ভালবাসার মানুষের জন্য ঘর ছেড়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে যাওয়ার মতো রিস্ক আর দুঃসাহস সবাই নিতে পারে না।এটা একটা ভীষণ বড় রকমের চ্যালেঞ্জ।অন্ধকার ফিউচার, সামনে অনেক বাঁধা বিপত্তি, মানুষের কটুকথা সব অতিক্রম করে দুজন ভালবাসার মানুষ সারাজীবন দুজনের পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা হলো পৃথিবীর সব থেকে বড় যুদ্ধ ভালবাসার। যে যুদ্ধের ঘোষণা পরিবার দুজন সঠিক ভালবাসার মানুষের বিরুদ্ধে করে থাকে।দুজন মানুষ সঠিক হলে তারা এই যুদ্ধে জয় লাভ করে থাকে।আর বিয়ে হলো সৃষ্টিকর্তার হাতে লেখা এর সংবিধানের দায়িত্ব উপরওয়ালার হাতেই থাকে।কিছু মানুষ বলে পালিয়ে বিয়ে করেছে চরিত্রহীনা অনেক সময় এটা ঠিক নয় চরিত্রহীনা আর কাউকে ভালবেসে বিয়ে করার মাঝে বিস্তার পার্থক্য বিরাজমান।বিয়ে কপালে লেখা থাকলে সৃষ্টিকর্তার ইশারায় পালিয়ে হোক আর পারিবারিক ভাবে হোক হবেই।
বিয়ের আসর ছেড়ে একটা মেয়ে পালিয়ে গেলে আমাদের সমাজে ছিঃছিঃ করার মানুষের অভাব থাকেনা।কানাঘোষার শেষ নেই চারদিকে।বরযাত্রী অল রেডি জেনে গিয়েছে কনে নেই বিয়ের আসরে।সিয়াম এর রিয়াকে ভীষণ পছন্দ হয়েছিলো।রিয়া পালিয়েছে তাও সিয়াম বলছে রিয়াকে খুজে এনে দিতে।সে রিয়াকে এখনো বিয়ে করতে রাজি।সিয়াম রেগে আগুন হয়ে গিয়েছে।সব ভাঙা চোরা শুরু করেছে।পুলিশ কে কল দিয়েছে রিয়াকে তুলে আনার জন্য।সিয়াম আগে থেকেই জানে রিয়ার সাথে আমার সব থেকে ভালো রিলেশন। কেউ হয়তো বলেছে বিহানের প্রশ্রয় আছে রিয়ার ভেগে যাওয়ার জন্য।সিয়াম আমার দিকে আঙুল তুলে বললো,হেই ইউ দিয়া তুমি আর তোমার ডাক্তার হাজবেন্ড কে আমি ছাড়বো না।তোমার মামাতো ভাই বিভোর এর হাড় ও আসতো রাখবো না।মনে মনে ভাবছি মানুষ কি সাংঘাতিক লেভেল এর ছ্যাচড়া হতে পারে যে মেয়ে বিয়ের আসর থেকে পালালো তাকে বিয়ে করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।তোহা আপু আর মেহু আপু খোঁচা কথা বলেই যাচ্ছে।চারদিকে মানুষ রিয়ার নামে অনেক বাজে কথা বলা শুরু করলো।পাড়ার আন্টিরা বিভিন্ন খারাপ কথা বলছে। অথচ তাদের মেয়েরা পালিয়ে না গেলেও ৫-১০ টা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে বিভিন্ন পার্ক এ ঘুরছে রুম ডেট করছে।নিজের ঘরে মেয়ে থাকতে অন্যর মেয়েকে বাজে কথা কিভাবে বলে মানুষ ভেবে অবাক হয়ে যায়।রিয়া পালিয়ে যাওয়ার সম্পূর্ণ দোষ আম্মুসহ আমাকে দেওয়া হলো।