তোমাকে - মুন্নী আক্তার প্রিয়া

গাছের পাতা চুয়ে চুয়ে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। মাটি পিচ্ছিল হয়ে আছে বৃষ্টির পানিতে। ভয়ে হাঁটার শক্তিটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে পরী। ডাকাত দলের লোকগুলোও কাছাকাছি চলে এসেছে। পরী হাঁপাতে হাঁপাতে ঝুঁকে হাঁটুতে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তুর্য তাড়া দিয়ে বলে,

“দাঁড়ালে কেন? চলো তাড়াতাড়ি।“
“আমি আর দৌঁড়াতে পারছি না।“
“কী বলছ এসব? ওরা ধরে ফেলবে আমাদের।“
পরী আর কথা বলতে পারে না। দুর্বল শরীরটা মাটিতে এলিয়ে দিতে যাবে তখন তুর্য পরীকে ধরে ফেলে। নিঃশ্বাসও নিতে পারছে না পরী। তুর্য পরীকে পাঁজাকোলে করে একটা বড় গাছের আড়ালে বসে পড়ে। যেকোনো সময়ে ডাকাতদের হাতে পড়ে যেতে পারে। অনিশ্চয়তা নিয়ে এখানে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। এই ঘনজঙ্গলে বাড়িঘরের টিকিটাও দেখা যাচ্ছে না। মানুষ তো দূরের কথা! তার উপরে পরী সেন্সলেস হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ওকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। আবার রেখেও যাওয়া যাবে না। বৃষ্টিতে কাঁপুনি ধরে গেছে পরীর।
পায়ের আওয়াজ স্পষ্ট হচ্ছে। তার মানে ওরা এখানে চলে এসেছে। এখন আল্লাহ্’র নাম নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বাঁচালে একমাত্র আল্লাহ্ই বাঁচাতে পারবে।
কাছ থেকে আরো কয়েক জোড়া পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। পানির মধ্যে দৌঁড়ে আসলে যেমনটা শব্দ হয় তেমন। চোখেমুখে লাইটের আলো পড়তেই তুর্য মুখের ওপর হাত দেয়। চারপাশ থেকে শোরগোল শোনা যাচ্ছে। লাইটের আলো মুখের ওপর থেকে সরাতেই তুর্য হাত সরায়। কয়েকজন কাছে এসে বলে,
“তোমরা কারা?”
তুর্য অন্ধকারে ওদের কারো মুখই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না। তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছে এরা ডাকতদের কেউ নয়। তুর্য একটু অভয় নিয়ে বলে,
“আমাদের একটু সাহায্য করুন প্লিজ। ডাকাতরা আমাদের তাড়া করেছে।“
একজন বয়স্ক লোক উত্তরে বলে,
“তোমরা ঐ বাসের যাত্রী যেইডা ডাকাতরা আটকাইছে?”
“জি চাচা।“
“তোমরা এইহানে আইলা কেমনে? আর লগে মাইয়া কেডা?”
