বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেনি। উদয়িনী পুরোপুরি তার স্বামীর প্রাক্তনের মেয়েকে ছেলের জীবন থেকে সরাতে পারেনি৷ কিন্তু ছেলেমেয়ে দু’টোর মাঝে তুলে দিয়েছে শক্তপোক্ত দেয়াল। যে দেয়ালের নাম ঘৃণা। সুহাস নামীকে ঘৃণা করে তার মায়ের জন্য। যে মেয়ের মা তার মায়ের জীবনের সব সুখ কেড়ে নিয়েছে সেই মায়ের মেয়েকে সে কেন সুখ দেবে? হিংসাত্মক প্রশ্নটি উদয়িনীর। যা ছেলে সুহাসের মস্তিষ্কে শক্ত লোহার ন্যায় গেঁথে দিয়েছে সে। আর নামী সুহাসকে ঘৃণা করে মেরুদণ্ডহীন পুরুষ বলে। যে ছেলে ভিত্তিহীন একটা ভাবনা থেকে বিয়ের মতো পবিত্র একটি বন্ধনকে অস্বীকার করে। মায়ের সন্তুষ্টির জন্য দেয় না বৈবাহিক স্বীকৃতি। শুধু তাই নয় যে ছেলে মায়ের আক্রমণাত্মক, হিংসাত্মক আচরণ গুলোকে বিনা সংকোচে মেনে নেয়, নিজের অনুভূতিদের দিয়ে দেয় বলিদান৷ মাকে তৃপ্ত করার জন্য নিরপরাধ একটি মেয়েকে অসম্মান, অপমান করতে দ্বিধা করে না। সে ছেলে আর যাই হোক তার যোগ্য হতে পারে না। প্রথম দিকে নামী সুহাসকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে, তাদের বাবা, মায়ের অতীতের সঙ্গে সে কোনোভাবেই জড়িত নয়। কিন্তু সুহাস কিছুতেই বুঝতে চায় না৷ নামী যখন নিজের মায়ের পক্ষ নিয়ে সুহাসকে বলে, উদয়িনী যা অভিযোগ করছে সব মিথ্যা। তখন থেকে সুহাস আরো ক্ষেপে যায়। মায়ের বিরুদ্ধে একটা কথাও শুনতে নারাজ সে। ব্যর্থ হয় নামী৷ জিতে যায় উদয়িনী। কিন্তু এই জেতা তার এবং তার স্বামীর মাঝেকার নড়বড়ে দেয়ালটা শক্তপোক্ত করে তুলে।একই বাড়ি হয়ে যায় দু’ভাগ। একভাগে সোহান খন্দকার আর নামী। আরেক ভাগে সুহাস, উদয়িনী আর সিমরান৷
প্রথম দিন কলেজ ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি নিয়ে বেশকিছু দিন বিষন্নতায় কাটিয়েছে নামী। নিজের বেলকনিতে বসে জানালার পাশে বসা বিষণ্ন নামীকে দেখে পৈশাচিক আনন্দ পেয়েছে সুহাস৷ নামী জানত সুহাস তাকে ফলো করে। বিষণ্ণতার এ কয়েকটা দিন সেটা আরো বেড়ে গেছে। টের পেয়েছে নামী। সে পারত জানালা বন্ধ করে রাখতে। ফলো করতে না দিতে। তবুও কেন জানি এটা করতে ইচ্ছে করেনি। পুরো ফাঁকা বাড়িতে দম বন্ধ লাগে তার। জ্বালানোর জন্য হলেও সুহাস যে তাকে ফলো করে এটাকে সে ইতিবাচক ভাবেই নেয়। উদয়িনী থাকে ময়মনসিংহ। সোহান খন্দকার শুক্রবার ব্যাতীত বাকি দিন গুলোয় এগারোটার আগে বাড়ি ফেরে না। ওদের ভাগে, সিমরান নিজের মতো থাকে। বাড়ির আশপাশে তাকে দেখা যায় না। একটা কাজের মহিলা এসে সকাল বিকাল সুহাসদের রান্না সহ বাকি কাজগুলো করে দিয়ে যায়। তাদের ভাগে সে সারাদিন একাই থাকে। রান্না পারে বলে আলাদা করে লোক রাখেনি। শুধু সাপ্তাহিক ধোপানি রেখেছে একজন।
.
