পরিজান

গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় কে আশ্রয় কেন্দ্র বানানো হয়েছে। এখানে সবাই তাদের মালপত্র নিয়ে কোন এক স্থানে ঘাপটি মেরে থাকছে। গত পাঁচদিনে আফতাব উদ্দিন কিছু কিছু খাবার দিয়েছে সবাইকে তাছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকেও সাহায্য করা হচ্ছে অসহায় মানুষদের। নৌকা থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে নামতেই নাঈম সহ সবাই হা হয়ে সবটা দেখতে লাগলো। এই গ্রামের সবকিছুই অদ্ভুত ধরনের। এমনকি জমিদার বাড়িটাও। অদ্ভুত ধরনের জিনিসপত্রের ভরপুর বাড়িটি। ওরা যতক্ষণ ওবাড়িতে ছিল ততক্ষণ ধরে শুধু দেখেই যাচ্ছিল।
সবাই ওদের দেখেই বুঝতে পারল যে ওরা শহুরে ডাক্তার। গায়ে সাদা রঙের এপ্রোন জড়ানো বিধায় চিনতে সুবিধা হয়েছে। খাটো মোটা করে একজন লোক এগিয়ে এলো ওদের দিকে। ঘুরে ফিরে সবাইকে একপলক দেখে নিয়ে বলল,’আহেন আপনারা,ওদিক থেকে শুরু করেন।’
নাঈম সায় জানিয়ে লোকটার পিছু পিছু গেল। একপাশে কাঠের টেবিল ও চেয়ার পাতা হয়েছে। মিষ্টি চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো। এটুকু তেই হাঁপিয়ে গেছে। চারপাশে চোখ বুলিয়ে নাক সিটকে সে বলে উঠলো,’এই নোংরা জায়গায় থাকতে হবে এখন। আমার তো বাবা বমি আসছে। ইচ্ছা করছে এখুনি ঢাকা ফিরে যাই।’

পালক নিজের চেয়ারটাতে বসতে বসতে বলল,’তা হচ্ছে না কন্যা। স্যার তো বলেই দিয়েছে আমাদের এখানেই থাকতে হবে। এতে তোর বমি আসলে করে ফেল। তোকেও রোগি বানিয়ে এখানে ভর্তি করিয়ে দিবো।’

নাঈম স্টেথোস্কোপটা গলায় ঝুলিয়ে ব্যাগ থেকে খাতা কলম বের করতে করতে বলল, ‘তাড়াতাড়ি কাজ শেষ কর তাহলে তাড়াতাড়ি ফিরতে পারবি।’
শেখর নিজের ব্যাগ খুলতে খুলতে বলল,’হ্যা আর তাড়াতাড়ি পরীকে দেখতে পারবো।’
রুমি শেখরের মাথায় গাট্টা মেরে বলল,’পরীর চক্করে যেন ভুলভাল চিকিৎসা করিস না তাহলে তুই শেষ।’
ওরা ছয়জন কাজে লেগে পড়লো। লাইন ধরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। নাঈম চেয়ার পেতে বসে আছে আর একেকজনের সমস্যার কথা শুনছে আর ওষুধ লিখছে। শেখর আর আসিফ ওষুধ দিচ্ছে। আর মেয়েদের চিকিৎসা করছে রুমি মিষ্টি আর পালক। কারণ এখানকার মেয়েরা পুরুষ ডাক্তারদের কাছে আসতে অস্বস্তি বোধ করে তাই এরকম ব্যবস্থা করা। তবে লোকসংখ্যা দেখে মনে হচ্ছে আজকে রোগি দেখে শেষ করতে পারবে না। ইতিমধ্যে বিকাল গড়িয়ে এসেছে।

হঠাৎ করেই নাঈমের চোখ গেল ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা সম্পানের দিকে। কিছু একটা ভেবে নাঈম তার নিজের জায়গায় আসিফকে বসিয়ে উঠে গেল। সম্পানের সামনে গিয়ে দাড়াতেই এক গাল হাসলো সম্পান। বিনিময়ে নাঈম ও মুচকি হাসি উপহার দিলো সম্পানকে। বলে উঠলো,’কি অবস্থা?? তুমিও কি এখানে থাকো??’

