১৬ বছর বয়স | পর্ব – ৩২ (আপনি পছন্দ করেন আমাকে?)

17 Min Read

“আমি জানি তুমি শাওনের সাথে ভাল নেই। তাই প্লিজ তুমি শাওনকে ছেড়ে দেও, I will marry you and believe me, you will be happy with me.” সৌরভ বলে উঠল।
শাওন অতিরিক্ত রেগে নিজের ফোন কান থেকে নামিয়ে আবার কানে দিলো। মিটিং এর সবাই শাওনের দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।
আমি শক্ত মুখে সৌরভকে বলতে লাগলাম, “আমি আপনাকে পছন্দ করিনা। আর দয়া করে ওনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নতুন করে কোনো কিছু করার চেষ্টা করবেন না। হতে পারে উনি আমাকে পছন্দ করেন না, কিন্তু তার মানে এটা না যে আমার আপনাকে প্রয়োজন হবে।”
শাওনের রাগ চোখমুখ থেকে সরে গেল। বরং এখন স্তম্ভিত হয়ে রইল।
সৌরভ একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, সো তুমি পছন্দ করো শাওনকে! রাইট?
আমি হকচকিয়ে গেলাম আর সাথে সাথে বলে উঠলাম, মো..মোটেও না। আ…আমি কেন ওনাকে পছন্দ করব!
শাওন রেগে ভ্রুকুচকে বলে উঠল, how dare she..!
মিটিং এর সবাই না বুঝতে পেরে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। কিন্তু শাওনের সেদিকে খেয়াল নেই।
সৌরভ এবার ভ্রুকুচকে মুচকি হাসি দিয়ে বলল, “আমাকে বললা যে পছন্দ করোনা, আর শাওনকে ‘মোটেই’ পছন্দ করোনা। তারমানে শাওনের চান্স ১% হলে আমার চান্স ১০%, ওর থেকে বেশি রাইট?”
আমি চোখ বড়সড় করে তাকালাম।
সৌরভের কথা শুনে শাওনের মেজাজ আবার বিঘড়ে গেল।
সৌরভ হেসে আমাকে বলে উঠল, রিল্যাক্স। এভাবে তাকানোর কিছুই হয়নি। এভাবে তাকালে তোমাকে অনেক বেশিই সুন্দর লাগে।
আমি ওনার এই কথা শুনে অনেক বিব্রতবোধ করতে লাগলাম।
সৌরভ একটু মন খারাপের ভান করে বলল, So you just rejected me?!
আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
সৌরভ পরক্ষণেই নিজের মুখে একটা হাসি টেনে এনে বলল, কি আর করার!
আমি চোখ পিটপিট করে ওর দিকে তাকালাম।
সৌরভ আমার ফোনটা টেবিল থেকে হাতে নিতে নিতে বলল, But I want something.
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে সৌরভের দিকে তাকালাম।
“I want to hug you for the first and last time.” সৌরভ হাস্য উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি চমকে চোখ বড়সড় করে তাকালাম।
এটা শোনার সাথে সাথে শাওন রেগে মিটিং এর মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, হোয়াট ননসেন্স!
সৌরভ তখনি ফোনটা কেটে দিল। শাওন অনেক বেশিই রেগে গেল এখন।
“dammit.” বলেই আবার কল দিল। কিন্তু ফোন আর ঢুকলো না।
সৌরভ আমাকে ওভাবে চমকে যেতে দেখে হাসতে লাগল। আমি বোকা সেজে গেলাম।
সৌরভ হাসি থামিয়ে সিরিয়াস হয়ে তাকালো আর বলল, Hope it works for you.
আমি না বুঝে তাকিয়ে রইলাম।
সৌরভ একটা নিঃশ্বাস ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি জানতাম না তুমি শাওনের স্ত্রী। Even এটাও জানতাম না যে তুমি বিবাহিত।
আমি সৌরভের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলাম।
“একচুয়েলি আই হেট শাওন।” স্বাভাবিক ভাবেই বলল সৌরভ।
আমি ভ্রুকুচকে ওর দিকে তাকালাম।
“কিন্তু এখন আমি যা করছি সেটা শাওনের জন্য না। তোমার জন্য করছি। কারন আমার জন্য তুমি কষ্ট পেলে সেটা আমার একদমই ভাল লাগবে না। কারণ আমি কোনোদিনো তোমার খারাপ চাই ই না।” সৌরভ হালকা হাসি মুখে বলে যেতে লাগল।
কিন্তু ওর কথা আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। আমার জন্য করছেন মানে কি? কি করছেন?
