রিয়ার বিয়ে আটকাতে সমস্ত চেষ্টা যেখানে ব্যার্থ সেখানে রিয়ার কাঁন্না ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলোনা।সমস্ত কাজিনদল বাধ্য হয়ে একত্রে চাইছিলাম রিয়া পালিয়ে যাক।রিয়ার পালিয়ে যাওয়া টায় উত্তম বলে মনে হচ্ছে আমাদের কাছে।আম্মু রিয়াকে এসে অনুরোধ করলো রিয়া মা আমাকে ক্ষমা করে দিস, তোর বাবাকে বোঝানো গেলোনা।কিন্তু এমন কিছু করিস না সারাজীবন আমাকে খোটা শুনতে হয়।রিয়া কারো কথার কোনো উত্তর দেওয়ার অবস্হায় ছিলো না।কাঁদতে কাঁদতে দু'চোখ রক্তজবার মতো হয়ে গিয়েছে।বিভোর ভাই মামা মামির হাতে পায়ে ধরেছে অনেকবার রিয়ার বাবাকে বলার জন্য কিন্তু মামা কিছুতেই রাজি নয়।সময়, সিসুয়েশন পরিস্হিতি সবটায় বিভোর ভাই আর রিয়ার বিপরিতে।
আমার অনেক গুলো কল আর মেসেজ বিভোর ভাই এর কল মেসেজ দেখে বিহান ডিউটি ছেড়ে দ্রুত বাসায় পৌছালো।বিহান বাসায় পৌছে দেখে বিভোর ভাই এর চোখ ফুলে আছে।বিভোর ভাই কে উন্মাদের মতো দেখাচ্ছে।ফ্লোরে চুপ করে বসে আছেন হাত গড়িয়ে র*ক্ত পড়ছে পাশে রাখা ব্লেড।বিহান দেখেই অস্হির হয়ে বিভোর ভাই এর হাত বেঁধে দিলেন।টেনশনে বিহান কপালে হাত চালাচ্ছে বারবার।বিহান সব সময় স্ট্রং মানুষ। নিজের মনের কথা জানাবে মানলে মানো না মানলে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিবে,বরাবর ই সাহসী আর সোজা কথার মানুষ।বিহান ফ্লোরে বিভোর ভাই এর পাশে বসলো বিভোর ভাই এর ঘাড়ে হাত রেখে বললো তোর ভাই থাকতে তোর চিন্তা কিসের বিভোর।তুই না একটা ছেলে মানুষ। ছেলে মানুষের জন্ম হয়েছে ফাইট করার জন্য।তুই যে একটা প্রকৃত পুরুষ সেটা প্রুভ করার সময় এখন।প্রেমিকা থাকলে তার বিয়ে ঠিক হবে এটাই স্বাভাবিক এতে ভেঙে পড়ার কি আছে।তুই না ইয়াং ম্যান।তুই কেমন প্রেমিক সেটা প্রুভের টাইম এসছে।প্রকৃত প্রেমিক সবাই হতে পারেনা বিভোর।দুজন প্রেমিক প্রেমিকার মাঝে সব থেকে কঠিন পরীক্ষা হলো সম্পর্ক টা বিয়ে পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা।আর এটা এত সহজ নয়। হাজার টা বাঁধা অতিক্রম করেই পরিণয় পাওয়া যায়।একটা ছেলে যা পারে একটা মেয়ে তা পারে না। একটা মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে কাঁন্না করা ছাড়া তার আর কিছুই করার থাকে না।একটা মেয়ে পারেনা একটা ছেলেকে এনে তার ঘরে তুলতে।প্রতিটা মেয়েই অপেক্ষা করে তার প্রেমিক নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করবেই।যে কোনো ভাবে সে তাকে তার করে নিবেই।একটা মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে তার প্রেমিকের জন্য যে ক'ফোঁটা চোখের পানি ঝরে প্রতিটা ফোঁটা পানি বুকের ভেতরের চাপা কষ্ট আর প্রেমিকের আসার জন্য অপেক্ষার।এই চোখের পানি ভীষণ ভালবাসার প্রমাণ।কাপুরুষরা পারে না এই চোখের পানির মূল্য দিতে।বিয়ের আসরে অন্যর ভালবাসা বুকে নিয়ে বসে থাকা মেয়েটি জানে কতটা যন্ত্রণার তার অনুভূতি।প্রায় ছেলেরা কত সহজেই বলে দেয় তুমি বিয়ে করে নাও। প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করা একটা মেয়ের তখন কেমন লাগে যখন তার প্রেমিক এমন কথা বলে।তুই আমার ভাই বিভোর।একজন প্রেমিক,প্রকৃত প্রেমিক।ভালবাসা জয় করতে গেলে এসব সিসুয়েশন সামলাতেই হবে।
