হারিকেনের জ্বলন্ত অগ্নিশিখা কাঁপছে। এমনি এমনি নয়,মৃদু বাতাস বইছে যার ফলে অগ্নিশিখা দুলে চলছে। শায়েরের দিকে পিঠ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরী। এখন তো শায়ের আবার ওকে অপমান করবে বৈঠকে আসার জন্য। যার জন্য এতো রাতে এলো তাতেও কাজ হলো না। সেই শায়েরের মুখোমুখি হয়েই গেল। রাগে পরী তাই ফিরেও তাকালো না। সে চুপচাপ ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
-‘দাঁড়ান!!’ পা দুটো আপনা আপনিই থেমে যায় পরীর। ঘোমটা টা আরো বড় করে টেনে ঘুরে দাঁড়াল। শায়ের পরীর দিকে এগিয়ে এসে বলে,’এতো রাতে আপনি এখানে কেন এসেছেন?’
-‘সেই কৈফিয়ত কি আমি আপনাকে দেব?’
হাসলো শায়ের তবে শব্দ হলো না।
-‘জানতে চেয়েছি কৈফিয়ত চাইনি। আপনার ইচ্ছা না হলে বলবেন না। তবে রাতের বলা বৈঠকে আসবেন না। এখানে নতুন দুই পুরুষের আগমন ঘটেছে। তারা কেমন তা না জানা পর্যন্ত এখানে না আসাই ভালো।’
-‘আমার সুরক্ষা আমি নিজে করতে জানি।’
-‘পুরুষের শক্তির সামনে নারীর শক্তি যে নগন্য ছোট কন্যা।’
ছোট কন্যা নামটি শুনে পরী অবাক চোখে তাকায় শায়েরের দিকে। এটা কেমন নাম? শায়ের কমপক্ষে সাত আট বছরের বড় পরীর থেকে। সেক্ষেত্রে সে পরীকে নাম ধরে ডাকতেই পারে। কিন্ত তা শায়ের কখনোই করে না। আপাতত এসব না ভেবে পরী শায়েরের কথার জবাব দিলো,’পরীক্ষা করতে চান তো পারেন। এই লাঠিয়াল পরীর সাথে পারেন কি না?’
-‘আমি মেয়েদের সাথে লড়াই করি না। মেয়েরা ফুলের মতো। তাদের শুধু ভালোবাসার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। লড়াই করার জন্য নয়।’
থমকালো পরী। হারিকেনের আলোয় ভাল করে তাকালো শায়েরের পানে। ছেলেটার চোখে সুরমা সবসময়ই থাকে। এতে ভিশন মায়াবী লাগে শায়ের কে। মুখ দিয়ে যেমন সুন্দর কথা বের হয় তেমনি চোখ দিয়ে ও মায়া ছড়ায়। পরী কেমন যেন ঘোরের মধ্যে পড়ে গেল। মাথা ঘুরে উঠলো তার। আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়ত সে জ্ঞান হারাবে। তবুও পরী শায়েরের এই কথাটার ও জবাব দিলো,’ভালো কথা জানেন আপনি। তা বিয়ে করে নিলেই পারেন। দিন রাত বউকে সুন্দর সুন্দর কথা শোনাবেন।’
ওষ্ঠাধরে সূক্ষ্ম হাসির রেশ দেখা দিলো শায়েরের। সে শান্ত গলায় বলল,’বউ তো আছেই শুধু তিন কবুল পড়ে ঘরে তোলা বাকি। কিন্ত এই গরিবের যে ঘর নেই। আছে মন,আর মন দেখে তো আর কেউ আমার কাছে আসবে না।’
রাগ থাকলেও শায়েরের কথাগুলো মুগ্ধ করছে পরীকে। ওর কথাতে শুধু মায়া নয় ভালোবাসা ও জড়ানো। যা শুধু পরী নয় যে বা যারা শুনেছে তারাই মুগ্ধ হয়েছে শায়েরের প্রতি। পরী এবার কোন কথা বলে না। চুপ করে তাকিয়ে রইল।
-‘আপনি নূপুর খুঁজতে এসেছেন তাই না?কিন্ত আপনি তো এখানে আসেন না তাহলে নূপুর পড়বে কেন?’
একটু ভেবে শায়ের আবার বলে উঠল,’হবু বরের সাথে দেখা করতে এসেছেন নাকি?’