.
সকাল সকাল তৈরি হয়ে সদর দরজা পর্যন্ত আসতেই সুহাসের সামনে পড়ে গেল নামী। এক পলক নামমাত্র স্বামীর মুখটা দেখেই চোখ সরিয়ে নিল সে। পাশ কাটিয়ে চলে যাবার সময় শুনতে পেল,
‘ সকাল সকাল প্যাঁচী দেখলাম! হে খোদা যাত্রা শুভ করো। ‘
এমন কথা শুনে সহসা দাঁড়িয়ে পড়ল নামী। ঘাড় ফিরিয়ে চোখ কটমট করে তাকাল। পরোক্ষণেই মুখ ফিরিয়ে উচ্চবাচ্যে বলল,
‘ হে আল্লাহ, সকাল সকাল ফকফকা বাঁদর দেখলাম। যাত্রা শুভ করো। ‘
এটুকুতেই ক্ষ্যান্ত দিল না। সঙ্গে আরবি উচ্চারণ করে দোয়া পড়তে পড়তে স্থান ত্যাগ করল। মারাত্মক ভাবে মেজাজ বিগড়ে গেল সুহাসের। এই মেয়ের এত দেমাক আসে কোথায় থেকে? তাদের দয়ায় এ বাড়িতে থাকছে। আবার তাদেরই দেমাক দেখাচ্ছে। সব বাবার জন্য। তীব্র ক্রোধে গজগজ করতে করতে দরজায় তালা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ল সেও। প্রত্যেকের কাছেই একটা করে চাবি থাকায় ফেরা নিয়ে কাউকেই কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় না।
ফারাহ নামের মেয়েটির সঙ্গে নামীর বন্ধুত্ব গাঢ় হয়ে ওঠেছে। সবসময় দু’জনকে একসঙ্গেই দেখা যায়। ক্যান্টিনে নামীর জন্য অপেক্ষায় ছিল ফারাহ। নামীর আসতে আর মিনিট দুয়েক লাগবে। এমন সময় ক্যান্টিনের দরজায় সুহাসকে দেখতে পেল সে। চোখের চশমাটা ঠিকঠাক করে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। বিড়বিড় করে বলল,
‘ আরে এটাত সেই ভাইয়া! রেগকে সত্যি ভেবে নামীকে হেইট বলাটা ভাইয়াই তো এটা। ‘
সুহাস তার ক্লাসমেট প্রীতিকে নিয়ে ক্যান্টিনে প্রবেশ করল। তৎক্ষনাৎ ফারাহ বই বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে সুহাসদের উদ্দেশ্য করে বলল,
‘ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, আপু। ‘
দর্পযুক্ত ভঙ্গিতে তাকাল সুহাস। সালাম ফেরাল কিনা বোঝা গেল না৷ প্রীতি মেয়েটা মৃদু হাসল। ফারাহ মুখ নিচু করে হাঁপ নিঃশ্বাস ছেড়ে মোবাইল টিপতে শুরু করল। সালাম দিয়ে দিয়েছে। এবার আর বেয়াদপ ভেবে রেগ টেগ দিতে পারবে না। সুহাস খুব ভালো করেই জানে চশমাওয়ালি মেয়েটার সঙ্গে নামীর গদগদ ভাব। তাই তাকে ক্যান্টিনে বসা দেখেই সে তার তিন নাম্বার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে এখানে চলে এলো। দৃঢ় বিশ্বাস কিছুক্ষণের মধ্যে নামীও আসবে। হলোও তাই কিয়ৎকাল অতিবাহিত হতেই নামীর উপস্থিতি ঘটল৷ নামী প্রথমে থতমত খেলেও ত্বরিত সামলে নিল নিজেকে। দৃঢ়চিত্তে গিয়ে বসল ফারাহর পাশে। এক কাপ কফি খেতে খেতে পড়াশোনা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষ করল। এরপর বান্ধবীকে নিয়ে এমনভাবে ক্যান্টিন ত্যাগ করল যে সুহাসের অহমিকায় আঘাত পড়ল ভয়ানক আকারে। ক্রোধে কপালের রগ দপদপিয়ে ওঠল। প্রীতি তার হাতের ওপর হাত রেখে মৃদু হেসে বলল,
‘ হোয়াট হ্যাপেন্ড সুহাস, আর ইউ ওকে?
