১৬ পৃষ্ঠায়

– কিহহ, এই পিচ্চি মেয়েটিকে আমার ঘরের বউ বানিয়ে আনবো? না।” কথাটি বেশ ধমকে বলেন সর্ণালি। ধমক শুনেই ভড়কে উঠেন অর্সা নিজেকে সামলিয়ে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলেন,, মেয়েটির মা বাবার সাথে আমার অনেক পুরোনো সর্ম্পক ভাবী, মেয়েটি কেও ছোট থেকেই দেখে আসছি ৩৬ গুণ সম্পন্ন মেয়ে চুপচাপ, শান্তশিষ্ট, নম্র, ভদ্র মেয়ে তারপর বেশ সুন্দরী, ভাবী বুঝলেন?”
কথাটি শুনেই সর্ণালি জোরে বলেন,, অনেক ছোট মেয়েটি এই মেয়ের সাথে আমাদের এনোনের বিয়ে দিব? মেয়েটি কোন দিক থেকে সাপোর্ট করতে পারবে এনোন কে? হ্যাঁ?”
অর্সা আবারো বলল,, আরে ভাবী শুনেন মেয়েটি সবেমাত্র সতেরো পেরিয়ে আটেরো পা রেখেছে, তারপর সুন্দর ও গুণসম্পন্ন মেয়ে, আপনি নিজেই তো বললেন গ্ৰামের মেয়ের সাথেই আমাদের এনোনের বিয়ে দিবেন তো এর থেকে ভালো মেয়ে নেই ভাবী।” কথাগুলো কর্ণগোচর হতেই উজ্জল সাহেব পিছন থেকে হুঙ্কার স্বরে বললেন,, মেয়েটিকেই আমাদের ঘরের বউ বানাবো আর আমার উপর যেন কেউ কথা না বলে।” অর্সা ও সর্ণালি পিছনে ফিরে তাকান। উজ্জল সাহেব অনেকটা শক্তপোক্ত হয়ে এগিয়ে এসে মেয়েটির ছবি দেখে বলেন,, মেয়েটি এনোনের জন্য একদম ঠিক আছে।”
সর্ণালি কিছুটা চেঁচিয়ে উঠল,, মেয়েটি এনোনের থেকে অনেক বছরের ছোট, গ্ৰামের মেয়ে আনতে কি বললাম এই পিচ্চি মেয়েটিকে নিয়ে আনলা, মেয়েটিকে আমার একদম পছন্দ হয়নি।”
উজ্জল সাহেব ভ্রু কুঁচকে বলেন,, তোমার আর আমার মধ্যে ১৭ বছরের তফাৎ তো? আর এটাও মনে রাখো তুমিও গ্ৰামের মেয়ে, এই মেয়েটিকে আমার ঘরের বউ হিসেবে দেখতে চাই এর বাবাকে ১৫ দিব বলে দিও অর্সা।”
অর্সা দ্রুত বলে,, না না তার বাপ বললো পনেরো তে হবে ষোলো দিতে হবে মেয়ে ভালো বলে কথা।”
উজ্জল সাহেব কিছুটা চিন্তা করে বলেন,, আচ্ছা ষোলো হলেও ষোলো ঠিক মেয়েটিকে দুদিনের মধ্যে আমার বাসায় দেখতে চাই কারোর মতামত ছাড়া।” শেষ কথাটি সর্ণালির দিকে তাকিয়ে বলেন উজ্জল সাহেব।
____________________
গ্ৰামের এক মাঠে বসে পান খেতে খেতে কথা বলতে লাগলেন অর্সা ও মেয়েটির বাবা। কথার এক পর্যায়ে মেয়েটির বাবা বলে উঠেন,, নিনি রে আর রাখমু না বিয়া দিয়া দিমু।” অর্সা কিছুটা অবাক হয়ে বলেন,, কিয়া? মাইয়া তো এখনো ছোট।”
সৌরভ সাহেব বলেন,, আর কত বছর রাখমু, মাইয়া কুড়ি বুড়ি হয়য়া গেলা আর কেউ নিবা না তুমি পারলে কারোর খোজ নাও বিক্রি হলে বিক্রি করে দিমু একদম, মাইয়া একদম সব দিক দিয়া ঠিক আছে যথেষ্ট সুন্দরী ও আছে ।”
