পাশের রুমে শুরু হয়েছে গৃহযুদ্ধ যে যুদ্ধ শুনে হাসতে হাসতে মরে যেতে মন চাইছে আমার।আমি হেসেই যাচ্ছি।বিহান ওয়াশ রুমে কাপড় ক্লিন করছে আর বলছে পাগল হয়ে গেলে এত হাসছো কেনো?আমি মুভি দেখা ছেড়ে ওয়াশ রুমের দরজায় গেলাম।বিহান থ্রি -কোয়ার্টার পরে দুই বালতি কাপড় পরিষ্কার করছে।বিহান কে ইশারা দিয়ে বললাম শুনুন ওপাশে কি হচ্ছে।বিহান বেশ ধমকের সুরে বললো তোমাকে না কতবার বলেছি ওদের ঘরে কান দিবা না তুমি।কে শোনে কার কথা আমি গাল চেপে হেসে এসে আবার বিছানায় বসলাম।রিয়া আর বিভোর ভাই এর ভীষণ মারামারি শুরু হয়ে গিয়েছে।।সম্ভবত বিভোর ভাই রিয়াকে চুমু দিতে গিয়েছে আর বিভোর ভাই এর দাঁড়ির খোচা তে রিয়া ব্যাথা পেয়েছে।কেননা বার বার শোনা যাচ্ছে ভদ্রলোকের মতো দাঁড়ি গোফ যেনো বড় রাখা হয় এত ঢং করে কাটা না হয় আর।পরের বার আমাকে কিস দিতে আসলে এমন দাজ্জাল মার্কা দাঁড়ি গোফ নিয়ে আর আসবেন না।উহু আমার নরম তুলতুলে গাল এবার ই গেছে।
'বিভোর ভাই বলছেন,কি বলো আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে এই বয়সে দাঁড়ি রাখলে কেমন দেখাবে।আমাকে তো বুড়ো বুড়ো লাগবে।'
'ঢং দেখে বাঁচিনা। বুইড়া বেটা বলে কি।এখন কি আর হ্যান্ডসাম আছেন আপনি।'
'তাহলে কি বুড়ো হয়েছি।'
'তাই ছাড়া কি ওয়েট আপনার ফোন নাম্বার আমি এক্ষুণি বুইড়া বেটা দিয়ে সেভ রাখবো।শুনুন আপনি বুড়ো হয়ে গিয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।দাঁড়ি রাখার কোনো বয়স নেই,সুন্নত হলো দাঁড়ি রাখা। স্টাইল দিয়ে মেয়ে পটিয়ে বেড়াতে হবে না আর আপনাকে।বিয়ে করেছেন ভালো হবেনে কবে।'
'একটা কিস দিতে গিয়ে কি কি শুনলাম বাবা।বউ নাকি রিণা খান কিছুই বুঝলাম না।'
'কি বললেন আমি রিনা খান।অসভ্য পুরুষ আপনি।কোনো কথা নয় দাঁড়ি রাখবেন তাই রাখবেন।'
'এখনো ছেলে মেয়ে হলো না আমাকে বুড়ো বানিয়ে দিলে।ছেলে মেয়ে হলে কি আর আমাকে পাত্তা দিবে।'
'বুড়ো কে বুড়ো বললে আপত্তি কোথায় বুঝলাম না।আহারে কচি খোকা যেনো।আপনার মতো ফাজিলের ছেলে হলে আপনার মতো ফাজিল না হয় তাই ভাবছি।'
'আমার ছেলে হলে মানুষ বুঝবে বাপ কা বেটা।চবাপ বেটা বেড়াবো মানুষ বলবে দুই হিরো।ছেলে যেখানে প্রেম করবে মানে আমার হবু বিয়াইন এর সাথে একটু ভাব টাব ও নিতে পারবো।ভেবেই নিজেকে আরো হ্যান্ডসাম ভাবে সাজাতে মন চাইছে।'
'বাচ্চা কি আপনি নিবেন।মানে আপনার পেটে হবে।'
'কেনো তোমার পেটে।'
'যদি ক্ষমতা থাকে না নিজের পেটে একটা বাচ্চা নিয়ে দেখান।লুচু কোথাকার ছেলের শ্বাশুড়ির সাথে এখন থেকেই লুতুপুতুর চিন্তা।যান আগে এখানে থেকে।আমি আলাদা ঘুমোবো।ডোন্ট টাচ মি।'
'আরে আরে সরি সরি।বিয়াইন ফিয়াইন ওসব মিথ্যা কথা।আমার বউউউউ ছাড়া দুনয়নে কিচ্ছুই ভালো লাগে না আমার।'
'তাই নাকি।'
'কসম তাই।একটু রাগালাম তোমাকে।'
'ওকে ফাইন আপনি সাকসেস আমি রেগেছি।এখন আবার কথা ঘুরাচ্ছেন কেনো?'
