সকালের স্নিগ্ধ বাতাসে গাছের পাতার সাথে উড়ে বেড়াচ্ছে পরীর আঁচলও। তুর্য একটু বাহিরে গেছে। বিয়ের পাঁচদিন হয়ে গেছে। মেহবান সবাই সবার বাড়ি চলে গেছে। নানী, মেঘলা আপু, তার বাবু, তিথি আর প্রান্ত আছে শুধু। আজ বিকেলে তিথি আর প্রান্তও চলে যাবে। তুর্যর ছুটি আছে আর দু’দিন। যদিও এর মধ্যেই হানিমুনে যাওয়ার কথা বলেছিল তুর্য। কিন্তু সপ্তাহ্ খানেক পর অফিস থেকে তুর্য একটা লম্বা ছুটি পাবে। তাই পরী সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঘুরতে গেলে লম্বা সময় নিয়েই যাবে। তাই আপাতত হানিমুনের প্ল্যান কেন্সেল করেছে দুজনে। বাড়িতে সবাই ভীষণ ভালো। সবার সঙ্গে পরীর ভাব জমে গেলেও ভাব জমাতে পারেনি শ্বাশুরীর সাথে। তিনি পরীর সাথে কোনো রাগারাগি করেন না, বকাবকিও করেন না। কোনো কাজও করতে দেন না। শুধু সমস্যা একটাই তিনি পরীর সাথে কোনো কথা বলেন না। পরী যতই গায়ে পড়ে কথা বলুক না কেন তিথি এড়িয়ে যাবেন। তবে পরী হাল ছাড়েনি। কতদিন রাগ করে থাকে দেখা যাবে। মায়ের কথাও মনে পড়ছে খুব। যদিও একটু আগেই কথা হয়েছে। কিন্তু কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। বাবাকেও দেখা হয় না কতদিন। মনে হচ্ছে কয়েক বছর বুঝি পার হয়ে গেছে।
“এই পাখি।”
পেছন থেকে বলে তুর্য। পরী তাকিয়ে বলে,
“এসে পড়েছ এত তাড়াতাড়ি।”
একটা আইসক্রিম পরীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ঘরে সুন্দরী বউ রেখে বাইরে কি আর মন টেকে?”
পরী কনুই দিয়ে তুর্যকে গুঁতো দিয়ে বলে,
“সবসময় শুধু ফাইজলামি।”
‘আউচ’ করে শব্দ করে তুর্য। বলে,
“এত উদাসীন হয়ে কী ভাবছিলে?”
“বাড়ির কথা ভাবছিলাম।” আইসক্রিম খেতে খেতে জবাব দেয় পরী।
“বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে?”
“হুম।”
“চলো ঘুরে আসি।”
“বলো কী? আম্মু শুনলে রাগ করবে না?”
“রাগ করার কী আছে? তিথি যে বিয়ের পরই আমাদের বাসায় চলে আসলো। ওর শ্বাশুরী তো কিছু বলেনি।”
“তোমার বিয়ে ছিল বলেই বলেনি।”
“অত কথা বাদ। আমি গিয়ে মাকে বলতেছি। বিকেলে প্রান্ত আর তিথির সাথে আমরাও বের হব।”
“না, থাক। দরকার নেই।”
মুখে না বললেও মনে মনে ঠিকই যেতে চাইছে পরী। পরীর মুখ দেখেই বোঝে তুর্য। খোঁচা মেরে বলে,
“হুম বুঝি তো বুঝি! মনে মনে তো বলতেছ, ‘ইশ! আমার স্বামীটা কত্ত কিউট। লক্ষী।’ অবশ্য আমি তো কিউটই।”
তুর্যর কথা শুনে হেসে ফেলে পরী।
“সত্যিই যাব আমরা?”
“হ্যাঁ গো সুন্দরী।” পরীর দু’গাল টেনে বলে তুর্য।
.
.