“Because my feelings for you are serious.” এই কথাটা বলেই সৌরভের হাসি মুখ ম্লান হয়ে গেল।
আমি কি বলব বুঝতে পারলাম না। কারন এর আগে এমন পরিস্থিতিতে আমি পরি নি। এভাবে কেউ আমাকে এসব বলেও নি।
আমাকে বিব্রতবোধ করতে দেখে সৌরভ আবার উজ্জ্বল হাসি দিয়ে বলল, Don’t feel awkward.
আমি দুইহাত দিয়ে কফির মগটা ধরে সৌরভের দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনি ওনাকে ঘৃণা করেন কেনো?
সৌরভ নিজের গালে এক হাত রেখে অল্প হাসির আভার সাথে বলল, “কারন ও সব কিছুতে এগিয়ে। শাওন যে কোম্পানি চালাচ্ছে সেটা আমার চালানোর কথা ছিল।”
আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম ওনার কথার অর্থ।
সৌরভ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, শাওন Study, career, love life সব দিক থেকে এগিয়ে। যেমন তোমাকেও আমার আগে ও-ই পেয়ে গেল। তবে যেটা শাওনের হাতে চলে যায় সেটা কিভাবে ধরে রাখতে হয় সেটা শাওন ভাল করেই জানে।
আমি কিছু বলার মত না পেয়ে কফির মগের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“আমি এই হেল্পটা না করলেও শাওন একসময় তোমাকে ওর নিজের ফিলিংস গুলো ঠিকই প্রকাশ করতো। হয়ত আর একটু দেরি হত। কিন্তু যেটা হবারই সেটা জলদি হওয়াই ভাল। তাছাড়া সম্পর্কে ভুল বুঝাবুঝি না থাকাই ভাল।” সৌরভ বলল।
আমি স্তম্ভিত হয়ে বললাম, ফিলিংস?
“হ্যা। আর একটা কথা।” সৌরভ সিরিয়াস হয়ে বলল।
“কি?” আমি হালকা চমকে গেলাম।
সৌরভ নিজের ব্যান্ডেজ লাগানো গালের দিকে ইশারা করে বলল, এটার কাহিনী আমি বলব না। এটা শাওনের থেকে শুনে নিবা।
আমি রোবটের মত মাথা নাড়লাম।
তারপর উনি মুচকি হেসে বললেন, তাহলে ওঠা যাক?
আমি মাথা নাড়িয়েই হুট করে ব্যাগটা কাধে নিলাম। তারপর আমরা নিচে নেমে এলাম।
“তাহলে এটাই আমাদের লাস্ট দেখা।” সৌরভ হাসি মুখে বলল।
আমি কিছু না বলে অপ্রস্তুত হয়ে হাসলাম।
সৌরভ আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি অনেক চমকে গেলাম।
পরক্ষণেই সৌরভ আমাকে ছেড়ে সরে দাড়িয়ে হাসি মুখে বলল, গুড বাই।
আমি চমকে তাকিয়ে রইলাম।
সৌরভ পিছাতে পিছাতে উজ্জ্বল হাসির সাথে বলল, আমি আমার লাইফে এই একটা বিষয় কোনোদিনো পস্তাবো না, সেটা হলো তোমাকে পছন্দ করা। শুধু যদি আমি আগে তোমাকে পেতাম!
শেষ কথাটা বলার সময় সৌরভের হাসিটা সীমিত হয়ে গেল। কিন্তু আমার কাছে ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা নেই। যদিও ওর পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। কারণ আমিও… আমি শাওনকে ছাড়া অন্য কারো সাথে থাকতে চাই না। একদমই থাকতে চাই না।
সৌরভ হাত নেড়ে টাটা দিলো। তারপর ঘুড়ে চলে গেল। আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে রিক্সা দাড় করালাম আর সোজা বাসায় ফিরলাম।
বাসায় ফিরে নিজের রুমে এসে বিছানায় বসলাম। স্নোবেল আমার পায়ের কাছে লাফিয়ে লাফিয়ে নিজের খুশি প্রকাশ করছে। আমি হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে ব্যাগটা কাধ থেকে নামালাম। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে তারপর নিজের কাবাড খুললাম। এখন শান্তিতে গোসল করে, খেয়েদেয়ে একটা ঘুম দিতে চাই। আমি কাবাড হাতিয়ে কাপড় খুজতে লাগলাম। তখনি ফট করে শাওন আমার এক হাত ধরে টেনে ওর কাছে নিয়ে এলো।
আমি অনেক চমকে গেলাম কারন এই দুপুরের সময়টায় উনি ত অফিসে থাকেন আজ হঠাৎ চলে এসেছেন কেন!
