এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২
"বউভক্ত লোক যদি কেউ হয়ে থাকে সেটা হলাম আমি।একমাত্র আমি বুঝেছিস তোরা।এই বিভোর ছাড়া কেউ বউ ভক্ত হতে পারেনা।আমি আমার বউ ছাড়া দুনিয়ার কিছুই বুঝি না।আমার বউ ই হলো আমার সব।তাছাড়া আমি এটা বিশ্বাস করিনা যে আমার থেকে কেউ বউ বেশী ভালবাসে।" বিভোর ভাই ডান হাত উঁচু করে লাফিয়ে উঠে এমন কথা বলে উঠলেন।আমাদের সবার মনোযোগ বিভোর ভাই এর দিকে গেলো।সবাই বিভোর ভাই এর দিকে চক্ষু চড়ক গাছের মতো করে তাকিয়ে রইলাম।রিয়া চোখ রাঙিয়ে রাগে খিটমিটিয়ে বলে উঠলো, "নির্লজ্জ কোথাকার।আপনার কাছে জানতে চেয়েছে কেউ।" রিয়া মনে হয় লজ্জায় এক্ষুণি স্টোক করবে।বিভোর ভাইকে দাঁত দিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে আর খটমট করে যাচ্ছে। ভাইয়া বললো, "ভাইরে ভাই থাম তুই।তুই যে কি পরিমান বউ ভক্ত সে আমরা ভালো করেই জানি।হোয়াটস এপ এর প্রফাইলে রিয়ার ছবি।ফেসবুকের প্রফাইলে রিয়ার ছবি।চারদিকে বউ এর ছড়াছড়ি।তুই বিয়ে না করলে জাতি জানতেই পারতো না বউ নিয়ে কিভাবে আদিক্ষেতা করতে হয়।" তিয়াস ভাই বললো, "আরে ভাই মাঝে মাঝে তো বুঝেই উঠতে পারিনা বিভোর ভাই এর আইডি ছেলে না মহিলার আইডি।আই এম সো কনফিউজড সামটাইম।সেদিন আমার এক ফ্রেন্ড রিয়ার ছবি দেখে ক্রাশ খেয়ে মরার কায়দা প্রায়।আমি বললাম ভাই তুই কি মান সম্মান ডোবাবি।মানুষ তোকে গে বলে ডাকবে। ওটা আমার মামাতো ভাই এর আইডি।বেচারার কি অবস্থা। " বিভোর ভাই বললেন, "তা তিয়াস আমি মাঝে মাঝে ভালবেসে বউ এর ছবি দেই তোর মতো তো মোটা মহিলাদের পিক দেই না।আর আবির বিয়ে তো ঠিক হয়েছে বিয়ে করবা।তুমি কি করবা তা জাতি জেনে গিয়েছে।।" তিয়াস ভাই একটু মুড নিয়েই বললো, "দেখুন বিভোর ভাই আমি কিন্তু আপনার সুমুন্দি হই।তাই আদবের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলুন।রিয়া কিন্তু আমার ছোট বোন।তাছাড়া আপনার আর বিহান ভাই এর উচিত কিন্তু আমাকে সম্মান দিয়ে তিয়াস ভাইয়া বলে ডাকা।" বিভোর ভাই এর চেপে রাখা হাসি এবার বেরিয়ে এলো।অট্টহাসিতে গড়িয়ে গেলো।হাসির জন্য ঠিকভাবে কথা ই বলতে পারছে না। হাসিতে সবার ই পেট ফেটে যাবার উপক্রম।অবশেষে বললো, "ভাইরে ভাই এত সম্মান তুই কি হজম করতে পারবি।দে পা দে আগে সালাম করে নেই।মুরুব্বি বলে কথা।" "তিয়াস ভাই সাথে সাথে দু পা এগিয়ে দিয়ে বললো, ওকে দিলাম।" "ওয়াক থু পায়ে সাবান লাগাস না কতদিন ঠিক নেই।যা ওয়াশরুম গিয়ে সাবান দিয়ে পরিষ্কার হয়ে আয়।" "আপনি বাটপার আগেই জানতাম বিভোর ভাই।