বাড়িতে বলার পর কেউ আপত্তি করেনি। এমনকি তাহমিনা বেগমও নয়। পরশুই আবার ফিরে আসবে। দুপুরে সবাই একসঙ্গে খেয়ে রেস্ট নেয়। পরী ব্যাগ গুছাচ্ছে। তুর্য শুয়েছিল। পরীর উদ্দেশ্যে বলে,
“এত জামা-কাপড় নিচ্ছ কেন? আমরা থাকবই তো একদিন। পরশুই ফিরে আসব। বাই এনি চান্স, তুমি ঐ বাড়িতে থেকে যাওয়ার প্ল্যান করছ না তো? শোনো এসব হবে না বলে দিলাম। যেতে মন চেয়েছে তাই নিয়ে যাচ্ছি। তার মানে এই নয় যে, তোমাকে রেখে আসব। যাব দুজনে একসাথে আর আসবও দুজনে একসাথে। কোনো চালাকি হবে না। বিয়ের আগে থেকেছ সেটা অন্য হিসেব। তবে এখন তুমি আমার বউ। আমার সম্পত্তি। আর আমার সম্পত্তি আমি হাত ছাড়া করব না। বগলদাবা করে রাখব।”
“কথা বলো নাকি রেডিও চলে?”
হাতের ভাঁজ করতে থাকা কাপড়টা তুর্যর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলে পরী। তুর্য কাপড়টা ক্যাচ ধরে ফেলে। বিছানায় রেখে পরীর কাছে গিয়ে পরীর হাত ধরে বলে,
“মজা না সিরিয়াস। তুমি কি সত্যিই আমায় ছাড়া থাকবা ঐখানে বলো?”
তুর্যর অসহায়ের মতো বলা কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসে পরী। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কাপড় ভাঁজ করতে করতে বলে,
“বউ পাগল হয়ে গেছ তুমি।”
“তুমি কি অন্য কারো জন্য পাগল হতে বলো?”
“একদম না।”
“তাহলে?”
“তাহলে কিছুই না।”
“আচ্ছা কিছুই না। এখন তো বলো।”
“কী বলব?”
“কয়দিন থাকবা?”
“আরে বোকা! এগুলো কাপড় ভাঁজ করে রেখে দিচ্ছি। এক সিট কাপড়ই নিয়েছি শুধু। আর তোমার সাথেই পরশু ফিরে আসব।”
তুর্য পরীকে কাছে টেনে বলে,
“লক্ষী বউ!”
————————————
জামাই আর মেয়ে আসবে শুনে ছেলেকে সাথে নিয়ে রাজ্যের বাজার করেছেন পরীর বাবা। রোজ আর রেহেনা বেগম মিলে যত্ন-সহকারে সব রান্না করেছেন। পরী এই কয়েকদিনে বুঝে গেছে তুর্য খেতে খুব পছন্দ করে। তাই ফোন দিয়ে বলেছে তুর্যর পছন্দের সব খাবার রান্না করতে। রান্নাবান্না শেষ করে ঘর গুছিয়ে সবাই অপেক্ষা করছে। প্রিয়ম একদণ্ডও স্থির হয়ে বসতে পারছে না। কখন আসবে আর কখন বোনকে দেখবে। প্রিয়মের অস্থিরতা দেখে রেহেনা বেগম বলেন,
“একটু স্থির হয়ে বোস।”
“পারছি না তো মা! কখন যে আসবে। একবার বরং ফোন দিয়ে দেখি।” বলে পকেট থেকে ফোন বের করে। রেহেনা বেগম ধমক দিয়ে বলেন,
“রাখ! ফোন করবি না। এই নিয়ে কতবার ফোন করেছিস হিসেব আছে কোনো? পাঁচ মিনিটও হয়নি লাস্ট কল করেছিস। বলেছে তো প্রায় এসে পড়েছে। এখন আর বিরক্ত করিস না।”
মায়ের কথামতো আর ফোন করে না প্রিয়ম। তবে মুখটা মলিন হয়ে যায়। তা দেখে রোজ মিটিমিটি হাসে। প্রিয়ম ক্ষেপে গিয়ে বলে,
“হাসো কেন?”
