১৬ বছর বয়স | পর্ব – ২৮ (মেবি এ কিস?)

18 Min Read

পাগলের মত হাসছ কেনো? শাওন ভ্রুকুচকে বলল।
আমি কোনো কথা বললাম না।
শাওন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তুমি আমার শার্ট ভিজাচ্ছ।
অহ তাই ত। আমার এবার খেয়াল হলো। আমি তাড়াতাড়ি সরে দাড়িয়ে ওনার শার্টের দিকে তাকালাম।
ভালই ভিজিয়ে দিয়েছি। শাওন বিরক্তির সাথে আমার দিকে তাকালো তারপর শার্ট এর দিকে তাকিয়ে, কি করবে ভাবতে লাগল।
আমি এখনো হাসি মুখেই আছি।
“What’s so funny?” শাওন গম্ভীর গলায় বলল।
আমি এবার মুখ থেকে হাসি সরিয়ে নিয়ে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি ঘুরে চলে যেতে লাগলেন। আমি ওনার পিছনে পিছনে হাটতে লাগলাম। কিন্তু এখন আমার আরেকটা জিনিস করতে ইচ্ছে করছে। সেটা হলো ওনার ওই হাতটা ধরে আবার হাটা। কিন্তু সেটা মনে হয় হবে না। তাই একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে হাটতে লাগলাম।
বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই কাকি শাওনকে দেখে হা হয়ে বলে উঠল, বাবা তুমি যাও নি?
শাওন কাকির দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলল, না, যাব এখন।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম, থামেন আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আসছি।
বলেই আমি রুমে গিয়ে ঢুকলাম। স্নোবেল আমাকে দেখে লাফাতে লাগল। আমি হাসিমুখে ওকে বললাম, আমরা আজ এখান থেকে যাচ্ছি।
আমার হাসি দেখে স্নোবেল আরো লাফাতে লাগল। আমি স্নোবেলকে এক কোনায় গিয়ে দাড়াতে ইশারা করলাম কারন আমি ড্রেস চেঞ্জ করব। স্নোবেল এক কোনায় গিয়ে উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে রইল। আমি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে শাড়ি বের করলাম।
কারন থ্রি-পিস এইটাই ছিল আর সেটা আমি ভিজিয়ে ফেলেছি।
আমি ব্লাউজ আর পেটিকোট পরার পরেই শাওন রুমের দরজা ঠেলে ঢুকলো আর আমাকে দেখে থমকে গেল।
আমি ওনাকে দেখার সাথে সাথে উলটো দিকে ঘুরে বললাম, আ…আপনি এভাবে… ঢুকেছেন কেন?
আমার হার্ট আবার জোরে জোরে বিট করতে শুরু করল।
“ত কিভাবে ঢুকব? লক করোনি কেনো?” শান্ত গলায় বলল শাওন।
আমি চোখ বড়সড় করে একটা ঢোক গিলে বললাম, দে…দেরি হচ্ছে আমার।আ…আপনি বে… বের হন প্লিজ।
শাওন আর কিছু না বলে দরজা আবার ঠেলে দিয়ে চলে গেল। আমি জলদি গিয়ে দরজা আটকে দিলাম। তারপর যেন হাফ ছেড়ে বাচলাম।
রেডি হয়ে আমি স্নোবেলকে নিয়ে বের হয়ে এলাম। শাওন আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুচকে ফেলল।
“কি?” আমি প্রশ্ন সূচক চোখে তাকিয়ে বললাম।
শাওন বলল, শাড়ি উল্টো পরেছো তুমি।
আমি তাকিয়ে দেখে হা হয়ে গেলাম। সত্যিই উল্টো হয়েছে।
আমি বিরক্তির সাথে বলে উঠলাম, সব আপনার জন্যই ত!
শাওন না বুঝতে পেরে বলল, মানে!
“আপনি তখন….” এটুকু বলেই আমি চুপ হয়ে গেলাম।
শাওন প্রশ্ন সূচক চোখে তাকিয়ে রইল।
আমি মনে মনে বললাম, সব ওনার জন্যই ত হয়েছে। ঢুকার কি দরকার ছিল তখন।
“কিছুনা, চলুন যাই।” আমি বললাম।
“এভাবে? উল্টো শাড়ি পরে?” শাওন ভ্রুকুচকে বলল।
সোজা ভাবে শাড়ি পরে বেড়িয়ে এলাম। আমি আর স্নোবেল পিছনে পিছনে হাটছি আর শাওন সামনে সামনে। রোডে এসে শাওনের গাড়ি দেখতে পেলাম। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এসেছে।
“আমরা কোথায় যাব?” আমি শাওনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, গাড়িতে ওঠো।
বলেই শাওন গাড়ির পিছনের সীটে উঠে বসল।
আমি শাওনের পাশে বসলাম আর স্নোবেলকে কোলে নিলাম।
মনের মধ্যে আবার কেমন কেমন লাগছে। আমাকে যদি উনি নিয়ে না যান? তাহলে?
