১৬ বছর বয়স | পর্ব – ২৪ (I am here now)

20 Min Read

শাওন আমাকে বাহু ধরে ওর আরো কাছে নিয়ে এসে কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, কে করেছে?
সাথে সাথে স্নোবেল আবার আমার দিকে তাকিয়ে ঘেউঘেউ করে উঠল। অর্থাৎ সেও জানতে চায় কে করেছে।
আমি চোখ পিটপিট করে শাওনের দিকে আর স্নোবেলের দিকে তাকালাম।
তোমার কি আমার কথা কানে যাচ্ছে না? শাওন রেগে বলে উঠল।
আমি এবার সিরিয়াস হয়ে শাওনের দিকে তাকালাম। কিন্তু ওই ঘটনা মনে পরতেই কেমন বিশ্রি একটা লাগতে শুরু করল।
শাওন ভ্রুকুচকে বলল, কি? কথা বলছ না কেনো? এভাবে তোমার সাথে… I mean এগুলো করেছে টা কে?
শাওনের চোখে এখনো রাগ। কিন্তু কিজন্য রাগ? আমার ত কোনোই দোষ নেই। আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরতে লাগল। শাওন অনেক চমকে গেল।
“Why are you crying, damn it?” শাওন দ্বিধায় পরে গেল।
আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। তারপর বললাম, আপনি আমার উপর কেন রাগ দেখচ্ছেন? আমি কি করেছি?
শাওন এবার ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, গাধা, আমি তোমার উপর কেন রাগ দেখাতে যাব? কে করেছে বলো আমাকে। আমি…
শাওনের কথা শেষ হবার আগেই প্রভাতী রুমে এসে ঢুকে বলল, কিরে রাত দুপুরে এখন কোন ছেলের সাথে মাখামাখি করছিস? কে এই ছেলে?
প্রভাতীর গলা শোনার সাথে সাথে আমি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চোখ মুছলাম।
শাওন ঘুরে বিরক্তির সাথে প্রভাতীর দিকে তাকালো। প্রভাতী কিছুটা বড়সড় চোখ করে তাকিয়ে বলল, কে রে এটা?
শাওন ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এই mannerless মেয়েটা কে?
প্রভাতী হা করেই তাকিয়ে আছে। তখনি ওর মা ঢুকতে ঢুকতে বলল, কি রে, হলো কি?
বলেই শাওনকে দেখে বলল, ওমা এটা কে?
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, who the hell are those monkeys?
আমি শাওনের কথা শুনে চমকে গেলাম। শাওন নাক মুখ কুচকে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। আমি ওনাকে আস্তে আস্তে বললাম, “আমার কাকি আর তার মেয়ে প্রভাতী। এরা কোনো বানর না।”
শাওন শুনে খুব একটা সম্মান যে দেখালো তাও না। ভ্রুকুচকেই তাকিয়ে রইল। মনে হচ্ছে শাওনের পছন্দ হয়নি ওদের চেহারা।
শেষে আমার কাকা এসে রুমে ঢুকল। সে শাওনকে দেখে হকচকিয়ে গিয়ে বলল, তু..তুমি?
প্রভাতী আর কাকি দুইজনই অবাক হয়ে কাকার দিকে তাকালো।
প্রভাতী অবাক হয়ে বলল, বাবা এনাকে চেন তুমি?
শাওন আমার কাকাকে দেখে স্বাভাবিক ভাবে বলল, হ্যা আমি।
আসলে সমস্যাটা এটাই যে, আমাকে ফট করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শাওনের পিশামশাই যদিও আগেই বলে রেখেছিল কিন্তু শাওন রাজিই ছিল না। ফট করে একদিন আমাকে কাকা বলল, আজ ই বিয়ে। আমি মোটেও অবাক হইনি। পুতুল খেলার মত আমাকে হঠাৎ এই অচেনা ছেলের সাথে বিয়ে করতে হলো। বিয়েতে শুধুমাত্র আমার পক্ষ থেকে কাকাই গিয়েছিল। প্রভাতী আর কাকি যাওয়ার জন্য তেমন আগ্রহ দেখায় নি।
আর তারা মনে করেছিল টাকা দিয়ে কোনো মেয়েকে কিনে কোনো সুন্দর ছেলে ত বিয়ে করবেনা। তাই তারা শাওনকে চিনতে পারছে না।
আর এদিকে কাকা কল্পনাও করতে পারেনি যে শাওন এ বাড়িতে আসতে পারে। তাই হতবুদ্ধি হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। কারন শাওন বিয়ের দিন সরাসরি বলেই দিয়েছিল ওনার মুখের উপর যে এই মেয়েকে আমি কোনোভাবে কোনোদিনো মানব না আর বিয়েও করব না। কিন্তু বিয়েটা শেষমেশ হয়েই গেল। আর উনি যে ফুলসজ্জার দিনই বাসা ছেড়ে চলে গেলেন সেটাও সবার কান অব্দি গেল।
প্রভাতী ওর বাবাকে নাড়া দিয়ে বলল, কি হলো? কে উনি?
