আমি কথা বললাম না কোনো।কারণ আমার কাঁন্না পাচ্ছে ভীষণ। কি কথা বলবো যেটায় বলতে যাবো কিছুই বলতে পারবো না কেঁদে দিবো।
--কোথাও যাওয়ার প্লান আছে নাকি? কই আমাকে তো বললে না।নাকি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি বলে আমাকে রেখেই ঘুরাঘুরির প্লান করছো।
আমি তাও কোনো উত্তর দিলাম না।উনি রেগে আছেন ভীষণ ভাবে।তবে আমার সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলার চেষ্টা করছেন।
--উনি আবার বললেন,কতবার ফোন দিয়েছি ফোন ই যদি না তুলবে তাহলে ফোন ইউজ করার প্রয়োজন কী দিয়া।
--আমি বাইরে থেকে ব্যাগ টা নিয়ে এসে আবার কাপড় গোছাতে শুরু করলাম।আমার ফোন উনার হাতে।উনার হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিয়ে রিয়াকে ফোন করার জন্য রিয়ার নাম্বার ডায়াল করতেই উনি আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলেন।
--আমি এবার বললাম আমার ফোন টা দিলে খুশি হতাম।ভাইয়াকে বা রিয়াকে রাস্তায় এগিয়ে আসতে বলবো।
--ও বাড়িতে যাবে। আমাকে বললেই হতো,একসাথেই যাবো চলো।
--নো নিড।
--উফফ বউ বেশী শিক্ষিত হলে সমস্যা।। ইংলিশে গালি দিলেও বুঝবো না।
--আপনাকে গালি দেওয়া হয় নি।নো নিড বলেছি।
--কিসের নিড আছে আর কিসের নেই আমি ভাল বুঝবো।চলো এক সাথে যাবো।
--কেনো জোর করছেন আপনি?সারাজীবন কী আপনার জোর ই চলবে।
--দিয়া চলো এক সাথে যায়।তোমার সাথে কথা আছে আমার,যেতে যেতে বলবো।আমি বুঝতে পারছি তুমি রেগে আছো।তোমার রাগ করাটা স্বাভাবিক।আমার কথা শুনলে তুমি বুঝতে পারবে।
--আপনাকে যেতে হবে না,আপনার সাথে আমি কোথাও যেতে চাই না।এমন কি আপনার মতো বেঈমানের সাথে আমি থাকতেও চাইনা।আমি আপনার যোগ্য না তাইনা?এইজন্য আমাকে আড়াল করে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে বিজি থাকতে হয় আপনাকে।আমাকে বললেই হতো।আমি নিজেই চলে যেতাম।কেনো আপনি আমাকে এইভাবে কষ্ট দিলেন।ভেতরে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে মন,ব্যাথায় জর্জরিত হৃদয়।আপনি আমাকে ছোট পেয়ে দিনের পর দিন ঠকিয়ে যাচ্ছেন।আর একদিন এক সেকেন্ড ও আপনার সাথে নয়।কথা গুলো বলেই কেঁদে দিলাম।ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়ে যেতেই উনি আমার হাত ভীষণ জোরে চেপে ধরলেন।এত জোরে চেপে ধরলেন মনে হচ্ছে রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।উনি সাথে সাথে দরজা লাগিয়ে দিলেন কাপড়ের ব্যাগ বাইরে ফেলে দিলেন।দরজার সাথে শক্ত ভাবে চেপে ধরলেন দুই বাহু।ব্যাথায় অবস হয়ে যাচ্ছি আমি।উনার মুখ যেনো শুকিয়ে এসছে আমার কথা শুনে।উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
"এসব কি বলছিস তুই দিয়া?তুই আমার সাথে থাকতে চাস না।আমি বেঈমান,আমি তোকে ঠকাচ্ছি।আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাস তুই।কিন্তু কেনো দিয়া আমার অপরাধ কী?"
