তোমাকে - মুন্নী আক্তার প্রিয়া

প্রান্ত পরীর হাত ছেড়ে দিয়ে কানে ধরে বলে,

“স্যরি।”
পরী কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। প্রান্ত বলে,
“হাত ধরার জন্য স্যরি।”
পরীর মুখের কোনো ভাবান্তর হলো না। সেলিম ওরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। প্রান্ত কান থেকে হাত নামিয়ে বলে,
“আসলে আপনি একটা মেয়ে হয়ে এভাবে মারামারি করতে এসেছেন বিশ্বাসই হচ্ছে না।”
পরী রাগী গলায় বলে,
“অবিশ্বাসের কী আছে?”
“না। তেমন কিছু না। তবে মেয়ে হয়ে এভাবে ঝামেলায় জড়ানো ঠিক নয়।”
পরী সেলিমের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
“ঝামেলা আমি নই ঐ ছেলেটা বাঁধিয়েছে। ওর সাহস হয় কী করে আমার আব্বুর কাছে বিচার দেওয়ার?”
“আচ্ছা ওর হয়ে আমি স্যরি বলছি।”
“কে আপনি? ওর হয়ে আপনি কেন ক্ষমা চাইছেন?”
প্রান্ত আমতা আমতা করে বলে,
“উম…ওর শুভাকাঙ্ক্ষী ভেবে নিন।”
“আজকাল গুণ্ডাদেরও শুভাকাঙ্ক্ষী থাকে? তাহলে তো আপনিও গুণ্ডা।”
“এই না, না। আমাকে দেখে কি আপনার গুণ্ডা হয়?”
“মানুষের বাহিরটা দেখে ভেতর চেনা যায় না। তাছাড়া আপনাকে আমি চিনিও না। এক দেখায় কে কেমন তার সার্টিফিকেট আমি দিতে পারব না। ঐ ছেলেকে বলে দিবেন নেক্সট টাইম এসব বাল পাকনামি করতে আসলে গণপিটুনি খাইয়ে ছাড়ব।”
পরী আর কিছু না বলে চলে যায়। প্রান্ত তাকিয়ে থাকে সেদিকে। সেলিম এসে বলে,
“দেখছেন ভাই মাইয়ার তেজ?”
“হুম। মেয়েটা খুব সাহসী। আই লাইক ইট!”
“এত সাহস ভালো না।”
“মন্দ বলিসনি। যত যাই হোক ও একটা মেয়ে। ওর সবদিক ভাবা উচিত।”
“ভাবব কেমনে? মাইয়াটার মাথাভর্তি খালি রাগ আর রাগ।”
“ভালোই তো লাগে রাগী মেয়েদের।”
“হ ভাই। জীবন তেজপাতা বানানোর জন্য এমন এক পিসই যথেষ্ট।”
প্রান্ত হাসে মিটিমিটি।
.
পরী বাসায় গিয়ে কাপড়চোপড় গোছাচ্ছে। রেহেনা বেগম পরীর রুমে এসে কাপড় গুছাতে দেখে বলেন,
“কাপড় ব্যাগে ভরছিস কেন?”
“পালিয়ে যাব তাই।”
“পালিয়ে যাবি মানে? বয়ফ্রেন্ড আছে তোর? তুই যে অকর্মা। তোর তো বয়ফ্রেন্ড থাকার কথা না।”
“আমি বুঝি না তুমি কি আসলেই আমার মা?”
“তোর সন্দেহ আছে?”
“অবশ্যই আছে। একজন মা কখনো বয়ফ্রেন্ড নিয়ে খোঁটা দেয়?”
“আমি কি তোর শুধু মা? আমি তো তোর বন্ধুও। এখন বল,কোথায় যাচ্ছিস?”
“খালার বাসায় যাব।”
“কেন?”
“এমনিই।”
“তোর আব্বুর ওপর রাগ করেছিস?”
“না করার কোনো কারণ আছে? কেউ বিচার দিলেই বাসায় এসে মারতে হবে?”
“তোর আব্বুরে অনেক কিছু বলছে। তাই রাগ কন্ট্রোল করতে পারেনি।”
“আমাকে এসে বলতে তো পারত। বুঝিয়ে বলত আমায়।”
“ভুল হয়ে গেছে মা। রাগ করিস না।”
“রাগ নেই আমার।”
“এটা তুই বলছিস?”
“আর কে বলবে?”
“ব্যাগ রাখ। কোথাও যাবি না তুই।”
“আটকিয়ো না তো। থেকে আসি কয়েকটা দিন।”
——————–
মায়ের কোনো কথা না শুনেই পরী খালার বাসায় চলে আসে। খালা পরীকে দেখে ভীষণ খুশি। কুশল বিনিময় করে পরী জিজ্ঞেস করে,
“খালু কোথায় খালা?”