তিয়াস ভাই কলার ঝেড়ে বললেন,কোনো মহিলা টয়িলা না আমার এ বাসার নিচ তলায় গালে তিল দেওয়া একটা মেয়ে ঝাক্কাস পছন্দ হইছে।কাজিনদের কাছে রিকুয়েষ্ট আমার প্রেম টা করায় দাও প্লিজ।" "রিয়া বললো, বাড়িওয়ালার মেয়ে।যাক এইবার কাজের কাজ করেছেন।" "আসলেই ঢাকা শহরে একটা শ্বশুর বাড়ি থাকা প্রয়োজন।না হলে মেহু তোহা তোরা ফকিরের মতো এসে ঘুরিস এর বাসায় ওর বাসায়।এখন থেকে বলতে পারবি ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি।" "তোহা আপু বললো,গাছে কাঠাল আর গোঁফে তেল।" "মেহু আপু বললো,গাইস একটা কথা এত কিছুর চক্করে বিহান ভাই এর বউভক্তলোকের কাহিনী অজানা থেকে গেলো।সবার এটেনশন সেদিকে দেওয়া উচিত।" "মেহু আপুকে চোখ রাঙিয়ে বললাম, আবার ওই চ্যাপ্টার তুলছো ক্যানো ঘোড়ারডিম।বিহান আমাকে কুচি কুচি করে কাটবে রুমে গিয়ে।" "মেহু আপু বললো,নো নো দিয়া ওসবে কাজ হবে না।আমরা জানতে চাই।আচ্ছা বিহান ভাই আপনি কি আসলেই বউভক্তলোক।" বিহানের চোখ মুখের দৃশ্য পাল্টে গেলো এক সেকেন্ডের মাঝে।আমার এখন গান চাইতে মন চাইছে সম্পর্ক বদলে গেলো একটি পলকে।না মানে বিহানের চোখের পলকের যা ভাব। তাতে আমার এটাই মনে হচ্ছে।বিহান যে ভাবে তাকিয়ে আছে রাগে ওর চোখ ছোট ছোট হয়ে গেলো।উনার ভয়ঙ্কর চাহনির মানে দিয়া একবার রুমে চলো তোমার আজ খবর আছে। তোহা আপু লাফিয়ে উঠলো আর বললো, "এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার বিহান ভাই কিভাবে বউ ভক্ত হতে পারে।আমার কিছুতেই এটা বিশ্বাস হচ্ছে না।বিহান ভাই কিছু বলুন।মনে করেন এটা একটা ইন্টারভিউ আপনার।" বিহান ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,"কি বলবো আমি।" "আরে বলুন না কেমন বউভক্তলোক আপনি?দিয়ার কথায় ওঠা বসা করেন বুঝি।" বিহান আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো, "বউ ভালবাসার জিনিস ভালবাসি। ভক্ত টক্ত বুঝি না ওসব।" বিহানের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে চাইছে।বিহান কখনোই এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি নাহ।বা কাউকে বলেও না এসব ব্যপারে। বিভোর ভাই বললেন, "বিহান কিভাবে বউভক্ত হতে পারে।জীবনে ফেসবুকে দিয়ার ছবি দিয়েছে কখনো।" "মন খারাপ করে বললাম,তাই দেখুন।আমাকে একটু ও পাত্তা দেয় না।আসলেই ভালবাসে না।" বিহান ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো আমার দিকে।জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে নিয়ে বললো, "তো এতে প্রমানিত হলো আমি ভালবাসি না।" "তাই ছাড়া কি।" "আমি কি বিভোর এর মতো ননসেন্স নিজের বউ অন্যকে দেখাবো।