এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২
--নিকশ কালো অন্ধকার আমাবস্যার রাত, মন খারাপে রুমের লাইট অফ করে দুই হাঁটুর মাঝে মাথা গুজে কাঁদছি।সকালেই আম্মুর কাছে চলে যাবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি।বিহান আমার অভিমানের কারণ আর খোজে না এখন।রাগ করে খেয়েছি কিনা জানতেও চায় না এখন। থাকবোই না আর ওর সাথে, দরকার নেই আমার ডাক্তার হওয়ার।আমি আর লেখাপড়া ই করবো না।কোনদিন উনার সাথে আর কথা বলবো না আমি।কেনো কথা বলবো, উনি আর ভালবাসে না আমায়।অন লাইনে আছে অথচ আমাকে একটা মেসেজ দেওয়ার ই সময় নেই।রুমের লাইট অন করে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম।মামা আর মামির সাথে আমিও চলে যাবো।ব্যাগ গুছিয়ে ফ্লোরে রেখে ওয়াশ রুমে গেলাম, অপেক্ষা করছি ভোর হওয়ার জন্য।ওয়াশ রুম থেকে চোখে মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে দেখি এপ্রোণের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে বিহান।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত চার টা বাজে।বিহানের দিকে তাকিয়ে ভীষণ অবাক হয়ে গেলাম আমি এখন এখানে কিভাবে এলো।ও না হসপিটালে ছিলো।আমি বিহান কে দেখে মাথা নিচু করে বিহান কে ক্রস করে বেলকনির দিকে পা বাড়াতেই বিহান আমার পথ আটকে দাঁড়ালো।আবার ও বিহান কে পাস কাটিয়ে অন্য দিক দিয়ে যেতেই বিহান আবার ও আমার পথ আটকে দাঁড়ালো।বিহানের মুখে কোনো কথা নেই তবে ভীষণ গম্ভীর মুডে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।চোখে মুখে ভীষণ গম্ভীরতা।আমার দিকে গম্ভীর মুডে তাকিয়ে হাতের গ্লাভস খুলছে। বিহান গ্লাভস পরে, এপ্রোণ পরেই আজ বাসায় চলে এসছে কেনো?ও তো গ্লাভস পরে কখনো বাসায় আসে না।গ্লাভস খুলে, এপ্রোণ খুলে ফ্লোরে ফেললো।হাতের বুড়ি আঙুল কপালে চালিয়ে গম্ভীর চিন্তায় তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ঘন ঘন কয়েক টা শ্বাস নিয়ে বিছানার উপর বসলো।শরীর এলিয়ে দিতে কিছুটা পেছনের দিকে হেলে ফ্যান চালিয়ে বসলো।যেনো ভীষণ ক্লান্তি দূর করছে।শার্টের দুইটা বোতাম খুলে বেশ আয়েশী ভাবে উপরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে কিছুটা হেলে যাওয়ার মতো।প্রতিটা ঘন নিঃশ্বাসে যেনো কান্তি রেখা কিছুটা করে কমছে।আমার চোখ দিয়ে পড়ছে অঝরে পানি।এরপর বিহান আমার দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসলো।ফ্লোরে রাখা ব্যাগের দিকে নজর গেলো।বিহান বিছানা ছেড়ে উঠে এসে ব্যাগের কাছে নিচু হয়ে বসে ব্যাগ টা খুলে দেখলো আমার জিনিসপত্র।বিহান উঠে দাঁড়িয়ে বুকে হাত বেধে স্ট্রং হয়ে দাঁড়িয়ে বললো, "এই ব্যাগ কিসের দিয়া।?খুব সন্দিহান ভাবে বললো।" আমি কোনো উত্তর দিলাম না। বিহান আবার দাঁতে দাঁত চেপে ভীষণ রেগে বললো, "আমি কিছু জানতে চেয়েছি ড্যামেড আনসার মি।" বিহানের কথা পুরা রুমে বাজছে।