“কাজে গেছে।”
“আর রিমন ভাইয়া?”
“ও বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে গেছে। আজ নাকি আর আসবে না।”
পরী মনে মনে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এই ছেলেটা বাসায় থাকলেই একদম জ্বালিয়ে খাবে। পিছু তো ছাড়বেই না। নেহাৎ খালাতো ভাই তাই কিছু বলা যায় না।
পরীকে হালকা নাস্তা দিয়ে খালা আবার রান্না বসায়। পরী ড্রয়িংরুমে গিয়ে টিভি দেখতে বসে। গানের চ্যানেলে দিয়ে ফোনে ফেসবুকে লগিন দেয়। রিকোয়েস্ট চেক করতে গিয়ে একটা আইডিতে চোখ আটকে যায়। কৌতুহলবশত আইডিতে ঢোকে পরী। প্রোফাইল পিকে ক্লিক করে দেখে তুর্য একটা বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে কালো শার্ট আর কালো প্যান্ট। চোখে কালো সানগ্লাস। দেখতে সুন্দর লাগছে। পরী আইডিটা কেন জানি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। ফটোসে গিয়ে প্রোফাইল এলবামে যায়। একটা ছবি দেখে একটু নড়েচড়ে বসে পরী। একটা মেয়ের হাত ধরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছবিটা তুলেছে। ক্যাপশন দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা গার্লফ্রেন্ড হবে নিশ্চয়ই। মেয়েটা দেখতেও কম সুন্দর নয়। পরীর কেমন কেমন জানি লাগছে। গা ঝাড়া দিয়ে মাথা থেকে বিষয়টা নামিয়ে ফেলে। হাই তুলতে তুলতে খালার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। জার্নি করে আসায় বেশ টায়ার্ড লাগছে।
.
.
প্রান্তদের আড্ডাখানায় এসেছে তিথি। ছোট থেকেই প্রান্তকে দেখে আসছে। অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে ওর ছেলেটার প্রতি। কিন্তু ভাইয়ের বন্ধু বলে কখনো ভালোবাসার কথাটি মুখ ফুঁটে বলতে পারেনি। আদৌ কখনো পারবে নাকি সেটাও জানে না। প্রান্তর সঙ্গ ভালো লাগে তিথির। তিথিকে দেখে প্রান্ত এগিয়ে এসে বলে,
“সন্ধ্যার সময়ে তুমি এখানে কেন?”
“তোমার কাছে আসলাম।”
“কোনো দরকার হলে আমায় ফোন দিতে।”
“দরকার ছাড়া কি আসা যায় না?”
“যায়। তবে রাত-বিরাতে নয়। তুর্য দেখেনি?”
“ভাইয়া তো বাসায় নেই।”
“এজন্যই তো এত সাহস হলো।”
তিথি হাসে। হেসে হেসেই বলে,
“তুমি কি ব্যস্ত?”
“তুমি আসলে আমি ব্যস্ত থাকতে পারি নাকি?”
তিথি আবারও হাসে। বলে,
“তাহলে চলো ফুসকা খেয়ে আসি।”
“এখন?”
“হু এখনই। চলো না প্লিজ যাই।”
“ঠিকাছে চলো।”
সন্ধ্যার সময়টা কাটিয়ে চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার হতে শুরু করেছে। আকাশটা থম মেরে আছে। কোনো তারা নেই আকাশে। চাঁদও নেই। বৃষ্টি আসবে বলে মনে হচ্ছে। প্রান্তর পাশাপাশি হাঁটতে দারুণ লাগছে তিথির। আড়চোখে একটু পরপর প্রান্তকে দেখছে। প্রান্ত এই কথা, সেই কথা বলছে। কখনো মুচকি মুচকি হাসছে। এই ছেলের যে এত রাগ সেটা কে বলবে? আপনজনের জন্য নিজের কলিজাটাও কেটে দিতে পারবে নির্দ্বিধায়।
প্রান্ত তিথির চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,
“কী দেখছ? বাসার সামনে চলে এসেছি।”
তিথি সামনে তাকিয়ে নিজেদের বাড়ি দেখে বলে,
“এটা কী হলো? বাসায় নিয়ে আসলে কেন?”