ফিক করে হেসে যাচ্ছি আমি।তাদের ঝগড়া আমি সব সময় খুব ইনজয় করি।আমার মনে তাদের মতো বেষ্ট জুটি আর হতে পারে না।বিহান কে মেহেদি আনতে বলেছিলাম,এনেও রেখেছে।হাতে মেহেদী নিয়ে বসে আছি।সাদা নখ হঠাত মনে চাইছে মেহেদী লাগাতে।খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছে আর পা দুলাচ্ছি সাথে গুনগুন করে গান গাইছি লা লালা লা লালালা।বিহান ছাদে সমস্ত কাপড় মেলে দিয়ে রুমে এসে খাটের নিচে বসলো আমার পায়ের কাছে।আমি বিহান কে বসতে দেখে বললাম একি আপনি নিচে বসছেন কেনো।বিহান নিচ থেকে মায়াবী চোখ তুলে আমার দিকে তাকালো।ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি। বিহান আমার হাত থেকে মেহেদী টা নিয়ে টিউব খুলে পায়ের নখে মেহেদী লাগিয়ে দিলো।আমি হঠাত বিহানের এমন কান্ডে বেশ অবাক।আমার হাত দুটো বিহানের হাতের মধ্য নিয়ে হাতের নখে মেহেদী লাগিয়ে দিলো।মেহেদী লাগাতে লাগাতে বললো,দিয়া তোমার হাতের নখ গুলো অনেক ভালো লাগে আমার জানো।কেমন গোল গোল নখ সাদা ধবধবে।আমি বিহান কে বললাম,আপনার নখ আমার থেকে অনেক বেশী সাদা আর সুন্দর।আচ্ছা এত সুন্দর কেনো আপনার নখ বলবেন। বিহান নিঃশব্দে হেসে বললো,কি সব বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন করো তুমি।পনেরো মিনিট পরে টিস্যু দিয়ে মেহেদী মুছে দিলো বিহান।টকটকে কালার হয়েছে।বিহান আমার হাতে চুমু দিয়ে বললো,যে রং বিহান লাগিয়েছে সেটা তো সুন্দর হতেই হবে।যে হাতে বিহানের স্পর্শ রং লেগেছে সে হাতে নিঃসন্দেহে ভালো রং হবার কথা তাইনা মিসেস বিহান।আমি হাসলাম বিহানের কথা শুনে।হাতের নখ একটু বড় দেখে নেইল কাটার দিয়ে নখ কেটে দিলো।আমি একটু আপত্তি করলাম বা হাতের বড় নখ না কাটার জন্য।বিহান একটু বড় রেখে কেটে দিলো আর বললো নখ রাখতে নেই পুচকি এতে জীবানু থাকু প্রচুর।বিহানের কোলের উপর আমার দু পা নিয়ে পায়ের নখ ও কেটে দিলো।বিহান কে বললাম,এত কিছুই তো করে দিলেন একটু নেইলপালিশ লাগিয়ে দিবেন।বিহান কসমেটিক্স বক্স থেকে নেল পালিস নিয়ে হাতে পায়ে নেল পালিশ পরিয়ে দিলো।এ সাত দিনে প্রতিদিন গোসল করিয়ে দিয়েছে কাপড় ধুয়ে দিয়েছে,খাইয়ে দিয়েছে রোজ আমাকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে,চুলে শ্যাম্পু করিয়ে দিয়েছে।
এভাবেই কেটে গেলো আরো দুইটা বছর।সময় এগিয়ে গেলো আরো অনেক দূর।কিন্তু আমি আজ ও সেই নতুন বিহানের কাছে।একদম ই নতুন যেনো সদ্য বিবাহিতা বউ বিহানের।রোজ বাসায় আসার সময় কিছু না কিছু আনছেই আমার জন্য।আমার মন ভালো রাখতে ভীষণ বিজি বিহান।।রমজান মাসের শুরু হলো।ইউটিউবে ইফতারির রেসিপি দেখছি বসে বসে রিয়া আর আমি।নড়াইল থেকে তোহা আপু,মেহু আপু,তিয়াস ভাই, ভাইয়া সবাই ঘুরতে এসছে ঢাকা সাথে আয়রা কি নিয়ে এসছে।রমজান তারা ঢাকায় কাটাবে।ঈদের সময় এক সাথে নড়াইল ফিরবো।অনেক দিন সব কাজিনেরা এক জায়গা হই না।এবার শুরু হলো আবার কাজিনদের আড্ডার চাঁদের হাট।এখন আমরা বিশাল বড় ফ্লাট নিয়েছি চার টা বেড রুমের।কারণ কেউ না কেউ ঢাকায় বেড়াতে আসে ই সব সময়।এক্সটার রুমের প্রয়োজন আমাদের সব সময়।মামি আর আম্মু এক জায়গা বসে ভিডিও কল দিয়েছে।মামি বলছেন,
--দিয়া কেমন আছিস রে মা।
--ভালো আছি মামি।তুমি?
--চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে কেনো?
