--বেশ অনেক্ষণ যাবত অপেক্ষা করছি রিয়া আর বিভোর ভাই এর জন্য।মন খুব ছটফট করছে ওদের দেখার জন্য।কেননা এতদিনের দেখা আর আজকের দেখার মাঝে অনেক বেশী ব্যাবধান।ভাবা যায় আমাদের রিয়া আর বিভোর ভাই কিনা এখন বিবাহিত।বিভোর ভাই কে কি এখন দুলাভাই ডাকা উচিত নাকি রিয়াকে ভাবি ডাকা উচিত।এতদিন ভেবে রেখেছিলাম বিভোর ভাই এর বিয়ের সময় কত টাকা আদায় করবো কিন্ত কই আর তা হলো।কপাল টায় খারাপ।হাত ধোয়ানো, কনে সাজানো,বাসর ঘর সাজানো কিছুই আর হলো না।আমাকে দুই ফ্ল্যাটের গলি দিয়ে বার বার পায়চারী করতে দেখে বিহান হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বিহান কে তাকিয়ে দেখেই বুঝতে পারলাম এই ছেলে আমাকে সিওর কিছু বলবেই বলবে।উনি নিশ্চয়ই ভাবছেন দিয়া কেনো এত পায়চারী করছে।
বিহান কে দেখে বেহুদা হেসে দিয়ে বললাম,
" ওগো শুনছেন।"
উনি বোধহয় মারাত্মক আকারের কারেন্ট শর্ট খেলেন।হটাত এই ওগো ডাকের রহস্য খুজে পেলেন না।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে সিওর হয়ে নিলেন আমি উনাকেই বললাম কিনা।কথাটা যে উনাকেই বলেছি বুঝতে পেরে বললেন,
"আমাকে বলছো?খানিক টা সন্দিহান ভাবেই বললেন।চোখে মুখে জিজ্ঞেসা প্রশ্ন।"
আমিও দুষ্টুমি করেই বললাম,
"হ্যাঁ গো আপনাকেই বলছি।"
উনি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে ভাবছেন আমার এমন মতিভ্রমের কারণ টা কি হতে পারে। এক মিনিট সময় নিয়ে চট করে কিছু একটা ভেবে বললেন,
"কিছু বলবেন আপা শাবানা।"
সাথে সাথে হেকুর উঠলো আমার উনার এই আশ্চর্যজনক আধ্যাত্মিক কথা শুনে।হঠাত কি ভেবে আমাকে শাবানা আপা বলে সম্মোধন করলেন।আমি গায়ের জামা টেনে টুনে ঠিক করলাম, ঠিক করা ওড়না আবার ঠিক করে নিয়ে একটু শব্দ করে গলা ঝেড়ে মাথা এদিক ওদিক ঝাঁকিয়ে স্ট্রং হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,
"কি!ওভাবে কি দেখছেন।আর শাবানা কাকে বলছেন।"
উনি শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে আমার দিকে এগোতে এগোতে বললেন,
"উত্তর পরে দিচ্ছি।আগে বলো কি বলার জন্য এত মিষ্টি মধুর সুরে আমাকে ডাকলে সুইটহার্ট। "
কথাটা বলেই ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি নিয়ে আমার নাকে আঙুল স্লাইড করলেন।আহা! কি সুন্দর বলার ধরণ উনার।উনার সুইটহার্ট ডাক যেনো আমার হার্টে এসে তীরের মতো বিঁধলো।এই ছেলেটা অসাধারণ ভঙ্গিমায় কথা বলে বলে আমাকে বার বার ভয়ানক ভাবে তার প্রেমে ফেলছে।তার দিকে তাকিয়ে হুদাই হাসলাম।মানে ব্যাপার টা এমন আমার হাসি আসে নি তবুও হাসলাম।উনাকে শাবানার মতো লক্ষী বউ হওয়ার মতো অভিনয় করে বললাম,
"আমার দীর্ঘকালের বাসনা আপনাকে লুঙ্গি পরা অবস্থায় দেখবো।আপনি কি একদিন লুঙ্গি পরতে পারেন না আমার জন্য।"
উনি বাম ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,
"আচ্ছা! এই ব্যাপার।আমি তো ভাবলাম বলবা ওগো আমাকে একটা সেলাই মেশিন কিনে দাও।তোমার এই দিন রাত ডিউটি তোমার এত কষ্ট আমার আর সহ্য হচ্ছে না।সেলাই মেশিন এর কাজ করে একজন পারফেক্ট ট্রেইলার হয়ে কোটিপতি হয়ে যাবো।তাহলে তুমিও সারাদিন বাসায় থাকতে পারবে আমিও তোমায় কাছে পাবো।কাজের ফাঁকে ফাঁকে রোমান্স ও করা যাবে।"
"আপনার কি এখন রোমাঞ্চকর অনুভূতি হচ্ছে আম্মুর একমাত্র জামাই।"
উনি আস্তে আস্তে আমার আরেক টু কাছে এসে বললেন,
"আহা!তুমি মেয়েই এমন সুন্দর যাকে দেখলেই রোমাঞ্চ এর মুড চলে আসে।আই নিড প্রচুর রোমাঞ্চ। "
"শুধু ফাউ কথা আপনার তাইনা?আগে বলুন কবে লুঙ্গিতে দেখবো।আর লুঙ্গি ডান্স দিবো।"
"আমাকে কোনদিন দেখোনি তুমি লুঙ্গিতে।?"