প্রান্ত হাতটা উঁচু করে ঘড়ির সময় দেখিয়ে বলে,
“কয়টা বাজে দেখেছ? নয়টা বেজে গেছে। যেকোন সময় বৃষ্টি আসবে।”
“তুমিও বাসায় আসো না।”
“উঁহু। কাল কথা হবে। আজ আসি। তুমি বাসায় যাও।”
প্রান্ত হাঁটা শুরু করে। একসময় অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। তিথি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভাবে,
“এই ছেলের মনটা যে কীভাবে জয় করব কে জানে!”
————–
টিনের চালে বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা শরীরে ঝংকার তুলে যাচ্ছে। চারপাশে বৃষ্টির শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দই পাওয়া যাচ্ছে না। আশেপাশে কোনো রিক্সাও নেই। সিএনজি, বাস তো দূরের কথা। সামনের রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। ভাঙাচুরা রাস্তায় প্রায় হাঁটু অব্দি পানি। এখানে গাড়ির চলাচল খুব কম। রাগ হচ্ছে ভীষণ রিমনের ওপর। খালা ফোন করে যেই বলেছে পরী বাসায় এসেছে ওমনি নাচতে নাচতে সেও বাসায় চলে এসেছে। বিরক্তিকর! বান্ধবীর অসুস্থতার ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে তখনই পরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে। তখন যদি মায়ের বারণ শুনতো তাহলে এমন বিপদে এখন পড়তে হতো না। আর বৃষ্টিটাকেও বলি হারি! আসার আর সময় পেল না। বিপদ যখন আসে সবদিক দিয়েই আসে। বন্ধ চায়ের দোকানের নিচে দাঁড়িয়ে থাকার ভরসা খুঁজে পাচ্ছে না পরী। টিনের ফুঁটো দিয়ে পানি পড়ছে। বৃষ্টির ঝাপটায় অনেকটা ভিজেও গেছে। ওড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেয়। পরনের জিন্সটা হাঁটু পর্যন্ত ভাঁজ করে ছাতা মাথায় হাঁটতে শুরু করে। পানির কাছে এসে জুতোজোড়া হাতে নিয়ে হাঁটে। এতটুকু রাস্তা পার হতেই কাকভেজা হয়ে গেছে। ছাতাটা শুধু মাথাটুকুই আগলে রেখেছে। পানিটুকু পার হয়ে জিন্সটা আবার নামিয়ে ফেলে। সামনেই একটা বাসস্ট্যান্ড আছে।
বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ওর মতোই আরো কয়েকজন মেয়ে যাত্রী দেখে একটু ভরসা খুঁজে পেল মনে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার সময়ই তুর্যর দেখা মেলে। সাথে সেই মেয়েটি এবং আরো একটি মেয়ে। এরমধ্যে সেই মেয়েটিই আছে যার সাথে তুর্যর ফেসবুকে ছবি দেখেছিল। পরী দেখেও না দেখার ভান করে রইল। তবুও অবাধ্য চোখটা ঘুরেফিরে ওদের দিকেই যাচ্ছে। তুর্য একটা সিএনজি ডেকে দুজনকেই উঠিয়ে দেয়। মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে এদিকেই এগিয়ে আসে। পরী যাত্রীদের পেছনে নিজেকে আড়াল করে নেয়। কিন্তু ভাগ্য খারাপ! যাদের পিছনে ঘাপটি মেরে ছিল তারা যাত্রীভর্তি একটা বাস আসায় সেটাতেই ওঠে পড়ে। তখনই তুর্যর চোখে পড়ে যায় পরীকে। তুর্য পরীর দিকে এগিয়ে এসে বলে,
“আরে ঝগড়ারাণী।”
পরী একবার তুর্যর দিকে তাকিয়ে মুখটা বিকৃত করে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে। বৃষ্টিতে ভেজার কারণে ঠান্ডা লাগছে খুব। শীতে কাঁপছে। আর উনি আসছে ঝগড়ার মুড নিয়ে। পরীকে চুপ থাকতে দেখে তুর্য বলে,
“মুখের ভেতর কি চাল ভিজিয়েছ?”
পরী তবুও চুপ করে থাকে। তুর্য টিটকারি মেরে বলে,
“ঝগড়ারাণীর কি বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে?”
এই পর্যায়ে পরী আর চুপ থাকে না। তুর্যর দিকে ডান হাতের তর্জনী তুলে বলে,
“শুনুন মিষ্টার, সবাইকে নিজের মতো ভাববেন না।”
“নিজের মতো কী ভাবলাম মিস?”
“শাট আপ।”
“আহা! বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়নি?”
পরী দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আমি সিঙ্গেল।”
“ওহহো! তুমি তো পিচ্চি মেয়ে। তাহলে কি বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালাচ্ছো?”