"অপরাধ আপনার না,অপরাধ আমার কারণ আমি আপনার যোগ্য না তাই?"
"দিয়া ডোন্ট টক ননসেন্স।আমার চোখের দিকে দেখ কোনো বেঈমানি আছে এই চোখে।আমার সারাজীবনের ভালবাসা একটা ফোন কলে মিথ্যা হয়ে গেলো।সত্যর থেকে কি মিথ্যার শক্তি এত বেশী দিয়া আগে তো জানতাম না।"
"আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাইনা। ছাড়ুন আমার লাগছে খুব।"
"আমার মনে তোর কথা যতটা লেগেছে তার থেকে কি বেশী লাগছে।"
"আমি ছাড়া অন্য মেয়ের সাথে আপনি সময় কাটান সেই ব্যাথার থেকে কী বেশী লেগেছে আপনার মনে।"
"--দিয়া শান্ত হ প্লিজ।আমার কথা শোন,রাগ অভিমান সব ঠিক হয়ে যাবে।আমাকে কিছু বলার সুযোগ দে প্লিজ।আমার ধৈর্যর সীমা অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে।পানি কেনো তোর চোখে।নিষেধ করেছি না কাঁদবি না।"
"আমার কোনো রাগ অভিমান নেই?আমার ফোন দিন আমি ভাইয়াকে ফোন দিবো?"
"কাউকে ফোন দিতে হবে না।"
"আমার পারসোনাল ম্যাটার সেটা।"
"কিসের পারসোনাল ম্যাটার,তুই আর তোর সব কিছুই আমার,আলাদা ভাবে পারসোনাল হলো কবে।"
"ছাড়ুন আমায় প্লিজ।জাস্ট অসহ্য লাগছে আমার।"
ওকে ছেড়ে দিচ্ছি, জাস্ট পাঁচ মিনিট।উনি আমার হাত ছেড়ে দিলেন।এদিক ওদিক খুজে উনার ব্যাগ থেকে প্যাড আর পেন বের করে কিছু লিখছেন।উনি আমায় যখন ধরেছিলেন আমার হাত গরমে পুড়ে যাচ্ছিলো।এত তাপ কেনো উনার শরীরে।উনার কি জ্বর।এত তাপমাত্রা নিয়ে বাইক চালিয়ে আসছিলেন ঢাকা থেকে।চোখ মুখ ভীষণ টলমল করছে উনার।উনি প্যাডে কিছু লিখে আমার দিকে ছুড়ে মেরে বেরিয়ে গেলেন ছাদের দিকে।
কাগজ টা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করে চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে আমার।
"দিয়া একটা কথা তোমাকে বলা হয়নি, ভেবেছিলাম তোমার এডমিশন শেষ হলে বলবো।আমাদের মাঝে এমন এক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে তোমাকে এখন বলতেই আমাকে। তোমার বাবার শরীর দু'মাস যাবত খারাপ।হার্টের যে প্রব্লেম টা হয়েছিলো সেটা এখন অন্যদিকে দিকে গিয়েছে।তোমার বাবার হার্টের সার্জারী আগামি মাসে করতে হবে।ফুফার হার্টের অবস্থা খুব একটা ভাল নয়।আমি দুপুর বারোটা থেকে তোমার আম্মুর সাথে কথা বলছিলাম তোমার বাবার ব্যাপার টা নিয়েই।আমার ফোন বিছানায় আছে চেক করে দেখো তোমার কল দেওয়ার টাইমে তোমার আম্মুর সাথেই কথা বলছিলাম।তুমি আর তোমার পরিবার কোনটায় কম গুরুত্বপূর্ণ নয় আমার কাছে।তোমার বাবাকে সুস্থ করাটা অনেক জরুরী আমার কাছে।