অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ৩৪

14 Min Read

‘চোখ মুখ শুকনো দেখাচ্ছে কেন?খাওয়া দাওয়া ঠিকঠাক হয় না তাই না?’

‘খেয়েছি।’

আরহাম ফ্রেশ হয়ে এলে একসাথে ডিনারে বসলো সবাই।ডিনার সেরে রুমে যেতে দেখলো,আরহাম বেলকনিতে ল্যাপটপে কিছু করছেন।
রুম গুছিয়ে চুপচাপ নিচে এসে মাইমুনার সাথে শুয়ে পড়লো হাফসা।

বেশ কিছুক্ষণ পর মনে হলো,সে শূন্যে ভাসছে।

রুমে এসে কোল থেকে নামানোর পর রাগ করে গাল ফুলিয়ে বিছানার এক প্রান্তে বসে রয়।আরহাম ওকে পরখ করে বললেন, ‘কি হলো!’

‘আপনি আমাকে নিয়ে আসছেন কেন?আপুর সাথে একজন থাকা প্রয়োজন না?রাতে যদি কিছু দরকার হয়!বা ওয়াশরুম যেতে চান।নতুন জায়গা একা সমস্যা হবে।’

‘রাগ করলে আপনাকে খুব কিউট লাগে।’

হাফসা গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রয়।

আরহাম শান্ত কন্ঠে বললেন,’আপনি চিন্তা করবেন না।মাইমুনা মেডিসিন নিয়ে ঘুমান।রাতে উঠা পরে না উনার।’

‘তবুও???’

আরহাম কাছে এসে হাফসার গাল চেপে বলেন, ‘সবার কথা চিন্তা করেন আমার কথা তো করেন না।’

‘আপনার কি হবে?আপনাকে কি ধরে ধরে আমি ওয়াশরুম নিয়ে যাব?’

আরহাম গাল ছেড়ে ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে ফিসফিসিয়ে বললেন, ‘আপনার অসুখ ধরেছে আমার।আমার কি করার?’

‘জানিনা।’

‘ঘুমোনোর সময় আমাকে বলে গেলেন না?আমি আরও ওয়েট করছিলাম আপনার জন্য।’

হাফসা চুপচাপ রয়।

‘সারাদিন দেখিনি তো।কালকেও আপনার সাথে থাকি নি।আজকেও থাকবেন না?’

আরহামের আবদারের সুরে ওর রাগ নিমিষেই গলে যায়!

ঘুমানের সময় হাফসাকে একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমালেন।যেনো ছাড়লেই কেউ নিয়ে যাবে!

‘আস্তে ধরুন।শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরে যাব।’

‘পারলে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে সেলাই করে দিতাম।’

‘বললেন না যে,আমাকে খুঁজে পেয়েছিলেন কীভাবে।’

‘পুরনো কথা থাক না।’

‘উঁহু, এখন এড়িয়ে গেলে মানবো না।’

৯১

আরহাম ফিসফিসিয়ে বললেন,’টেরোরিস্টের মাধ্যমে ‘

হাফসা ছিটকে গিয়ে দূরে সরে বলে,’মানে?’

আরহাম চোখ রাঙ্গিয়ে পুনরায় ওকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘রুদ্র খুব চালাক।পুলিশের কিছুই করার সুযোগ রাখেননি।উনার ফ্লাইটের টিকিট কাটা ২৫ রোযায়।এই প্রুফ উনার এফবি আইতে দেয়া ছিলো।ভেবেছিলাম সত্যিই মনে হয় ইরান চলে গেছেন,পরে উনি যে কোম্পানিতে যুক্ত সেখানের এটেনডেন্স দেখে ফ্লাইট এর ইনফরমেশন রিকোভার করে দেখলাম, উনি দেশেই রয়ে গেছেন।’

হাফসা অদম্য কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘তারপর তারপর?তারপর কি হলো?’