এত জোরে বলেছে কথাটা।ভয়ে আমার হৃদপিন্ড কেঁপে উঠলো খুব জোরে।ভয়ে দুই হাত দুই কানে চেপে ধরলাম জোরে।থরথর করে কাঁপছি আমি।বিহান প্রচন্ড রেগে আছে।ওর দিকে তাকানোর সাহস টুকু পাচ্ছি না।বিয়ের পর একদিন ও এভাবে রেগে যেতে দেখিনি ওকে।এখন ই মনে হচ্ছে আমাকে ফিনিশ করে ফেলবে বিহান।এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে কোথাও লুকিয়ে পড়ি বিহানের নজরের আড়ালে।বিহান এতটা ভয়ানক ভাবে রেগে যেতে পারে আমি ভাবতেই পারি নি।আমাকে ভয়ে চুপসে যেতে দেখে আমার দুই হাতের কব্জি খুব শক্ত ভাবে চেপে ধরলো রাগে ফুসতে ফুসতে ।এখনি মনে হয় আমার কচি হাতের হাড় গুড়ো গুড়ো হয়ে যাবে।বিহান ওর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেপে ধরলো।রাগে কাঁপছে বিহান, ভয়ানক রাগ তার চোখে, এই রাগের সামনে এখন যায় আসবে চূর্ণ বিচুর্ণ হয়ে যাবে।বিহান আমার দুই হাত চেপে ধরে ওয়ালের সাথে খুব জোরে চেপে ধরে বললো, "হোয়াট ইজ ইওর প্রব্লেম। আরও জোরে বললো হোয়াট ইজ ইওর প্রব্লেম ড্যামেড।" আমি কুকিয়ে উঠলাম ব্যাথায়।ফুঁপিয়ে আহ শব্দ করে কেঁদে দিলাম।ব্যাথায় সহ্য করতে পারছি না যন্ত্রণায়।বিহান এতটা জোরের সাথে চেপে ধরেছে দুই হাত যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে।আমাকে কাঁদতে দেখে ছেড়ে দিলেন, ওয়ালে নিজের হাত ঘুষি মেরে, ব্যাগ লাথি মেরে বললেন, "ফারজানা কে কি মেসেজ করেছো?আনসার নি!" -আমি ভয়ে কিছুই বলতে পারছি না।শুধু কাঁদছি। উনি আবার চিল্লায়ে বললেন, "ছেড়ে যেতে চাও আমায়!ছেড়ে যেতে চাও।" দুবার উচ্চারণ করলেন কথাটা। এবার আমার কাঁন্নার সুর আরো বেড়ে গেলো।আমি আরো জোরে কেঁদে দিলাম। গভীর চিন্তায় হাত চালিয়ে দিলেন চুলের মধ্য।উনি এবার চুলের মধ্য হাত চালাতে চালাতে বললেন, "আমি চিল্লাবো,আমি রেগে যাবো,আমি ধমকাবো,আমি মারবো,আমি বকবো,যা খুশি তাই বলবো কিন্তু দিয়া তুমি কান খুলে শুনে রাখো তুমি আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারবে না।আন্ডারস্টান্ড।আমার রাইট আছে সম্পূর্ণ রাইট আছে তোমাকে বকার।তাই বলে তুমি আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববে।এটা তোমার মাথায় আসে কিভাবে দিয়া। আমার সাথে রাগ হোক ঝগড়া হোক তুফান হয়ে যাক তোমার, যা কিছু হয়ে যাক তুমি আমাকে ছেড়ে যাওয়া তো অনেক পরের কথা এমন ভয়ানক কিছু ভাবতেও পারবে না।আই নিড ইউ এভরিসেকেন্ড দিয়া।আই নিড ইউ এভরিমোমেন্ট।যে তুমি আমায় ছেড়ে যাবে তুমি জানোনা তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই।কেউ নেই দিয়া আমার হৃদয়ে তুমি ছাড়া।তুমি ছাড়া সব কিছু শুণ্য হাহাকার মরুভূমি আমার পৃথিবী। আমি কয়েক দিন না খেয়ে থাকতে পারবো,বিলাশবহুল জীবন ছাড়া থাকতে পারবো তবুও তুমি ছাড়া থাকতে পারবো না।তুমি ছাড়া আমার অক্সিজেন বন্ধ হয়ে যায় তুমি বোঝো না।