রিয়ার মামা মামিরা বলছে রিয়ার বাবাকে তোমার ভাবি নিজের মেয়েকে ঠিক ই ভালো ডাক্তার দেখে বিয়ে দিয়েছে তাও দেশের সেরা ডাক্তার।আর তোমার মেয়ের বেলায় ইচ্ছা করে নিজের অকর্মণ্য ভাতিজার পিছে লেলিয়ে দিয়েছে।দিয়ার আম্মু আর দিয়া এসব জানে।ওরা কি তোমার মেয়ের ভালো চায় নাকি।নিজের মেয়েকে সবার উপরে রাখবে বলে ইচ্ছা করেই এমন করেছে।আম্মুকে যতপ্রকার বাজে কথা আছে কিছুই বলতে বাদ রাখছে না।
ভাইয়া তেড়ে গিয়ে রিয়ার মামা মামিদের বললো,
'দেখুন মামা-মামি আর কাকু তোমাদের সবাইকে বলছি একবার ও আমার আম্মু আর দিয়া কে নিয়ে বাজে কথা বলবেন না।আমার বোনের যখন বিয়ে হয় বিহান বেকার ছিলো।আমার আম্মু তার মেয়ের মেয়ে একটা বেকার ছেলের সাথে দিয়েছিলো।আর আমার আম্মু আর বোন বা আমরা রিয়া আর দিয়াকে আলাদা করে দেখি না।'
'কাকিমনি বললো,আবির বাবা রাগ করিস না।তোর কাকু একটা বেয়াদপ লোক।বেশী লোভ করলে জিভ তো পুড়বেই।আমার মেয়েটাকে যেভাবে মেরেছে পালাবে নাতো কি করবে।ওর শুধু টাকার দরকার আমার মেয়ের সুখ শান্তির প্রয়োজন নেই।সবাই বুঝিয়েছে কারো কথা শোনে নি।অবশেষে মান সম্মান নষ্ট হলো এখন তো ভালো লাগছে।'
'কাকু বললো, ফোন দাও আমি বিহানের সাথে কথা বলবো।বিভোর রিয়াকে নিয়ে ঢাকা গেলে যেনো ঘাড় ধরে পাঠিয়ে দেয়।'
'কাকি বললো,বিহানের কাছে ফোন দিতে যেও না।বিহান ঘাড়ত্যাড়া রাগি ছেলে,মান অপমান হতে না চাইলে বিহান কে ফোন দিও না।বিহান যে তোমাকে এতকরে বুঝালো শুনেছিলে বিহানের কথা। '
কাকু ভাইয়া আর আমাকে বললো এক্ষুণি ঢাকা চল।ভাইয়া বললো,ঢাকা গিয়ে।কাকু বললো রিয়াকে নিয়ে আসবো।আমার সাথে ঢাকা না গেলে তোর মামাদের নামে কেস দিবো আমি।ভাইয়া হেসে বললো,কেস দেন বিহান আছে কি করবে ভাবতেও পারবেন না।আম্মু বললো,আবির যাও তোমার কাকুর সাথে।মামাবাড়ি থেকে দুই মামা দুই মামি রিয়ার মা বাবা আমি ভাইয়া সবাই মিলে রওনা দিলাম।অশান্তির চরম পর্যায়ে গেলো সব কিছু।সিয়াম দের চাপে কাকু আরো মরিয়া হয়ে উঠেছে।
--------------------------------------------------
ভোর রাতে রিয়া যখন বাড়ির পেছনের বাগান দিয়ে বেরিয়ে গেছিলো সারারাত ছিলো রিয়ার নিদ্রাহীন।কাকু রিয়ার ফোন নিয়ে গেলেও মেহু আপুর ফোন দিয়ে কন্ট্যাক্ট করেছিলো।রিয়া বাইরে বেরিয়ে দেখলো, রাস্তায় বাইকের উপরে শার্টের বোতাম তিনটা খোলা, চোখ ভরা পানি নিয়ে উদাস মনে দাঁড়িয়ে আছে বিভোর ভাই।তৃষ্ণার্ত প্রেমিকের বুক যেনো খা খা করছে প্রেমিকাত বিহনে।রিয়ার চোখ ভরা পানি।এ দু'দিনে মানসিক অশান্তির চরম পর্যায়ে পৌছে গেছিলো রিয়া আর বিভোর ভাই।