কাকা এবার নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, চিনব না কেন? এটা শাওন, মিলার স্বামী।
আমি মুখ ভেংচি দিলাম। শাওন কাকার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ভ্রুকুচকে আমার কাকি আর প্রভাতীর দিকে তাকালো।
প্রভাতী হা করে আঙুল দিয়ে শাওনকে দেখিয়ে বলল, এত হেন্ডসাম কেম্নে?
শাওন সরু চোখে তাকালো প্রভাতীর দিকে। ওর মা মানে আমার কাকিও অবাক হয়েছে।
এত অবাক হবার কি আছে আমি ত বুঝি না।
স্নোবেল এক পাশে বসে লেজ নাড়িয়েই যাচ্ছে।
কাকা প্রভাতীর কথা উড়িয়ে দিয়ে শাওনিকে বলল, তুমি আসবে বুঝতেই পারিনি। হেহে। কিসব বাজার করা আছে আজ কে জানে!
শাওন কাকাকে বলল, It’s ok.
“বাবা, এসেছো যখন দুই চার দিন থেকে যাও” কাকামনি বলল।
আমি চমকে উঠে মনে মনে বললাম, থেকে যাবে মানে? তাহলে আমি কই ঘুমাব? কোনো সোফা টোফা নেই বাড়িতে। এক্সট্রা রুমও নেই। নিজের বাড়ি এসেও আমি যদি এখন বিছানা না পাই তাহলে কি অসহ্যটাই না লাগবে! গরিলা একটা।
শাওন বলল, আমি কাল ই back করব। কাজ আছে আমার।
এটা শুনেই আমি ওনার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালাম। কালই চলে যাবে? আবার মনের মধ্যে কেমন কেমন করতে লাগল। এমন কেনো হচ্ছে কয়েকদিন ধরে?
কাকা একটু থেমে বলল, আচ্ছা, কি আর করার! ঠিক আছে তোমারা কথা বলো।
কাকা সবাইকে বের হতে ইশারা করল। বের ত সবাই হলো কিন্তু প্রভাতী দরজার বাহিরে দাড়িয়ে হা হয়ে রইল। শাওন ওর মুখের সামনেই দরজা লাগিয়ে ছিটকানি লাগিয়ে দিল। আমি হকচকিয়ে গেলাম। শাওন আমার কাছে এসে গলার কাছ থেকে সব চুল এক হাতে ধরে ভাল মত দেখতে লাগল। আমি একটু চমকে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি অনেক সিরিয়াস হয়ে আছেন। হঠাৎ আমার গলায় স্পর্শ করতেই আমি কেপে উঠে বললাম, কি করছেন আপনি?
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে তারপর আবার গলার দিকে তাকিয়ে বলল, কোন ছেলে?
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। শাওন চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, যে ছেলে তোমার সাথে এটা করেছে সে কে?
আমি হা হয়ে গেলাম। উনি কিভাবে জানল? শাওন রেগে তাকিয়ে বলল, Your silence is driving me Crazy.
আমি ঢোক গিলে বললাম, আ…আপনি…আ আবার আমাকে রাগ…
শাওন রেগে বলে উঠল, তুমি কি এতই গাধা? কোথা দিয়ে ঘুরে বেড়াও যে ছেলেরা তোমার থেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতে চায়?
আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। শাওন রেগে নিজের কোমড়ে হাত দিয়ে অসস্তির সাথে একবার অন্যদিকে ঘুরে আবার আমার দিকে ফিরল।
তারপর আমার হাতের বাহু ধরে কাছে টেনে হাতের ছিলে যাওয়া জায়গাটা দেখতে লাগল। আমি ওনার দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে তাকানোর সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম।
“বলো।” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
এগুলো বলতেও কেমন কেমন লাগছে কিন্তু উনি না শুনে ছাড়বেনই না।
শাওন আবার বললো, বলো?
আমি মাথা নিচু অবস্থাতেই গলার স্বর নামিয়ে বললাম, মিশু।
শাওন আমার দিকে শক্ত চোখমুখে তাকিয়ে বলল, কোথা দিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছিলে তুমি? তাও আবার হলুদ শাড়ি পরে!
আমি শাওনের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, আমি গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে গেছিলাম।
শাওন বলল, ওই একই কথা। তোমার লাফালাফি বন্ধ আজ থেকে। এখন বলো এন্টিসেপটিক ক্রিম কোথায় আছে?
আমি ওনার কথার উত্তর না দিয়ে বললাম, ব্যাস এটুকুই?
“কি?” শাওন প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
আমি বললাম, নাম জানার জন্য এতকিছু?
শাওন ঠোঁটে একটা বাকা হাসি এনে বলল, নাম ই এনাফ আমার জন্য।
আমি হা হয়ে তাকিয়ে বললাম, কেন?
শাওন কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, এন্টিসেপটিক ক্রিম কোথায়?
“আমিও বলব না কোথায়।” বলেই মুখ ভেংচি দিয়ে অন্যদিকে ঘুরে তাকালাম।
শাওন কিছুই বলছে না। তাই আমি একটু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। শাওন ড্রয়ার খুলে খুজছে। না পেয়ে এসে আমার আলমারি খুলে সব জামাকাপড় ধরে বিছানায় ফেলে খুজতে লাগল। আমি হা হয়ে গিয়ে ওনার পাশে দাড়িয়ে বললাম, কি করছেন আপনি? কত কষ্ট করে গুছিয়েছিলাম। শাওন উত্তর না দিয়ে সব বের করতে লাগল। আমি ওনার বাহুর কাছের শার্ট ধরে টেনে বললাম, থামুন এখন। এন্টিসেপটিক কোনো ক্রিম নেই বাসাতে।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, হোয়াট?
আমি ঠোঁট উলটে হ্যাসূচক মাথা নাড়লাম।
শাওন রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি স্নোবেলের দিকে প্রশ্নসূচক চোখে তাকালাম। এখন আবার কি করবেন উনি?
আমিও বেরিয়ে এলাম। পিছনে পিছনে স্নোবেলও এলো।
শাওন কাকার সামনে গিয়ে দাড়ালো। কাকা খাবার টেবিলের চেয়ারে বসে ছিল শাওনকে দেখে উঠে দাড়ালো।
শাওন বলল, আপনি একটু আগে বলেছিলেন যে আমাকে ভাল কিছু খাওয়াতে চান, রাইট?
কাকা বিষয় টা না বুঝ হা করে তাকিয়ে রইল। আমিও বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। ওদিকে প্রভাতী হা করে শাওনের দিকে তাকিয়ে আছে। শাওন মানিব্যাগ থেকে এক হাজারের একটা নোট বের করে কাকার সামনের টেবিলে রাখতে রাখতে বলল, সেভলন এন্টিসেপটিক ক্রিম,একটা ভলিনাক ক্রিম, বিশটা ব্যান্ডেজ আর তুলা। এখনি লাগবে আমার।
আমি হা হয়ে তাকিয়ে মনে মনে বললাম, গরিলাটা এই রাতে এখন কাকাকে পাঠাবে?
কাকা একটু হকচকিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, হ্যা অবশ্যই। এখনি এনে দিচ্ছি।
বলেই কাকা বের হয়ে গেল।
শাওন আবার রুমে গিয়ে ঢুকল। আমি আর স্নোবেলও এলাম।
আমি বললাম, আপনার মাথা গেছে! কাল আনলেও ত হত!
শাওন আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ওর শার্টের হাতা ভাজ করতে লাগল। আমি আরো কিছু বলার আগেই কাকি মধুর সুরে ডাক দিল আমাকে, মিলা, এদিকে আয় ত।
আমি বিড়বিড় করে বললাম, বাবা! এত মিষ্টি সুরে ডাকছে হঠাৎ!
