আজ অনেক দেরি করে শাওনের ঘুম ভাঙলো। হালকা চোখ খুলে সামনের বারান্দার দিকে তাকালো।
সকালের ঝলমলে রোদ এসে রুমের মধ্যে ঢুকেছে আর হালকা বাতাসে দরজার কাছের লাল পর্দাটা উড়ছে।
শাওন দরজার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর আস্তে আস্তে কম্বল একটু সরিয়ে উঠে বসল। মাথা এখনো ঝিমঝিম করছে। তাই এক হাত দিয়ে কপালের দুই পাশে চেপে ধরে চোখ কিছুক্ষন বন্ধ করে রইল।
তারপর হঠাৎ কিছু একটা খেয়াল হতেই নিজের গায়ের দিকে তাকালো। গায়ে টি-শার্ট টা নেই!
ভ্রুকুচকে পাশে মেঝেতে তাকাতেই দেখল ওর টি-শার্ট আর ট্রাউজার দুটোই মেঝেতে পরে আছে। শাওন কয়েক সেকেন্ড ভ্রুকুচকে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে বিষয় টা বুঝার চেষ্টা করল। তারপর চমকে কম্বলের মধ্যে উঁকি দিতেই জোরে বলে উঠল, “what the hell!”
তারপর বেলকোনির দিকে তাকালো। হঠাৎ কাল রাতের কিছু ঘটনা মাথায় এলো। মনে আসতেই ভ্রুকুচকে চিন্তা করতে লাগল “আমি ওকে জড়িয়ে ধরেছিলাম! কিন্তু কেনো!”
শাওন বেলকোনি থেকে চোখ সরিয়ে বিছানার দিকে তাকালো। তখনি মনে পরে গেল যে একসাথে এই বিছানায় দুইজন পরেছিলাম।
এটুকু মনে পরতেই শাওন চোখ বড়সড় করে বলে উঠল, অহ শীট! অহ শীট! নো নো নো নো নো।কিছু হয়নি, রাইট! ইয়া, হয়নি। নাকি হয়েছে!
শাওন রুমের আশেপাশে তাকাতে লাগল। রুমে ও একা। তারপর আবার নিচে পরে থাকা জামা কাপড়ের দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠল, অহ শীট!
শাওন ড্রেস পরে বের হয়ে এলো। কোনো রুমে কেউ নেই।
তাই শাওন ম্যানেজারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, সবাই কোথায়?
“স্যার সবাই ত ঘুড়তে চলে গেছে। আপনি নাকি একটু অসুস্থ তাই ওনারা আপনাকে রেখে গেছে।”
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, কোথায় ঘুড়তে গেছে?
“পাহাড়ে স্যার।”
কংলাক পাহাড় হচ্ছে সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। আজ আমরা সেটাই ঘুড়তে এসেছি। তবে খুব সকালে আমরা আগে হেলিপ্যাডে গিয়ে সূর্যোদয় দেখেছি। সত্যিই অসম্ভব সুন্দর। রাতে আবার যাব সেখানে সূর্যাস্ত দেখতে।
পাহাড়ে ওঠার আগেই সবাই একটা করে বাশের লাঠি নিলাম। এটা দিয়েই নাকি উঠতে সুবিধা। যদিও অনেক সময় ধরে হাটছি তাও ক্লান্ত লাগছে না। মেঘ দেখার জন্য এই পাহাড়টা সত্যিই সেরা। আসেপাশের মনোরম দৃশ্যতে মন ভরে যাছে। উপরে নীল আকাশ আর নিচে সবুজ ঝোপঝাড় গাছপালা। অবশ্য মোহিত ইতিমধ্যে একবার পরে গেছে। বেচারা এখন মোটামুটি বৃদ্ধদের মত হাঁটছে। কোমড়ে ভালই ব্যথার পেয়েছে।
অবাক করা বিষয় হলো এখানের আদিবাসীরা অত বড় পাহাড় থেকে অনেক কষ্টে ধরে রাখা পানি নিয়ে বাড়ি ফেরে। এদের কোনো ক্লান্তি নেই।
কিন্তু আমরা হলে এগুলো কখনই পারতাম না।
আমরা ফিরে আসার জন্য রওনা হলাম। এখন ফিরে গিয়ে খাওয়া দাওয়া না করলেই নয়। আমি আর মোহিত সবার পিছনে পিছনে হাটছি। মোহিত পরে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে তাই এখন ঠিকমতো হাটতে পারছে না। বেচারা চুপচাপ হাটছে। ওর চুপচাপ হাটা দেখে সবাই মুখ লুকিয়ে হাসছে। কারন সে কোনদিনই চুপ করে থাকার মানুষ না কিন্তু আজ চুপ আছে। আমি আমার হাতের লাঠিটা ওকে দিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু নিল না।
দুপুরের আগে আগেই আমারা ফিরে এলাম। যদিও আমি আর মোহিত এখনো পিছনে পরে আছি। কারন মোহিত অনেক কষ্ট করে হাটছে। সবাই আগে আগে হেটে রিসোর্টে পৌছে গেল।
শাওন সেই খোলা উঠানে দাড়িয়ে ছিল। সুমনা বলল, কিরে এখন ভাল আছিস?