‘না বাবু!! আমার কি একখানে খাড়ানের সময় আছে। নাও নিয়াই পইড়া থাহি। মেলা কাম আমার। পুরা পদ্মাই আমার বুঝছেন।’

সম্পানের কথায় হাসলো নাঈম। অদ্ভুত ভাবে সেই হাসি অবলোকন করে সম্পান। শহরের লোক হওয়ায় অন্যরকম দেখতে নাঈম। চুলগুলো কি সুন্দর!!গায়ের রং ও ফর্সা। পরনের পোশাকআশাক বলে দেয় ছেলেটা বড় ঘরে জন্মেছে। সেখানে সম্পান নিন্তান্ত চুনোপুঁটি। আয়নায় নিজের চেহারা না দেখলেও প্রতিদিন নদীর পানিতে নিজের চেহারা দেখে সে। মাথায় ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল শ্যামলা গায়ের রং আর পরনের পোশাক তো সবসময় নোংরা থাকে। এভাবে কি তাকে সুন্দর দেখাবে? সুন্দর দেখাতে হলে আগে তাকে সুন্দর পোশাক পড়তে হবে। নাঈমের মতো চুলগুলোর যত্ন করতে হবে। কিন্তু ওসবের ক্ষমতা নেই সম্পানের। পরের নৌকা চালিয়ে যা পায় তাতে তো সংসার ঠিকমতো চলে না। তার উপর এই সর্বনাশা বন্যা সব শেষ করে দিলো। ঘরবাড়ি সব ডুবিয়ে দিয়েছে। এখন ওর পরিবারের ঠাঁই হয়েছে নিজের আধভাঙ্গা নৌকা খানিতে। ফুটো দিয়ে পানি ঢুকতেই থাকে অনবরত আর ওর মা পানি ফেলতে ফেলতে হয়রান হয়।
সম্পানকে ভাবতে দেখে নাঈম হাল্কা ধাক্কা দিলো সম্পানকে,’কি ভাবছো??’

সম্পান হেসে বলল,’না কিছু না!’
নাঈম এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল কেউ আছে কি না!সম্পানকে একপাশে টেনে নিয়ে আস্তে করে বলল,’তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব সত্যি সত্যি বলবে?’

‘কি কথা??’
খানিকটা ইতস্তত করে নাঈম বলল, ‘জমিদারের মেয়ে পরীর সম্পর্কে বলতে পারবে??’
মুহূর্তেই সম্পানের চেহারায় আধার নেমে এলো। হাসি মুখখানি তে ভয়ের ছাপ দেখা দিলো। সে মাথায় হাত রেখে বলল,’ঠাকুরের দিব্যি বাবু আমি পরীর কিছুই জানি না। আমারে এইসব জিগাবেন না। আমি কইতে পারুম না।’
কথা শেষ করে সম্পান চলে যেতে চাইলে নাঈম ওর হাত খপ করে ধরে ফেলে। অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,’এতো ভয় পাচ্ছো কেন তুমি?কি আছে ওই পরীর মাঝে যে এতো ভয় পাও তুমি? আমাকে নির্ভয়ে বলতে পারো। আমি কাউকে বলবো না।’
কিন্তু সম্পান বলতে নারাজ। নাঈম অনেক জোরাজুরি করতে লাগলো। শেষে সম্পানকে বলতেই হলো পরীর সম্পর্কে।

‘পরী আমাগো জমিদারের ছোট মাইয়া। আপনারা পরীগো বাড়িতেই গেছেন। পরীর মা বাপে অনেক শাসন করে ওরে। সবসময় ঘরের ভিতরে বইসা থাকে বাড়ি থেকে বাইর হয় না একটুও।’

মনোযোগ দিয়ে সম্পানের কথাগুলো শুনলো নাঈম তারপর বলল,’কেমন দেখতে পরী? তুমি কি কখনো ওকে দেখেছো?’
হাসলো সম্পান। হাত নাড়িয়ে বলল,’আমি ক্যান বাবু এই গাঁয়ের কোন বেডা মাইনষেও পরীরে দেহে নাই। আমি দেখমু কেমনে?’

‘কারো কাছে শোননি পরী কেমন দেখতে?’