ত্বরিত প্রীতির হাত সরিয়ে ওঠে দাঁড়াল সুহাস। ক্ষীণ স্বরে বলল,
‘ আমার তাড়া আছে। যেতে হবে। ‘
প্রীতি অবাক হলো খুব। মুখটা থমথমে হয়ে গেল তার। নতুন নতুন রিলেশন। কোথায় সুহাস তার প্রতি আলাদা যত্নশীল থাকবে। ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল প্রীতির৷ ভাবল,
‘এই সুহাসটা এমন কেন? ওর জায়গায় সৌধ থাকলে ব্যাপারটা কি অন্যরকম হতো? সৌধর মধ্যে আলাদা একটা ব্যাপার আছে। আপাদমস্তকই কামুকতায় ভরা। ওর গার্লফ্রেন্ড হতে পারলে বোধহয় জোশ হতো৷ কিন্তু সে তো প্রপোজাল রিজেক্ট করে দিয়েছে!’
একরাশ হতাশা নিয়ে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে গেল প্রীতি৷ সুহাসের ক্লাস দু’টায়। তবুও সে নামীদের ক্লাস টাইমে ক্যাম্পাসে আসে। জুনিয়র, সিনিয়র অনেক মেয়েদের সঙ্গেই আড্ডা দেয়। বর্তমানে তার তিনটে গার্লফ্রেন্ড। প্রীতি আর বাকি দু’জন বাইরের। তারা মেডিকেল স্টুডেন্ট নয়। আপাতত সুহাসের কলেজে মন টিকছে না। যে উদ্দেশ্যে আগেভাগে আসা সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তাই খিঁচানো মেজাজ নিয়ে চলে গেল সৌধদের বাসায়। সেখানে গিয়ে খিঁচানো মেজাজটা চড়া হলো। যখন শুনল গতকাল নিধিকে কয়েকটা ছেলে টিজ করেছে। অথচ এ ব্যাপারে নিধি তাদের কিচ্ছু জানায়নি। সৌধের মনের অবস্থা টের পেল সুহাস৷ আজ যে নিধির অবস্থা কী হবে ভেবেই দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেল। সৌধকে শান্ত করতে সুহাস বলল,
‘ তোর কিছু বলতে হবে না৷ ওকে যা বোঝাবার আমিই বুঝিয়ে দেব। ‘
সৌধ কাভার্ড থেকে টিশার্ট বের করে বিছানায় রাখল। সুহাসের দিকে তাকাল হিংস্র চোখে। সুহাস শান্ত করার চেষ্টা করে বলল,
‘ কে কে ছিল জানতে পেরেছিস? ‘
আচমকা ভয়ানক গালি দিল সৌধ। যা শুধু অবিশ্বাস্যই নয় অভাবনীয়ও। সৌধর মুখে বা’ল শব্দটি ছাড়া কখনো অন্য কোনো গালি শুনেনি সুহাস৷ নিধির প্রতি মারাত্মক পজেসিভনেস থেকেই এ মুহুর্তে উত্যক্তকারীদের গালি দিয়ে ফেলেছে সে। কোনোরকমে বন্ধুকে শান্ত করে একসঙ্গে বের হলো দু’জনে। বেরিয়েই কল করল নিধিকে। নিধি রিসিভ করেই ঘ্যানঘ্যান শুরু করল,
‘ দোস্ত একটা মহিলাও পাই না, যে অন্তত ওয়াশরুমটা পরিষ্কার করে দেবে। ঠাণ্ডা লেগেছে নিজেরও করতে ইচ্ছে করছে না। রুমমেটও নেই বাড়ি গেছে। দুদিন এভাবে ওয়াশরুম রাখতেও গা গুলাচ্ছে। ‘
সুহাস সেসব কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলল,
‘ এমনিতে এত বকবক করিস, গতকালের ঘটনা অন্যকারো থেকে শুনতে হলো কেন? ‘
সহসা জিভ কামড়ে ধরল নিধি। বলল,