‘আমি জানিনা ওরা কি করেছে।আমি যাস্ট ইমেইল রিকোভার করে দিয়েছি।আর উনার ছবি।আরও কিছু ইনফরমেশন ছিলো।’

‘টেরোরিস্টের দেখা পেলেন কীভাবে?’

‘একদিন রাত করে বাসায় ফিরছিলাম।রোডের পাশে একটা অদ্ভুত বেশভূষার লোককে অচেতন হয়ে পড়ে থাকতে দেখে হসপিটালে নিয়ে যাই।ড্রিংক করে পড়েছিলেন।পরের দিন গিয়ে দেখি,পুরোপুরি সুস্থ তিনি।বিদায় নিয়ে চলে আসার আগে বলেছিলেন, ‘আমার বাসায় এসো।চা’য়ের দাওয়াত।’আমিও দাওয়াত রাখতে গিয়ে দেখি,এটা বাসা তো নাই-ই।বরং মর্গ মনে হচ্ছিলো।লোকটা রীতিমতো আমাকে ভয় দেখাচ্ছিলো মেরে ফেলার।সবে বিয়ে করেছিলাম।

আমাকে দূদিন আটকে রেখেছিলো,পরের দিন আমার পুরে বংশ আওলাদের সব তথ্য লোকটা নিজমুখে বলতেই আমি অবাক হই,ভয়ও পাই।কারন ওরা ডেঞ্জারাস।মার্ডার করা নিত্যকার অভ্যেস।আমাকে পরিবারের প্রানহানির হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘এ ঘটনা ভুলে যেতে’
শুধু এইটুকু।আসার আগে আবার ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি উনার একটা উপকার করেছি,উনিও আমার যেকোনো একটাই উপকার করবেন।’

ব্যাস…চলে আসি।কোনো এড্রেস নেই,কোনো আইডেন্টিটি নেই।আপনি অপহরণ হওয়ার পর সারারাত ওই রোডের ওই জায়গায় ছিলাম।মিথ্যে আশা নিয়ে শেষবারের মতো সুযোগ দিচ্ছিলাম চেষ্টার।কাকতালীয় ভাবে তিন বছর পরে একই জায়গায় উনার সাথে দেখা হয়।এরপর বাকিটা।’

‘আপনাকে যদি সত্যিই মেরে ফেলতো?’

‘হায়াত যতদিন আছে বেঁচে তো থাকবই।’

হাফসা বিড়বিড়িয়ে বলল,’বেঁচে না থাকলে আপনাকে বিয়েই তো করতে পারতাম না।’

কিছুক্ষণ পর আরহাম ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে নিতে বললেন, ‘বিড়বিড় করে যে কথাগুলো বলেন,আস্তে বলবেন। শুনে ফেলি তো।’

হাফসা তরাক করে চোখ খুলে ফেললো।এ লোকটার শ্রবণশক্তি এত তীক্ষ্ণ কেন!

*****
হাফসার যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন চারিপাশে হালকা আলোয় পরিষ্কার।দিনটা কেমন ছায়াময়ী,নীরব।উঠতে চাইলে মনে হলো,কিছুর সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে সে।
একটু মাথা তুলে তাকাতে দেখলো আরহাম ওর বুকের ওপর মাথা রেখে আরামসে ঘুমোচ্ছেন।উনাকে সরানোর চেষ্টা করতে গেলে আরও ভালো করে জড়িয়ে ধরতে হাফসা ওনার চুলগুলো এলোমেলো করে বলল,’খিদে লেগেছে।ছাড়ুন উঠবো।’

আরহাম ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললেন, ‘আমার ঘুম বাকি।’

‘তাহলে ঘুমান।আমাকে ছাড়ুন।’

‘উহু।’

‘ওয়াশরুম থেকে আসি।’

ওয়াশরুমের বাহানা দিয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরুতে গেলে আরহাম ডেকে বলেন,’কই যান?কাম টু বেড।’

‘নিচে যাব।’

‘উঠলে পানিশমেন্ট দিব উমায়ের।প্লিজ আসুন।’

