এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২
--ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এ কোনো ডাক্তার নেই,ডাক্তার কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়েছে।রাস্তা থেকে কয়েকজন লোক আমাকে তুলে এনেছে হসপিটালের জরুরি বিভাগে।তখন কোনো সেন্স ছিলো না আমার।সেন্সলেস হয়ে পড়ে ছিলাম জরুরি বিভাগের স্ট্রেচারের উপর।রিয়া একটা ক্লাস করে বেরিয়ে গিয়েছে আমাকে খুজতে।বাসায় ও পায় নি আমাকে।বিহান এর সিরিয়ালে কতজন পেশেন্ট রয়েছে।সবাই ক্রিটিক্যাল রুগি কেননা বিহান খুব গুরুতর রুগি ছাড়া দেখে না।কেননা হসপিটালের কয়েকজন বড় ডাক্তারের মাঝে সে একজন।সবাই বলে বিহানের হাতে যাদু আছে গুরুতর অসুস্থ রুগি সুস্থ হয়েছে বিহানের চিকিৎসায়।বিহান মন দিয়ে রুগি দেখতে পারছে না।চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে।রুগি দেখছে আর বার বার আমার ফোনে ট্রাই করছে।একবার আমাকে কল দিচ্ছে, একবার বিভোর ভাই কে একবার রিয়াকে।বিহানের ভেতরে শুরু হয়েছে অস্হিরতা আর ভয়।এমন সিসুয়েশন এ খারাপ চিন্তা মানুষের মাথায় বেশী আসে।বিহান ও তার ব্যাতিক্রম নয়,বিহানের ও এমন অনুভূতি হচ্ছে।কোথাও আবার আমার খারাপ কিছু হয়নিতো সেই চিন্তায় প্রেসার বেড়ে গিয়েছে বিহানের। বিহান কে এমন অস্হির দেখে বিহানের পিএ বললো, "স্যার কোনো সমস্যা।" বিহান চোখে মুখে দুঃচিন্তা নিয়ে বললো, "আর কতজন পেশেন্ট আছে দেখো তো।" "স্যার আছে এখনো অনেক রুগি।" "গুরুতর সমস্যা যাদের তাদের আগে দাও। আর বলে দাও স্যার একটু বাইরে যাচ্ছে এসে দেখবে। আর যদি আমি এসে না দেখতে পারি রিফার্ড করে যাচ্ছি রওনক স্যার কে।যদি আমি না ফিরি তাহলে স্লিপ গুলা সবাইকে দিয়ে দিও।" সিরিয়ালে যারা ছিলো মারাত্মক সমস্যা যাদের তাদের দেখে বাকিদের ফিরে এসে দেখবে বলে বেরিয়েছে বিহান।টেনশনে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বেরোলো রুম থেকে বিহান।ভীষণ অস্হির দেখাচ্ছে। রিয়া ও হসপিটালে এসছে বিহানের সাথে দেখা করতে।রিয়া বিহানের অপেক্ষা করছিলো বাইরে।বিহানের চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে চিন্তায়।রিয়া বিহান কে দেখে এগিয়ে গেলো বিহানের কাছে।চিন্তায় কেমন পাগল পাগল দেখাচ্ছে বিহান কে। খুব নারভাস ভাবে বললো, "রিয়া কোথাও কি ওকে পেলেনা।" "না বিহান ভাই। ফোন এ কল হচ্ছে রিসিভ করছে না।আশে পাশে কোথাও খুজতে বাকি নেই।আমি একটা ক্লাস শেষ করে বেরিয়েছি। বাসায় ও গিয়েছি কিন্তু বাসায় ও নেই দিয়া।" বিহান দুইহাত জড় করে কপালে ঠেকিয়ে মিনিট খানিক চুপ রইলো।