১৬ বছর বয়স | পর্ব – ৩৩

22 Min Read

“কুমড়ো তোমার এত পছন্দ?” পিছন থেকে একটা চেনা আওয়াজ ভেসে আসলো।
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। পলক হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। তারপর জলদি চোখ মুছে নিলাম।
পলক আমার সামনে এসে বসে বলল, কি হয়েছে?
আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, মা…মানে?
পলক ভ্রু নাচিয়ে বলল, আমার চোখে ধুলো দেওয়া সহজ নয়। বলো কি হয়েছে?
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
পলক আমার প্লেটের দিকে তাকিয়ে রসিকতা করে বলল, শাওনের ডুব্লিকেট দেখছি তুমি!
আমি অপ্রস্তুত হয়ে প্লেটের দিকে তাকালাম।
“সমস্যা নেই, তুমি খাও। আমি মজা করলাম। বাট কিছু কি হয়েছে? You look upset.” পলক প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
আমি না সূচক মাথা নাড়লাম।
পলক ঠোঁট উলটে বলল, তাহলে ভাল। তবে একটা কাহিনী বলি শোনো!
আমি পলকের দিকে তাকালাম।
পলক বলতে লাগলো, “শাওনের কাহিনী।”
আমি সাথে সাথে শক্ত মুখ করে বলে উঠলাম, “ওনার বিষয় কিছু শুনতে চাইনা।”
পলক খানিক অবাক হলো। আমি নিজেও হকচকিয়ে গেলাম। আমার ব্যবহার হয়ত একটু অন্যরকম হয়ে গেছে।
তাই হাসিমুখে বলে উঠলাম, না মানে, এখন কাজ আছে আমার।
আমি উঠে রুমে চলে এলাম। সত্যিই অনেক অসস্তি লাগছে।
ঘড়ির দিকে তাকালাম। আটটার বেশি বাজে। শাওন এখন হয়ত বাসায় এসেছে!
একটা নিঃশ্বাস ফেলে আমি বিছানায় শুয়ে পরলাম। সেদিন রাতে না কিছু খেলাম আর না ঘুমালাম। সারা রাত জেগেই রইলাম।
ভোরের দিকে বিছানা ছেড়ে উঠে নিচে চলে গেলাম। শাওনের মা রুটি করছিলেন। আমি ওনার কাছে গিয়ে বললাম, “আমি করে দিব?”
উনি আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন, কোনো দরকার নেই।
বলেই নিজের মত কাজ করতে লাগলেন। আমি ওনার আর শাওনের মধ্যে কোনো পার্থক্য পাই না। দুইজনই একই রকম। তার চেয়েও বড় কথা দুইজনই আমাকে পছন্দ করে না।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে চলে আসতে লাগলাম। সাথে সাথে শাওনের মা বলে উঠল, শাওন কি তোমাকে ভালোবাসে?
আমি চমকে ওনার দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছেন। আমি কোনো উওর না দিয়ে এদিকে ওদিকে তাকাতে লাগলাম। কারন এর উওর আমার কাছে নেই।
উনি একটা ক্লান্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
সবাই একটু পরে নিচে আসতে লাগল। আমি টেবিলে খাবার রেডি করতে লাগলাম।
পিশামনি সোফায় বসে খবরের কাগজ খুলে পড়ছেন। আমি এসে ওনার সামনে এক কাপ চা রাখতেই উনি গলা নামিয়ে বললেন, “তুই চলে এসেছিস ভাল করেছিস, এবার আমি তোকে এখানেই রেখে দেব যতক্ষণ না শাওন বলবে যে ওর তোকে প্রয়োজন।”
আমি অবাক হয়ে পিশামনির দিকে তাকালাম। পিশামনি বলল, নিজের ল্যাগেজ গোছা। তারপর নিচের গেস্ট রুমে চলে আয়। ওর রুমে ও একাই থাকুক।
পিশামনি কি বলতে চাইল বুঝলাম না। শাওন ত আসেই নি তাহলে ওনার রুমে উনি একা থাকবে মানে!