‘এতো টাইম নাই’ বলে আসতে আসতে পিছু ফিরতে দেখলো আরহাম সরু চোখে তাকিয়ে আছেন।

হাফসা এসবে পাত্তা না দিয়ে বেলকনি থেকে দেখলো, কাকামণি পুকুরঘাটে।
মুচকি হেসে ওইদিকে এগোলো সে।

*****
কাকামণির সাথে পুকুরে বড়শি ফেলে মাছ ধরতে ধরতে দীর্ঘ আলাপন শেষে যখন ঘরে আসলো,আরহাম তখনো ঘুমে।ঘড়িতে সময় দেখে ডাকতে গেলে আরহাম টান দিয়ে ফেলে টাওয়াল দিয়ে হাত পা বেঁধে ফেলেন।

হাফসা অসহায় দৃষ্টিতে বলে,’আমি কি করেছি?’

আরহাম কিছু না বলেই ওয়াশরুম চলে গেলেন।হাফসা চুপচাপ হয়ে আছে উনি কি রেগে গেলেন না কি!
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘ইটস ইউর পানিশমেন্ট।’

‘সরি।খুলে দিন প্লিজ।’

‘এতো টাইম নাই।’

হাফসা অসহায় চোখে তাকালো।এভাবে প্রতিশোধ নিতে হলো!

*****
আরহাম খাবার মুখে তুলে দিলে হাফসা মুখ সরিয়ে নেয়।আরহাম চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালে চুপচাপ খেয়ে নিলো।আজ বিকেলে বাড়িতে যাবে সবাই।

দূপুরের খাবার শেষে আম্মুসহ সবাই বাইরে হাঁটতে বের হলো।বেশ জায়গা জুড়ে বাগান-পুকুর।
আম্মু বড়শি হাতে নিতে আরহামও বড়শি নিয়ে বসলেন।
আম্মুর কৌটাতে যখন মাছের ছড়াছড়ি তখনও আরহামের কৌটা শূন্য।আর এ নিয়েই উনার দূই আহলিয়া গা জ্বালানো হাসি হাসছে।একসময় মাছ উঠতে উঠতেও যখন পড়ে গেলো তখন আর মাছ ধরার ইচ্ছে বেমালুম নাই হয়ে গেলো।উঠে আসার সময় আব্বু খোঁচা মেরে বললেন, ‘সব কাজ যদি শিখে নিতে তাহলে এরকম লজ্জা পেতে হতো না।’

আব্বুর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে আসলেন আরহাম।

বাকিরা তখন ঘরে ফিরেছেন।ঘাটের ব্রেন্চে তিনজনে গল্প করছিলেন।

মাইমুনা আরহামের কথা ব্যঙ্গ করে রিপিট করে বলে, ‘আমি আজকে এত্তগুলাআআআ ইলিশ তুলবো।’
আরহাম নিচুমুখে মুচকি হাসছেন।

(স্বামী স্ত্রী একসাথে বসে কথা বলা, খুনসুটি করা নফল নামাজ পড়ার চাইতেও উত্তম)

মাছ ধরার শখ জন্মের মতো ঘুচে গেছে উনার।রিদান একঝুড়ি ফল দিয়ে গেলো।সেগুলো ছিলে খাইয়ে দিচ্ছিলেন তাদের।হাফসা হঠাৎ উঠে গেলো।জিজ্ঞেস করতে বললো, ‘পানির তৃষ্ণা পেয়েছে।’

এদিকে ওয়াশরুম এসে বেসীনে পিঠ লাগিয়ে পাঁচ মিনিট যাবত দাঁড়িয়ে আছে।যা খেয়েছে, হজম হচ্ছে না।গলায় এসে আটকে আছে।খুব অস্বস্তিকর অনুভূতি।বের হয়ে দেখলো,আরহাম রুমে।

জিজ্ঞেস করলেন ‘এনি প্রবলেম?’

‘উঁহু।’

******
বাড়ি ফিরে ওয়াক্তের একটু আগেই মাগরিবের নামাজ আদায় করে ঘুম ভাঙ্গলো ইশার আযানের পর।নামাজ পড়ে নিচে নামতে আরহাম একগ্লাস অরেন্জ এগিয়ে দিতে দিতে বললেন,’ঘুম ঠিকঠাক?’

