এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২
--রাত নয়টায় বিহান বাসায় আসলে বিভোর ভাই আর ভাইয়া বাইরে গেলো ঘুরতে।বিহান বাসায় এসে কিচেনে বাজারের ব্যাগ রেখে বিভোর ভাই এর রুমে গিয়ে ওয়াশ রুমে গেলো।গায়ের গেঞ্জি খুলে গামছা দিয়ে শরীরের ঘাম মুছে নিয়ে একটা পাতলা গেঞ্জি গায়ে দিলো।কেননা উনি রিয়ার সামনে খালি গায়ে থাকবেন না জিন্দেগীতেও।আমার সামনে তাই খালি গায়ে থাকতে চান না। আমি পড়া রেখে রিয়া কে বললাম,, " তুই পড়তে থাক আমি দেখে আসি আমার মিস্টার হাজবেন্ড কি বাজার নিয়ে এসছেন।" রিয়া বললো, "বাজার দেখা তো শুধুই বাহানা আমার হট, হ্যান্ডসাম বিহান ভাই কে অনেক সময় দেখো না তাই দেখতে যাচ্ছো সেটা বলো" রিয়ার কথা শুনে মুখশ্রিতে নিমিষেই লজ্জার এক আবেশ খেলে গেলো।রিয়াকে ফাজিল বলেই বেরিয়ে গেলাম।কিচেনে ব্যাগ দেখে ব্যাগের ভেতরে হাত দিলাম।ব্যাগ এক সাথে দুইটা।একটায় মাছ মাংস রাখা।আরেকটা ব্যাগের মাঝে চানাচুর,আইসক্রিম এর বক্স,পাস্তার বক্স,আরো কিছু বাইরের খাবার।আমি পাস্তা দেখে এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা চামচ নিয়ে কিচেনে দাঁড়িয়েই বক্স খুলে পাস্তা খেতে শুরু করলাম।বিকজ রিয়া দেখলে চিজ সব নিয়ে নিবে।অর্ধেক খাওয়া হলে তাকিয়ে দেখি বিহান ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।এক নজরে স্হির নয়নে সম্পূর্ণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। বিহান কে দেখে বেশ লজ্জা পেলাম।ভ্রু কুঁচকে কি ভাবছে কে জানে?যা ভাববে ভাবুক আমার কি।খাওয়ার সময় এইভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে কেমন অস্বস্তি ফিল হয়।আমি খেতে খেতে বললাম,, " কী ডাক্তার ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?আমার পেট খারাপ হবে কিন্তু।খেতে মন চাইলে খেতে পারেন।" উনি এবার হেসে দিলেন। কি ব্যাপার উনি হাসছেন কেনো?কাহিনী কী?কুচ তো হে।না হলে উনি হাসার ছেলেই না।আমি এবার ভ্রু কুচকে বললাম, "হাসছেন কেনো?" উনি মুখে হাত চেপে হাসতে হাসতে বললেন, "বলবো না পিচ্চি বালিকা।" "বলবেন না।" "ভ্রঁ উচিয়ে বললেন, নাহ।" "না বললে কিন্তু ভাই ডাকবো।" "বিবাহ করেছি ফুফাতো বোন এই অত্যাচার তো হজম করতেই হবে তাইনা?" "বিহান ভাই বলুন আগে কি হয়েছে।" "তুমি না বেবি নিতে চেয়েছো?বেবিকে বলবো ওইযে মহিলাকে দেখছো,ওই মহিলা ভয়ানক অত্যাচারী বংশের মহিলা।তোমার পাপ্পা কে ভাই ভাই অত্যাচারে জর্জরিত করেছে।এর রিভেঞ্জ নিতে তুমিও তাকে ফুপি ডাকবা।আমাকে সে ভাই ডাকলে সোজা হিসাবে তোমার ফুপি হচ্ছে।তাও যেনো তেনো ফুপি নয় ভয়ানক ধুরন্ধর ফুপি।" ফুপি ডাক টা যেনো কেমন শোনালো আমার কাছে। "দশ মাস দশ দিন বেবি ক্যারি করে আমি হবো তার ফুপি।