আমি রেগে উল্টা দিকে হাঁটা দিলাম।রিয়ার সামনে আমাকে এইভাবে অপমান করতে পারলো।আমাকে মনে হয় এখন আর ভালো লাগে না।ভালো লাগবে কিভাবে চারদিকে সুন্দরী সুন্দরী নার্স। সকালে দেখলাম নার্স সানজি আর ফারজানার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।ফারজানা তো একেবারে গায়ের উপর পড়ছিলো।চারদিকে এত নার্স থাকলে আমার কথা তো ভালো লাগবেই না।
'রিক্সাওয়ালাকে বললাম,যাবেন চাচা।'
রিক্সাওয়ালা উত্তর দিলো,
'আম্মা কোথায় যাবেন আপনি।'
' চলুন সামনে বলছি।'
বিহান পেছনে তাকিয়ে দেখে আমি নেই।বিহান আর রিয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে খুজছে আমাকে।রাগে শরীর রিরি করে জলছে আমার।বিহান যেনো আমাকে দেখতে নাবয়ায়।চাচাকে বললাম, জলদি চলুন না চাচা।
'আমি এর থেকে জোরে পারিনা আম্মা।বয়স হয়েছে তো।'
বিহান ওহ নো! বলে মাথায় হাত চালালো।বিহান জানে রাগ হলে আমি এমন ই করি।এদিক ওদিক খুজে দেখলো রিক্সায় আমার ওড়না ঝুলে আছে।বিহান দ্রুত গাড়ি চালিয়ে রিক্সার সামনে এলো।রিক্সাচালক কে বললো মামা দাঁড়ান।
বিহান কে দেখে রিক্সাচালক কে বললাম,
'না আপনি দাঁড়াবেন না।'
'আরে ডাক্তার বাবাজি। কেমন আছো বাবা।'
'চাচী কেমন আছেন এখন চাচা।'
'অনেক ভালো।আল্লাহ তোমার ভালো করুন বাবা।প্রথম কোনো বড় ডাক্তার ফ্রি দেখালাম আবার ওষুধ ও কিনে দিলে।তোমার চাচী এখন সুস্থ অনেক টা।'
'দোয়া করবেন চাচা।সমস্যা হলে দেখিয়ে যাবেন চাচা।'
মনে হচ্ছে দুজেন আগেই পরিচিত।বিরক্ত হয়েই বললাম,
'দোয়া দেওয়া হয়েছে আবার চলুন চাচা।'
বিহান বললো,
'দাঁড়ান চাচা।আপনার বউমা রাগ করেছে।'
আমি বললাম,
'চাচা চলুন আগে আপনি।'
চাচা বললো,
'কি মসিবত।যাও মা।রাগারাগি করতে নেই।'
চাচাকে বললাম,
'আমি রিক্সা থেকে নামবো না।আপনি চলুন।'
'বিহান দাঁত কিড়মিড় করে রিক্সায় আমার পাশে উঠে বললো এবার চলুন চাচা।পুরা শহর ঘুরাবেন।যে রিক্সা ভাড়া করেছে তার থেকে টাকা নিবেন।'
'নামুন আমার রিক্সা থেকে।'
'তোমার রিক্সা এটা। আমি তো জানতাম চাচার রিক্সা।এনি ওয়ে অল রেডি অনেক টাইম লস হয়েছে আমার।ধৈর্যর বাধ ভেঙে যাচ্ছে কিন্তু।'
এরই মাঝে বিহানের ফোনের ভাইব্রেশন বেজে উঠলো।বিহান ফোন কানে নিয়ে বললো,
'ফারজানা ভালো ভাবে খেয়াল রাখো আমি ফ্রেশ হয়েই আসছি।হোয়াটস এপ এ পাঠিয়ে দাও।'
আবার ফারজানা।কি দিতে চাইলো হোয়াটস এপ এ।বিহানের দিকে তাকিয়ে বললাম,
'হু ইজ ফারজানা।'
'নার্স। '
'আপনার সাথে হোয়াটস এপ এ কি'
'জাস্ট বিরক্তিকর প্রশ্ন করো না।'
'সুন্দরী ফারজানার কথা শুনলে আমার কথা বিরক্ত তো লাগবেই।'
'ওকে ফাইন আমি প্রেম করছি এবার হ্যাপি ডিজগাস্টিং। '
'রিয়া আর চাচা হাসছে কি দেখে দুজনে।ওদের হাসতে নিষেধ করুণ।'
'মেন্টালের মতো কথা বললে হাসবেই তো।'
--আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই
উনি আমাকে শহর ভরা মানুষের মাঝ দিয়ে কোলে তুলে নিলেন রিক্সা থেকে।
