“আসসালামু আলাইকুম বেয়াইনসাব।”
পরী বিড়বিড় করে বলে,
“শালায় আবার গান শুরু করবে নাকি!”
কিন্তু মুখে লম্বা হাসি ফুঁটিয়ে বলে,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভালো আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ্ বেয়াইনসাব। আপনি?”
পরী মৃদু হেসে বলে,
“জি, আলহামদুলিল্লাহ্।”
রেহান চাচির দিকে তাকিয়ে পরীকে পিঞ্চ মেরে বলে,
“বেয়াইনসাব মনে হয় খুব শান্তশিষ্ট চাচি।”
চাচি হোহো করে হেসে বলেন,
“প্রথম দেখা তো তাই এমন মনে হচ্ছে। খুব দুষ্টু ও।”
“দেখে বোঝাই যায় না।”
পরী ঠিক বুঝতে পারছে খোঁচা মারা কথাগুলো। কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না। একবার যদি এই কেলেঙ্কারির ঘটনার কথা আব্বুর কানে যায় তাহলে যে কী হয়ে যাবে তা আল্লাহ্ মালুম। তাই মনের ভেতর রাগ, ভীতি নিয়েও মুখে হাসি ভাবটা ধরে রাখতে হচ্ছে। তবে মনে মনে এটাও ভেবে নিয়েছে একবার শুধু বাঘে পাওয়া যাক তাকে!
অবশেষে সেই সুবর্ণ সুযোগটা এসেই পড়ে। রোজের বাবা-মায়ের জোড়াজুড়িতে সকলেই খেতে বসেছে। পরীর সম্মুখের চেয়ারে বসেছে তুর্য। ডানপাশে মেহু। আর তারপরের সিরিয়ালের চেয়ারগুলোতে বাকিরা বসেছে। কোথা থেকে উড়ে এসে রেহান একটা চেয়ার টেনে পরীর পাশে বসে পড়ে। পরী তখন রোষ্ট ছিঁড়ে মাত্র মুখে দিচ্ছিল। অর্ধেক মুখে নিয়েই রেহানের দিকে তাকায়। রেহান তখন ভিডিও করছিল। বলে,
“আরে আরে তাকিয়ে থাকলে হবে নাকি? খান।”
পরী হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে। সামনে বসে থাকা তুর্য সবটাই দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে। না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করতে। গলার কাঁটা মনে হচ্ছে রেহানকে তুর্যর কাছে। রেহানের সাথে জোড়াজুড়ির এক পর্যায়ে তুর্যর দিকে চোখ যায় পরীর। তুর্যর রাগান্বিত মুখটা দেখার মতো ছিল। এই সুযোগটাও হাত ছাড়া করে না পরী। হাত ধুয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে রেহানকে বলে,
“ঐদিকে চলেন। কথা আছে।”
“আগে খেয়ে নিন।”
“না। আগে কথা বলব।”
অগত্যা রেহানও উঠে দাঁড়ায়। তুর্য আর চুপ থাকতে না পেরে পরীকে ডাকে। পরী পেছনে তাকিয়ে বলে,
“কী?”
তুর্য নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বলে,
“এভাবে খাবার রেখে যেতে নেই।”
পরী উত্তর দেওয়ার আগে রেহান তুর্যর দিকে তাকিয়ে বলে,
“ডোন্ট ওয়ারি ব্রো! আমি বেয়াইনসাবকে খাইয়ে দেবো।”
তুর্যর মুখ দেখে মনে হচ্ছে কেউ আগুনে ঘি ঢালল। পরীও আর কথা বাড়ালো না। একটু দূরে যাওয়ার পর পরী বলে,
“কী সমস্যা?”
রেহান ক্যামেরায় ছবি চেক করতে করতে বলে,
“কীসের সমস্যা?”
