[ এলার্ট- এই পর্বটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত। ]
ইতঃপূর্বে ফারাহর যত বিয়ে এসেছে সব ফিরিয়ে দিয়েছে নজরুল মিঞা। কিন্তু এবার সরাসরি ফিরিয়ে দিতে অক্ষম। কারণ এবার তার সামনে চৌধুরী বাড়ির দুই ছেলে উপস্থিত। যার মধ্যে একজন অর্থাৎ সুলল চৌধুরী তুখোড় রাজনীতিবিদ। তাই নানারকম জটিলতা দেখাতে শুরু করলেন। বিয়ে দেবে না এ কথা না করলেন না৷ সময় চাইলেন, এ মুহুর্তে কেন বিয়ে দিতে পারবেন না তার পিছনে নানাধরণের যুক্তি দাঁড় করালেন। ফারাহর বড়ো বোন ফারজানা দূর থেকে সৌধদের খেয়াল করল, আর স্বামীর কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারল, তাকেই কিছু একটা করতে হবে। তার পাশে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে ফারাহ দাঁড়িয়ে ছিল। ফারাহকে টেনে ভিতর ঘরে নিয়ে গিয়ে সে শুধাল,
‘ তুই বিয়েটা করতে চাস? ‘
সহসা হুহু করে কেঁদে ফেলল ফারাহ। বোনকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ আমি আয়াজকে খুব ভালোবাসি আপা। আর ভালোবাসি বলেই বিয়েটা করতে চাই না। ও খুব ভালো আপা, ভেরি অনেস্ট। কিন্তু আমি ভালো নই, অনেস্ট নই। আমি কলঙ্কিত! ‘
শেষ শব্দটা চোখ, মুখ খিঁচে বলল ফারাহ। বোনের যন্ত্রণার গল্প জানে ফারজানা। একই যন্ত্রণায় সেও ভুগছে বহুদিন৷ বুক যেন ফেটে গেল তার। এতিমদের জন্য দুনিয়া কত কঠিন তারা দু’বোন হারে হারে টের পাচ্ছে। তাই তো সেদিন নিজের মেয়ের মুখ চেয়ে সুইসাইড করতে পারেনি ফারজানা। সদ্য জন্ম দেওয়া শিশু সন্তানটির মুখ চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে নরপশু স্বামীর ঘর করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। একজন মা সন্তানের সুখে নরক জীবন কাটাতেও দ্বিধা করে না। ফারজানা সেই মা যে নিজের দুশ্চরিত্র স্বামীর সংসার করছে শুধুমাত্র সন্তানের মুখ চেয়ে। আজ থেকে ঠিক সাড়ে চার বছর আগের ঘটনা,
ফারজানার সিজার হয়েছে দু’দিন। দু’রাত বোনের কাছে হসপিটালে কাটিয়ে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে ফারাহ৷ আরো দু’দিন থাকতে হবে। তাই দুলাভাই তাকে বাসায় গিয়ে কয়েকঘন্টা কাটিয়ে আসতে বলে। এর মধ্যে ঘুম আর গোসলটাও সারতে বলে। ফারজানার শাশুড়ি দুপুরে খাবারদাবার নিয়ে আসবেন। তাই রান্না না করলেও চলবে। বোন এবং দুলাভাইয়ের কথানুযায়ী ফারাহ রাজি হয়। আর দুলাভাইয়ের সঙ্গে চলে যায় বাসায়৷ শরীর অতিরিক্ত দুর্বল থাকায় গোসল সেরে বিছানায় গা মেলে দিতেই ঘুমিয়ে পড়ে। ছোটোবেলা থেকেই সে ভীষণ ঘুমকাতুরে। একবার গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলে সে ঘুম ভাঙানো খুব কঠিন। ঠিক এই সুযোগটাই নেয় তার দুলাভাই। নজরুল মিঞা নিজেও জানতেন না নিজের শালিকার সঙ্গে এমন একটি ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবেন ৷ গোসল করে ছাদে কাপড় মেলে দিয়ে নিজের ঘরে ফিরছিলেন তিনি৷ আকস্মিক দৃষ্টি পড়ে জানালা ভেদ করে শালিকার দিকে। দুধে আলতা গায়ের বরণ ফারাহর। অল্প বয়সী হৃষ্টপুষ্ট, আকর্ষণীয় শরীর তার। ওড়না বিহিন হাত, পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। নিঃশ্বাসের সাথে ওঠানামা করছে বক্ষঃস্থল। কামিজের গলা বড়ো হওয়াতে আকর্ষণীয়, নরম বক্ষ বিভাজন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যা নজরুল মিঞার ভেতর সম্ভোগের ইচ্ছে জাগায়৷ ফারাহ এর সাথে তার সম্পর্ক ভুলিয়ে দেয় ভেতরের কাম সত্তা। মুহুর্তেই হয়ে ওঠে লোভাতুর জন্তু। বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা ফারাহ যেন কাঁচা নরম মাংসের দলা, আর সে ক্ষ্যাপাটে কুকুর। এভাবে হামলে পড়ে। দেহ থেকে একে একে সব বস্ত্র হরণ করে তবু ঘুম ভাঙে না মেয়েটার। সম্পূর্ণ ন গ্ন দেহশ্রী যখন পুরুষালি শরীর দ্বারা আবৃত করে ফেলে, নরম ঠোঁটে পুরুষালী ঠোঁটের দৃঢ় স্পর্শ পড়ে, বক্ষস্থলের নরম মাংসপিণ্ডে পড়ে শক্ত হাতের গভীর চাপ তখনি আচমকা দৃষ্টি বড়ো করে তাকায় ফারাহ। নিঃশ্বাস ছাড়ার ফাঁক টুকু পায় না মেয়েটা৷ দৃষ্টি বড়ো করে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় এতকাল বড়ো ভাইয়ের চোখে দেখে আসা, সম্মান দেয়া দুলাভাইয়ের কামাসক্ত মুখাবয়বে। নিজের বস্ত্রহীন দেহে তাকিয়ে লজ্জায়, ঘৃণায় ছটফটিয়ে ওঠে। কণ্ঠনালী থেকে সুর আসে না৷ মস্তিষ্ক অসাড়। নজরুল মিঞার বিকৃত স্পর্শে শরীরে অসহ্য পীড়া শুরু হয়। সেই স্পর্শ চূড়ান্ত মুহুর্তে পৌঁছে গেলে গগনবিদারী চিৎকার দেয় ফারাহ। নজরুল মিঞা যেন সেই চিৎকারে আরো বেশি উন্মাদ হয়ে ওঠে৷ পুরুষালি শরীরটার সঙ্গে পেরে ওঠে না ফারাহ৷ বড়ো বোনের স্বামীর কাছে নিজের কুমারীত্ব হারাতে বাধ্য হয়। আপার কাছে শুনেছিল তার দুলাভাই এর একটা কঠিন রোগ আছে৷ সেই রোগটা কী কোনোদিনও ফারাহকে বলেনি। চোখের সামনে শুধু আপার কষ্ট দেখেছে ফারাহ। তার সুন্দরী আপা বিয়ের পর কেমন অসুন্দরী হয়ে ওঠল। তার মতোই স্বাস্থ্য ছিল আপার৷ বিয়ের পর সে স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটল। ফারাহ ভেবেছিল প্রিয়তম স্বামীর অসুস্থতার জন্য আপা খুব চিন্তা করে। সে চিন্তার ফলেই নিজের প্রতি অযত্ন। কিন্তু আজ বুঝতে পারল তার দুলাভাইয়ের সমস্যাটা ঠিক কী? সে যে যৌ ন বিকারগ্রস্ত! এটা টের পায় তখন যখন দুলাভাইয়ের শরীরী চাহিদা মিটে গেলে আকস্মিক তার পা ধরে ক্ষমা চায়। আর বোঝাতে শুরু করে সে ইচ্ছে করে এই পাপ করেনি৷ তার ভেতরের কামসত্তা বাধ্য করেছে এটা করতে। যদিও মানসিক, শারীরিক কোনোভাবেই ফারাহ সক্ষম ছিল না এসব শোনার। তবু শুনতে হয়েছিল। দুলাভাই