আমি রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকলাম। কাকি বলল, কি খায় ও আমরা ত কিছুই জানিনা। আর আজ ত এগুলোই আছে রে।
আমি ঘাড় উচু করে দেখলাম কি রান্না হচ্ছে। মাছ, ডাল,মাংস, একটা ভরতা। আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, কুমড়ো নেই?
”কুমড়ো ত নেই, কেন?” ম্লান মুখে কাকি বলল।
আমি বললাম, না কিছুনা। এগুলোতেই হবে।
কাকি খুশি হয়ে বলল, যাক ভাল তাহলে।
কাকা কিছুক্ষণের মধ্যেই শাওনের বলা জিনিস নিয়ে হাজির হলো। আমি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে দাড়ালাম। কাকা রুমের সামনে গিয়ে শাওনকে বাকি টাকাসহ ওগুলো দিলো।
শাওন জিনিস গুলো নিয়ে বলল, থ্যাংস। তারপর রুমের বাহিরে এসে দাড়িয়ে গম্ভীর মুখ করে আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকল।
কাকা আমার দিকে তাকালো। আমি চোখ বড়সড় করে মনে মনে বললাম, এখন কি উনি আমাকে ঔষধ লাগাবেন?
“কি হলো! ডাকছে ত, যা!” কাকিমনি আমাকে বলল। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে এগিয়ে গেলাম।
আমি ঢোকার সাথে সাথে শাওন আবার দরজা লাগিয়ে দিল।
আমি বললাম, এভাবে ওনাদের মুখের উপর বার বার আপনি দরজা অফ করে দিলে ওরা কি মনে করবে।
শাওন পলিথিন থেকে ওগুলো বের করতে করতে বলল, I don’t care. এখানে এসে বসো।
খাটের দিকে ইশারা করে শাওন সেভলন ক্রিম খুলল। আমি ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম। তাই শাওন আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, কি!
“না…মানে, আমি একাই পারব।” আমি বললাম।
শাওন ভ্রুকুচকে বলল, হ্যাঁ, ত দাড়িয়ে আছো কেন!
শাওন আমাকে সেভলন ক্রিম এগিয়ে দিল।
আমি হাতে নিয়ে আয়নার সামনে চলে এলাম তারপর হাতের ছিলে যাওয়া জায়গাতে লাগিয়ে নিলাম। গলায় লাগাতে যাব তার আগেই শাওন এসে আমাকে ঘুরিয়ে হাতে অন্য ক্রিমটা ধরিয়ে দিল আর বলল, এটা দেও গলায়।
বলেই বিছানার কাছে চলে গেল আর নিজের ফোনটা বের করে কি যেন করতে লাগল।
আমি ওনার কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। কেন এসেছেন উনি? কাল ই আবার নাকি চলে যাবেন!
“কি হলো?” শাওন আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
ওনার কথায় আমি চিন্তার জগত থেকে বের হলাম।
“কিছুনা।”
“তাহলে দাঁড়িয়ে আছ কেনো?”
আমি আয়নার দিকে ঘুরলাম। কেমন লাল হয়ে গেছে গলাটা। আবার ওই বিষয়টা মাথায় আসতেই যেন কেপে উঠলাম। কতটা জঘন্য হতে পারে মানুষ।
শাওন আমার এক বাহু ধরে টেনে আবার ওর দিকে ঘুরালো। আমি চমকে গেলাম। শাওন আমার হাত থেকে ক্রিমটা নিয়ে নিজের আঙুলে লাগালো। তারপর আমার ঘাড়ে এক হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে গলায় আঙুল ছুয়ে দিলো। আমি কেপে উঠলাম। রীতিমতো অনেক জোরে জোরে হার্ট বিট করছে। উনি সব লাল দাগ গুলোতে সিরিয়াস হয়ে ঔষধ লাগালেন। আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
তারপর ফট করে উনি আমার শাড়ির আঁচল পুরোটা ঘাড়ে উঠিয়ে দিলেন কারন আঁচল গায়ে ফেলে রেখে ছিলাম। তারপর কোমড়ের কাছের শাড়িতে হাত দিলেন।
আমি অনেক গুন বেশি চমকে উঠে বললাম, কোথায় হাত দিচ্ছেন আপনি?
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, Shut up গাধা। সেই কখন থেকে হা করে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছ! এত সময় লাগবে কিসের জন্য?