“সেটা তো আপনি বলবেন। সেই শুরু থেকে খোঁচা মেরে কথা বলে যাচ্ছেন। আবার দেখার পর থেকেই আঠার মতো পিছনে লেগে আছেন।”
রেহান এবার ক্যামেরা থেকে চোখ সরিয়ে পরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“সেটা কি একজন পুলিশ অফিসারকে লাভ ইউ বলার সময় মনে ছিল না? শুধু তাই নয়। পাবলিক প্লেসে ফ্লাই কিস পর্যন্ত দিয়েছ।”
পরী থতমত খেয়ে বলে,
“ইচ্ছে করে দিয়েছি নাকি। ওটা তো ডেয়ার ছিল।”
এরপর কথাটা ঘুরিয়ে ফেলার জন্য আবার বলে,
“আর আপনি আমায় সবার সামনে আপনি বলেন অথচ এখন তুমি বলতেছেন।”
“তুমি আমার চেয়ে যথেষ্ট ছোট তাই তুমি বলেছি। সবার সামনে তখন আপনি বলেছি ভদ্রতার খাতিরে। কিন্তু তোমার এই ডেয়ার ডেয়ার গেমের মজা আমি বোঝাব।”
পরী ভীতি চোখে তাকিয়ে বলে,
“কী করবেন?”
রেহান একটু ভাবান্বিত হয়ে বলে,
“কী করা যায় বলো তো?”
পরী এদিক-ওদিক তাকিয়ে এক হাত দিয়ে কান ধরে বলে,
“এবারের মতো মাফ করে দিন প্লিজ। আর এমন ডেয়ার খেলব না। সত্যি বলছি।”
“উমম! দিতাম। যদি তোমার বয়ফ্রেন্ড ঐদিন মিথ্যে না বলত।”
পরী ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আমার বয়ফ্রেন্ড মানে?”
রেহান তুর্যর দিকে আঙুল তুলে বলে,
“ঐ ছেলেটা তোমার বয়ফ্রেন্ড না?”
পরী রেহানের হাতের ইশারা অনুসারে তাকিয়ে বলে,
“না।”
“তাহলে কে?”
“কেউ না।”
“হুম বুঝি, বুঝি।”
“আজব। কী বুঝেন?”
“ঐযে কেউ না!”
বলে মুখ টিপে হাসে রেহান। পরী দাঁত কটমট করে বলে,
“হাসছেন কেন?”
“এমনি।”
“এমনি তো না। কারণ আছে নিশ্চয়ই।”
“ওর সাথে ঝগড়া বা মনোমালিন্য এমন কিছু হয়েছে? হলে আমায় বলতে পারো। আদারওয়াইজ আমরা তো বেয়াই-বেয়াইন। সবকিছু আলাপ-আলোচনা করতেই পারি।”
“ধুর! বললাম তো না।”
“মিথ্যে বলে লাভ নেই। আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। আমি কিন্তু পটব না।”
পরী এবার ডান হাতের তর্জনী তুলে বলে,
“বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু।”
কিন্তু মনে মনে বলে,
“এবারই সুযোগ। শালা কুত্তা ফাজিল তুর্য প্রচুর জ্বালাইছ আমায়। এবার আমার পালা। বেয়াই সাহেবের গফ আছে মানে তার আমার প্রেমে পড়ার কোনো চান্স নাই। আর এজন্যই একে হাতিয়ার করে আমি তোমায় জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে মারব।”
রেহান হেসে বলে,
“তাহলে কম কম করব?”
উত্তরে পরী প্রশস্ত হাসি দিয়ে বলে,
“একদম না বেয়াই সাহেব। গফ থাকুক আর বউ থাকুক বেয়াই আর বেয়াইনের মধ্যে কি আর অন্য কেউ বাঁধা হতে পারে বলেন?”