অন্যরা দেখবে আর নজর দিবে।এত বোকা আমি না গাইস।" "বিভোর ভাই বললেন,বিহান কিন্তু বাঁশটা আমাকেই দিয়ে দিলো।মেনে নিতে পারছি না আমি ভাই।" আমরা কাজিনরা একজায়গা হলে আড্ডার কমতি থাকে না। সারাক্ষণ চলতেই থাকে এটা।বিহান আমাকে ইশারা দিলো রুমে যাওয়ার জন্য।এইরে আমাকে ডাকছে কেনো।রুমে গিয়ে কি বলবে আমাকে।আমি তো যাবো না যাবো না করছি।বিহানের জোরাজোরিতে গেলাম।রুমে যেতেই বিহান আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো। "--আমি বললাম,কি কি হয়েছে।" "--আমি বউভক্ত লোক।" "--তো কি।" "--তাই বলে ফোনে সেভ করবে।" "এমনি করেছিলাম।" "--তো ভয় পাচ্ছো কেনো?আমি তো সত্যি বউ পাগল।আমি কতটা বউ ভক্ত নাউ ইউ রিয়েলাইজ ইট।" "--কি সমস্যা আপনার।কি করতে চাইছেন।বাইরে কিন্তু ভাইয়ারা আছে।" "--বিহান আমার কাছে এগিয়ে এসে কোমর জড়িয়ে ধরে আমাকে এক ঝটকায় কাছে টেনে নিয়ে বললো,ওরা ওদিকে বিজি আছে, এখন কি হবে তোমার।" "--একটা হাই ছেড়ে বললাম,কি আর হবে যা রোজ হয় তাই হবে।" "--রোজ হয়?সন্দিহান ভাবে তাকিয়ে বললেন। আমি তো রোজ কিছু করি না।" "--আপনি শুধু কথা ঘুরান কেনো বলুন তো।রোজ চোখ রাঙান বকা দেন।এইসব ই তো করেন।" "--আমিও তো সেটাই বললাম।তার মানে তুমি ওইটা ভাবছো?.." "--কি ওইটা ওইটা করছেন।এত অসভ্য হচ্ছেন দিন দিন।" "--বয়স হচ্ছে তো তাই।বয়সের সাথে সাথে ভালবাসা বাড়ে বুঝেছো পিচ্চি বালিকা।" সময় যাচ্ছে দিন এগোচ্ছে।এগোচ্ছে আমাদের পথ চলা।রোজা শেষের দিকে।ঈদের আগের দিন আমরা সবাই ছুটলাম নড়াইলে।আমার স্বপ্নের শহর নড়াইল।শহর ছেড়ে গ্রামে ঈদ করতে আসার মতো আনন্দ নেই।একদল ভালবাসার মানুষের সাথে ছুটলাম গ্রামে ঈদ করতে।শুধু ঈদ ই নয়।মেহু আপু আর ভাইয়ার বিয়ে ও ঠিক হয়েছে।ভাইয়া ইতালি চলে যাবে তার আগেই মেহু আপুকে বিয়ে করে রেখে যাবে।ভাইয়ার বিয়ে আর ঈদ আনন্দ দুইটায় এক সাথে কাটাবো।বিহান বাবাকে বলে ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করেছে।রিয়ার মতো বাড়াবাড়ি করেনি।কেননা একবার বাড়াবাড়ি করে দেখেছে ফলাফল বিপরিত ছাড়া কিছুই হবে না।ঢাকা থেকে বিয়ের শপিং করলাম।কয়েক ঘন্টা জার্নি করে নড়াইল পৌছালাম।বিভা আপু পুচকু দুলাভাই সবাই এসেছে।এত জার্নি শেষে ও কারো এনার্জি কমে নি।সন্ধ্যায় মেহেদী লাগানোর প্রতিযোগিতা চলছে।আমি ক্লান্ত মেহেদী লাগাতে ভালো লাগছে না।উঠানে চেয়ার নিয়ে বসে মেহেদী লাগাচ্ছে সবাই।আর আড্ডা দিচ্ছে।আমি মামির হাতে খাবার খেয়ে বিছানায় সুয়ে আছি।