ক্ষমা চেয়ে, কান্নাকাটি করে বিদায় নেয়ার পর রক্তাক্ত চাদর গায়ে চেপে বিধ্বংসী কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যা করবে। এই পৃথিবীতে তার কেউ নেই। বাবা,মা মারা যাওয়ার পর বোনের বিয়ে দেয় চাচারা এরপর বোনের আশ্রয়ে চলে আসে সে। আত্মীয়-স্বজনরা এখন আর তেমন যোগাযোগ রাখে না৷ তার জীবনের শেষ ভরসা ছিল বোন, দুলাভাই৷ সেই ভরসার মানুষটার মাধ্যমে আজ সে ধ র্ষিত! নিজের ওপর ঘৃণায় মূর্ছা ধরে ফারাহ৷ ফ্যানে ওড়না বেঁধে গলায় ধরবে ঠিক এমন সময়ই মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। আপা কল করেছে! নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না। কল রিসিভ করেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে। আপা ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। জানতে চায় কী হয়েছে? ফারাহ বলতে পারে না৷ শেষে আপা স্বান্তনা দেয়,
‘ কোথায় আমার মেয়ের কান্না থামাবি তা না করে নিজেই ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছিস? কখন আসবি তোরা? বাবু কাঁদছে শুনতে পাচ্ছিস? ‘
ফারাহর কান্নার বেগ বাড়ে। সে না হয় মরে গিয়ে নিজের কলঙ্ক মুছবে কিন্তু তার আপার কী হবে? চরিত্রহীন স্বামীর সঙ্গে ঘর করবে কী করে তার আপা? আর বাবু সেও তো চরিত্রহীন বাবা পেল। দিশেহারা হয়ে ওঠে ফারাহ৷ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে নিমিষেই। নতুন সিদ্ধান্ত নেয়, দুলাভাইয়ের মুখোশ টেনেহিঁচড়ে বোনের সামনে তুলে ধরবে। হসপিটালে কিছু বলতে না পারলেও বাসায় আসার পর বোনকে সবটা জানায় ফারাহ। সব জেনে ফারজানা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়৷ তার স্বামী প র্ণগ্রাফিতে আসক্ত। এ কথা জানতে পারে বিয়ের কয়েকমাস পরেই। অতিরিক্ত প র্ণ দেখার ফলে মন, মস্তিষ্ক দু’টোই বিকৃত হয়ে গেছে। মানসিক ভাবে অসুস্থও হয়ে পড়েছে৷ একজন স্বাভাবিক পুরুষের আচরণ আর একজন যৌ ন বিকারগ্রস্তের আচরণে পার্থক্য থাকে অনেক। যা স্ত্রী হিসেবে অনুভব করেছে ফারজানা। কিন্তু এসব তো আর লোকের কাছে বলা যায় না। এগুলোর সমাধান নিজেদেরই খুঁজতে হয়। নজরুল মিঞা ফারজানার কথায় পাত্তা দেয় না। নিজের বিকৃত, বিধ্বস্ত আচরণে প্রতিরাতে যখন ফারজানা অসুস্থ হয়ে পড়ত, কখনো কখনো জ্ঞান হারাত তখন কিছুটা অনুতপ্ত হতো। সকাল হলেই সেসব ভুলে যেত আর বলত, সে একদম সুস্থ। আসল সমস্যা ফারজানারই। স্বামীকে খুশি করার মুরোদ নেই। অথচ বর্তমান সময়ে অনেক পুরুষের মাঝেই এই সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা রঙিন জগতের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে বাস্তবতাতে৷ নিজের স্ত্রীকে নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নয়৷ হবে কী করে? চোখে যে লেগে আছে রঙিন পর্দা। সে পর্দা ভেদ করে প্রাকৃতিক, সত্যতে বিশ্বাস করতে পারছে না৷