রেহান নিজের ঠোঁট নিজেই কামড়ে ধরে ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“কী ব্যাপার? বেয়াইন দেখি পাল্টি খেয়ে গেল।”
“বাদ দেন তো এসব। আপনার জন্য তো আমার খাওয়াই হলো না। ঐদিকে সবার খাওয়া শেষ হতে চলল।”
রেহান এবার সিরিয়াস হয়ে বলে,
“ওহ হ্যাঁ। চলো।”
পরী আর রেহান গিয়ে আগের জায়গাতেই বসল। সবার খাওয়া ততক্ষণে প্রায় শেষ। চাচি পরীকে তাড়া দিয়ে বলে,
“তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। আমরা রোজের কাছে যাচ্ছি।”
পরী হেসে বলে,
“আচ্ছা।”
সকলে খাওয়া শেষ করে রোজের কাছে যাচ্ছে। পরীকে পানি, গ্লাস, খাবার সব এগিয়ে দিচ্ছে রেহান। সামনে বসে এসব দৃশ্য হজম করছে তুর্য। তিথি উঠে যাওয়ার সময় তুর্যকে বলে,
“ভাইয়া? খাচ্ছো না কেন?”
তুর্য শুধু একবার তিথির দিকে তাকাল। কোনো উত্তর না দিয়ে আবার পরী আর রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে। তিথি তুর্যর হাত ধরে বলে,
“না খেলে উঠো। চলো।”
তুর্য দৃষ্টি না সরিয়েই বলে,
“তুই যা।”
পরী খেতে খেতে তিথিকে বলে,
“আরে থাক না! খাচ্ছে খাক।”
তিথি পরীর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
“তুমি এমন কেন করছ পরী? ভাইয়া রেগে কখন কী করে বসবে!”
তিথির দৃষ্টির ভাষা বুঝেও পরী সেটা এড়িয়ে গেল। আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল। তিথি এবার অসহায়ভাবে প্রান্তর দিকে তাকায়। প্রান্ত ইশারায় তিথিকে সরতে বলে। তিথি সরে যাওয়ার পর প্রান্ত তুর্যকে টেনে তোলে। এক প্রকার জোর করেই বেসিনের কাছে নিয়ে গিয়ে হাত ধুইয়ে দেয়। রাগে তুর্যর চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। প্রান্ত তুর্যর দিকে তাকিয়ে বলে,
“জেলাস ব্রো?”
তুর্য রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,
“ইচ্ছে করছে শালার নাকটা এক ঘুষিতে ফাঁটিয়ে ফেলি। পুলিশ হয়েছে তো কী হয়েছে? মাথা কিনে নিয়েছে নাকি? শুধু ওর বোনের সাথে পরীর ভাইর বিয়ে হচ্ছে বলে দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করছি।”
প্রান্ত মুখ টিপে টিপে হাসছে। তুর্য সেটা দেখতে পেয়ে প্রান্তকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে,
“হাসছিস কেন তুই? খুব মজা লাগছে না তোর? তোর তো আনন্দ লাগবেই। তুই তো চাস না পরী আমার হোক।”
প্রান্ত এতক্ষণ হাসলেও এবার তুর্যর হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“এটা তুই ভুল বললি। আমি যদি সত্যিই চাইতাম যে, পরী তোর না হোক তাহলে অনেক আগেই আমি পরীকে বিয়ে করতে পারতাম। পরী নিজে সেই সুযোগ আমায় দিয়েছিল। আমি চাইলেই পারতাম সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরীকে বিয়ে করতে। কিন্তু আমি সেটা করিনি। কারণ আমি তখন জানতাম, পরী আমায় নয় তোকে ভালোবাসে। আর এটাও জানতাম একটা সময় তুই ঠিকই পরীর ভালোবাসা বুঝতে পারবি। রিনির সাথে তোর সম্পর্কের কথা জানার পর হাজারবার বলেছিলাম, ঐ মেয়ের সাথে তোর সম্পর্ক টিকবে না। কারণ ঐ মেয়ে তোর লেভেলের না। শুনেছিলি তুই আমার কথা? আমি মারামারি করতাম, গুণ্ডামি করতাম তাই তুই আমার কোনো কথাই তখন বিশ্বাস করিসনি।
