এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২
এডমিশনের দুইদিন পরে খুব ভোরে বেলকনিতে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে বিহান।ভোর সকালের ঝিরিঝিরি বাতাস,শান্ত পরিবেশ,পাখির কলরব, প্রকৃতির সাথে মিশে বিশেষ কিছু একটা উপলব্ধি করছে বিহান।আমি বিছানা ছেড়ে আরো আগেই উঠেছি।ঘুম হয় নি সারারাত। নড়াইল ফিরে আসতে হবে বলে সারারাত জেগে ছিলাম বিহানের সাথে।ঘুম নামক বস্তু উধাও ছিলো গত রাতে দুজনের চোখ থেকে। বিহান কে পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম,এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে কি ভাবছেন।আমার উপস্হিতি অনুভব করে বিহান আমার হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে মাথা নিচু করে আমার হাতের তালুতে চুমু দিয়ে বললো তোমাকে ভাবছিলাম।আমি ওর পিঠে নাক মুখ গুজে বললাম,এত সকালে খালি গায়ে কেনো ঠান্ডা লাগছে না।বিহান সামনে তাকিয়েই বললো নাতো এই ঠান্ডা বাতাস বেশ ভালো লাগছে। --বিহান আমাকে সামনে নিয়ে বললো,দিয়া একটা কথা বলবো। বিহানের চোখ মুখে মলিনতা, মন খারাপের রেখা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।এই ছেলেটার মন খারাপ দেখলে পুরা দুনিয়া অন্ধকার লাগে আমার।বেলকনিতে একটা তক্তা রাখা আছে যার দুই পাশে দুইটা ক্যাকটাস গাছ।তক্তার উপর উঠে বসে বিহানের গলা জড়িয়ে ধরে বললাম, "কি কথা ডাক্তার বাবু।" "থেকে যাও না দিয়া।তুমি চলে গেলে আমার সব এলোমেলো হয়ে যাবে।" "এইভাবে মন খারাপ করছেন কেনো হুম।আবার তো আসবোই কিছুদিন পরে।এবার তো থাকার প্রিপারেশণ নিয়ে আসিনি।" "আমার কাছে থাকবে প্রিপারেশন লাগবে কেনো?" "না না এবার থাকা যাবে না।" "প্লিজ দিয়া।তোমাকে বিদায় দিয়ে আমি থাকতে পারবো না।বিদায়ের যন্ত্রণা ভীষণ কষ্টের।" "তাহলে বুঝেন আমি কিভাবে অপেক্ষা করতাম আপনার নড়াইল ফেরার জন্য।আপনি যেদিন ঢাকা চলে আসতেন আমি ভীষণ কাঁদতাম।" "তুমি সারাজীবন যতটুকু কেঁদেছো আমার বোধহয় একবারেই তার থেকে ডাবল কাঁন্না হবে।প্রতিশোধ নিও না দিয়া।" "না না প্রতিশোধ না।আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির অনুমতি নিয়েই আসবো।।এসে তখন থাকবো।" "আম্মু কিছুই বলবে না তুমি থাকলে।" "না বলুক তবুও।নো বাচ্চামো ডাক্তার।চোখ অফ করেন।" "কেনো?" "সারপ্রাইজ।" "কি সারপ্রাইজ।" "সারপ্রাইজ কে সারপ্রাইজ থাকতে দিন না।" উনি আস্তে করে চোখের পাতা বন্ধ করলেন।চোখ বন্ধ করে খালি গায়ে আমার সামনে পৃথিবীতে সব থেকে হ্যান্ডসাম ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।যদিও আমি একটু লজ্জা পাচ্ছি তবুও উনার মন ভালো করতে এটুকু না করলেই নয়।আমি উনার দুই চোখের পাতায় ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম, উনার মাথার পেছনে এক হাত আরেক হাত উনার কাধে দিয়ে চোখ অফ করে ওষ্টে ওষ্ট মিলিয়ে উনাকে অবাক করে দিলাম।এভাবে কেটে গেলে কয়েক মিনিট।উনার কানে কানে বললাম,আই লাভ ইউ বিহান বাবু।