের মত থাকবে।
মেঘলা, তুই ই বা কেমন?নিজের জায়গাটা কেন ভুলে যাস এই পরিবারে তুই কেরে একটা পরগাছা ছাড়া কিছুই না তোর এত বড় সাহস হয় কি করে আকাশের নামে নালিশ করছিস?
আকাশের ভাবিঃ ঠিক বলেছো মা, আসলেই বাবা আদর দিতে দিতে ওকে একদম মাথায় তুলে ফেলেছে। এই জন্যই ও কাউকে মানতে চায় না কথায় আছে কুকুর কে লায় দিতে নেই।
মেঘলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা শুনছে ঠিক তখন
আকাশ খাওয়া ছেড়ে উঠে চলে গেল।
রাবেয়া বেগমঃ বাবা খাওয়া ছেড়ে উঠতে নেই খেয়ে যাও আর কখনো মেঘলা এমন করবে না।
আকাশঃ আমার খাওয়া হয়ে গেছে মা তোমরা খাও। বলে চলে গেল।
রাবেয়া বেগমঃ ছেলেটাকে খেতে দিলি না আর কত জ্বালাবি আমাদের অপয়া অলক্ষনে মেয়ে।
মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
আজাদ সাহেবঃ মেয়েটাকে এভাবে না বল্লেও পারতে রাবেয়া। হয়ত ও কোন মায়ের আদরের মেয়ে ছিল ভাগ্য আজ ওকে এখানে এনে দাড় করিয়েছে। ওর কি দোষ ভুল ত আকাশ করেছে।
রাবেয়াঃ রাখোত আদরের মেয়ে কার না কার পাপ আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি। আর ভুল টা আকাশের নয় তোমার। আচ্ছা তুমি কি ভুলে গেছো মেঘলাকে কেন গ্রামে পাঠানো হয়েছিল?যদি ভুলে গিয়ে থাকো মনে করিয়ে দেই ছোট বেলায় আকাশ মেঘলার জন্য পাগল ছিল কেউ ওকে কিছু বল্লে আকাশ মেনে নিতে পাড়ত না। আকাশ দিন দিন মেঘলার জন্য desperate হয়ে উঠছিল তাই মেঘলাকে সরিয়ে দিয়েছিলাম। অনেকদিন পর আকাশ মেঘলাকে ভুলতে পেড়েছিল এখন কি তুমি চাচ্ছ যে আকাশ আবার মেঘলার প্রতি দুর্বল হয়ে যাক? আগে আকাশ ছোট ছিল তাই প্রতিবাদ করে নি এখন যদি একবার আগের মত হয়ে যায় ওকে সামলানো যাবে না।
শুনে রাখো বাবা মার পরিচয় নেই এমন মেয়েকে আমি কখনই বউ হিসেবে মেনে নিব না। বিপাশার বোন হবে আমার ছেলের বউ আর কেউ না বোঝেছো।তাই আকাশ যেমন ওকে সহ্য করতে পাড়ে না তেমনি থাকতে দাও।
তুমার বাড়ি তুমি কাকে এনে রাখবে সেটা তুমি ভাল জানো কিন্তু এদের ২ জনকে কাছাকাছি আনার চেষ্টা করো না। যত তাড়াতাড়ি পাড়ি মেঘলার বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে আপদ বিদায় করব।
আজাদ সাহেবঃ ও আচ্ছা এই জন্যই তোমরা ২ জন সারাদিন মেয়েটার পিছনে পড়ে থাকো? খোদা তোমাদের কি দিয়ে তৈরি করেছেন কে জানে। মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিনা দোষে কত কষ্ট দাও কিন্তু শুনে নাও। তুমার ছেলে,মানে দ্যা গ্রেট আকাশ একটা ফালতু ছেলে ওর কোন যোগ্যতা নেই মেঘলাকে বিয়ে করার। মেয়েদের কিভাবে সম্মান করতে হয় সেটাই তো ও জানে না। সারাদিন মেঘলাকে অপমান করতে থাকে। আর মেঘলাকে তুমরা কি মেনে নিবে না তোমার ওই ফালতু ছেলেকে মেঘলাই মেনে নিবে না। যতসব ফালতু লজিক।
রাবেয়া বেগমঃ যা ইচ্ছা বলতে থাকো কিন্তু ওই ফকিন্নিকে আমি আমার সংসারে থাকতে দিব না।
।
।
।
।
রাত ১১:৩০ টা রাতে খায় নি আকাশ, খাবার রেখে উঠে গিয়েছিল মেঘলার সেটা খারাপ লেগেছে তার জন্য কেউ না খেয়ে থাকবে সেটা ঠিক না তাই মেঘলা খাবার গুছিয়ে নিয়ে আকাশের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভয়ে ঘরে ঢুকতে পাড়ছে না।
তখনি বিপাশা এসে বলল ছেলেদের মন গলানোর সকল প্রস্তুতি নেওয়া শেষ তাহলে? একটা ছেলে এত অপমান করে তারপরেও তার পিছনে ঘুরঘুর করতে লজ্জা করে না? সমপত্তির লোভে পড়েছিস তাই না?
কথাগুলি আকাশের কানে যেতেই সে দরজা খুলে আকাশ বলল কি হয়েছে ভাবি?