এক প্রকার জোর করেই গাড়িতে উঠিয়ে দরজা লক করলেন।মনে মনে ভেবে রেখেছি এক মাস কথা বলবো না।যত যায় বলুক আমি কথা বলবোই না।গাড়িতে কেউ কারো সাথে কথা বললাম না।
গাড়ি থেকে নেমেই দ্রুত পায়ে হেঁটে উপরে চলে এলাম।আমরা বাসায় পৌছে দেখি মামা মামি চলে এসছে।মামিকে দেখেই জড়িয়ে ধরলাম।মিষ্টি সুরে বললাম কেমন আছো মামি।মামি বললো ভালো আছি মা তুই কেমন আছিস।বিহান কুশল বিনিময় করে বললো,কাকু,কাকিমা আমি ফ্রেশ হয়ে হসপিটাল যাচ্ছি।রাতে এসে কথা হবে।রিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে খানিক টা দূরে।মামা এগিয়ে গিয়ে রিয়াকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলেন নিজের মেয়ের মতো বুকের সাথে।মামা বললেন,রিয়া মা বাবার সাথে কথা বলবে না।এ কথা শুনেই রিয়া এবার কেঁদে দিলো জোরে।মামি রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো কেঁদো না মা।আমাদের ভুল বুঝো না মা।ডায়নিং এ বসে মামা মামি আর রিয়ার ভালবাসাময় মুহুর্ত টা ভীষণ সুন্দর লাগছিলো দেখতে।রিয়ার মনের ৯০% কষ্ট দূর হয়ে গেলো।বিকাল পাঁচটায় বিভোর ভাই ব্যাংক থেকে বাসায় ফিরলেন।মা বাবাকে কাছ থেকে দেখে রাগ অভিমান ভুলে গেলো।যদি মামা অনেক অনুতপ্ত হয়েছে।রিয়ার মুখে হাসি দেখে বিভোর ভাই ও সব ভুলে গেলো।অনেক দিন পর বাপ বেটার জমিয়ে আড্ডা শুরু হলো।মামা বলে দিলেন রিয়ার সমস্ত খরচ মামা দিবেন।এক পর্যায়ে সব ঝামেলা মিটে গেলো।মামা মামি রিয়ার জন্য অনেক গুলো শাড়ি গহনা ও নিয়ে এসছেন।
--সেদিন রাতে আর বিহান বাসায় ফিরলো না।সারারাত ঘুম হলোনা আমার।অস্হিরতায় ছটফট করছি। এইদিকে আমিও ফোন দিচ্ছি না।দুঃচিন্তা ও হচ্ছে খুব।ফোন দিতে গিয়ে ভাবছি কেনো ফোন দিবো আমি। সে কি জানেনা সে কথা না বললে আমি থাকতে পারিনা।আমি যে রাগ করেছি তাতে কি তার কিছুই যায় আসে না।আমি যে অভিমান করে বসে আছি তার কি তাতে কিছুই যায় আসে না।এমন কি হলো বিহান এক দিনেই পাল্টে গেলো।বিহান কি সত্যি তবে পাল্টে গেলো।ঘড়িরদিকে তাকিয়ে আছি আমি সময় যেনো কাটছে ই না।মন খারাপের রাত এত ভয়ানক কষ্টের কেনো বিহান।বুকের মাঝে কেনো দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। ভয়ানক ব্যাথায় ছটফট করছি আমি।এই কষ্ট ভীষণ কষ্ট,ভীষণ যন্ত্রণার।কেনো বিহান আপনি বদলে গেলেন।আপনি কি জানেন না ভালবাসার মানুষ এতটুকু বদলে গেলে পৃথিবীর সব এলোমেলো হয়ে যায়।আপনার বুকে মাথা না রাখলে আমার ঘুম ই আসে না।এই দীর্ঘ রাতের যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারছি না।আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে আমি মরেই যাবো।ভীষণ কাঁদছি আমি,কাঁন্না আটকাতে পারছি না।ফোন টা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকেই দেখি বিহান অন লাইনে।অন লাইনে অথচ আমায় একটা কল দেওয়ার সময় হয় নি।ফেসবুকে একটা পোস্ট শেয়ার করলাম,
"ভালবাসা যেখানে মূল্যহীন,
অভিমান সেখানে বেমানান।'