‘ইদানিং একটু বেশী ঘুমাচ্ছি তাই না?’

‘হ্যাঁ কেন?’

‘জানিনা।চোখ বুজলেই ঘুম পায়।’

টেনশন করছেন কিছু নিয়ে?’

‘হু?….উহু।’

‘সিওর?’

‘হুমম।’

******
পরদিন সকালে আরহাম যেতেই ফাইয়াজ এসে হাজির।তাকে নিয়ে এসছে আলফাজ।
দরজা খুলতেই আন্টিমণি বলে কোলে ঝাপিয়ে পড়ে।দরজার ওপাশে উল্টো হয়ে কাউকে দেখামাএই ফাইয়াজ কে নিয়ে মায়ের রুমে যেতে চাইলে লোকটা বলে উঠে, ‘এক গ্লাস পানি?’

56★

❝#অপেক্ষা❞
Maha Aarat
পর্ব-৫৬

হাফসা চুপচাপ মায়ের রুমে চলে আসে।ফাইয়াজ কে দিয়ে পানি পাঠানোর মিনিট দশেক পরে উঁকি মেরে দেখলো লোকটা নেই।চলে গেছে।পানিটাও খেলেন না পর্যন্ত।লম্বা হাইটের নীলাভ চোখের এ ছেলেটাকে ভীষণ ভয় পায় হাফসা।কেমন করে অদ্ভুত দৃষ্টিতে যেন তাকায়!

রাতে মাইমুনার ঘর থেকে ফিরে নিজের রুমে আসলেন আরহাম।এসে দেখলেন, হাফসা বসে আছে।জিজ্ঞেস করলে বলল,তেমন কিছু না।

****
আরহাম ফোনে কিছু একটা করছেন।হাফসা রুমে পায়চারি করছে, একটা বিষয় উনাকে না জানিয়ে শান্তি পাচ্ছে না।বলা কি ঠিক হবে?উনার তো ভাই!

হাত মোচড়ামুচড়ি করতে সাদা হাত লাল করে ফেলেছে, ঠোঁট কামড়ে ঠোঁট কেটে ফেলবে মেয়েটা।একঘন্টা থেকে উনার এ অবস্থা।ঘরময় হাটাহাটি করছেন আর সেই কখন থেকে কিছু একটা ভাবছেন।আরহামের মনোযোগ ফোনে থাকলেও আড়চোখে উমায়েরকে ফলো করছেন। এখন উনাকে যতই জিজ্ঞেস করা হোক,কি নিয়ে এত চিন্তায় সে!বলবেন না!তুমি বরং প্রশ্ন করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলবে। তবুও চুপই থাকবে সে।কিন্তু যখনই উনার মনে হবে,শেয়ার করা প্রয়োজন,তখন আর দেরি করবেন না।হাজার কাজ ফেলেও উনার কথা শুনতেই হবে।

আর ভাবতে পারলো না।নিউরনের তারে ব্যথা ধরে গিয়েছে।

আরহামের পাশে এসে বলল,’আচ্ছা শুনুন না!’

‘আচ্ছা বলুন না!’

‘আপনি মজা করছেন? আমি সিরিয়াসলি বলছি।’

‘আমিও সিরিয়াসলি শুনছি।’

‘আপনি গেম খেলছেন, আমার কথায় মনোযোগ নেই আপনার।’

আরহাম এবার ফোন টা রেখে গম্ভীর ভাবসাব নিয়ে বললেন, ‘বলুন।’

‘বলবো?’

‘হুমম।’

‘না থাক।’

বলে উঠতে চাইলে আরহাম ওকে টেনে এনে একেবারে সামনাসামনি বসিয়ে বললেন, ‘আপনার জন্য আমি ব্যাক করেছি।এখন বলতেই হবে।’

হাফসা ঢক গিলে বলে,’ও্ ও্ ওইযে আপনার ভাই আলফাজ?’