বলেই ওখান থেকে পালিয়ে এলাম।উনি সাথে সাথে চোখের পাতা খুললেন।মনে হলো কারেন্ট এর মতো শর্ট খেয়েছেন। উনি আমার দিকে তাকিয়ে চুলের মধ্য হাত চালাতে চালাতে ডাক দিলেন, "উফফ দিয়া কিল মি। " আমি পেছনে ফিরে হেসে আবার দৌড় দিলাম। --কিছুক্ষণ পরে আবার রেডি হয়ে নিলাম নড়াইল ফিরে আসার জন্য।ভাইয়ার একটা ইন্টারভিউ আছে খুলনাতে তা না হলে আরো কিছুদিন থেকে আসতাম।গাড়িতে রিয়া আমি আর ভাইয়া উঠেছি।বিহান আমাকে বমির ওষুধ খাইয়ে দিলো।খাবারের বক্স, পানিট পট সব দিয়ে দিলো।ড্রাইভার কে বার বার সতর্ক করলো ট্রাফিক সিগনাল ফলো করে খুব সাবধানে গাড়ি চালাবে।ধীরে চালাবে ট্রাক দেখলে স্লো করবে।দেরি হলেও আস্তে ধীরে যাবে।ড্রাইভার কে হাজার বারা সাবধানে চালাতে বললো।মানুষ টার কত চিন্তা আমায় নিয়ে।গাড়ি ছেড়ে দিলে বিহান এক আকাশ মন খারাপ নিয়ে তাকিয়ে রইলো গাড়ির দিকে।গাড়ির কাচে বিহানের মলিন মুখ দেখা যাচ্ছে।মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।সারারাস্তা বিহানের মলিন মুখ টা মনে পড়েছে আমার।নড়াইলে এসে আম্মুদের বাসায় এলাম রিয়ার সাথে।সন্ধ্যায় মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে আম্মু এসে বললো,কি হয়েছে দিয়া।আম্মুর মুখে কি হয়েছে শুনে চোখের পানি ছেড়ে দিলাম।মায়ের মন তো বুঝতে বাকি রইলো না বিহানের জন্য মন খারাপ আমার।আম্মু বলেই ফেললো বিহানের জন্য কি মন খারাপ তোমার দিয়া।আমার মৌনতা আম্মুকে বুঝিয়ে দিলো তার মেয়ে ভয়ানক ভাবে ভালবাসায় জড়িয়ে গিয়েছে।আম্মুর মুখে তৃপ্তির হাসি।আম্মুর ধারণা ছিলো জীবনে কখনো বিহানের সাথে আমার ভালবাসা তৈরি হবে না। --দুই দিন পর।সময় টা ছিলো জীবনের সব থেকে দুঃচিন্তা, উত্তেজনা,আর টান টান ময় সময়।কেননা আজ রেজাল্ট দিবে এডমিশনের।সাত দিন পরেই রেজাল্ট দিবে।টেনশনে পাগল প্রায় আমি।কি করবো বুঝে উঠতেই পারছিলাম না।রিয়া এসে বললো,যদি চান্স পায় মসজিদে কিছু টাকা দিয়ে দিবো।আমি এই ভীষণ দুঃচিন্তার মাঝে বললাম মানত করেছিস।রিয়া বললো,সেতো আমি সব পরীক্ষার সময় করি।রিয়া আমাকে বললো,আজ যতবার আল্লাহ কে ডাকলাম রেগুলার যদি ডাকতাম আল্লাহ নিশ্চয়ই সব ভালো করতেন।আমরা বিপদে পড়লে আল্লাহ ডাকি ঘন ঘন।এর ই মাঝে মেহু আপু বললো,আজ তো দুজনেই নামাজ পড়েছিস অন্য সময় তো খোজ থাকে না।আমি আপুকে বললাম,মোটেও না আমি রেগুলার নামাজ আদায় করি।তোমাদের মতো না আমি।রিয়া আর আপু আড্ডা দিচ্ছে আমি বাইরে গিয়ে দাঁড়ালাম।চিন্তায় পাগল প্রায় আমি ঠিক তখন ই রিয়া চিৎকার দিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,দিয়া আমরা দুজনেই চান্স পেয়েছি ইয়াহু।রিয়ার কথা যেনো আমার বিশ্বাস ই হচ্ছিলো না।রিয়াকে বললাম তোকে কে বললো।রিয়া বললো,বিহান ভাই সবার আগে কাকিমনিকে ফোন করে জানিয়েছে।এরই মাঝে ভিডিও কল এলো ফোনে।ফোন টা রিসিভ করতেই দেখি বিহানের মুখে স্নিগ্ধ হাসির সমাহার।এত খুশি বিহান কে আমি কখনোই দেখি নি।