আমি পিশামনির দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
“কি হলো দাড়িয়ে আছিস কেন? উপর থেকে ল্যাগেজ নিয়ে আয়। ও চলে আসবে এখনি মিলিয়ে নিস।” পিশামনি হাসিমুখে বলল।
আমি ঠোঁট উলটে পিশামনির কথা মত উপরে ল্যাগেজ গোছাতে লাগলাম। নতুন করে কি করতে চাচ্ছেন এখন পিশামনি! আর শাওন আসবে এখনি? কেনো?
আমি ল্যাগেজ ঠিকঠাক করে উঠে দাড়িয়ে পিছনে ফিরতেই চমকে গেলাম। শাওন! কখন এসেছেন উনি?
দেখে ত মনে হয় এখনি। অফিসের সেই শার্ট কোটই পরে আছেন। মানে টা কি? রাতেই রওনা হয়েছেন?
উনি আমার কাছে এগিয়ে আসতেই আমি ঘাবড়ে গেলাম। উনি অনেক রেগে আছেন।
শাওন রেগে বলে উঠল, না বলে এসেছো কেনো তুমি? আর ফোন কোথায় থাকে? হ্যা? ফোন দিলে পাওয়া যায়না কেনো? কতবার ফোন করেছি?
ওনার এত রাগের কি আছে আমি বুঝলাম না। আমি থাকলেও দোষ চলে আসলেও দোষ। আর উনি আমাকে ফোনই বা কেন করতে গেছেন!
“কেনো এসেছেন?” আমি শক্ত চোখ মুখের সাথে বলে উঠলাম।
শাওন দাতেদাত চিপে বলল, “What do you mean by কেন এসেছি?”
“আমার যতদূর মনে আছে আমি কিছু রেখে আসিনি। সব নিয়ে এসেছি।” শক্ত মুখেই বললাম আমি।
শাওন রেগে এক পা এগুতেই আমি একটু পিছিয়ে গেলাম।
শাওন বলল, আমি তোমার….
আমি শাওনকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, “আমার জন্য আসেন নি, জানি। কারন আমি এখানে ফিরে এসেছি নিজ ইচ্ছাতে। আর এই কারনে যে আমি আপনার সাথে আর যাব না। তাই আপনি আমার জন্য আসেন নি সেটা বার বার বলতে হবে না।”
ম্লান হাসি দিয়ে কথাগুলো বললাম। উনি এখনো প্রচুর রেগে আছেন। উনি কি চান সেটা আমি বুঝতে পারছি না। আর বুঝতে চাই ও না।
উনি ফট করে আমার দুই বাহু চেপে ধরে বললেন, ইদানীং তোমার সাহস অনেক হয়ে গেছে!
আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, কি করছেন আপনি! ছাড়ুন প্লিজ!
শাওন আরো কিছু বলার আগেই পিশামনি রুমের দিকে আসতে আসতে বলল, মিলা কই তুই?
শাওন আমার হাত ছেড়ে দিয়ে রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি নিজের ওড়নাটা ঠিক করে নিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই পিশামনি এসে রুমে ঢুকল।
তারপর শাওনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল, “হুটহাট তুই যে চলে আসিস এমন ত আগে করতি না! আগে ত কাজের চাপে বাড়ির অনুষ্ঠানেও তোর হদিস পেতাম না। যাক ভাল।”
শাওন কিছু না বলে বিরক্ত হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল।
পিশামনি আমার দিকে তাকালেন আর একটু সিরিয়াস হবার ভান করে বললেন, “কিরে রেডি তুই? চল তাহলে!”
শাওন ভ্রুকুচকে আমার আর পিশামনির দিকে তাকিয়ে বলল, কোথায় যাবা তোমরা?
“কোথাও না। মিলা নিচের গেস্ট রুমে থাকবে। তুই চলে গেলে তারপর না হয় আবার এই রুমে আসবে।” বললেন পিশামনি।
শাওন ভ্রু আরো কুচকে ফেলে বলে উঠল, হোয়াট? ও নিচে কেন….
এটুকু বলেই শাওন থেমে গেল।
পিশামনি হাই তুলতে তুলতে বলল, ত কি! তুই রাখতে চাচ্ছিস?
শাওন কিছু না বলে অতি বিরক্ত হয়ে পিশামনির দিকে তাকালো।
পিশামনি সিরিয়াস হয়ে বলল, তুই এবার একাই ফিরবি।
শাওন বলল, মানে?