অতিরিক্ত চিন্তায় ঘাবড়ে গিয়েছে বিহান।দুই হাত কোমরে বেঁধে গাল দিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে বিহান।বিড়বিড় করে বলছে, "প্লিজ আল্লাহ সেভ দিয়া।ওর যেনো কিছু না হয়।তুমি তো জানো দিয়ার কিছু হলে আমি বাঁচতে পারবো না।তুমি তো বান্দার মনের ভাব জানো।বাইরের কেউ আমার মন পড়তে না পারলেও তুমিতো পারো।এমন কি দিয়া ও নিজেও জানেনা আমি ওকে কতটা ভালবাসি ওতো মনের ভেতর দেখতে পারি নি।ওর না হয় মনের ভেতরের কথা পড়ার ক্ষমতা নেই কিন্তু তোমার তো আছে।আসমান জমিনের একমাত্র তুমিই জানো আমার মনে দিয়ার জন্য কি আছে।প্লিজ দিয়ার কিছু হতে দিও না।" বিহান মনে মনে মানত করলো আমার জন্য। রিয়া বিহানের দিকে তাকিয়ে কেঁদে দিয়ে বললো, 'বিহান ভাই আমাদের দিয়া কোথায় গেলো।' বিহান অসহায় দৃষ্টিতে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, 'দিয়ার কোনো সমস্যা হলো নাতো।আমি এক্ষুণি পুলিশে ইনফর্ম করছি।' 'যেটা করার করুণ বিহান ভাই তবুও দিয়াকে খুজে বের করুণ।' বিহান চিন্তিত ভাবে মাথায় হাত চালিয়ে বললো, 'তুমি কেনো দিয়াকে একা ছাড়তে গেলে রিয়া।এমনিতেই ওর শরীর খারাপ।' 'সরি বিহান ভাই ভেরি সরি।আমি বুঝতে পারিনি দিয়া এইভাবে হারিয়ে যাবে।' 'চলো বাসা থেকে কলেজ পর্যন্ত আশে পাশে সবাইকে জিজ্ঞেস করি দিয়ার ছবি দেখিয়ে কেউ বলতে পারে কিনা।দিয়া তো এটুকুর মাঝ থেকেই হারিয়েছে।' 'চলুন বিহান ভাই।' রিয়া আর বিহান এর পাশ দিয়ে কয়েকজন বলতে বলতে যাচ্ছে ডাক্তার হঠাত কোথায় গেলো কিজানি।জরুরি ওয়ার্ড এ একজন পেশেন্ট এসছে খুব বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট করেছে।বয়স একদম ই কম।বাঁচবে কিনা সন্দেহ।মাথা দিয়ে অনেক রক্ত ঝরেছে। বাঁচবে কিনা সন্দেহ এমন কথা শুনে বিহান পেছনে তাকালো কিছু একটা অজানা ব্যাথার অনুভূতি হলো।এই কথাটায় বিহানের শরীরে কেমন যেনো ঝটকা লাগলো।তবুও পাত্তা না দিয়ে বেরিয়ে গেলো রিয়াকে নিয়ে। বেরোনোর সময় জরুরি বিভাগের একজন স্টাফ কল করলো, 'বিহান স্যার আপনি কি ফ্রী আছেন?' 'নো।' 'স্যার জরুরি বিভাগে একজন রুগি এসছে।গুরুতর অসুস্থ, এক্ষুণি ট্রীটমেন্ট শুরু না করলে বাঁচানো মুশকিল হবে।' 'হোয়াট ডক্তার কোথায়?' 'স্যার কিছুক্ষণের জন্য বাইরে গিয়েছেন।স্যার ও বাইরে গিয়েছেন আর রুগিটাও এসছে।' 'কুইক অন্য কোনো ডাক্তার ডেকে আনো ফার্স্ট।আমার ওয়াইফ মিসিং!আমি ভীষণ বিজি আছি।আমার পক্ষে এক্ষুণি যাওয়া পসিবল নয়।' 