“তোমাকে কি বলেছিলেন আমি?” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলাম।
শাওন রাগী চোখে তাকিয়ে বলল, বলেছিলাম না যে কলেজ শেষে সোজা বাসায় আসবা?! কথা কেনো শোনো না?
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম যে উনি কিভাবে জানলো! স্নোবেল একপাশে চিন্তিত হয়ে লেজ নাড়তে লাগল।
শাওন রেগে আমার দিকে এক পা এগিয়ে এসে বলল, ফোন দিলে ধরোনা কেন? আর বলেছিলাম না further ওর সাথে দেখা না করতে?
এবার আমিও রাগীচোখে তাকিয়ে বলে উঠলাম, তাতে আপনার কি?এসব আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর আমি যার সাথে ইচ্ছা দেখা করি আর না করি! আপনার তাতে কি?
শাওন রেগে আমার দুইবাহু ধরে আমাকে কাবাডের দরজার সাথে দাড় করালো আর বলল, আমি যেটা বলেছি সেটাই করবা তুমি। কোনো রকম প্রশ্ন ছাড়াই। আর তোমার ব্যক্তিগত বলে কিছু নেই এখন। কারণ তুমি এখন….
একটু বলে শাওন থেমে গেল।
আমি রাগমিশ্রিত চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, “আমি এখন কি? বলুন। থেমে গেলেন কেনো!”
“Whatever, কথাটা যেন মাথায় থাকে।” দাতেদাত চিপে কথাটা বলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল শাওন।
আমি বুঝিনা আমি ওনার কাছে কি! আর উনি সুইটির সাথে ঘুরঘুর করলে ঠিক আছে। কিন্তু আমি কারো সাথে গেলেই সমস্যা! এবার ত আমি আরোই যাব। যাবই যাব। দেখিয়ে দেখিয়ে যাব। ইচ্ছা করে যাব। দেখব আপনি কি করেন! গরিলা একটা।
কিন্তু এক মিনিট! উনি কিভাবে জানলেন আমরা একসাথে ছিলাম? যদি দেখেই ফেলতেন তাহলে ত এসে ঝামেলা করার কথা। কারন সুইটির জন্য ত উনি মরেই যান। হুহ।
একটু সময় চিন্তা করেই আমি চোখ বড়সড় করে ফোনটা বের করলাম। সৌরভ তখন তারমানে ওনাকে ফোন করেছিল? সব শুনেছেন নাকি উনি?
আমি চোখ বড়সড় করে ফেললাম। সৌরভ ইচ্ছে করে ওনাকে এগুলো শুনিয়েছে! এখন উনি যদি আমাকে ভুল বোঝে!
আমি ফট করে রুম থেকে বের হয়ে শাওনের রুমে ঢুকলাম। রুমে ত কোথাও নেই। চলে গেছে নাকি? কিন্তু ফোনটা ত বিছানায় পরে আছে!
তারমানে বাথরুমে। আমি দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সাথে সাথে শাওনের ফোন বেজে উঠল। আমি ফোনের দিকে তাকালাম। দেখলাম সুইটি নামটা ফোনের স্ক্রিনে উঠে আছে। দেখার সাথে সাথেই মনের মধ্যে কেমন করে উঠল। আমি আর ওনার রুমে দাড়ালাম না। সোজা নিজের রুমে এসে দরজা আটকে দরজা ঘেঁষে মেঝেতে বসে পরলাম। আমি ভুলেই গেছিলাম যে উনি…. উফ চিন্তা করতেও অসহ্য লাগছে। আর সাথে খারাপও লাগছে।
মাথাটা এদিক ওদিক ঝাকিয়ে সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলাম। তারপর আমার পাশে বসে থাকা স্নোবেলকে কোলে নিয়ে বেলকোনিতে চলে গেলাম।
অনেকক্ষণ পরে উনি দরজা নক করে বললেন, বের হও।
আমি রেগে দরজার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি খাব না।
“বের হতে বলেছি।” রেগে গেল শাওন।
আমি আর তর্কে গেলাম না। কারণ আমার আর ভালো লাগছে না। গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। উনি এক পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন, খেতে আসো।
তারপর টেবিলে চলে গেলেন। আমিও একটা নিঃশ্বাস ফেলে টেবিলে গিয়ে বসলাম আর স্নোবেলের জন্য মাছ দিয়ে ভাত মাখিয়ে দিলাম।
তারপর নিঃশব্দে নিজের প্লেটের মধ্যে দৃষ্টি আবদ্ধ করলাম।
কিছুক্ষণ পরই শাওন বলে উঠল, Did he really hug you?