মাঝে মাঝে তোমাকে বকে নিজেকে স্বান্তনা দেই আমি বিকজ তুমি আমার আপণজন।কথা গুলো বলতে বলতে আমাকে টেনে ধরে জড়িয়ে ধরলেন বুকের সাথে।উনিও কেঁদে দিয়ে বললেন, আই লাভ ইউ পিচ্চি, লাভ ইউ সো মাছ,আই লাভ ইউ মোর দ্যান মাই ওন লাইফ দিয়া।" উনাকে এমন করতে দেখে আমার কাঁন্নার মাত্রা আরো বেড়ে গেলো।কত আবেগ আর ভালবাসা জড়ানো ছিলো কথা গুলোতে। উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, "লাইফের সব থেকে খারাপ সিসুয়েশন এ পড়েছিলাম আজ আমি।চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।আমার ক্যারিয়ারের বদনাম হয়ে যেতো আজ দিয়া।আমার হাতে একজন রুগির জীবন যাচ্ছিলো।একটা মানুষের জীবনের দায় যখন আমার উপর পড়লো আমি তোমায় বুঝাতে পারবো না যে মানসিক ভাবে কি ঝড় যাচ্ছিলো আমার উপর দিয়ে।আম্মুকে ফোন দিয়ে বললাম,আম্মু আমার জন্য দোয়া করো।আম্মু বললো, আমার ছেলে কখনো হারবে না বাবা।তোমার আম্মুর দোয়া সব সময় আছে।আজ এক পেশেন্ট এর সার্জারী ছিলো।আমার ওষুধ চেঞ্জ করে প্রেয়সী নিজের ইচ্ছামতো ওষুধ দিয়েছিলো।আমি বুঝেছি আমার ক্যারিয়ারের বদনাম করতে এমন করেছে।কিন্তু ও চালাকি করে কথা ঘুরিয়েছে।রাগে আমি আজ আবার ও প্রেয়সীর গায়ে হাত তুলেছি।হসপিটালের সব ডাক্তার ই জানে আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনা।এসব ঝামেলায় মাথা ঠিক ছিলো না।আমি হাইয়ার অথোরিটির কাছে অভিযোগ দিয়েছি প্রেয়সীর নামে।পরে আমি সঠিক ট্রিটমেন্ট করে সুস্থ করে সার্জারী করেছি।বাসা থেকে বেরিয়ে আমার কেবিনে গিয়ে ভেবেছি তোমায় ফোন দিবো দেখি চার্জ নেই।চার্জে দিয়ে সার্জারী তে গেছি।গুরুত্বপূর্ণ সার্জারী থাকায় প্রায় সারারাত লেগেছে সার্জারী তে।আজকের সার্জারী অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো আমার জন্য।তবে আমি পেরেছি চ্যালেঞ্জ এ জয়ী হতে।সার্জারী শেষে ফোন হাতে নিতেই ফারজানা আমাকে তোমার মেসেজ দেখালো।তুমি কি লিখেছো আপু আপনি আপনার বিহান স্যার কে বলে দিয়েন আমি বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।নেট অন করেই দেখি তোমার স্টাটাস।আমার মাথা হ্যাং হয়ে গেছিলো প্রায়।গ্লাভস না খুলেই বাসায় ছুটে এসেছি।ফোনে চার্য না থাকায় তোমায় জানাতে পারিনি আমি বাসায় ফিরতে পারবো না।সরি দিয়া প্লিজ মাফ করে দাও।আসলেই আমার অনেক রিয়্যাক্ট করা হয়ে গিয়েছে।এমন আর হবে না পিচ্চি।" আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, "আমাকে আগে কেনো বললেন না।আপনার সাথে এসব হয়েছে।আমি ভেবেছি ওই সুন্দরী ফারজানা আর সানজি কে কি আপনার ভালো লেগে গেলো।আবার হোয়াটস এপ এ কি সব দিতে বলেন।আবার সারারাত বাসায় আসেন নি।আমি কত কি ভেবে বসে আছি।আমি ভেবেছি আপনি আমাকে ভুলে গিয়েছেন।আপনি সামান্য একটু চেঞ্জ হলে আমার কেমন যেনো সব উলট পালট লাগে।