'কিন্তু স্যার রুগিটির অবস্থা ও গুরুতর খারাপ।আপনি আসলে ভালো হতো।' বিহান খুব জোরে চিল্লিয়ে বললো, 'হসপিটালে কি আমি একমাত্র ডাক্তার।বললাম না আমি বিজি।অন্য কোনো ডাক্তার কে খুজে নাও।' --বিহান আর রিয়া কলেজ গেট থেকে আমার ছবি দেখাতে দেখাতে গেলো কেউ দেখেছে কিনা।এর ই মাঝে রাস্তায় রক্তের ছাপ দেখতে পেলো বিহান।মানুষ বলাবলি করছে মেয়েটা বাঁচবে কিনা কে জানে।যেভাবে মাথায় আঘাত লেগেছে।বিহানের তখন অনুশোচনা হচ্ছে এই মেয়েটি মনে হয় জরুরী বিভাগে আছে।কারো জীবন বিপদে আছে বিহান ডাক্তার হয়ে কানে শুনেও যেতে পারলো না ভেবে গিলটি ফিল হচ্ছে বিহানের।এর ই মাঝে বিহান ওখানের মানুষ দের কে দিয়ার ছবি দেখিয়ে বললো মেয়েটা কি দেখেছেন।দিয়ার ছবি দেখে লোকগুলো বলে উঠলো, "আরে এই মেয়েটি ই তো এক্সিডেন্ট করেছে।আমরা হসপিটালে পৌছে দিয়ে এসছি।" বিহান আকাশ থেকে পড়ার মতো চমকে গিয়ে জোরে বলে উঠলো, "নো,ইম্পসিবল!আমার দিয়ার কিছু হতে পারেনা।" "আপনার কি হয় স্যার।" --মানুষের মুখে এমন কথা শুনে বিহানের মাথায় বজ্রপাত হলো।হাতের ফোন মাটিতে পড়ে গেলো।বিহানের চারপাশ ঘুরছে।রিয়া আর বিহান দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে পড়লো।দুজনের ই চোখ অশ্রসিক্ত।বিহান এক দৌড়ে জরুরি বিভাগে এসে দেখলো অচেতন ভাবে পড়ে আছি আমি।জরুরি বিভাগের স্টাফ রা সাধারণ চিকিৎসা করছে।বিহান ছুটে এসে আমাকে এভাবে দেখেই হতভম্ব হয়ে গেলো। বিহানের ভেতরে যেনো ঘন ঘন ভয়ানক ধরনের বজ্রপাত হচ্ছে।বাকরুদ্ধ,হতভম্ব ভাবে দাঁড়িয়ে আছে বিহান।রিয়া বিহানের ফোন তুলে নিয়ে বিহানের সাথে ছুটে এলো।রিয়া আমাকে দেখে জাড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।বিহানেএ চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। ঠিক সেই মুহুর্তে একজন স্টাফ বললো, "স্যার প্লিজ দেখুন না।" রিয়া বললো, "বিহান ভাই আমাদের দিয়া।প্লিজ দিয়াকে বাঁচান বিহান ভাই।" বিহান অস্হিরতায় পাগল হয়ে যাচ্ছে।অতিব্যাস্ত হয়ে বিহান স্টাফ কে বললো, কুইক কেবিন রেডি করো,ফাঁর্স্ট। খুব জোরে নার্স কে ডাকলো,সানজি ছুটে এলো।সানজিকে অর্থোবিভাগের ডাক্তার কে ডাকতে পাঠালো।ধীরে ধীরে মানুষ জড় হচ্ছে।হসপিটালের নামি দামি একজন ডাক্তার কে এমন পাগলামো করতে দেখে মানুষের কিওরিসিটি আরো বেড়ে গেলো।বিহান কে এমন পাগলামো করতে দেখে সবার সন্দেহ হলো বিহানের কেউ হয়।অর্থোবিভাগের ডাক্তার এলে বিহান বললো, --স্যার মাই ওয়াইফ, প্লিজ দেখুন। --ডাক্তার বিহান কে বললো,কুল বিহান।