‘হু।’

‘উনি আমার দিকে কেমন জানি তাকান।’

‘কেমন?’

‘কেমন যেনো।বুঝি না ঠিক।আমাকে ফলো ও করেন বিকেলবেলা ছাদ থেকে কাপর আনতে যাই।তখন উনাদের ঘরের উনার রুমের জানালাটা খোলা দেখি।অথচ ওই সময় ছাড়া সবসময় জানালাটা বন্ধ থাকে।আর আজকেও..

আরহাম অন্যমনষ্ক হয়ে কিছু ভাবতে থাকলেন।হাফসা জিজ্ঞেস করলো,’ত তাকে কেমন জানি লাগে।অগোছালো।’

আরহাম চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনি ওর দিকে এত নিঁখুতভাবে তাকানোর কি দরকার?শুধু আমার দিকে তাকাবেন।যত মন চায় আমাকে দেখবেন।অন্য কোনো পুরুষের দিকে তাকাবেন না।’

‘তাকাই না তো।’

আরহাম কিছু বললেন না।তবে উনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে।চোখ মুখ শক্ত করে স্ট্যাচুর মতো বসে আছেন।হাফসা চুপচাপ নিচে নেমে এলো।বাই এনিচান্স,যদি রেগে যান,তাহলে উনার মাথা ঠিক থাকবে না!

৯২
আজ শুক্রবার।আরহামের পান্জাবির বোতাম লাগিয়ে মুখে মাস্ক পরিয়ে দিতে আরহাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘মাস্ক কেনো?’

হাফসা উত্তর দিলো, ‘আপনার সৌন্দর্যের জন্য আমার কোনো বোনদের যেনো চোখের গুনাহ না হয়।’

মুচকি হেসে কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি।

*****
দূপুরের খাবারের পর মায়ের কোলে শুয়ে আছেন আরহাম।হাদীস পড়ে পড়ে আম্মুকে শোনাচ্ছিলেন তখন ফাইয়াজ আসে।এতক্ষণ সে মাইমুনার রুমেই ছিলো।
মাইমুনার সাথে ওর ছবি এনে আরহামকে দেখাতেই আরহাম ওর সামনেই মাইমুনাকে ক্রপ করে কেটে দিলে, খিলখিলিয়ে হেসে উঠে ফাইয়াজ।

ফাইয়াজ আবার ফোন নিয়ে ছবি রিকোভার করলে আরহাম ফোন নিতে চাইলেন।কাড়াকাড়ির এক পর্যায়ে মাইমুনার হুয়াটসআ্যপ ওপেন হয়ে যায়।সামনের কনভারসেশনে চোখ পড়তে আরহাম ফোন নিয়ে বাইরে চলে গেলেন।

****
মাইমুনার ফোনে রুদ্রের ভয়েস আর কথোপকথন শুনে আরহামের শান্ত মেজাজ মুহুর্তেই বিগড়ে গেলো।বুঝতে বাকি রইলো না রুদ্রের হাফসাকে চিনার,দেখার একমাএ পথই ছিলো মাইমুনা।হাফসার ছবিও দেয়া হয়েছে, আনসেন্ট করা থাকলেও রুদ্রের রিপ্লাই দেখে বুঝা যাচ্ছে।রাগে ফোনটা সামনের দেয়ালে ছুড়ে ফেলে দিলেন। উনার এটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে যে,মাইমুনা বারেবার ইনডিরেক্টলি উনাকেই হার্ট করেন।হাফসাও তো উনার বেটার হাফ।হাফসার দূঃখে,কষ্টে,অসুবিধায় উনারও তো কষ্ট হয়।মাইমুনা এটা বুঝেন তারপরও?