ভেবেছিলাম ফোন কেটে তোমাকে জানাবো যে ফুপ্পির সাথে কথা বলছিলাম।কিন্তু তার আগেই তোমার ফোন ওয়েটিং।অত টাইম ওয়েটিং দেখে সন্দেহ হচ্ছিলো।তারপর ই তোমার মেসেজ দেখে বুঝতে পারলাম কিছু গড়মিল হয়েছে।আমার পিচ্চির ছোট মাথায় কেউ উল্টা পাল্টা কিছু ঢুকিয়েছে।ঠিক তখন ই ডিউটি থেকে পাগলের মতো ছুটে এসেছি।এসেই আগে তোমার ফোন চেক করেছি কারণ আমি জানি ফোন চেক করলেই আমি বুঝতে পারবো কি হয়েছে।তুমি ভাবলে কিভাবে দিয়া আমি কোনো মেয়ের সাথে দীর্ঘ টাইম ফোনে কথা বলবো।তোমার সামনেও না তোমার অজান্তেও না কখনোই তোমাকে আমি ঠকাতে পারিনা দিয়া।প্রেয়সী তোমায় যা বলেছে সব মিথ্যা বলেছে।আজ কতদিন পর প্রেয়সীর নাম্বারে কল দিয়েছি কল হিস্টোরী চেক করলেই জানতে পারবে।তুমি কষ্ট পেয়েছো,ভীষণ কষ্ট পেয়েছো এর জন্য দোষী আমি।কষ্ট তুমি পেয়েছো মনের ভেতরে অশান্তি হচ্ছে আমার,ছারখার হয়ে যাচ্ছে পুড়ে হৃদয়।তুমি আজ রাগ করেছো,আমাকে রাগে অভিমানে যা কিছু বলেছো ট্রাস্ট মি দিয়া আমি একটু ও রাগ করি নি,কষ্ট ও পায় নি।তোমার এই রাগ অভিমান কে সম্মান শ্রদ্ধা জানাই।আমার প্রতি গভীর ভালবাসার প্রকাশ ছিলো এটা তোমার।আমার রাগ,ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি,তুমি কষ্ট পেয়েছো,কেঁদেছো ভেবেই নিজেকে শেষ করতে মন চাচ্ছে আমার।তোমাকে ঠকানোর আগে মরণ হউক আমার।প্রেয়সী আমার ক্লাসমেট দিয়া।মেডিকেল কলেজের প্রথম দিন থেকেই আমার পেছনে লেগে আছে কিন্তু আমি কখনো পাত্তা দেয় নি।আমি প্রথম ইয়ার থেকে বলেছি আমার জিএফ আছে। বিয়ের পরে বলেছি আমি বিয়ে করেছি।আমি কিছুই লুকায় নি।প্রেয়সীর মতো তো কত মেয়েই আছে তারা আমাকে চাই আমি তো কখনো কাউকে পাত্তা দেয় নি।ঢাকা শহরের মেয়েরা নড়াইলের সহজ সরল দিয়া হয় না সবাই।এরা অন্যর জিনিস কেড়ে নিতে পারলে দুবার ভাবেনা।প্রেয়সীর মতো মেয়েরা এমন ই হয় দিয়া।আমার ফ্রেন্ডরা জানে আমি বিবাহিত প্রেয়সী সেখান থেকেই খোজ নিয়ে তোমার নাম্বার নিয়েছে।আগামি সপ্তাহে ঢাকা নিয়ে এমনিতেই সবার সাথে পরিচয় করাতাম তার আগেই এতকিছু হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।সরি দিয়া, দিয়া।আমি ভীষণ রুড বিহ্যাভ করে ফেলেছি তোমার সাথে।তুমি চলে যাবে শুনে মাথা ঠিক ছিলো না।একটা কথা মাথায় রেখো দিয়া কতদিন বাঁচবো জানিনা তবে যতদিন বাঁচবো শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে তোমাকেই ভালবেসে যাবো।তোমাতেই শুরু তোমাতেই শেষ শ্যামাপাখি।"