‘ সরি রে, মেয়েদের এসব ফেস করতেই হয়। সামান্য বিষয় নিয়ে তোদের বিরক্ত করতে চাইনি। ‘
ভ্রু কুঁচকে ফেলল সুহাস। বলল,
‘ বিরক্ত! ‘
স্পিকার অন থাকায় কথা শুনে সৌধর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। সুহাস আড়চোখে তা দেখে নিয়ে নিধিকে বলল,
‘ ক্যাম্পাসে আয়। ‘
‘ একটু লেট হবে রে। ওয়াশরুম পরিষ্কার করে গোসল দিয়ে তারপর আসব। ‘
তৎক্ষনাৎ সৌধ সুহাসের থেকে ফোন নিয়ে নিল। গম্ভীর স্বরে বলল,
‘ আমি লোক পাঠাচ্ছি ওয়াশরুম পরিষ্কার করে দেবে। তোর না করলেও চলবে। ‘
সৌধর কণ্ঠ শুনেই চমকাল নিধি। ঢোক গিলে তোতলানো কণ্ঠে বলল,
‘ তুই! ‘
দাঁতে দাঁত চেপে সৌধ বলল,
‘ ক্যাম্পাসে আয়। ‘
নিমিষেই কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল নিধির মুখ। বলল,
‘ দেখ ভাই, আমি অতো ঝামেলা পছন্দ করি না। আর চাইও না তোরা কোনো ঝামেলা করিস। ‘
এবার আর সৌধকে আটকায় কে? ভাই শুনে নিভু নিভু আগুনটা যেন ফুঁসে ওঠল। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
‘ তোর বাপকে বলিস পঞ্চম বার বেবি প্লানিং করতে। এবারে ছেলের মুখ দেখলেও দেখতে পারে। আর তুইও জন্মের মতো একটা ভাই পেতে পারিস। ‘
অমন ভয়ানক কথা শুনে আঁতকে ওঠল নিধি! অস্ফুটে বলল,
‘ ছিঃ সৌধ কী বলছিস! ‘
‘ পনেরো মিনিটের মধ্যে একজন মহিলা পাঠাব। কাজ শেষ হওয়ার পর বিশ মিনিটের মধ্যে ক্যাম্পাসের সামনে আসবি। নয়তো ফলাফল খুব খারাপ হবে। ‘
ফোন কেটে দিল সৌধ। তিরতিরিয়ে ঘামতে শুরু করল নিধি। ত্বরিত গিয়ে টেবিলের ওপর থেকে ওয়াটার বোতল নিয়ে পানি খেয়ে নীরস গলাটা ভিজিয়ে নিল।
ক্লাসটাইম হয়ে গেল৷ অথচ নিধি এলো না। আইয়াজ তাড়া দিয়ে সৌধকে বলল,
‘ ক্লাসে চল। ক্লাস শেষে এই টপিকে আলোচনা করা যাবে। ‘
সৌধ ক্লাসের দিকে এগুতে শুরু করল। আইয়াজ৷ সুহাসও পায়ে পা মেলালো। সৌধ বলল,
‘ আর কোনো আলোচনা নয়। ছুটির পর এলাকাটায় ঢুকব। ওর সাথেই। ‘
সুহাস কিছু বলল না। জানে বলে লাভ নেই। আইয়াজ বলল,
‘ ঢোকার তো প্রয়োজন নেই। একটা ফোনই যথেষ্ট।’
‘ আলবাত প্রয়োজন আছে। ‘
দৃঢ়চিত্তে সৌধের এহেন বাক্য শুনে আইয়াজও আর কিছু বলল না। সৌধকে সে খুব ভালো করেই চেনে। যেখানে তাদের বেস্ট ফ্রেন্ড নিধি জড়িয়ে সেখানে ওর দ্বারা সহজ আপোস সম্ভবই নয়। নেতার ছেলে এটুকু রক্ত গরম অস্বাভাবিক কিছু না।
প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট’রা বেরুচ্ছে। ওদের দেখে সালাম দিয়ে দিয়েও যাচ্ছে। নামী আর ফারাহ বের হতেই আইয়াজ চাপা স্বরে বলল,
‘ ভাবি আসছে। ‘
সুহাস চোখ রাঙাল। সৌধ রাশভারি কণ্ঠে বলল,