আমি দুই পা পিছিয়ে গেলাম আর বললাম, আ…আমি একাই… পারব।
বলেই আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
শাওন সরে গিয়ে বিছানায় বসল। আমি আয়নার দিকে ঘুরলাম। এখন সমস্যা হচ্ছে ওনার সামনে আমি ঔষধ লাগাব কিভাবে এই জায়গায়? আমি
আয়নায় ওনার দিকে তাকালাম। উনি মেঝের দিকে অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছেন।
আমি ফট করে কোনো রকম মলম লাগিয়ে আবার আঁচলটা পুরো গায়ে নামিয়ে নিলাম।
তারপর শাওনের কাছে এগিয়ে এসে সবগুলো ফেরত দিয়ে বললাম, এই নিন হয়ে গেছে।
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে উপহাস করে বলল, তোমার কাছেই রাখো, উঠতে বসতে এগুলো লাগে তোমার। তাই ব্যান্ডেজ আর তুলাও আনিয়ে রাখলাম।
বলেই শাওন উঠে দাড়ালো। আমি কপাল কুচকে তাকিয়ে বললাম, কি বললেন আপনি?
শাওন কোনো উওর না দিয়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে গেল। আমি মুখ ভেংচি দিয়ে ওগুলো ড্রয়ারে রেখে বের হলাম।
স্নোবেল মাংস পেয়ে খুব খুশি। আমিও খুশি। গরিলাটা খুশি কিনা জানিনা চুপ চাপ খাচ্ছে। কুমড়ো ছাড়াই খাচ্ছে। আমি ওনার প্লেটের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে এক হাসি দিলাম।
কাকা কাকি যদিও অনেক চিন্তিত যে ওনার খাওয়াতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। বুঝিনা বাপু, আমাকে ত জীবনেও এত যত্ন করে খাওয়ায় নি যত ওনাকে করছে। আর এদিকে প্রভাতী ত হা করেই আছে এখন। এত হা করে থাকলে ত মাছি কেন বিড়ালও ঢুকে যাবে।
সব ত হলো এখন সমস্যা হলো ঘুমানো নিয়ে। না জানি উনি কিনা আমাকে আজ ফ্লোরেই ঘুমাতে দেয়। আমি শাওনের পরে রুমে গেলাম। দেখলাম উনি জালানার কাছে দাড়িয়ে হাতে ফোন উচু করে ধরে নেটওয়ার্ক পাওয়ার চেষ্টা করছেন। আমি মুখ ঘুরিয়ে স্নোবেলের দিকে তাকালাম। আর ওর জন্য একটা মাঝারি সাইজের বোল এনে তাতে একটা কাপড় দিয়ে ঘুমানোর বিছানা বানিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। স্নোবেল ওটাতে আরামে শুয়ে পরল।
শাওন জালানার কাছে দাঁড়িয়ে বিরক্তির সাথে বলে উঠল, What’s up with the network!
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। শাওন হাল ছেড়ে দিয়ে জালানার কাছ থেকে সরে এল।
আমি উঠে দাড়ালাম আর ওনার দিকে তাকালাম। শাওন বিছানার কাছে দাঁড়িয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি বললাম, আমি নিচে ঘুমাতে পারব না।
শাওন ফোনের দিকেই চোখ রেখে বলল, মানে?
আমি বুকের কাছে দুই হাত গুজে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম, আমার বাড়ি, আমার বিছানা, আমি নিচে ঘুমাতে পারব না। আপনি নিচে ঘুমাবেন।
শাওন এবার ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালো তারপর আমার বিছানার দিকে তাকালো।
আমি মুখ ফিরিয়ে ওনার দিকে তাকালাম।
“We have to share then.” শাওন কপাল কুচকে শান্তগলায় আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
আমি অবাক হয়ে বললাম, এটুকু বিছানায় কিভাবে আপনি আর আমি…!