‘হ,বিন্দু কইছিলো পরী নাকি মেলা সুন্দর। এর বেশি তো জানি না।’

সন্দেহ ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে নাঈম বলল,’ব্যাস এটুকুই? এটুকু বলতেই এতো গলা কাঁপছে তোমার? আমার মনে হয় তুমি সব কথা বলো নি।’

এবার সম্পান আর দাঁড়ালো না। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেল ঘাটে। দ্রুতপদে চেপে বসলো নৌকায়। নাঈম শান্ত চাহনিতে সম্পানের চলে যাওয়া দেখলো। নাঈমের মনে হচ্ছে সম্পান কিছু লুকাচ্ছে। কিন্তু কি??জানতে হবে ওকে। তবে সবার আগে পরীকে দেখার প্রয়োজন। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের কাজে মন দিলো সে।

মাগরিবের আজান পড়েছে ঘন্টাও হয়নি। ওযু করে একসাথে নামাজ আদায় করলেন জেসমিন ও মালা। মোনাজাতে মন ভরে দু’জনে দোয়া করল এই গ্রামের সকল মানুষের জন্য। যে বন্যা দেখা দিয়েছে মনে হচ্ছে গ্রামকে পুরোপুরি গ্রাস না করা পর্যন্ত থামবে না। জায়নামাজ ভাজ করে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে বের হতেই মালা দেখলেন পরী বড়বড় পা ফেলে রান্না ঘরের দিকে এগোচ্ছে। কৌতূহল নিয়ে মালাও এগোলেন সেদিকে। রান্না ঘরে উঁকি দিতেই দেখলেন থালা ভর্তি ভাত নিয়ে খেতে বসেছে পরী। বড়বড় ভাতের দলা মুখে পুরছে আর কাঁচা মরিচে কামড় বসাচ্ছে। ঝালে ঠোঁট দুটো লাল হয়ে গেলেও পরী খেয়েই যাচ্ছে। সামনেই জ্বলছে হারিকেন। হলুদ আলোয় পরীর চেহারায় লাল আভা দেখা যাচ্ছে। মালা বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখল মেয়েকে। এক পা ভাঁজ করে আরেক পা মেলে দিয়ে মেঝেতে বসে খাচ্ছে পরী। গায়ের ওড়না অপরাধির ন্যায় পাশে পড়ে আছে। মালা হাজার চেষ্টা করেও পরীকে বোঝাতে পারে না যে সভ্যতা কাকে বলে। কিভাবে চলতে হয়,খেতে হয়,কথা বলতে হয়!এই নিয়ে দুঃখের শেষ নেই মালার। পরীর জন্য শ্বাশুড়ির কাছেও কথা শুনতে হয়। শ্বাশুড়ি পরীর সাথে পেরে ওঠে না বিধায় মালাকেই কথা শোনায়। এই মেয়েকে নিয়ে মালা আর পারছে না।
মালা রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থেকেই বলে উঠলো,’এই সাঁঝের বেলা খাইতে বইলি যে?’

মুখ তুলে একবার মা’কে দেখে নিলো পরী তারপর আবার খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে বলল, ‘দুপুরে কিছু খাই নাই। তাই খিদা লাগছে।’

‘তোরে কতবার কইছি এইরম ভাবে খাইতে বইবি না। ওড়না ঠিক কর তাড়াতাড়ি!’

মায়ের কড়া চাহনিতে পরী ওড়না তুলে গলায় ঝুলায়। তারপর গপাগপ খেতে খেতে বলে, ‘আমার ঘর খালি হইছে নাকি?হেরা গেছে?’

মালা গম্ভীর কন্ঠে বলে,’হ গেছে। তুই তো থাকতে দিবি না।’

কিছু একটা ভেবে পরীর খাওয়া হঠাৎ থেমে গেল। চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,’আমার সোনা আপার ঘরে থাকতে দিছেন?’