“মানে আর কি! তুই একাই ফিরবি। রান্না থেকে শুরু করে সবই ত পারিস তাহলে বউ দিয়ে আর করবি কি! এমনিও আমাকে অনেক পিড়াপীড়ি করেছিলি ওকে যাতে নিয়ে আসি তাই এবার নিয়েই নিলাম। যা।” পিশামনি কথাগুলো বলে আমার দিকে তাকালো আর বলল, মিলা চল।
শাওন থমকে গেল আর আমার দিকে তাকালো। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে ল্যাগেজ নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। আর মনে মনে বলতে লাগলাম, ‘বাহ আমাকে ফিরিয়ে আনার জন্য পিশামনিকে পিড়াপীড়িও করেছে! যাক ভাল। থাকুক উনি ওনার বাড়িতে একা। আমি আর যাবই না।’
যদিও সবাই অনেক অবাক হলো আর বলল এটা কেমন কথা, আলাদা থাকবে! তাও পিশামনি তার সিদ্ধান্তে অটল। পলকই একমাত্র পিশামনিকে সাপোর্ট দিল।
তবে শাওনের বাবা বেশি আপত্তি জানাতেই পিশামনি বলে উঠলেন, যদি শাওন নিজের মুখে বলে যে মিলাকে ওর সাথে রাখতে চায় তাহলে বিষয়টা ভেবে দেখা যাবে।
শাওন কিছুই বলল না শুধু ভ্রুকুচকে পিশামনির দিকে তাকালো।
অতএব আমার গেস্টরুমে থাকাটা পাকা হয়ে গেল।
আর বাড়িতে খুব শীঘ্রই একটা অনুষ্ঠান আছে। সেটা হলো শাওনের মা বাবার বিবাহবার্ষিকী। প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানের তিন দিন আগে পরিবারের সবাই একত্রিত হয়। এটা এই পরিবার থেকেই নিয়ম। তবে যা বুঝলাম তা হলো শাওন তিনদিন না, একদিন আগে আসে। এতই ব্যস্ত। এজন্যই এবার সবাই অবাক হচ্ছে যে উনি চারদিন আগে এসে গেছেন।
আমি গেস্টরুমেই নিজের সব গুছিয়ে নিলাম। কালই বাসায় লোক জন বাড়বে। তবে বাড়িটা সত্যিই বিশাল। না হলে সবার থাকার জায়গা কখনই হবে না।
বিকালে আমি ডাইনিং টেবিলের ফুলদানির দিকে মনোযোগের সাথে তাকিয়ে দেখছিলাম। পলক হঠাৎ করে পিছন থেকে এসে ‘ভাও’ বলে উঠল।
আমি ভয়ে লাফিয়ে উঠলাম। আর পলক হেসে দিল।
আমি বোকা সেজে গেলাম। পলক হাসি থামিয়ে বলল, ফুল ভালো লাগে?
আমি হাসিমুখে বললাম, হ্যা অনেক।
“আমারো।” হাসিমুখে বলল পলক।
শাওন সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিল। আমাদেরকে দেখে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইল। আমি ওনাকে দেখে মুখ কালো করে ফুলের দিকে মনোযোগ দিলাম।
পলক কিছু একটা বুঝতে পেরে আমার সোজাসুজি এসে বসলো। তারপর বলল, “মিলা হাত পাতো।”
আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, কেনো,?
পলক বলল, আরে পাতো ত!
আমি হাত পাতলাম। পলক আমার হাতে কতগুলো গোলাপের পাপড়ি দিল। আমি অবাক হয়ে বললাম, আপনার হাতে এগুলো এলো কিভাবে?
পলক হাসিমুখে বলল, ম্যাজিক!
আমি একটা হাসি দিলাম৷ তারপর শাওনের দিকে তাকালাম। সাথে সাথে হাসি গায়েব হয়ে গেল। উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন কিন্তু কড়া চোখে।
আমি মুখ ঘুরিয়ে হাতের গোলাপের পাপড়ির দিকে মনোযোগ দিলাম।
পলক বলল, “তোমার ফেভারিট ফুল কি? গোলাপ?”