আমি ওনার সাথে যেতে চাই।
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে শাওনের দিকে তাকালাম। সে বন্ধ জালানা এক হাত ভাজ করে রেখে বাহিরে তাকিয়ে আছে। আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে স্নোবেলের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওনের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো। শাওন আগেই নেমে গেল। আমি অতন্ত্য অখুশির সাথে নামলাম। কারন আমি এখানে থাকতে চাইনা।
বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে শাওনের মা শাওনকে দেখে চিন্তিত হয়ে বলল, হুট করে এসে কই চলে গেছিলি তুই? বলা নেই কওয়া নেই।
পিশামশাই সিড়ি দিয়ে হাসি মুখে নামতে নামতে বলল, কোথায় আর যাবে! বুঝো না?
কাকি মনি কিচেন থেকে বের হতে হতে বললেন, তুই যে ওদিন ছোট্ট একটা বাচ্চা কুকুর নিয়ে হাজির হয়ে সবাইকে কত চমকে দিয়েছিস তা বলার বাহিরে।
শাওন কিছু না বলে একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
পিশামশাই সোফাতে বসে মাথা চুলকে বলল, ঘুষ ছাড়া নিয়ে যেতে দেব না।
কথাটা কেউ না বুঝলেও শাওন বুঝলো।
শাওন ভ্রুকুচকে বলল, I Won’t.
পিশামশাই ভাব নিয়ে গলা নামিয়ে বলল, কোনটার জন্য বললি Won’t? নিয়ে যাবি না, নাকি টাকা দিবি না!
শাওন কিছু না বলে গম্ভীরমুখে শুধু তাকিয়েই রইল।
পিশামশাই সামনের পেপারটা হাতে নিয়ে পড়ার ভান করে বলল, আগেই বলে দিচ্ছি তোকে, যদি ওকে নিয়ে না যাস তাহলে অন্য কারো সাথে ওকে বিয়ে দিয়ে দেব।
কাকিমনি আর শাশুড়ী একটু দূরে থাকায় শুনতে পেল না। কিন্তু আমি বুঝলাম যে পিশামনি আমাকে নিয়ে কথা বলছে।
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে তারপর পিশামনিকে কোনো উওর না দিয়ে উপরে উঠে গেল।
কাকিমনি হাসিমুখে আমাকে বলল, কুকুর তাহলে তোর!
শাওনের মা শক্ত মুখে তাকিয়ে বলল, “এসব কুকুর বিড়াল শাওনের পছন্দ না, তাও তুমি রাখছ কেন?”
আমি থতমত খেয়ে গেলাম।
স্নোবেল দৌড়ে শাওনের মায়ের পায়ের কাছে চলে গেল। শাওনের মা হতভম্ব হয়ে স্নোবেলের দিকে তাকালো।
পিশামনি খবরের কাগজে চোখ রেখে বলল, আহা, কুকুরটা ছিল বলেই শাওনের জন্য ভাল হয়েছে। নাহলে অন্য বাহানা দিয়ে এতদুর আসতে হত।
তারপর পিশামনি খবররের কাগজ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “ব্যাগ গোছাতে লেগে পর। ও তোকে নিয়েই যাবে। আর ওকে একটু সময় দে। ও আসলে কেমন সেটা খুব জলদিই বুঝতে পারবি।”
তারপর শুন্যে তাকিয়ে হাসিমুখে পিশামনি বলল, তোর জন্যই ও আবার আগের মত বা আগের চেয়েও হাসি খুশি হয়ে যাবে!
আমি উপরে উঠে এলাম। আমার এখনো পিশামনির কথা বিশ্বাস হচ্ছে না। উনি যদি আমাকে নিয়ে না যায়!
ঘরে ঢুকেই দেখলাম শাওন শার্ট খুলে হাতে ধরে দাঁড়িয়ে নিজের ছবিটার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে।
আমি ঢোকার সাথে সাথে আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আবার ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলল, এটার মানে কি?
আমি বিষয়টা বুঝতে পেরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। আসলে আমি ওনার ছবির উপর একটা কাগজের ইমোজি বানিয়ে লাগিয়ে দিয়েছি। মানে ছবিটায় ওনার মুখের জায়গায় একটা গোমড়া মুখ করা ইমোজি(😑) লাগানো।
আমি কি বলব এখন?