ফারজানা অল্প শিক্ষিত নারী৷ মা, বাবার মৃত্যুর পর সে পড়াশোনা করতে পারেনি। চাচারাও বিয়ে দিয়ে দিল। সংসার আর ছোটোবোনের চিন্তায় পড়াশোনা থেকে একেবারেই মন ওঠে যায়৷ স্বামী, সন্তানকে ঘিরে স্বাচ্ছন্দ্যে কাটানোটাই একমাত্র লক্ষ্য তার। সেই লক্ষ্যের মাঝে আকস্মিক ধাক্কা পায়। কী করবে? কোথায় যাবে কূলকিনারা মিলে না। শালিকা আর বউয়ের মনোভাব বুঝতে পেরে নজরুল মিঞা পা ধরে ক্ষমা চায় ফারজানা আর ফারাহর কাছে৷ যে ঘৃণ্য অপরাধ করেছে সে, তার ক্ষমা কি আদেও হয়? জানা নেই ওদের৷ কিন্তু এ পৃথিবীতে ওদের মতো অসহায় এ মুহুর্তে কেউ নেই। মান, সম্মান, লজ্জা চারিদিক থেকে চেপে ধরে। ফারজানার সন্তানও একদম শিশু৷ সব মিলিয়ে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে স্বামীকে ক্ষমা করার নাটক করে ফারজানা। আর ফারাহ সে ঘরকুনো হয়ে কাটাতে লাগে এক একটা দিন। মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর নামীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে। এরপর পরিচয় হয় আইয়াজের সঙ্গে। প্রেম ভালোবাসায় জড়ানো তো দূরে থাক কোনোদিন বিয়েও করবে না। এমন সিদ্ধান্ত নেয়া মেয়েটি আইয়াজের গভীর প্রণয়ে ফেঁসে যায়৷ অবচেতনে হওয়া সে প্রেম থেকে চেতনায় ফিরে বহুবার বেরুতে চেষ্টা করে ফারাহ৷ কিন্তু সে যত দূরে সরতে চায় আইয়াজ যেন ততোই গভীরে তলিয়ে নেয়৷ এভাবেই কেটে যায় কয়েকটা বছর। ফারজানা আপা দ্বিতীয় বার গর্ভবতী হওয়ার পর একদিন দুলাভাই তাদের দু’বোনের কাছে প্রস্তাব রাখে সে ফারাহকে বিয়ে করবে। তাদের ধর্মে চার বিয়ে ফরজ। সেখানে দুই বিয়ে কোনো ব্যাপার না। এমনই মন্তব্য করে দুলাভাই৷ ফারজানা, ফারাহ কেউ রাজি হয় না। দুলাভাই তখন ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে, সেদিন যা ঘটেছে অনিচ্ছাতে, ঘোরের মাথায়৷ এমন ঘটনার পর ফারাহকে আর কেউ বিয়ে করবে না। এছাড়া নিজের পাপের জন্য সেও অনুতপ্ত। তাই ফারাহকে বিয়ে করে আল্লাহ পাকের কাছে পাপ মুক্ত হবে। তার এই সিদ্ধান্তের পর দু’বোন খুবই আতঙ্কিত। এই আতঙ্কের মাঝেই আইয়াজের হয়ে সৌধরা এসেছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। যা ফারজানার কাছে আল্লাহ তায়ালার আশীর্বাদ। কিন্তু ফারাহ কেন এত ভয় পাচ্ছে? সত্যিটা আইয়াজকে কখনো না জানালেই তো হলো।
ফারাহর পিঠে হাত বুলিয়ে ফারজানা বলল,
‘ তুই কি ভয় পাচ্ছিস? তোর সঙ্গে যে দূর্ঘটনাটি ঘটেছিল তা আইয়াজ জেনে যাবে বলে? ‘
কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়াল ফারাহ। বলল,
‘ ভয় পাচ্ছি না। আমি ওকে খুব ভালোবাসি আপা। তাই চাইছি না আমার মতো মেয়ে ওর জীবনসঙ্গী হোক। ‘