নওশাদের কথা শুনে গায়ে জ্বালা ধরে গেল পরীর। রাগে গজ গজ করে বলল,’বাজে কথা বলবেন না।আর ওটা কোথায় ঘুমিয়েছে এখনই ওটাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারবো।’
-‘বরকে মারলে আপনি যে বিধবা হবেন বিয়ের আগেই। তাছাড়া এখনই গোবরে ফেলে যে অবস্থা করেছেন বেচারা খুব তাড়াতাড়ি মরবে বোধহয়।’
শায়ের জানলো কিভাবে এসব পরীর কল্পনা?একটু ভয় ও পেলো পরী। শায়ের যদি সবাইকে বলে দেয় তাহলে কি হবে? মালা তো পরীকে খুব মারবে। পরী নিজের ভয় লুকিয়ে বলে,’ভুলে যাবেন না সামান্য এক কর্মচারী আপনি। জমিদার কন্যার দিকে আঙুল তোলার সাহস হলো কিভাবে আপনার?’
শায়ের মাথা ঝুঁকে বলে,’ক্ষমা করবেন ছোট কন্যা আমার বড় ভুল হয়ে গেছে।’
কথাটা বলে পকেট থেকে একটা মলমের কৌটা বের করে এগিয়ে দিলো সে। সকালে পরীর পা চিনতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি তার। সেদিন রাতে পরীর হোঁচট খাওয়া ও চোখ এড়ায়নি। পরীর পা যে অনেক খানি ছড়ে গেছে। সেদিকে পরীর খেয়াল নেই। পায়ে ব্যথা অনুভব করলেও পরী তাতে পাত্তা দেয় না। তবে শায়ের তা ঠিকই দেখেছে। তার কাছে মলমের কৌটা ছিল তাই সে সেটা পরীকে দিলো।
-‘আপনার পায়ে আঘাত পেয়েছেন। এটা লাগিয়ে নিলে ঠিক হয়ে যাবে।’
পায়ের জ্বালা তো মিটানো যাবে কিন্ত পরীর মনের জ্বালা কে মেটাবে??শায়ের যে ওকে অপমান করেছে তা আবারও মনে পড়ে গেল। ওর কারণেই তো সে ব্যথা পেয়েছে। ব্যথা দিয়ে আবার মলম দেওয়া হচ্ছে। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে পরী চেপে ধরে শায়েরের হাত। এতে চমকে যায় শায়ের। হাতটা টেনে হারিকেনের কাচের গায়ে চেপে ধরে হাতের তালু। প্রচন্ড গরম সে কাচ। আগুনের আচে যেন দ্বিতীয় অগ্নিশিখা। হাত পুড়ে যাচ্ছে শায়েরের। তবুও সে কিছু বলছে না। চোখদুটো বন্ধ করে রেখেছে। পরী ছেড়ে দিলো শায়েরের হাত। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,’মলমটা এখন আপনার কাজে লাগবে।’
দ্রুত পদে পরী এগিয়ে গেল অন্দরের দরজার দিকে।কিন্ত শায়েরের বলা বাক্যে সে থেমে গেল আবার। শায়ের বলছে,’সামান্য কর্মচারীকে তো ছুঁয়ে দিলেন ছোট কন্যা।’
পরী পেছন ফিরে না তাকিয়েই জবাব দিলো,’এটা মধুরতম ছোঁয়া নয় শাস্তির ছোঁয়া।’
দরজার খুলে পরী চলে যেতেই শায়ের নিজের পোড়া হাতের দিকে তাকালো। ইতিমধ্যেই কালচে হয়ে গেছে হাতটা। এই হাতে এখন ওর কাজ করা মুশকিল হবে। এই মেয়েটা প্রচন্ড জেদি আর রাগি। রাগ নাকের ডগায় সবসময়ই থাকে। জমিদার কে না জানি কত কিছু পোহাতে হয়। মাঝে মাঝে আফতাবের প্রতি মায়া হয় শায়েরের। এমন জল্লাদ মেয়ে সে আর দুটো দেখেনি। নওশাদের কপালে যে আর কি কি আছে তা ভেবেই সে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। হাতের তালুতে অপর হাত বুলাতে বুলাতে নিজের ঘরে চলে গেল।
আজ ঘুম থেকে উঠে সাবধানের সহিত পা ফেলে নওশাদ। চারিদিক সতর্কতার সাথে চক্ষু বিচরণ করলো। নাহ কোথাও গোবর নেই। খুশিমনে সে কলপাড়ে চলে গেলো। তবে অসাবধানতার বসে পা পিছলে পড়ে গেল। ফলে বাম পা মচকে গেছে। ব্যথায় নীল হয়ে গেল ফর্সা চেহারা তার। ওঠার চেষ্টা করেও উঠতে পারলো না।