আমি হাসিমুখে বললাম, “না, পদ্ম।”
পলক একটু অবাক হয়ে গেল। আর বলল, পদ্ম? সাধারনত মেয়েদের গোলাপই পছন্দ জানতাম।
আমি কিছু না বলে শুধু হাসলাম। তারপর শাওনের দিকে তাকালাম। কিন্তু শাওন নেই। গেল কই? আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে খুজতে লাগলাম।
“চলে গেছে উপরে।” পলক ভ্রু উঁচু করে বলল।
আমি হকচকিয়ে পলকের দিকে তাকালাম।
পলক একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে উঠে চলে গেল।
সন্ধ্যার সময় আমি আর একবার গোসল করে নিলাম। তারপর মাথা মুছতে মুছতে বের হলাম। আয়নার সামনে দাড়িয়ে আয়নায় চোখ রাখতেই চমকে গেলাম। শাওন আয়না সোজা পিছনের কাবাডে বুকে হাত গুজে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর আমার দিকে শক্ত মুখ করে তাকিয়ে আছে।
সত্যি নাকি ভুল দেখছি আমি?
আমি ফট করে পিছনে ঘুরলাম। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম কারন এটা সত্যিই উনি! কিন্তু উনি আমার রুমে কেন এসেছেন?
আমি দরজার দিকে তাকালাম। দরজা উনি লক করে দিয়েছেন! আমি কি বলব বুঝতে পারলাম না।
শাওন আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। তখন আমি ফট করে বলে উঠলাম, কেন এসেছেন এখানে?
শাওন ভ্রুকুচকে বলল, আমার ইচ্ছা।
বলতে বলতেই শাওন আমার অনেক কাছে চলে এলো। আমি ঘাবড়ে গেলেও জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলাম। কিন্তু ওনার চোখের দিকে তাকালাম না।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, আমার সাথে জঙ্গলী বিড়ালের মত বিহেভ করো কিন্তু অন্যদের সাথে কথা বলার সময় ত হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরো!
আমি ভ্রুকুচকে ওনার দিকে তাকালাম। উনি আমাকে জঙ্গলী বললেন!
আমি ওনার দিকে রেগে তাকিয়ে বলে উঠলাম, কি! আমি জঙ্গলী? আর আপনি কি? বুনো গরিলা একটা।
উনি স্বাভাবিক চোখে তাকিয়েই আমার কাছে আরেকপা এগিয়ে আসলেন। আমি একটু ঘাবড়ে গিয়ে সাথে সাথে সরে চলে আসতে চাইলাম। কিন্তু উনি আমার হাত ধরে টেনে ওনার কাছে নিয়ে আসলেন আর অন্য হাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।
আমি এবার সত্যিই অনেক ঘাবড়ে গেলাম। কি করতে চাচ্ছেন উনি? আমি একটা ঢোক গিলে বললাম, ক… কি চান আপনি?
শাওন গম্ভীর গলায় বলল, লিপিস্টিক কেন পরেছো?
ওনার এই অদ্ভুত প্রশ্নে আমি হতভম্ব হয়ে ওনার দিকে তাকালাম। উনি এক আঙুল দিয়ে আবার আমার লিপিস্টিক মুছে দিলেন। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। উনি শক্ত চোখে তাকিয়ে বললেন, আর দিবা না। শুধু মাত্র আমার সামনে ছাড়া আর কারো সামনে দিবা না।
আমি চোখ খুলে ওনার দিকে তাকালাম। আমি ওনার কথাগুলোয় অনেক অবাক হলাম। উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আয়নার সামনের ড্রেসিং টেবিল থেকে কয়েক গুচ্ছ গাথা পদ্ম নিলেন। আমি হা হয়ে রইলাম।
উনি এগিয়ে এসে আমার মাথায় সেটা পরিয়ে দিলেন। আমি বড়সড় চোখ করে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি কেন আমার জন্য…?! ফট করে মাথার থেকে মুকুটের মত জিনিসটা চোখের উপর এসে পরল। হয়ত বেশিই ঢিলে হয়ে গেছে!