“তুমি করেছো, না?” শাওন আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম, না, আ … আমি কেন করব?
“ত কে করবে? এসব ফালতু কাজ তুমি ছাড়া আর কে করবে?” শাওন রাগী চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি ভ্রুকুচকে রেগে বললাম, করেছি, ভাল করেছি। যেমন আপনি তেমনই হয়েছে।
শাওন রেগে আমার দিকে ফট করে এগিয়ে আসতেই আমি চমকে উঠলাম আর পিছিয়ে যেতে লাগলাম।
“কি বললা মাত্র?”
আমি ঢোক গিলে পিছিয়ে যেতে যেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল।
শাওন আমার দুই পাশে দুই হাত রাখলো আর বলল, ভালোই করেছো? আমি ওমনই?
আমি ভয়ে নাক মুখ কুচকে অন্যদিকে ফিরে রইলাম।
শাওন আমার আরো কাছে এগিয়ে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে এলো। ওনার নিঃশ্বাস আমার ঘাড়ে পরতেই আমি শাড়ির একটা অংশ হাতের মুঠোয় চেপে ধরলাম।
শাওন উপহাস করে আস্তে আস্তে বলল, আর তোমাকে যে পেঁচার মত দেখতে সেটার কি হবে?
আমি শোনার সাথে সাথে চোখ পাকিয়ে ফট করে ওনার দিকে মুখ ঘুরালাম আর ভুলে ওনার গালে আমার ঠোঁট ছুয়ে গেল।
সাথে সাথে আমি চোখ বড়সড় করে ওনার দিকে তাকালাম। শাওনও মুখ সরিয়ে সামনে এনে স্তম্ভিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি লজ্জায় চোখ মুখ কুচকে নিজের ঠোঁটের উপর এক হাত দিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“গাধা।” বলেই শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আমার থেকে সরে গেল। তারপর শার্টটা বিছানায় ফেলে বাথরুমে ঢুকে গেল।
আমি এক হাত মুঠ করে বুকের উপর আস্তে আস্তে মারতে লাগলাম। কারন হার্ট আর হার্টের জায়গায় নেই মনে হয়।
আমি আর এক সেকেন্ডও ওনার রুমে না থেকে বেড়িয়ে নিচে চলে এলাম। আমি এখনো শক এর মধ্যে আছি। আমার ওইরকম চেহারার অবস্থা দেখে কাকিমনি বলল, কি হয়েছে তোর!
আমি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বললাম, পানি খাব।
তারপর ঢগ ঢগ করে এক জগ পানি গ্লাস গ্লাস ভরে খেয়ে নিলাম। উফ কি অসহ্য এখনো হার্টটা জোরেই লাফালাফি করছে।
“তোর কি শরীর খারাপ লাগছে।” কাকিমনি অবাক হয়ে বলল।
আমি হাপাতে হাপাতে বললাম, না, না। শুধু একটু পানি পিপাসা পেয়েছিল৷ আর পানি নেই?
কাকিমনি হা হয়ে বলল, মাত্রই ত কতগুলো খেলি।
আমি বিড়বিড় করে বললাম, তাও ত ঠিক হচ্ছেনা হার্টের অবস্থা। এখন!
কাকিমনি এটা শুনতে পেল না।
কাকিমনি বলল, সবাই এখনি খেতে চলে আসবে তুইও বস।
আমি বিস্ফোরিত চোখে কাকির দিকে তাকিয়ে বললাম, সবাই আসবে!
কাকি বিরক্তির সাথে বলল, সর ত। কি যে শুরু করলি।
“আ… আমি আজ খাব না। খিদে নেই। আমি খেয়ে এসেছি বাড়ি থেকে।” বলেই আমি সিড়ির দিকে তাকালাম। শাওন ওর নীল শার্টের হাতা মনোযোগের সাথে ভাজ করতে করতে নেমে আসছে।
ওনাকে দেখার সাথে সাথে আমার চোখ বড়সড় হয়ে গেল। আমি তাড়াতাড়ি মেইন দরজার দিকে চলে গেলাম। কারন এখানে থাকলে আমার হার্ট এট্যাক হয়ে যাবে, সিওর।
কাকি বলে উঠল, কই যাচ্ছিস তুই? আশ্চর্য!