বিভোর ভাই হতাস হয়ে বললেন,আমি কি করবো বিহান।বাবা আর আম্মুকে এক হাজার বলেছি।আমি মরে গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। তারা রিয়ার মা বাবাকে বলতে পারবে না।পরিবার তো মেনে নিচ্ছে না।
"কাকু কাকি কে আর কিছুই বলতে হবে না।তুই বলেছিস তারা মানে নি এখানে তোর দোষ নেই।পরিবার মানছে না তাই বলে কি ভালবাসা স্যাক্রিফাইস করবি।আজ মানে নি কাল তো মানবে।আর হ্যাঁ বলতে তো পারবে না আমাদের একবার বলিস নি।আমরা দেখতাম কি করা যায়।"
"রিয়ার বাবাকে সবাই বলেছে রিয়ার বাবা বলেছে আমি রিয়ার যোগ্য না।রিয়ার যোগ্য কোনো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার। ফুপ্পি, আবির,দিয়া, রিয়ার আম্মু সবাই কেই বলে দিয়েছে। রিয়ার বাবার চোখে আমি সামান্য ব্যাংকার।"
"আমার ভাই সামান্য না বিভোর।আমার ভাই কে কেউ ছোট করলে আমি মেনে নিতে পারবো না।ভাবতে অবাক লাগে মানুষ বিয়ে দেওয়ার সময় দুটো মানুষের বিয়ে না দিয়ে টাকা, চেহারা, আর যোগ্যতা দেখে বিয়ে দেয় কেনো?ডিভোর্স কি এমনি এমনি বাড়ছে দেশে।বিভোর তুই একবার কল কর রিয়ার বাবাকে।ভয় পাবিনা সোজা সুজি বলবি।উনি যাতে ফিউচারে না বলতে পারে তাকে জানানো হয় নি।বা সে জানতোই না তোদের রিলেশন এর কথা।"
"আমি বলবো?আমার থেকে তোর কথা বেশী শুনবে।"
"আগে তুই বল দেন ফাইনাল কথা আমি বলবো।তুই তো জানিস বিভোর আমার কথা নিট এন্ড ক্লিয়ার।আমার সিদ্ধান্ত না মানলে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে যা করার নিজেই করি।"
বিভোর ভাই কল দিলো রিয়ার বাবাকে।
'আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।'
'ওয়ালাইকুম আসসালাম। কে বলছেন।'
'আঙ্কেল আমি বিভোর।'
'ওহ! বিভোর কেমন আছো?শুনেছো রিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে।আজ গায়ে হলুদ হয়েছে আগামি কাল বিয়ে।বিয়ের সব দায়িত্ব কিন্তু তোমাদের বাবা।তুমি আর বিহান দ্রুত চলে এসো।'
'আঙ্কেল.......... '
'হ্যাঁ বলো।'
'প্লিজ আঙ্কেল রিয়ার বিয়ে এভাবে দিবেন না।রিয়া আর আমি দুজন দুজন কে পছন্দ করি।এভাবে বিয়ে হলে কেউ ই ভালো থাকবো না আমরা।আপনি আমার বাবার মতো তাই আপনার কাছে রিকুয়েষ্ট করছি রিয়াকে এভাবে বিয়ে দিবেন না।আপনার মেয়েকে আমি ভালো রাখবো আঙ্কেল।আপনার মেয়ে কোনদিন অসুখি হবেনা।'
'দেখো বিভোর তুমি রিয়ার ভাই এর মতো।ভাই বোনের মতোই থাকো।সকালে রিয়ার বিয়ে, এখন এসব ভাবার সময় নেই।আশা করি তুমি রিয়াকে আর ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করবে না।রিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, ইউএস থাকে।ইউএস বাড়ি গাড়ি সব আছে।আশা করি বুঝতেই পারছো কত বড় ফ্যামিলিতে বিয়ে ঠিক হয়েছে।রিয়াকে আর ফোন দিও না কখনো তুমি।'