যেখানে দুজন মানুষকে আলাদা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো পরিবার সেখানে তাদের এই দেখা হওয়াটা যেনো গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে তৃষ্ণার্ত পাখির মতো শুকিয়ে যাওয়া বুকে এক সাগর পানির দেখা।রিয়া ছুটে গিয়ে বিভোর ভাই কে জড়িয়ে ধরলো।এর আগে পরে কখনো তারা কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরে নি।রিয়া নিজের সব টা জুড়ে বিভোর ভাই কে জড়িয়ে ধরে ভীষণ কাঁদলো।বিভোর ভাই ও রিয়াকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কয়েক টা শ্বাস নিয়ে নিজের কষ্ট কমালো।রিয়ার কপালে চুমু দিয়ে বিভোর ভাই বললেন,আই লাভ ইউ রিয়াপাখি। তুমি না আসলে আমি এখানেই শেষ করে দিতাম নিজেকে।রিয়া বিভোর ভাই এর হাত ধরে বললো,আপনি কি পাগল হাতে এটা কি করেছেন।আর বার বার মরার কথা বলেন কেনো?বিভোর ভাই বললো,আমার মাথা ঠিক ছিলো না কি করবো।বিহান এসে না বুঝালে আমি কি করতাম জানিনা।রিয়া বললো,জানেন আমার চোখে বিহান ভাইসারাজীবন ই সেরা তবে আজ মনে হচ্ছে বিহান ভাই এর মতো ভাই পাওয়া টাও ভাগ্যর ব্যাপার।আমাকে কল দিয়ে বলেছে রিয়া আমার তো বোন নেই মনে করো তুমি আমার বোন।তোমার ভাই এর সামর্থ আছে তার বোন এর লেখাপড়ার খরচ দেওয়ার।কেউ মেনে নেয় নি ফাইন আমি আর দিয়া আছি তো।তুমি বড় ডাক্তার হলে পরিবার নিজে থেকে এসে মেনেনিতে বাধ্য হবে।তারা এই ভুলের জন্য ক্ষমাচাইবে একদিন।বিভোর তোমাকে ভালো রাখবে রিয়া।ভালো রাখার এবেলিটি আছে বিভোর এর।আমি যদি দেখতাম বিভোর এর মাঝে তোমার প্রতি ভালবাসা নেই আমি কখনোই বলতাম না বিভোরের সাথে চলে এসো।
--রিয়া আমি কি সত্যি তোমার যোগ্য না।
--কিসের যোগ্য অযোগ্য হ্যাঁ। আমি আপনাকে ভালবাসি ব্যাস আর কিছু বুঝি না।
--------------------------------------------------------
সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌছালাম আমাদের বাসায়।বিহান দরজা খুলে কপালের চামড়া ভাজ ফেলে তাকিয়ে রইলো আমাদের দিকে।বিহান আগে থেকেই জানতো আমরা আসছি আমি জানিয়ে রেখেছিলাম।বিহান একটু অবাক হয়েই বললো,
'--কি ব্যাপার আপনারা।'
কাকু বললো,
'--বিহান বিভোর আর রিয়া কোথায়?এক্ষুণি বেরিয়ে আসতে বলো।রিয়াকে আমি নিয়ে যাবো।'
'--ওরা তো এখানে আসে নি।আসুন ভেতরে এসে দেখুণ।ভেতরে গিয়ে সবাই খোজাখুজি করে কোথাও পেলো না।'
কাকু বললো,
'--বিভোর আমার মান সম্মান কিছু রাখে নি।আমি বিভোর কে পুলিশে দিবো।আমার মেয়েকে ফাঁশিয়েছে। '
