রাত পর্যন্ত রুমাইশার সাথে একটা কথাও বললেন না আয়েশা। রুমাইশা ও নিজের জেদ বজায় রেখে মায়ের সাথে কথা বলল না। ফোন টাও চাইতে গেলো না, এটা জেনেও যে সাফওয়ান অবশ্যই ওকে মেসেজ দিবে একবার না একবার৷ নিজের রুমেই ঠাই বসে রইলো।
আয়েশা ভেতরে ভেতরে রাগে ফুসতে লাগলেন। রুমাইশা প্রচুর প্রচুর জেদি। তবে সেটা খুব কম দেখায় ও। কিন্তু একবার দেখাইলে আর ওকে ঠেকানো যায় না।
আত্মসম্মান বোধ অনেক ওর। আজ পর্যন্ত কখনো ও এক জিনিস দুবার চায়নি কারো কাছে। না আয়েশার কাছে আর না শামসুলের কাছে৷ জেদির সাথে সাথে প্রচন্ডরকম অভিমানীও।
রুমাইশা যে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলেও আয়েশার সাথে কথা বলতে আসলো না, তাতেই আয়েশা বুঝে গেলেন যে মেয়ের মাথায় জেদ চেপেছে। খুব সহজে আর ও আসবে না আয়েশার সাথে কথা বলতে। আর সাফওয়ানের বিষয় টা নিয়েও খুব বড় রকমের ঝামেলা বাধাবে। এটা ভেবে আর ও রেগে রইলেন আয়েশা।
এর মাঝে সাফওয়ান মেসেজ দিয়ে না পেয়ে দু বার কল দিয়েছে রুমাইশার ফোনে। আয়েশা দেখেছেন, যদিও মেসেজ দেখতে পারেননি। লক স্ক্রিনে নোটিফিকেশন হাইড করে রেখেছে রুমাইশা। ফোনের ভেতরে না ঢুকলে মেসেজ দেখা যাবে না৷
আয়েশা ঠিক করলেন রাতেই শামসুল কে এই বিষয়ে জানাবেন তিনি। প্রথমে যদিও ভেবেছিলেন ব্যাপার টা নিজের মধ্যেই রাখবেন। কিন্তু রুমাইশার ভেতর কোনো অপরাধবোধ না দেখে মতামত বদলে ফেলেছেন তিনি।
৩০. রাতে খাবার টেবিলে খাবার গোছাচ্ছিলেন আয়েশা। তখন শামসুলের ফোনে কল এলো রুনিয়ার৷ শামসুল রুমে বসে অফিসের কিছু কাগজপত্র দেখছিলেন। রুনিয়ার কল দেখে রিসিভ করলেন তিনি।
রুনিয়ার আগের মিসডকল গুলো দেখেছিলান, কিন্তু পরে ফোন দিতে ভুলে গেছে৷ ফোন রিসিভ করার পর কুশল বিনিময় করে রুনিয়া বললেন,
— ভাই তোমার সাথে আমার খুব ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে৷ বিকেলে একবার ফোন দিয়েছিলাম আয়েশার কাছে, কিন্তু ও হয়তো তোমাকে বলতে ভুলে গেছে৷
শামসুল কাজ থামিয়ে বললেন,
— আমি ঘুম থেকে উঠে দেখেছিলাম তোর মিসডকল, কিন্তু পরে ব্যাক দিতে ভুলে গেছি। বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, কিছু এখন আর মনে থাকছে না।
শামসুলের কথায় কিঞ্চিৎ হাসলো রুনিয়া৷ শামসুল আবার বললেন,
— কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা আপা বল। সব ঠিক আছে তো? কোনো সমস্যা হয়েছে?