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইল কোনো উওর দিল না।
সবাই চেয়ারে বসতে বসতে বলল, মিস করলি রে তুই! তোর সাজেক আশাই বৃথা।
শাওন কারো কথায় কান না দিয়ে কড়া চোখে রবিনের দিকে তাকালো। তারপর বলল, তুই কাল জুসে কিছু মিশিয়েছিলি?
রবিন চোখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল যেন সে কিছুই জানেনা।
শাওন বুঝল যে রবিন ই করেছে।
তারপর আশেপাশে তাকিয়ে সুমনাকে বলল, সবাই কই?
সুমনা ফোনে কিছু একটা করছিল। শাওনের প্রশ্ন শুনে চোখ না তুলেই বলল, সবাই ই ত আছে!
চঞ্চল বলে উঠল, আরে সুমনা বুঝিস না কাকে মিন করে জিজ্ঞেস করছে!
সুমনা চঞ্চলের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, কাকে!
চঞ্চল মুখ দিয়ে একটা বিরক্তির শব্দ বের করে বলল, মিলাকে ছাড়া আর কাকে!
সুমনা এবার বুঝতে পেরে বলল, ওওও! কিজানি কই সে!
দিয়া বলল, মোহিতের সাথে ছিল। এখনি এসে যাবে।
“দেখ আবার মোহিত তোর বউ নিয়ে পালালো কিনা!” বলেই সুমনা হেসে দিল।
শাওন বিরক্তির সাথে সুমনার দিকে তাকালো। তখনি আমি মোহিতের সাথে কথা বলতে বলতে ঢুকলাম। সবাই আমাদের দিকে ঘুড়ে তাকালো। সুমনা আমার কাছে হাসিমুখে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, এত দেরি! এদিকে শাওন তোমাকে খুজে খুজে মরে যাচ্ছে।
সবাই হেসে দিল। আমি শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন আমার দিকে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে। ওনার দিকে তাকানোর সাথে সাথে আমি অনেক কষ্টেও নিজের হাসি চেপে রাখতে পারলাম না। ফিক করে হেসে দিলাম। সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। সুমনা বলল, কি হলো!
আমি নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে বললাম, কিছুই না।
শাওন প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। সুমনা বলল, তাহলে এখন খাওয়া দাওয়া টা করে নিই?
আমি মাথা নাড়লাম। আমার এখনো হাসি পাচ্ছে। কিন্তু অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখেছি। সবাই খেতে বসল কিন্তু শাওন বসল না।
সে রুমে চলে গেছে। আমি খাওয়া শেষ করে রিসোর্টের এক পাশের বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম। ইস এখানেই সারাজীবন থাকতে পারতাম!
হঠাৎ শাওন এসে আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগল।
আমি বলতে লাগলাম, হাত ছাড়ুন, কি করছেন আপনি!
শাওন আমাকে রুমের নিয়ে এসে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। আমি ধাক্কার জন্য একটু পিছিয়ে গেলাম আর ভ্রুকুচকে বললাম, কি করছেন!