বিহান ব্রিজে গিয়েছে পরিচিত মানুষদের সাথে গল্প করে বেড়াচ্ছে।রাত এগারোটায় বাসায় এসছে বিহান।সবার মেহেদী লাগানো শেষ।যার যার জায়গা সুয়ে পড়েছে।রুমে এসে আমাকে ঘুমোতে দেখে আমাকে আর ডাকলো না।জার্নি করে সবাই ক্লান্ত তাই আর কাউকে না ডেকে নিজেই বাসার সামনের দোকানে গেলো।ঈদের আগের দিন পুরা শহরে লাইটিং হয়।সারারাত ই জেগে থাকে সবাই।বিহান মেহেদী একটা কিনে এনে ঘুমন্ত আমার দুই হাতে মেহেদী লাগিয়ে ৫ মিনিট পরে আবার মুছে দিলো।সাড়ে এগারোটার দিকে আমার ঘুম ভাংলো।মনে মনে ভাবছি একবারে বারোটায় বিছানা ছেড়ে উঠে বিহান কে ঈদ মোবারক জানাবো।বিহান মনে হচ্ছে কার রিপোর্ট দেখছে।এখানে এসেও ডাক্তারি করছে।মনে হয় আশে পাশের কেউ রিপোর্ট দিয়েছে। চোখ বুজে ঘুমের ভান ধরে পড়ে আছি।বিহান বারোটা বাজার দুই মিনিট আগে আমার পাশে এসে সুয়ে পড়লো।আমি পূর্বদিকে মুখ করে কাত হয়ে সুয়ে আছি।বিহান পশ্চিমপাশে এসে সুয়ে আমার পেটের উপর দিয়ে হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।উন্মুক্ত পেটে ওর হাতের স্পর্শ পেতেই শিউরে উঠলাম আমি।চোখ আরো জোরে খিচে বন্ধ করে রাখলাম।বারোটা বাজতে একমিনিট আগেই বিহান ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে চুমু দিলো।আমার শরীর অবস হয়ে বল শূন্য হয়ে আসছে।বারোটা বাজতেই বিহান আর একটু জড়সড় ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,ঈদ মোবারক বউ।ইস এত প্লান করেও বলতে পারলাম না আগে।বিহানের দিকে এবার ঘুরে সুয়ে বিহান কে বললাম ঈদ মোবারক। বিহানের বুকে একটা চুমু দিয়ে বললাম,আই লাভ ইউ বিহান। বিহান আমাকে আরো একটু ক্লোজ ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে বুকের মাঝে কি যেনো খালি খালি লাগে।আর চুমু না দিলে আমি অসুস্থ হয়ে যায়।বিহান কে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললাম,চুমু না দিলে বুঝি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে।বিহান আমার গালে, চোখে,মুখে অজস্র চুমু দিতে দিতে বললো,ঘুম ঘুম কন্ঠে কথা বলে কি আমাকে শেষ করে দিতে চাও।আর একটা কথা বললে কিন্তু অনর্থ হয়ে যাবে।লজ্জায় মাথা নুইয়ে বিহানের বুকে মুখ গুজে রইলাম বুঝতে পারলাম ও কি বলতে চাইছে।আর এদিকে ওর পাগলামি বেড়েই চলেছে।এটা শুধু আজ নয় হাজার ক্লান্ত থাকলেও ও আমাকে ঘুমোনোর সময় কয়েক হাজার চুমু দিবেই।আমার ও অভ্যাস হয়ে গিয়েছে আমিও সহ্য করি ওর এই পাগলামি আর ভালবাসা।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

2025 © Golpo Hub. All rights reserved.