নওশাদের পা মচকে গেছে শুনে অন্দরের সবাই এলো দেখতে। পরী আর আবেরজান এলো না। পরীর তো নিষেধাজ্ঞা আছে আর আবেরজান এর শরীর ভাল না। কোথায় হবু জামাই এর সাথে জমিয়ে গল্প করবে!! তাই তার মনটা ভীষণ খারাপ। এই শরীর নিয়ে সে পারে না বেশি হাটাচলা করতে। আর তার ঘরটাও দোতলায়। সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা কষ্টকর। তাই তিনি আসতে পারলেন না। নওশাদ ব্যথায় কাতরাচ্ছে কবির চিন্তিত হয়ে বসে আছে।
-‘কবির তুমি বরং ওকে শহরের কোন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও। তাহলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।গ্রামে তো ভালো ডাক্তার নেই।’
আখিরের কথায় কবির ও সায় দিল। কারণ অবস্থা সুবিধার ঠেকছে না কবিরের কাছে। নওশাদ প্রথমে অমত পোষন করলেও পরে রাজি হয়। কবির নওশাদকে নিয়ে বের হয়ে গেল।
রুপালি আর মালা ঘাটে গিয়ে ওদের নৌকায় তুলে দিলো। মালা আগে আগে চলে গেলেও পেটের ভারে আস্তে আস্তে হাটছিল রুপালি। আচানক আখিরের সামনে পড়ল সে। আখির রুপালিকে ভাল করে দেখে বলে,’আসার পর তো একবার দেখা করলি না? তা কি খবর তোর?’
ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নিলো রুপালি। এই মানুষ টাকে সে মন প্রাণ দিয়ে ঘৃণা করে। শুধুই রুপালি নয়। সোনালী,মালা আর সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে পরী। রুপালি অন্যদিকে তাকিয়েই বলে,’আপনাকে দেখে আমার রুচি নষ্ট করার ইচ্ছা ছিলো না।’
-‘ক’দিন পর বাচ্চার মা হবি আর এখনও এত তেজ কোথা থেকে আসে তোর? সম্পর্কে আমি তোর কাকা হই ভুলে গেছিস?’
-‘আমি ভুলিনি কিছুই। কিন্ত আপনি ভুলে গেছিলেন আপনি আমাদের কাকা। তাই তো নিজের হিংস্র থাবা মেরেছিলেন সোযোগ বুঝে। সোনালী নরম ছিল আর আমিও কিছুটা দুর্বল ছিলাম। কিন্ত পরী ছিল না। তাইতো পরীর হাতেই আপনার পতন ঘটেছিল। আপনার অবস্থা দেখে আমার হাসি পায়। এখন শুধু আপনার ওই নোংরা চোখদুটো উপড়ে ফেলা বাকি।’
-‘তোর সাহস তো কম না আমাকে শাসাস!!ভয় দেখাস আমাকে??সেদিনের পুচকে মেয়ে। জীব টেনে ছিড়ে ফেলব তোর বাপ ও কিছু বলবে না।’
-‘পরীর কলিজায় হাত দেবেন এতো বড় কলিজা আপনার??ওই কলিজায় তলোয়ার চালাতে পরীর হাত কাঁপবে না। সাবধান,আপনাকে কিন্ত পরী ছেড়ে দিবে না।’
রুপালি আর কথা বাড়ালো না ধীর পায়ে চলে গেল। আখির ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে রইল রুপালির দিকে। এই মুহূর্তে তার খুন করতে ইচ্ছা করছে। কিন্ত তা সম্ভব না তাই নিজের অদম্য ইচ্ছাকে মনের ভেতর কবর দিলো।
অন্দরে পা ফেলতেই ঘৃণায় দুঃখে চোখের পানি ফেলে রুপালি। নিজের আপন কাকা যে ওদের ওপর লালসার হাত বাড়াবে তা রুপালি ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি।