শাওন বিরক্তির সাথে বলল, লাস্ট নাইটে, আমি আর তুমি… আই মীন, কি হয়েছিল?
আমি ভ্রু সোজা করে তাকালাম আর মনে মনে বললাম, অহ বাছা লাইনে এসো।
“কি হলো!” শাওন বলল।
ওনার তাহলে কিছুই মনে নেই!!! যাক ভালো। এবার আমার প্রতিশোধের পালা।
যদিও আমার অনেক হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসা যাবেনা। ওনাকে উচিত শিক্ষা দেওয়াই লাগবে।
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। কি বলা যায় খুঁজতে লাগলাম।
শাওন আরো বিরক্ত হয়ে গেল, “তুমি চুপ করে আছ কেন? কি সমস্যা!”
আমি এবার আর সত্যিই হাসি থামিয়ে রাখতে পারলাম না। তাই বাম হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরলাম।
শাওন অবাক চোখে তাকিয়ে রইল।
আহারে ওনাকে দেখে মায়া হচ্ছে। কিন্তু এটাই ওনার জন্য উচিত শিক্ষা। হুহ। আমারো এমন লেগেছিল যখন আমি জানতে পারিনি যে আমার জামাকাপড় কে খুলেছিল৷ তাই আপনিও জানতে পারবেন না যে আপনার জামাকাপড় কে খুলেছে। আমি জিজ্ঞেস করলেই ‘মানে মানে’ করতেন না! এবার বুঝুন কেমন লাগে যখন গত রাতে কি হয়েছিল তা মনে না পরে!
শাওন আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল, কি হল!
আমি হাসি মোটামুটি আটকে রেখে বললাম, মানে?
শাওন রেগে এক পা এগিয়ে এসে বলল, তুমি খুব ভাল করেই জানো আমি কিসের কথা বলছি!
আমি একটু লজ্জা পাওয়ার ভান করে তাকালাম।
সাথে সাথে শাওনের মুখের অবস্থা দেখার মত হয়ে গেল।
কিন্তু আমার যে কি হাসি পাচ্ছে তা আমি বলে বুঝতে পারব না। তাই আমি মাথা নিচু করে নিলাম।
শাওন হতভম্ব হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বলল, “হয়েছে! i am doomed.”
আমি সরে এসে বিছানায় বসতে বসতে বললাম, এখন আমি ঘুমাব, দয়া করে যান। কারন রাতে আপনার জন্য আমি ঘুমাতে পারিনি।
বলেই আমি ওনার দিকে পিঠ ফিরিয়ে বিছানায় শুয়ে গায়ে চাদর টেনে নিলাম। তারপর মুখ চেপে হাসতে লাগলাম।
আর মনে মনে বললাম, বাপের জন্মে আর ‘মানে মানে’ করবেন?
শাওন বের হয়ে চলে গেল। আমার সত্যিই ঘুম পাচ্ছে। কারন এটা সত্যি যে সারারাত না ঘুমিয়েই ছিলাম। বলতে গেলে বসে বসে কাটিয়েছি। গত রাতে ত আমি নিজেও ভয় পেয়ে গেছিলাম যখন উনি এত কাছে চলে এসেছিলেন।
গত রাতের ঘটনাঃ
শাওন আমার খুব কাছে এসে আমার কাধের উপর মাথা ঠেকিয়ে দিল। আমি কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে রইলাম। তারপর ঠেলে শাওনকে সরিয়ে দিলাম।
আমি একটা নিঃশ্বাস মুখ দিয়ে বের করে দিয়ে ওর দিকে তাকালাম। তখনি কারেন্ট চলে আসল। শাওনের চোখে আলো পরতেই শাওন আস্তে আস্তে উঠে বসল। রীতিমতো ঘামছে শাওন। এক হাত দিয়ে কপাল চেপে ধরে মাথা নিচু করে আছে। লাইটের আলোতে ওনার সমস্যা হচ্ছে বুঝে আমি লাইটিটা বন্ধ করে দিলাম। তারপর বললাম, আপনার কি বেশি খারাপ লাগছে?
