--বিহান বললো,সরি গাইস সে দেখতে কেমন এটা কাউকেই বলতে হবে না।আমার দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসি দিয়ে বললো,
"সে আমার চোখে দেখা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর নারী।তার থেকে সুন্দর নারী আমি কোথাও দেখি নি।দ্যাটস হুয়াই আমি তাকে ভালবাসি।তাকে দেখার পর দ্বীতীয় কাউকে আর ভালো লাগেনি।"
বিহানের কথা শুনে সবাই হাতে তালি দিলো।বেশ অনেক সময় তাদের সাথে ইনজয় করে বেরিয়ে এলাম।রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে বললাম,
--শুনুন না আপনার ওইযে বান্ধবী ছিলো না।উনার হাতের ব্রেসলেট টা সুন্দর ছিলো।কোথা থেকে কিনেছে।
--উনি আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললেন, মহিলা মানুষ যেখানেই যাবে কার কেমন ড্রেসের ডিজাইন,জুতার ডিজাইন,গহনার ডিজাইন এগুলোই দেখবে।
--অপমান করছেন কিন্তু।
--যা সত্য তাই ই বললাম।
উনি পকেট থেকে ফোন বের করে কানে দিয়ে বললেন,
-হ্যালো তিয়াশা তোর হাতে নাকি ব্রেসলেট ছিলো কোথা থেকে নিয়েছিস।
--আমার মামা ইউএস থেকে এনে দিয়েছে।কেনো?
--দিয়ার পছন্দ হয়েছে।আমাকে পিক পাঠিয়ে দিস তো।
--দিয়া আমাকে বললো না কেনো?
--দিয়া অমন মেয়ে না।কারো জিনিস দেখলে ও চাই না বা বলেও না।আমি ছাড়া কাউকেই কিছু বলে না। কোনো পেইজে পাওয়া গেলে আমাকে জানাবি প্লিজ।আমি পেমেন্ট করে দিবো।
--দিয়াকে এটাই দিবো আমি।
--আরে নাহ।নো নিড প্লিজ।
--নো বিহান জীবনে প্রথম কিছু দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি।তাছাড়া আমি তো পরিনা। শুধু শুধু পড়ে থাকবে।
সেখান থেকে রিক্সা করে আধাঘন্টা যাওয়ার পর একটা বাড়ির সামনে নামলাম।বিশাল বড় দেখতে এই বাড়িটা।
--বিহান কে বললাম,বিশাল বড় এই আলিশান বাড়ি কার।
--ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,আই ডোন্ট নো মিসেস বিহান।
--জানেন না তাহলে এসেছেন কেনো?
কোনো উত্তর দিলো না বিহান।চোখ মুখে বিরক্তির ছাপ লেগে আছে।গরমে শার্টের হাতা গোটাতে শুরু করলো বিহান।মুখ চোখ লাল হয়ে গিয়েছে ঘেমে।বিহান যেনো কাকে ফোন করলো তারপর দাঁরোয়ান গেট খুলে দিলো।বিহান কে বললাম,
"হঠাত বিরক্ত লাগছে কেনো আপনাকে?"
"বিকজ সেদিন তোমার চোখে পানি দেখেছিলাম।মনে পড়লো এখন।"
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে দেখি ভীষণ রাজকীয় ব্যাপার।বাড়িটা বেশ সাজানো গোছানো অনেক ধনি কারো বাড়ি মনে হয়।এটা কার বাড়ি হবে আর বিহান এই বাড়িতে এসে মুড চেঞ্জ করে ফেললো কেনো?নিমিষেই হাসি খুশি মানুষ টা এভাবে রেগে গেলো কেনো।বাড়ির ভেতরে যেতেই একজন ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন।
ভদ্রলোক এসেই সালাম দিলেন।বাড়িতে বেশ অনেক মানুষ এসেছে।মনে হচ্ছে এদের আত্মীয় হবে সবাই।
"আসসালামু আলাইকুম "
বিহান আর আমি উত্তর দিলাম,
"ওয়ালাইকুম আসসালাম "
ভদ্রলোক বললেন, "বোসো বাবা।দাঁড়িয়ে আছো কেনো?"
"সরি আমি বসতে আসি নি আঙ্কেল।জাস্ট কিছু কথা বলতে এসছি।"
"তোমার মা বাবা কেমন আছে বিহান।উনাদের নিয়ে এলে না কেনো?"