তুর্য কোনোকিছু না ভেবেই উত্তর দিয়ে দেয়,
“ও আমার বউ। চাচা আমি সবকিছু আপনাদের বলব। তার আগে আমাদের আজ রাতটা থাকার জায়গা দিন প্লিজ। আমার ওয়াইফ সেন্সলেস হয়ে গেছে।“
“হ চলো, চলো। আমগো বাসায় থাইকো আজ।“
তুর্য পরীর ব্যাগটা এক কাঁধে ঝুলিয়ে পরীকে পাঁজাকোলে করে নেয়। একটা বাগান পার হয়েই ওরা ঐ চাচার বাসায় পৌঁছে যায়। চাচা তার স্ত্রীকে ডেকে বলেন,
“পূর্বদিকের ঘরটার তালা খুইলা দাও তাড়াতাড়ি।“
পাটকাঠির বেড়া দেওয়া একটা ঘর। ওপরে টিন আর নিচে মাটি। ঘরের ভেতর আসবাব বলতে শুধু একটা চৌকি। চৌকিতে একটা তোষক, চাদর, দুটো বালিশ, একটা কাঁথা এগুলোই আছে। তুর্য পরীকে সেখানেই শুইয়ে দেয়। মহিলাটির উদ্দেশ্যে বলে,
“কোনো শুকনো কাপড় যদি দিতেন। আমাদের সব কাপড় বৃষ্টিতে ভিজে গেছে।“
“দাঁড়াও। আনতাছি।“, বলে তিনি তাদের ঘরে চলে যান। ফিরে আসেন ব্লাউজ, পেটিকোট, শাড়ি, লুঙ্গি ও একটা গেঞ্জি নিয়ে। সেগুলো তুর্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“তোমার বউয়ের কাপড়গুলো পাল্টাই দাও। আর তুমিও ভেজা কাপড় পাল্টাই নাও। আমি তুমগো খাওয়ার ব্যবস্থা করি।“
তিনি উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে যান। পুরো অন্ধকার রুমে লন্ঠনের আলো টিমটিম করে জ্বলছে। টিনের চালে বৃষ্টির ফোঁটার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তুর্য কী করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না কিছু। পরীর ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে কয়েকবার পানি ছিটিয়ে দেয় পরীর মুখে। জ্ঞান ফিরে আধো আধো ভাবে চোখ মেলে তাকায়। পরক্ষণেই ভয় পেয়ে লাফিয়ে বসে পড়ে। তুর্য পরীকে শান্ত করে বলে,
“চুপ! চুপ! ভয় নেই কোনো।“
পরী কাঁপতে কাঁপতে বলে,
“ডা..কাত! ডাকাত!”
“ডাকাত নেই। আল্লাহ্ আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে। এখন কোনো কথা না বলে ভেজা কাপড়গুলো পাল্টে নাও।“
তুর্য পোশাকগুলো পরীর দিকে এগিয়ে দিল। পরী অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে,
“আমি নিজে শাড়ি পরতে পারি না।“
“তো আমি কী করব? আমি নিজেও পরাতে পারি না। আর পারলেও তোমাকে পরিয়ে দিতাম না।“
পরী মনে মনে ভেবে পায় না একটা ছেলে এতটা ঝগড়ুটে কী করে হতে পারে? নেহাৎ পরীর সময়টা খারাপ যাচ্ছে তাই চুপ থাকাটাকেই শ্রেয় মনে করছে। এছাড়াও ঝগড়া করার মতো মানসিকতা এখন পরীর নেই। মনের ভেতর থাকা ডাকাতের ভয় এখনো যায়নি।
পরী ধীরস্থিরভাবেই বলে,
“তাহলে কী করব?”
“যেভাবে পারো পেঁচিয়ে পরে নাও।“
“আচ্ছা। আপনি বাহিরে যান।“
“এই বৃষ্টির মধ্যে আমি বাহিরে ভিজব?”
“আজব! তা নয়তো কি আমি আপনার সামনেই কাপড় পাল্টাব?”
“চুপ করো। সেটা আমি কখন বললাম?”
“আপনি চুপ করেন। আর বাহিরে যান।“
“যাচ্ছি,যাচ্ছি।“
তুর্য দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে ছিটকিনি খুলে দরজাটা একটু আলগা করে দেখে সম্মুখের ঘরের বারান্দায় ঐ চাচাসহ আরো কয়েকজন লণ্ঠন জ্বালিয়ে বসে আলাপ-আলাচোনা করছে। আলাপের বিষয়বস্তু হয়তো ডাকাতদল নিয়েই। কিন্তু কথা তো এখন সেটা নয়। তুর্য সবাইকে বলেছে ওরা স্বামী-স্ত্রী। তাহলে স্ত্রী কাপড় পাল্টানোর সময় স্বামী কেন বাহিরে যাবে? কী এক মুসিবত!
পরী ভ্রু কু্ঁচকে বলে,
“বাহিরে উঁকি দিতে বলিনি আমি।বাহিরে যেতে বলেছি।“
তুর্য একবার পরীর দিকে তাকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। বলে,
“আমি বাহিরে যাব না। তুমি কাপড় পাল্টাও।“
পরী বসা থেকে মাটিতে দাঁড়িয়ে গিয়ে ধমক দিয়ে বলে,
“শাট আপ! বাহিরে যান।“
তুর্য একটু একটু করে এগিয়ে যায় পরীর দিকে। তা দেখে পরী ভীষণ ঘাবড়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,
“আ…পনি এদিকে আসছেন কেন?”