— হ্যা, সব ঠিক আছে। তোকে আমার একটা প্রস্তাব দেওয়ার আছে। আমি তোদের বাড়িতে এসে কথা গুলো বলতে পারলে ভালো হতো৷ কিন্তু এখন আর সময় নেই সেসবের তাই ফোনেই বলছি। আমার কথা গুলো ধৈর্য ধরে শুনবি। আগে থেকে হাইপার হবি না আমার কথা গুলো বোঝার চেষ্টা করবি।
শামসুল মনোযোগ দিয়ে শুনছেন বোনের কথা। রুনিয়া থেমে থেমে বলতে লাগলেন,
— আসলে কিভাবে বলবো বুঝতেছি না৷ তুই তো জানিস আমার সাফওয়ানের অবস্থা সম্পর্কে। ওর জীবন টা অন্য দশ টা মানুষের মতো স্বাভাবিক না৷ আমার ছেলের বয়স ত্রিশ পার হতে চলেছে, হতে চলেছে বললে ভুল হবে৷ হয়ে গেছে৷ আমার ছেলের তো বিয়ে দেওয়া অসম্ভব বলতে গেলে। কিন্তু আমি তো একজন মা, আমার তো ইচ্ছা হয় আমার ছেলের একটা বউ হোক, বাচ্চা হোক, সংসার হোক, সুখে শান্তিতে থাকুক বউ বাচ্চা নিয়ে৷ আর ও ছেলে মানুষ ওর ও তো একটা চাহিদা আছে, বয়স হয়েছে এখন। ওর ও তো একটু ভালোবাসার দরকার আছে, মন খুলে কথা বলার মতো একজন সঙ্গীর দরকার আছে।
— তা তুই এখন কি বলছিস, তোর ছেলের জন্য মেয়ে দেখে দিতে? আমার মেয়ে দেখতে কোনো সমস্যা নেই। সাফওয়ান আমার ভাগিনা, ওর জন্য তো আমি মেয়ে দেখলে সব থেকে ভালো মেয়েটাকেই খুজে বের করবো৷ কিন্তু আপা, তুই তো জানিসই বিয়ে দিতে হলে তো মেয়ের বাড়ির লোক ছেলে কে দেখতে চাইবে৷ আর সাফওয়ানের চেহারা তো আমরা যতদুর জানি স্বাভাবিক নেই। ওকে দেখে যে কেউ বুঝে যাবে ওর ভেতর গুরুতর কোনো সমস্যা আছে। তখন কি কেউ মেয়ে দিতে চাইবে? আর যদি চেহারা ম্যাটার না ও করে, যেহেতু সাফওয়ান মোটামুটি একটা জব করে, ভালো স্যালারি পায়, বা তোদের গাড়ি বাড়ি আছে, তারপর ও তো সমস্যা। সাফওয়ানের যে দাঁতে বিষ আছে সেটা যদি মেয়ের বাড়ির কেউ জানে তাহলে তো কখনোই কেউ মেয়ে দিবে না। আর যদি ইনফরমেশন গোপন রেখে বিয়ে দেওয়া হয়, তবুও তো সেই মেয়েটা একসময় না এক সময় জেনে যাবে। আর তা ছাড়া তার লাইফরিস্ক থাকবে নাইন্টি পারসেন্ট।
রুনিয়া কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন
— এসব সম্পর্কে আমিও ভেবেছি শামসুল। তাই আমি ভাবছিলাম যে, যেহেতু সাফওয়ানের ব্যাপারে আমাদের এই দুই পরিবার ছাড়া কেউ জানে না, আর তোরাও সাফওয়ানের ব্যাপার টা ভালো বুঝিস তাই, ভাবছিলাম যে ব্যাপার টা আমাদের নিজেদের ভেতরে হলে মন্দ হতো না৷
শামসুল শিরদাড়া সোজা করে ভ্রু কুঞ্চিত করে বললেন,
— নিজেদের ভেতরে বলতে তুই কি বলতে চাচ্ছিস? খুলে বল।
রুনিয়া অল্পসময় নিরব থেকে বললেন,
— আমি তোর মেয়ে কে চাই, আমার বড় ছেলের জন্য, সাফওয়ানের জন্য। সাফওয়ানের বউ করে নিতে চাই আমি রুমি কে।
শামসুল কাদের রেগে গেলেন প্রচণ্ড, উচ্চ কণ্ঠে বললেন,
— আপা তোর মাথা ঠিক আছে? তুই আমার রুমি কে কিভাবে তোর ছেলের বউ বানাতে চাস? তুই জানিস তোর ছেলে কেমন। আর ও কতটা ক্ষতিকর, যে কারো জন্য। আর যে ছেলে আমার মেয়ে কে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে ফেলেছিলো তার কাছে আমি মেয়ে দিবো? সবকিছু জেনে শুনেও? আমার মেয়ের কি এত টা আকাল পড়েছে যে শেষমেশ একটা জংলি জানোয়ারের সাথে আমার মেয়ে বিয়ে দিতে হবে?
