কলেজ থেকে বাসায় এসে মেঘলা ফ্রেশ হয়ে ফোন নিয়ে বসল কিন্তু ফোন নিয়ে দেখল তার ফেসবুক পুরো ওলট পালট হয়ে গেছে প্রোফাইল পিক বদলে গেছে কমেন্টে সবাইকে গালি দেওয়া হয়েছে এসমেস এ প্রতিটা ছেলেকে তার একাউন্ট থেকে অকথ্য ভাষার এসমেস করা হয়েছে। কয়েকজন কে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।
কলেজের ছেলেগুলিকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এবার মেঘলা বোঝল আকাশ ওই ছেলেটাকে কেন মেরেছিল। তারমানে আকাশ কালকেই আমার ফেসবুক চেক করেছিল।
মেঘলা রেগে গেল রাগে আকাশের ঘরে গেল।
আকাশ স্বাভাবিকভাবেই বলল কিরে মেঘলা কিছু বলবি?
মেঘলাঃ আপনি এত অসভ্য কেন?
আকাশ হেসে বলল তোকে কামড়ে দিয়েছি নাকি?
মেঘলাঃ ফাযলামি বাদ দিন আমার ফেবু তে কেন ঢুকছিলেন? জানেন না ফেসবুক পার্সনাল জিনিস। না বলে কেন ঢুকলেন? সবাইকে বকা আপনি দিয়েছেন কিন্তু সবাই তো ভাবল আমি দিয়েছি। এখন কেউ আর আমার সাথে কথা বলবে না। আমার সব ভাল ভাল ছবি ডিলিট করে দিয়েছেন। এসব কেন করলেন?
আকাশ অবাক হয়ে বলল তুই আমার কাছে কয়ফত চাইছিস তাও ফেসবুকের জন্য?
মেঘলাঃ চাইব না কেন আপনি কে শুনি?
আকাশঃ কিরে বুক কাঁপছে না আমার সাথে এভাবে কথা বলতে?
মেঘলাঃ না কাঁপছে না মিথ্যা বলছি নাকি? অসভ্য ছেলে কোথাকার লাগবে না আপনার একাউন্ট আজকেই আমি নতুন একাউন্ট খুলব।
আকাশঃ ধর্য্যের সীমা পেড়িয়ে যাচ্ছে মেঘলা আর কন্ট্রোল করতে পাড়ব না। এখন যা এখান থেকে…না হলে মার খাবি।
মেঘলাঃ হুম যাচ্ছি একেবারেই চলে যাচ্ছি আপনার জীবন থেকেই চলে যাচ্ছি আমি আপনার সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইনা…
আকাশ বসে ছিল দাঁড়িয়ে বলল কি….??? কি বল্লি তুই?আবার বল?
মেঘলাঃ আমি আপনার সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইনা…
কথা বলতে দেরি হল কিন্তু আকাশের থাপ্পড় মারতে দেরি হল না
মেঘলা তাল সামলাতে না পেড়ে পড়ে গেল আর বলে উঠল আহ…. এত জোরে মারলেন?
এই প্রথম আকাশ মেঘলাকে জোরে থাপ্পড় মারল। গালে আংগুলের ছাপ পড়ে গেছে
আকাশ এসে মেঘলাকে তুলে আলতো করে আদর করে বলল কি হয়েছে বল না…?? কেউ কিছু বলেছে? আগের বারের মত ভুল বোঝিছিস? বল কি হয়েছে আমি সব মিটিয়ে দিব। বিশ্বাস কর আমি এমন কিছু করি নি যাতে তোর খারাপ লাগতে পাড়ে… বল না কি হয়েছে? কিরে চুপ করে আছিস কেন বল।
মেঘলাঃ না কেউ কিছু বলে নি আর কিছু ঘটেও নি।
আকাশঃ তাহলে গাল ফুলিয়েছিস কেন???
মেঘলাঃ আমি স্বাধীনতা চাই।
আকাশঃ মেঘলা আমি তোকে স্বাধীনতা দেই নি?