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে হ্যাসূচক মাথা নাড়ল। আর বলল, আমার গরম লাগছে। আমি সবকিছু খুলতে চাচ্ছি।
আমি ওনার কথা শুনে চোখ বড়সড় করে তাকালাম। সাথে সাথে শাওন ওর শার্ট খুলে ফেলল। আমি ভয়ে তৎক্ষনাৎ বেলকোনিতে চলে এলাম। একটা হাফ ছেড়ে মনে মনে বললাম, গরিলার মাথা পুরো গেছে। এখন ওনার জন্য আমার এই বেলকোনিতেই বসে থাকতে হবে।
বাহিরে অনেক রাত অব্দি দোলনায় বসে থাকার পর ঘুম চলে এলো। মনে মনে বললাম, ভিতরে যাব? কিন্তু যদি সত্যিই সব খুলে ফেলে থাকে? থাক বাবা এখানেই থাকি। কিন্তু এখানে ত ঠান্ডা লাগছে এখন। কম্বলটা আনতে হবে এখন।
অনেক চিন্তা ভাবনা করে পা টিপে টিপে রুমে ঢুকলাম। তারপর শাওনের দিকে তাকালাম। একটা কম্বল গায়ে টেনে ঘুমিয়ে আছে। আর জামাকাপড় সব ফ্লোরে পরে আছে। আমি অবাক হয়ে গেলাম। তারপর জলদি করে অন্য কম্বলটা নিয়ে বেলকোনিতে এসে একটা হাফ ছাড়লাম।
যদিও এই দোলনায় ঘুম আর হলোনা। আমি কম্বল গায়ে দিয়েই সারারাত বসে রইলাম। ভাগ্যিস গাড়িতে ঘুমিয়েছিলাম।
চারপাশে একটু আলো হতেই উঠানে চলে গেলাম। একটু পরেই সুমনা বের হয়ে আসলো আর আমাকে দেখে বলল, অহ তুমিও উঠেছ! আমরা সবাই এখন হেলিপ্যাডে যাব। শাওন কই?
আমি ফট করে বলে উঠলাম, উনি অসুস্থ, ডাকতে মানা করেছেন।
সুমনা অবাক হয়ে বলল, কি হয়েছে?
আমি বললাম, কাল মনে হয় কিছু খেয়েছিল উল্টো পাল্টা।
সুমনা চিন্তায় পরে বলল, অহো, ডাক্তার এখানে পাব কিনা!
আমি বলে উঠলাম, না না। ওনাকে একা ছেড়ে দিন। উনি ঠিক আছেন। ঘুমাচ্ছেন শান্তিতে। ডিস্টার্ব করলে রেগে যাবে।
“হ্যা মিলার কথা শোন, আমরা সবাই যাই চল।” রবিন বলতে বলতে বের হলো।
যাক বেচে গেলাম।
তারপর আর কি! আমরাই ঘুরতে চলে গেলাম।
।
।
।
দুপুরে খুব বড় ঘুম দিতে পারলাম না। তার আগেই সুমনা আমাকে এসে ডেকে তুলল।
সবাই নাস্তা করে বেরিয়ে গেলাম আদিবাসীদের এলাকা গুলো ঘুড়ে দেখতে। মোহিত বেচারা যেতে পারল না। আশা করি সে আর সাজেক আসতে চাইবে না।
আমি আর সুমনা গল্প করতে করতে হাটতে লাগলাম। কাল ফিরে যাব আমরা আবার। স্নোবেলটা কি করছে কে জানে!