তুমি এর থেকে অনেক বেশী ক্রিটিক্যাল রুগি হ্যান্ডেল করো।আর এটা দেখে এমন ঘাবড়ে গেলে হবে। --আমি কিছু শুনতে চাই না স্যার!আমার ওয়াইফ এর কিছু হলে আমি ভাবতে পারছি না স্যার।আপনি যেভাবেই হোক দিয়াকে সুস্থ করে তুলুন। --ডোন্ট ওরি বিহান।ওর কিছুই হবে না।আমরা আছি তো ইয়াং ম্যান।তুমি না স্ট্রং ম্যান।এভাবে ভেঙে পড়লে কিভাবে হবে। হসপিটালের সব ডাক্তার নার্স এক জায়গা হয়ে গিয়েছে।সাথে সাথে ইনজেকশন, ব্যান্ডেজ সব কিছু করা হলো। বিহান আমাকে কোলে তুলে নিয়ে কেবিনের বেডে সুইয়ে দিলো।ততক্ষণে জরুরি বিভাগের ডাক্তার ও উপস্হিত।বিহান ভয়ানক ভাবে চিল্লাপাল্লা করে বললো, --কোথায় গিয়েছিলেন আপনারা ডিউটি চলাকালীন সময়ে। --স্যার একটু বাইরে গিয়েছিলাম। --ডিউটি চলাকালীন সময়ে আপনারা বাইরে গিয়েছিলেন।দুজন এক সাথে গিয়েছিলেন।এটা কি আপনাদের জবের রুলস এ পড়ে। --স্যার সরি রিয়েলি সরি।এত কম সময়ে এত ইমারজেন্সি পেশেন্ট আসবে ভাবতে পারিনি। --ততক্ষণে যদি ওর কিছু হয়ে যেতো।তাহলে আমার কি হতো।কোনো আইডিয়া আছে আপনাদের।ওয়াইফ আমার বুঝেছেন।আমার ওয়াইফ ম্যাটার না যে কেউ হতে পারতো। --স্যার সরি। --এত দায়িত্বহীন আপনারা কিভাবে হতে পারেন।হাউ!আনসার মি। --স্যার প্লিজ শান্ত হন।না হলে আপনিও অসুস্থ হয়ে যাবেন। --আমার ওয়াইফ সেন্সলেস,অক্সিজেন চলছে আমাকে কি সুস্থ মনে হচ্ছে আপনাদের।কারো কোনো আইডিয়া নেই আমার মনের মাঝে কি ভয়ানক অনুভূতি হচ্ছে।আজকের পর কেউ ডিউটি টাইমে বাইরে যাবেন না।মানুষের জীবনের কি এক সেকেন্ডের গ্যারান্টি আছে।আমরা ডাক্তার মানুষ মনে করে আমাদের কাছে আসলে তারা সুস্থ হবে ভরসা পায় মানুষ। প্লিজ কেউ ডিউটি তে ফাঁকি দিবেন না। হসপিটালের সবাই তখন বুঝেছিলো বিহান আমাকে কতটা ভালবাসে।বিহানের অস্হিরতা দেখে প্রতিটা ডাক্তার নার্স অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো বিহানের দিকে।যে ভালবাসার দৃশ্য পর্দায় দেখেছে সেটা চোখের সামনেই ছিলো তাদের।বিহানের ভালবাসার প্রশংসা করতে কেউ বাদ দেই নি।বিভোর ভাই ও ব্যাংক থেকে চলে এসছে।বিভোর ভাই কে দেখে রিয়া হাউ মাউ করে কেঁদে দিলো।বিহান মাথা নিচু করে ঘাড় গুজে বসে আছে কেবিনের রুমে।সমস্ত ডাক্তার রা বিহান কে বুঝাচ্ছে।বিহানের চোখ কাঁদতে কাঁদতে রক্তজবার মতো হয়ে গিয়েছে।বিহান সবাইকে একটায় কথা বলছে ও ঠিক হয়ে যাবে তো।ওর কিছু হবে নাতো।চোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরছে বিহানের। কেবিনে শুধু বিহান কে রেখে অন্য ডাক্তার রা সহ বাকিরা বেরিয়ে গেলো। বিহান আমার একটা হাত ওর দু'হাতের মুঠোয় ধরে একভাবে কেঁদেই যাচ্ছে। "দিয়া প্লিজ চোখ খোলো।