“দয়া করে আপনি কি চুপ করে থাকবেন?”
“আরে বলো, বলো। প্রয়োজনে আমি তোমায় সাহায্য করব।”
“আপনার সাহায্যের কোনো দরকার হবে না আমার।”
“এত কনফিডেন্স নিয়ে বলো না মিস ঝগড়ারাণী। কখন কে কার সাহায্যে লাগে তা কি বলা যায়?”
পরী তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায়। পারলে যেন চোখের চাহনীতেই ভৎস করে ফেলবে। বাস এসে পড়ায় তর্কে না জড়িয়ে পরী বাসে ওঠে পড়ে। পেছন পেছন তুর্যও ওঠে এবং পরীর পাশের সিটেই বসে। সেটা দেখে পরী বলে,
“এত সিট থাকতে আমার পাশেই আপনাকে কেন বসতে হবে?”
“কোনো অপরিচিত ছেলে পাশে বসার থেকে পরিচিত ছেলে পাশে বসা ভালো না?”
“কে আমার পরিচিত? আপনি? চিনিনা আমি আপনাকে।”
“আরে! তুমি তো দেখি গিরগিটিকেও হার মানাবে। আমরা এত ঝগড়া করলাম ভুলে গেছ সব?”
“আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনাকে সহ্য করে কীভাবে আমি বুঝি না।”
“করে না তো। ও আমায় সহ্যই করতে পারে না।”
“এটাই স্বাভাবিক।”
তুর্য রহস্যজনক হাসি দেয়। বাস ভর্তি হওয়ার পর ড্রাইভার বাস চালানো শুরু করে। এখনো বৃষ্টি পড়ছে। পরী জানালার কাঁচটা টেনে দেয়। মোবাইল বের করে দেখে দশটা বাজতে চলেছে। বাবা-মা কি জানে ফিরে আসার কথা? তাহলে তো খুব চিন্তা করবে। পরী মায়ের নাম্বারে ডায়াল করে। রেহেনা বেগম ফোন রিসিভ করে বলেন,
“কোথায় তুই? এতবার ফোন দিলাম বন্ধ ছিল কেন? এত রাতে একা আসতে গেলি কেন?”
“উফ মা! আমায় কিছু বলতে দাও। আমি আমার বান্ধবীর বাসায় যাব এখন। কাল সকালে বাসায় আসব।”
“কোন বান্ধবী? বাসা কোথায়? আমার টেনশন হচ্ছে। তুই কোথায় আছিস বল? তোর আব্বু গিয়ে নিয়ে আসবে।”
“খালার বাসা থেকে ২০টাকা ভাড়া মাত্র। তুমি টেনশন করো না। বৃষ্টি হচ্ছে তো তাই নেটওয়ার্কে সমস্যা। আমি পৌঁছে ফোন দেবো কেমন?”
“জানাবি কিন্তু।”
তুর্য ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে,
“আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আছি ওর সাথে।”
“তুর্য না?”
“জি আন্টি। বাস স্ট্যান্ডে দেখা হয়েছে। আমি ওকে বাসায় নিয়ে আসব।”
“আমি এখন টেনশনমুক্ত হলাম বাবা। একটু দেখেশুনে নিয়ে এসো।”
“হ্যাঁ, আন্টি অবশ্যই।”
“আচ্ছা বাবা এখন রাখছি।”
ফোন কেটে পরীর হাতে মোবাইলটা ধরিয়ে দেয়। পরী কিছু বলার আগে তুর্য বলে,
“এখন কোনো বকবক করবে না একদম। তোমার মা যেন চিন্তা না করে এজন্যই আমি কথা বলে দিলাম।”
“আমি এটাই বুঝতে পারছি না, মা কেন আপনায় অন্ধের মতো বিশ্বাস করে।”
“অন্ধের মতো বিশ্বাস করবে কেন? তোমার মা বুদ্ধিমতি। তিনি মানুষ চিনেন। তোমার মতো গোবরগণেশ নয়।”
“শাট আপ!”
“শিখছ একটা ডায়লগ! কিছু হলেই শাট আপ! শাট আপ!”
“শাট আপ!”
“ঐযে আবার!”
হঠাৎ করে ড্রাইভার ব্রেক কষে। সামনে থেকে একজন জিজ্ঞেস করে,
“কী হলো?”