আপনি জানেন না আপনাকে ঘিরেই আমার সব ভালো থাকা।" "বললাম তো সরি,এমন ভয়ানক অন্যায় আমার আর হবে না।বাট তুমি কিভাবে ভাবলে আমি ফারজানা বা সানজি কে পছন্দ করবো।" "কারণ ওই ফারজানা কে দেখি আপনার সাথে কেমন করে যেনো কথা বলে।আর ওরা খুব সুন্দরী। " "ওরা কি তোমার থেকেও সুন্দরী। " "এমন ভাবে বলছেন যেনো আমি সুন্দরী। " "একদিন বলেছিনা আমার চোখ দিয়ে দেখলেই বুঝতে আমার চোখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারী।ফারজানা আর সানজি কি আসলেই সুন্দরী দিয়া।" "হুম খুব ই।" "আমি তো কখনো খেয়াল করে দেখিনি।এইবার দেখতে হবে তাহলে।" "না আপনি দেখবেন না।আপনার আশে পাশে কোনো মেয়ে দেখলেই আমার খুব জ্বলে।" "আমার হৃদয়েশ্বরী তুমি দিয়া।দিয়ার বিহানের হার্ট কোনো ফুটপাতের দোকান নয় যে কেউ ইজিলি প্রবেশ করতে পারবে।অনেক কড়া সিকিউরিটি দেওয়া সেখানে।দিয়া নামক ভালবাসার পাখির বসবাস। " আমি কেঁদেই যাচ্ছি।আমাকে কাঁদতে দেখে বিহান বললো, "এখনো কাঁদবে?আচ্ছা আমি অন্যায় করেছি আমার শাস্তি পাওয়া উচিত রাইট।কি শাস্তি দিতে চাও বলো।" "যা বলবো তাই শুনতে হবে কিন্তু।" "আচ্ছা বলো কি শাস্তি।" "সাতদিন ছুটি নিতে হবে আপনাকে।আপনি অনেক দিন হয়ে গিয়েছে সব সময় বিজি থাকেন।আমাকে একটুও সময় দেন না।সাত দিন আমাকে সময় দিতে হবে।" "আচ্ছা মঞ্জুর।এইবার কি মাফ করেছো।" "করেছি।" "এইবার জলদি খাইয়ে দাও আমাকে।তোমার নরম হাতে খাবার খেলে সব ক্লান্তি দূর হবে।" --বিহান ফ্রেশ হয়ে এলে খাবার নিয়ে এলাম।বিহানের গালে তুলে খাবার খাইয়ে দিচ্ছি।বিহান খাবার খেতে খেতে বলছে তুমি কেনো এতো অবুঝ দিয়া।আমার উপর কি ভরসা নেই।কেঁদে কেঁদে নিজেকে কষ্ট দিয়েছো।চোখের পানি তোমার পড়ে ভয়ানক যন্ত্রণা আমার অনুভব হয়। বিহানের বুকে মাথা রেখে রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম।সব কষ্ট যেনো বিহানের বুকে মাথা দিয়ে বিলীন হয়ে গেলো। বিহান সাতদিনের ছুটি নিয়েছে।মামা মামি দুই দিন থেকে চলে গেলো।রিয়া আর বিভোর ভাই এর সাথে মামা মামির সব কিছু ঠিক হয়ে গেলো।বিহানের ল্যাপটপে বসে বসে মুভি দেখছি আমি আর রিয়া।এরই মাঝে বিভোর ভাই এসে টেনে টেনে ডাকছেন রিয়াকে, -- বউউউউউউউউউ।বউউউউউউউউউউউউ কোথায় হারিয়ে গেলে। রিয়ার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম আমি।এ কেমন ডাকরে বাবা।রিয়া তেড়ে গিয়ে বললো, --ষাড়ের মতো ডাকা হচ্ছে কেনো শুনি। --আমার ঘুম পাচ্ছে রিয়া। --তা নিষেধ করেছে কেউ। --তোমাকে নিয়ে ঘুমোবো। --আপনার ঘুম কি আমি ঘুমিয়ে দিবো। --আহা! শিশুটা। --আমাকে কি নদীর শিশুক এর মতো লাগে। --আরে না বেবিটা। বাংলায় শিশুটা বললাম। --দিয়া আমি আসছি।আজ তোর ভাইয়ের কপালে আছে। --যা যা আমার ভাই রোমান্টিক মুডে আছে।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

2025 © Golpo Hub. All rights reserved.