তুমি জানোনা তোমার কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারিনা।কেনো এমন হলো তোমার। তোমার কিভাবে হলো এমন।তুমি তো এমনি একটা পিচ্চি, তুমি কি ব্যাথা সহ্য করতে পারো।তোমাকে সব সময় হাত ধরে রাস্তা ক্রস করে দেই আমি।কারন আমি জানি তুমি এমন ই পিচ্চি নিজে সামলে চলতে পারোনা।আমি সব সময় চোখের সামনে রাখি যেনো তোমার কিছু না হয় যেনো আমি সেভ করতে পারি তোমাকে।আমি তো সব সময় আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি আমার জীবনের সব ভালোর বিনিময়ে আমার দিয়া যেনো ভালো থাকে।দিয়া আমি তো জীবনে কোনো মেয়ের সাথে অন্যায় করিনি,জন্মের পর থেকে একটা মেয়েকেই ভালবেসেছি।পবিত্রতায় ভরপুর আমাদের ভালবাসা দিয়া।তবুও কোন অন্যায় এর শাস্তি পেলাম আমি।তোমাকে ওইভাবে দেখে আমার মনের ভেতর যে ভয়ানক ঝড় উঠেছিলো সেটা এখনো কমে নি।তোমার কিছু হলে আমার কি হবে দিয়া।আমি এসব ভাবছি বা কেনো তোমার কিছু হবে না।তোমার মুখে অক্সিজেন মাস্ক,রক্তের স্যালাইন এসব আমি নিতে পারছি না।এই তিন ঘন্টা তুমি এভাবে পড়ে আছো।তিন ঘন্টার প্রতিটা সেকেন্ডে আমি যে ব্যাথা অনুভব করেছি তুমি দেখলে সহ্য করতে পারতে না।প্লিজ দিয়া তুমি ঠিক হয়ে যাও।প্লিজ!আর কিছুক্ষন এভাবে থাকলে আমি মরে যাবো দিয়া।" এর ই মাঝে বিভোর ভাই এর রিয়া কেবিনে প্রবেশ করলো।বিভোর ভাই বিহানের কাঁধে হাত রাখতেই বিহান উঠেই জড়িয়ে ধরলো বিভোর ভাই কে।মনের মাঝে চেপে রাখা যন্ত্রণা বিভোর ভাইকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে হালকা করছে। "বিভোর আমি সহ্য করতে পারছি না। দিয়ার কিছু হলে, নো আমি এটা ভাবতেই পারছি না।দিয়া ওইভাবে সুয়ে আছে আমার ভেতরে কেমন যন্ত্রণা হচ্ছে আমি বুঝাতে পারবো না তোকে।দিয়া ঠিক হবে তো।" বিভোর ভাই চোখের পানি মুছে বললো, "আমাদের পুচকি ঠিক হয়ে যাবে।" "শুধু শুনছি ঠিক হবে তিনঘন্টা ধরে।এখনো ঠক হলো না।কেনো হচ্ছেনা ড্যামেড।" বিহান চিল্লায়ে বললো। "বিহান আজ জীবনে প্রথম তোকে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে দেখলাম।আমাদের দিয়ার কিছু হবে না। ডোন্ট ওরি।" কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমার হাত ধরে বিহান কাঁদছে।রাস্তায় ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে পড়লো। মনে পড়লো আমার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।