থরথর করে কাঁপতে লাগল ফারাহ। ফারজানা বোনের মুখ তুলে চোখের পানি মুছে দিল। নিজের কান্না আঁটকে বলল,
‘ তুই খুব ভালো মেয়ে বোন। যা ঘটেছে সব আমাদের কপালের দোষ। ‘
একটু থেমে আবার বলল,
‘ শোন এই দুনিয়ায় তো কত মেয়ে স্বেচ্ছায় নিজের সতীত্ব হারায়। একসময় সেই অবৈধ সম্পর্ক ভুলে দিব্যি অন্য পুরুষের ঘর করে৷ তুই তো তাদের মতো না বোন। তুই পরিস্থিতির স্বীকার। আমার কথা শোন, তুই রাজি হয়ে যা। আমি এক্ষুণি গিয়ে ওদের জানাব তুই আমি রাজি৷ তোর দুলাভাইকে আজ আর তোয়াক্কা করব না। ‘
আপার কথা শুনে ভয়ে শিউরে ওঠল ফারাহ। জাপ্টে ধরে বলল,
‘ ও আপা, আমিত আয়াজকে ভালোবাসি। আমি কি করে পারব ওকে ঠকাতে? ওর জায়গায় অন্য পুরুষ হলে বিয়ের ক্ষেত্রে এতখানি বাঁধত না৷ বিয়ের পর আয়াজ যদি বুঝতে পারে বা কোনোদিন সত্যিটা জানতে পারে আমি ওর চোখের দিকে তাকাব কী করে? ‘
‘ তাহলে সবটা আইয়াজকে জানা তুই। যদি সত্যি ও তোকে ভালোবেসে থাকে, যদি সত্যি সৎ হয়, মনের দিকে শুদ্ধ হয় বুঝবে তোকে। সম্মান করবে তোর ভালোবাসাকে। ‘
‘ আমি পারব না আপা, পারব না৷ আয়াজ এসব জানার আগে মৃত্যু হোক আমার, মৃত্যু। ‘
ফারজানা হতাশ ভঙ্গিতে সরে গেল৷ বুঝতে পারল এভাবে হবে না৷ ফারাহও ঘরের এক কোণে বসে দু’হাতে মুখ ঢেকে ডুকরে ওঠল৷ কেন সে আইয়াজকে জীবনে জড়াল কেন? কেন হার মানল ওর ভালোবাসার কাছে? প্রেমিকা হিসেবে সামনে দাঁড়াতে পারে, কিন্তু স্ত্রী হয়ে কি কোনোদিন ও চোখে চোখ রাখতে পারবে? আইয়াজের মতো শুদ্ধ পুরুষ কি পারবে ওর কলঙ্কিত নারীকে অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে মেনে নিতে?
.
.
ক্রন্দনরত ফারাহকে ঘরে রেখে বাইরে আসে ফারজানা। স্বামীর ভাবগতি আর বোনের অনুভূতি বুঝে দারুণ এক সিদ্ধান্ত নেয়। উপস্থিত হয় ড্রয়িংরুমে। নজরুল মিঞার কথায় বিরক্তে চোখমুখ কুঁচকে আছে সৌধ। মেজাজ ভীষণ তপ্ত হয়ে ওঠেছে। তার একহাত শক্ত করে চেপে ধরেছে সুহাস৷ বলা যায় না, কখন হাত চালিয়ে দেয় সৌধ। এমন মুহুর্তে হঠাৎ সৌধর দৃষ্টি পড়ে গর্ভবতী ফারজানার দিকে৷ ইশারায় কিছু একটা বলছে ফারজানা। এমন সময় নজরুল মিঞার দৃষ্টি পড়তেই স্তব্ধ হয়ে গেল ফারজানা। তৎক্ষনাৎ সৌধ ওঠে দাঁড়াল। মুহুর্তেই সকলের হৃৎপিণ্ড লাফ দিয়ে ওঠল৷ সৌধ বলল,
‘ আমার একটু ওয়াশরুম যাওয়া দরকার। ‘
নজরুল মিঞা ওঠে দাঁড়াতে নিলে সৌধ সুহাসকে ইশারা করল কিছু। সঙ্গে সঙ্গে সুহাস নজরুল মিঞার হাত চেপে ধরে বলল,
‘ আপনি কোথায় যাচ্ছেন? সৌধকে আপা ওয়াশরুম দেখিয়ে দিক। আপনি কাকুর সাথে আলাপের সমাপ্তি টানেন। ‘
সুললও ভীষণ চৌকস। তাই সৌধর হাবভাব টের পেয়ে নজরুল মিঞাকে কথার প্যাঁচে ফেলতে শুরু করল। সৌধও ত্বরিত চলে গেল ফারজানার কাছে। বলল,
‘ চলুন আপা ওয়াশরুম দেখিয়ে দেবেন। ‘
.
.