শামসুল কে এইভাবে ফোনে চিল্লাতে দেখে আয়েশা ডাইনিং থেকে দ্রুত পায়ে গেলেন সেখানে। স্বামীর এমন অগ্নিমূর্তি দেখে বুক কেপে উঠলো আয়েশার। কিন্তু ফোনের ওপারে যে রুনিয়া আছে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না, কারণ শেষের কথা টা তিনি শুনে ফেলেছেন। আর জংলি জানোয়ার বলতে শামসুল কাকে বুঝিয়েছেন সেটাও বুঝলেন।
বাইরে বাবার উঁচু গলা শুনে রুমাইশা ও বেরিয়ে এলো। নিজের রুমের দরজার সামনে এসে দাড়ালো, মা দাঁড়িয়ে আছে তাদের রুমের দরজায়। রুমাইশা নিজের অবস্থান থেকেই বোঝার চেষ্টা করলো কি হচ্ছে।
শামসুলের কথা গুলো রুনিয়ার বুকে গিয়ে লাগলো একদম। তিনি উত্তর দিলেন,
— শামসুল, তুই কিভাবে সাফওয়ান কে এইভাবে বলতে পারলি? আমার ছেলে জংলি জানোয়ার! ও আমার সন্তান, আমি ওকে পেটে ধরেছি! আমি তোর বোন, ও তোর বোনের সন্তান! তুই ওকে এইভাবে বলতে পারলি? ও তো তোর সন্তানের ই মতো। ও যে রুমি কে খারাপ রাখবে এমন তো নয়, আমার ছেলে যথেষ্ট দায়িত্ববান। আর রুমি যে ও আঘাত করেছিলো যখন তখন ও নিতান্তই ছোট ছিলো, নিজের অবস্থা সম্পর্কে ওর কোনো ধারণা ছিলো না৷ ও যদি জানতো যে ও রুমাইশাকে এইভাবে মৃতপ্রায় করে ফেলবে তাহলে কি কখনো ওকে কামড়াতো ও?
— দেখ আপা, তোর খারাপ লাগবে এটাই স্বাভাবিক। আমি যা বলেছি সেটা মিথ্যা নয়। রুমি যদি তোর মেয়ে হতো, আর সাফওয়ান যদি আমার সন্তান হতো, তুই কি কখনো নিজের মেয়েকে এমন কারো সাথে বিয়ে দিতে চাইতিস বল? কখনো চাইতি না।
— আমি যদি দেখতাম যে সে আমার মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, কোনো ক্ষতি করছে না, খেয়াল রাখছে, ভালোবাসছে, তাহলে আমি অন্তত তার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মেয়ে কে তার হাতে তুলে দিতাম!
— না আপা, তুই দিতিস না। তুই এখন যে কথা গুলো বলছিস সেগুলো সব আবেগের কথা। তুই যদি সত্যি আমার জায়গায় থাকতি তাহলে কখনোই রাজি হতি না। আমি এই বিষয় নিয়ে তোর সাথে আর কোনো কথা বলতে চাই না। তুই আমার বোন, তোর সাথে আবার সম্পর্ক নষ্ট করতে চাই না আমি৷ রুমি কে ছেলের বউ করার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফ্যাল। আমি বেচে থাকতে এরকম কিছু হবে না, মনে রাখিস।
এই বলে কল কেটে দিলেন শামসুল। রুনিয়া কে দ্বিতীয় কোনো কথা বলার সুযোগ দিলেন না।
শামসুল কে কল কেটে দিতে দেখে আয়েশা এগিয়ে গেলেন সেদিকে৷ শামসুলের পাশে গিয়ে বসলেন। স্ত্রী কে পাশে পেয়ে শামসুল তেজী কন্ঠে বলে উঠলেন,
— আমার বোন আগেও যেমন স্বার্থপর ছিলো ছেলের জন্য, এখনো তাই আছে। নিজের ওই বন্য প্রাণী টাকে আমার মেয়ের ঘাড়ে চাপাইতে চাচ্ছে! মানুষ কতটা নিম্ন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে দিন দিন। আমার মেয়ের কিসে কমতি আছে যে ওইরকম একটা ছেলে কে বিয়ে করতে হবে ওকে?
রুমাইশা বাবার সমস্ত কথা শুনে ফেললো, সাফওয়ানের সাথে কথা বলার দরকার ভিষণ, কিন্তু ফোন টা তো মায়ের কাছে৷ মায়ের কাছে যে ফোন চাইবে সেই উপায় ও আর রইলো না, পরিস্থিতি এখন বেকায়দা। বাইরের দিকে আর এগোলো না ও। নিজের ঘরে ঢুকে দরজা দিয়ে দিলো৷
এদিকে আয়েশা রুনিয়ার এই ফোন কলের পর আর স্থীর থাকতে পারলেন না৷ আগুনে ঘী ঢেলে দিয়ে তিনি বললেন,
— তোমার বোনের চাল আমি এবার ধরতে পেরেছি। তোমার বোন যে তোমার আড়ালে কি নোংরা খেলা খেলছে তা তুমি ভাবতেও পারবে না।
আয়েশার কথাতে শামসুল নড়ে চড়ে বসলেন, জিজ্ঞেস করলেন,
— চাল চালছে বলতে কি বোঝাতে চাইছো তুমি?কি করেছে ও?