শাওন শব্দ ছাড়াই হেসে দিলো আর বলল, আমি মনে করেছিলাম তোমার মাথা মোটা। বাট না। মাথা ছোটো।
ওনার কথার ধরনেই আমি বুঝলাম উনি হাসছেন। আমি একবার দেখতে চাই ওনার হাসি মুখটা। খুব ইচ্ছে করছে। আমি হাত দিয়ে চোখের উপর থেকে পদ্মের মুকুট সরাতে যাওয়ার সাথে সাথে শাওন আমার হাত ধরে নিলো।
“কি করছেন আপনি!” বলেই আমি অন্য হাত দিয়ে সরাতে গেলাম। কিন্তু শাওন সেই হাতটাও ধরে নিলো।
অসহ্য গরিলাটা এখন আমাকে পদ্মকানা করে রাখতে চাচ্ছে নাকি? যদিও তালকানা শুনেছিলাম কিন্তু পদ্মকানা শুনি নি। কিন্তু আজ নিজেই পদ্মকানা হয়ে আছি। কয়েক সেকেন্ড ওভাবেই রইলাম কারন উনি আমার হাত ছাড়লেন না।
কয়েক সেকেন্ড এর মাথায় আমি বুঝতে পারলাম যে উনি আবার আমার খুব কাছে চলে এসেছেন।
কি করতে চাচ্ছেন উনি! এদিকে আমার গা, হাত, পা সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎই ওনার নিঃশ্বাস আমার মুখে পরতেই আমি ভয়ে ঢোক গিললাম। উনি সেদিনের মত আবার আমাকে…!
আমার ঠোঁট কাপতে লাগল।
তখনি দরজায় টোকা পরলো। আর আমি ফট করে মুখ সরিয়ে ফেললাম। আমার হার্ট অনেক জোরে জোরে বিট করছে। শাওন আমার হাত ধরেই রইল।
“মিলা কই তুই! বের হ জলদি।” কাকিমনি বলল।
আমি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে শাওনের থেকে সরে চোখ থেকে ওটা নামলাম। তারপর ওনার দিকে এক পলক তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলাম। কারণ উনি স্বাভাবিকভাবেই তাকিয়ে আছেন, যেন কিছুই হয়নি!
ওদিকে কাকিমনি দরজা ধাক্কিয়েই যাচ্ছে। আমি উওর যে দেব মুখ থেকে কিছু বেরও হচ্ছে না। আমি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে রইলাম।
“তোর কি শরীর খারাপ? কিছু হয়েছে নাকি?” কাকিমনি চিন্তিত হয়ে বলল।
আমি এবার দরজার দিকে তাকিয়ে কাপা গলায় বলে উঠলাম, ন…না আমি.. ঠিক আছি।
কাকি মনে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ত আয় জলদি। কাজ আছে।
বলেই কাকিমনি চলে গেল।
আমি ওনার চোখের দিকে না তাকিয়েই স্থির গলায় বললাম, আপনি এইমাত্র আমাকে…
আমি আর বলতে পারলাম না। চুপ হয়ে গেলাম।
“কিস করতে চাচ্ছিলাম।” শাওন শান্ত গলায় বলে উঠল।
আমি চোখ বড়সড় করে ওনার দিকে তাকালাম। উনি সিরিয়াস চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
উফ আমি বুঝিনা হঠাৎ হঠাৎ ওনার কি হয়! সেদিন একবার এমন করেছেন। পরে আবার আমার সাথে কেমন ব্যবহার দিচ্ছিলেন। মাথাটা গেছে নাকি ওনার!
ওনার কারনে দেখা যাবে একদিন আমার হার্ট এট্যাক হয়ে গেছে!
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে কথা ঘুরিয়ে বললাম, “প্লিজ যান এখন, নাহলে আবার কেউ এসে পরবে।”
কথাটা বলে আমি আর দাড়ালামই না। পদ্মর মালাটা আর তোয়ালেটা ড্রেসিং টেবিলে রেখেই দরজা খুলে বের হয়ে গেলাম।
আমি ডাইনিং এর সামনে আসতেই কাকিমনি বলল, এত সময় লাগালি আসতে! তোর মুখ শুকিয়ে গেছে কেন?
আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম, কই না ত!