--জানিনা তো।গরমের জন্য মনে হয়।
--লেবুর সরবত খাবি রেগুলার।
--সেতো খাচ্ছি ই মামি চিন্তা করোনা।আম্মু বাবার শরীর কেমন।
--আছে ভালোই এইতো রমজানের পর ঢাকায় নিয়ে যাবো তোমার বাবাকে।
--হ্যাঁ আম্মু বিহান বলছিলো বাবার অপারেশন এর কথা।
--দিয়া তোর ভাইয়াদের কাছে গ্রাম থেকে খুজে খুজে ১০০ টা মুরগির ডিম আর শাক পাতা, ছোট মাছ পাঠিয়েছি।ডিম ফ্রিজে রাখিস বিহান,বিভোর, রিয়া সবাই খাস।আর রিয়ার জন্য রিয়ার আম্মু ড্রেস পাঠিয়েছে।তোর বড় মামিও রিয়ার জন্য শাড়ি পাঠিয়েছে।
--আর আমার জন্য?
--আর কত দিয়া?আমি বিহান কে নিষেধ করেছি আর যেনো কোন কিছু না কেনে।তোমার আলমারি দেখে মাথা ঘুরায় আমার।তোমার ছেলে মেয়ে ও তো পরে পারবে না।
--আম্মু রিয়ার কি আমার থেকে কম আছে।
--রিয়ার নতুন বিয়ে হয়েছে।রিয়াকে তো দিতেই হবে।
--বুঝলান আমি বুড়ি হয়েছি।
--সাইড থেকে মামি বললো,দিয়া তোর শ্বাশুড়ি কি মরে গেছে।আমি তোর জন্য পাঠিয়েছি।দেখিস পিঠা গুলা নষ্ট না হয়ে যায়।
আচ্ছা মামি আবার ফোন দিবো। ভাইয়ারা চলে এসছে।হই হুল্লোড় করতে করতে ভাইয়াদের আগমন ঘটলো।বিহান আর বিভোর ভাই বাজারে গিয়েছে।মেহু আপুর সাথে অনেক দিন পরে দেখা। তোহা আপু আর মেহু আপু রিয়া আর আমাকে জড়িয়ে ধরলো।ওদের সবাইকে বসতে দিলাম।রান্না আগেই করে রেখেছিলাম।এর ই মাঝে বিহান আর বিভোর ভাই ও চলে এলো।সবাই এক সাথে খাবার খেতে খেতে গল্প করছি।রিয়া আয়রা কে খাইয়ে দিচ্ছে।খাওয়ার মাঝেই তিয়াস ভাইয়া বলে উঠলো মেহু আজ বাস থেকে এক টাকলা বেটার মাথার উপর বমি করে দিয়েছে।কি জানি বেঁচে আছে কিনা বেচারা।তোহা আপু চেচিয়ে বললো,এক্ষুণি বমির কথা মনে করাতে হলো তাইনা?মেহু আপু বললো এইবার তোমার মাথায় করবো সিওর।রিয়া মেহু আপুর দিকে তাকিয়ে বললো,আসলেই নাকি আপু,ঘটনা কি সত্য।মেহু আপু বললো হ রে বইন ঘটনা সত্য।খাওয়া শেষে বসে আছি সবাই রিয়াদের রুমে।আমার ফোন খুজে পাচ্ছি না। ফোন টা মাত্রই রেখেছি।বিহান বললো,এমন ভাবে খুজছো যেনো জান হারিয়ে গিয়েছে।আবির ভাইয়া বললো,মেয়েদের ইদানিং বয়ফ্রেন্ডের থেকে ফোন ই বেশী প্রিয় ভাই।বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।ভাইয়া নিশ্চয়ই মেহু আপুকে ঠেস টা মারলো।মেহু আপু মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে।বিহান বললো আচ্ছা আমি ফোন দিচ্ছি দেখো কোথায় বাজে ফোন।বিহান ফোন দিলেই তোহা আপুর হাঁটুর নিচে ফোন বেজে উঠলো।তোহা আপু আমার ফোনটা উঁচু করে ধরে বিশাল জোরে খিলখিলিয়ে হেসে দিলো।সবার এটেনশন এখন তোহা আপুর দিকে।
তোহা আপু ফোন উঁচু করে বললো, "বউ ভক্তলোক টা কে?"
তিয়াস ভাইয়া বললো কে আবার বিভোর ভাই নিশ্চয়ই।
তোহা আপু ভ্রু নাচিয়ে বললো,"
আরে না না বিভোর ভাই না।কি ব্যাপার বিহান ভাই আপনি তাইলে বউভক্তলোক,দিয়ার ফোনে বিহান ভাই এর নাম্বার বউভক্তলোক দিয়ে সেভ করা।"
বিহান কপালের চামড়া কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বুঝতে বাকি রইলো না বিহান আমাকে অশনি সংকেত দিচ্ছে।কারণ বিহান এর নাম্বার আমি বউভক্তলোক দিয়ে দুই দিন আগেই সেভ করেছিলাম।