কিন্তু বিশ্বাস কর দোস্ত, যখন থেকে আমি জেনেছি পরী তোকে ভালোবাসে তখন থেকেই আমি পরীর প্রতি আমার সব অনুভূতি আটকে রেখেছি। প্রথমে কষ্ট হয়েছিল কিন্তু পরে ঠিক হয়ে গেছে। আর যখন তিথি আমায় বলল, তুইও পরীকে ভালোবেসে ফেলেছিস তখন খুব খুশি হয়েছি।”
তুর্য কী বলবে বুঝতে পারছে না। শুধু শক্ত করে প্রান্তকে জড়িয়ে ধরে। প্রান্ত তুর্যর পিঠে চাপড় দিয়ে বলে,
“ভালোবাসি রে দোস্ত।”
“তোকে উল্টাপাল্টা বলার জন্য মাফ করে দিস দোস্ত।”
“ধুর! বন্ধুত্বের মধ্যে এসব কোনো ম্যাটার করে না।”
পরী আর রেহান খাওয়া শেষ করে গল্প করছে। যেখানে তুর্য আর প্রান্ত দাঁড়িয়ে তার থেকে কিছুটা দূরে। রেহান ওর গার্লফ্রেন্ডের কথা বলছে আর হাসছে। পরীও হাসিতে যোগ দিলেও আড়দৃষ্টিতে বারবার তুর্য আর প্রান্তকে দেখছে। দুজনের আলিঙ্গন আর ছলছল করা চোখ দেখে পরী ভীষণ খুশি হয় মনে মনে। ওদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
“সারাজীবন বন্ধুত্বটা যেন এমনই গাঢ় থাকে।”
ওদের কথা বলার ফাঁকে গুরুজনরা সবাই চলে গেছে। পরী আশেপাশে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না। রেহান জিজ্ঞেস করে,
“কাউকে খুঁজছ?”
“আমার বাড়ির লোকজন কোথায়?”
পেছন থেকে প্রান্ত বলে,
“আরে তুমি এখানে? সবাই তোমায় খুঁজে খুঁজে হয়রান।”
পরী বলে,
“কোথায় সবাই?”
“সবাই চলে গেছে। আমি, তিথি আর তুর্য আছি। তিথি তুর্যর সাথে এখনই চলে যাবে। আমি তোমায় খুঁজতে আসলাম।”
পরী মনে মনে বলে,
“ওহ আচ্ছা তুর্য তাহলে এখনো যায়নি!”
সম্মুখে হেসে বলে,
“আচ্ছা সমস্যা নেই। আমার বেয়াই আছে না? সে আমায় দিয়ে আসবে।”
এরপর রেহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কী বেয়াই দিয়ে আসবেন তো?”
“কেন নয়?”
কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে প্রান্ত বলে,
“রেহান ভাইকে কষ্ট করতে হবে না। আমি তোমায় বাড়িতে দিয়ে আসব। তাছাড়া তার বোনের গায়ে হলুদ। এখানে কত কাজ আছে তার জানো তুমি?”
পরীকে আর কিছু বলতে না দিয়েই প্রান্ত পরীর হাত ধরে রেহানকে বলে,
“ভাই তাহলে ভালো থাকেন। কাল বিয়েতে দেখা হচ্ছে।”
“আচ্ছা ভাই। সাবধানে যাইয়েন।”
প্রান্ত পরীর হাত ধরেই বাইরে নিয়ে যায়। ফাঁকা রাস্তায় দুজনে হাঁটতে থাকে। পরী হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,
“আমার হাত ধরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? হাত ছাড়েন।”
“ছাড়ব। তবে এখানে নয়।”
প্রান্তর কথা শুনে এবার পরীর মনে ভয় হচ্ছে। প্রান্ত যে বলল তিথি আর তুর্য আছে। তাহলে ওরা কোথায়? প্রান্ত কী মিথ্যা বলে নিয়ে আসলো!