“আর তোর লিপিস্টিক এমন অবস্থা হলো কিভাবে?” কাকিমনি বলে উঠল।
আমি এবার হকচকিয়ে গেলাম।
কাকিমনি কপাল চাপড়ে বলল, হায়রে! এত সময় বসে দরজা আটকে কি করলি তুই? চুলগুলোও ত আঁচড়াস নি! যা আয়না দেখে আয়।
আমি ওড়নার এক প্রান্ত হাতে ধরে ভয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। কারণ শাওনকে ত এখনো বের হতে দেখিনি। হয়তো উনি এখনো আমার রুমেই আছেন। জানিনা কেনো কিন্তু যেতে অনেক ভয় করছে।
“দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা।” ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল কাকিমনি।
কাকিমনিও ‘যা যা’ করছে। উফ ভাল্লাগে না।
“যাচ্ছি।” আমি শুকনো মুখ করে বলে ভয়ে ভয়ে নিজের রুমের দিকে গেলাম।
আর ভয়ে কাচুমাচু হয়ে রুমে ঢুকলাম। এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে শান্তি পেলাম। কারন শাওন নেই। একটা হাফ ছেড়ে আয়নার সামনে আসলাম। কিন্তু চিন্তা করতে লাগলাম যে উনি গেল কোথায় তাহলে? গেস্ট রুম থেকে বের হলে ত ডাইনিং এর সামনে দিয়ে তারপর উপর তলায় অর্থাৎ ওনার রুমে যেতে হবে।
যাই হোক আমার কি!
আমি আয়নার দিকে তাকালাম। ঠোঁটের লিপস্টিক এর অবস্থা মুছে কি বানিয়ে দিয়েছে! গরিলা একটা! কিন্তু লিপস্টিক দিলে ওনার কি সমস্যা!
চিন্তা করেই আমি মুখ ভেংচি দিলাম। তারপর পদ্মর মালাটা কাবাডে রেখে নিজেকে ঠিকঠাক করে নিয়ে রুম থেকে বের হলাম।
ডাইনিং এ আসতেই আমার গুনধর শাশুড়ী আমাকে ইশারা করে বলে উঠল, ও করবে রান্না।
আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। কারন কি বিষয় কথা হচ্ছে বুঝলাম না।
কাকিমনি হাসিমুখে বলল, ও কি পারবে?!
শাশুড়ী মা চোখ পাকিয়ে বললেন, পারবে না কেন? পারতে হবে।
তারপর আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন, পারবে না?
আমি বুঝলাম যে কাল আমাকে সবার রান্না করতে হবে। এটা আবার কঠিন কি! কি মনে করে শাশুড়ী আমাকে! হুহ।
আমি হাসি মুখে বললাম, হ্যা অবশ্যই পারব। কি কি করতে হবে?
কাকিমনি অবাক হয়ে গেল আর বলল, তুই পারবি!
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
পিশিমনি খুশি হয়ে বলল, “পোলাও, বেগুন ভাজি, রোস্ট। এটুকুই।”
‘যাক অল্পই ত তাহলে।’ মনে মনে বললাম আমি। যদিও রোস্ট অত ভালো পারিনা। কারন করিনি কখনো কিন্তু জানি। তাই করলে যে মন্দ হবে এমনও না।
আমার শাশুড়ী আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, “আর শাওনের জন্য কুমড়ো ভাজি করবা।”
ওনার নাম শুনেই আবার হার্টবিট বেড়ে গেল। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
“কাল আমরা শপিং যাব বুঝলি। বাড়ির সবার জন্য শপিং।” হাসিমুখে বলল কাকিমনি।
আমি উওরে শুধু হাসলাম।
“তাহলে এখন ডিনার রেডি করে ফেলি। সবাই এখনি খেতে চলে আসবে।” পিশিমনি বললেন।
খাবারের টেবিলেও পিশামনি আমাকে এক কোনায় বসান। অর্থাৎ শাওনের থেকে অনেক দূরে। দুপুরের মত রাতেও তাই করলেন। আমিও ওনার মুখোমুখি হতে চাচ্ছিনা। কারন কেমন কেমন ভয় লাগে এখন যা আগে কখনো লাগেনি।
জলদি খাওয়া শেষ করেই আমি রুমে চলে গেলাম। কিন্তু এখন সমস্যা হলো স্নোবেলটার খবর নেই। রাত ত অনেক হতে চললো। রাতে খাবার সময়ও দেখিনি। গেল কোথায়! এত সময় ত চলে আসার কথা। রাতে ত কিছু খায়ও নি ও।
প্রথমে নিজের রুমে ভালমতো খুজে নিলাম। কিন্তু কোথাও নেই। তারপর রুমের বাহিরে সব জায়গায় খুজতে লাগলাম। নিচ তলার কোথাও নেই।
এখন বাকি উপর তলার রুম গুলো। সবাই ত ঘুমাতে গেছে এখন আমি কোথায় খুজবো!