আমিও তো আপনার বোন হই তাহলে আপনাকে মামা ডাকবে হিসাব মিটে গেলো।" "আমি তো আর আপনাকে বোন বোন বলে ডাকি না।জীবনে দেখেছেন আপনাকে কোথাও বোন পরিচয় করাতে।" "আপনি তো বলেন দিয়া আমার বোন হওয়ার যোগ্য নয়।" "বউ হওয়ার যোগ্য যে তাকে কি কেউ বোন বলে বোকা মহিলা।" আপনার সাথে আমি কিছুতেই কথায় পারিনা কেনো?দাঁড়ান আজ খবর আছে আপনার।উনাকে তাড়া দিতেই ছুটে পালালেন।আমি হাতে পাস্তা নিয়েই উনার পিছে ছুটলাম।বিভোর ভাই এর রুমে গিয়ে উনি এদিক ওদিক ছুটছেন আমিও ছুটছি।বালিশ ছুড়ে ছুড়ে উনার দিকে মারতেই উনি একটা বালিশ ধরে আমার কাছে এগিয়ে এলেন। উনি আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বললেন, "এই নাও ধরা দিলাম মারবে।ভ্রু উঁচিয়ে বললেন।" "হুম মারবোই তো।" উনি এক হাত কোমর থেকে ছাড়িয়ে বললেন, "বাইরের কেউ মারলে বেঁচে ফিরে আসবো সিওর কিন্তু তুমি মারলে বোধ হয় আর বাঁচবো না।বুকের ঠিক যেখানে হার্ট সেখানে হাত রেখে বললেন।" উনার বুকে কিল দিতে দিতে বললাম, --এসব কি বলেন হুম আপনি।উনার বুকে মাথা রেখে উনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,এসব কি বিশ্রি কথা বলছেন আপনি।আপনি মরার কথা বলবেন না আর।মোটেও বলবেন না।আমার বুকের মাঝে অজানা এক ব্যাথার সৃষ্টি হয়।উনি আমাকে আরো শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললেন,আমার লাভিং বউ।আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাগ্যবান পুরুষ জীবনে এমন একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছি।এই পৃথিবীর সর্বোশ্রেষ্ঠ নারী ই আমার বউ।পৃথিবীর সর্বোশ্রেষ্ট নারীকে শুভেচ্ছা জানায় প্রতিটা মুহুর্তে মুহুর্তে আমার জীবন টা ভালবাসায় ভরপুর করার জন্য।আমি মাথা গুজে রইলাম উনার বুকে ।শান্তির উত্তম জায়গা উনার বুক,যেখানে মাথা রাখলে সব চিন্তা দূর হয়ে যায় আমার।ভালবাসা মিশ্রিত কন্ঠে বললাম,জানেন আপনার এই বুকটায় কত শান্তি।উনি আরেকটু জড়সড় করে জড়িয়ে ধরে বললেন,এই শান্তির জায়গা টা তোমার নামে লিখে দিয়েছি পারমানেন্ট ভাবে।" বেশ কিছুক্ষণ মৌনতায় কাটলো আমাদের। উনি আমায় ড্রেসিন টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন, "দেখো কেনো হেসেছিলাম।" তাকিয়ে দেখি পাস্তা মুখের চারদিকে লেগে আছে।আমি নিজেই হেসে দিলাম দেখে।খাওয়ার সময় এই হুঁশ ই ছিলো না আমার।পিচ্চিদের মতো লেগে আছে চারদিকে। উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে কানে ফিসফিস করে বললেন, "তার এই বাচ্চামোগুলো এতটা সুন্দর না হলেও তো পারতো।সে কি জানে তার এসব দেখে দেখে তার মায়ায় কি ভয়ানক ভাবে আটকে গিয়েছি আমি।প্রেমের মরণফাঁদ সে এভাবেই প্রতিনিয়ত বিছিয়ে চলেছে।