তুর্য কোনো কথা না বলে এগোতে থাকে। এদিকের পরীর বুকের ভেতর ধপধপ আওয়াজ হচ্ছে। হার্টবিট বেড়ে গেছে। ভয়ে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। তুর্য পরীর কাছে গিয়ে পরীকে অবাক করে দিয়ে দু’হাত জড়ো করে মাথাটা নিচু করে বলে,
“যত পারো শাট আপ, শাট আপ বলো। তবুও দয়া করে আমায় বাহিরে যেতে বলো না। বাড়ির সবাই বাহিরের ঘরের বারান্দায় বসে আছে। তারা সবাই জানে আমরা স্বামী-স্ত্রী। এরজন্য আবার ঝগড়া করো না প্লিজ। অন্যকিছু বললে তারা আমাদের সন্দেহ করত আর খারাপও ভাবত। তাই এটা বলা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না।“
এক দমে কথাগুলো বলে তুর্য পরীর মুখের দিকে তাকায়। পরী চোখগুলো গোলগোল করে তাকিয়ে আছে। বুকের ওপর থেকে যেন বড় একটা বোঝা নেমে গেছে এমন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সরু চোখে তাকিয়ে বলে,
“আমরা তো জানি আমরা স্বামী-স্ত্রী নই। আপনার সামনে আমি পারব না কাপড় পাল্টাতে।“
“সেই ব্যবস্থা আমি করে দিচ্ছি।“
“মানে?”
“হারিকেন নিভিয়ে দিয়ে আমি দরজার সামনে দাঁড়াচ্ছি। তুমি কাপড় পাল্টে  নাও।“
“আপনি যদি অন্ধকারে আমার কাছে আসেন?”
“আমার যদি এমন কুমতলব থাকত তাহলে তোমার সেন্স ফেরাতাম না। অজ্ঞান অবস্থায় অনেককিছু করতে পারতাম। তাছাড়া তুমি আমায় চেনোই বা কতদিন? এমন অবস্থায় কাউকে এতটা বিশ্বাস করাও ঠিক নয়।আচ্ছা শোনো, তুমি অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়াও। আমি কাপড় পাল্টিয়ে হারিকেন নিভিয়ে দেবো। তারপর হারিকেন জ্বালানোর বাহানায় বাহিরে যাব। তখন তুমি কাপড় পাল্টে নেবে ঠিকাছে?”
“হ্যাঁ, ঠিকাছে।“
“এখন ঐদিকে ঘুরো।“
পরী অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পরই বলে,
“হয়েছে?”
“আরে বাপ! আমি মানুষ। রোবট নই। ওয়েট করো।“
তুর্য লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরে বলে,
“হয়েছে তাকাও।“
পরী ঘুরে তাকাতেই তুর্য হারিকেনের আগুন নিভিয়ে বলে,
“আমি যাচ্ছি।“
পরী চিৎকার দিয়ে দৌঁড়ে তুর্যর কাছে যায়। তুর্যর হাতের বাহু চেপে ধরে বলে,
“যাবেন না প্লিজ। যাবেন না। অন্ধকারে আমি খুব ভয় পাই।“
“কী জ্বালা! এত ডরপোক তুমি? ভূতেও ভয় পাও?”
“ভয় পেলে আমি কী করব?”
“এখন আমাকে কী করতে বলো?”
“আপনি থাকেন।“
“কাপড় পাল্টাবে কীভাবে?”
“এভাবেই।“
“সেই পানি তো খাবেই ঘোলা করে খাবে।“
“শাট আপ!”
“শুরু হয়েছে আবার!”
“চুপ।“
“হয়নি। শাট আপ হবে।“
“শাট আপ!”
তুর্য ডানহাতে কপাল চাপড়ায়। পরী বলে,
“দরজাটা হালকা খুলে আপনি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন। যাতে আমি আপনার অবয়ব দেখে বুঝতে পারি আপনি দরজার কাছেই আছেন।“
“আচ্ছা একটা কথা বলো তো। তোমার ভয় আমায় নিয়ে নাকি ভূতে?”