অক্সিজেন মাস্ক খুলে বিহান কে ডাকলাম। "বিহান.." বিহান সাথে সাথে চোখ তুলে তাকালো।বিহানের চোখের বর্ষন কমে নি একটুও।ভেজা শীতল চোখে করূণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।বিহান কে দেখেই বুঝতে পারলাম বিহান এর মানসিক অবস্থা। হালকা হেসে বললাম, "কাঁদছেন কেনো?কি হয়েছে।" "বিহান আমার কপালে চুমু দিয়ে বললো,কাঁদবো না।তুমি একাই কাঁদতে পারো।বিহান আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,আর একটু হলে আমি মরেই যেতাম দিয়া।আই লাভ ইউ দিয়া।" "হুম আমি তো সেটা জানি।আমার হাজবেন্ড আমাকে কত ভালবাসে।আমি কত লাকি সেটাও ভাবি।" "তোমার এমন অবস্থা দেখে আমার কেমন ফিল হচ্ছিলো তুমি জানো সেটা। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম দিয়া।" "একজন ডাক্তার পেশেন্ট দেখে ডাক্তারের এমন দূর্বলতা মানায় না কিন্তু।" "তুমি আমার পেশেন্ট না। আমার জান,আমার হার্ট।আমার হার্ট ঠিক থাকলে পৃথিবীর সকল হার্ট ভালো করার সাহস পায়।তুমি ঠিক না থাকলে আমি কোথায় হারিয়ে যায় জানিনা, আমি দূর্বল হয়ে যায়।" এরই মাঝে রিয়া বিভোর ভাই আর সানজি প্রবেশ করলো সাথে আরো দুজন ডাক্তার।সবার মুখে হাসি।আমাকে সুস্থ দেখে।রিয়া বিভোর ভাই আমার পাশে বসে কেমন ইমোশনাল হয়ে গেলো।আমি নিখোজ হলে বিহান কি কি করেছে সমস্ত ঘটনা আমাকে খুলে বললো।বিহানের দিকে তাকিয়ে কাঁন্না পেলো আমার খুব।তার আগেই রিয়া,আর নার্স সানজি আমাকে বললো,কনগ্রাচুলেশন দিয়া তুই মা হতে চলেছিস।সানজি বললো নতুন অতিথি আসছে ম্যাম শুভেচ্ছা রইলো।ওদের কথা শুনে বেশ লজ্জা পেলাম।তবে পৃথিবীর সর্বোশ্রেষ্ট ভাললাগার অনুভূতির শিহরণ বয়ে গেলো আমার ভেতরে।মাথায় পাওয়া চোট এর খেয়াল ই নেই।আরেকজন নার্স বিহান এর হাতে কয়েক টা ফাইল দিয়ে বললো,স্যার ভাবির প্রেগ্ন্যাসি সহ যাবতীয় রিপোর্ট। বিহান দাঁড়িয়ে এক মনে রিপোর্ট দেখছে।বিহান নিশ্চয়ই অনেক বেশী খুশী হবে।বিহান আমার দিকে তাকিয়ে ফাইল টা খুললো।ফাইলে চোখ বুলিয়ে বিহানের মুখ পুড়ে গেলো।যেনো পৃথিবীর সব থেকে খারাপ নিউজ মাত্র শুনেছে।বিহানের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হলাম বিহান কি তাহলে খুশী নয় প্রেগ্ন্যাসির নিউজে।যদিও বিহান আমাকে বলেছিলো আমার লেখাপড়া শেষ না হলে সে কিছুতেই বেবি নিতে চায় না।আমি বিহানের দিকে তাকিয়ে আছে পজিটিভ কিছু শোনার জন্য।বিহান এর মুখ মেঘের ন্যায় কালো হয়ে আছে।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

2025 © Golpo Hub. All rights reserved.