বিভোর ভাই হতাস হয়ে বিহানের কাছে ফোন দিয়ে দিলো।বিহান ফোন টা নিয়ে বললো,
'আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। আমি বিহান।'
'ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা বিহান।তুমি আমাদের বাড়ির জামাই তুমি না আসলে বিয়ের সব সামলাবে কে?দ্রুত চলে এসো।'
'আঙ্কেল রিয়ার বিয়ে বিভোর এর সাথেই দিন।আপনার মেয়ে ভালো থাকবে বিভোর ভালো থাকবে।আপনি চাইলে সব টা সুন্দর ভাবে হবে।একমাত্র আপনার হাতেই আছে সব কিছুর সুন্দর সমাধান।'
'দেখো বাবা কাল বিয়ে।তাছাড়া বিভোর এর সাথে কি রিয়াকে মানাবে তুমি বলো।বিভোর কোথায় একটা ব্যাংকে চাকরি পেয়েছে তাও নতুন।তোমার মতো কোনো ডাক্তার হলেও মেনে নিতাম।রিয়ার বিয়ে বিশাল বড় ফ্যামিলিতে ঠিক হয়েছে।আর সেখানেই বিয়ে হবে রিয়ার।'
'মানে আপনি আপনার সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন।সবাই কেই কি ডাক্তার হতে হবে।প্রফেশন এর থেকে মনের দাম বেশী।আপনার মেয়ের খুশির কথা টা তো ভাবুন প্লিজ।না হলে ওরা পালিয়ে গেলে দুই পরিবারের মান সম্মান নষ্ট হবে।'
'রিয়া কখনোই পালাবে না। বাইরে অনেক কাজ সবাই আমাকে ডাকছে।তুমি দ্রুত চলে এসো বিয়েতে।'
বিভোর ভাই হতাস হয়ে বসে পড়লেন।বিহান বললো,আমি বিয়ের ব্যাবস্হা করছি।সাহস রাখ বুকে।
কাকু জোরে জোরে রিয়াকে ডেকে নিলো।কাকি কাকু আর রিয়া এক ঘরে প্রবেশ করলো।বাইরে থেকে উঁকি দিলাম আমি।কাকু রাগি কন্ঠে বললো,
'তুমি সিয়াম কে ফোন করে বলেছো কেনো এই বিয়ে করতে পারবে না।এটুকু বলেই রিয়ার গালে ঠাসসস করে চড় মেরে দিলো।খুব সাহস বেড়েছে তাইনা তোমার।কি খাওয়াবে বিভোর তোমাকে।করে সামান্য একটা চাকরি।তোমার লেখাপড়ার খরচ কিভাবে চালাবে বিভোর।তোমার স্পর্ধা দেখে অবাক হচ্ছি তুমি কিনা সিয়াম কে ফোন দিয়েছো'
রিয়া চোখের পানি মুছে বললো,
"বিভোর দের ফ্যামিলি যথেষ্ট ভালো আমাদের ফ্যামিলির থেকে বাবা।ব্যাংক জব কে সামান্য বলা যায় না কোনদিক থেকে।'
রিয়ার কথা শুনে কাকু রিয়ার দিকে তেড়ে গিয়ে বললো,
'কি বললি তুই!তোর সহস খুব বেড়েছে তাইনা রিয়া।বলেই আরো কয়েক টা চড় মারলো কাকু।বিভোর এর হয়ে উকিলাতি করছো।তুমি যদি পালিয়ে যাওয়ার কথা ভেবে থাকো কোনদিন মেনে নিবো না আমি।ভেবে না আজ না হয় কাল মেনে নিবো।বিভোর ভাবছে কোন ভাবে একবার বিয়ে করতে পারলেই ফিউচার সেটেল।ডাক্তার মেয়ে পেলে কোন ছেলে বিয়ে করতে চাইবে না।বিভোর ও তেমন কিছুই ভাবছে।তুই বলদ তাই কিছুই বুঝছিস না।'
রিয়া চোখের পানি মুছে বললো,
'বাবা আমার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে আমি ডাক্তারি তে চান্স পাওয়ার পরেই বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।ডাক্তারি তে চান্স পাওয়ার আগেই বিভোর আমাকে ভালবাসে।তাছাড়া বাবা তোমার মেয়ে চান্স পেয়েছে তার মানে এই না ডাক্তার হয়ে গিয়েছে।এখনো বিভোরের যোগ্য আমি হতে পারিনি।'