তার এই বাচ্চামো গুলো আমি ভালবাসি, ভীষণ ভালবাসি শ্যামাপাখিকে।" -------------------------------------------------------- বিহান পাশের রুমে গিয়ে রিয়াকে বললো, --রিয়া নার্ভাস ফিল হচ্ছে নাকি। --হ্যাঁ বিহান ভাই অনেক চিন্তা লাগছে।আমার স্বপ্ন আপনার মতো ডাক্তার হবো। --তুমি অনেক পরিশ্রম করেছো রিয়া।পরিশ্রম কখনো বিফলে যায় না আপু। রিয়া বেশ স্বস্তি পেলো বিহানের কথায়। বিহান রিয়ার দিকে পাস্তা এগিয়ে দিয়ে বললো, --রিয়া এই নাও পাস্তা খাও। --থ্যাংক ইউ বিহান ভাই।আমার খুব প্রিয় এটা।বাট দিয়া দেখে নি পাস্তা এনেছেন।চিজ নিয়ে মারামারি করবে। --দুজনের জন্য আলাদা করে এনেছি।মারামারি আটকাতে। দুজনে বেশ কিছু সময় হাসাহাসি করলো। বিহান কাকে যেনো অনবরত ফোন দিয়েই যাচ্ছে।আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, --কাকে ফোন দিচ্ছেন? --কাজের খালা,, উনার ফোন অফ।মাছ কাটতে হবে।মাছ কাটবে কে? --আমি কাটবো। --তুমি কাটবে সিরিয়াসলি।পারো তুমি? --সব পারি আমি। --না কোথায় হাত কেটে যাবে,এক্সাম একদিন পরেই। --কাটবে না। --সমস্যা নেই দিয়া আমি আর বিভোর মিলে ব্যাবস্হা করে নিবো। ভাইয়া,বিহান, আর বিভোর ভাই মিলে মাছ,মাংস কেটে রান্না করলো তিনজনে। রাতে সবাই খেয়ে সুয়ে পড়লাম।আমি আর রিয়া এক রুমে।বিহান,ভাইয়া আর বিভোর ভাই এক রুমে। বিভোর ভাই ভাইয়া আর বিহান কে সুয়ে সুয়ে বলছে, "আজ যদি একটা বউ থাকতো তাহলে কি আর তোদের মতো মহিশের পাশে ঘুমোনো লাগতো ভাই।জন্মের পরে এখনো বউ নিয়ে ঘুমোতো পারলাম না।আমার মতো পোড়া কপাল আর কার আছে।কি হবে এই জীবন দিয়ে আমার।আর কি বা করলাম জীবনে।" ভাইয়া লাথি মেরে বিভোর ভাইকে নিচে ফেলে দিয়ে বললো, "শা*লা আমরা মহিশ আর তুই মহাপুরুষ। " "আউচ কোমর ভেঙে গিয়েছে।আমি বউ কোলে করে ঘরে তুলবো কিভাবে?" "তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি সারাজীবন বউ নিয়ে ঘুমোচ্ছি।আর তুই উপোস আছিস।" "বেশী তেড়িবেড়ি করলে কিন্তু মেহুর সাথে তোর বিয়েই হতে দিবো না আবির।" ভাইয়া হেসে বললো, "তুই যে রিয়ার সাথে লাইন মারিস আমি কি তা জানিনা।বোন আমার মাথায় রাখিস।" বিহান বললো, "আর আমার শালিকা।" আরে ভাই তোরা বিয়েটা তো করিয়ে দে আমার।তার পর অত্যাচার কর। রিয়া আর আমি দুজেন হাসছি তাদের কথা শুনে। --------------------------------------------------------- সকাল থেকে খুব বমি হচ্ছে আমার।ঢাকায় এসেছি দুইদিন কেটে গিয়েছে।একটু পরেই মেডিকেল এডমিশন।টেনশনে সারারাত ঘুম হয় নি আমার।বেশী টেনশন করলে প্রচন্ড বমি হয় আমার।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

2025 © Golpo Hub. All rights reserved.