“কই হাসি?” হাসি আটকানোর চেষ্টা করে বলে রোজ।
“ঐযে এখনো হাসতেছ।” বলে প্রিয়ম।
“দেখছেন আম্মা? আমি নাকি হাসতেছি?” নালিশ দিয়ে বলে রোজ।
রেহেনা বেগম বলেন,
“ওর মুখ দিয়ে ও হাসে। তোর কী? তুইও হাস।”
“বাহ্! খুব ভালো। এখন তো রোজই সব।আমি কে? আমি তো এখন পর।”
এতক্ষণ পত্রিকা পড়ছিলেন বাবা। আর তিনজনের খুনসুটিময় ঝগড়ার কথাবার্তা শুনছিলেন। সত্যি বলতে তিনি নিজেও অস্থির হয়ে আছেন মেয়েকে দেখার জন্য। কিন্তু তিনি তো আর প্রিয়মের মতো বাচ্চামো করতে পারেন না। সেই বয়সও তো এখন আর নেই। ছেলে-মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। কিছুদিন পর নাতি-নাতনিও আসবে। এখন আর তার বাচ্চামি করা সাজে না অন্তত। তাই অস্থিরতা লুকাতে পত্রিকা খুলে বসেছিলেন। প্রিয়মের বাচ্চামো দেখে বলেন,
“যখন পরিবারকে রেখে দেশের বাহিরে থাকিস তখনও তো এমন করিস না। তখন তোর এত ভালোবাসা কোথায় যায়? বোনের জন্য তখন অস্থির লাগে না?”
উত্তরে রোজ বলে,
“একদম বাবা! আমারও তো এই একই কথা। দেশে কি কাজের অভাব আছে? কেন পরিবার ছেড়ে বিদেশে পড়ে থাকতে হবে আমাদের? নিজেও দূরে থাকে। আমাকেও সবার থেকে দূরে রাখে।”
প্রিয়ম মৃদু হাসে। বলে,
“তখন তো ছোট্ট বোনটার বিয়ে হয়নি। মনে হতো আছেই তো বাবা-মায়ের কাছে। কিন্তু এই বিয়ে শব্দটা যেন অন্যকিছুই তৈরি করেছে মনে। মনে হয় আমার বোনটা ভীষণ ভীষণ দূরে। অনেক বছর হয় দেখি না।”
রেহেনা বেগমের চোখ ছলছল করেন। রোজ গভীর ভালোবাসাময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে প্রিয়মের দিকে। ছেলেটার মন কত্ত সফট্! কত ভালোবাসে বোনটাকে। এখানে এখন শ্বশুর-শ্বাশুরী না থাকলে শিওর প্রিয়মকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরত।
বাবা বলেন,
“একটু অপেক্ষা কর। এসে পড়বে।”
“আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আব্বু।”
“কী?”
“এখন থেকে বাংলাদেশেই থাকব। তুমি আমার জন্য একটা চাকরীর ব্যবস্থা করে দিও।”
রোজ খুশিতে লাফিয়ে উঠে। সেই সঙ্গে খুশি হয় বাবা-মা’ও। রেহেনা বেগম বলেন,
“সত্যি বলছিস বাবা?”
“হ্যাঁ, মা।”
“ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিস তো?” বলেন বাবা।
“ভেবেই নিয়েছি। পরী শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ায় তোমরা যে কতটা একা হয়ে পড়েছ সেটা বুঝেছি এই কয়েকদিনে। আমরাও যদি চলে যাই তাহলে তো তোমরা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে। তবে একবার ফিরতে হবে সেখানে সব ঝামেলা মেটানোর জন্য। তারপর একেবারের জন্যই ফিরে আসব বাংলাদেশে।”
“আলহামদুলিল্লাহ্।” বলেন বাবা।
কলিংবেল বাজছে। অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। রোজ প্রিয়মকে বলে,
“যাও তুমিই দরজা খুলে দাও।”
প্রিয়ম গিয়ে হাসি মুখে দরজা খুলে দেয়। ভাইকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে ওঠে পরী। ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রিয়মের বুকে। প্রিয়ম যত্ন করে পরীর কপালে চুমু এঁকে দেয়।
“আমার কলিজা!”