বিপাশাঃ দেখো না কত নাটক…
আকাশ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল এগুলো কিরে মেঘলা?
মেঘলাঃ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে…..
আকাশ এসে খাবার গুলি ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলল আমি কি বলেছিলাম এসব আনতে? তাহলে আনলি কেন বাড়াবাড়ি করতে খুব ভাল লাগে তাই না? এরপর থেকে আমার সাথে কোন রকম বাড়াবাড়ি করবি না বলে দিলাম।
আকাশঃ কেন খাবার নিয়ে এসেছিলি? কি ভেবেছিলি তোর জন্য খাই নি তাই দায়িত্ব পালন করতে এসেছিলি?
মেঘলা মাথা নিচু করে বলল রাতে না খেলে শরীর খারাপ হয়। কিন্তু জিজ্ঞাসা করছেন কেন….??? সব ভাই তো বোনদের ভালবাসে বোনরাও ভাইদের বাসে তাহলে আমি ভাইকে খাবার দিলে কি দোষ?
বিপাশাঃ ও আকাশের জন্য আমাদের কারো টান নেই শুধু তোর আছে সেটাই বোঝাতে এসেছিস তাই তো? এত ভালবাসা তোর? দাড়া বোঝাচ্ছি মা ও মা কোথায় গেলে এসো দেখে যাও কি হচ্ছে এখানে। রাবেয়া বেগম কে ডাকতে ডাকতে চলে গেল বিপাশা।
আকাশঃ তোকে কেউ কিছু বল্লে আমার সহ্য হয় না কেন বোঝিস না মেঘলা? তুই নালিশ করেছিস বলে আমি রাগ করিনি। মা তোকে খারাপ কথা বলছিল তাই না খেয়ে চলে এসেছিলাম।
এখন তুই আবার কেন এলি মেঘলা? আবার তো কথা শুনতে হবে। তুই এমন করতে থাকলে তোকে আগের মত আবার বাড়ি থেকে বের করে দিবে। আমার জন্য তুই যত বাড়াবাড়ি করবি ততই কষ্ট পাবি। তুই সেটা কেন বোঝিস না (মনে মনে)
মেঘলাঃ কি হল বলুন কেন আদর করা যাবে না?
আকাশঃ তুই চরম মাপের একটা গাধা তাই…. এক্ষুনি চোখের সামনে থেকে বিদায় হ …
মেঘলাঃ খাবেন না….
আকাশঃ যাবি নাকি থাপ্পড় মারতে হবে?
মেঘলাঃ আকাশে কখন রোদ উঠে আর কখন বৃষ্টি পড়ে কিছুই বোঝি না কি আজব।
আকাশঃ এখুনো বকবক করছিস?
মেঘলাঃ দৌড়…..।
।
।
।
।
পরদিন সকালে আকাশ রেডি হয়ে নিচে নামছিল তখনি চেঁচামেচি শুনে বিপাশার ঘরে গেল।
সেখানে মেঘলাও আছে।
আকাশঃ কি হয়েছে ভাবি? আর মেঘলা এখানে কি করছিস রেডি হস নি কেন? কলেজ যাবি না?
মেঘলা মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে।
বিপাশাঃ চুপ করে আছিস কেন? বল কি করেছিস? আমার নেকলেস না পেলে তোকে আমি বাড়ি থেকে বিদায় করে ছাড়ব দেখিস।
আকাশঃ কি হয়েছে ভাবি?
বিপাশাঃ আরে বলো না আরিফ সেদিন আমায় যে নেকলেস টা দিল সেটা খোঁজে পাচ্ছি না। আমি নিশ্চিত ওটা মেঘলায় সরিয়েছে। ও ছাড়া আমার ঘরে কেউ আসে নি।
আকাশঃ চোখ রাংগিয়ে মেঘলার দিকে তাকাতেই
মেঘলা বলল আমি নেই নি ভাইয়া….
আকাশঃ তো সারা বাড়ি থাকতে ভাবির ঘরে এসেছিলি কেন?
মেঘলাঃ ভাবির ঘরে টিভি দেখতে এসেছিলাম কাল রাতে এছাড়া আর কখনো আসি নি।
আকাশঃ ভাবি তুমি খোঁজে দেখো না পেলে আমায় বলো আমি তোমায় নেকলেস কিনে দিব তুমি মন খারাপ করো না। চোর থেকে সাবধানে থেকো। মেঘলাকে আর ঘরে ঢুকতে দিবে না ঠিক আছে?
মেঘলাঃ খোঁজলেই পাবেন। আমি নেই নি বিশ্বাস করুন।
আকাশঃ লজ্জা করছে না কথা বলতে…. ঘর থেকে বের হ…. চোর কোথাকার।
মেঘলাঃ চোর বলবেন না, আমি চোর নই….
আকাশ একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল তাহলে অন্যজনের ঘরে ঢুকিস কেন?
মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে বলল সারাদিন কেউ আমার সাথে একটা কথা বলে না আমি সারাদিন একা একা কি করে থাকি? একটু টিভি দেখতে এসেছিলাম তাও এখন বন্ধ হয়ে গেল।
আকাশ আর কিছু না বলে বাইরে চলে গেল।