সময়টা ছিল রুপালির বালিকা বয়সের। আফতাব তখন সবে জেসমিন কে বিয়ে করেছে। বাবার প্রতি তখনও ক্ষোভ জন্মায়নি রুপালির। সে তখন ওসব বোঝে না। আখিরকে রুপালি খুব ভালো জানে। কাকা কাকা বলে গলা জড়িয়ে ধরতো দেখা হলেই। সেই সুযোগ টাই কাজে লাগালো আখির। হিংস্র থাবা দিলো ছোট্ট কোমল ফুলের উপর। কাকার আচরণ রুপালিকে অবাক করে দিয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে সেদিন সোনালীর কাছে সব বলেছিল। ছোট্ট রুপালির মুখে আখিরের লালসার কথা শুনে কেঁদে ফেলেছিল সোনালী। তার নিজের সাথে ও একই ঘটনা ঘটেছে। তারপর থেকে আখিরের ধারে কাছে ঘেষতো না সে। আর এখন রুপালির দিকে হাত বাড়িয়েছে শয়তান টা। সোনালী সেদিন অনেকক্ষণ আরশিতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখেছিল। কি আছে এই সৌন্দর্যে?? যার কারণে আপন মানুষ পর্যন্ত ছাড় দেয় না?? নিজের সুন্দর চেহারাকে একটা অভিশাপ মনে করে সে। তার সৌন্দর্য ই পুরুষদের আকর্ষণ করে তাকে কেউ ভালোবাসে না। কিন্ত কালো কেও তো কেউ পছন্দ করে না। তাহলে কি কালো ও অভিশাপ?? সোনালীর মনে হচ্ছে মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়াই অপরাধ। কিন্ত আল্লাহ তো নারীদের স্থান সর্বোচ্চ করেছে। মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেস্ত রেখেছে। তাহলে তো নারীর মূল্য অনেক। কারণ প্রতিটা নারীই একদিন মা হবে। তবে দুনিয়ার পুরুষ কেন মেয়েদের লালসার শিকার বানায়?? অনেক কেঁদেছিল সোনালী বারবার প্রার্থনা করেছিল আল্লাহ যেন ওর রূপ ফিরিয়ে নেয়। দরকার নেই এই সৌন্দর্যের।
কিন্ত যেদিন আখির পরীর দিকে নিজের থাবা দিলো সেদিন ই ওর কাল হয়ে দাঁড়াল। সেদিনের পর কয়েক বছর পার হয়ে যায়। পরী সবে ছয় শেষ করে সাতে পা দিয়েছে। সোনালী আর রুপালি সবসময়ই পরীকে আখিরের থেকে দূরে রাখতো। ওরা চাইতো পরী যেন এই ঘটনার সম্মুখীন না হয়। কিন্ত ভাগ্যবশত সেই একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি করে আখির। পরী দৌড়ে গিয়ে খুশিমনে কাকার কোলে চড়ে বসে। পরীর সুন্দর কোমল দেহে লালসার হাত বিচরণ করতে বড়ই ভালো লাগলো আখিরের কিন্ত পরী কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। ছোট্ট পরী বুঝে গেল আখিরের উদ্দেশ্য। তবুও সে চুপ করেই রইল। পরীর হাত টেনে আখির নিষিদ্ধ স্থানে রাখতেই পরী মুখ খিচে ফেলে। রাগটা মাথায় চড়ে বসে। আখির দেখতে পায় না পরীর লাল আভা ছড়ানো মুখখানা।
হাতে চাপ প্রয়োগ করে পরী। একধ্যানে সামনের দিকে তাকিয়েই হাতের চাপ আস্তে আস্তে বৃদ্ধি করে সে। আখির ঘাবড়ে যায় পরীর কাজে। ঠেলে সরিয়ে দিতে চায় পরীকে। কিন্ত তার শক্তি সে হারিয়েছে। পরী এতো জোরে তাকে ধরেছে যে আখির নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দিলো। এখন তার নিঃশ্বাস দিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্ত পরী তাকে ছাড়ছে না। সে পরীকে কিছু বলতেও পারছে না। প্রথম দিকে সে পরীকে চড় থাপ্পড় মেরেছে ধারালো নখ দাবিয়ে ও দিয়েছে। কিন্ত লাভ হয়নি। এই মুহূর্তে পরী হিংস্র হয়ে গেছে। তাকে থামানো কষ্টকর। ওদিকে মুখ দিয়ে বুদবুদ বের হচ্ছে আখিরের। ঠিক তখনই ছুটে এলো পরীর দুবোন। টেনে ছাড়িয়ে আনলো আখিরের থেকে। আখির মাটিতে গড়াগড়ি করতে লাগল। কিন্ত পরী থেমে রইল না। ছুটে গেল রন্ধনশালায়। বটি নিয়ে আবার দৌড় দিলো। মেয়েকে এভাবে বটি নিয়ে ছুটে যেতে দেখে মালাও ছুটে গেল।