আমি খাওয়া থামিয়ে শাওনের দিকে তাকালাম। উনি সিরিয়াস হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আমি বিরক্তির সাথে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। কারণ ওনার এটা নিয়ে এত মাথা ব্যথা কেনো?
“Did he?” শাওন ভ্রুকুচকে ফেলল।
এখন আমি কি বলব! হ্যা বললে কি হবে, আর না বললে কি হবে?
আমি ওনার দিকে তাকালাম। ইতিমধ্যে উনি রেগে গেছেন।
আমি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলে উঠলাম, হ্যা জড়িয়ে ধরেছিল।
শাওন সাথে সাথে টেবিলে দুই হাত রেখে দাড়িয়ে পরলো আর রেগে বলে উঠল, What?
আমি ওনার থেকে চোখ সরিয়ে ভ্রুকুচকে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
“আর তুমি বাধাও দেও নি?” শাওন রাগে গজগজ করতে করতে বলল।
ওনার এই ব্যবহার আমার স্বাভাবিক লাগছে না। তাই আমি চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে বললাম, আপনি পছন্দ করেন আমাকে?
শাওন থমকে গেল। কিন্তু পরক্ষণেই গম্ভীর গলায় বলে উঠল, Why would I like you?
শুনে যদিও অনেক খারাপ লাগল কিন্তু আমি সেটা বুঝতে দিলাম না। বরং আমি একটু থেমে উঠে দাড়িয়ে বলে উঠলাম, তাহলে আমার বিষয় নিয়ে মাথা ব্যথা বন্ধ করে দিন।
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো।
আমি আর এক মূহুর্তের জন্য না থেমে আমি নিজের রুমে চলে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
তারপর বিছানায় পরে নিঃশব্দে কাদতে লাগলাম। উনি এভাবে কিভাবে বলে দিলেন? অনেক ক্ষণ ওভাবে পরে থেকে তারপর উঠে বসে চোখ মুছলাম। তারপর হাত ধুতে বাথরুমে চলে গেলাম।
আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেরই বিরক্ত লাগছে। ওনার কথার জন্য কেন কাদব আমি? উনি আমাকে পছন্দ করেনা এটা কি নতুন কিছু?
তারপর মনে মনে ঠিক করে নিলাম যে আমি এখানে আর থাকব না। সত্যিই ত, কেন থাকব? উনি যাকে পছন্দ করেন তাকে নিয়েই থাকুক। আমি কালই চলে যাব। ওনার সাথে থাকার চেয়ে ওই দর্জাল শাশুড়ীর সাথে থাকাই ভাল।
রাতে উনি ডাকার আগেই নিজে ডাইনিং এ চলে এলাম। আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে এলাম। ওনার দিকে একবারো তাকালাম না।
সকালে উনি অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে কলেজে ছেড়ে দিলেন। কিন্তু আমি কলেজে ঢুকে তারপর আবার বের হয়ে এলাম। আর একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম।
বাসায় এসেই আমি নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। এবার আমি একটা কিছুও ফেলে যাব না, একটা কিছুও না। স্নোবেল থেকে শুরু করে সব নিয়ে তবেই আমি যাব। যাতে ওনার মাথা ঘামিয়ে কোনো জিনিস আবার ফেরত দিতে আসতে না হয়। থাকেন আপনি আপনার সুইটিকে নিয়ে।
তবে ব্যাগ গোছাতে গিয়ে সেই হলুদ আর নীল পাখি জোড়া সামনে চলে এলো। পাখি জোড়া হাতে নিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম। কিছুসময় পাখিগুলোর দিকে তাকিয়ে তারপর আবার ব্যাগে রেখে দিলাম। কারন এটা আমার অনেক পছন্দের, শুধু এজন্যই এটা নিয়ে যাব। অন্য কোনো কারণে না।