আমি থেমে গেলাম। শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।
আমি বিছানার এক কোনায় শাওনের উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে পরলাম। শাওন আমার দিকে ফিরে শুয়ে পরল।
এখন ত ঘুমও আসছে না। আর ওনার জন্য নড়াচড়াও করতে পারব না।
“আপনি ঘুমিয়ে গেছেন?” আমি প্রশ্ন করলাম। কিন্তু শাওন কোনো উওর দিল না। তাই আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালাম। শাওন আমার দিকে ফিরে চোখ খুলেই শুয়ে আছে। আমি ঘুরতেই ওনার চোখে চোখ পরল। তাই আমি আবার মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
“আপনি… এখানে কেন এসেছেন?” আমি প্রশ্ন করে ফেললাম। শাওন কোনো উওরই দিচ্ছেনা। আমি তাই চুপ হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পরে শাওন উওর দিল, তোমার জন্য।
আমি সাথে সাথে ঘাড় ঘুরিয়ে শাওনের দিকে চোখ বড়সড় করে তাকালাম।
শাওন শান্তগলায় বলল, তোমার জন্যই ত! স্নোবেলকে রেখে এসেছো কিসের জন্য?
আমি আবার ঘাড় ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম, সেটা ত গাড়িতে উঠে মনে পরার সাথে সাথে পিশামনিকে বলেছিলাম। উনি বলেছিলেন যে দুই তিনদিনের মধ্যে কি কাজে ঢাকা যাবে তখন নিয়ে আসবেন স্নোবেলকে। আমি ত অপেক্ষা করছিলাম যে সুমনা হয়ত দিয়ে যাবে। দিয়ে গেলে সাথে সাথেই নিয়ে আসা যেত।
আমি একটু থেমেই আবার বলে উঠলাম, আর আপনি কাকাকে এত খাটাচ্ছেন কেন?
“যা করছি ঠিকই করছি।” শাওন বলল।
আমি শাওনের দিকে না তাকিয়েই কপাল কুচকে বললাম,মানে?
শাওন প্রশ্ন করল, তুমি জানো যে উনি বা ওনারা টাকার জন্য তোমাকে আমার কাছে…?
এটুকু বলেই শাওন থেমে গেল। আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম।
“এরপরও ওদের রেসপেক্ট করতে ইচ্ছা করে?” শাওন গম্ভীর গলায় বলল।
“আপনি আমাকে কিনে বিয়ে করতে পারলে ওরা বিক্রি করবে না কেনো?” আমি সহজ গলায় বললাম।
“হোয়াট! আমার কোনো ইচ্ছেই ছিল না তোমাকে বিয়ে করার।” শাওন গম্ভীর গলায় বলল।
আমি এবার ঘাড় ঘুরিয়ে শাওনের দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বললাম, তাহলে বিয়ে কেন করলেন আমাকে?
শাওন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, সেটাই। তোমাকে বিয়ে করেই আমি ভুল করেছি।
আমি কিছু না বলে শুধু ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। শাওনও আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি চোখ সরিয়ে উঠে বিছানা থেকে নামতে লাগলাম।
সাথে সাথে শাওন আমার হাত ধরে টান দিয়ে বলল, কোথায় যাচ্ছ তুমি?
এভাবে আচমকা টান দেওয়ার ফলে আমি ওনার উপর এসে পরলাম। আমি অনেক চমকে গেলাম আর চোখ বড়সড় করে ফেললাম।
উনি আমার হাত ধরে গম্ভীর মুখেই আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
আমি বললাম, বা…বাথরুমে যাব।
উনি শোনার সাথে সাথে অপ্রস্তুত হয়ে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললেন, oh! Sure.
আমি সরে উঠে দাড়ালাম। ওনি হঠাৎ আজীব আজীব ব্যবহার করছেন। এমন কেনো করছেন উনি?
অনেক রাতে ওই বাজে কাহিনীগুলো স্বপ্নের মধ্যে আসতে লাগল। আমি ঘামতে লাগলাম আর ছটফট করতে লাগলাম। শাওন আমার এক হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বসিয়ে দিল। আমি ভয়ে ফট করে ওনার দুই বাহু চেপে ধরে রীতিমতো জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম। এদিকে গা কাপছে।
শাওন বুঝতে পেরে আমার দুই বাহু ধরে শান্ত গলায় বলল, Are you ok?
আমি না সূচক মাথা নাড়লাম।
শাওন বলল, It’s ok, I am here now.
আমি সাথে সাথে শাওনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগলাম।
শাওন আমাকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরে রাগ মিশ্রত গলায় বলল, I swear I won’t spare the bastard. I will make sure that he regrets for the lifetime.

চলবে…

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।