পরক্ষণেই মনে হলো, ভুলে শাওনের রুমে চলে গেল নাকি? কারন ওর বিছানা আমি ওই রুমেই বানিয়ে দিয়েছিলাম গত রাতে।
এখন কি করব! ওনার রুমে যাব! ভেবেই ত হার্টবিট অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
ঠোঁট কামড়ে চিন্তা করতে লাগলাম, কি করব!
পরে গুটিগুটি পায়ে ওনার রুমের দিকে গেলাম।
রুমের দরজা পুরো খোলা কিন্তু লাইট বন্ধ করা। এজন্য চারিদিকে আবছা অন্ধকার। আমি দরজার বাহিরে থেকেই ভিতরে উকি দিলাম। রুমও ত পুরো ফাকা! অর্থাৎ শাওন নেই! আমি ঢুকে পরলাম। আর এগিয়ে গিয়ে আলমারির পাশে স্নোবেলের ঘুমানোর জায়গায় দাড়ালাম। স্নোবেল নেই!
আমি একটা ক্লান্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। কোথায় হারিয়ে গেল স্নোবেল!
সাথে সাথে পিছন থেকে শাওন বলে উঠল, এত রাতে আমার রুমে কি করছ!
আমি চমকে ঘাড় ঘুরালাম। উনি দরজার কাছে দাড়িয়ে আছেন। মাত্রই এলেন হয়ত। অহো, ওনাকে এখনি আসতে হলো! কি করব এখন!
আমি এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম, ”আ..আমি…খুজতে… মানে… স্নোবেল… আমি…।”
আমার সব কথা উলটো পালটা হয়ে গেল। উনি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলেন।
আমি একটা নিঃশ্বাস জোর করে বের করে দিলাম। আর সাহস জুগিয়ে একটানা বলে গেলাম, স্নোবেলকে খুজতে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে নেই। এখন আমাকে যেতে দিন।
“আমি ধরে রেখেছি তোমাকে!” বলল শাওন।
আমি বুঝলাম যে আমি বোকার মত একটা কথা বলে ফেলেছি! আসলে উনি দরজার কাছে দাঁড়ানো। বলতে গেলে ওনার পাশ দিয়ে আমাকে বের হতে হবে। আমার হার্টটা এদিকে এত জোরে লাফাচ্ছে যে এখনি বের হয়ে আসবে। আমি একটা ঢোক গিলে ওনার দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু ওনার কাছে যাওয়ার আগেই উনি আমার দিকে এগুতে লাগলেন। ভয়ে আমি থমকে গেলাম। এখন আবার কি!
আমি পিছাতে পিছাতে কাপা গলায় বললাম, “এ…এগুচ্ছেন কে…কেনো!”
শাওন এগিয়ে আসতে আসতে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, “এত রাতে আমার রুমে এসেছো, তোমার মনে হয় আমি কিছু না করেই তোমাকে যেতে দেব?”
ওনার কথা শুনেই আমি শিউরে উঠলাম। কিছু না করে মানে!
পিছাতে পিছাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল। এদিকে শাওনও আমার খুব কাছে চলে এসেছে৷ এখন কি করব আমি!
শাওন আমার দুইপাশে দুই হাত রাখতেই আমি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে একটা ঢোক গিলে নিলাম।
এ কেমন জ্বালা! কি চান উনি এখন আবার!
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বললাম, ক… কি করতে চান?
শাওন আরো কাছে আসতেই আমি ওকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু উনি আমার দুই হাত ধরে নিলেন আর দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।
আমি হকচকিয়ে গেলাম। আর মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম, “কি… করছেন আপনি!”
শাওন আমাকে আরো চমকে দিয়ে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে গভীর ভাবে কিস করল।
ওনার হঠাৎ এমন করাতে আমার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। আর আমি নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলাম।

চলবে…

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।