বিহান আমায় বললো,কনগ্রাচুলেশন শ্যামাপাখি। আমি আনন্দে ঠিক কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।আনন্দে যেনো বাকশক্তি হারালাম।বাড়িতে সবাই ভীষণ খুশি।আমাদের বাড়ির দুটো মেয়ে চান্স পেয়েছে।এর থেকে আনন্দের বোধ হয় আর অন্য কিছু নেই।ভীষণ খুশির বন্যা বয়ে গেলে সবার মনে। আবার ও পাড়ি জমালাম ঢাকায় রিয়া আর আমি।রিয়া একটা গার্লস মেসে উঠলো।বিহানের বাসায় রিয়াকে রাখতে একটু আপত্তি জানালো রিয়ার বাবা কেননা বিভোর ভাই আছেন।বলা তো যায় না পাশাপাশি অবিবাহিত দুটো ছেলে মেয়ে থাকলে বাই এনি চান্স কোনো অঘটন ঘটতে পারে।এসব ভেবেই রিয়াকে মেসে রাখা হলো।তবে রেগুলার রিয়ার সাথে দেখা হয়, রিয়া বাসায় আসে।সব কিছু ভালোই চলছিলো।ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো সময়।কেটে গেলো আরো আটমাস। লেখাপড়ায় ভীষণ মনোযোগ দিয়াছিলাম রিয়া আর আমি।এরই মাঝে রিয়ার জীবনে এলো ভীষণ তুফান।রিয়া যেটা ভাবতেও পারেনি।আমাদের কলেজ ১৫ দিনের বন্ধ দিলো।আমি রিয়া এক সাথেই বাড়িতে এলাম।মেডিকেল এ চান্স পাওয়া অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়েকে যে কোনো ছেলেই পছন্দ করবে।ইউএস এ ফ্যামিলি সহ সেটেল একটা ছেলে বিয়ের প্রস্তাব দেই রিয়ার জন্য।যেহেতু ইউএস এ সেটেল টাকার অভাব নেই বোঝায় যাচ্ছে।ইউএস এ নিজস্ব বাড়ি গাড়ি সব ই আছে।রিয়ার বাবা মানে কাকুমনি ছেলে আর পরিবার দেখেই রাজি হয়ে যায়।হুট করে কাকুমনি এমন একটা সিদ্ধান্ত নিবে আমরা কেউ বুঝতেই পারিনি।রিয়াকে না জানিয়ে বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক করে ফেললো।বাড়িতে যেদিন এসছি তার পরেরদিন ই ছেলেপক্ষ দেখতে এলো।হুট করেই সব ঠিক ঠাক হলো।রিয়া আমাকে বারবার রিকুয়েষ্ট করছে কাকুকে বোঝাতে। "আমি বললাম,কাকু রিয়ার ডাক্তারি পড়ার কি হবে?" "পড়ালেখা চলবে।সিয়াম বিয়ে করে রেখে চলে যাবে।রিয়ার মেডিকেল শেষ হলে আসবে।রিয়ার ও ভিষা করে নিয়ে যাবে।রিয়া ইউএস এ জব করবে।" ছেলেটার নাম তাহলে সিয়াম। "কাকু যতটা সহজ ভাবছেন অতটা সহজ কিন্তু নাও হতে পারে।বিয়ের পর লেখাপড়া কিন্তু বেশ ঝামেলার।" "দিয়া তুমি কি লেখাপড়া করছো না।দিয়া মা ছেলেটা খুব ভদ্র,টাকার অভাব নেই।রিয়ার সব শখ, আহলাদ মেটাতে পারবে।সামনে শুক্রবারে বিয়ে।রিয়ার জীবন ও সেটেল হয়ে যাবে।ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ার, ইউ এস এ জব করে. আর দুইদিন পরে বিয়ে।" কাকুর হাব ভাবে যা বুঝলাম বলেও লাভ নেই। মাত্র দুইদিন পরে কিভাবে কি হবে।বিভোর ভাই মাত্র দুইদিনে কিভাবে কি ম্যানেজ করবেন।এইদিকে সমস্ত আত্মীয় স্বজন দাওয়াত দেওয়া হয়ে গিয়েছে।অল রেডি রিয়ার মামা মামিরা এসে পড়েছে।কমিনিউটি সেন্টার ভাড়া করা হয়ে গিয়েছে।চারদিকে ছড়িয়ে গিয়েছে রিয়ার বিয়ের খবর।বিভোর ভাই এর কানে ও পৌছে গিয়েছে খবর।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

2025 © Golpo Hub. All rights reserved.