আমার পিছনে তাকানোর সময়ই নেই। তাই আমি জলদি দরজা দিয়ে বের হতে যাবার আগেই কারো সাথে সজোরে ধাক্কা খেলাম। কিন্তু পরার আগেই সে আমার দুই হাত ধরে নিলো।
আমি ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে একটা হাফ ছাড়লাম।
“Who are you?” আমাকে ধরে থাকা ছেলেটা বলল। আমি চোখ তুলে ছেলেটার দিকে তাকালাম। ছেলেটা আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ভ্রুকুচকে তাকালো। আমি একটু সরে দাড়ালাম। এটা আবার কে!
কাকিমনি বলে উঠল, এত দিনে তোর ফেরার সময় হলো অসভ্য ছেলে!
আমি কাকির দিকে তাকালাম।
ছেলেটা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে আমাকে ইশারায় দেখিয়ে বলল, এটা কে?
আমি ঘুরে তাকালাম সামনের দিকে। শাওন পকেটে হাত দিয়ে ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তাড়াতাড়ি অন্য দিকে তাকালাম।
“এটা মিলা, শাওনের বউ।” পিশামনি বলতে বলতে নামলো।
“হোয়াট?” ছেলেটা আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে তাকালো।
পিশামনি বলল, তোকে ফোন করে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া বিয়ে হুট করে হয়েছে। তেমন কেউই আসেনি। তুই ত ভারি বিজি মানুষ। আর শুধু তুই কেনো, এ বাড়ির সব ছেলেমেয়েই ভারি বিজি মানুষ। একমাত্র শাওনের মা বাবার বিবাহ বার্ষিকী ছাড়া তোদের খবর থাকে না।
ছেলেটা হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যালো আমি পলক। What’s your name?
“মিলা” আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললাম।
পলক ভ্রু উঁচু করে বলল, nice name. i will call you Mila then. ওসব ভাবী টাবী বলা আমার পছন্দ না।
পিশা আর কাকিমনি হেসে দিলো। শাওন আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইল।
মোট কথা যা বুঝলাম এই ছেলে শাওনের কাজিন আর কাকিমনির ছেলে। দুবাই থাকে। বাসার সবার সাথে পলক দেখা সাক্ষাৎ শেষ করলো। আমি দরজার কাছে দাড়িয়েই দেখলাম।
কিন্তু শাওন পলকের সাথে হায় হেলো কিছুই করলো না!
যদিও ছেলেটা মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করল, ভাই what’s up! বিয়ে শেষ পর্যন্ত করেই নিলি।
শাওন গোমড়া মুখে “i am good” বলে চেয়ারে বসে গেল। ছেলেটাও কিছু মনে করলো না। কারন শাওন যে এইরকম, সেটা সবাই জানে।
পলক চেয়ারে বসে আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলল, হেলো, দাড়িয়ে আছ কেনো এখানে আসো।
আমি হালকা হাসার চেষ্টা করে বললাম, না আমি এখানেই ঠিক আছি।
ছেলেটা হেসে দিয়ে বলল, দরজার কাছে দাড়িয়ে লাঞ্চ করবা?
শাওন আমার দিকে গোমড়া মুখ করে তাকিয়ে আবার নিজের প্লেটের দিকে তাকালো। আমি ধীরে ধীরে হেটে টেবিলের দিকে গেলাম। তারপর শাওনের উলটো দিকের তিন চেয়ার পরে বসলাম।
পলক আমার তিন চেয়ার পরে শাওনের সোজাসুজি বসে ছিল। আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, শাওন এখানে বসেছে তাহলে তুমি এত দূরে কেন!
শাওন পলককে বলল, বেশি কথা না বলে নিজের কাজ কর।
পলক শাওনের কথায় কান না দিয়ে আমাকে বলল, আসো ওঠো, শাওনের পাশে গিয়ে বসো।
আমি হকচকিয়ে শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন বিরক্তির সাথে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। পলক কিছু একটা আচ করতে পেরে আমাদের দিকে ভ্রুকুচকে তাকাতে লাগল।
সবাই একে একে এসে পরল। খেতে খেতে পলক ওর ব্যস্ত জীবনের গল্প সবাইকে শোনাতে লাগল।
খাওয়া দাওয়া শেষে করে আমি রুমে স্নোবেলের খাবার নিয়ে ঢুকলাম। শাওন নেই রুমে। যাক ভালো।
আমি স্নোবেলকে খাবার দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরতেই শাওনের সাথে ধাক্কা খেলাম। আর মাথা তুলে ওনার দিকে তাকালাম। উনিও ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালেন।
‘এভাবে ষাড়ের মত দাঁড়িয়ে আছে কেনো বুঝিনা!এখন আবার হলো কি!’ মনে মনে বলে আমি এক পা পিছিয়ে এলাম আর ভ্রুকুচকে অন্যদিকে তাকালাম।
শাওন কিছু না বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
সন্ধ্যার দিকে কাকিমনির সাথে বাহিরে থেকে ঘুড়ে এলাম। মন টা ফুরফুরে লাগছে এখন। কাকিমনি কিছু কেনাকাটাও একবারে করে এনেছে।
পলক আমাদের দেখে বলল, বাবা! দোকান তুলে এনেছ পুরাই।
শাওন সিড়ি দিয়ে নামছিল। পলক শাওনকে দেখে বলল, তাই না বল?