মেঘলাঃ এমন স্বাধীনতা না আমি সবার মত ঘুরতে চাই বেরাতে চাই সবার সাথে কথা বলতে চাই….আপনি আমায় সাজতে দেন না বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে যেতে দেন না। ফেসবুকে ছবি দিতেও দেন না।
আকাশ হেসে বলল আহ পাগলিরব… এই জন্য ব্রেকাপ করতে হয়? বোকা কোথাকার…. আচ্ছা যা যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই থাকিস। আমি কিছু বলব না। বাধাও দিব না। কবে যে তুই বড় হবি কে জানে…
।
।
।
।
।
।
এরপর আকাশ আর কখনো মেঘলাকে কিছু বলে না। মেঘলার যা মন চায় তাই করতে দেয়। মেঘলা ছেলেদের সাথে কথা বলে এসএমএস করে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে অনেক ছেলেরা কমেন্ট করে আকাশ সব দেখেও কিছু বলে না।
আকাশের খারাপ লাগলেও সহ্য করে।
কিন্তু আস্তে আস্তে আকাশের মন মেজাজও দিন দিন খারাপ হচ্ছে কারন মেঘলা আকাশকে এখন আর একদমেই সময় দেয় না আকাশ কোথায় কি করছে সেসব নিয়ে মেঘলার কোন চিন্তায় নেই। আকাশ রাতে ফোন দিলে মেঘলা বলে তার ঘুম পেয়েছে কথা বলতে পাড়বে না কিন্তু ফেসবুকে ঠিকি এক্টিভ থাকে সারারাত।
।
।
।
।
।
আকাশ একদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল, রাজনৈতিক ব্যাপারে কিসের যেন একটা মিটিং আছে রেস্টুরেন্টে। সে কথা বলতে বলতেই রেস্টুরেন্ট এ ঢুকল।
কিন্তু হঠাৎ একটা কাপল টেবিলে চোখ পড়তেই আকাশের চোখ ছানাভরা হয়ে গেল।
কারন ছেলেটার সাথে যে মেয়ে পার্টনার বসে আছে সেটা আর কেউ না এটা তার প্রেমিকা মেঘলা। যাকে আকাশ নিজের চেয়েও বেশি ভরসা করে সেই আজ একটা ছেলের হাত ধরে বসে মজা করছে হেসে হেসে কথা বলচগে সে, কিন্তু সাথে বসা ছেলেটাকে আকাশ চিনে না।
মেঘলা ছেলেটার হাত ধরে বসে আছে দেখে আকাশ মনে মনে বলল আজ তুই সব সীমা পেরিয়ে গেছিস মেঘলা…আর ক্ষমা করতে পারবনা আর এটা করার পর ক্ষমা করার প্রশ্নই উঠে না।
আকাশ এগিয়ে গিয়ে বলল এক রাতের রেট কত তোর …??কাস্টমারের কাছ থেকে এডভান্স নিস নাকি রাত কাটানোর পর কোনটা?
আচমকা এমন কুৎসিত প্রশ্নে মেঘলা অবাক হয়ে
আকাশের দিকে তাকাল।
মেঘলা এতক্ষন তার নতুন বিএফ এর সাথে রেস্টুরেন্ট এ বসে কথা বলছিল তখনি সেখানে আকাশের এন্ট্রি হয়েছে। আকাশ কে দেখে মেঘলার বুক ধুকপুক করছে কারন সে জানে তার সাথে খারাপ কিছু ঘটতে চলছে। ভয়ে ভয়ে সে উঠে দাঁড়াল ভয়ে মেঘলার গলা শুকিয়ে গেছে।
আকাশ কে দেখতে অনেকটা আহত হিংস্র বাঘের মত লাগছে।বচোখ দুটি অসম্ভব লাল হয়ে আছে, শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আকাশ, মেঘলার কাছে এসে বলল
না মানে রেট টা জানলে আমার কয়েকটা বন্ধুকেও রাতে পাটাতাম তোর কাছে। তোর ত একজন ২ জনে হয় না তাই।আর তুই যেহেতু দেখতে ভাল তাই ওরাও মজা পাবে আর তোর ইনকামটাও ভাল হবে।
আকাশের কথা শুনে মেঘলার প্রায় কাঁদোকাঁদো অবস্থা হয়ে গেছে। সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ থেকে টুপটাপ পানি পড়ছে তার।
মেঘলাকে কাঁদিয়ে এবার আকাশ মেঘলাকে ছেড়ে তার পাশে বসে থাকা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল তা আপনি ওর কত নাম্বার কাস্টমার জানতে পাড়ি? আসলে আপনাকে দেখে তো ভদ্রলোক মনে হচ্ছে তা এত হোটেল থাকতে এখানে কেনো? দেশে কি মেয়ের অভাব যে এটার পিছনেই পরতে হল?
ছেলেটি অবাক হয়ে বলল আপনি কে? আর ওকে এভাবে বলছেন কেন?
ছেলেটি মেঘলাকে প্রশ্ন করল কি ব্যাপার মেঘলা তুমি কিছু বলছো না কেন? কে উনি?
মেঘলার গলা শুকিয়ে গেছে তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে তাই সে আমতা আমতা করে বলল উনি আ আ আ আমার এএএ…..
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ মেঘলার গালে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। তাল সামলাতে না পেড়ে মেঘলা মাটিতে পড়ে গেল। আকাশ থাপ্পড় টা এত জোরে মেরেছে যে মেঘলার ঠোঁট ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
কিন্তু আকাশের সেদিকে লক্ষ নেই সে গিয়ে মেঘলার চুলের মুটি ধরে টেনে তুলে বলল কি বলতে চেয়েছিলি? আমি তোর এক্স তাই না?