চারপাশে ঝাউগাছ। আর মাঝখানে একটা ল্যাম্পপোস্ট। সেখানে গিয়ে প্রান্ত হাত ছাড়ে। পরী বলে,
“এখানে কেন নিয়ে আসলেন আমায়? আপনি যে বললেন তুর্য আর তিথি আছে? ওরা কোথায়?”
“এইতো জান! আমি এখানে।” বলে, ঝাউগাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে তুর্য। হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলে,
“এত চোখে হারাচ্ছো কেন আমায়?”
পরী রাগ দেখিয়ে বলে,
“একদম বাজে কথা বলবেন না। আমি কখন চোখে হারালাম আপনাকে?”
প্রান্ত বলে,
“তোর পরীরে এবার তুই রাখ। ঐদিকে তিথি গাড়িতে একা। আমি যাই।”
“যা। সাবধানে পৌঁছে দিস।”
“না রে, আমি তো ওরে খেয়ে ফেলব।”
“মেরে ফেলব তোরে।”
প্রান্ত হেসে সেখান থেকে চলে যায়। পরীও চলে আসা ধরলে তুর্য পরীর হাত চেপে ধরে বলে,
“তুমি কোথায় যাচ্ছ পাখি?”
“কীসব উদ্ভট নামে ডাকছেন? কখনো জান, কখনো পাখি!”
“তুমি আমার জান, পাখি, কলিজা, কিডনি, নাড়িভুঁড়ি সব!”
পরী মুখটা বিকৃতি করে বলে,
“ইয়াক ছিঃ! হাত ছাড়েন।”
“হাত ধরেছি কি ছাড়ার জন্য? অনেক কষ্টে বুঝিয়ে শুনিয়ে সবাইকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। তোমায় পেয়েছি এবার একা। এখন বলো, ঐ পু্লিশ ব্যাটার সাথে তোমার এত কীসের পিরিত?”
“আপনাকে কেন বলব?”
“তো কাকে বলবে?”
“কাউকেই বলব না।”
“এইযে সুন্দর হাতটা তোমার? এই হাত আর হাত থাকবে না যদি নেক্সট টাইম দেখি ঐ পুলিশের সাথে পিরিতের আলাপ করেছ। শুধু ঐ পুলিশই না, অন্য কোনো ছেলের সাথেই এত হেসে হেসে কথা বলবে না।”
“বলব। একশো বার বলব। তাতে আপনার কী?”
তুর্য দুই হাতে পরীর গাল চেপে ধরে মুখটা কাছে এনে বলে,
“জ্বলে আমার। কষ্ট হয়।”
পরী তুর্যর হাতে ধরে হাত সরানোর চেষ্টা করছে। মুখ দিয়ে কথাও বের হচ্ছে না। অনেক কষ্টে এতটুকুই বলে,
“ব্যথা পাচ্ছি আমি!”
তুর্য হাত আলগা করে দেয়। আলতো করে গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
“স্যরি। লেগেছে খুব? আসলে রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।’ বলে দু হাত দিয়ে কান ধরে।
“এই দেখো কান ধরে স্যরি বলছি।”
পরী কিছু না বলে তুর্যর পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ধরে। তুর্য পরীর হাতের কনুইয়ের উপর চেপে ধরে বলে,
“সমস্যা কী? আমি কি তোমায় খেয়ে ফেলতেছি? পালানোর চেষ্টা করছ কেন? আমার কথা শেষ হয়নি।”
তুর্যর ধমকে বলা কথাগুলোয় পরীর কান্না চলে আসে। ভাঙা ভাঙা গলায় বলে,
“আমি বাসায় যাব।”
তুর্য আবার ধমক দিয়ে বলে,
“কাঁদছ কেন হ্যাঁ? একটু ধমক দিলেই চোখে পানি টলমল করে একদম। মেয়েদের এই ছিঁচকাঁদুনে স্বভাবটাই আমার বিরক্ত লাগে।”
পরী ঠোঁট উল্টে কেঁদে বলে,
“সহ্য করতে বলল কে? বকবেন আপনি আর আমি কাঁদলেই দোষ?”