অনেক রাস্তা হেটে আমরা ঘুড়লাম। আরকি যতদূর চোখ যাবে সব ই সবুজ। শাওন দুপুরের পর থেকে আর আমার সাথে কোনো কথা বলে নি। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে শাওনের দিকে তাকালাম। উনিও তাকালো। আমি সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
সন্ধ্যার দিকে আমরা হেলিপ্যাডে এলাম। ঢুকতেই একটা পার্কের মত তার পরেই হেলিপ্যাড। চারিদিকে মেঘে উড়ে বেড়াচ্ছে । একটু পরেই সূর্য ডুবে যাবে। কিন্তু মেঘ অনেক বেশি হবার কারনে ভালো মত সূর্যাস্ত দেখতে পাওয়া গেল না। তাই যেমন দেখা গেল তেমন দেখেই ফিরে এলাম।
এখন শুধু খেতে পারলেই আমি খুশি। খেয়েই আমি ঘুম দিতে চাই। কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো ঘুমাবো টা কোথায়? গতরাতের মত আজও জেগে থাকা লাগবে? অসহ্য সত্যিই!
আজ রাতের খাবারে সাজেকের সেরা ব্যাম্বো চিকেন আছে। সবাই একসাথে খেতে বসে গেলাম। খাবার সময় রবিন বলে উঠল, আজও লুকাচুরি খেলা হবে নাকি!
মোহিত শুনেই বলে উঠল, হ্যা অবশ্যই।
কিন্তু কেউ অতটা ইচ্ছে প্রকাশ করল না। কারন সবাই ক্লান্ত। আমি নিজেও ক্লান্ত। তাই আপাতত ঘুমাতে চাই।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে আমি আগে আগেই রুমে চলে এলাম। বিছানার দিকে তাকিয়েই ঘুম চলে এলো।
আমি আর কিছু চিন্তা না করেই লাইট অফ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে নিজেকে কম্বলে মুড়িয়ে নিলাম। সাথে সাথেই ঘুম চলে এলো।
একটু দেরি করে শাওন রুমে আসলো। তারপর আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে টানে আমাকে উঠিয়ে বসিয়ে দিল।
আমি ঘুমের ঘোড়ে চোখ হালকা খুলে তাকিয়ে বললাম, কি চান এখন আবার!
“বিছানা থেকে নামো।” শাওন রেগে বলল।
আমি ঘুমে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে বললাম, তাহলে আমি কোথায় ঘুমাব?
“সেটা আমি জানিনা।” শাওন বলল।
তারপর ঘুরে এসে আমার পাশের বালিশে শুয়ে পরল।
আমিও ঘুমের ঘোড়ে নিজের বালিশে ওনার উল্টপাশ ফিরে শুয়ে পরলাম।
“তোমাকে এখানে ঘুমাতে বলেছি?!” বলেই শাওন আমার এক বাহু ধরে টেনে ওর দিকে ঘুরালো।
আমি মুখ দিয়ে বিরক্তির শব্দ করে চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বললাম, “ধুর, গিয়ে আবার মদ খেয়ে আসুন ত! মদ খেলেই আপনি ঠিক থাকেন। গত রাতে যেমন ছিলেন।”
এটুকু বলেই আমি ঘুমিয়ে গেলাম। এর পর উনি আর আমাকে টানাটানি করলেন না।
সকালে শাওন আমার আগে আগেই চোখ খুলল তারপর আমার দিকে তাকালো। আমি ওর দিকে পাশ ফিরে খুব কাছে এসে ঘুমাচ্ছি। বলতে গেলে ওর কাধের পাশেই আমি মাথা রেখে ঘুমাচ্ছি। শাওন সাথে সাথে উঠে বসে পরল। আর ড্রয়ারের উপরে রাখা ফোনে সময় দেখল। আজই আমাদের ফিরে যাওয়ার দিন।
শাওন আবার আমার দিকে তাকালো। আমার কোমড়ের কাছ থেকে জামা অনেক উপরে সরে গেছে। আমি নড়ে চড়ে ওর আরো কাছে সরে আসলাম।
শাওন একটা নিঃশ্বাস ফেলে আমার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর কোমড়ের কাছের জামা হাত দিয়ে আস্তে করে টেনে ঠিক করতে লাগল। ঠিক তখনি আমি চোখ খুললাম।
আর ওনাকে আমার কোমড়ের কাছের জামাতে হাত দিতে দেখে চমকে গেলাম। তাই সাথে সাথে উঠে বসে নিজের কোমড়ের উপর হাত দিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, কি করছেন আপনি? অসভ্য লোক একটা!
চলবে…