তুর্য ফলমূল,মিষ্টি আরো বিভিন্ন খাবার-হাতে দাঁড়িয়ে আছে। দুই ভাই-বোনের ভালোবাসা দেখছে। তিথিকে শ্বশুরবাড়ি রেখে আসার সময় তিথিও এভাবেই জড়িয়ে ধরেছিল। ভাসা ভাসা চোখগুলো দেখে বুকে খুব লেগেছিল। তুর্যর হাত থেকে প্যাকেটগুলো নেয় প্রিয়ম। তারপর ভেতরের রুমে বসে। রোজ নাস্তা নিয়ে আসে দুজনের জন্য।
“আসতে এত দেরি হলো যে?” জিজ্ঞেস করলেন রেহেনা বেগম।
উত্তরে পরী বলে,
“আসার সময় তিথির শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলাম। তাই দেরি হয়েছে।”
“তোমাদের দেরি হচ্ছিল দেখে তোমার ভাই তো অস্থির হয়ে যাচ্ছিল।”
টেবিলের ওপর খাবার রেখে বলে রোজ। তুর্য হেসে বলে,
“কেন? আপনার ননদকে কি কোথাও বিক্রি করে দিতাম?”
“সেটা আপনি পারবেন না ভাই। আমরা সব জেনেশুনেই ননদ বিয়ে দিয়েছি। সারাজীবন এভাবেই আগলে রাখবেন।”
“দোয়া করবেন ভাবি।”
“আমার দোয়া সবসময়ই আপনাদের সঙ্গে আছে।”
আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা চালায় সবাই। তারপর একসঙ্গে খেতে বসে। পরী খেতে বসলেও পানি ছাড়া কিছু খায় না। কেন খাচ্ছে না জিজ্ঞেস করলে জানায়, বাড়িতে খেয়েছে। আবার তিথির শ্বশুরবাড়িতে গিয়েও খেয়েছে। তাই পেটে একদম জায়গা নেই। কিন্তু পরীর বারণ শুনছে না কেউই। রেহেনা বেগম অনেক জোরজবরদস্তি করে অল্প খাওয়ায় পরীকে। খাওয়া শেষ হলে বলেন,
“এইযে খাবার খেলি এগুলো এখন কার পেটে গেল? আমার?”
“ঠিক এজন্যই জোর করলে আমি খাই না। কারণ আমি জানি তুমি এই ডায়লগ দিবাই।”
“একটা মারব! ডায়লগ কী? সত্যিই তো। পেটে ক্ষুধা রেখেও বলিস ক্ষুধা নেই।”
“হয়েছে।মাফ চাই।”
খাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে বাবা, ভাইয়া আর তুর্য দোকানে যায় চা খেতে। রোজ বাড়িতে বানিয়ে দিতে চাইলে তুর্য বলে,
“বাড়িতে চা খাব সন্ধ্যার পর। তখন সবাই একসাথে আড্ডা দেবো আর চা খাব। এখন জামাই, শ্বশুর আর সমুন্ধী(বড় শালা) একসাথে আড্ডা দেবো চায়ের দোকানে।”
তুর্যর এত মিশুক স্বভাবের জন্যই এত অল্প সময়ে সবার মন জয় করে নিয়েছে। পরীর পরিবারের সবাই তুর্যকে খুব পছন্দ করে আর ভালোবাসে। ওরা তিনজন বাহিরে যাওয়ার পর বাড়িতে আড্ডা দেয় রেহেনা বেগম, পরী আর রোজ।
.