সোনালী পরীকে টেনে ধরে আর রুপালি বটি কেড়ে নিল। পরীকে এখন না থামালে খুন সে করেই দেবে। পরীর চিৎকারে জুম্মান কে কোলে নিয়ে ছুটে এলো জেসমিন। উপস্থিত ঘটনা দেখে সেও ঘাবড়ে গেছে। কি হয়েছে জানতে চাইছে। পরী গলা ছেড়ে বলে, ‘আমাকে ছেড়ে দাও আপা। জা**রের বাচ্চাকে আমি আজ খুন করেই ছাড়বো। ওর রক্ত দিয়ে গোসল না করা পর্যন্ত আমি পরী শান্ত হবো না।’
মালা পরীকে টেনে দুটো থাপ্পড় লাগালো তারপর পরীকে নিয়ে ওর ঘরে আটকে রাখলো। জেসমিন খবর পাঠায় আফতাবের কাছে। আখিরের অবস্থা ভাল না তাই তাকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেদিন সোনালী,রুপালি প্রথম মায়ের কাছে সব খুলে বলে। এর আগে আখিরের হুমকির সম্মুখীনে পড়ে কাউকেই তারা কিছু বলেনি। কিন্ত আজ বলে দিচ্ছে। দুই মেয়েকে বুকে চেপে ধরে মালা। অশ্রুজলে ভাসায় বুক। সৌন্দর্য যে মালাকেও এই পরিস্থিতির সামনে দাড় করিয়েছিল। মা মেয়েরা যেন এক লালসার প্রাণী যে সবাই থাবা মারে।
তবে সেদিনের পর নিজের পুরষত্ব হারায় আখির। ডাক্তারের অনেক চেষ্টায় প্রাণ ফিরে পেলেও নিজের পুরষত্ব ফিরে পায় না। যার কারণে আখির আজও পরীর উপর ক্ষ্যাপা। আর পরীর মাথায় চাপা প্রতিশোধের আগুন এখনও আছে। প্রাণ চায় সে আখিরের।
কিন্ত ওই ঘটনার পর থেকে মালা পরীকে নিয়ে আরো সচেতন হয়। মালা বুঝে যায় পরী আখিরের থেকে প্রতিশোধ তুলবেই। প্রয়োজনে আফতাবের উপর আক্রমণ করতেও পিছ পা হবে না। বাপ মেয়ের লড়াই থামাতে পরীকে ঘরবন্দি করে রাখে সে। কিন্ত সোনালী চলে যাওয়ার পর আফতাব নিজেই সবাইকে অন্দরে বন্দি করে দেয়।
কিন্ত এতবছর পরও প্রতিশোধের আগুন একটুও কমেনি পরীর। আখির ও পরীর প্রতি জন্মানো ক্ষোভ যত্ন করে পুষছে। কখন যে চাচা ভাতিজীর যুদ্ধ শুরু হয় তা এখন কেউই বুঝতে পারবে না। কারণ দুজনেই ঠান্ডা মাথার খিলাড়ি।
—-
দুপুরে খেতে বসে শায়ের পড়লো বিপদে। ডান হাত টাই পুড়িয়ে দিয়েছে পরী। এখন সে খাবে কিভাবে?? সকালে দুটো রুটি খেয়েছিলো বিধায় তেমন সমস্যা হয়নি কিন্ত এখন তো ভাত মেখে খেতে হবে। শায়ের পারলো না খেতে। মালা শায়ের কে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল,’কি হইলো শায়ের??খাওনা ক্যান??’
ইতস্তত করে শায়ের প্লেটে হাত রাখতেই মালার চোখ পড়ল ওর হাতে। মৃদু চিৎকার দিয়ে মালা বলে উঠল, ‘ওমা,হাতের এই অবস্থা হইলো ক্যামনে?? এখন খাবা ক্যামনে??’
শায়ের মাথা নিচু করে বলে,’হারিকেনের সাথে লেগে পুড়ে গেছে।’
-‘একটু দেইখা কাম করবা তো!!আহারে কতখানি পুইড়া গেছে!!আহো আমি খাওয়াইয়া দেই।’
-‘নাহ বড়মা আমি পারব।’
-‘কথা কইয়ো না। তুমি তো আমার ছেলের মতোই। আমার সোনালীও তো তোমার বয়সী আছিলো। আমি খাওয়াইয়া দিতাছি।’