"আমার মা বাবা এখানে কেনো আসবে বুঝলাম না।আপনার মেয়ে কোথায় ডাকুন প্লিজ।"
"প্রেয়সী রেডি হচ্ছে বাবা।তুমি না বসলে কিভাবে কথা বলবে।"
"কেনো আপনার মেয়ের বিয়ে নাকি রেডি হচ্ছে।আমার হাত বেশী সময় নেই।আপনার মেয়েকে রেডি হতে পরে বলবেন। কাইন্ডলি ডাকুন এক্ষুনি। "
"বিহান আমার মেয়েকে তো চিনোই।বিয়ের কথা বলতে আসবা তাই সে ভীষণ খুশি।সাজ গোজ করছে।"
"আমি চিনি বাট আপনারা চিনেন না আপনাদের মেয়েকে।"
"তুমিই তো ভালো চিনবে বাবা।তোমরা হলে বেষ্ট ফ্রেন্ড।আর এখন নতুন জীবন শুরু করতে চলেছো।"
"দুঃখিত আমি আর আপনাদের মেয়ে কখনোই বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলাম না।ক্লাসমেট ছিলাম জাস্ট।আপনার মেয়ে কি কারো ফ্রেন্ড হওয়ার যোগ্যতা রাখে।"
বিহানের কথায় ভদ্রলোক বেশ অপমানিত হচ্ছেন।কিন্তু এড়িয়ে যাচ্ছেন।ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
"মেয়েটি কে বাবা?
বসো মা তুমি।"
"আপনার মেয়ে চিনে ভালো। "
"প্রেয়সী চিনে কিভাবে।"
কিছুক্ষণের মাঝে প্রেয়সি আপু বেশ সেজে গুজে নিচে এলেন।প্রেয়সী আপুকে খুব সুন্দর লাগছে দেখতে।বেশ লম্বা ফর্সা।সাথে উনার আম্মু ও আছেন।উনার আম্মু বেশ মডার্ণ দেখতে।ভ্রু ফ্লাগ,চুলে কালার,রিবন্ডিং হেয়ার,গাড় লাল লিপিস্টিক বেশ মনোযোগ সহকারে দেখলাম।
প্রেয়সি আপু বললো,
"বিহান এসছিস তুই।মা বাবা খুব খুশি হয়েছে আমাদের বিয়ের কথা শুনে।তোর আর আমার বিয়ে হবে শুনে বাবা অনেক প্লান করে রেখেছে।"
"আমাদের মানে আমাদের প্রেয়সী।আমার আর দিয়ার বিয়ের কথা বলতে এসছি।তোর আর আমার নয়।"
"এটা কোন ধরণের মজা বিহান।তুই কি আমার মা বাবাকে অপমান করতে এসছিস।ফোনে তুই কি বলেছিলি আমাদের বিয়ের কথা বলতে আসবি, আর এখন এসব কি বলছিস।"
"আমাদের বলতে তো আমি আর দিয়া মিলে আমাদের বুঝি।অপমান কি বুঝিস তুই।একচুয়ালি বোধ আছে তোর।"
"আমার দিকে তাকিয়ে প্রেয়সী আপু বললো, মেয়েটা...।এটুকু বলেই ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে তাকালো।"
"বিহান বললো,ওর নাম দিয়া চেনা যায়।যাকে ফোন করে আমার নামে অসংখ্য মিথ্যা বলেছিস। নিজের ছোট মন মানসিকতার কথা ফোন করে অন্যকে জানিয়ে কি উপকার টা হলো তোর।তুই খারাপ তোর মাঝে কোনো শিক্ষা নেই সেটা দিয়া কে ফোন করে জানানোর কি প্রয়োজন ছিলো।আমি তো এমনি বলে রেখেছিলাম আমার ওয়াইফ কে তোর চরিত্র কেমন।"
"প্রেয়সী আপুর বাবা বললেন,
তুমি কি এখানে মজা করতে এসছো।আমাদের একটা মান সম্মান আছে বিহান।"
"আসলে কি কোনো মান সম্মান আছে আপনাদের।আপনার মেয়ে কি এত ই সস্তা হয়েছে।একটা বিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করতে উঠে পড়ে লেগেছে।আপনারা কেমন মা বাবা একটা বিবাহিত ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিবেন।আপনাদের পারিবারিক ঐতিহ্য নাকি এটা।"