মাগরিবের নামাজ পড়ে তিনজনে বাড়ি ফেরে একসাথে। সঙ্গে নিয়ে আসে ফুসকা আর গরম গরম হালিম। বাড়িতেও রোজ সন্ধ্যার নাস্তায় বিভিন্ন আইটেম তৈরি করেছে। তারপর সকলে একসঙ্গে বসে জমিয়ে আড্ডা দিয়েছে। প্রিয়ম আর তুর্যর কথা শুনে সকলের হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরার মতো অবস্থা। রেহেনা বেগম পরীর ছোটবেলার কথা গল্প করেন। পরী ক্ষেপে গেলেও বাকিরা হাসে। পরী এটাও জানে পরে ঠিকই তুর্য এইসব কাহিনী নিয়ে ক্ষেপাবে। কেন যে মা ছোটবেলার গল্প বলতে গেল! ডিনারের আগ পর্যন্ত গল্পগুজব চলে। ডিনার শেষ করে ছেলেরা সবাই রুমে চলে যায়। পরী রোজ আর রেহেনা বেগমের সাথে হাতে হাতে কাজ করে দেয়। রেহেনা বেগম বারণ করলেও পরী শোনে না। এক পর্যায়ে পরী মাকে-ই কোনো কাজ করতে না দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দেয়। তারপর ভাবি-ননদ মিলে হাসতে হাসতে গল্প করে আর কাজ করে। ওদের এত মিল দেখে নয়ন জুড়িয়ে যায় রেহেনা বেগমের। তিনি পরীর রুমের দিকে যান। দরজায় নক করে বলেন,
“আসব বাবা?”
তুর্য তখন গেম খেলছিল। শ্বাশুরীর ডাক শুনে ফোন রেখে দেয়।বলে,
“আসুন মা।”
রেহেনা বেগম ভেতরে গিয়ে বলেন,
“কোনো কাজ করছিলে?”
“না মা। গেম খেলছিলাম। কিছু বলবেন?”
“আর কী বলব! তোমাদের মিল দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় বাবা।”
তুর্য মৃদু হেসে বলে,
“দোয়া করবেন মা। সারাজীবন যেন আমি পরীকে আগলে রাখতে পারি।”
“পারবে তুমি। সেই বিশ্বাস আছে আমার।”
একটু থেমে তিনি আবার বলেন,
“মেয়েটা একগুঁয়ে টাইপের। খাওয়ার ব্যাপারে ভীষণ অনিয়ম। সঙ্গে অনীহা তো আছেই। খেতে বললেই রেগে যায়। যখন এখানে ছিল তখন অনেক জোর করে খাওয়াতাম। এখন তো এখানে থাকে না। তুমি ওর খাওয়ার ব্যাপারে একটু খবরদারি করিও বাবা। শাসন না করলে খাবে না ঠিকমত।”
“আমি সব খেয়াল রাখব মা। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।”
তুর্যর কথায় ভরসা পান তিনি। অন্যান্য বিষয়ে কিছু কথা বলে চলে যান। ড্রয়িংরুমে কাজ শেষ করে রোজ আর পরী গল্প করছিল। তিনি পরীকে ধমক দিয়ে বলেন,
“তুর্য একা রুমে। তুই এখানে গল্প করছিস? যা রুমে যা। কালকে দিনে গল্প করিস।”
“হ্যাঁ, যাও পরী।” বলে রোজ।
পরী কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে আসে। তুর্য ঘরে নেই। ব্যালকোনির দরজা খোলা। তাহলে তুর্য এখন ব্যালকোনিতেই। পরীও ব্যালকোনিতে গিয়ে বলে,
“কী করছ এখানে?”
তুর্য একবার পরীর দিকে তাকিয়ে ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে বলে,
“এসেছ! চাঁদ দেখছিলাম। দেখো আজকের চাঁদটা কত সুন্দর।” বলে পরীর হাত ধরে টেনে সামনে নিয়ে আসে। পেছন থেকে পরীকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রাখে। পরী চাঁদ দেখে। সত্যিই আজকের চাঁদ ভীষণ সুন্দর। সম্পূর্ণ শুভ্র চাঁদ। সাথে আকাশটাও আজ পরিষ্কার। কোথাও কোনো মেঘ নেই। রাশি রাশি তারা আকাশে ঝলমল করছে। এক হাতে পরীর চুলের খোঁপা খুলে দেয় তুর্য। চুলের মাতাল করা ঘ্রাণে বিমোহিত হয়। চুলে মুখ ডুবিয়ে দেয়। মাতাল করা কণ্ঠে বলে,
“পরী!”
“হু।”
“বলো তো চাঁদটা কী বলছে?”
“কী বলছে?”
“ভালোবাসি।”
পরী হাসে। লজ্জা, ভালোবাসামিশ্রিত হাসি।