“দুটোতেই।“
“আমার উচিত ছিল তোমায় ডাকাতের হাতে তুলে দেওয়া।“
“ছিঃ।আপনি এটা করতে পারতেন?”
“পারিনি বলেই তো তোমার মতো আটা বস্তাকে কোলে নিয়ে এসেছি।“
“আমি আটার বস্তা?”
“তা নয়তো কী?”
“আমি স্লিম।“
“আয়নায় দেখেছ?”
“অনেকবার।“
“এখন থেকে আরো বেশি করে দেখবে। হাতির বাচ্চাও তোমার কাছে ফেইল।“
“শাট আপ!”
“ওকে মহারাণী।“
তুর্য দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে থাকে। আর পরী পেঁচিয়েই কোনো রকম কাপড়টা পরে নেয়। তারপর দুজনে একসাথেই ঘর থেকে বের হয়। বৃষ্টির জন্য উঠোন পুরো কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হয়ে গেছে। তুর্য পা পিছলে পরতে নিলেই পরী দ্রুত হাত ধরে ফেলে। তুর্য ফিসফিস করে পরীকে বলে,
“গায়ে মাংস না থাকলে কী হবে শক্তি আছে!”
“একটু আগেই না বললেন হাতির বাচ্চা আমার কাছে ফেইল?”
“মজা করে বলছি।“
“আপনি মজাও করতে পারেন?”
“তোমার কী মনে হয়?”
“আমার তো মনে হয় আপনি ঝগড়া ছাড়া আর কিছুই পারেন না।“
তুর্য মুখটা পরীর মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে বলে,
“আরো অনেক কিছুই পারি। দেখবে?”
পরী তুর্যর মুখটা সরিয়ে দিয়ে বলে,
“শাট আপ!”
এরপর তুর্যকে রেখেই হাঁটতে থাকে। তুর্য মিটিমিটি হেসে সামনে এগোয়।
ঘরের ভেতর পাটি বিছিয়ে দিয়ে পরী আর তুর্যর খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশে সবাই বসেছে। তাদের জন্য চা-বিস্কিট শুধু। কারণ সকলেরই আগেই রাতের খাওয়া শেষ। পরীর ভীষণ ক্ষুধা লেগেছিল। তাই অপেক্ষা না করেই হাত ধুয়ে খাওয়া শুরু করে। তুর্য সবার কাছে বলছে কীভাবে এখানে এলো। ডাকাতদের কাহিনীও সব বলল। সব শুনে মুরব্বিরা বলল,
“ডাকাতের উপদ্রব এইখানে বেশকিছু দিন ধইরাই। এল্লিগা গ্রামবাসী আর পুলিশরাও তক্কে তক্কে আছিল। আইজ বৃষ্টিতে ডাকাতরা যে রাস্তা আটকাইব এইডা বুঝবার পারছিলাম সবাই। আর পুলিশও ওমনই ফন্দি কইরা রাখছিল।“
পরী খেতে খেতেই বলে,
“বাসের কারো কোনো ক্ষতি হয়েছে কি?”
“ড্রাইভারের হাতে একটা কোপ দিছে। হেল্পাররেও মাইরধর করছে। তহনই অইন্য গ্রামবাসী আর পুলিশরা আইছে। যাউজ্ঞা, তোমরা সহিসালামত আছো জামাই-বউ এইডাই অনেক।“
জামাই-বউ শুনে পরীর হেঁচকি উঠে যায়। তুর্য পানি এগিয়ে দেয় পরীর দিকে।
খাওয়া শেষে ঘুমানোর সময় বাঁধে আরেক বিপত্তি। ছোট্ট একটা চৌকি। চৌকি বড় হলেও একসাথে শোয়া সম্ভব নয় একদম। ঘরে একটা চেয়ার বা পাটিও নেই যে রাতটা কোনোমতে কাটানো যাবে। পরী কাঁথাটা গায়ে টেনে শুয়ে পড়েছে। তুর্য দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। পরী কাঁথার ভেতর থেকে মুখ বের করে বলে,
“দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”
“কী করব?”