শাওন আমাদের দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বলল না।
পলক একটা ফ্রেন্ডলি হাসি দিয়ে আমাকে বলল, By the way, you look so beautiful Mila.
আমি অপ্রস্তুত হয়ে ওনার দিকে তাকালাম আর একটু হাসলাম। তারপর শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন শক্ত মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা দেখে আমার মুখের হাসিটা গুম হয়ে গেল।
রাতে খাওয়ার সময় গরিলাটাকে দেখতে পেলাম না। শাশুড়ীর কথায় যা বুঝলাম, উনি এখন খাবেন না।ঢং!
খাওয়া শেষ করে আমি রুমে এসে স্নোবেলকে খেতে দিলাম।
তারপর বেলকোনিতে চলে গেলাম। এসেই বেলকোনির লাইটটা বন্ধ করে দিলাম। আবছা অন্ধকারে দাড়িয়ে থাকতে ভালোই লাগছে। সাথে অনেক সুন্দর বাতাস বইছে। আমি রেলিং এর বাহিরে হাত বাড়িয়ে দিলাম বাতাস ধরার জন্য।
“কি করছ তুমি?”
আমি চমকে পাশে তাকালাম। শাওন দাঁড়িয়ে আছে। আমি আবার মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে সামনে তাকিয়ে বললাম, দেখতে পাচ্ছেন না!
শাওন আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইল। আমি হাসিমুখে বাহিরের দিকেই তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ করেই আমার ওনার বিষয় একটা হাস্যকর জিনিস মনে পরে গেল। মনে পরতেই আমি ফিক করে হেসে দিলাম আর ওনার দিকে তাকালাম।
শাওন প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো আর বলল, কী?
আমি বলব যে কিন্তু হেসেই কুল পাচ্ছিনা।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইল। আমি কিছু সময় হেসে তারপর থামলাম। আর মুখে সেই হাসির আভা রেখেই বললাম, আপনার ছোটোবেলার ন্যাপি পরা একটা ছবি আজ আমি দেখে ফেলেছি।
বলেই আমি রেলিং ধরে হাসতে লাগলাম। ওনার কুচকে থাকা কপাল সোজা হয়ে গেছে। হয়তো এটা শোনার আশা করে নি। আমি হাসতেই লাগলাম। উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ আমার দিক এগিয়ে আসতে লাগলেন। সাথে সাথে আমার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেল। আর আমি ভয়ে পিছাতে লাগলাম। ধুর বলাই উচিত হয়নি হয়তো।
পিছাতে পিছাতে পিছনের রেলিং এ পিঠ ঠেকে গেল। উনি আমার দুইপাশে দুই হাত রাখলেন। আমি চোখ বড়সড় করে ওনার দিকে তাকালাম।
হালকা চাঁদের আলোতে ওনাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। উনি স্বাভাবিক ভাবেই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি মুগ্ধতার সাথে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি রেলিং থেকে এক হাত সরিয়ে আমার আমার গালে ডুবিয়ে দিলেন। আমি অবাক হয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। উনি গালের উপর রাখা হাতের এক আঙুল দিয়ে আমার ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে দিলেন। আমি এবার অনেক চমকে গেলাম। আর ওনার দিকে তাকালাম। উনি আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে অন্য হাত আমার আরেক গালে রাখলেন। সাথে সাথে আমার গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। উনি আমার দুই গাল ধরে ওনার ঠোঁট আমার ঠোঁটের কাছে নিয়ে এলেন। আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ওনার এক বাহুর শার্ট খামচে ধরে বলে উঠলাম, কি করছেন আপনি!
আমার কথা শুনে শাওনের হুশ হলো আর সাথে সাথে আমাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো। আমি চোখ খুলে ওনার দিকে তাকালাম। উনি নিজেও অনেক চমকে গেছেন। আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে সাথে সাথে বেলকোনি থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন।
আমি হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কি করতে যাচ্ছিলেন উনি? আমি চোখ বড়সড় করে নিজের ঠোঁটে হাত দিলাম।
সেদিন সারারাত উনি আর রুমে এলেন না।

চলবে…

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।