"কিভাবে দেখবো।বাড়ি থাকলেন কবে আপনি।"
"আগে পরতাম বাসায় রাতে ঘুমোনোর সময় মাঝে মধ্য।"
"এই সাত আট মাসে তো একদিন ও দেখলাম না।"
"বিকজ তুমি আমার পাশে ঘুমোও তাই।ঘুমোলে লুঙ্গি যদি খুলে যায়।"
"তা সমস্যা কি খুললে।"
"এই মেয়ে কি পাগল হয়ে গিয়েছে।বউ সামলানো যায় তবুও লুঙ্গি সামলানো যায় না বুঝেছো।তোমার সামনে লুঙ্গি খুললে ইজ্জত যাবে আমার।"
"এমন ভাব করছেন যেনো আমি আর আগের দিয়া আছি।বউ আপনার ভুলে যাবেন না।"
"আসলেই কি তুমি আমার বউ।আই মিন আমি বিবাহিত।"
"দুইদিন পর বাচ্চার বাপ হবে এখনো জিজ্ঞেস করে বিবাহিত কিনা।"
উনি আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বললেন,
"একটু দুষ্টুমি করলাম তোমার সাথে।শুনেছি বিয়ের পরে মানুষ বদলে যায়।কিন্তু আমাদের প্রেম, খুনসুটি কখনো কমবে না বুঝেছো শ্যামাপাখি।আই লাভ ইউ।"
--এর ই মাঝে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রাত আট টায় রিয়া আর বিভোর ভাই বাসায় পৌছালো।সারাদিনে দুজন ই বেশ ক্লান্ত,কত ঝড় ঝাপ্টা অতিক্রম করে দুজনে এ পর্যন্ত এসছে।দুজনের মুখের স্বস্তির হাসি।আজ দুজন আলাদা হলে চিরদিনের জন্য বিলীন হয়ে যেতো এ হাসি।রিয়াকে দেখেই ভীষণ উত্তেজিত হয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম,খুব শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে বললাম,কনগ্রাচুলেশন রিয়া ইউশ ইউ ভেরি হ্যাপি ম্যারেড লাইফ।রিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে কতক্ষণ যেনো শান্তির নিঃশ্বাস নিলো।বিভোর ভাই আর বিহান কথা বলছে।বিহান বিভোর ভাই কে বুঝাচ্ছে আর শান্ত্বণা দিচ্ছে। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে খুব শিঘ্রই।
বিহান রিয়াকে বললো,
"রিয়া কনগ্রাচুলেশন আপু।"
রিয়া অত্যান্ত খুশি মনে বললো,
"ধন্যবাদ বিহান ভাই।আপনি না থাকলে হয়তো কিছুই হতো না।"
"ডোন্ট ওরি আমি যতক্ষণ আছি সব হবে।আমার চাচা শ্বশুর ও মেনে নিবে বুঝলে।"
উনার মুখে প্রথম চাচাশ্বশুর শুনলাম।হাসিতে পেট ফেটে যাচ্ছে আমার।
বিহান ভাই এর কথা শুনে রিয়া আমি বিভোর ভাই সবাই হাসলাম।বিহান আমাকে ইশারা করলো রিয়াকে সাজানোর জন্য।আমি রিয়াকে নিয়ে গেলাম।বিহান যেনো কিছুই ভোলে না,সব কিছু কিভাবে খেয়াল রাখে।।রিয়ার জন্য লেহেঙ্গা, শাড়ি গহনা সব এনে রেখেছে।তাও খুব সুন্দর সুন্দর শাড়ি গহনা এনেছে।রিয়াকে লেহেঙ্গা পরিয়ে রাণীর মতো সাজিয়ে দিলাম।রিয়া এমনিতেই দেখতে অনেক সুন্দর তার উপর বিয়ের সাজে আরো বেশী সুন্দর লাগছে।রিয়াকে বললাম চুপ করে এই খাটের উপর বসে থাকবি কিন্তু।আর কাল আমাকে বলবি কি কি হয়েছিলো ওকে।রিয়া যেনো লজ্জা পেলো আমার কথা শুনে।রিয়াকে রেডি করে খাটে বসিয়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম।বিহান বিভোর ভাই কে সেরোয়ানি পরিয়ে দিলো।দুজনকেই অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে।রাত ৯ঃ৫০ এ বিভোর ভাইকে রিয়ার ঘরে দিয়ে এলাম।
বিহান বললো,।
"বিভোর তুই না বলতি রাত দশ টার আগে যেনো তোকে বাসর ঘরে এগিয়ে দিয়ে আসি।দশ মিনিট আগে দিলাম।"
বিভোর ভাই হেসে বললো,
"আমি তো মজা করতাম,আর তুই মনে রেখেছিস।সত্যি গ্রেট তুই ভাই।"
এরই মাঝে বিভোর ভাই বললেন,