“ঘুমাবেন না?”
“তোমার মাথায় ঘুমাব?”
“ভালো কথা বললেও রাগ দেখায়!”
“তোমার মনে হয় রাগ নেই?”
“না নেই। আমি ইনোসেন্ট।“
“তোমায় দেখলেই বোঝা যায় তুমি কী!”
“শাট আপ।“
“চুপ করে ঘুমাও শাট আপ রাণী।“
পরী শোয়া থেকে ওঠে পা গুটিয়ে বসে। তুর্যর দিকে তাকিয়ে বলে,
“বসেন।“
তুর্য তবুও দাঁড়িয়ে থাকে। পরী মৃদু হেসে বলে,
“আজ ঘুমাব না কেউ। গল্প করব।“
“আমি গল্প পারি না।“
“বেশ! আমি শুনাব।“
“ব্যাপার কী বলো তো? আজ এত ভালোবাসা দেখাচ্ছ কেন?”
“মোটেও ভালোবাসা দেখাচ্ছি না। আপনি আমার উপকার করেছেন তাই আমার বিবেকে বাঁধছে আপনাকে এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখতে।“
তুর্য বসতে বসতে বলে,
“যাক! তোমার বিবেক তাহলে আছে।“
পরী আর তুর্যকে ঘাটায় না। ফোন হাতে নিয়ে চাপতে থাকে। তুর্য সেটা খেয়াল করে বলে,
“ফোন নাচাচ্ছো কেন?”
“দেখছি নেটওয়ার্ক পাই কীনা!”
“এভাবে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়?”
“যায়।“
“জানতাম না।“
“জানি সেটা।“
তুর্যও আর কিছু না বলে চুপ করে থাকে। হারিকেনের হালকা আবছা আলোতে পরী তুর্যর দিকে তাকিয়ে আছে। তুর্য ফোন নিয়ে ব্যস্ত। তুর্যকে নিয়ে পরীর মনে যেই ভয়টা ছিল সেটা এখন আর নেই। মানুষটা ঝগড়াটে হলেও যথেষ্ট ভালোমনের একটা মানুষ। ও চাইলেই পারতো পরীকে বিপদের মধ্যে একা ফেলে যেতে। অথবা চাইলেই পারে রাতের অন্ধকারে সুযোগ লুটে নিতে। কিন্তু পরী জানে, তুর্য সেটা কখনোই করবে না। ভাইয়া বলত, একটা ছেলেকে অল্প একটু চিনতে হলেও তার চোখের দিকে তাকাবি। একজন মানুষের চোখ দেখলেই বোঝা যায় মানুষটা কেমন। পরী অবশ্য এই বিষয়ে ভীষণ কাঁচা। তবে এই প্রথম আজ তুর্যের চোখে চোখ রেখেছিল। এক মুহূর্তেই মনে হয়েছিল এই মানুষটাকে বিশ্বাস করা যায়।
পরক্ষণেই পরী নড়েচড়ে বসে ভাবে,
“তাকে নিয়ে এতকিছু কেন ভাবছি আমি? বেশি ভাবতে গিয়ে যদি প্রেমে-ট্রেমে পড়ে যাই! না, বাবা! এইসব ঝামেলা থেকে আমাকে দূরে থাকতে হবে। তাছাড়া এটা ভুলে গেলেও চলবে না তার গার্লফ্রেন্ড আছে। অন্যের  ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে ভাবাও অন্যায়।“
পরী হাজারও চিন্তাভাবনা করতে করতেই বালিশের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তুর্য পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে পরী গুটিসুটি হয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এক হাতের উপর গাল রেখে অপর হাত বুকের সাথে জড়িয়ে কাৎ হয়ে শুয়ে আছে। এত বড় মেয়ে এখনো বাচ্চাদের মতো ঘুমায়। তুর্য মৃদু হেসে আবারও ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। না চাইতেও ফোন থেকে মুখ তুলে একবার পরীর দিকে তাকায়। মনের ভেতর কেন জানি মায়ানুভূতি হয়!

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.