‘তোর সোনা,রুপা আপার ঘরে থাকতে দেই নাই। এহন খা জন্মের মতো। পেট না ভরলে আমারে খা।’
মালা রাগে ফুস ফুস করতে করতে চলে গেলেন। পরী তা দেখে হাসলো। দরজার দিকে উঁকি দিয়ে মায়ের যাওয়া নিশ্চিত করে গায়ের ওড়নাটা আবার ফেলে দিলো সে। শান্তি মতো বসে খেতে না পারলে পেট ভরে না পরীর।

নাঈমরা ফিরল সন্ধ্যার পর পরই। এসেই যার যার ঘরে চলে গেল। সন্ধ্যা থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। রাতে জোরে বৃষ্টি নামবে বোধহয়।
রুমিদের ঘর আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। পরীর যে মেজাজ তাতে ওদেরও মন সায় দিলো না দ্বিতীয় বার ওই ঘরে পা ফেলার।

একটু রাত করেই বাড়িতে ফিরলেন আফতাব উদ্দিন। প্রায় তিনদিন পর বাড়িতে এসেছেন তিনি। সাথে ওনার ছোট ভাই আঁখির উদ্দিন ও এসেছেন। তবে সে অন্দরমহলে ঢুকতে পারলেন না। কারণ আফতাব ছাড়া অন্দরমহলে কোন পুরুষ প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই প্রথা শুধুমাত্র পরীর জন্য নয়। এটা ছিল পরীর মা মালার জন্য। আফতাব যেদিন মালা কে বিয়ে করে ঘরে তোলেন সেদিনই সবাই মিলে নববধূ দেখার জন্য আসে। মালাকে দেখে সবাই সেদিন হা হয়ে গিয়েছিল। অন্যান্য পুরুষেরা কুনজর দিয়েছিল মালার উপর। সুন্দরের দিকে সব মানুষের চোখ আটকে যায় কিন্তু সবাই সুন্দর নজরে তাকাতে পারে না কারো কারো নজরে নিকৃষ্টতা মেশানো থাকে। তবে মালার দিকে সর্বপ্রথম নোংরা নজরে দেখে আফতাবেরই ভাই আঁখির। সেটা কয়েকদিনের মাথায় ঠিকই বুঝতে পেরেছিল আফতাব। সেজন্য মহিলা অন্দরমহলে তিনি ব্যতীত অন্য পুরুষের ঢোকা নিষেধ করে দিয়েছিলেন আফতাব। পরে যখন ওনার তিন মেয়ের দিকে তাকান একই ভাবনা আসে ওনার মাথায়। কেননা মালা একটি নয় তিন তিনটা পরী জন্ম দিয়েছে। ছেলেদের বদ নজর আর মেয়েদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আফতাব।

যেই মালার জন্য এতকিছু করল আর সেই মালাকে ফেলেই আরেকজনকে বিয়ে করে ঘরে তুলল আফতাব সেটাই বুঝতে পারে না পরী। বেশি ভালোবাসায় মরিচা ধরে নষ্ট করে দেয় সেই ভালোবাসা। এই ভেবেই পরীর মনে আগুন জ্বলে সবসময়। শুধু পরী কেন এজন্য সোনালী আর রুপালি ও বাবাকে অপছন্দ করে। তবে তা প্রকাশ করে না কেউই।

কাজ শেষে আফতাব আসতেই তার দুই বিবি এগিয়ে গেলেন। জেসমিন হাত মুখ ধোয়ার পানি এগিয়ে দিলেন আর মালা গেলেন খাবার আনতে।

তিমির নিশাকালে ঘুটঘুটে অন্ধকার ছেয়ে আছে চারিদিকে। বৃষ্টির শব্দ আর ব্যাঙের ডাক ভেসে আসছে। গুমোট ভাবটা এতে কাটছে কিছুটা। কিন্তু এই সময়টাতে যেন চারিদিকে ভয় ছড়িয়ে পড়েছে। রাত বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টির তান্ডব যেন বাড়ছে বৈ কমছে না। কালকে সকালে না জানি কতটা পানি বাড়ে?এই জন্য ঘুম আসছে না মালার। পাশেই জুম্মান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আফতাব আজকে জেসমিনের ঘরে ঘুমিয়েছে তাই জুম্মান আজকে বড় মায়ের সাথে ঘুমাচ্ছে। মালা অনেক রাত পর্যন্ত এপাশ ওপাশ করলো। চোখটা সবে লেগে এসেছে অমনি কারো গলার আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল। তড়িঘড়ি করে মালা বাইরে এসে বোঝার চেষ্টা করলো যে কে এমনভাবে চিল্লাচ্ছে। তবে বাইরে এসে বুঝতে পারলো এটা কুসুমের গলা।
নিচ তলার বারান্দায় সে এদিক ওদিক হারিকেন নিয়ে দৌড়াচ্ছে আর জোরে জোরে বলছে,’কেডা কোথায় আছো গো ঘরে চোর আইছে চোর।’
মালা ভীত হয়ে দৌড়ে এলো নীচ তলায়। ততক্ষণে জেসমিন ও আফতাব বের হয়ে এসেছেন।
কুসুমের গলার স্বরে সবার আগে পালকের ঘুম ভাঙল। রুমি আর মিষ্টি কেও ডেকে তুলল। ঘটনা জানতে ওরা ঘর থেকে বের হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। ওখান থেকে নীচ তলার উঠোন স্পষ্ট তবে অন্ধকারে এখন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আফতাব এগিয়ে এসে বললেন,’কি হয়েছে কুসুম?’
কুসুম হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,’কর্তাবাবু ঘরে চোর আইছে গো চোর।’
মালা ঘোমটা টেনে এগিয়ে এসে বললেন,’কস কি?কি কি চুরি করছে?’