আয়েশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে চাপা কণ্ঠে বলে উঠলো,
— ছেলেকে লেলিয়ে দিয়েছে আমার মেয়ের পেছনে, যাতে ওর ছেলের অনায়াসেই বিয়ে হয়ে যায় আমার মেয়ের সাথে৷
তারপর শামসুলের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
—সাফওয়ান কে আমি আজ ভোর বেলা বের হতে দেখেছি রুমির ঘর থেকে। সারারাত সে এখানেই ছিলো, রুমির কাছে।
আয়েশার কথায় যেন শামসুলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো! থম মেরে বসে রইলেন তিনি।
আয়েশা আর ও বললেন,
— তোমার মেয়ে কে ধরেছিলাম আমি বিকেলে, কিন্তু তার অপরাধবোধ তো নেই-ই, উল্টো আমার সাথে গলা চড়িয়ে কথা বলছে তোমার মেয়ে৷ বলছে নাকি ভালোবাসে! আমাদের সবার চোখ ফাকি দিয়ে তোমার মেয়ে তোমারই বাড়িতে এই সমস্ত করছে! ওর সাহস কত টা বেড়ে গিয়েছে সে সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই৷
আয়েশার কথা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো শামসুলের। মেয়ের এহেন অধঃপতন মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তার মেয়ে যে কিনা স্কুলের ছেলে বন্ধুদের সাথেও কখনো কথা বলতে চাইতো না সে কিনা আজ একটা ছেলের সাথে তার ই বাড়িতে…… আর ভাবতে পারলেন না শামসুল। বুকের ভেতর যেন ব্যাথা কুন্ডুলি পাকিয়ে ঠেলে ঠেলে উঠছে। তার মেয়ে এত টা নীচে নেমে গেলো কিভাবে!
আয়েশার দিকে তাকিয়ে রুমাইশা কে ডাকার জন্য নির্দেশ দিলেন তিনি।
আয়েশা স্বামীর নির্দেশ মতো গেলেন রুমাইশা কে ডাকতে। রুমাইশা নিজের রুমে বসে ছিলো চুপচাপ। ওর মনটা এমনিতেই ভালো নেই। মাথায় সারাক্ষণ ঘুরছে সাফওয়ানের পরিণতির কথা। বেশি সময় নেই ওর হাতে, ওর শেষ সময় গুলো যেখানে খুব সুন্দর করে কাটানোর কথা সেখানে ওর সমস্ত দিন গুলো খারাপ কাটছে। কাউকে বোঝাতেও পারছে না নিজের মনের অবস্থা টা!
তার ওপর আবার বিকেল বেলা মায়ের এমন ব্যাবহার! ও বুঝতে পারছে ও যেটা করেছে সেটা মোটেও ঠিক হয়নি। কোনো মা বাবাই এটা মেনে নিবে না! কিন্তু ও কে তো বিশ্বাস করা উচিত ছিলো মায়ের। ও কেন ওর মাকে মিথ্যা বলবে? যেখানে ওর মা দেখে ফেলেছে সাফওয়ান কে বের হতে, সেখানে তো ওর মিথ্যা বলার আর কোনো অবকাশ নেই, এটা মা বুঝলো না!
ভাবনা চিন্তার ভেতরেই দরজায় টোকা পড়লো। বাইরে মায়ের গলা শোনা যাচ্ছে, আয়েশা ঝাঝালো গলায় বলছেন,
— রিমু, দরজা খুলে বাইরে আয়, তোর বাবা ডাকছেন।
বাবা ডাকছেন শুনে রুমাইশার বুক কেপে উঠলো,
কাল রাতের কথা মা কিছু বলে দেয়নি তো আবার!
ধীর পায়ে গিয়ে দরজা খুলে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
— কেন? বাবা হঠাৎ ডাকছে কেন?
আয়েশা মুখ থমথমে রেখেই বললেন,
— আমি জানিনা, গিয়ে শুনে আয়।
বলে আয়েশা আবার রুমে চলে গেলেন৷
মায়ের বলার ধরণ আর মুখের অভিব্যক্তি দেখে রুমাইশা যা বোঝার তা বুঝে গেলো। চোখ দুইটা বন্ধ করে বড়ো একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে বাবার সামনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে সামনে এগোলো।
ধীর পায়ে শামসুল দের রুমে গিয়ে শামসুলের সামনে গিয়ে দাড়ালো ও।
শামসুল ওর দিকে ঠান্ডা স্থীর দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছেন৷
বাবা কোনো কথা বলছে না দেখে রুমাইশা কিছুক্ষণ ইতস্তত করে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলো,
— ডেকেছো কেন বাবা, কিছু বলবে?