বিহান বললো কপালের চামরা ভাজ ফেলে বললো,
'--বসুন তারপর যা বলার বলুন।আম্মু কাকিমা তোমরা বোসো সবাই।'
বিভোর ভাই এর মা বাবার মুখ খুব ভারী হয়ে আছে।তারা যেনো ভীষণ লজ্জিত।
বিহান বললো,
--আঙ্কেল চলুন পুলিশের কাছে যায়।আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড এনডিসি আছে একজন,ডিআইজি আছে একজন,পুলিশের অনেক বড় বড় পোস্টে আছে।আপনার অভিযোগ আসলে কী?আপনার মেয়ে কি নাবালিকা স্বইচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে পুলিশ কি অভিযোগ নিবে।অভিযোগ নেওয়ার পর আপনার মেয়ে সাক্ষী তো আপনার বিরুদ্ধে দিবে।।আমার ফ্যামিলির মানুষ যথেষ্ট ভদ্র তাই আপনার বলা সমস্ত বাজে কথা হজম করছে।কেনো জানেন?কারণ মেয়ের বাবা হিসাবে আপনার কষ্ট টা বুঝতে পারছে।বারবার বিভোরের দোষ দিচ্ছেন কেনো?রিয়া ও তো বিভোর কে ভালবাসে। দোষ করলে দুজনের ভাগে ফিফটি ফিফটি পড়ে।আপনার মান সম্মান আপনার জন্যই নষ্ট হয়েছে।মান সম্মান কি আপনাদের আছে আমাদের নেই।তাই বলছি কি এসব বাড়াবাড়ি করে আর কোনো লাভ আছে কি।আপনি কি এখনো বুঝতে পারছেন না যে মেয়ে বাড়ি ছেড়েছে সে কি আর ফিরবে।আর হ্যাঁ আমার ফুপ্পিকে একটা বাজে কথাও বলবেন না কেউ।আমার কানে সব এসছে।আপনাদের বাড়ির মেয়ে আমি বিয়ে করেছি তাই কিছু বলিনি,সব থেকে বড় কথা আপনার মেয়ে ই বিভোর বিয়ে করছে আপনি আমাদের আত্মীয়। '
'--আমি কোনদিন মেনে নিবো না এই বিয়ে।'
বিহান তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,
'--এটা আপনার চয়েজ।তবে আপনি মেনে নিবেন আর ক্ষমা ও চাইবেন কারণ ভুল আপনার।একদিন বলবেন বিভোর এর মতো জামাই হয় না।'
বেশ কিছুক্ষণ কথাকাটাকাটি হলো।বিহান বিভোর ভাই এর বাবাকে ভীষণ বকাঝকা দিলো।বিহান ভাই এর আম্মু, বাবা সবাই বিভোর এর বাবাকে রাগ করলেন।রিয়ার বাবাকে বিহান আবার বুঝালো,মামা মামিরা সবাই বুঝালো।ঘন্টাখানিক পর কাকু মামা মামিরা সবাই আবার ফিরে গেলো।আমিও আসতে গেছিলাম কিন্তু বিহান আটকে দিলো।
সবাই ফিরে গেলে বিহান কে বললাম,
'--বিভোর ভাই কোথায়?'
'--বিভা আপুর বাসা থেকে আসছে এক্ষুণি চলে আসবে।বিভোরের ঘর টা সাজাও তো সুন্দর করে।বিভা আপু আর দুলাভাই বিয়ে দিয়েছে ওদের।আমি জানতাম তোমার লোভী কাকুজান এখানে আসবে ঠিক ই।'
'ওয়াও আমার ভীষণ ভাল লাগছে বিভোর ভাই আর রিয়ার ফাইনালি বিয়ে হলো।'
উনি চুলের ভাজে হাত চালিয়ে বললেন,
'দিয়া।'
'কি?'
'ভাগ্যিস আমি কায়দা করে আমার বিয়েটা সেরে নিয়েছিলাম।না হলে এই রাজাকারের বংশধররা আমার সাথেও একই কাজ করতো।'