"দিয়া হাত দে তো বোন।"
বিভোর ভাই কে বললাম,
"কি বিভোর ভাই।"
বিভোর ভাই হাতের মধ্য পাঁচ হাজার টাকা গুজে বললো,এই নে বউ আর খাট সাজানোর জন্য দিলাম।'বিভোর ভাই কে বললাম,টাকা লাগবে না বিভোর ভাই।বিভোর ভাই বললেন,আমার বিয়ে এভাবে হচ্ছে বলে কি আমি কোনো নিয়ম পালন করবো না।বিহান বললো,আরে দিচ্ছে রাখো।তোমার কিপটা ভাই জীবনে প্রথম দিচ্ছে।এই সুযোগ হাত ছাড়া করোনা।আমি বিহান কে বললাম চুপ করুন তো।বিভোর ভাই দুষ্টুমি করে বললেন,'টাটা গাইস দেরি হয়ে যাচ্ছে।'বিভোর ভাই ঘরে প্রবেশ করলে বিহান বললো,চলো দিয়া যায়।বিহান কে বললাম যান আসছি।বিহান চলে গেলে আমি বুঝার চেষ্টা করলাম ভেতরে কি হচ্ছে।
--------------------------------------------------
ফুলে ফুলে সাজানো বাসর ঘরে রিয়া বসে আছে ঘোমটা টেনে বউ সেজে।বিভোর ভাই আর রিয়ার জীবনে সব থেকে উত্তম দিন আর খুশির দিন আজ।বিভোর ভাই খাটের এক কোণায় চুপ করে বসে রিয়ার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে।অনেকক্ষণ বেশ চুপচাপ আছেন।
রিয়া বলে উঠলো,
"কি ব্যাপার মিষ্টার পারফেক্ট আপনি চুপচাপ কেনো?বিয়ে করে কি মনে হচ্ছে ভুল করেছেন।চুপচাপ থেকে কি ভুলের অনুশোচনা করা হচ্ছে।"
বিভোর ভাই একটা হাই তুলে বললেন,
"যার জন্য চুরি করলাম সেই এখন চোর বলছে।আমি যে বিবাহিত সত্যি কিনা সেটাই ভাবছিলাম।"
"ভেবে কি পেলেন।"
"এত সুন্দর একটা মেয়েকে বউ হিসাবে পাবো সেটা কি ভেবেছিলাম।"
"বাট আমি জানতাম আপনি আমার উনি হবেন।এই কিউট ছেলেটা কে সব সময় আমার পছন্দ ছিলো।"
রিয়ার মুখে হাত বুলিয়ে বললেন,
"বাবা কি অনেক মেরেছে তোমাকে?"
"একটু একটু।"
"তোমার বাবার জায়গা অন্য কেউ হলে কি করতাম জানিনা।"
"সব কষ্ট ভুলে গিয়েছি কারণ আমি আপনাকে পেয়েছি।এর থেকে হাজার গুন বেশী মার খেলেও আমি আপনাকেই চাইতাম।"
"বাবার জন্য কষ্ট পাচ্ছো রিয়া।"
"না বিভোর।বাবার উপর অনেক রাগ করেছি আমি।আমি ভাবতে পারিনি বাবা লোভে অন্ধ হয়ে যাবে।আপনাকে এতটা অপমান মূলক কথা বলবে।"
"তুমি ভেবো না রিয়া।আমি তোমাকে পড়াবোই।তোমার মাথা সারাজীবন উঁচু করে রাখবো আমি।"
"আমি জানি বিভোর।আমি ভুল মানুষ কে ভালবাসিনি।"
বিভোর ভাই রিয়ার হাতে রিং পরিয়ে হাতে একটা চুমু দিয়ে বললেন,আই রিয়েলি লাভ ইউ রিয়াপাখি।
রিয়ার মাঝে মৌনতা।
বিভোর ভাই থেমে গিয়ে আবার বললেন,
"রিয়া তোমার দিক থেকে চোখ সরানো যাচ্ছে না।"
"আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে।।"
এর ই মাঝে দেখলাম বিহান আসছে এদিকে।বিহানের হাতে পানির পট।
বিহান পানির পটের মুখ খুলে পানি খেতে খেতে আমার দিকে নজর দিলেন।বেশ অবাক হয়ে তাকালেন কপালের চামড়া কয়েকগুন ভাজ পড়েছে। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে কপাল কুচকে বললেন,
"কি ব্যাপার তুমি এখানে। এ ঘরে কান পেতে আছো ক্যানো?.."
মুখে আঙুল চেপে বুঝালাম চুপ।
উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন," ডিজগাস্টিং। কি করছো তুমি।"
"প্রেম শুনছি।"
এক্ষুণি আসো ওখান থেকে বলেই উনি পাজা কোলে তুলে আমায় নিয়ে এলেন।সোজা রুমে এনে সিটকিনি লাগালেন।আমাকে আবার ও সারপ্রাইজড করে দিলেন উনি।কারণ আমাদের ঘরটাও ফুলে ফুলে ফুলসজ্জার মতো করে সাজিয়েছেন উনি।