'মানুষ দিন দিন উপর দিকে নজর দেয় আর তোমার নজর নিচে যাচ্ছে।আজ বাদে কাল তুমি ঠিক ই ডাক্তার হবে।তোমার পাশে যেমন ছেলে মানায় তেমন ই ঠিক করেছি আমি।'
'যোগ্যতার সাথে যোগ্যতার বিয়ে দিও না বাবা মনের সাথে মনের বিয়ে দাও।বিয়ে কি টাকার সাথে দিতে চাও আমার।আমাকে তোমরা বাধ্য করোনা বাড়ি ছাড়তে।'
--কাকু রেগে গিয়ে রিয়ার গলা চেপে ধরলো।
--কাকি বললো,মেয়েকে কি মেরে ফেলবে নাকি তুমি।
--রিয়া বললো,আমাকে মেরে ফেলো তুমি।মেরে ফেললেও শান্তি পাবো আমি।
'বিভোরের সাথে পালিয়ে যাবে ডাক্তার আর কোনদিন হতে পারবে না তুমি।
কোথায় পাবে বিভোর টাকা।বিহানের এর থেকে ভিক্ষা নিবে নিশ্চয়ই। '
'ছিঃবাবা।আমি কখনো ভাবিনি বাড়ি ছেড়ে যাবো।কিন্তু তুমি বাধ্য করলে।বিভোর নিজের যোগ্যতায় আমাকে পড়াবে।ডাক্তারি পাশ আমি করবোই বাবা।তোমাকে দেখিয়ে দিবো আমার সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো না।'
'তোমার মেয়েকে দেখে নির্লজ্জের মতো নিজের বাবার সাথে প্রেম ভালবাসার কথা বলছে।'
'আমাকে নির্লজ্জ হতে বাধ্য করেছো তুমি।বিভোর কে আর কত ছোট করবে তুমি।'
'তোমার ফোন দাও। বিয়ের আগে এই ফোন আর তুমি পাবে না। '
'কাকিমনি বাধ্য হয়ে বললো,তুমি কিন্তু বেশী বাড়াবাড়ি করছো রিয়ার বাবা।বিভোরের বাবার ও কিন্তু কিছু কম নেই।ইউএস এর ছেলে দেখে মাথা ঠিক নেই তোমার।এত লোভ তোমার।মেয়ের যদি কিছু হয় তোমাকে ছাড়বো না বলে দিলাম।এত মানুষ তোমাকে বুঝালো কারো কথা মানলে না।'
তুমুল অশান্তির পরেও কোন কিছু আটকানো গেলো না।রিয়ার মামিদের দিয়ে রিয়াকে পাহারা দেওয়া হচ্ছে।দিন গড়িয়ে রাত।পরের দিন সকালেই বিয়ে রিয়ার।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রিয়াকে কোথাও পাওয়া গেলো না।।আমি মেহু আপু তোহা আপু জানি কাল রাতে বিভোর ভাই বাইক নিয়ে ঢাকা থেকে এসছিলো।বিভোর ভাই এর বাইকে করেই রিয়া পালিয়ে গিয়েছে।রিয়াকে খোজাখুজি শুরু হয়ে গিয়েছে।বিভোর ভাই এর ফোন অফ।কাকু আম্মুকে যা তা কথা সাথে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।আম্মু মন খারাপ করে কাঁদছে।বাবা কাকুকে বলছেন দিয়ার আম্মুর কোনো দোষ নেই এখানে।বারোটা বাজতে বাজতে বরযাত্রী হাজির।অথচ রিয়ার খোজ এখনো পাওয়া যায় নি।আত্মীয়রা বেশীর ভাগ ই কাকুর দোষ দিচ্ছে।কাকুর বাড়াবাড়ির ফলে এমন হয়েছে।
কোনো মানুষ যখন সত্যিকারের কাউকে ভালবেসে ফেলে যখন মন হারিয়ে ফেলে তখন কোনো কিছুর পরোয়া করেনা।ভয়,লজ্জা,কলঙ্ক সব কিছুর উর্দ্ধে চলে যায়।
সারারাত বাইক চালিয়ে ঢাকা থেকে নড়াইল এসছিলো বিভোর ভাই।বাড়ির সামনে রাত জেগে অপেক্ষা করছিলো কখন রিয়া বেরোবে।রাত একটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর রিয়া একটা কালো ওড়না মাথায় দিয়ে বেরিয়ে গেছিলো বাড়ি থেকে।দুজনের চোখ ই ছিলো অশ্রুসিক্ত।