কিন্তু আর একটা জিনিসও ল্যাগেজে আছে। সেটা যদিও আমার সাথে নেওয়ার দরকার নেই। শাওনের সেই সাদা শার্টটা। যেটা বৃষ্টির রাতে পরতে হয়েছিল। এটা…
আর কিছু চিন্তা না করে শার্ট টাও ঢুকিয়ে নিলাম। এমনিও উনি বলেছিলেন এটা লাগবে না ওনার।
তারপর জলদি রেডি হয়ে পুরো ঘর ঘুড়ে দেখে নিলাম কিছু রয়ে গেল কিনা। এবার কিছু রয়ে যাক এটা আমি চাই-ই না। আমি ল্যাগেজটার হেন্ডেল টেনে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে শাওনের রুমের দিকে তাকালাম।
তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে স্নোবেলের দিকে তাকিয়ে বললাম, চল।
বাড়ি পৌছাতে বিকাল হয়ে গেল। পিশামনি আমাকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন।
“কি রে তুই হঠাৎ?! মাত্র না সেদিন তোরা গেলি!” পিশামনি বলে উঠল। আমার শাশুড়ী রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। পিছনে পিছনে কাকিমনিও এলো।
কাকিমনি হাসিমুখে বলল, এসে ভালই করেছিস। এমনিই….
কাকিমনিকে থামিয়ে দিয়ে আমার শাশুড়ী কপাল কুচকে বলে উঠলেন, তুমি একা কেন? শাওন কোথায়?
আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
পিশামনি একটু কিছু চিন্তা করেই বলে উঠলেন, আহা থাক না। মিলা তুই রুমে যা।
তারপর আমার শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, তোমার ছেলেকে এবার একটু শিক্ষা দেওয়া উচিত বুঝলে! তুমি শুধু দেখো আমি কি করি।
আমি পিশামনির দিকে তাকালাম।
“মানে? বুঝলাম না।” শাশুড়ী ভ্রুকুচকে বলল।
“মানে খুবই সোজা। এবার খালি আসুক তোমার ছেলে।” হাস্য উজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে বললেন পিশামনি।
আমি নিজেও বুঝলাম না কিছুই।
রুমে এসে খাটে বসলাম আমি। বসেই সামনে তাকাতেই শাওনের ছবিটা চোখে পরলো। হেটে গিয়ে ছবিটা নামিয়ে আলমারির এক ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখলাম। ওনাকে চোখের সামনে রাখতেই চাইনা।
কিন্তু চলে এসে এখন একদমই ভালো লাগছে না। ওনার কথা খুবই মনে পরছে। আবার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরতে লাগল। স্নোবেল আমাকে কাদতে দেখে আমার পায়ের কাছে ব্যস্ত হয়ে ঘোরাঘুরি করতে লাগল।
আমি চোখ মুছে ওর দিকে একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে ওর মাথাটা নেড়ে দিলাম। তারপর ফ্রেস হতে চলে গেলাম। আর ফ্রেস হয়ে কিচেনে চলে গেলাম। কিচেনে এখন কেউই নেই। আমি ফ্রিজ থেকে কুমড়ো খুজে বের করলাম। তারপর অনেক গুলো কুমড়ো ভেজে নিলাম। আর ডাইনিং এ বসে খেতে লাগলাম। যদিও একদমই খেতে ভালো লাগছে না তাও খেতে লাগলাম। কেন খাচ্ছি তাও জানিনা। এদিকে চোখে জল চলে আসছে। কিন্তু কেউ দেখে ফেললে ঝামেলা। তাই চেষ্টা করতে লাগলাম যেন চোখ থেকে পানি না পরে। সত্যিই অনেক বিরক্তিকর। সুইটি মরলে ভালো হত।
কিন্তু…. সুইটি মরলেও কি উনি আমাকে পছন্দ করবেন?
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে চিন্তায় পরে গেলাম।
“কুমড়ো তোমার এত পছন্দ?” পিছন থেকে একটা চেনা আওয়াজ ভেসে আসলো।

চলবে…

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।