এই একটা কথা কান খুলে চুনে রাখ তুই আমার সাথে ব্রকাপ করলেও আমি করি নি কখনো করবোও না তাই আমি কখনো তর এক্স হব না বুঝেছিস? মেঘলার চুল ধরে রেখেই
আকাশ ছেলেটির দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল এটা আমার জিএফ ছিল এখনো আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে বুঝেছিস? তাই তোকে যদি আর কখনো মেঘলার ধারেকাছে দেখি তাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম।
ছেলেটি হতবাক হয়ে বলল এসবের মানে কি মেঘলা? আর ভাই আপনি যেই হন শুনুন আমি ওর সাথে গত ৭ দিন থেকে রিলেশানসীপে আছি। তাই আপনার সাথে যাই থাকুক সেটা অতীত।
আকাশঃ সে জন্যই তো বল্লাম কত নাম্বার তুই? আর হয়ত জানিস না মেঘলা আমাদের বাড়িতেই বড় হয়েছে এখনো সেখানেই থাকে আর আজ থেকে আমার রুমে থাকবে আর কিছু বলতে হবে?
ছেলেটিঃ মেঘলা তুমি কিছু বলছো না কেন?
মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে বলল স্যার ছাড়ুন আমাকে। আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না উনার সাথে থাকতে চাই।
আকাশঃ তাই নাকি এতদিন পর তাহলে স্যার বলছিস?
মেঘলাঃ বাড়ির আশ্রিতার বাড়ির মালিককে যা বলা উচিত তাই ত বল্লাম।
আকাশঃ গুড একবার বাসায় চল তারপর বোঝাচ্ছি আমি তোর কি আর তুই কার সাথে থাকবি কার সাথে থাকবি না?
ছেলেটিঃ আপনার সাথে ওর যতই রিলেশান থাকুক না কেন ও এখন আর আপনার সাথে থাকতে চায় না তাই আপনি একটা মেয়েকে এভাবে হেরেসমেন্ট করতে পাড়েন না আর আমাদের প্রেমেও বাঁধা দিতে পাড়েন না।
আকাশ ছেলেটিকে বলল মনে হচ্ছে তুই এই এলাকার না। এখানকার হলে আকাশের গার্লফ্রেন্ড এর দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পেতি না। যাইহোক কোথায় থাকিস জানি না আর জানতেও চাই না। কিন্তু এটা শুনে রাখ মেঘলার পাশে তোকে যদি আর একবার দেখি তোকে এমন জায়গায় রেখে আসব যেখান থেকে আর কোনদিন ফিরে আসতে পারবি না সেদিনেই তোর শেষ দিন হবে বোঝেছিস? আকাশ কি সেটা এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখিস তাহলেই বুঝতে পারবি। ভালবাবে বলছি ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যা।
কথাগুলি শেষ করে মেঘলাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে আকাশ।
আর হাঁটতে হাঁটতে বলল আমি বলেছিলাম অন্যছেলের সাথে মিশবি না কথা বলবি না আমার এসব সহ্য হয় না। তবুও তুই কথা বলতে চাস তাই আমি মেনে নিয়েছি কিন্তু এখন তুই কথা তো কথা একদম প্রেম করে শুরু করে দিয়েছিস। আর কত সহ্য করব আমি? আজ এর সাথে ত কাল তার সাথে কিভাবে পারিস রে?
রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে আমার বাবা মা তোকে এত বড় করে তুলেছে। আমি তোকে এত ভালবেসেছি আজ সব কিছুই ভুলে গেছিস তুই। প্রতিদিন কোন না কোন ছেলের সাথে ফস্টিনস্টি করিস। কেন রে আমি কোনদিক দিয়ে খারাপ? আর যদি খারাপই হই তাহলে আগে ভালবেসেছিলি কেন? প্রেম করেছিলি কেন? আমাকে নিয়ে খেলা করতে তাই না? আজ সব খেলা শেষ করব আমি বাসায় চল বোঝাব তোকে।
অনেক সুযোগ দিয়েছিলাম তুই বুঝলি না।
এদিকে এত জোরে হাত ধরায় মেঘলার ব্যাথা লাগছে কিন্তু আকাশের তা চোখে পড়ছে না।
মেঘলাঃ আহ আমার লাগছে ছাড়ুন, ছাড়ুন বলছি। প্লিজ ছাড়ুন ব্যাথা পাচ্ছি। একমনে আকুতি মিনতি করছে মেঘলা।
কিন্তু আকাশের কানে কিছুই ঢুকছে না সে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে মেঘলাকে…..
বাসায় ঢুকতেই বিপাশার চোখে পড়ল বিপাশা দেখল আকাশ মেঘলাকে টানতে টানতে নিয়ে নিজের ঘরে যাচ্ছে সে বাধা দিল না বরং উপভোগ করছে বিষয় টা।
বিপাশাঃ আজ তোমাকে কে বাঁচাবে মেঘলা? তোমার যে কি অবস্থা হবে ভাবতেই তো ভয় লাগছে আমার আকাশের রাগ তো কখনো দেখো নি আজ দেখবে।
আকাশ মেঘলাকে ঘরে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিল আর দরজা লক করে দিল