কুসুম হাল্কা হেসে বলল,’পরী আপা থাকতে চুরি করব কেমনে?বেডারে মাইরা ভর্তা বানাইয়া দিছে।’
মালার চোখ কপালে। অন্ধকারের মধ্যে পরীকে খুঁজতে লাগলো মালা। কুসুম ছাতা মালার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,’ওই যে উঠোনে পরী আপা। এতক্ষণে বেডারে বাইন্ধা ফালাইছে।’
বলেই মুখে হাত দিয়ে হাসলো কুসুম। হারিকেন হাতে নিয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে আফতাব আর মালা এগিয়ে গেল উঠোনের কোনে। বড় পেয়ারা গাছের সাথে লোকটার হাত দুটো বাধছিলো পরী। লোকটার পুরো মুখে গামছা পেঁচানো এতে চেহারা দেখা যাচ্ছে না। পরী আর লোকটা সম্পূর্ণ ভিজে গেছে। মোঠা লাঠিটা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো পরী। আফতাবের দিকে তাকিয়ে বলল,’চোর ধরা শ্যাষ আর আপনে অহন আইলেন?যাক গে কাইল ওর বিচার কইরেন। আইজ রাইত ভর এইহানে বৃষ্টিতে ভিজুক।’

আফতাব গোমড়া মুখে তাকালেন পরীর দিকে। অনেক কিছুই বলতে চাইছে তিনি কিন্তু রাত বেশি হওয়ায় আর কথা বাড়ালেন না তিনি। পরীকে ঘরে যেতে বললেন।

উপরে দাঁড়িয়ে সবই শুনলো রুমি মিষ্টি ও পালক। এখন ওরা ভয় পাচ্ছে খুব। যদি নাঈম শেখর বা আসিফের মধ্যে কেউ একজন হয়? ভাবতেই গলা শুকিয়ে এসেছে তিনজনের। পালক ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলে, ‘কোন চোর ধরেছে পরী?নাঈম তো বলেছিল আজকে পরীকে দেখতে অন্দরমহলে আসবে। তাহলে ওরা পরীর হাতে ধরা পড়ে গেল?’

রুমি নখ কামড়াতে কামড়াতে বলল,’এই মেয়েটা তো খুব ভয়ানক রে। অন্ধকার ওকে কাবু করতে পারে না বরং অন্ধকার ওকে দেখে কাবু হয়। নাহলে এই অন্ধকারে কি করে একটা মানুষকে মারতে পারে?’
এবার মিষ্টিও ভয় পেল খানিকটা। কোন বিপদ হবে না তো? তখনই পরীকে আসতে দেখা গেল। তবে হারিকেনের আলোয় পরীর হাতের লাঠির মাথায় রক্ত দেখল ওরা। এতে ওদের ভয় আরো বেড়ে গেল। পরী ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,’আপনেরা ভয় পাবেন না। পরী থাকতে অন্দরমহলের কোন মাইয়ার গায়ে কেউ হাত দিতে পারে নাই আর পারবেও না কোনদিন। আপনেরা অহন ঘুমাইতে যান। কাইল বিচার হবে তখন সব দেখতে পারবেন।’

বলেই পরী চলে গেল। কিন্তু ওদের ঘুম কি আদৌ আসবে?বড়সড় একটা চিন্তা ওদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কোন মতে নাঈমা বা শেখর যদি হয় তাহলে ওদের মানসম্মান সব শেষ।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.