রাত আটটায় তিনজন তাগড়া যুবক অপহরণ করল ঘুমন্ত এক সুন্দরী যুবতীকে! সহায়তা করল যুবতীর বড়ো বোন নিজেই!
পরিকল্পনাটি করা হয় আজ সকালেই। সৌধদের ফ্লাইট রাত সাড়ে দশটায়। সে অনুযায়ী যে করেই হোক ফারাহকে আজ তাদের চাই’ই চাই। তাদের এই চাওয়া পূর্ণ করল, ফারজানা আপা। সৌধর সঙ্গে পরিকল্পনা করে সন্ধ্যা বেলায় স্বামী আর বোনকে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ায়। ওরা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলেই কল করে সৌধকে। সঙ্গে সঙ্গে মাইক্রো নিয়ে বাসার সামনে হাজির হয় সৌধ, সুহাস, আইয়াজ। সৌধ ড্রাইভিং সিটে বসে অপেক্ষা করে৷ নামী পেছনে বসা। সুহাস আর আইয়াজ যায় বাসার ভেতরে। ফারজানা আপার সহায়তায় আইয়াজ তার প্রেয়সীকে পাঁজা কোল করে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাসা থেকে৷ পেছন পেছন ফারাহর লাগেজ হাতে বেরোয় সুহাস। তাড়াহুড়োয় ফারজানা আপার থেকে বিদায় নেয়া হয় না। গাড়িতে ওঠার পর আইয়াজ জালানার বাইরে উঁকি দিয়ে ইশারা বিদায় নেয় আর তার ওপর ভরসা রাখতে বলে। ফারজানা আপার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়ায়। এক টুকরো আশার আলো খুঁজে পায় স্বচ্ছ কাঁচের ভেতরে থাকা বিশ্বস্ত দু’টি চোখ দেখে।
এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর পুরো সময়টাই ফারাহ আইয়াজের বুকে ঘুমিয়েছে। সেই যে ছেলেটাকে কোলে তুলেছে একটুর জন্যও নামায়নি। সুহাস বার বার বলেছে সিটে শুইয়ে দিতে। প্রচুর জায়গা আছে। তবু শুনেনি। ফারাহর ঘুম সকালের আগে ভাঙবে কিনা সন্দেহ। এমনিতেই ভীষণ ঘুমকাতুরে। এ-র ওপর ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। অর্থাৎ, কক্সবাজার পৌঁছানোর পরও ঘুম ভাঙার সম্ভাবনা নেই। মেয়েটা ঘুমাক। তারা নির্ঝঞ্ঝাটে পৌঁছে যাক কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।
বিয়ের পর নামীকে নিয়ে এই প্রথম দূরে কোথাও যাচ্ছে সুহাস৷ প্রথম হানিমুন। একদিকে বন্ধুর বিয়ে অন্যদিকে প্রথম হানিমুন। সব মিলিয়ে সুহাসের মনটা বেশ ফুরফুরে। ড্রাইভিং সিটে সৌধ। মাঝখানে সে আর নামী। আইয়াজ ফারাহ পেছনে। অনুভূতি বেশ প্রগাঢ়। সেই অনুভূতির রেশ ধরে নামীর গালে টোপ করে চুমু এঁটে দিল সুহাস। মুহুর্তেই চোখ বড়ো বড়ো করে নামী তাকাল সামনের দিকে। সৌধর মন এদিকে নেই৷ সে ড্রাইভিংয়ে ব্যস্ত। দেখেই ত্বরিত পিছনে তাকাল আইয়াজের দৃষ্টি ফারাহতে স্থির৷ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে দাঁতে দাঁত চেপে এবার নিজের বরের দিকে তাকাল। বকা দেয়ার আগ মুহুর্তে হঠাৎ পুরো গাড়ি অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেল! এমন কাণ্ড কে ঘটাতে পারে বুঝতে বাকি রইল না কারোরি৷ নিজের মতো লাইট অফ করে নামীর কোমর পেঁচিয়ে ধরল সুহাস। একটানে একদম নিজের কাছাকাছি নিয়ে এলো৷ আঁতকে ওঠল নামী। সুহাস ঘনিষ্ঠ হতে হতে ফিসফিসিয়ে কানে কানে বলল,
‘ হানিমুন জার্নি একটু হর্নি না হলে চলে জান?‘