"প্রেয়সী আপুর মা বললো,প্রেয়সী বিহান কি বলছে এসব।"
"মা -বাবা ও মিথ্যা বলছে। এই মেয়েকে বিহান কিভাবে বিয়ে করতে পারে।এই মেয়ে কোনদিক থেকে বিহানের সাথে যায়।রুপ গুণ স্টাটাস কোন দিকে এই মেয়ে আমার থেকে উপরে। "
"--বিহান বললো,আপনাদের মেয়েকে ক্লিয়ার এন্ড ক্লিয়ারলি জানিয়ে দিন আর ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিন দিয়ার পায়ের নখের যোগ্যতা আপনাদের মেয়ের নেই।এখনো সময় আছে সভ্যতা শেখান আপনাদের মেয়েকে।সভ্যতা না শিখিয়ে বিয়ে দিলেও টিকবে না।এমন বাজে মেয়ের সাথে কোনো ছেলে থাকতে চাইবে না।"
"--প্রেয়সী আপু বললো,তুই সামান্য এই মেয়েটার জন্য আমাকে রিজেক্ট করলি বিহান।এত কিছু থাকতেও কেনো আমি তোর যোগ্য না বিহান।আমি তোকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না বিহান।প্লিজ বিহান ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।এই মেয়েটার থেকে ভালো রাখবো আমি তোকে।আমার মা বাবার আর কেউ নেই আমি ছাড়া।বাবার সব আমাদের হবে বিহান।তোকে ফিউচার নিয়ে ভাবতে হবে না।আমি গড়ে দিবো বিহান তোর ফিউচার।এই মেয়েটা তোর যোগ্য হতে পারেনা।"
বিহান ভীষণ রেগে গিয়ে ঠাসসস করে প্রেয়সীর দুই গালে চারটা থাপ্পড় মারলো।রাগে কাঁপছে বিহান।চোয়াল শক্ত করে বললো,
"দিয়াকে সামান্য বলার সাহস হলো কিভাবে তোর।আমার কাছে অসামান্য সে।অসামান্য না হলে তোর করা এত খারাপ ব্যবহারে দিয়া আরো খারাপ কিছু বলতে পারতো।এখানেই দিয়া আর তোর পার্থক্য।আমাকে কি তোর লোভী মনে হয়।হোপ তুই বুঝতে পেরেছিস আমাকে এসব লোভ দেখিয়ে লাভ নেই।থাপ্পড় গুলো যেনো মনে থাকে।জীবনে বেঁচে থাকতে যা প্রয়োজন তা আছে আমার।ডাল ভাত আর দিয়ার মতো জীবন সঙ্গী থাকলে আর কিছুই লাগে না জীবনে।আর দিয়ার যোগ্যতা নিয়ে কোনদিন প্রশ্ন তুলবি না।দিয়ার যোগ্যতা নিয়ে ভাবার যোগ্য ও তুই না।ভালবাসা যোগ্যতার মাপকাঠিতে পরিমাপ করা হয় না।আমাকে ভাল রাখার জন্য দিয়ার হাসি ই যথেষ্ট।সারাজীবন চেষ্টা করেও তুই দিয়া হতে পারবিনা।আমার হ্যাপি ম্যারেড লাইফে যদি তোকে আর কখনো এন্টারফেয়ার করতে দেখি ব্যাপার টা এবার খুব খারাপ হবে।অল রেডি অনেক বাড়াবাড়ি করেছিস।ইন ফিউচার এমন হলে আমি আইনের সহায়তা নিতে বাধ্য হবো মাইন্ড ইট।আমি এখানে এসছি আমি আসলেই বিবাহিত কিনা আমার ওয়াইফ দিয়া কিনা সেটা প্রুভ করতে।বিহান একটা কাগজ দেখিয়ে বললো এটা ভাল ভাবে দেখ।কতটা বিরক্ত হলে মানুষ তার বিবাহিত জীবনের প্রুভ দেখাতে বাধ্য হয়।আশাকরি আজকের পর বুঝতে আর অসুবিধা হবে না।"
বিহানের দিকে তাকিয়ে আছি অবাক হয়ে।বিহান এতটা সিরিয়াস আমাকে।এই জীবনে কোনো পূণ্যর ফল হিসাবে মনে হয় বিহান কে পেয়েছি।