অর্সা পান চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,, কত দিয়া বিক্রি করবা?”
সৌরভ সাহেব ভ্রু কুঁচকে বলেন,, মানুষ পাইছো নি?
অর্সা হেঁসে বলল,, তুমি শুধু কোও কত দিয়া বিক্রি করবা, আমার বহুত মানুষ আছে।”
সৌরভ সাহেব ও হেঁসে বলল,, ১৬ লাখ।”
অর্সা অনেকটা অবাক হয়ে বলল,, এতো টাকা কেন? তোমার মাইয়া থেকেও সেই টাকার পরিমাণ গুণ থাকতে হবে বুঝলা বাপু?”
সৌরভ সাহেব হেঁসে বলল,, একটা মাত্র মেয়ে তাও সুন্দর ও গুণসম্পন্ন বলে দিও তাহারে যে আমার মেয়ে লইবে হুহ।”
অর্সা থু থু ফেলে বলল,, আমারে তো কিছু দিতে হবে তাই না?”
সৌরভ সাহেব বাঁকা হেঁসে বলল,, সেইখান থেইকা বিশ হাজার দিমু।”
অর্সা হাত না সূচক নাড়িয়ে বলল,, হাহ্ এতো কষ্ট করবো আর তুমি আমারে বিশ হাজার দিইবা তাহলে কোন দরকার নাই তোমার মাইয়া তোমার কাছেই রাখো।”
সৌরভ সাহেব দ্রুত বলেন,, না না আচ্ছা তোমারে ৫০ হাজার দিমু একদম, কিন্তু মাইয়ার কোন ব্যবস্থা কইরা দাও।”
এতে রাজি হয়ে যায় অর্সা।
________________________
বর্তমান,,,,
বিয়ের পর্ব শেষ হতেই বিদায়ে বেলায় বধূ তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে হিচকি তুলে ফেলল তাও অনেক কষ্টে সৌরভ সাহেব কে বলল,, বাবা আমার অনেক ভয় করছে তারা যদি আমার সাথে কিছু করে ফেলে?”
সৌরভ সাহেব মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,, আরে তারা ভালো মানুষ কিছু করবে না, আর তুমি তো এখন থেকে তোমার মায়ের মত সংসার সামলাবা তো এতো ভয় পেলে চলবে? ভয় পেয়েও না মা।”
মেয়েটি তাও কাঁদতে লাগলো। অনেক মানুষ দেখেই সে ভয় পেয়ে যায় তার মনে হচ্ছে তারা একে প্রচুর মারবে মেয়েটি ভয়ে তার বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তার একটা বিশ্বাস সে তার বাবার কাছে থাকলে তারা তার কিছু করতে পারবে না। কিন্তু সে কি জানে তার বাবাই তাকে এদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে!
গাড়িতে উঠিয়ে বসানো হলো বধূকে। মেয়েটির মা কাঁদতে কাঁদতে বেহাল অবস্থা সে জানে না যে তার স্বামী তাদের নিজেদের মেয়েকেই বিক্রি করে দিলো।ভালো প্রস্তাব দেখেই রাজি হয়ে গিয়েছিল সৌরভ সাহেবের স্ত্রী প্রণালি। পুরো গ্ৰামে ভিড় হয়ে গেল অত বড় গাড়ি দেখে। মেয়েটি এখনো জানে না তাকে কার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সে জানেই না যে তার স্বামী কে?
হয়ত এখন থেকেই শুরু তার জীবনে ‘কালরাত’

চলবে???

[ রেসপন্স পেলে পরের পর্ব দিব নাহয় এতটুকুই শেষ করে দিব। ]

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.