তুর্য আচমকাই পরীকে বুকে জড়িয়ে নেয়। মাথায় হাত বু্লিয়ে বলে,
“স্যরি পাগলী। আর বকব না।”
পরী ঝাটকা মেরে তুর্যকে সরিয়ে দিয়ে বলে,
“তুই আমায় বকলি না? হাতে ব্যথাও দিয়েছিস। দেখিস তুই কাল আমি বিয়েতে কী করি!”, বলে হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে রাস্তায় হাঁটা ধরে। পেছন পেছন তুর্যও আসে। তা দেখে পরী ধমক দিয়ে বলে,
“আসবি না তুই পেছন পেছন।”
তুর্য মুচকি হেসে বলে,
“তুমি কাঁদলে যে এমন বাচ্চাদের মতো লাগে জানতাম না তো। সিরিয়াসলি বলছি, তোমার ঐ ঠোঁট উল্টিয়ে যখন কাঁদো তখন একদমই বাচ্চা লাগে।কী যে কিউট লাগে!”
পরী রাস্তা থেকে একটা ইটের টুকরো তুলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
“তুই যাবি নাকি ঢিল মারব?”
তুর্য দুই হাত উপরে তুলে বলে,
“এই না! এটা ঢিল মারলে কপাল ফেঁটে যাবে।”
“তাহলে আসবি না আমার পিছনে।”
“এই রাস্তায় রাতের বেলা পরীর মতো সুন্দর পরী হেঁটে হেঁটে যাবে যদি কোনো বিপদ হয়? তখন কী হবে?”
“তোরে কি আমি টাকা দিয়ে রাখছি আমায় বাঁচানোর জন্য?”
“যেখানেই পরী সেখানেই জ্বীন। আমি তোমার জ্বীন বুঝছো?”
পরী এবার ইটের টুকরাটা সত্যি সত্যি ছুঁড়ে মারে। তুর্য ক্যাচ ধরে বলে,
“এখন ধরতে না পারলেই তো আমার কপাল ফাঁটত।”
“খুশি হতাম।” বলে, পরী আবার হাঁটা শুরু করে। একা একাই হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে যায়। তুর্যর কোনো কথা তো শুনতে পাচ্ছে না। পেছনে তাকিয়ে দেখে তুর্য নেই। পুরো রাস্তা ফাঁকা। পরী ভয়ে ফাঁকা একটা ঠোক গিলে আর মনে মনে তুর্যর গুষ্টি উদ্ধার করছে। পরী ভয় নিয়েই পা টিপে টিপে এগোতে থাকে। পেছন থেকে গাড়ির শব্দ পেয়ে দেখে একটা সিএনজি আসছে। পরী রাস্তার কিনারে চলে যায়। সিএনজি পরীর পাশাপাশি এসে থামে। কিছু বুঝে উঠার আগেই পরীকে টান দিয়ে একজন সিএনজির ভেতর নিয়ে যায়। পরী ভয় পেয়ে ‘ও আম্মা গো’ বলে চিৎকার দেয়। পুরুষালী হাতটি পরীর মুখ চেপে ধরে বলে,
“আম্মা গো না বলো, ও জামাই গো।”
পরী হাতের মধ্যে কামড় দিতেই তুর্য ‘ওহ্! বাবা।’ বলে হাত সরিয়ে নেয়। পরী ধমক দিয়ে বলে,
“শালা!”