শামসুল শক্ত গলায় বললেন,
— তোর মা যা বলছে তা সত্যি?
— কি বলছে মা?
শামসুল কোনো উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে আছেন শুধু। বাবাকে এইভাবে তাকাতে দেখে রুমাইশা বলল,
— মা কি বলছে তা তো আমি শুনিনি, না শুনলে আমি কিভাবে বলবো মা যা বলছে তা সত্যি কিনা?
শামসুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে আগের মতো করেই জিজ্ঞেস করলেন,
— কাল রাতে সাফওয়ান তোর সাথে ছিলো?
রুমাইশা শামসুলের দিক থেকে চোখ নামিয়ে উত্তর করলো,
— জ্বি, ছিলো। কিন্তু আমাদের মাঝে অবৈধ কিছু হয়নি।
শামসুল যেন অগ্নিমূর্তি হয়ে গেলেন। রাগী গলায় তিনি বলে উঠলেন,
— আর তোর কথা আমার বিশ্বাস করতে হবে? এতটা অধঃপতন হয়েছে তোর চরিত্রের? আবার আমার সামনে এসে বড়ো গলায় কথা বলছিস তুই! আমাদের সম্মানের কথা একবার ও ভেবেছিস তুই? এই কথা লোক জানাজানি হলে কি হবে সে সম্পর্কে তোর কোনো ধারণা আছে? আর সাফওয়ান যে মায়ের সাথে মিলে তোর সাথে অভিনয় করছে শুধু মাত্র নিজের বৈবাহিক দিক টা রক্ষা করার জন্য সেটা কি তুই জানিস? সাফওয়ান তোকে ব্যাবহার করছে শুধু সমাজে টিকে থাকার জন্য। ওর শারিরীক অবস্থা কেমন সেটা সম্পর্কে তোর এতদিনে অবশ্যই ধারণা হয়ে গেছে। ও শুধু তোকে ব্যাবহার করছে নিজের স্বার্থে। নিজের জংলিপনা যেন মানুষ জানতে না পারে এই জন্য তোকে ভিকটিম বানিয়েছে ওরা।
রুমাইশা এবার শামসুলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— কারো সম্পর্কে না জেনে শুনে এইভাবে তুমি বলতে পারো না বাবা। সাফওয়ান তো নিজের ইচ্ছায় এই জীবন চুজ করেনি। ও যদি জানতো ওর জীবন এমন হবে তাহলে কি ও এই জীবন বেছে নিতো? আর ও অভিনয় করছে কি, সত্যি ভালোবাসে সেটা আমার থেকে বেশি তোমরা কেউ জানো না, আর তোমাদের কে আমি জানাতেও চাই না৷ আর আমি ওকে ভালোবাসি। তাই ভালো হয়, তুমি রুনিয়া ফুপ্পির দেওয়া প্রস্তাব টা মেনে নাও৷
রুমাইশার কথায় আয়েশা একেবারে রেগেমেগে আগুন হয়ে গেলেন,
— তুই কতোটা নির্লজ্জ হয়ে গেছিস তা তুই ভাবতে পারছিস? রুনিয়া আর ওর ছেলে মিলে তো তোর খুব ভালো ভাবে ব্রেইন ওয়াশ করেছে দেখছি! নিজের বাবা মা কে তুই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছিস! কোথাকার কোন বুনো পশুর জন্য!
সাফওয়ান কে বুনো পশু বলায় ফুসে উঠলো রুমাইশা।
— মা! ও-ও একজন মানুষ, বার বার ওকে বুনো বুনো বলা বন্ধ করো! ওর এই অবস্থা কেন হয়েছে কিভাবে হয়েছে সেটা তোমাদের জানতে বাকি আছে বলে আমার মনে হয় না৷ ও কতটা অসহায় সে সম্পর্কে তোমাদের কোনো ধারণা আছে? না জেনে একটা মানুষ কে তোমরা এই ভাবে জাজ করতে পারো না!
শামসুল আর সহ্য করতে পারলেন না৷ উঠে এসে রুমাইশার গালে ঘর কাপিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। তারপর নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে আবার ফোন করলেন রুনিয়ার কাছে। নিজের বোনের করা এমন ষড়যন্ত্রের জবাব চাইবেন তিনি৷