হেল্পার বলে,
“সামনে গাছ ভাইঙ্গা পড়ছে। ঐডা সরান লাগব। কয়জন আহেন দেহি লগে।”
বাসের বেশ কয়েকজন নেমে গেল। বৃষ্টির তেজ কমে গেছে। ফোঁটা ফোঁটা পড়ছে শুধু। জায়াগাটা এমনিতেই নির্জন। বৃষ্টি হওয়ায় আরো নির্জন হয়ে আছে। আশেপাশে গাছগাছালিতে ভরা। তুর্য পরীকে বলে,
“চলো নামি।”
“আমি নামব কেন?”
“আমি নামব তাই।”
“তো আপনি যান। আমি যাব না।”
“তোমায় বাসে একা রেখে যাব না আমি।”
“না গেলে নাই।”
“প্লিজ চলো। আমার এক পেয়েছে।”
“মিথ্যা বলার জায়গা পান না? আপনার মতলব খারাপ।”
“আমার কোনো খারাপ মতলব নেই। প্লিজ চলো।”
“বললাম তো যাব না।”
“বেশ!”, বলে তুর্য পরীর কোলের ওপর থেকে ব্যাগটা নিয়ে বাস থেকে নেমে যায়। পরীও চেঁচাতে চেঁচাতে পেছন পেছন নামে। তুর্য পাশের একটা বন্ধ দোকানের পিছনে গিয়ে বলে,
“এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো। আমি আসছি।”
“আমার ব্যাগ দিন আপনি।”
“আরে বাপ! দাঁড়াও তুমি।”
পরী বিরক্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তুর্য পরীর ব্যাগ থেকে পানির বোতল নিয়ে হাত, মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে এগিয়ে আসতেই ওপাশ থেকে অনেকগুলো লোক বাসে ওঠে। বাসের সবাই চেঁচামেচি শুরু করে। যারা গাছ ওঠাতে গেছিল তাদেরও আটক করেছে। পরী চিৎকার করতে যাবে তখন তুর্য পরীর মুখ চেপে ধরে দোকানের পিছনে নিয়ে যায়। পরী শব্দও করতে পারছে না। তুর্যর থেকে নিজেকে ছাড়াতেও পারছে না। তুর্য ফিসফিস করে বলে,
“প্লিজ চেঁচামেচি করো না প্লিজ। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না।”
কয়েক জোড়া পায়ের শব্দ পেয়ে তুর্য পরীকে নিয়ে পাটাতন দোকানের নিচে গাছের আড়ালে বসে পড়ে। লোকগুলো বলছে,
“আশেপাশে মনে হয় আরো মাইনষে বাস থেইকা নামছে। ভালো কইরা দেখ কোনে কোনে আছে।”
কথাগুলো কানে আসতেই পরীর সমস্ত শরীর ভয়ে ঠান্ডা হয়ে যায়। চোখ উপচে পানি আসতে চাইছে। এক হাতে তুর্যর শার্ট খামচে ধরে। পাটাতন হওয়ায় জংলী গাছ ও কচু গাছে ভর্তি। তাই তুর্য আর পরীকে না পেয়ে ওরা ফিরে যায়। বাসের লোকজনের চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে। পরী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তুর্য ফিসফিস করে বলে,
“কান্না করো না প্লিজ। ওরা বুঝতে পেলে কিন্তু আমাদেরও ধরে ফেলবে।”
পরী কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
“ওরা কারা?”
“ডাকাত। এখন বুঝতে পারছি মাঝখানে গাছ পড়ার বিষয়টা। ঝড় তো হয়নি যে গাছ ভেঙে পড়বে। ঐটা ডাকাতদেরই প্ল্যান ছিল।”
“এখন কী হবে?”
“তুমি কেঁদো না। আমি পুলিশকে কল করছি।”
ফোন বের করে দেখে এক দাগও নেটওয়ার্ক নেই ফোনে। বৃষ্টি আবার শুরু হয়েছে। তুর্য ফোনটা পকেটে রেখে বলে,
“আমাদের এখান থেকে দ্রুত যেতে হবে। কারো বাসায় ওঠে সব জানাতে হবে।”
পরী কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“আমার খুব ভয় করছে।”
তুর্য পরীর এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
“আমি আছি সাথে।”
ধীরধীর পায়ে দুজনে বেরিয়ে আসে পাটাতনের নিচ থেকে। ডাকাত দলের দুজন আবছা বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে ওদের দেখে ফেলে বলে,
“ঐ দেখ কারা জানি পালাইতাছে। ধর তাড়াতাড়ি।”
ওদের আওয়াজ শুনেই পরী জোরে জোরে কান্না শুরু করে। ভয়ে পা-ও চলছে না। তুর্য শক্ত করে পরীর হাত ধরে দৌঁড়াতে থাকে। পেছন পেছন আসে ডাকাতের লোক।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.