‘ সিনক্রিয়েট করবি না। ‘
সুহাস হাওয়া উড়ানোর মতো করে বলল,
‘ ওর সাথে সিনক্রিয়েট করার জন্যও আমার ইন্টারেস্ট আসে না। ‘
হাঁটার গতি কমিয়ে দিল সৌধ। সুহাসের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে ফিচেল হাসল। মৃদুস্বরে বলল,
‘ আই সি.. ‘
নামী আর ফারাহ ওদের একদম কাছাকাছি চলে এলে সৌধ, আইয়াজকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিল নামী। সৌধ দাঁড়িয়ে পড়ল। ঈষৎ হেসে দিল সালামের জবাব। দাঁড়াল নামী, ফারাহও। কিন্তু সুহাস দাঁড়াল না। সে তেজ দেখিয়ে হনহনিয়ে
ক্লাসে চলে গেল। সৌধ বলল,
‘ পড়াশোনা ঠিকঠাক তো? যে কোনো সমস্যা হলেই আমাকে জানাবে। হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও তো আছে? ‘
‘ জি ভাইয়া কোনো সমস্যা নেই। ‘
‘ বাসায় ফিরছ? ‘
‘ জি ভাইয়া, আসি তাহলে। ‘
অত্যন্ত নমনীয় ভাবে কথা বলা শেষ করে দুই বান্ধবী চলে গেল। সৌধও এগিয়ে গেল ক্লাসের দিকে। কিন্তু আইয়াজ গেল না। সে তাকিয়ে রইল গাঢ় সবুজ রঙের গাউন, সাদা অ্যাপ্রোন, চোখে কালো ফ্রেমের গোল চশমা পরা, গৌরবর্ণীয় হৃষ্টপুষ্ট মুখ আর কোঁকড়া চুলের মেয়েটার চলে যাওয়ার দিকে। এক মুহুর্তে যেন তার দৃষ্টি থমকে গেল, থমকাল শ্বাসপ্রশ্বাসও। কিয়ৎকাল পর সম্বিৎ ফিরল আরেক সহপাঠীর ডাকে। চমকে ওঠে সে ত্বরিত ক্লাসে চলে গেল। সৌধর পাশে বসে চনমনে মনে জিজ্ঞেস করল,
‘ দোস্ত খেয়াল করেছিস, নামীর সাথেকার মেয়েটা আমার মতোই চশমা পড়ে? ‘
সুহাস ভ্রু কুঁচকে ফেলল। ভাব নিয়ে বলল,
‘ কোনটার কথা বলছিস ঢোলের মতো মেয়েটার? ‘
সৌধ কিছু বলল না। বোঝার চেষ্টা করল কথাগুলো। আইয়াজ কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
‘ কীসের ঢোল স্বাস্থ্য ভালো মেয়েটার কথা বলছি। ‘
‘ ঐ তো মোটা মেয়েটা? ‘
আইয়াজ পুনরায় শুধরে দিয়ে বলল,
‘ আরে মোটা না মিডিয়াম স্বাস্থ্যের মেয়েটা। নামীর সাথে যেটা ছিল তুই বোধহয় খেয়াল করিসনি। ‘
সহসা সৌধ মিটিমিটি হেসে বলল,
‘ বই বাদ দিয়ে তুই হঠাৎ স্বাস্থ্য ভালো মেয়ে নিয়ে চর্চা করছিস কেন আইয়াজ? ‘
পেছন থেকে কান পেতেছিল আজিজ। হঠাৎ সে বলল,
‘ শা’লা যে লুই’চ্চা আগেই টের পাইছিলাম। এখন আরো ভালো কইরা পাইলাম। দেখছস সুহাস, শালায় যেনতেন গাইয়ের দিক নজর দেয় না। লাউ, পটল তার নজরে আটকায় নাই একবারে মিষ্টি কুমড়ায় আটকাই গেছে! ‘
হো হো করে হেসে ওঠল সুহাস। তৎক্ষনাৎ ঝড়ের গতিতে ক্লাসে ঢুকল নিধি। সৌধর মুখ শক্ত হয়ে ওঠল নিমিষেই। পাশের বেঞ্চে বসতে বসতে হাঁপানো সুরে নিধি বলল,
‘ এই স্যার আসছে স্যার আসছে চুপ কর সবাই।‘