মাইমুনার রুমে গিয়ে দেখলেন সে বই পড়ছে।আরহাম ভাঙ্গা ফোনের স্ক্রিনে রুদ্রের সাথের চ্যাট সামনে তুলে ধরতে ভয়ে দৃষ্টি অবনমিত হয় মাইমুনার।

আরহাম শুধু বিড়বিড়িয়ে বললেন,’ ‘দি ইজ টু মাচ!সেইম ওন ইউ মাইমুনা।’

বলে বেরিয়ে গেলেন।

মাইমুনা জানে,রুদ্রের চ্যাপ্টার এখন ক্লোজ।তাও আরহাম ক্ষমা করবেন না।কাটবে কাটবে বলে শেষ কনভারসেশন টা কাটা হয়নি,আর আরহাম ও কখনো কারো ফোন চেক করেন না।বিশ্বাস করেন বলেই তো চেক করেন না!কিন্তু তিনবছরের জমানো বিশ্বাস নিজের হটকারিতার জন্য এভাবে ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলো!

*****
আরহামের রুম গুচাচ্ছিলো হাফসা।আরহাম রুমে এসেও আবার চলে গেলেন কিছু না বলেই।কিন্তু হাফসার মনে হলো আরহাম স্বাভাবিক না।কিছু একটা হয়েছে।বাকি থাকা শার্টগুলো দ্রুত আয়রন করে উনাকে খুঁজতে খুঁজতে রুমে গিয়ে দেখলো, আরহাম চুপচাপ শুয়ে আছেন।

হাফসা বেশ কয়েকবার চেয়েও জিজ্ঞেস করতে পারলো না।অবশেষে আরহামের মাথার পাশে গিয়ে বসে জিজ্ঞেস করেই নিলো, ‘জেগে আছেন?’

আরহাম উত্তর দিলেন না হাফসা আবার প্রশ্ন করলো, ‘কিছু কি হয়েছে?’

……

‘ মন খারাপ?’

……

‘কি হয়েছে? বাসায় কিছু হয়েছে? ‘

…….

আরহামের কোনো কথারই জবাব দিলেন না।হাফসা হতাশ হয়ে উঠতে নিলে আরহাম ওর হাত চেপে ধরলেন। উঠে আধশোয়া হয়ে দূর্বলস্বরে বললেন, ‘বাকিদের মতো আপনি কখনও আমার বিশ্বাস ভাঙ্গবেন না উমায়ের।’

ইন শা আল্লাহ।এমন কিছুই হবে না কিন্তু কি হয়েছে বলুন?’

আরহাম কিছু বলতে চেয়েও থেমে গেলেন।জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা ওইদিন যেদিন রুদ্র ছিলেন ওইদিন একচুয়ালি কি কি হয়েছিল?আপনি কীভাবে ওইরুমে গেলেন প্রথম থেকে বলুন তো।’

হাফসা সবকিছু বলার পর আরহাম আহতসুরে বললেন, ‘আ’ম সরী।আমি আপনার পর্দার নিরাপত্তা দিতে পারি নি।’

‘আপনি কেন দূঃখিত হচ্ছেন?’

আরহাম কিছুসময় চুপ থেকে বললেন, ‘মাইমুনা এসব করিয়েছেন।’

হাফসা অবাক হয়ে বলল, ‘মানে?’

আরহাম সংক্ষিপ্ত করে সবকিছু বলতেই হাফসার মুখে আধার নামে।কোনো অভিযোগ করলো না,কোনো দোষারোপ করলো না,শুধু আক্ষেপের সুরে বলছিলো, ‘অথচ আমি আমার বোন ভাবতাম উনাকে।’

ওর চোখ ছলছল হয়ে উঠলো।আরহাম চেয়ে রইলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেকে সামলে বলে উঠলো, ‘আচ্ছা ব্যাপার না।মানুষ মাএই ভুল।আপু তো অনুতপ্ত।’

আরহাম তৎক্ষনাৎ হাফসাকে বুকের সাথে চেপে ধরে বললেন, ‘আমার জীবনে এমন কোন ভালো কাজের পুরষ্কার আপনি!জানি না!এত বেটার গিফট আমি ডিজার্ভ করতাম!আল্লাহর জন্য আপনাকে ভালোবাসি উমায়ের।’

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।